মায়াবন_বিহারিনী🖤 #পর্ব_৩৮,৩৯

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_৩৮,৩৯
#আফিয়া_আফরিন
৩৮

মায়াকে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হয়েছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবাই পায়চারি করছে।

এমন সময় নার্স এসে জানালেন, “পেশেন্টের অবস্থা খারাপ। তলপেটে ভীষণ চাপ পড়ার কারণে বাচ্চাটাকে বাঁচানো যায় নি।”

ঘরে থাকা অবস্থায়ই মায়াকে দেখে সুহাদার মনে কু’ডাক দিয়ে উঠেছিল। মায়া ইমন এর নামটা উচ্চারণ করা মাত্রই ইমন ছুটে এসেছিল। ছুটে এসেছিল সবাই। মায়াকে এমন অবস্থায় দেখে কারোই হুঁশ ছিল না। ইমন আগে পিছে কোন কথা না ভেবেই, তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।

এতক্ষণ যাবৎ ইমন শক্ত ছিল। সুহাদা কাঁদছিল, মিমো ও কাঁদছিল। বাসায় খবর দেওয়া হয়েছে। শুনে ওখানেই সবাই কান্নাকাটি শুরু করেছে। এতক্ষণে সম্ভবত রওনা ও দিয়ে দিয়েছে।
এত কিছুর মধ্যে এমন ধৈর্য হারায়নি। বিশ্বাস রেখেছিল, মায়া এবং তাদের অনাগত সন্তান ফিরবে।

কিন্তু, কিন্তু বাচ্চাটা নেই শুনে একেবারে ভেঙে পড়েছে ইমন। তার মধ্যে ডাক্তার বলেছে, “মায়ার অবস্থা আ’শ’ঙ্কা’জ’ন’ক!”

এমন পরিস্থিতিতে কোন মানুষের মাথা ঠিক থাকবে? ইমনের ও মাথা কাজ করছে না। সব অনুভূতি ফিকে হয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে, কোন নির্জন জায়গায় কি ইচ্ছামত কাঁদতে পারলে শান্তি লাগতো। কিন্তু সেটাও সম্ভব না। সবাইকে তার ই সামলাতে হবে।

এরই মধ্যে ডাক্তার এসে জানালেন, “আপনাদের পেশেন্টের সি’জা’র করতে হবে।”

সুহাদা অবাক হয়ে বললেন, “কিন্তু বাচ্চাটা তো?”

“হ্যাঁ বাচ্চাটাকে বাঁচানো যায়নি ঠিক। কিন্তু তাকে তো বের করতে হবে। এজন্যই সিজার করতে হবে। নরমাল ডেলিভারি ইজ নট পসিবল। আপনারা কাইন্ডলি ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের ব্যবস্থা করেন। আমরা সিজারিয়ান এর ব্যবস্থা করছি।”

মিমো বলল, “রক্ত আমি দেব।”

ইমন ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মায়ার কি অবস্থা?”

“উনার অবস্থা সম্পর্কে এখনো ভালো মন্দ কিছু বলা যাচ্ছে না। আগে সিজার করি, তারপর।”

একরাশ হতাশা আঁকড়ে ধরল। মিমো ডাক্তারের সাথে চলে গেল কেবিনে।

সুহাদা মাথায় হাত দিয়ে বললেন, “একটা মেয়ে, পারল না মা হতে। পারলো না নিজের সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরতে। অথচ সেই না পাওয়ার সন্তানের জন্য সারা জীবন সিজারিয়ানির চিহ্ন নিজের পেটে বয়ে বেড়াতে হবে। এই তুমি কি করলে আল্লাহ? এটা একটা মেয়ের জন্য অসনীয় যে!”

ইমন এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। অজানা আশঙ্কা হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে, মায়ার যদি কিছু একটা হয়ে যায়?

ভাবনাগুলো যতই মন থেকে সরাতে চাচ্ছে, ততই ভিতরে ঝেঁকে বসছে। গতকালই তো কত আলাপ আলোচনা করা হলো, বাবুর নাম ঠিক করা হলো, আর আজ?
এ আল্লাহর কেমন লীলা খেলা?

এক অসহ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মায়া। সারা শরীরে কি অসনীয় ব্যথা। এতক্ষণ যাবত জ্ঞান ছিল না। যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন শুনলো বাচ্চাটাকে বাঁচানো যায়নি।
জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে নার্সকে জিজ্ঞেস করল, “আমার বাচ্চাটা?”

“সরি। তাকে বাঁচানো যায়নি। আপনাকে হাসপাতালে আনার আগেই বাচ্চাটার মৃত্যু হয়েছে।”

কি অবলিলায় কথাটা বলল নার্স। কথাটা শুনে নিজের বুকেই ছু’রি চালাতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু পারছে না। সারা শরীর ভেঙ্গে আসছে। ফুসফুস দ্বয় ও ফের নিঃশ্বাস আটকে দিচ্ছে।
.
.
তখন সিজারিয়ানের প্রস্তুতি চলছিল। ডাক্তার মায়াকে বেগতিক অবস্থায় দেখে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে, ঘুম পারিয়ে দিয়েছে।
কয়েক ঘন্টা পরিশ্রমের পরে মৃত মেয়েটাকে বের করতে সক্ষম হয়েছে ডাক্তার। হ্যাঁ মেয়ে! একটা ফুটফুটে মেয়েই ছিল।

ঘুম ভাঙ্গার পর মায়া যখন জানতে পারলো বাচ্চাটা মেয়ে ছিল, তখন নিজেকে পাগল পাগল লাগছিল। এতদিন যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখছিলাম, সে ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই চিরতরে বিদায় নিলো।
না আর কিছু ভাবতে পারছে না সে। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগতেছে। বারবার পানি পিপাসা পাচ্ছে, কিন্তু খাওয়ার রুচি নেই।
.
.
ইমন যখন শুনলো মায়া সুস্থ আছে, খিচড়ে আসা দম টাকে শান্ত করলো। মায়া ঠিক আছে মানে সব ঠিক আছে। যে পৃথিবীতে আসে নাই, তার জন্য এত ভেবে এখন লাভ নেই। কিন্তু মায়ার টান বলেও যে একটা কথা থাকে; ইমনেরও যে নিজস্ব একটা অংশ ছিলো। এতদিনের সাজানো গোছানো অনুভূতিগুলো ভঙ্গুর হয়ে গেলো, এলোমেলো হয়ে গেল সব।
নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য, নিজেকে বুজ দেওয়ার জন্য বাচ্চাটাকে পর করে দিচ্ছিলো। কিন্তু তার যে পরান পুড়ছে, এটা তো কেউ বুঝছে না। দুহাতে মাথা ঠেকিয়ে বসে রইলো।

মিমো এসে বলল, “ভাইয়া, আপুকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। দেখা করবে না?”

“জ্ঞান ফিরছে?”

“হ্যাঁ।”

“মুখ দেখাবো কি করে? আমি যদি ওর আরেকটু বেশি খেয়াল রাখতাম, তাহলে এমনটা হতো বল? আমিই পারিনাই খেয়াল রাখতে। না স্বামী হিসেবে কোন দায়িত্ব পালন করতে পারলাম, না বাবা হিসেবে? সবদিক থেকে ব্যর্থ!”

“এভাবে কেন বলছো ভাইয়া? ভাগ্যের উপর কারো কোন হাত নাই। তুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়ো, আপুকে কে সামলাবে? তাকে কে সাহস দিবে? ওর এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তোমাকে। তুমি যাও ওর কাছে। নিজেকে দোষারোপ পরে করো। আর এসব কখনো আপুর সামনে বলোনা। সে শুনলে কষ্ট পাবে।”

“তোরা গিয়ে আগে দেখা করে আয়।”

“আমরা দেখা করেই আসছি।”

“কথা বলেছে?”

“কোনরকম। তবুও চোখের দেখা টুকু তো দেখতে পেরেছি। তুমি এখন যাও। তোমাকে দেখলে হয়তো কথা বলতেও পারি।”

“যাচ্ছি।”

‘যাচ্ছি’ বলেও ইমন অনেকক্ষণ পর্যন্ত বসে রইলো। যখন গেল তখন রাত প্রায় তিনটা। মায়া ঘুমাচ্ছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা ক্লান্ত! চোখ মুখ ফ্যাকাসে। র’ক্তহীন। হাতে স্যালাইন। ইমন গিয়ে পাশের চেয়ারটাতে বসলো।

নিজেকে বারবার অপরাধী মনে হচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে, সে মায়ার আরেকটু বেশি খেয়াল রাখলে এমনটা হতো না।

মায়ার ঘুমটা ভেঙ্গে যেতেই পাশে ইমনকে বসা দেখতে পেল। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়েছে। ইমন কে দেখে আর চোখের পানি বাঁধ মানলো না। অঝোর ধারায় কাঁদতে লাগলো।
এই মানুষটার বাবা হওয়া নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। অথচ সেই স্বপ্নটা মায়া পূরণ করতে পারল না। এই মুখ কিভাবে দেখাবে ইমনকে?

মায়ার কান্নার শব্দেই ইমনের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুমে চোখ লেগে এসেছিল। মায়ার চোখের পানি দেখে ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল, “কি হয়েছে? ডাক্তারকে ডাকবো? কোন সমস্যা হচ্ছে?”

মায়া দুপাশে মাথা নাড়িয়ে ‘না’ সম্মতি দিল।

ইমন বললো, “তাহলে?”

“বাচ্চাটাকে বাঁচানো কেন গেল না? আমি তো এমনটা চাই নাই। একটা সুখী পরিবার চেয়েছিলাম। যেখানে তুমি, আমি, আমাদের বাবু, আমরা সবাই থাকবো। এত কষ্ট তো আমি পেতে চাইনি? সৃষ্টিকর্তা আমার সাথে কেন এমন করলেন? মেয়েটার সাথে আমাকেও কেন উঠিয়ে নিলেন না?”

ইমন গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বলল, “আমাদের হাতে কিছু ছিল বল? দুনিয়া দেখা তার ভাগ্যে ছিল না।”

“কিন্তু আমার তো কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। আমার বেঁচে থাকার কোন অর্থ আছে কি?”

“এভাবে যে বলছিস, তোর কিছু একটা হয়ে গেলে আমার কি হতো? একবারও ভেবে দেখেছিস?”

মায়া চোখ মুছল। জিজ্ঞেস করল, “মা কই? মিমো কই?”

“আছে, বাহিরে। মামা মামী, মহুয়া আপু ও আসছে।”

“কখন?”

ইমন ঘরের দিকে তাকালো। পাঁচটা বাজে। ভোর হয়ে গেছে। তারপর মায়া কে বলল, “এইতো আধা ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবে।”

“মিমো আর মাকে একটু ডেকে দিবে প্লিজ। যদি ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে ডাকার দরকার নাই।”

“আচ্ছা।”

ইমন উঠে গেল। মায়া নিজের হাত পেটে রাখল। অনুভূতিটা কি টনটনে এবং বি’ত’শ্রী। সুহাদা আর মিমো মায়ের কথা শুনে একপ্রকার দৌড়েই চলে এলো। সুহাদা এসে মায়াকে জড়িয়ে ধরলেন।
কান্না সামলাতে পারলেন না, অথচ এই অবস্থায় কান্না সামলানো টাই জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.
.
জাহানারা, আমজাদ সাহেব, এবং মহুয়া যখন এলো তখন মায়া ঘুমে ছিল। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে নিজেকে সামলাতে পারলেন না তারা।

মাকে যখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি নেওয়া হলো তখন বিকাল। মায়া ভাবতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, গতকাল এই সময় ও সবকিছু ঠিকঠাক ছিল।
ডাক্তার সমস্ত ওষুধপত্র, কাগজপত্র বুঝিয়ে দিলেন।
.
.
বাসায় ফিরেও কারো সাথে তেমন একটা কথা বলল না মায়া। কথা বললেই সবাই সান্তনা বাক্য শোনাতে আসবে। যেটা এই মুহূর্তে মায়ার শোনার কোন ইচ্ছাই নাই। সবচেয়ে বাজে সিচুয়েশনের সান্তনা বাক্য কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মত কাজ করে।

ইমন ও গেলো না মায়াকে ডিস্টার্ব করতে। কিছুক্ষণ নিজেকে সময় দেওয়া জরুরী। থাকুক, কিছুটা সময় একা।

একটু বাদে মহুয়া মাহিদকে কোলে নিয়ে ছাদে এলো ইমনের খোঁজে। ইমনকে দেখতে পেয়ে প্রশ্ন করলো, “কি করছিস তুই এখানে? একা একা?”

“এমনি আপু, কিছু না।”

“মন খারাপ?”

“উহু।”

“কেন? মন খারাপ কেন নয়? ইচ্ছে হলে হাকঁডাক ছেড়ে কাঁদ। কিন্তু মনের মধ্যে কষ্ট পুষে রাখিস না। এতে কষ্ট বাড়ে বৈকি, কমে না।”

“কি করবো আপু? যে পৃথিবীতে আসে নাই, তার জন্য আমার আফসোস হচ্ছে না। হায়াত ছিল না, ভাগ্যেও ছিল না। কিন্তু মায়া? ও নিজেকে সামলাবে কি করে?”

“তুই আছিস না! ওর সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে তুই পাশে থাকবি! একটা গেছে তো কি হইছে, আরেকটা আসবে।”

“আমি যদি আরেকটু মায়ের খেয়াল রাখতাম তাহলে এমনটা হতো না আপু।”

“তোর হাতে কিছু ছিল না ভাই।”

“তারপর ও অনেক কিছুই আমাদের হাতে থাকার পরও, আমরা সেটার মূল্যায়ন করতে পারি না।”

“এমন দার্শনিক কথাবার্তা বন্ধ কর। মায়া ঘরে আছে। তুইও যা। ইমন, এই মুহূর্তে তোকে ওর সবচেয়ে বেশি দরকার। এই সময় ওর পাশে থাকবি না?”

ইমন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “বাবুর ঠান্ডা লাগছে। ওকে নিয়ে ভিতরে যাও।”

মহুয়া আর কথা বলল না। নিচে নেমে এলো।

রাতের বেলা জাহানারা মায়াকে জোড়াজোড়ি করে কিছু খাওয়ালেন। যেহেতু ডাক্তার অনেক কড়া কড়া ওষুধ দিয়েছে। অন্তত ওষুধগুলো খাওয়ার জন্য হলেও পেটে কিছু দিতে হবে। কিন্তু খাওয়ানোর পর ই মায়া বমি করে ভাসালো।
হাজার জোড়া জোড়ি করেও তাকে আর কিছু খাওয়ানো গেল না।
.
.
সবাই অনেকক্ষণ যাবৎ ঘরে যাওয়া আসা করছে, কিন্তু ইমনকে একবারো দেখে নাই। মিমোকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল।
মিমোর সাথে সাথে দৌড়ে এসে বলল, “হ্যাঁ আপু বলো।”

“তোর ভাইয়া কি বাহিরে?”

“না আপু। ছাদে আছে মনে হয়, কিছুক্ষণ আগেই গেল। আমি ডাকবো?”

“না থাক। খাইছে রাতে?”

“না। তুমি বসো, আমি ভাইয়াকে দেখে পাঠাচ্ছি।”

“আচ্ছা, ওকি আমার থেকে দূরে দূরে থাকছে?”

“ভুল বুঝছো আপু। মোটেও দূরে দূরে নেই। তোমার সমপরিমাণ কষ্ট ভাই ও পেয়েছে। হয়তো নিজেকে একটু সময় দিচ্ছে।”

“আচ্ছা। ফ্রি থাকলে ওকে আসতে বলিস।”

মিমো যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরেই ইমন এলো। বসলো মায়ার পাশে। অনেকক্ষণ যাবৎ দুজনেই নিরব থাকলো।

মায়াই প্রথমে বলল, “আমার জন্য তুমি বাবা হতে পারো নাই, এজন্য কি রাগ আমার উপর?”

ইমন তাকালো অবাক হয়ে। মায়া এ কথা কেন বলছে? ভুল হচ্ছে কেন তাকে? এই অবস্থায় মায়া যদি ইমনকে না বোঝে তাহলে কে ভালো বুঝবে?

মায়া পুনরায় বলল, “আমার জন্যই!”

“চুপ। তোর জন্য কি, হ্যাঁ? সব আমার জন্যই। আমি যদি তখন তোর কাছে থাকতাম!”

মায়া একবার ভাবলো, ইমন তো আসল কথাটা জানেই না। অবশ্য কেউই জানে না। তবে সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে। রিয়াদকে কোলে করে পাঁচতলা পর্যন্ত উঠতে গিয়েই তার ভেতরের প্রাণটাকে বি’স’র্জ’ন দিতে হলো।
চোখ দুটো ফের ঝাপসা হয়ে এল। মায়া ইমন এর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।

“আমি পারলাম না। আমার স্বপ্নটাও পূরণ করতে পারলাম না, তোমার স্বপ্নটাও পূরণ করতে পারলাম না। ভাগ্যটাই খারাপ আমার। তোমাকেও কিছু দিতে পারলাম না। পাঁচ মাসের কষ্ট আমার বৃথা গেল।”

“কাঁদিস না এইভাবে। কাঁদলে কি আর ফিরে পাওয়া যায়?”

“নাহ। কিন্তু আমরা আবার ট্রাই করবো, একটা বাচ্চার জন্য। যে চলে গেল তার, খালিঘর পূরণ করতে হবে তো নাকি! নাহলে আমি বাঁচবো না।”

মায়ার এই কথাটা শুনে ইমনের খেয়াল হলো ডাক্তারের কথা। মুহূর্তেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। মায়াকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসার সময় ডাক্তার বলেছিলেন, “পরবর্তীতে কনসিভ করলে, আপনার ওয়াইফের মৃত্যু ঝুঁকি থাকতে পারে; অথবা পুনরায় বেবি মিস কারেজ এর সম্ভাবনাও থাকতে পারে।”
.
.
.
.
.
চলবে……

[প্রেগনেন্সি, বেবি মিস কারেজ এ সম্পর্কে আমার একেবারেই আইডিয়া নেই। যতটুকু ধারণা পাইছি, দেওয়ার চেষ্টা করছি। আশা করি, ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ]

#মায়াবন_বিহারিনী🖤
#পর্ব_৩৯
#আফিয়া_আফরিন

ওই তো মেয়েটা খেলছে। আরো ছোট ছোট কয়েকটা বাচ্চাও আশেপাশে দেখা যাচ্ছে। কি সুন্দর চারপাশে ঘুরে ঘুরে মেলায় মেলা খেলছে। সবার পরনে লাল টুকটুকে জামা।
ইমা অবশ্য এদের থেকে বেশ ছোটো। তবুও কি সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে। মায়া আর ইমন দূরে দোলনায় বসে বসে দেখছে। আর হাসছে। মেয়েটার আনন্দই যেন তাদের আনন্দ!

মায়া ইমন কে উদ্দেশ্য করে বলল, “দেখো তোমার মেয়ে একদম তোমার মত হয়েছে।”

“দেখতে হবে না। তবে তোর সাথেও কিছুটা মিল আছে, একদম অল্প।”

মায়া হেসে বলল, “এরপর একটা ছেলে বাবু নিব দেখো। সে হবে আমার মত। তুমি তোমার মেয়ে নিয়ে থাকো। আমি আমার ছেলেকে নিয়ে থাকবো।”

মায়া এমন সময় খেয়াল করল মেয়েটা তাকে হাত নাড়িয়ে মা মা করে ডাকছে। মায়া এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটাকে ধরতে পারছে না। ক্রমশো ধোঁয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে। মায়া কিছুতেই তার নাগাল পাচ্ছে না।
হঠাৎ চিৎকার করে বলল, “আমার মেয়েটাকে বাঁচাও।”
.
.
আচমকা মায়ের চিৎকারে এমন উঠে বসলো। মায়া ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। চোখ খুলে উঠে বসতেই অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে মাথার ভেতরে। ইমন মায়ার দিকে পানি এগিয়ে দিল। এক ঢোকে সব পানি শেষ করলো মায়া।

“কি হইছে? চিৎকার কেন করলি?”

“একটা স্বপ্ন!”

“বাজে স্বপ্ন?”

“হ্যাঁ।”

“আচ্ছা থাক। ভুলে যা। একটু ঘুমা, তাহলে ভালো লাগবে।”

“পারছিনা ঘুমাতে। বিশ্বাস কর, চোখ বন্ধ করলেই মেয়েটার রক্তাক্ত দেহটা চোখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি নিজের চোখে দেখেছি তো।”

বলেই মায়া চুপচাপ ইমনের পায়ের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ল। ইমন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “শরীরটা কি খুব বেশি খারাপ লাগছে?”

“হু।”

মায়া একেবারে ছোট বিড়াল ছড়ার মত চুপচাপ করে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। মাথা তুলে বলল, “পানি দাও।”

ইমন পানি এগিয়ে দিল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “এখন কেমন লাগছে?”

“একটু ভালো।”

ইমন অস্পষ্ট স্বরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল, “ঘুম আসছেনা?”

“না। কথা বলোনা প্লিজ। ভালো লাগতেছে না। মাথা যন্ত্রণা করছে।”

ইমন আর কোন কথা না বলে অনেকক্ষণ যাবৎ মায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।
মায়া এক সময় ক্ষীর স্বরে বলে উঠলো, “আচ্ছা তোমার কষ্ট হচ্ছে না?”

“বাদ দিয়ে এই প্রসঙ্গ। বারবার এসব কথা তুলে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোন মানে হয় না।”

“আচ্ছা।”
.
.
.
পরদিন সকালে মায়াকে একা বসে থাকতে দেখে, জাহানারা এগিয়ে এলেন। এলোমেলো চুলগুলো বেঁধে দিয়ে বললেন, “আমাদের সাথে বাড়ি যাবি? দুদিন থেকে আয়, ভালো লাগবে।”

“না মা।”

“কি হবে গেলে? চল না? মহুয়া আছে। তুই গেলে ও তোর সাথে থেকে যাবে। চল।”

“না মা। আমি যাব না। আমি এখানেই ঠিক আছি।”

জাহানারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “ঠিক আর আছিস কই? তোর অবস্থা তো নিজের চোখেই দেখছি। আচ্ছা শোন, এভাবে একা একা বসে না থেকে বাইরে চল। সকাল থেকে কিছু খাস নি।”

“খাব না মা।”

কথায় আছে না বিপদ যখন আসে, তখন দলবলসহ হাজির হয়। এবারও তাই হয়েছে। এই কিছুক্ষণ আগেই ইমন মাঠে বসে ছিল। মায়াকে অনেক বলে কয়ে খাইয়ে এখানে এসেছে। তখনই কে যেন একটা বড় পাথর উপর থেকে নিচে ফেলল। পাথরটা পরলো, ইমনের ডান হাতে। সাথে সাথেই র’ক্তা’র’ক্তি অবস্থা!
সে বর্তমানে হাসপাতলে। মায়া তার মাথার কাছে বসে বসে কাঁদছে।
তার হাতের হাঁড় মচকে গেছে। ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে আর বলেছে, আজকের দিনটা হাসপাতালে রেখে কাল ছেড়ে দেবে।
ইমন হাসপাতালে আসতে চাচ্ছিল না। সুহাদা এক প্রকার জোর করে নিয়ে এসেছেন। মায়া একে তো নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তার উপর ইমনের এই অবস্থা দেখে একদমই ভেঙে পড়েছে।

পরদিন যখন ইমনকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো; সুহাদা কেঁদে কেঁদে বললেন, “কে জানে কার নজর পড়েছে আমার ছেলে মেয়েগুলোর উপর? গত কয়েকদিন ধরে শুধু হাসপাতালেই দৌড়াদৌড়ি। রাগ লাগছে।”

কেউ তাকে সান্ত্বনা দিলো না। সত্যিই কি কারো নজর পড়েছে নাকি ভাগ্য খারাপ?
.
.
.
সন্ধ্যার পর মহুয়া মাহিদকে ঘুম পাড়িয়ে, মায়াকে ডেকে নিয়ে এসে বেলকনিতে বসলো।

“এখনো মন খারাপ করে আছিস?”

“না, কিছু বলবা।”

“কি আবার বলবো? ওরকম মুখ মরা করে রাখিস না প্লিজ।”

“কিছু বলার থাকলে বল।”

“হ্যাঁ বলবো বলেই তো ডেকে এনেছি। কিন্তু এরকম অন্য মনস্ক হয়ে থাকলে তো হবে না।”

“আমি শুনছি, তুমি বলো।”

“আচ্ছা মানুষের জীবনে তো ভালো খারাপ কত কিছুই ঘটে। ঘটে না? তারপর কি মানুষ বেঁচে থাকে না? তোকেও সেরকম বাঁচতে হবে। সামান্য একটা ঘটনা এরকম মুষড়ে পরেছিস কেন?”

মায়া মহুয়া কে থামিয়ে দিয়ে বলল, “এটা সামান্য ঘটনা? একটা বাচ্চাকে নিয়ে এত স্বপ্ন সাজালাম। তাকে দুনিয়ায় আনার জন্য এত কিছু। তাকে দুনিয়ায় আনার আগেই, সে চলে গেল। এটা সামান্য?”

“আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থাটা। আচ্ছা এরকমটা হলো কি করে?”

মায়া মহুয়ার কাছে কিছু লুকালো না। বলে দিল, “সেদিন বিকেলে একটা ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পাঁচ তলায় উঠেছিলাম। সম্ভবত এই কারণে পেটে চাপ পড়ছে। আর তার ফল ভোগ করেছে আমার বাচ্চাটা।”
কথাটা বলতে গিয়ে অদ্ভুতভাবে মায়ার গলা কেঁপে উঠলো।

মহুয়া অবাক হয়ে বলল, “কি? কাউকে বলিস নি এই কথা?”

“না।”

“আল্লাহ! এই কাহিনী? তুই পাগল? এই জন্যই মা তোকে যেতে বলেছিল।”

“বাদ দাও।”

“বাদ দিলেই কি চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে যাবে। এটা তো বাদ দেওয়ার মতো বিষয় না। তুই বুঝতে পারছিস এই ব্যাপারটা? ইমন তোর এই অবস্থার জন্য নিজেকে দোষী করছে। বারবার বলছে, ও নাকি তোর ঠিকঠাক মতো খেয়াল রাখতে পারে নাই।
মা-বাবা নিজেকে দোষী করছে। তারা বলছে, তারা তোকে নিজেদের কাছে রাখলেই ভালো হতো। ফুপিও নিজেকে দোষারোপ করছে। অথচ এখানে অন্য কাহিনী!”

“আমি এখন কি করবো বলো?”

“কি করবি মানে? তোরই তো দোষ। তুই এমন হয়ে যাচ্ছিস কেন? জানিস তোর জন্য মানুষগুলো কত কষ্ট পাচ্ছে। মা তো বলেছে, চলে যাবে। তোর এই কষ্ট চোখে দেখতে পারছে না। একবার ভেবে দেখেছিস, কতগুলো মানুষকে নিজের অজান্তেই কষ্ট দিচ্ছিস। যে পৃথিবীতে আসে নাই, পৃথিবীর মুখই দেখল না তার জন্য এই ভালোবাসার মানুষগুলোকে কেন কষ্ট দিচ্ছিস? মানছি, তাকে তুই পেটে ধরেছিস। সে আর নাই। কিন্তু আবার ট্রাই করিস। তাই বলে তুই এভাবে ভেঙ্গে পড়বি? মানুষের জীবনে এমন ট্রাজেডি কি ঘটে না? তারপর আমাদের বেঁচে থাকতে হয়।
জীবন মানে একটা ফিরে আসার গল্প, মায়া। এভাবে ভেঙ্গে পরিস না। একটা বার অন্তত ইমনের কথাটাও ভাব।”

“আমি কি নিজের দুঃখে খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছি আপু? কিন্তু তুমিই বলো, বাচ্চাটা হলো না। কিন্তু তার মৃত শরীরটাকে বের করতে আমার সিজার করতে হলো, পেট কাটতে হলো। এর চেয়ে বড় অপমান আর কি হতে পারে?”

“এটা অপমান না মায়া। এটা মাতৃত্বের চিহ্ন!”

“মা না হয়েও এই চিহ্ন দিয়ে কি করবো আমি?”

“এই দাগটা পরবর্তীতে তোকে সাহস যোগাবে। এটা একটা মেয়ের জন্য গর্ব। আচ্ছা এই সবকিছু বাদ দেই। সর্বশেষে একটা কথা বলি, জীবন কখনো কারো জন্য থেমে থাকে না। ভুলে যা সব অতীত।”

বলেই মহুয়া উঠে গেল। মায়া অদ্ভুত ভাবে মহুয়ার বলা প্রতিটা কথা বোঝার চেষ্টা করছে। ঠিকই তো বলেছে, মহুয়া আপু। শুধু শুধু তার জন্য সকলে কেন কষ্ট পাবে?
.
মায়া উঠলো। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলো। এলোমেলো চুলগুলো আচড়ে বেণী করলো। তারপর প্রথমে ইমনের কাছে গেল। ইমন শুয়ে ছিল। মায়া ওর কপালে হাত দিয়ে দেখল হালকা জ্বর।

ইমন মায়াকে দেখে উঠে বসলো। মায়া বলল, “হাতের ব্যথাটা কি আগের থেকে একটু কম?”

“অনেকটাই। তেমন সিরিয়াস কিছু হয় নাই আমার। অযথাই তোরা কান্নাকাটি করে যা শুরু করলি। কি আর বলি?”

“কিছু বলতে হবেনা।”

ইমন প্রসঙ্গ পাল্টে বলল, “তুই একটা কাজ করতে পারিস। শুনলাম, মামা মামি নাকি চলে যাবে। তুইও তাদের সাথে চলে যা। কয়েকটা দিন থেকে আয় ভালো লাগবে। এখানে থাকতে থাকতে নিশ্চয়ই অরুচি ধরে গেছে।”

“তুমি যাবে?”

“আমি কিভাবে যাই?”

“তাহলে আমিও যাব না। আর আমার অরুচি ধরে গেছে তোমায় কে বলল? আমার খারাপ লাগলে তো আমি বলেই দিতাম। তাই এসব কথার কোন প্রশ্ন আসছে না। আর শোনো, তোমাকে ছাড়া আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

ইমন অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করল, প্রতিটা কথা বলার সময় মায়ার ঠোঁটের কিনারে উপচে পড়া হাসি। কিন্তু কেন?

মায়া শুধুমাত্র ইমনের সাথে নয়, সবার সাথে আগের মত হাসিখুশি ভাবেই কথা বলল। এতে বোধহয় সবার বুকের উপর থেকে পাথর নেমে গিয়ে ঠোঁটে মুচকি হাসির রেখা মিললো।

ইমন একপর্যায়ে ওকে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করল, “ব্যাপার কি? এই হাসির সবটাই কি লোক দেখানো মিথ্যে হাসি? হৃদয়ের রক্ত’ক্ষরণ কাউকে দেখাবি না বলেই কি এই নাটক?”

“একদম না। জীবন কি কখনো কারো জন্য থেমে থাকে? কেন তুমি কি চাও, আমি সবসময় মন খারাপ করে থাকি?”

“এই না না। একদম তা চাই না। এই রূপটাই তো দেখতে চাচ্ছিলাম। ভালো লাগছে এখন।”

মায়া হেসে বলল, “আচ্ছা এখন খেতে আসো।”

ইমন তাকালো হাতের দিকে। মায়া জিভ কেটে বলল, “উফ সরি, তোমাকে তো এখন আবার বাচ্চাদের মতো খাইয়ে দিতে হবে।”
.
.
রাতে মহুয়া খাবার সময় নাহিদকে মায়ার কাছে দিল। মায়া মাহিদ কে নিয়ে নিজের ঘরে এলো। ইমন ওকে দেখে বলল, “ও কি বসতে পারে?”

মায়া হেসে বলল, “শুধু বসতে? দাঁড়াতেও পারে। তোমার কোলে বসিয়ে দেই, খামচিও মারবে।”

ইমন হাত বাড়িয়ে ওকে কোলে তুলে নিল। এক হাত যেহেতু ব্যথা, তাই অন্য হাত দিয়ে ধরে কোলের উপর বসালো। অনেকক্ষণ পর্যন্ত তিনজনে, খেললো। কিছুক্ষণ বাদে মায়া ওকে মহুয়ার কাছে দিয়ে এলো। কান্না করছে। সম্ভবত ঘুম ধরছে ওর। মহুয়া ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিলো।
.
.
.
মায়ার হাসি হাসি মুখে থাকা সবটাই ছিল মেকি, লোক দেখানো। তার জন্য, শুধুমাত্র তার জন্য এতগুলো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে; এটা সে মানতে পারছিল না। তাই মেনে নিল, সবার জন্য তাকে ঠিক থাকতে হবে।
সেদিনের পর থেকে মায়া আর কাঁদে নি। একদিনও ক্যাম্পাসে ক্লাস মিস দেয়নি। এক বেলাও খেয়ে থাকেনি। এক রাতে ও না ঘুমিয়ে কাটায়নি। খুব স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছে মায়া, একদম আগের মত।
কিন্তু সে ভিতরে ভিতরে স্বাভাবিক নেই। থেকে থেকে মেয়েটার জন্য বুকের ভেতরটা হু হু করে ওঠে। হাসি চলে যায় তার মুখ থেকে। প্রয়োজনে হাসে, উ’দ্ভ্রা’ন্তে’র মত!
ক্যাম্পাসে অনেক বন্ধুবান্ধব। আগে কারণে অকারণে কথা হলেও, এখন প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। কাউকে ধারে কাছেও ঘেষতে দেয় না।

ইমন প্রথম প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করে নাই। মহুয়ারা চলে যাওয়ার পর থেকেই ইমন বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এই ব্যাপারটা একদম সে মেনে নিতে পারছে না।
তার কথা হচ্ছে, মায়া যা করার সামনাসামনি করুক। এভাবে একা নিজেকে কেন কষ্ট দিবে?
.
.
বিকেল দিকে ইমন এসে বলল, “চল কোথাও ঘুরে আসি। যাবি?”

মায়া একবার তাকালো ওর দিকে। তারপর মূ’র্তি’র মত স্থ’বি’র হয়ে বসে রইলো।

ইমন দু’কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে বলল, “কি হল কথা বলছিস না কেন?”

মায়া উঠে দাঁড়ালো। না গেলে ইমন হাজারটা প্রশ্ন করবে। তার চেয়ে চুপচাপ কোথাও থেকে ঘুরে আসা ভালো।

“চলো।”

ইমন বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে বলল, “রেডি হয়ে আয়।”
.
.
দুজনে মিলে বাইরে বের হলো। উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে লাগলো। মায়া কোন কথাই বলছিল না। ইমন অনেক কথা জিজ্ঞেস করছিল মায়াকে। মায়া হ্যাঁ/হু/উহু/না/জানি না/কিছু না এসবের উপর দিয়ে কথা চালিয়ে যাচ্ছিলো।

একপর্যায়ে ইমন বলল, “এরকম মন খারাপ করে থাকিস না মায়া প্লিজ!”

মায়া ইমন এর চোখে চোখ রেখে বলল, “কি করবো আমি বলতে পারো? শুধু মনে হচ্ছে, জীবনযাত্রায় এক ক্লান্ত পথিক আমি। বিশ্বাস কর, আমার কিছু ভালো লাগে না। ঘরে বন্দী হয়ে থাকতেই ভালো লাগে। বাইরে বের হতে ইচ্ছে হয় না। আমার দিন দুনিয়ার সবকিছু অসহ্য লাগে।”

ইমন কিছু বলল না। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে, বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো; পিচ ঢালা রাস্তার পানে।
.
.
.
.

চলবে……

[ কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here