মাতাল হাওয়া,৫ম_পর্ব,৬ষষ্ঠ পর্ব
তাসনিম জারিন
৫ম_পর্ব
বিচ থেকে ফিরে সবাই যার যার রুম এ গিয়ে ঘুমিয়ে গেল কারণ পরদিন অনেক জায়গায় ঘুরবে। সকাল এ সবাই উঠে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নাস্তা খেয়ে নিলো। নিপা বললো,
“আমরা আজকে কই কই যাব ভাই?”
“আমরা আজকে ছেড়াদ্বীপ, প্রবাল দ্বীপ এ যাব।” নিরব বললো। তুলি খুব এক্সাইটেড জায়গা গুলো ঘুরে দেখার জন্য। তুলি খেয়াল করলো রায়না আর রাকিব একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। তুলি কিছু টা আন্দাজ করতে পেরে মজার ছলে রাকিবকে বললো,
“রাকিব ভাই আপনাকে আজকে অনেক খুশি খুশি লাগছে বেপার কি হুম?” আর রায়না তোকেও খুব খুশি লাগছে কিরে কি বেপার?” তুলি আগে থেকেই জানে রায়না রাকিবকে পছন্দ করে।
রায়না বুঝতে পারলো তুলি ওদের মজা নিচ্ছে তাই তুলিকে চোখ গরম দিলো। তুলি মুচকি হাসছে। আর রাকিব মজার ছলে বললো,
“তুলি তোমার মুখে ও কেমন জানি আজকে একটু অন্যরকম হাসি এই সবাই খেয়াল করছ?”
তুলি লজ্জা পেয়ে মুখ ফুলিয়ে বললো,
“রাকিব ভাই এখন না পেরে আমাকে পচাচ্ছেন এইটা ঠিক না আর আমি তো এই প্রথম এতো জায়গায় ঘুরছি তাই আমি অনেক খুশি।”
নিরব তুলির কথা সুনে হাসলো। ওর তুলি যে অনেক লজ্জা পেয়েছে তা ও বুঝতে পেরেছে কারণ তুলির এই লাল টমেটোর মতো গাল গুলোই তার প্রমাণ, লজ্জা পেয়ে মেয়েটা আরও লাল হয়ে গেছে। নিরব তুলিকে লজ্জা থেকে বাচানোর জন্য বলে,
“চলো এখন যাওয়া যাক আজকেই আমাদের টাইম আছে কালকে চলে যাব তাই সময় নষ্ট করা যাবে না”।
সবাই ছেড়াদ্বীপ আর প্রবাল দ্বীপ এর উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ছেড়াদ্বীপ এ যেয়ে সবার মন জুরিয়ে গেলো এত সুন্দর মহান আল্লাহ পাক এর দান। সমুদ্রের বিশাল বিশাল ঢেউ, সারি সারি নারিকেল গাছ, কিছু কিছু লোকেরা ডাব বিক্রি করছে সবাই ডাব এর পানি খেলো। পাথর এ বসে সবাই ছবি তুলে নিল স্মৃতি হিসাব এ। তারপর সবাই প্রবাল দ্বীপ এ ঘুরে হোটেল এ চলে এলো। লাঞ্চ করে সবাই একটু রেস্ট নিতে রুম এ চলে এলো। বিকেল এ সবাই বিচ এ ঘুরতে যাবে কিন্তু তুলির খুব মাথা ব্যাথা করছে আর ওর মাইগ্রেন এর ব্যাথা আছে তাই ও না করে দিল যাওয়ার জন্য। সবাইকে দেখে নিরব বললো,
“কিরে তুলি কোথায়? ও এলো না যে?”
“ওর অনেক মাথা ব্যাথা করছে তাই ও যাবেনা” রায়না বললো। নিরব শুনে বললো,
“কি বলিস! আচ্ছা আমি তাহলে না যাই ওর কাছে থাকি ওকে একা রেখে যাওয়াটা তো ঠিক হবে না। রাকিব তুই সবাইকে দেখে রাখিস আর বেশিদূর যাস না কাছাকাছি কিছুক্ষন ঘুরে আয়।”
“ঠিক আছে দোস্ত আমি আছি তুই টেনশন নিছনা।তোর সবগুলো সুন্দরী বোনকে সেফ রাখবো আর যথাসময়ে হোটেল এ ফিরিয়ে নিয়ে আসবো, চোখ টিপ দিয়ে ইশারা করে নিরব কে বুঝালো যে তুই ও তুলির সাথে সুন্দর কিছু সময় কাটা।”
নিরব লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসলো। ওরা বের হয়ে গেলো আর নিরব ভাবলো তুলিকে যেয়ে দেখে আসি।তুলির খুব খারাপ লাগছে তাই ও গোসল করে নিল কিন্তু ঝামেলা বাধলো ও ওয়াসরুম এ কাপর নিয়ে আসতে ভুলে গেছে পরক্ষনেই ভাবলো রুম এ তো কেউ নেই আমি বরং তাওয়াল টা পেচিয়ে যাই যেয়ে কামিজ টা পড়ে ফেলবো কিন্তু ও কি আর জানে ওর রুম এ কেউ অলরেডি বসে আছে। তুলি দরজা খুলে বের হয়ে নিরব কে ওর বেড এ বসে থাকতে দেখে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নিল। নিরব তুলিকে দেখে বাকশূন্য হয়ে গেলো মুখ দিয়ে যেন কোনো কথা বের হচ্ছেনা। তুলি গায়ে একটা তাওয়াল পেচিয়ে আছে, সারা গায়ে ফোটা ফোটা পানি, মুখ এ চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, ঠোঁট টা অনবরত কাপছে যা দেখে নিরব নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না একটা অদৃশ্য মাদকতা ঘিরে ধরেছে ওকে। ধিরে ধিরে নিরব তুলির কাছে গেলো তুলির মুখ এ ফু দিয়ে বললো,
“এত স্নিগ্ধ এত পবিত্র কাওকে লাগতে পারে আমার জানা ছিলো না, সত্যি বলছি আজকে তোকে দেখে কন্ট্রোল হারা হয়ে যাচ্ছি, আজকে যদি তুই আমার বউ হতি তোর মাঝে হারিয়ে যেতে চাইতাম”। এইটা বলে নিরব তুলির অনেক কাছে চলে যায় নিরব এর গরম নিঃশ্বাস তুলির মুখ এর উপর পরছে তুলি না পারছে চোখ খুলতে না পারছে বন্ধ করতে। তুলি নিরব এর দিক এ তাকিয়ে দেখে নিরব একধ্যান এ ওর দিক এ তাকিয়ে আছে নিরব এর তাকিয়ে থাকা দেখে তুলি পারে না কোথাও লুকিয়ে যায় জীবন এ এত লজ্জায় কখনও পড়ে নাই ও। নিরব আস্তে আস্তে তুলির ঠোঁট এর কাছে চলে যায় তা দেখে তুলি চোখ বন্ধ করে নেয়। নিরব ওর কপাল এ চুমু খেয়ে বলল,
“এতটাও খারাপ ভাবিস না বৈধ করে নিয়ে যা করার করবো তার আগে কখনো না, তারাতারি কাপর পরে নে।” এইটা বলে নিরব রুম থেকে বের হয়ে যায়। আর তুলি লজ্জায় ওয়াসরুম এ দৌড় দেয়। তুলির খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে যে অনুভূতির নাম লজ্জা খুশির সংমিশ্রণ। ও বুঝতে পারছে না ওর লজ্জা পাওয়া উচিৎ নাকি নিরব যে বললো ওকে বউ বানাতে চায় সেই কথা নিয়ে খুশি হওয়া উচিৎ। নিরব বাইরে যেয়ে নিজের মাথা চাপরাচ্ছে কি করতে যাচ্ছিলো ও, আর তুলি ও কি ভাবছে ওকে নিয়ে কে জানে, ” উফ আর ভাবতে পারছি না যা ভাবার ভাবুক এইবার বাসায় যেয়ে মা কে বলবো যে তোমার ছেলে বিয়ে করার জন্য রাজি আর মেয়ে টা হচ্ছে তুলি মা আমি যতটুকু জানি অমত করবে না।” এইসব ভেবে ঠোঁট কামরে হাসছে নিরব আর ভাবছে আগে তো তুলিকে জানাতে হবে আমার মনের কথা। আর ঔদিক এ তুলি ভাবছে এই কাহিনি হওয়ার পর নিরব এর সামনে যাবে কি করে?
চলবে……….
মাতাল হাওয়া
৬ষষ্ঠ পর্ব
তাসনিম জারিন
রাতের খাবার খেয়ে নিরব আর তুলি হোটেল এর সামনে সমুদ্রের ধারে হাটার জন্য বের হলো। তুলি বিকেল এর ঘটনা মনে করে খুব লজ্জা পাচ্ছে। নিরব তুলির লজ্জা কাটানোর জন্য বলে উঠলো,
“তুলি একটা জায়গায় নিয়ে যাব যাবি”?
“কোথায়”?
“তার আগে চোখ বন্ধ করতে হবে”। এই বলে নিরব তুলির চোখ বন্ধ করে নিয়ে চললো। তুলি নিজেও জানেনা নিরব ওর জন্য কত সুন্দর সারপ্রাইজ তৈরি করে রেখেছে। কিছুদূর যেয়ে তুলির চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো নিরব। তুলি সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে নিরব এর দিক এ তাকালো। সমুদ্রের সামনে ছোটো করে একটা টেবিল বসানো তার উপর মোমবাতি জালানো, খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা চারিপাশের সবকিছু, টেবিল এর আসেপাশে বাশ দিয়ে ডিজাইন করা তার উপর কিছু মরিচ বাতি দিয়ে লাইটিং করা। সমুদ্রের গর্জন আর চারিপাশের সৌন্দর্য যেনো পরিবেশ টাকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে। নিরব তুলির হাত ধরে টেবিল এ নিয়ে বসালো তুলির হাত এ চুমু খেল তুলি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল।
“আজকের এই রাত টা স্মরণীয় করে রাখতে চাই তুলি, তোর জন্য এই সারপ্রাইজ প্লেন করেছি, তোকে আজ নিজের মনের অব্যক্ত কথা গুলো বলতে চাই, শুনবি আমার কথা গুলো”?
তুলি মাথা নারিয়ে সায় দিলো। নিরব তুলির সামনে হাটুগেড়ে বসে বললো,
“তুই তো জানিস আমি ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে পারি না, আজকে ও পেচাবো না যা বলবো সরাসরি বলবো, তুলি জানিনা কবে থেকে তুই আমার মনে জায়গা করে নিলি, তোকে একদিন না দেখলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, তোকে আমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ দেখুক আমি সেটা সহ্য করতে পারিনা, তোর কষ্টে আমার বুক ছিড়ে যায়, তোর হাসিতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে ও দ্বিধাবোধ করবো না কখনও, তোকে কেউ কিছু বললে সহ্য করতে পারিনা প্রতিবাদ করে উঠি, এটাই যদি হয় ভালোবাসা তাহলে হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি, পাগলের মতো ভালোবাসি”!
তুলি ছলছল চোখ এ তাকায় নিরব এর দিকে। তুলির ছলছল চোখ দেখে নিরব এর বুকে মোচড় মারে তাহলে তুলি কি ওর কথা শুনে কষ্ট পেল! তাহলে তুলি কি ওকে ভালবাসে না! নিরব অস্থির হয়ে তুলিকে জিজ্ঞেস করলো,
“তুলি তুই কি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছিস? আমি তো আমার মনের কথাগুলো তোকে বললাম প্লিজ তুই নিজের এত দামি অশ্রুগুলো আমার কথা সুনে বিসর্জন দিসনা। তোর মনে আমার জন্য কোনো ফিলিংস না থাকলে আমি তোকে কখনও জোর করবো না”।
তুলি চোখ মুছে বিরক্ত হয়ে বললো,
“সব কি আপনিই বলবেন? নাকি আমাকেও কিছু বলতে দিবেন? আমি কষ্ঠ পেয়ে কান্না করছিনা এইটা তো আমার খুশির অশ্রু। আপনি নিজেও জানেননা আমি আপনার জন্য কি ফিল করি! আপনার শাসন, আপনার কথা, আপনার হাসি, আপনার চোখে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, সারাক্ষণ আপনাকে নিয়ে ভাবা, আপনার কথা ভাবলে নিজের অজান্তেই মুখে অদৃশ্য এক হাসি চলে আসে, নিজেকে পাগল পাগল লাগে। এই অনুভূতির সাথে আমি আগে পরিচিত ছিলাম না কিন্তু আপনি আমাকে এই অনুভূতির সাথে পরিচয় করিয়েছেন। এই অনুভূতির নাম যদি ভালবাসা হয় তাহলে আমিও আপনাকে অনেক ভালবাসি। আজীবন আগলে রাখবেন তো আমাকে”?
“আজীবন হাতটা শক্ত করে ধরে রাখবো, আজীবন আগলে রাখবো। আজ তুই আমাকে দুশ্চিন্তামুক্ত করলি, বুকের উপর থেকে অনেক বড় বোঝা নামলো। এই পিচ্চিটার প্রেমে পরবো কখনও ভাবতে পারিনি কিন্তু দেখ আজ তোর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি”!
তুলি নিরবকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। নিরব তুলির কপালে আলতো করে চুমু খেল। তুলি আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল। দুইজন দুইজনের বুকের স্পন্দন সুনতে পাচ্ছে যেনো বলছে ” ভালোবাসি”। এই সময়টা এখানে থেমে গেলে মন্দ হতোনা। একজোড়া কপোত কপোতীর ভালোবাসার সাক্ষি এই আকাশ, বাতাস, সমুদ্র।
রায়না আর রাকিব সমুদ্রের ধারে হাটছে। রায়না রাকিব এর হাত জরিয়ে হাটছে। রাকিব রায়নাকে আলতো হাতে জরিয়ে ধরে আছে।
“আগে তো এমন ভাব করতা যেন আমাকে দেখতেই পারোনা আর এখন জরিয়ে ধরে আছো, ইশ! জানো কতদিন এইদিনটার অপেক্ষা করেছি। তোমাকে নিয়ে আকাশ দেখব, একাকী নিঝুম রাতে হাটব, প্রেম করব, ভালোবাসবো”।
“ইশ! শখ কতো এইলোকের। এইটা সেন্টমার্টিন তাই এইরাতে হাটছি দেখে কোনো সমস্যা হবেনা। ঢাকা হলে এতক্ষণে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতো। আমরা বিবাহিত না এইকথা খেয়াল আছে”? রায়না হেসে বললো।
“বিবাহিত না তো কি হয়েছে হয়ে যাব কিছুদিন সময় দিয়েই দেখোনা, ঢাকা যেয়েই মার সাথে তোমার ব্যাপারে কথা বলে তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। আজীবনের জন্য আমার কাছে আগলে রাখতে”।
রায়না লজ্জা পেয়ে রাকিব এর বুকে মাথা লুকালো। রাকিব রায়নার দুচোখে চুমু খেল। রায়না শিউরে উঠে রাকিবকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।
পবিত্র ভালোবাসার চাদরে দুইজোড়া কপোত-কপোতী মুড়িয়ে আছে। সময়টা থেমে গেলে মন্দ হতোনা। ( কি বলেন আপনারা…….?)
চলবে……….