মরীচিকা,অনুগল্প

মরীচিকা,অনুগল্প
মম_সাহা

“ভাবী যেখানে ডিভোর্স হওয়ার পর আমার বাবা আমাকে তার বাড়িতে ঠাঁই দেয় নি,আমার মা আমার দিকে ফিরে চায় নি,সেখানে তুমি আমাকে নিয়ে সে বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে আসলে কেনো ভাবী?” নিজের ননদ মরিচীকার কথায় ফিরে তাকায় নিলি।

হাতের বই গুলো টেবিলে রেখে এগিয়ে যায় নিলি তার ননদের দিকে।মরীচিকা খাটে হেলান দিয়ে বসে ছিলো।নিলি মরীচিকার পাশে বসে মরীচিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-“তোমার এক মা তোমায় রাখে নি,আমি তো তোমার আরেক মা তাই না?আমিও যদি আমার মেয়ের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই তবে আমার মেয়েটা যাবে কার কাছে শুনি?”

মরীচিকা তার ভাবীর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। নিলি ননদের মাথায় হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।এই মেয়েটার বয়স ততটাও বেশি না।তার থেকে দু এক বছরের ছোট।কিন্তু এ বয়সে সহ্য করতে হলো কত কি।এই যে নিলির স্বামী নেশা করতো সেটাও তো মরীচিকার জন্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো।ভাই ভাবীর সংসার সাজিয়ে দিয়েছিলো এই মরীচিকা।

সব ভেবে নিশ্চুপ রয় নিলি।কিইবা বলে স্বান্তনা দিবে সে।
_____
পরের দিন ভোরে নিলি নামাজ পড়ে মরীচিকার ঘরে এসেছে মরীচিকাকে দেখতে।এসে দেখে মরীচিকা নির্জীব হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। নিলির খটকা লাগলো।মরীচিকাকে স্পর্শ করেই দিলো এক চিৎকার।তার চিৎকারে পাশের রুম থেকে ছুটে আসল মরীচিকার ভাই হিমাদ্রি। সে নিজের বোনকে দেখে থমকে যায়। কারণ মরীচিকা ততক্ষণে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।মরীচিকার হাতে একটা চিঠি যেখানে লিখা ছিলো

প্রিয় ভাই-ভাবী,
আজ রাতেই হঠাৎ করেই আমার শরীর টা অসুস্থ হওয়া শুরু করছে।মনে হয় আমার হাতে সময় আর বেশিক্ষণ নেই।তাই এই চিঠি লিখে যাচ্ছি।

তোমরা একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করো নি আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স কেনো দিয়েছিলো।আমিও বলি নি।কিন্তু আজ বলে যাচ্ছি।আমি ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধির লাস্ট স্টেজে আছি।যার কারণে আমার প্রিয় মানুষটা আমাকে ছেড়ে দিলো।
বাবার বাসায় যখন আশ্রয় পাই নি তখন আরও বেশি অবাক হয়েছিলাম এ পৃথিবীর নিয়ম নীতি দেখে।কিন্তু যখন তুমি আর ভাবি আমার হাতটা ধরে ছিলে তখন আমি আবার ভরসা পেয়েছিলাম কতদিন বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু সব তো আমার হাতে নেই তাই চলে যাচ্ছি।আমি নাহয় মরীচিকা হয়েই রইলাম তোমাদের কাছে।একদম ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থাকলাম।সত্যি না হয় নাই রইলাম।ভালো থেকো তোমরা।

ইতি
মরীচিকা

মরীচিকার জীবনের এমন ভয়ঙ্কর সত্যি জেনে থমকে যায় ভাই-ভাবী।তাহলে বুঝি মরীচিকা নামটা স্বার্থক হলো।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here