ভালোবেসে ভুল করিনি (পর্ব ০৫,০৬)

ভালোবেসে ভুল করিনি (পর্ব ০৫,০৬)
Tanjina Islam

অনেক বলার পরেও ভাইয়া আমাকে যেতে দেয়নি। আপুর বিয়ের শপিং য়ে যেতে না পারায় রাগে দুঃখে মোবাইলে গেম খেলছিলাম। ঠিক ২০মিনিট পর ভাইয়া একটা শপিং এর প্যাকেট নিয়ে ফিরে এলো।
ভাইয়া কে দেখে আমি অবাক হয়ে বললাম,
এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলে যে?
ভাইয়া বললো,
বেশি কথা না বলে এই ড্রেসটা পড়ে রেডি হয়ে আয়।
আমি মনে মনে ভাবলাম হয়তো আমাকে এখন শপিংএ নিয়ে যাবে তাই কথা না বাড়িয়ে রেডি হতে গেলাম কিন্তু ওয়াশ রুমে গিয়ে প্যাকেট টা খুলে সাদা কালারের গাউন দেখে আর একদফা অবাক হলাম। যে কালারের জন্য আজ আমার সাথে হিংস্র ব্যবহার করলো এখন সেই কালারের ড্রেসই পড়তে বলছে।
রেডি হয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম।ওয়াশ রুম থেকে শব্দ পেয়ে চিল্লিয়ে বললাম,
ভাইয়া তুমি কি ফ্রেশ হচ্ছো ?
ভাইয়া বললো,
হুম। তুই ৫মিনিট অপেক্ষা কর?
ভাইয়ার কথা শুনে আমি খাটে গিয়ে বসে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
হঠাৎ বালিশের কাছে একটা ডায়রি দেখে মনে মনে বললাম,
এখানে নিশ্চই ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড এর সম্পর্কে কিছু লিখা আছে।এই ভেবে খুশি মনে ডায়রির প্রথম পাতা খুললাম কিন্তু কিছু লেখা না দেখে হতাশা নিয়ে দ্বিতীয় পাতা খুলতেই সেখানে দেখতে পেলাম বড় বড় করে লেখা,
আমি তো ওকে ভালোবেসে ভুল করিনি।
আমি ওর ভালোবাসার মাঝে আসিনি বরং ঐ চলে এসেছে আমার ভালোবাসার মাঝে।
পরের পাতা খুলতে যাবো ঠিক সেই সময় ভাইয়া এসে আমার হাত থেকে ডায়রি টা কেড়ে নিয়ে বলল,
এ রকম বিয়াদবি যেন আর না দেখি। অন্যের ডায়রি না বলে পড়তে হয়না তুই জানিস না?
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
সসরি ভাইয়া আর পড়বো না।
ভাইয়া বললো এখন তাড়াতাড়ি গাড়িতে গিয়ে বস।
আমি ভাইয়ার কথা শুনে রুম থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়া এসে গাড়ি স্টাট দিলো।
আমি একটা জিনিস খুব ভালো ভাবে লক্ষ করছি ভাইয়া আমার দিকে ভুলেও একবার ও তাকাচ্ছে না।আর ভাইয়ার চোখগুলো ও অনেক ফুলে আছে।
গাড়ি টা যখন ইয়ারপোটের দিকে যাচ্ছিলো তখন আমি ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া এদিকে যাচ্ছো কেন?
ভাইয়া বললো,
তোকে আজ আমেরিকা পাঠাবো তাই।
আমি ভয়ে ভয়ে বললাম,
আপুর বিয়ে না খেয়ে আমি কোথাও যাবো না।আর আমেরিকা তো আমি আমার বরের সাথে হানিমুনে যাবো। এখনি একা যাবোনা আমি,
এই বলে কান্না শুরু করলাম।
ভাইয়া আমাকে ধমক দিয়ে বললো,
একদম আমার সামনে নেকা কান্না করবি না।
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম।
এয়ারপোটে এসে ভাইয়া গাড়ি পার্কিং করলো। আমি মনে মনে ভাবছি সত্যিই কি ভাইয়া আমাকে বিদেশ পাঠিয়ে দিবে? গাড়ি থেকে নামামাত্রই একটা ছেলে দৌড়ে এসে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলো।
ছেলেটাকে চিনতে বেশি সময় লাগলো না কারণ ছেলেটা ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড রোদ ভাইয়া। রোদ ভাইয়ার বাবার ব্যাবসার কাজে বিদেশ গিয়ে ছিলো একবছর আগে।
কিন্তু তার তো আর ও কিছু মাস পর ফিরার
কথা ছিল এতো তাড়াতাড়ি ফিরলো কেন?
রোদ ভাইয়া আমাকে দেখে ভাইয়া কে বললো,
থ্যাংকস দোস্ত। আমার পরিকে এভাবে আনার জন্য।
এই বলে ইয়ার্পোটে সবার সামনে হাঁটু গেড়ে আমাকে প্রোপোজ করলো।
এই সবের আগামাথা কিছু না বুঝে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম ভাইয়া ইশারায় আমাকে রোদ ভাইয়ার প্রপোজ এক্সেপ্ট করতে বলছে।
.
.
.
চলবে………..

ভালোবেসে ভুল করিনি (পর্ব ০৬)
Tanjina Islam

ভাইয়ার ইশারা দেখে মাথা আর ঠিক রাখতে পারলাম না।
ঠাস করে ভাইয়ার গালে একটা চড় দিয়ে বসলাম।
ভাইয়া অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো ভাইয়া কল্পনা ও করিনি আমি তাকে এভাবে থাপ্পড় মারবো।
আশেপাশের সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
সেদিকে আমার খেয়াল নেই। ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
এতদিন ভাবতাম তুমি আমাকে ফোন ভেবে সবসময় আমাকে শাসন করো কিন্তু না তোমাকে তোমার বন্ধু দায়িত্ব দিছে বলে সেগুলো পালন করতে।
তোমাকে ভাই ভেবে সম্মান করতাম বলে এতো দিন তোমার সব অত্যাচার মেনে চলতাম। কিন্তু এখন তোমাকে ভাই ভাবতেই আমার ঘৃনা লাগছে।আর যাইহোক কোনো ভাই কোনো দিন এভাবে নিয়ে এসে অন্য ছেলের প্রপোজ এক্সেপ্ট করতে বলবে না।
তোমার বন্ধু বলেছে বলে তুমি এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে আসলে একবার ও ভাবলে না আমার তো খারাপ ও লাগতে পারে।
এই বলে ওখান থেকে বেরিয়ে আসলাম। রোদ ভাইয়া আমাকে ডাকছে কিন্তু আমি তা অগ্রাহ্য করেই চলে আসলাম।
ভাইয়া আমার কথা গুলো মাথা নিচু করে নিরবে শুনেছে।
মাঝ রাস্তায় এসে পা ব্যাথা করতে লাগলো।
কেন যে রাগ দেখিয়ে চলে আসতে গেলাম। এখন নিজের ও কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু আমিই বা অরকম করবো না কেন। ঐসব দেখে ভাইয়ার সেদিন ফোনে কথা গুলোর মানে বুজতে তেমন অসুবিধা হয়নি। রোদ ভাইয়া বলেছে বলেই এতো দিন ভাইয়া আমাকে পড়িয়েছেন।আর আমার কোনো ক্ষতি হতে দেয়নি শুধু মাত্র রোদ ভাইয়াকে কথা দিয়েছে বলে।
রাস্তার বসে ভাইয়ার গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। গাড়ি আসতে দেখে গাড়ি থামাতে বললাম। ভাইয়া গাড়ি থামালো। আমি গিয়ে পিছোনের ছিটে বসলাম। আমাকে পিছনে বসতে দেখে রোদ ভাইয়াও পিছনে এসে বসলো।
আর ভাইয়া নিরবে গাড়ি চালাতে লাগল।
ভাইয়া কে দেখে এখন ড্রাইভার ড্রাইভার লাগছে বলে আমি হেসে উঠলাম। আমাকে হাসতে দেখে রোদ ভাইয়া বলল,
যানো পরি তোমাকে হাসলে অনেক সুন্দর লাগে।
আমি একটু রাগ দেখিয়ে বললাম,
আমার একটা নাম আছে। একদম পরি বলবেন না।
রোদ ভাইয়া বললো,
ওকে পরি। তুমি যা বলবে তাই হবে আর কখনো তোমাকে পরি বলবো না।
সারা রাস্তা রোদ ভাইয়া অনেক বকবক করেছে।
বাসায় এসে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় ঢুকতে যাবো তখন রোদ ভাইয়া আমাকে ডেকে বললো,
একবার ভেবে দেখো পরি। আমার মতো অভাগা কে ভালো বাসা যায় কিনা।
আমি চোখ গরম করে চলে আসলাম।
রুমে এসে যখন একটু রাগ করলো। তখন মনে পড়ে গেল রাগের মাথায় ভাইয়া কে চড় মেরে ফেলেছি।
যে ভাইয়ার মুখের উপর কোনো দিন কথা বলিনি আজ তাকে থাপ্পড় মারলাম।
ভাইয়া যদি মা-বাবা কে বলে দেয় তাহলে আমার আর এই বাসায় থাকা লাগবে না। সোজা ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।
সন্ধ্যায় সবাই চলে আসলো।
শপিং য়ে নিয়ে না যাওয়ার কারণে কারো সাথে কথা বললাম না।কেউ আমার রাগ ভাঙানোর কোনো চেষ্টা করলো না দেখে নিজে থেকেই কথা বললাম।
রাতে খাবার টেবিলে ভাইয়া কে না দেখে রিয়া কে জিগ্যেস করলাম,
ভাইয়া কোথায়?
রিয়া বললো,
ভাইয়া তো রোদ ভাইয়ার বাসায়। অনেক দিন পর রোদ ভাইয়া ফিরেছে তো তাই আজ ভাইয়া রোদ ভাইয়ার বাসায় থাকবে।
এটা শুনে আমার মন খুশিতে ভরে গেল তার মানে আজ ভাইয়া আমাকে পড়াতে আসবে না।
রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলাম তখন রোদ ভাইয়া ফোন করে বিরক্ত করা শুরু করলো। নিশ্চয়ই ভাইয়ার থেকে নাম্বার নিচে।
বিরক্ত হয়ে মোবাইল বন্ধ করে রেখে দিলাম।
কিন্তু রোদ ভাইয়া এখানেই থেমে যাইনি সকালে তার বাবাকে নিয়ে হাজির হয়েছে।
রোদ ভাইয়া পাত্র হিসেবে ভালো দেখে মা-বাবা বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।
আমি না করায় মা আমাকে বলে,
তুই তো আর কাউকে ভালো বাসিস না তাহলে রাজি না হওয়ায় কি আছে? রোদ পাত্র হিসেবে ভালো।
আমার কোনো কথা না শুনেই একপ্রকার জোর করেই আমার বিয়ে ঠিক করলো আপুর যে দিন বিয়ে সেদিন। আমার সেই ছোট বেলা থেকেই কত স্বপ্ন ছিল আপুর বিয়ের সময় অনেক মজা করবো কিন্তু সব আশা ভেস্তে গেল।
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর রং
থেকে রোদ ভাইয়ার সাথে প্রতিদিন কথা বলা শপিংয়ে যাওয়া খুবই বিরক্ত লাগে।
এতকিছুর মাঝে ভাইয়া একবার ও আমার সামনে আসিনি। এতো কিছুর মাঝে ভাইয়া কে অনেক মিস করা শুরু করলাম। এখন রোজ পড়ার টেবিলে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু ভাইয়া আসেনা। কলেজ না গেলে ও কেউ বলতে আসেনা।সবসময় একা থাকতে হয়। ভাইয়া কে দেখবার জন্য খুব মন চাইছিল।
তাই আজ ৩দিন পর ভাইয়ার রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে ভাইয়াকে দেখতে না পেয়ে চলে আসছিলাম তখন ভাইয়ার সেই ডায়রি টা চোখে পড়লো।
মন খারাপ করে পড়তে লাগলাম।
কিন্তু ডায়রি টা পড়ে আমার চোখে পানি চলে আসলো।
ডায়রি পড়ে এটা বুঝতে পেরেছি ভাইয়া আমাকে সেই ছোট বেলা থেকেই ভালো বাসে।আর ভালো বেসেই ছোট বেলা থেকেই আমাকে সেভ করে আসছে। কিন্তু ১বছর আগে আমার বার্থডে দিন আমাকে সাদা ড্রেসে দেখে রোদ ভাইয়া আমার উপর ক্রাশ খায় আর পরে তা ভালোবাসার রুপ নেয়। ভাইয়া কে বলায় অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভাইয়া খুব
আমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ভুলতে পারে না। নিজের ভালোবাসার কথা নিজের মনের কোণে রেখেই ভাইয়া রোদ ভাইয়াকে আমাকে পেতে হেল্প করে।
নিজেকে আজ বড্ড বোকা মনে হচ্ছে।
এতদিন এতো কাছে থেকে একজন মানুষ আমাকে পাগলের মত ভালোবাসচ্ছে আর আমি কি না একটা বারের জন্যও বুঝতে পারলাম না।
কিন্তু এখন আমার কি করা উচিত?
এখন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
অনেক চেষ্টা করার পরও মা-বাবা কে কিছু বলতে পারলাম না।
দিন গুলো ও অনেক তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া শুরু হলো। এখন আমি ও বুঝতে পারি ভাইয়া কে আমি ভালো বেসে ফেলেছি কিন্তু আমার কিছু করার নেই।
বিয়ের দিন ভাইয়া কে দেখতে পেলাম।
অনেক শুকিয়ে গেছে ভাইয়া। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে দেখে বুঝা যাচ্ছে ভাইয়া রাতে ঘুমাতে পারে না।
কাজী এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। আপুর বিয়ে পড়ানো হয়ে গেলে আমার কাছে এসে আমাকে কবুল বলতে বলে।
.
.
.
চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here