ভালোবাসি_তোমাকে,পর্ব:২য়
লেখকঃ MD_Sumon_Kobir
আফিয়ার কথা শুনে আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম।কারন ওর কথায় যুক্তি আছে।যা বর্তমান জামানায় খুবই দুর্লভ।
আফিয়াঃ ১ম কারন; কলেজের সবাই জানে সাঈদ বড়লোকের ছেলে। ওর বাবার অর্থ-সম্পদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু আমি গরিবের মেয়ে।আমি যদি ওকে এইভাবে অপমান না করতাম প্রর্থমেই ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যেতাম তাহলে অনেকে বলতো আমি ওদের ধন-সম্পদের লোভে পড়ে ওর প্রেমে পড়েছি।ওর টাকার জন্য ওকে প্রেমের ফাদে ফেলেছি।।বিনা অপরাধে যদি কেউ অপবাদ দেয় তাহলে কি ভালো হবে।তাই আমি ওকে অপমান করে ফিরিয়ে দিয়েছি।আসলে এটাকে অপমান করা বলে না।আমার কাছে এটা ভালোবাসার বহির প্রকাশ। যদি ও বুঝে থাকে।
আমিঃ আচ্ছা বুঝলাম, এখন দ্বিতীয় কারণ টা কি বলো!
আফিয়াঃ ২য় কারণটা না হয় অপ্রকাশিত থাকুক।
আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে,বলতে যখন চাও না।জোর করবো না।
আফিয়াঃ হুম,তবে এটা জেনে রাখুন, ২য় কারণটা আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য।
আমিঃ হুম তাহলে আমি বুঝে গেছি।আচ্ছা এখন তাহলে উঠা যাক, বাড়ি যেতে যেতে কথা হবে।
তারপর আমরা চলে আসলাম।কলেজের গেটে দাড়িয়ে আছি একটা গাড়ির জন্য।তখনি সাঈদের দিকে আমার চোখ পড়ে।দেখি ও একটা গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ফুলটা শুকিয়ে গেছে।দেখে মনে হলো আফিয়ার জন্য কেনা সেই গোলাপ।
আমি সাঈদকে ডাক দিলাম। সাঈদ আমার কাছে আসলো।ছেলেটার মুখে সেই চেনা হাসিটা আর নেই।কেমন যেন লাগছে।
আমি সাঈদকে আফিয়ার থেকে কিছুটা দুরে নিয়ে গিয়ে ওকে বললাম,,,,,,,,, আফিয়ার কথায় কষ্ট লেগেছে।
সাঈদঃ না ভাইয়া ওর কথায় আমি কষ্ট পায় নি।কষ্ট পেয়েছি আমার বন্ধুর আচরণে। সে বলে কিনা আমি যদি আর কোনো দিন আফিয়াকে প্রোপোজ করি তাহলে সে আমাকে মারবে।অথচ সে আমার ছোট বেলার বন্ধু।
আমিঃ তুমি আফিয়াকে খুব ভালোবাসো তাই না।
সাঈদঃ হ্যা অনেক ভালোবাসতাম।
আমিঃ ভালোবাসতে এখন আর বাসো না।
সাঈদঃ এখন ভালোবাসি কি না বলতে পারবো না।কারন আমি এখন আমার বন্ধুর আচরণে অনেক ব্যথিত। আমি অন্য কিছুই ভাবতে পারছি না।
আমিঃ তা বাড়িতে যাবে না।
সাঈদঃ হ্যা যাবো।
আমিঃ চলো তাহলে আমাদের সাথে।
সাঈদঃ হ্যা চলেন।ভাইয়া একটা কথা বলবো।
আমিঃ হ্যা বলো।
সাঈদঃ ভাইয়া আপনি আফিয়ার সাথে আমাদের বিষয়ে একটু কথা বলবেন।
আমিঃ হ্যা বলবো।তবে এখন না কিছুদিন পরে।
সাঈদঃ ঠিক আছে ভাইয়া।চলেন তাহলে।
আমি,আফিয়া, সাঈদ একটা সি এন জি তে উঠলাম। সাঈদ আমার ডান পাশে। আর আফিয়া আমার বাম পাশে।আমরা গাড়িতে কেউ কোনো কথা বলছি না।কিছু দূর যাওয়া পরে আফিয়া সাঈদের হাত থেকে গোলাপটা নিয়ে নিলো।আর সাঈদকে সরি বলে আবার চুপ হয়ে গেলো।কিন্তু সাঈদ আগের মতোই চুপচাপ।কোনো কথা বলল না।আমরা তিনজন ছাড়া সি এন জিতে আর কেউ নেই।সবাই নেমে গেছে।আমি ওদের মাঝ থেকে উঠে অন্য পাশে এসে বসলাম।সাথে সাথে আফিয়াও উঠে আমার পাশে বসলো।এতে আমি অনেক-খানি অবাক হলাম।কিন্তু কিছু বললাম না।সবার আগে সাঈদ নেমে পড়ে।কিছু দূর গিয়ে আমিও নেমে যায়।আফিয়ার খালার বাসা এখনো কিছুটা দূর।অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হয়।
আমি মেসে এসে ফ্রেশ হয়ে একটা প্লান তৈরি করতে বসে পড়লাম।প্লানটা অনেক দারুন ভাবে সাজিয়েছি।কিন্তু চিন্তা হচ্ছে প্লান অনুযায়ী ঠিকঠাক কাজ হবে কিনা।
দুপুরে সামান্য কিছু খেয়ে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম প্লানের প্রথম কাজ সম্পন্ন করতে।গন্তব্যে পৌছাতে প্রায় আধা ঘন্টা মতো লাগলো।আমি মুলত এসেছি একজনের সাথে দেখা করতে।যে আমাকে প্লান অনুযায়ী সাহায্য করতে পারবে।তার সাথে দেখা করতে বেশি একটা বেগ পেতে হয়নি। আমি দেখা করে চলে আসলাম।আমার প্রথম প্লান সফল হয়েছে।আমি এখন নিশ্চিন্ত।পরবর্তী প্লান গুলোতে সফল হলেই কেল্লা ফতে।তারপরে মেসে চলে আসলাম।সন্ধার সময় টিউশনিতে চলে গেলাম।টিউশনি করিয়ে মেসে এসে আরামচে একটা ঘুম দিলাম।
পরের দিন কলেজে,,,,,,,
আমি ক্লাসে বসে আছি।এমন সময় কলেজের দপ্তর এসে আমাকে বললো,,,,,,,,সুমন প্রিন্সিপাল স্যার তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছে।
আমিঃ হ্যা আপনি যান আমি আসছি।
আমি চলে গেলাম প্রিন্সিপাল স্যারের রুমে।আমাকে স্যার বসতে বললো।আমি বসলাম।
তারপরে শুরু হলো জেরা।আমি স্যারের সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম।স্যার তো খুব খুশি।তখন স্যার কাকে যেন কল করে বলে,,, ভাই সব ওকে আপনি আসেন।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম,,,, কোনো সমস্যা স্যার।
স্যারঃ না কোনো সমস্যা না।তুমি যে পথে আছো তার অবসান ঘটাতে হবে।
আমিঃ মানে স্যার বুঝলাম না।
স্যারঃ একটু পরে বুঝতে পারবে।তুমি এখন যাও।সময় হলে ডেকে পাঠাবো।।
আমিঃ জ্বী স্যার।
আমি স্যারের ওখান থেকে চলে আসলাম।ক্লাসে এসে বসে আছি।এমন সময় আফিয়া এসে আমাকে বলে একটা জিনিস দেখবেন।
আমিঃ কি জিনিস।
আফিয়াঃ চলেন তাহলে।
আমি ওর সাথে গেলাম। তারপর ও যা দেখালো তা দেখার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না।দেখি সাঈদ একটা মেয়ের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে।
সাঈদ যার সাথে কথা বলছে তাকে আমি চিনি।
এদিকে আফিয়ার চোখ অশ্রুতে ভরে গেছে।অশ্রু-শিক্ত নয়নে ও নিচে চলে গেলো সোজা সাঈদের কাছে।সাঈদ আফিয়াকে দেখে কিছুটা ঘবড়ে যায়।
আফিয়া সাঈদকে স্বজোরে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,,,,,,,,,,,,,,, এই তোর ভালোবাসার নমুনা।ভন্ড কোথাকার।আমিতো ভেবেছিলাম, তুই সত্যিই আমাকে ভালোবাসিস।তোর সাহস হয় কি করে আমাকে প্রোপোজ করে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলার। আর এই মেয়ে তোমারও কি এই একি দোষ নাকি।একটা ছেলে দেখলেই টাংকি মারতে আসো কেনো।
এই বলে আফিয়া মেয়েটাকে থাপ্পড় দিতে যাবে তখনি সাঈদ আফিয়ার হাত ধরে ফেলে। আর বলে,,,,
সাঈদঃ কি করছো তুমি কাকে থাপ্পড় মারতে যাচ্ছিলে জানো।
আফিয়াঃ কে আবার,,তোর ২য় প্রেমিকা।
সাঈদঃ এ আমার প্রেমিকা না।
আফিয়াঃ এসব আমি বুঝি।এখন এই মেয়েকে কাজিন বলে চালিয়ে দিবি।একটা কথা শুনে রাখ তুই যতই প্রমান দেখাতে যাস না কেন।আমি কিছুই বিশ্বাস করবো না।আর আজকের পর থেকে যেন আমার সামনে তুই আসবি না।Good bye..
সাঈদঃ আরে আমার কথা তো একবার শুনবা নাকি।
কিন্তু আফিয়া কিছু না শুনে কাদতে কাদতে ওখান থেকে চলে যায়। আমি সাঈদের কাছে গেলাম।আর বললাম,,,,,,,,দেখেছো পাগলির কাজ।
তাহিয়াঃ হুম দেখতে হবে না কার ভাবি।
সাঈদঃ সব দোষ তোর।তোকে বার বার নিশেধ করে ছিলাম না আসতে।এখন আমি ওকে কিভাবে বুঝাবো।
তাহিয়াঃ আরে আমি যদি না আসতাম তাহলে কি তুই জানতে পারতিস আফিয়া তোকে ভালোবাসে।
সাঈদঃ কিন্তু ও তো রাগ করে চলে গেলো।
তাহিয়াঃ আরে এসব নিয়ে টেনশন কেন করিস।আমি ওর সাথে কথা বলবো।তখন দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
সাঈদঃ তাই যেব হয়।পারলে সুমন ভাইয়ারও হেল্প নিস।
তাহিয়াঃ সরি ভাইয়া তোমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে আমরা কথা বলছি।আচ্ছা কেমন আছো তুমি।
সাঈদঃ ওনি কিন্তু তোর হোম টিচার।
তাহিয়াঃ তাতে কি।আমি উনাকে তুমি করেই বলি।
আমিঃ আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি আসছি।
এই বলে আমি চলে আসি।তার প্রায় মিনিট ১৫ পরে প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ডাকে পাঠায়।আমি উনার রুমে গিয়ে দেখি একজন ভদ্রলোক বসে আছেন।আমি রুমে প্রবেশ করতেই।ভদ্রলোকটি আমার দিকে তাকায়।লোকটিকে দেখে আমি যেন আকাশ থেকে পড়েছি।মনে মনে ভাবছি ইনি এখানে কি করে।ইনার কাছে তো আমার কোনো প্রয়োজন বা কাজ নেই।আমাকে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেকে প্রিন্সিপাল স্যার ডাক দেন।আমি কাছে গিয়ে যা বুঝলাম সেটা আরো অবাক করার মতো কিছু।
To be continue…………