#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে,০২,০৩
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (২)
**রঙে ডোবা লাল ব্যাঙ
ভাঙা গলায় ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ***
#রোকসানা_রাহমান_(গল্পকন্যা)
দুলাইন লিখেই রিপ্তির চোখ ঝলমল। একটু আগের অপমানের সবটা শোধ তুলেছে এমন অনুভব হচ্ছে। প্রাণপুর্ণ অনুভূতি নিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দরজার কাছ থেকে আবার ভাঙা গলার সুরধ্বনি,,,
“” তোর আমায় মনে পড়লে
তুই দে না মিসকল
তোর আমায় মনে পড়লে
তুই দে না মিসকল””(মুভিসং)
রিপ্তি ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলো। প্রচন্ড রাগ নিয়ে সে পেছন ঘুরে দাড়িয়েছে। না অনুভব দরজার সামনে দাড়িয়ে নেই। কিন্তু ছিলো এটা তার কন্ঠধ্বনিতে বুঝতে পেরেছে। রিপ্তি ছুটন্ত পা ফেলে দরজার কাছে এগুলো। যা ভেবেছিলো তাই। লাল ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ছেড়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে। কন্ঠে এখনো মিহি গুনগুনের সাথে হাতের আঙুল এবং মাথা নাড়াচ্ছে। রিপ্তির সহ্য হচ্ছেনা। সহ্য হওয়ার মতো কি? এক অচেনা ছেলে তার দুয়ারে এসে বারবার ইভটিজিং করছে আর সে চুপ করে থাকবে? হতে পারে বাবার পরিচিত কিন্তু তার তো নয়। মেয়ে হিসেবে না হোক,শিক্ষকের কন্যা হিসেবে তো তার মিনিমাম সম্মান পাওয়া উচিত। সম্মান করবে নাতো অপমান কেন করবে? তাও গানকলি দিয়ে? রিপ্তি আর স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারলোনা। ধপধপ পা ফেলে অনুভবের পেছন পেছন ছুটছে। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই অনুভবের পথ আটকে দাড়ালো রিপ্তি। কন্ঠে ধারালো ঝংকার নিয়ে বললো,,
“” সমস্যা কি আপনার? আগেরবার নাহয় আমি অপরিচিত ছিলাম তাই বাজে ইঙ্গিতের গানটা হজম করে নিয়েছি কিন্তু এবার কেন গাইলেন? আমার বাবা আপনাকে এতো পছন্দ করে তার বিনিময়ে আপনার এই প্রতিদান? তার মেয়েকে ইভটিজিং করছেন? আপনার তো আগের কান্ডের জন্য লজ্জাবোধ হওয়া উচিত। সরি বলা উচিত তা না করে একি কাজ পুনরাবৃত্তি করছেন?””
রিপ্তি রাগে ফাটছে। এতে যেন অনুভব আরো বেশি মজা পাচ্ছে। নিজের হাতদুটো লাল পকেটে পুরে সোজা হয়ে দাড়ালো। বেশ আরাম এবং মনোযোগিতে রিপ্তির দিকে চেয়ে আছে।
অনুভবের এমন শান্ত ও নিরব আচরনে রিপ্তির মেজাজ আরো খারাপ। এমন অদ্ভুত মানুষ সে দ্বিতীয়টি দেখেনি। একটা মানুষ রেগে ফেটে চৌচির আর সে চুপ। কোনো প্রতিক্রিয়া নেই? হয় উল্টো রাগ দেখাবে নাহয় বিনয়ী হবে। কিন্তু এ তো কিছুই করছেনা। নামের সাথে কোনো মিল নেই। এমন ছেলের এমন নামটা কে রেখেছে এটা জানতে ইচ্ছে রিপ্তির। কিন্তু এখন তো সে রেগে আছে। আগে রাগ ঝাড়তে হবে। এমনিতেই এই ছেলের জন্য পুরো হলুদ পার্টিটাই নষ্ট!
“” মুখে কি তালা লাগিয়েছেন? নাকি কেউ সুপার গ্লু এটে দিয়েছে? বোবাও তো নন। আমার জানামতে বোবারা গান গাইতে পারেনা। আপনি পারেন তারমানে আপনি বোবা নন। তাহলে কথা বলছেননা কেন? কথা বললে মুখ পুড়ে যাবে? আমাকে দেখে গান গাইলে মুখ পুড়ে না আর কথা বললে মুখ পুড়ে যাবে?””
রিপ্তি আরো কিছু কটু কথা শোনাবে তারমাঝেই অনুভব রিপ্তির দিকে একটু ঝুকে এলো। চোখের মনিদুটো কয়েকবার দ্রুত নাড়িয়ে ছোট্ট করে বললো,,
“” তোতাকন্ঠি!””
রিপ্তি ভ্রূ কুঁচাকালো। নিজের কথা থামিয়ে নিলো। সামনের মানুষটি বিড়বিড় করে কি বললো তাই বুঝার চেষ্টা করছে। যদি সে ভুল না করে তাহলে তোতাকন্ঠি বলেছে। কিন্তু এইটার মানে কি? তোতাপাখি তো সে শুনেছে,কিন্তু তোতাকন্ঠি! এটা তো শুনেনি। আর এইটা কেন বললো?
রিপ্তি আপনমনে গভীর ভাবনায় ডুব দিয়েছে। ও ভাবনা জগতে বিচরন করতে করতে অনুভব হাওয়া!
~~~
সমস্যার সকল জঞ্জাল ছাড়িয়ে রিপ্তি ভাইয়ের হলুদ স্টেজে হাজির। চারপাশে গানের মাতোয়ারা ধ্বনি। হলুদ হলুদ গন্ধ সাথে পরিচিত মুখের ছোটখাটো বিনয়ী বাক্য। ভালো-মন্দের খোজখবর ছেড়ে ভাইয়ার কাছে যেতেই রিপ্তির মুখে নেমে এসেছে একগাদা আক্রোশ এবং অপ্রসন্নতা। রিপ্তির ভাই রাসেলের সাথেই খোশগল্পে ব্যস্ত অনুভব। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে একে অপরের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করছে। রিপ্তির মনে অজান্তেই প্রশ্ন জেগে উঠলো,ভাইয়াও কি এই ছেলেটিকে চিনে?
মনের প্রশ্ন মনে রেখে হলুদের কৌটো থেকে একদলা হলুদ নিলো রিপ্তি। অনুভবের দিকে মুখ বাকিয়ে ভাইয়াকে হলুদ লাগাচ্ছে। একগাল শেষে আরেকগাল যাবে তখনি পেটে ঠান্ডা অনুভূতি। ভয়ে চিৎকার করে উঠবে এমন ভাবেও পৌছে গেলো। কিন্তু তার আগেই নানির কর্কশ কন্ঠ,,
“” এতো কইরা কইলাম গতরটা ধুইয়া আয়,তাও ধুইলিনা। প্যাটে যহন পচন লাগবো তহন বুঝবি!””
রিপ্তির নানি শাসনীবাক্য শেষে বয়ে আনা পানির মগে হাত ভিজিয়ে নিয়েছেন। রিপ্তির পেট ভেজাবে সাথে সাথে ও দুরে সিটকে গেলো। চারপাশে চোখ বুলিয়ে লজ্জা আর অসস্থি নিয়ে বললো,,
“” কি করছো নানি? সবাই দেখছে!””
“” পোলাডা যহন হাত দিলো তহন তো কেউ দেখলোনা। এহন ক্যান দেখবো? আর দেখলে আমার কি আমি তো আর তোরে জামাকাপড় ছাড়াইয়া গতর ধুয়াইতাছিনা…””
নানির বাক্যাংশ শেষ হওয়ার পূর্বেই রিপ্তি উনাকে টেনে আড়ালে চলে এলো। নানিকে কড়া কথা শুনাতে গিয়েও থেমে গেলো। আতঙ্ককন্ঠে বললো,,
“” নানি,তোমার গালে কি হয়েছে? এমন লাল কি করে হলো? ওমা গো,মনে তো হচ্ছে রক্ত বের হবে!””
“” তোর মাতা বাইরবো। আরে ঐ ছেমরাডা চুমা দিয়া আমার গাল নষ্ট কইরা দিছিলো তাই দুনদুলের ছোবা দিয়া ঢইলা পরিষ্কার করছি। নাহলে তোর নানাজান কষ্ট পাইবো তো। বয়েস কম অইলে কি অইবো? পোলা তো আর মাইয়া মানুষ অইয়া যাইবোনা! দেহি শাড়ীডা সরা তোর পেটটাও ঢইলা পরিষ্কার কইরা দেই!!””
নানির হাতে হলদে জালের মতো কিছু দেখতে পাচ্ছে রিপ্তি। নানির দিকে ভয়কাতুরে দৃষ্টি ফেলে ভোঁ দৌড়!!
~~~
রিপ্তি বাবার প্লেটে খাবার বেড়ে দিতেই উনি ভেজা গলায় বললেন,,,
“” আমার উপর রাগ করেছিস, মা?””
রিপ্তি বাবার দিকে তাকালোনা। রাগ তার নেই। রাগ হওয়ারও কথা না। ভালোবাসে যে শাসন করে সে। আদুরী বুলি বলতে পারলে দু/একটা কটু কথাও বলবেন এতে রাগ করার কি আছে? তবে খারাপ লেগেছে লাল ব্যাঙের সামনে বলাতে। রিপ্তি বাবার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো,,
“” না।””
কবির সাহেব মেয়েকে নিজের পাশের চেয়ারটায় বসালেন। পাতের ভাত মেখে মেয়ের মুখের দিকে বাড়িয়ে বললেন,,
“” তুই যখন হলুদ শাড়ী পড়ে আমার সামনে এলি তখন মনে হয়েছিলো তোর মা আমার সামনে দাড়িয়ে। তোর মায়ের হলুদ শাড়ী খুব পছন্দের ছিলো। ও যখন হলুদ শাড়ী পড়ে আমার সামনে ঘুরঘুর করতো আমার তখন ওকে রাগাতে ইচ্ছে করতো। আর তোর মা ও বেশ রাগী ছিলো। অল্পতেই রেগে যেতো। আমি দুটো কটু কথা বললেই নাক ফুলিয়ে গাল ভাসাতো। তোর শরীরে হলুদ শাড়ী দেখেই আমার পুরোনো অভ্যাস জেগে গিয়েছিলো। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তোর নাক ফুলানো রাগ দেখতে তাই…””
কবির সাহেব আর কিছু বলতে পারলেননা। গলাটা অবশ হয়ে আসছে। আজ অনেকদিন পর চোখ ভিজে উঠছে। জীবন সাথী কেন মরণ সাথী হয়না??
রিপ্তি বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। আপন মানুষের বিরহ আপন মানুষের ছোয়াতে কিছুটা হলেও কমে!
“” অনুভব এখানে কিছুদিন থাকবে। ওকে উত্তরের রুমটা গুছিয়ে দিস তো।””
অনুভব নামটা শুনতেই রিপ্তির চোখের পানি শুকিয়ে গেলো। কঠিনসুরে বললো,,
“” পারবোনা।””
“” কেন?””
“” বাবা,তুমি জানোনা উনি আমার সাথে…””
রিপ্তি বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলতে পারছেনা। কিন্তু বাবা শোনার অপেক্ষায় আছে। রিপ্তিকে চুপ থাকতে দেখে মাথা নাড়িয়ে বাকিটা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। রিপ্তি তবুও চুপ। পেছন থেকে রিপ্তির নানির আগমন,,
“জোয়ান পোলা,তার উপর বিয়াবাড়ী এক জায়গায় হুইয়া পড়লেই তো হয়। হ্যার লাইগা আবার উত্তর-দক্ষিণ রুমের কি দরকার?””
“” আম্মা,অনুভব অনেক দুর থেকে এসেছে। প্রায় পাঁচবছর পর দেখা। তাছাড়া এই প্রথম আমাদের বাড়িতে এসেছে একটু আপ্যায়ন তো করতেই হয়।””
“” তাই বইলা বাড়ির ভিতর হানদাবি? ঘরে যে আবিয়াত্তা মাইয়া মানুষ হেদিকে তোর কোনো খেল নাই? কোনো অঘটন..””
“”আমার বিশ্বাসের দুপিঠেই আমি অনায়াসে অনুভবকে বসাতে পারি।””
মেয়ের জামাইয়ের কথাতে নুন ছেটানোর মতো পান চিবুতে চিবুতে খাওয়ার রুম ত্যাগ করলেন পরিবানু। কবির সাহেব মেয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,,
“”তোমার মায়ের দায়িত্ব তোমাকেই পালন করতে হবে রিপ্তি!””
~~
রিপ্তি উত্তরের রুমে এসে দাড়ালো। রুমের ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে সে। গোসল সেরে শাড়ী পাল্টিয়েছে। হলুদ রঙের সুতির জামা পড়নে। সুতি ওড়নাটা কোনাকুনিভাবে কোমড়ে বেধে নিলো। রুমের চারপাশটা পর্যবেক্ষণ করছে। সবকিছু গোছানোই শুধু দীর্ঘদিন কারো পা না পড়ায় ঝুলঝাল পড়ে রয়েছে। রিপ্তি সময় নিয়ে সবটা পরিষ্কার করলো। আরেকবার পরিষ্কার রুমটা পর্যবেক্ষণ করতেই ঠোঁটে দুষ্টু কামড়। চোখের তারা হাঁসছে। রিপ্তি দ্রুত বিছানার পাশে থাকা ছোট্ট টেবিলটা থেকে পানির জগটা নিলো। সবটা পানি বিছানায় ঢেলে দিলো। মগটা রেখে গ্লাসটা কোমড়ে লুকালো। বিছানার মাঝে টুল এনে ওটাতে উঠে দাড়ালো। বিশেষ মনোযোগীতে কেচি দিয়ে ফ্যানের বিদ্যাৎ সংযোগের তার কেটে দিলো। সবশেষে লাইটের সামনে এসে দাড়িয়েছে। কিন্তু টুলের উপর দাড়িয়ে পা উচু করেও লাইটের কাছে হাত পৌছুচ্ছেনা। বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালিয়েও যখন ব্যর্থ ঠিক তখনি কেউ একজন ওর কোমড় চেপে উচু করে ধরলো। রিপ্তিও খুশি মনে লাইট খুলে নিয়েছে। ফলস্বরূপ পুরো রুম অন্ধকার। তারমাঝেই সুরেলা ধ্বনি,,,
আজ এই নিশি রাতে
মন চায় তোমায় কাছে পেতে
ও সজনী
বলো তুমি রাজিনি!!
#রোকসানা_রাহমান_(গল্পকন্যা)
অনুভবের কন্ঠে রিপ্তির বুক ধুকপুকুনিতে ব্যস্ত। খুশিতে সে টেরই পায়নি সে কার হাতে বন্দী। রিপ্তির হাত থেকে লাইট পড়ে গুড়ো গুড়ো। ভয়ার্ত চাপা চিৎকার,,,
“”আমি কিছু করিনি। ছাড়ুন আমাকে!””
রিপ্তি তার কন্ঠধ্বনির সাথে ভাসছে। অন্ধকারে তাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে?? ভুলকিছুর সাক্ষী হতে যাচ্ছে নাতো?? রিপ্তি ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। অনুভবের হাত থেকে ছুটার চেষ্টায় বারবার ব্যর্থ হয়ে হালকা ওজনের ধমকি,,
“” আমি কিন্তু চিৎকার করবো। আব্বুকে বলে দিবো। আপনি একটা অসভ্য। ছোট মেয়ে পেয়ে খারাপ কিছু করতে চাচ্ছেন।””
রিপ্তির কথা শেষ হতেই অনুভব ওর কোমড় ছেড়ে দিলো। কোমড়ে হালকা ব্যথার চোটে রিপ্তির আউচ! শব্দ দরজা লাগানোর শব্দে হারিয়ে গেলো। রিপ্তি ভয়ে শিউরে উঠে। চোখ মেলতেই আত্মায় ঠান্ডা পানির স্পর্শ । না সে বাইরে আছে লাল ব্যাঙ রুমের ভেতর থেকে দরজা আটকে নিয়েছে। রিপ্তি মনে মনে বিড়বিড় করলো,,না! যতটা ভেবেছিলাম ততটাও খারাপ না!
~~
গভীর নিদ্রায়মাণ রিপ্তি। সাদাকালো স্বপ্ন বুননে বিভোর। কিন্তু হঠাৎই সব স্বপ্ন গায়েব। ঘুম পাতলা হয়ে আসছে শীতল অনুভূতিতে। কেমন এক ভেজা ভেজা অনুভূতি। রিপ্তির ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ বন্ধ করেই কোমড়ের নিচে হাত গেলো৷ বিছানা ভেজা! এখন তো পিরিয়ডের ডেট চলছেনা তাহলে এমন হওয়ার কারণ? বাচ্চামী কারণ কি? এটা কি করে সম্ভব? রিপ্তি প্রচন্ড অসস্থি আর অস্থিরতায় উঠে বসলো। বন্ধ চোখ মেলে, সাথে সাথে বন্ধ করে ফেললো। তার রুম এতো অন্ধকার কেন? তাদের রুমেতো সবসময় ড্রিমলাইট জ্বালানো থাকে। তাহলে কি নানি বন্ধ করেছে? নানির কথা মনে হতেই পাশে হাতরাচ্ছে। পাশের জায়গাটা শূন্য! নানি কোথায় গেলো? রিপ্তি ধপ করে আগের ন্যায় শুয়ে পড়লো। পাতলা কাথাটা দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়েছে। সেকেন্ড কয়েক পার হতেই পুরো শরীর ঘেমে চিপচিপে। ফ্যানটাও কি অফ? বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে কি?? রিপ্তি ভয়ে কুকড়িয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনি কানের কাছে বাজলো,,,
ঘুমাও তুমি ঘুমাও গো জান,,,
ঘুমাও আমার কোলে,,,,
ভালোবাসার নাও দুলাবো,,,,
ভালোবাসি বলে!(গান)
চলবে
#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান
#পর্ব (৩)
অনুভবের নিশ্বাসের ছোয়া বাজছে রিপ্তির কানে। ভয়ে তার ভেতর ধুরুম ধুরুম বাদ্যযন্ত্র বাজছে। এক ঝলক চোখ মেলাতে রুমের কুটকুটে কালো অন্ধকার দেখে বুঝতে পেরেছে এখনো সকাল হয়নি। তারমানে গভীর রাত। হয় তো রাতের শেষপ্রহর। সময়টা দেখার মতো সাহস জুগিয়ে উঠতে পারছেনা রিপ্তি। তার বালিশের নিচেই ফোনটা রাখা। এদিকে অনুভবের নিশ্বাসধ্বনি আরো ঘন হয়ে আসছে রিপ্তির কানে। কি হচ্ছে? কি হতে চলেছে? নানিই বা কোথায়? মনের ভেতর খচখচ অনুভূতিকে আর প্রশ্রয় দিতে পারছেনা রিপ্তি। গলা ছেড়ে চিৎকার করে উঠলো,,,
“” নানি, কই তুমি? আমাকে একলা রেখে কোথায় চলে গেলে? লাল ব্যাঙ আমাকে খেয়ে ফেলতে এসেছে? ও মা গো, ও বাবা গো,ও নানি গো!””
রিপ্তির চিৎকারের বিপরীতে তীর্যক কন্ঠ ভেসে উঠলো,,
“” ঐ ছেরি বাচ্চাগো লাহান কান্দস ক্যান? তুই কি আমারে শান্তি দিবিনা? টয়লেটে বইসা এতো অশান্তি আমি কেমনে সহ্য করুম? আর একবার চিল্লালে চড় দিয়া দাঁত ফালাইয়া দিমু!””
রুমের ভেতর লাগোয়া শৌচালয় থেকে নানির কন্ঠ পেয়ে রিপ্তি উঠে বসেছে। রুমভর্তি নীল আলোয় রিপ্তির মনে খটকা। তাহলে কি সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো?? তারমানে সবই মনের ভুল? মাথার উপরে পাখাটাও তো ঘুরছে। রিপ্তি গভীর মনোনিবেশ বিছানায় ফেলতেই মিহি সুর কানে এলো,,,
এখন অনেক রাত
তোমার কাধে আমার নিশ্বাস,,
আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়
ছুয়ে দিলে হাত……(গান)
সুরটা মন্থরগতিতে দুরে চলে যাওয়ায় রিপ্তি আর কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তবে গানের প্রথম দুটো লাইন কান ছেড়ে মগজে পৌছে গিয়েছে। তাহলে কি সব বাস্তব ছিলো?? বাস্তব আর অ-বাস্তবের মাঝে পড়ে রিপ্তি রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো। পায়ের গতি বাড়িয়ে কিছুদুর এগুতেই অনুভবকে দেখতে পেয়ে থমকে দাড়িয়েছে। এতো রাতে এই ছেলে বাড়ির মধ্যে হাঁটাচলা করছে কেন? মাথার ভেতর কি ফন্দি আঁটছে?? রিপ্তি আর থমকে দাড়াতে পারলোনা। অনুভব নিজের রুমে ঢুকতে যাবে ঠিক তখনি রিপ্তি দরজা আটকে দাড়ালো। সময় খরচ না করে সোজা প্রশ্ন,,,
“” আপনি আমার রুমে এসেছিলেন তাইনা?””
রিপ্তির প্রশ্নে অনুভবের চোখ স্বাভাবিকের তুলনায় হালকা বড় হয়েছে। তবে তা কয়েক সেকেন্ডের জন্য। বুকটা টানটান করে হাতদুটো বুকে বাধলো। মাথাটা ডানদিকে সামান্য কাত করলো। সবসময়ের মতো সেই ঝলমলে হাঁসি ঠোঁটে এনে একটা ছোট্ট নিশ্বাস ছাড়লো। যার মানে এবার তুমি তোমার কথার গাড়ী স্টার্ট দিতে পারো!
অনুভবের খুটিনাটি সবকিছুই রিপ্তির চোখে পড়লো। এতো সুক্ষ বিষয়গুলোও রিপ্তির চোখে বিরক্ত জায়গা করে নিচ্ছে। নিজের প্রশ্নের উত্তর না পাওয়াতে রাগে ফুসছে। এতো বড় কান্ড করে এমন ভাবসাব? অনুভবের দাড়ানোর ভঙ্গিটা ও একদম সহ্য করতে পারছেনা। চোখ,মুখ খিচে অনুভবের হাতদুটো টানছে। বারংবার শক্তি প্রয়োগে যখন ব্যর্থ রিপ্তি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“” আপনি জানেন আপনি কতটা বিরক্তকর মানুষ? শুধু বিরক্তকর না অসহ্য৷ আমার ইচ্ছে করছে আপনার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। উফ! আপনার আচরনে আমার আলুথালু অবস্থা।””
রিপ্তির অপ্রসন্ন বাক্য শেষ হতেই অনুভব নিজের মাথা নিচু করে আনলো। রিপ্তির মুখের সামনে মাথাটা এমনভাবে নুয়েছে যে তার চেহারা দেখা যাচ্ছেনা। কালো ঝলমলে চুলের বনের ঢেউয়ের দিকে বিস্ময়দৃষ্টি রেখে রিপ্তির প্রশ্ন,,,
“” আপনি চাচ্ছেন আমি সত্যি আপনার চুল টেনে দেই?””
রিপ্তির প্রশ্নে অনুভব মাথা উচু করে হেঁসে উঠলো। উচ্চহাসি,চোখের পাতা বন্ধ তবে কাঁপছে। রাতের অন্ধকার আলোয় অনুভবের ডান চোখের পাতায় ছোট্ট লাল তিল স্পষ্ট দেখতে পারছে রিপ্তি। রিপ্তির মনোকন্ঠে অবিশ্বাস্য প্রশ্ন! এখানেও বুঝি তিল হয়?? মানুষটা এমন চোখ বন্ধ করে হাঁসছে কেন? তিল দেখানোর জন্য? এটা এমন কি আহামরি?
“” এতো হাঁসির কি হলো? আমি কি জোকস শুনিয়েছি? নাকি আমাকে দেখে আপনার জোকার মনে হয়? আমার কথাতে কি সংয়ের রঙ মেশানো থাকে যে আপনি শুধু হাঁসেন? আপনার ভেতরে কিসের প্যাচ পাকাচ্ছেন বলুনতো। আমার সহজ সরজ বাবার সব লুট করতে আসেননি তো? ঠিক ঠিক বলুন নাহলে কিন্তু!””
রিপ্তির কন্ঠের স্বর ধীরে ধীরে জোর পাচ্ছে সাথে চোখটাও পাকিয়েছে। হুমকি দিচ্ছে নাকি ভয় দেখাচ্ছে? রিপ্তি কিন্তুতে থেমে যাওয়াতে অনুভবের হাঁসিও থেমেছে। তবে ঠোঁটদুটো এখনো দু’দিকে প্রসারিত। শব্দহীন হাঁসি রেখে রিপ্তির বড় হয়ে আসা চোখে চোখ রাখলো। কিছু সময় পার করে ছোট্ট করে বললো,,
“” মায়াক্ষী!””
রিপ্তির চটপট উত্তর,,
“” মানে?””
অনুভব কিছু শুনেনি এমন ভাব ধরলো। রিপ্তির দু’কাধ চেপে ধরে পাশে সরিয়ে দিলো। রিপ্তিকে কিছু বুঝার সময়টুকু না দিয়ে নিজের রুমের দরজায় খিল টেনেছে।
~~~
আজ বিয়ে। একটুপর বরপক্ষরা রওনা হবে। রিপ্তি সকাল থেকেই সাজে ব্যস্ত। ভাইয়ের বিয়েতে ভারী গহনা আর ভারী কাজের লাল লেহেঙ্গা পড়বে এটা তার পুরোনো ইচ্ছে। কিন্তু লেহেঙ্গা গায়ে জড়াতেই তার মনে হলো আয়নার সামনে কোনো লাল ব্যাঙানী দাড়িয়ে। তাই সে লাল লেগেঙ্গা ফেলে গোলাপী আর কমলা রঙের মিশ্রণের লেহেঙ্গা পড়েছে। ঠোঁটে গাঢ় গোলাপী লিপস্টিক,চোখটানা কাজল,মাঝ সিথিতে পুতির টিকলি পড়লো। চুলে চিড়নে পড়তেই বাবার তাড়া কন্ঠ।
ভাইয়ের সাথে বসবে বলে রিপ্তি বরের গাড়ীর দিকে এগুলো। দরজা খুলতেই অনুভবের চোখে চোখ। ভাইয়ার অপর পাশে অনুভব বসে। কালো পাজামার সাথে লাল পান্জাবী পড়া। চোখে বিরক্তের আভাস ফুটলেও সাথে সাথে তা ভ্যানিশ,ভাগ্যিস লাল লেহেঙ্গা পড়িনি তাহলে মনে হতো,লাল ব্যাঙ আর ব্যাঙানি শ্যাওলা পুকুরে লাফাচ্ছে!
রিপ্তির ভাই অনুভবের দিকে চেপে রিপ্তির বসার জায়গা করে দিয়েছে। কিন্তু সে সেখানে বসবেনা। এই অসভ্য লাল ব্যাঙটাকে কিছুতেই ভাইয়ার সাথে বসতে দিবেনা কিছুতেইনা!
“” আমি মাঝে বসবো। ভাইয়া এদিকে সরে এসো।””
বোনের এমন অদ্ভুত আবদারে রাসেল অবাক। দুটো ছেলের মাঝখানে বসবে এটা কেমন দেখাবে? রাসেল কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিপ্তির কঠিন গলা,,
“” তুমি এদিকে আসবে নাকি তোমার কোলে বসে পড়বো?””
রাসেল অনুভবের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে সরে এসেছে। রিপ্তিও জায়গা পেয়ে চট করে বসে পড়লো। চুল ঠিক করা বাহানায় অনুভবের মুখে চুলের বারি দিলো,জামা ঠিক করতে গিয়ে কনুই দিয়ে পেটে গুতো দিলো। অবশেষে নিজের উচু হিল অনুভবের পায়ের উপর শক্ত করে চেপে রেখে বললো,,
“” আহ! শান্তি। ভাইয়া এসিটা অন করতে বলো তো।!””
~~~
গাড়ী দৌড়াচ্ছে নাকি উড়ছে বোধগম্য হচ্ছেনা রিপ্তির। মাঝখানে বসে থেকে সে আরাম পাচ্ছেনা। দুরের জার্নি হবে। বিয়েটা পাশের গ্রামের হলেও গাড়ীপথ অনেক ঘুরে যেতে হবে। গায়ের আঁকাবাঁকা পথ,সবুজ,সোনালী ফসলির ঢেউ না দেখলে কি মন শান্তি হয়? রিপ্তির মন উশখুশ করছে। বারবার জানালায় উকি দিচ্ছে কিন্তু কিছুই দেখতে পারছেনা৷ এদিকে ভাইয়ার পাশে লাল ব্যাঙকে বসতে দিতেও মন নারাজ। রিপ্তি অসহায়ভঙ্গিতে বরসাজের ভাইয়ার মুখে তাকালো,,
“” এসি অন করা,আমি ভারী মেকাপেও শীতল অনুভব করছি আর তুমি ঘামছো? ভাইয়া তোমার কি শরীর খারাপ করেছে?””
“” আরে না। কঠিন যুদ্ধে যাচ্ছি তো তাই ঘাম ঝরছে।””
“” যুদ্ধ? যুদ্ধ কই পাইলা? তুমি তো বিয়ে করতে যাচ্ছো!””
“” বিয়ে আর যুদ্ধ একি ব্যাপার!””
রাসেল রিপ্তির মুখ দেখে ওর দিকে ঘুরে বসলো। মাথার পাগড়ীটা খুলে বললো,,
“” আচ্ছা বল,বিয়ে কার?””
“” তোমার!””
“” তাহলে তোরা যাচ্ছিস কেন?””
“” তোমার বিয়েতে আমরা যাবোনা?””
“” কেন যাবি? যাওয়ার কি দরকার? কনের বাড়ী গিয়ে কবুল বলে তাকে নিয়ে চলে আসবো। সিম্পল কাজ! অথচ এই সামান্য কাজেও আমার সাথে এতো পাকবাহিনী মানে আত্মীয়স্বজনের ভরপুর। তারমানে এটা কোনো সামান্য না অসামান্য কাজ। পৃথিবীর ছেলেদের জন্য এই একটা অসামান্য কাজেই বাড়ীর ভেতরের বাইরের,এমন কি দেশের বাইরের মানুষেরও সঙ্গ পাওয়া যায়। আর তারা স্ব ইচ্ছে সাজগোজসহ,হাতে রঙবেরঙের গিফট নিয়ে হাজির। কাউকে ডাক না দিলে মুখ কালো। তাহলে বুঝ এটা কত বড় কঠিন কাজ। আর এমন কঠিন কাজের জন্য একটু ঘামা তো স্বাভাবিক। বরংচ না ঘামলে অস্বাভাবিক লাগবে।””
ভাইয়ের অসামান্য কাজের ব্যাখ্যা শুনে রিপ্তির কপালও ঘেমে উঠেছে। ভাইয়ার দিক থেকে একটু সরে এসে সিটে হেলান দিতেই অনুভবের গুনগুনানি,,,
তুমি আমি আছি
এইতো পাশাপাশি
আরেকটু কাছাকাছি
ধরবো হাত
ছুবো ঠোঁট
হবে মাখামাখি!!(রোকসানা)
রিপ্তি তাৎক্ষনিক বা’পাশ ফিরলো। অনুভবও সিটে হেলান দিয়ে আছে। তার চোখ বন্ধ। তবে ঠোঁটে বাঁকাহাসি। রিপ্তি দ্রুত সোজা হয়ে বসলো। নিজের হাতদুটো ওড়নার নিচে ঘুটিয়ে নিলো। পাশ থেকে রিপ্তির ভাইয়া রাসেল বললো,,
“” অনুভব, গানটা বেশ। দেখি আবার শুনা তো। রাতে তোর ভাবীকে শোনাবো।””
দুপাশে দু’পুরুষের কর্মকান্ডে রিপ্তির সিটের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। একটা বাইরের ছেলে বোনের সামনে অসভ্য গান গাচ্ছে আর তার ভাই,মায়ের পেটের ভাই বলছে আবার গাইতে!
অনুভব রিপ্তির অবস্থা আন্দাজে এনে মিটিমিটি হাঁসছে। রাসেলের অনুরোধ রাখতে গলা ছাড়বে ঠিক তখনি পায়ে ভিষম চাপ অনুভব করলো। জ্বলনের তেজ আসতে আসতে বাড়ছে। পায়ের দিকে চোখ পড়তেই রিপ্তি নিচু গলায় বললো,,
অসভ্য লাল কালা ব্যাঙ,,
বেশি বাড়লে,পিষে দিবো ঠ্যাং!(রোকসানা)
পাশ থেকে রাসেল আবার গলা হাঁকিয়ে উঠতেই রিপ্তি চিৎকার করে উঠলো,,
“” আমার ঘুম পাচ্ছে,ভাইয়া!””
“” ঘুম পেলে ঘুমা এমন মাইক বাজাচ্ছিস কেন?””
রিপ্তি পুনরায় সিটে হেলান দিলো। চোখ বন্ধ করে বললো,,
“” বিয়েবাড়ীতে যদি,ঝামেলা পাকাতে না চাও তাহলে চুপ থাকো। তোমার যুদ্ধের সহযোদ্ধাদেরও চুপ থাকতে বলে দাও। নাহলে কিন্তু আমি বিপক্ষে চলে যাবো!””
~~~
অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে রিপ্তি চোখ বন্ধ করে আছে। ঘুম আসছেনা৷ ঘুমানোর জন্য মাথা ঠান্ডা থাকার প্রয়োজন। তার মাথা কি ঠান্ডা আছে? মোটেও না পাশে এমন লাল ব্যাঙ থাকলে কারোই মাথা ঠান্ডা থাকার কথা না। তাই তার মাথা গরম। তবে পরিবেশ বেশ ঠান্ডা। তার এক ঝাড়িতে দুপাশের বিয়েযোদ্ধাই চুপ। এখন পর্যন্ত কোনো শব্দ কানে আসেনি। তবুও রিপ্তির চোখে ঘুম নেই। পেটের ভেতর কেমন গুড়মুড় শব্দ টের পাচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। রিপ্তি মনে মনে দোয়া-দুরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে। তবুও আর সহ্য করতে পারলোনা। মুখভর্তি করে বমি করে দিলো। অনুভবের লাল পান্জাবীতে!
~~~
কনেবাড়ীতে পৌছেছে অনেক্ষণ। নিয়মকানুন শেষ হতে চললো অথচ অনুভবের কোনো দেখা নেই। মানুষটা কি এখনো গাড়ীতেই আটকে আছে? আটকে থাকারই কথা। রিপ্তির আকস্মিক কান্ডটা হয়তো এখনো সামলে উঠতে পারেনি। রিপ্তি বেশ কিছুক্ষণ গাড়ীটার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মায়া হচ্ছে,এমন একটা কান্ড করে বসবে এটা ও ভাবেইনি৷ ইশ! ময়লা কাপড়ে কি করে বিয়ে বাড়ীতে ঢুকবে? রিপ্তি মনে মনে খুবই দুঃখ প্রকাশ করছে। এগিয়ে গিয়ে কি দেখবে অনুভব কি করছে? যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে তো!
রিপ্তি এক কদম এগিয়ে আবার থমকে গেলো। সামনে তৃণা দাড়িয়ে। ছোটবেলার বান্ধুবী। একি সাথে উঠাবসা,খেলাধুলা,পড়াশুনা!
“” কোথায় যাচ্ছিস?””
তৃণার প্রশ্নে রিপ্তির সংবেদন হলো। গাড়ীটার দিকে আরেকবার চাইতেই মনের দুঃখভাব গায়েব। বেশ হয়েছে। এর তো এমনই হওয়া উচিত। ছি! কি নোংরা মনমানসিকতা। ঠোঁট ছোয়া,মাখামাখি কিসব গানের কথা! এমন নোংরা গান যে গাইতে পারে তার মনও নোংরা। রিপ্তি মুখভর্তি হাসি নিয়ে বললো,,
“” কোথাও না। তোকেই খুজছিলাম। চল ভাইয়ার কাছে যায়!””
রিপ্তি উচু জুতোয় তাল ফেলে ভেতরে ঢুকলো। তারমধ্যেই তৃণা চিৎকার করে উঠলো,,
“” আরে বর আর কনে একসাথে বসেছে। চল চল ছবি তুলে আসি। পরে আর সময় পাবোনা।””
তৃণা রিপ্তির হাত ধরে টেনে স্টেজে উঠে গেলো। রিপ্তি ছবি তোলার ভঙ্গিতে ভাইয়ার গলা ধরে, সামনে তাকাতেই মুখ হা। লাল ব্যাঙ ছবিও তুলতে পারে? উনি কোনদিক দিয়ে এলো? আরে,পান্জাবীও চেন্জ? ক্যামেরা পেলো কোথায়? এমনভাবসাবে ছবি তুলছে মনে তো হচ্ছে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার!
পাশ থেকে তৃণার ডাকে রিপ্তি ভাইয়ার গলা ছেড়ে দিলো। অনুভবের দিকে কড়া চাহনি,ভেংচি কেটে হাঁটা ধরলো।যার মানে, দরকার হলে ছবি তুলবোনা। তাও আপনার ক্যামেরায় বন্দী হবোনা,হুহ!
রিপ্তির পিছপিছ তৃণা দৌড়ে এসে বললো,,
“” আরে,কোথায় যাচ্ছিস? ভাবীর সাথে তো ছবি তুলা হলোনা৷””
তৃণার কথা শোনার মাঝেই রিপ্তির চোখ আটকে আছে অনুভবের পায়ে। তার পায়ে জুতো নেই।
“” আমি তোর সাথে কথা বলছি রিপি,তুই কোথায় হারিয়ে আছিস?””
রিপ্তি দুষ্টু হাসি নিয়ে বললো,,
“” ভাইয়ার বিয়েতে,ভাইয়ার বন্ধুর জুতো হাওয়া! শুনতে কেমন লাগছে রে?””
“” মানে?””
রিপ্তি আর সময় ব্যয় করলোনা। অনুভবের দিকে এক পলক চেয়ে সোজা অন্যপাশের সিড়ির দিকে এগুলো।
রিপ্তির কান্ডে তৃণা হতভম্ব!
“” তুই ছেলেদের জুতো নিচ্ছিস কেন?””
তৃণার কথার কোনো উত্তর দিলোনা রিপ্তি। অনুভবের জুতো জোড়া চুরি করতে পেরে তার বেশ খুশি লাগছে। এই প্রথম মনে হলো,,বিয়ে মানে মজা,মজা আর মজা!
তৃণা অবুঝের মতো চেয়ে আছে রিপ্তির দিকে। তার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। বিয়েবাড়িতে বরের জুতো চুরি করা হয় তাও কনেপক্ষেরা করে কিন্তু এখানে তো নিজেদের জুতো নিজেরাই চুরি করছে। এ কেমন বিয়ে?
তৃণাকে এমন হাবলার মতো দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিপ্তি খিলখিল করে হেসে উঠলো। ওকে টেনে খুব সাবধানে অনুভবের পেছন দিয়ে আবারও স্টেজের অন্যাপাশে পৌছে গেলো। যেদিক দিয়ে নিজেরা এসেছিলো সেদিক দিয়ে নামবে। এক সিড়ি ছেড়ে দ্বিতীয় সিড়িতে পা পড়তেই রিপ্তি তৃণার হাত খামচে ধরে বলল,,
“” আমার জুতো কই?””
রিপ্তির প্রশ্নে তৃণা চমকিত। মেঝেতে তাকিয়ে মিনমিন করে বললো, ভাইয়ার বিয়েতে বন্ধুর সাথে সাথে ছোটবোনের জুতোও হওয়া!
রিপ্তি আর তৃণা এদিকওদিক ঘুরেফিরে কোথাও জুতো খুজে পেলোনা। দুজনেই হতাশভঙ্গিকে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখনি অনুভব পাশ থেকে গান ধরলো,,
বিয়েবাড়ীর ভীরে,,
সুন্দরীর জুতো গেল হারিয়ে
সই দেখনা খুজে দেখনা
জুতোর গজালো কি পাখনা!!
চলবে