ভাবী_যখন_বউ
পর্ব_০৪,০৫
Syed_Redwan
পর্ব_০৪
“আর কতক্ষণ থাকবে বাথরুমে হুম? বেশিক্ষণ থাকলে জ্বর আসবে তোমার। তাড়াতাড়ি বের হও!”
দরজায় টোকা দিয়ে কথাগুলো রাইফা আমার উদ্দেশ্যে বলল। ওর কথায় বাস্তবে ফিরলাম।
আসলেই তো! কমপক্ষে আধঘন্টা হবে আমি শাওয়ারের নিচে বসে আছি। বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে। তাই দ্রুত গোসল সেরে কাপড় গায়ে দিয়ে করে দশ মিনিটের মাথায়ই বাথরুম থেকে বের হলাম।
বের হয়েই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।
“এসব করে কোন লাভ নেই!”
আমার কথা শুনে রাইফা বেশ অনেকটাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। অবশ্য ঘুরে তাকালো না, বরং ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় আমার প্রতিবিম্বের দিকে তাকালো।
ও ড্রেসিটেবিলের সামনে বসে শাড়ি পড়ছিল। আমি যখন বাথরুম থেকে বের হলাম, তখন দেখি যে ও বাথরুমের দিকে পিঠ দিয়ে ব্লাউজ লাগাচ্ছে। ওকে অনেকটা অর্ধনগ্ন দেখে আমার কেন জানি মেজাজটা বিগড়ে গেল, তাই উপরোক্ত কথাগুলো ওকে বললাম।
“কী করে লাভ নেই? কীসের কথা বলছ তুমি?” আয়নায় নিজের দৃষ্টি আবার আগের মতো রেখে আমার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলল রাইফা।
আমি ঠিক ওর পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
“তুমি যদি ভেবে থাকো যে তুমি নিজের শরীর দেখিয়ে আমাকে ভুলাতে পারবে, আমার মন জয় করতে পারবে, তাহলে তুমি মূর্খের রাজ্যে বাস করছ। আমার ভাইয়ের খুনীকে আমি কোনদিনও মাফ করতে পারব না। আর কেউ না জানলেও আমি জানি যে আমার ভাইয়ের খুনী হচ্ছো একমাত্র তুমি। আমার ভাইয়ের খুনীকে আমি কোনদিনও মেনে নিতে পারব না!!!”
আমার কথাগুলো শুনে মনে হয় না যে রাইফার মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো। সে তখন থেকে ব্লাউজ লাগানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছে কিন্তু পারছে না। সে বলল,”আমাকে এটা পড়িয়ে দেও না রেড(আমাকে ও মাঝেমধ্যেই সংক্ষেপে ‘রেড’ নামে ডাকতো)। এটা নতুন কিনেছি কিন্তু ছোট মাপের হয়ে গিয়েছে, অনেক টাইট। পড়িয়ে দেও।”
ওর কথা শুনে মেজাজ আরও বিগড়ে গেল।
“বললাম না আমাকে নিজের শরীর দেখিয়ে কোন লাভ নেই? তারপরও এসব কেন করতে বলছ? আর তোমাকে আমি কেন সাহায্য করব? কোন খুনীকে আমি সাহায্য করতে পারব না কোন ধরনের।”
“অনেকক্ষণ ধরে ভালো করে কথা বলছি তবে তার মানে এই না যে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে তুমি আমাকে। হয় তুমি আমাকে এটা পড়িয়ে দিবে নয়তো এই অবস্থায়ই আমি মা’র(আমার আম্মুর) রুমে যাচ্ছি। তখন তাকে কী বলে সামলাবে সেটা নিজেই ঠিক করে নাও😏।”
আমার ভাবনাতেই আসেনি যে রাইফা উল্টো আমার কথার বিরুদ্ধেই এতটা রুক্ষভাবে কথা বলবে। রাইফার উপর কোন বিশ্বাস নেই। ও যা বলে সেটা করেই দেখায়। এই তো আগে বলতো যে ও আমাকে বিয়ে করবে, ঠিকই বিয়ে করে নিয়েছে আমাকে হোক সেটা অনেক খারাপ উপায়ে, তবুও করেছে তো। এখন এই অবস্থায় আব্বু-আম্মুর রুমে গেলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। তাই আমি বাধ্য হয়েই ওর ব্লাউজটা হাতে নিলাম।
মেয়েদের এবং তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ব্যাপারে আমার জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা বরাবরই কম। তবুও আমি আন্দাজ করতে পারছি যে ওর কাপড়ের মাপ ঠিকই আছে, ও ইচ্ছে করেই আমাকে দিয়ে এটা করাচ্ছে। হয়তো নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য। এতকিছু করারও কোন প্রয়োজন ছিল না। আমি ওকে নিজের স্ত্রী হিসেবে এমনিতেই মেনে নিতাম, যদি কিনা সে আমার ভাইয়ের খুনী হতো। নিজের ভাইয়ের খুনীকে আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে কোনদিনই মনে হয় পারব না। ওর উপর অনেক অত্যাচার করতাম, যদি কিনা আব্বু আম্মু ওর প্রতি এত মেহেরবানি না দেখাতেন। আমি কাউকেই মনে হয় কোনদিন বিশ্বাস করাতে পারব না যে ও আমার ভাইয়ের খুনী।
নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করে ওর ব্লাউজের চেইন লাগিয়ে দিলাম। তারপরও আমার হাতের একটু ছোঁয়া লেগেই গেল ওর পিঠে। ও কেঁপে উঠল খানিকটা। আমি জলদি বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম আর ওর উদ্দেশ্যে বললাম,”মাঝখানে কোলবালিশ দিবে কি না সেটা একান্তই তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ভুলবশতও আমার শরীরের সাথে তোমার শরীর যাতে না মিলে, mind it!”
আমি বাইরের দিকে মুখ করে শুয়ে আছি। খুব করে ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে। আজ আমাদের বিয়ের আগে স্থানীয় মসজিদেই ভাইয়ার জানাজা হয়েছে, আমি শরীক হয়েছি। আগামীকাল আমাদের গ্রামের বাড়ি মাগুরায় ভাইয়ার শবকে নিয়ে যাওয়া হবে শেষবারের মতো জানাজা করে দাফন করার জন্য। আমার প্রাণপ্রিয় ভাইটি চিরনিদ্রায় শায়িত হবে আগামীকাল। বিশ্বাসই হচ্ছে না যেন এটা আমার! এখনো মনে হচ্ছে যে আমার ভাই আমাদের কাছেই আছে, পাশের রুমে ঘুমাচ্ছে! এসব ভাবতেই দু’চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল।
এমন সময় খেয়াল করলাম রাইফা বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো আমার পাশে। মাঝখানে কোলবালিশ দেয়নি। আমি যতক্ষণ সজাগ ছিলাম, ততক্ষণ সতর্ক ছিলাম, এই বুঝি ও আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরবে আর আমি ওকে ছাড়িয়ে নিয়ে অপমান করার সুযোগ পাব। কিন্তু আমার ধারণামতো রাইফা আমাকে জড়িয়ে ধরেনি। আমি ওর এই কাজের জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে সারাদিনের ক্লান্তির ফলে ঘুমিয়ে পড়লাম, নিজেও জানি না।
সকালে ঘুম থেকে জাগার পর চোখ বন্ধ অবস্থায়ই খেয়াল করি যে আমার শরীরটা ভারি ভারি লাগছে। চোখ খোলার পর লক্ষ্য করি যে আমি নিজেই রাইফার বুকে মাথা রেখে ওকে হাত-পা দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছি। এটা বোঝার পরপরই আমার মন এবং শরীর কেমন জানি করে উঠল। রাইফার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি সে জেগে আছে এবং আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি তড়িঘড়ি করে নিজের হাত-পা ওর শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেই ওর উপর থেকে একটানে উঠে পড়বো, ঠিক তখনই অজানা কিছু একটার আকর্ষণে একটু উঠেই ওর উপর আবার ধপ করে পড়ে গেলাম। আমার মুখ ওর মুখের উপর গিয়ে পড়লো। এবার ও নিজের দুই হাত প্রসারিত করে আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমাকে ছোট করে একটি লিপকিস করলো। জানি না কেন, তবে আমি ওকে প্রতিরোধ করতে পারলাম না এবার, বরং নিজেও আশ্চর্যজনকভাবে এবং অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওর সাথে তাল মিলালাম লিপকিসে। এরপর রাইফা বলল,”দেখলে, প্রকৃতি এমনকি তোমার মনও গহিন থেকে চায় না যেন তুমি আমার থেকে দূরে থাকো। তাহলে শুধু শুধু কেন চাইছো জোর করে আমার থেকে দূরে যেতে হুম?” বলেই আরেকটা হাসি দিল রাইফা।
আমি ওর কথার কোন উত্তর দিতে পারলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম ঠিক কীসের টানে ওর উপর থেকে উঠতে গিয়েও পারলাম না বরং ওর উপর উল্টো গিয়ে পড়লাম। ঠিক তখনই খেয়াল করি যে আমার শার্টের উপরের বোতামটা রাইফার গলার নেকলেসের সাথে বেশ ভালোভাবেই জট লেগে আছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি দুষ্টুমির হাসি। তার মানে কি এই যে ও নিজেই এটা করেছে? আর ভাবতে পারলাম না কিছুই, রাগারাগিও করলাম না ওর সাথে। নিজের শার্টের বোতামটা ছাড়িয়ে নিলাম। পুরোটা সময় ও আমার দিকে একমনে মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। আমি বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।
“গতকাল রাতে অনেক গোসল করেছ, এখন আর করা দরকার নেই, ঠান্ডা লাগতে পারে। শুধু একটু ভালোমতো হাতমুখ ধুয়ে নাও, যাতে সবাই মনে করে যে তুমি গোসল করেছ।” রাইফা বলল।
ওর কথার প্রত্যুত্তরে আমি একটা রাগী দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও ও বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে বলল,”আমার চিন্তা করার দরকার নেই, আমি গোসল করেছি ভোরেই। সারাটা রাত তো আমার বুক থেকে উঠার নামই নিলে না। ভোর হতেই একটু ছাড় দিলে, ওই সুযোগে উঠে গোসল করে এসে যেই আবার শুইলাম, সাথে সাথেই আবার আমাকে জড়িয়ে ধরলে। বলি কি, এত দুষ্টু কবে থেকে হলে গো শুনি?☺️”
আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে টাওয়েল নিয়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম। এই মেয়ের উপর যতবারই রাগ ঝাড়তে যাই, ততবারই ও আমার রাগ আরো বাড়িয়ে দেয়। ও তো আমার ভাইয়ের খুনী, এটাই আমি এখনো বিশ্বাস করি। তাহলে কীভাবে ওর সামনে তখন নিজ ইচ্ছাতেই অন্তরঙ্গ হলাম? কেন বাধা দিতে পারলাম না? আমি নিজের মধ্যে নেই মনে হচ্ছে। সব ধরনের চিন্তাভাবনা একসাথে আমার উপর ভীর করে আমার নিজের বিচারবুদ্ধিকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। অনেক হয়েছে। এখন থেকে যা কিছু করব, সবকিছু একটু সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে পরেই করব। ভুল করেও আর ওর ডাকে সাড়া দিব না। ভাইয়ার খুনী ও! ওকে আমি মেনে নিতে পারি না, ওকে আমি নিজ হাতেই শাস্তি দিতে চাই।
বাথরুম থেকে বের হয়ে রাইফাকে রুমের ভিতর দেখলাম না। হয়তো বসার ঘরে গিয়েছে। আমিও নাস্তা করার উদ্দেশ্যে বের হলাম রুম থেকে। সবাই দেখছি ডাইনিং টেবিলে নাস্তার জন্য বসে আছে। তবে ভাইয়ার অকালমৃত্যুতে আজ বিয়ের দ্বিতীয় দিন হলেও কারো মুখেই হাসি নেই, সকলকে বিমর্ষ লাগছে দেখতে। রাইফা আর আম্মু মিলে খাবার সার্ভ করল সবাইকে।
খাওয়া যখন প্রায় শেষ, ঠিক তখনই আব্বু বলে উঠল,”আমরা সবাই যাচ্ছি আজ মাগুরায় রিফাতের দাফনকার্জ সমাপ্ত করতে। শুধুমাত্র তুই যাবি না আমাদের সাথে। তুই যাবি তোর শ্বশুরবাড়িতে।”
এমনটা আমি আশা করিনি। বললাম,”কী বলছ তুমি? আমার ভাইয়ের দাফনে আমি অনুপস্থিত থাকবো? মাথা ঠিক আছে তো তোমাদের?”
আব্বু বলল,”ঠান্ডা মাথায় সবকিছু ভাব। গতকাল স্থানীয় মসজিদে রিফাতের জানাজা পড়ানো হয়েছে। তুই সেটাতে শরীক ছিলি। তোর দায়িত্ব কিন্তু শেষ। দাফনের সময় আলাদা জানাজা হলেও সেটাতে তোর উপস্থিতি কোন ম্যাটার করবে না, তাই তোর যাওয়ার দরকার নেই। তুই বরং তোর ভাইয়ের জন্য অন্তর থেকে দোয়া কর, সেটাই সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে। আজ তোর শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে তোকে। দুই পরিবারের হাতেগোনা কয়েকজন ব্যতীত কেউ কিন্তু জানে না যে রাইফার সাথে তোর ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল। তাই পৃথিবীর বাকি সকলেই জানে এবং ভবিষ্যতেও জানবে যে রাইফার একমাত্র স্বামী তুই। এই ব্যাপারে কিন্তু খেয়াল রাখতেই হবে সকলকে। তাই বলছি, গ্রামে আমরা যাচ্ছি, তোকে যেতে হবে রাইফার বাবার বাসায়।”
আম্মু বলল,”যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে বাবা(ধরা গলায়)। এখন আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কাজ করতে হবে। তোর দোয়া তোর ভাইয়ের সাথে থাকলেই হবে, লাশ দাফনের সময় আলাদাভাবে থাকা লাগবে না তোর ওর সঙ্গে। তুই বৌমাকে নিয়ে চলে যাস বাবা ওর বাবার বাড়িতে আমাদের বাস স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে।”
মেঘা বলল,”ভাই, আমরা আছি তো। তুই ভাবীর সাথে যা ভাবীর বাবার বাড়ি। আমি তোকে সময়ে সময়ে সবকিছুর খবর ফোনে জানাতে থাকবো।”
বরাবরের মতো এবারও পারিনি আমি বাবা-মায়ের কথার অবাধ্য হতে। বাবা-মা আর মেঘাকে উঠিয়ে দিলাম বাসে আর আমার ছোট দুই চাচা আলাদা একটা গাড়িতে করে ভাইয়ের শব নিয়ে যাত্রা করলেন গ্রামের দিকে। অনেক অনেক কষ্ট করে নিজের চোখের জল আটকে রেখেছিলাম।
সকলে গ্রামের জন্য রওয়ানা দেওয়ার পর আমি আর রাইফা নিজেদের গাড়িতে করে আমার শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। রাইফাকে দেখে এখন কিছুটা বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। হাহ! খুন করে এখন মনে মনে অনুশোচনা করছে হয়তো!
“একটা কথা বলবো রাইফা?”
“কী কথা?”(আনমনে বলল)
“আমার ভাইয়া অনেক ভালো মানুষ ছিল। আমাকে সে খুব ভালোবাসত। আমার ভালোর জন্য নিজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসও সে নির্দ্বিধায় বিসর্জন দিতে পারত।”
“আমি জানি। সে খুবই ভালো ছিল।”
“তুমি যদি তাকে একবার বলতে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমার প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রদর্শন করতে তার কাছে, তাহলে সে আর কিছু চিন্তা না করেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করতো, শুধুমাত্র আমার কথা ভেবে, আমাকে একজন পাগলের মতো ভালোবাসে এই ভেবে তার সাথে আমাকে মিলানোর জন্য। ভাইয়ার এককথায় আমি রাজি না হয়ে পারতাম না।
এই কথাটা নিশ্চয়ই তুমি বিশ্বাস করো?”
রাইফা আমার প্রশ্নে চুপ হয়ে রইল।
“তাহলে কেন এত নির্মমভাবে হত্যা করলে আমার ভাইকে?”
চলবে
#ভাবী_যখন_বউ
#পর্ব_০৫
#Syed_Redwan
সকলে গ্রামের জন্য রওয়ানা দেওয়ার পর আমি আর রাইফা নিজেদের গাড়িতে করে আমার শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। রাইফাকে দেখে এখন কিছুটা বিষণ্ণ মনে হচ্ছে। হাহ! খুন করে এখন মনে মনে অনুশোচনা করছে হয়তো!
“একটা কথা বলবো রাইফা?”
“কী কথা?”(আনমনে বলল)
“আমার ভাইয়া অনেক ভালো মানুষ ছিল। আমাকে সে খুব ভালোবাসত। আমার ভালোর জন্য নিজের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসও সে নির্দ্বিধায় বিসর্জন দিতে পারত।”
“আমি জানি। সে খুবই ভালো ছিল।”
“তুমি যদি তাকে একবার বলতে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমার প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রদর্শন করতে তার কাছে, তাহলে সে আর কিছু চিন্তা না করেই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করতো, শুধুমাত্র আমার কথা ভেবে, আমাকে একজন পাগলের মতো ভালোবাসে এই ভেবে তার সাথে আমাকে মিলানোর জন্য। ভাইয়ার এককথায় আমি রাজি না হয়ে পারতাম না।
এই কথাটা নিশ্চয়ই তুমি বিশ্বাস করো?”
রাইফা আমার প্রশ্নে চুপ হয়ে রইল।
“তাহলে কেন এত নির্মমভাবে হত্যা করলে আমার ভাইকে?”
আমার কথায় রাইফা আমার মুখের দিকে ফিরে তাকালো। দেখে মনে হচ্ছে বেশ অনেকটাই অবাক হয়েছে আমার কথায় সে। হয়তো এই মুহূর্তে এমন কথা আমার কাছ থেকে সে আশা করেনি। সে বলল,
“আমি কতবার বলব তোমাকে যে তোমার ভাইকে আমি খুন করিনি? প্লিজ বিশ্বাস করো এটা।”
“অসম্ভব! তোমার আগের কার্যকলাপের সাথে এই কাজটা একেবারেই দুইয়ে দুইয়ে চারের মতো মিলে যায়। নিশ্চয়ই তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য ভাইয়াকে সরিয়ে দিয়েছ এই পৃথিবী থেকে।”
“আমি মানি, আমি তোমাকে খুব করেই চাইতাম শুরু থেকেই। কিন্তু এর মানে এই না যে আমি তোমার ভাইয়ের খুনী।”
“কিছুদিন আগে কী করেছ ভুলে গেলে? যেই মেয়ে নিজের স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকজনকে ভালোবাসে, তার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়, সে অবশ্যই তার স্বামীকে হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করবে না। তার উপর তুমি সেদিন আমাকে লিপকিস পর্যন্ত করেছ। আরো কী কোন প্রমাণ লাগবে এটা বোঝার জন্য যে আমার ভাইকে তুমি খুন করোনি?”
“আমি আপাতত কিছু বলবো না, কারণ আমি জানি যে আমার কোন কথাই তুমি এখন বিশ্বাস করবে না। কিন্তু সময়মতো তুমি সব বুঝে যাবে আশা করি।”
আমি আর কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালানোতে মন বসালাম। আমার কাছে সত্যি কোন প্রমাণ নেই যে রাইফাই ভাইয়ার খুনী। প্রমাণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ওকে আমি শায়েস্তা করতে পারব না। তবে ওকে আমি কাছেও টেনি নিচ্ছি না। প্রায় আধাঘন্টা গাড়ি চালিয়ে আমি আমার তথাকথিত ‘শ্বশুরবাড়ি’তে এসে পৌঁছালাম।
আমাকে দেখে সকলেই খুশি হলো, তবে মনে হলো আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি একটু বেশিই খুশি। হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত। কারণ আমি তাদের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করে তাদের উপর এত মেহেরবানি যে করেছি, খুশি না হয়ে যাবে কোথায়?
শ্বশুরবাড়ি পৌঁছাতে দুপুর গড়িয়ে গেল। আমাকে রাইফা নিজের রুমে নিয়ে আসলো। আমাকে বিছানায় বসতে বলে নিজে ফ্রেশ হতে ওয়াসরুমে ঢুকলো। কিছুক্ষণ পর রাইফা নীল পাড়ের বেগুনি শাড়ি পড়ে বের হলো। কেন জানি এত গাঢ় রঙের শাড়িতে ওকে অন্য রকমের মোহনীয় মনে হচ্ছে আমার কাছে। কিন্তু পরমুহূর্তেই নিজেকে আমি সামলে নিলাম। ওর প্রতি কিছুতেই আকৃষ্ট হওয়া যাবে না। কিন্তু আর কতদিন আর নিজেকে আটকে রাখব? হয় ওকে নিজের ভাইয়ের খুনী সাব্যস্ত করে শায়েস্তা করতে হবে আমাকে, নয়তো ওকে মেনে নিতে হবে। এভাবে কোনকিছুই না করে দিনযাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব না, কোনভাবেই না। তার উপর এই মেয়ে যেভাবে আমার মন কাড়ার চেষ্টা করছে, না জানি কবে কোন ভুল করে বসি নিজের অনিচ্ছাতেই। হ্যাঁ, এটা সত্য যে ওকে আমি নিজের ভাইয়ের খুনী ভাবি। কিন্তু যেহেতু ও আমার স্ত্রী, সুতরাং ওর প্রতি আমার এবং আমার প্রতিও ওর অধিকার আছে, তাই ওর মাঝে নিজেকে হারানোটা অবৈধ কিছু না আমার জন্য। ও আমার জন্য অবৈধ কিংবা বেগানা নারী হলে আমি হলপ করে বলতে পারি, জীবনেও ওর প্রতি আমি আকৃষ্ট হতাম না, ঠিক যেমনটা সেদিন আমাকে লিপকিস দেওয়ার সময় করেছিলাম। ওকে কষে চড় দিয়েছিলাম। ওর প্রতি সেদিন মোহের জায়গায় ঘৃণা কাজ করেছিল আমার। কিন্তু এখন ও আমার স্ত্রী, ওর ডাকে সাড়া দেওয়ার অধিকার আছে আমার। কিন্তু এখানেই যে আসল বাধাটা; আমার ভাইয়ের খুনী যদি ও হয়ে থাকে, তাহলে? এমনটা সত্য প্রমাণিত হলে আমি কিছুতেই আর ওর থাকছি না। তবে প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওকে কীসের অজুহাতে দূরে রাখব? সর্বোচ্চ কয়েকদিন? এরপর আর চাইলেও হয়তো ওকে কিংবা নিজেকে আটকাতে পারব না।
এসবকিছুর একটাই সমাধান! ও খুনী কি না এটা যতদ্রুত সম্ভব জানতে হবে। ভাইয়ার আসল হত্যার রহস্য আমি বের করবই। ততদিন ওর থেকে দূরে থাকার এবং ওকে নিজের থেকে দূরে রাখার সর্বোচ্চ প্রয়াস চালিয়ে যাব।
আমার ভাবনার মাঝেই রাইফা আমার হাত ধরে টেনে আমাকে ওয়াশরুমে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি ফ্রেশ হতে থাকো। আমি তোমাকে কাপড় এবং টাওয়েল দিচ্ছি।”
গোসল করতে করতে নিজের মনকে অনেক কষ্ট করে বোঝালাম যে একটা খুনীর সাথে, তাও আবার নিজের ভাইয়ের খুনীর সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া যায় না, আর না তো তাকে ভালোবাসা যায়। কিন্তু আমি রাইফার প্রতি এই বৈধ মোহ আর কতদিন আটকে রাখতে পারব? আদৌ পারব কি? হ্যাঁ, আমি পারব! আমাকে যে পারতেই হবে। আমার ভাইয়ের খুনের তদন্ত আমি নিজেই করব, পুলিশের আলাদা করে সেটার জন্য কোন প্রয়োজন নেই আমার। তার উপর রাইফার বাবা পুলিশ কমিশনার, উনি অবশ্যই নিজের মেয়ের বিরুদ্ধে কোন তদন্ত করবেন না। উল্টো কোন তদন্ত করার চেষ্টা করলে বাধা দিবেন, এটাই স্বাভাবিক। আর যদি কোনভাবে রাইফাই হয় আমার ভাইয়ের খুনী, তাহলে ওর খবর তো আমি নিয়েই ছাড়ব। ততদিন পর্যন্ত অবশ্যই আমি নিজেকে রাইফার এই মোহ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করব এবং আমার বিশ্বাস, আমি পারব!
গোসল শেষ হতেই ওয়াসরুমের দরজা হালকা খুলে আমি রাইফাকে ডাকলাম। ও আমার হাতে টাওয়েল আর নিজের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা রঙের পাঞ্জাবি দিল। আমি বুঝতে পেরে রেগে গিয়ে বললাম,
“আমাকে অন্য রঙের কাপড় দাও। আমি এটা পড়বো না। আরো কাপড় এনেছি আমি।”
রাইফা বলল,”সেটা করতে হলে টাওয়েল পেঁচিয়ে নিজে এসে নিয়ে যাও। তবে, এতে কিন্তু রিস্ক আছে। তুমিই তো বলো আমি চরিত্রহীন, তাই না? আসলে কথাটা সত্যই বটে! আমি তোমার সাথে চিরকাল চরিত্রহীনের মতো আচরণই করবো। তাই এভাবে বের হলে সাবধানেই বের হয়ো। বলা তো যায় না, আমি যদি তোমার টাওয়েল হ্যাঁচকা টান দিয়ে খুলে তোমার ইজ্জতের ফালুদা বানিয়ে দেই আমার কাছে? হা হা এতে তেমন কোন ক্ষতি হবে বলে আমার মনে হয় না। আফটার অল, তোমার সম্পূর্ণ শরীর দেখার এবং পাওয়ার অধিকার শুধুমাত্র আমারই আছে। হি হি হি হি!”
ওর কথা শুনে এবার সত্যি সত্যি আমার প্রচন্ড রাগ উঠল। ওকে হাতের কাছে পেলে সত্যি একটা চড় মারতাম। কিন্তু এখন সেটা করার সুযোগ নেই। তাই বাধ্য হয়েই ওর দেওয়া কাপড় পরিধান করে বের হলাম।
আমাকে দেখে রাইফা গালে হাত বলল,”ওমা! আমার হাসবেন্ডকে তো একদম হিরোর মতো লাগছে। কারো বদনজর যাতে না লাগে তোমার উপর।” বলে নিজের চোখ থেকে এক চিমটি কাজল কেনি আঙুলে করে আমার কপালের একপাশে ছুঁয়ে দিল।
এবার কেন জানি নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। দুই হাত দিয়ে ওর গলা চেপে ধরলাম খুব শক্ত করে দেয়ালের সাথে। ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজেকে ছুটানের চেষ্টা করেও আমার শক্তির সাথে পারছে না। এক সময় ওর দম আটকে আসলে আমি ছেড়ে দেই ওকে।
কিছুক্ষণ ধরে ও হাঁপিয়ে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসটা স্বাভাবিক করল। আমি বললাম,
“আমি যেটা চাই না, সেটা কেন করো তুমি? তুমি বুঝতে পারছ না, তুমি আমার কাছে আসো এটা আমি একদমই চাই না? আমি আমার ভাইয়ের খুনীকে একদমই সহ্য করতে পারব না। খালি উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ার অপেক্ষা, তারপরই তোমার উপর যন্ত্রণার পালা শুরু হবে।”
এবার রাইফা বলল,
“তুমি আমার স্বামী, আমার সাথে তোমার যা ইচ্ছা তাই করতে পারো তুমি। কিন্তু আমি বলি কি, খালি আমাকে এত তাড়াতাড়ি মেরে ফেলো না প্লিজ। আমি তোমাকে সারাজীবন ভালোবাসতে চাই। তাই এটা বাদে যা খুশি আমার সাথে করতে পারো। এবার খেতে আসো, সবাই অপেক্ষা করছে।”
কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই আমার ঠোঁটে টুস করে একটা চুমু খেয়ে রাইফা দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি সাথে সাথেই বিছানায় বসে পড়ে দু’হাত দিয়ে মাথা ধরলাম। নিজের রাগটাকে প্রশমিত করার এটাই আমার কাছে সর্বোত্তম উপায়।
ডাইনিং টেবিলে গিয়ে দেখি শুধুমাত্র রাইফার পাশের চেয়ার ফাঁকা আছে। অগত্যা সেখানেই বসতে হলো আমাকে। শ্বশুরবাড়িতে দেখছি তাদের নতুন এবং একমাত্র জামাইকে জামাই আদরের বিন্দুমাত্র কমতি রাখেননি তাঁরা। বিশাল এক ভূরিভোজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং তার সাথে অধিকাংশ খাবার আইটেমই আমার প্রিয়। খাওয়ার এক পর্যায়ে আমার শ্বশুর বললেন,
“জীবনে অনেক সময় এমন অনেক ঘটনাই ঘটে থাকে, যেগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু সবকিছুর সাথে মানিয়ে চলাটাই জীবনের বৈশিষ্ট্য। সবসময় যে আমরা যা চাই সেটাই ঘটবে, এমনটা ভাবার কোন কারণই নেই। অনেক সময় বাস্তবতাকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও মেনে নিতে হয়। দেখা যায়, এই অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতাটাই জীবনে পরবর্তীতে সুখে থাকার কারণ হয়ে ওঠে।”
কথাগুলো যে আমাকেই উদ্দেশ্য করে উনি বললেন, এই ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই। কারণ এখানে উপস্থিত অধিকাংশ মানুষ জানে যে আমার ভাইয়ার সাথে রাইফার বিয়ে হতে গিয়েও হয়নি। কিন্তু আমার সাথে হয়েছে। দু’জন অবিবাহিত ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়েছে হোক সেটা অপ্রত্যাশিতভাবেই। কিন্তু আমরা কতিপয় মানুষ তো জানি সত্যটা কী। আমার নিজের আপন ভাবীকে বিয়ে করতে হয়েছে, এর চাইতে বেশি অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় আর কিছু হতে পারে কি? আমার মনে হয় না।
খাওয়া শেষ হলে রুমে এসে একটা ঘুম দিলাম। রাইফা অবশ্য এলো না, ও নিজের কাজিনদের সঙ্গে এতদিন পর মিলিত হওয়ায় তাদের সাথেই গল্প করতে গেল আমাকে রুমে ঘুমানোর জন্য পাঠিয়ে।
বিকালের দিকে ঘুম ভেঙে গেল। আড়মোড়া ভেঙে উঠে হাতেমুখে একটু পানির ঝাপটা দিয়ে ড্রয়িংরুমে গেলাম শ্বশুরবাড়ির পক্ষের লোকজন সকলের সাথে সৌজন্যমূলক দেখাসাক্ষাতের জন্য। অনেক অতিথিরাই বিয়ের পরপরই চলে গিয়েছিল, আর যারা যায়নি তারাই উপস্থিত আছে এখন ড্রয়িংরুমে।
আমাকে দেখামাত্রই সকলে একটা হাসিমুখ প্রদর্শন করল।
আমার সাথে সকলে কুশল বিনিময় করল। সকলে আরো একবার বোঝালো যে সৃষ্টিকর্তা যার সাথে বিয়ে লিখে রেখেছেন, তার সাথেই বিয়ে হবে। এর অন্যথা কখনো হতে পারে না। আমি মাথা নাড়িয়ে তাদের সাথে সায় দিলাম। তবে আমি অবাক হলাম এখানে সীমান্তকে দেখে। ও আমার কলেজের ছোটভাই। অনেকটা গোয়েন্দা টাইপের মানুষ সে। ওর সাথে অনেক আগে থেকেই আমার সখ্যতা। কিন্তু ও এখানে কেন?
আমি গিয়ে ওর পাশে বসলাম।
“কী ব্যাপার সীমান্ত, তুমি এখানে? রাইফা তোমার সম্পর্কে কী হয়?”
“রাইফা আপু আমার ফুপাতো বোন হয় ভাইয়া, স্যরি, দুলাভাই। আমিও আপনাকে বিয়ের দিন দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। আপনি আমাকে লক্ষ্য করেননি হয়তো।”
“হুম।”
“কেমন আছেন?”
“ভালো। আচ্ছা, তোমার সাহায্য লাগবে আমার।”
“বলুন, অবশ্যই আমি চেষ্টা করব আপনাকে সাহায্য করার।”
“পরে বলব, কেমন?”
“জ্বি, ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আমার নতুন নম্বর আছে কি আপনার কাছে?”
“না। এখন দাও।”
“নিন।”
কিছুক্ষণ পর সকলের অনুরোধে একটা গানের আসর বসলো। যে যেমন গান গাইতে পারে আরকি হোক সেটা বাংলা, হিন্দি কিংবা ইংরেজি গান। যারা যারা গান পারে, তারা গাইল। আমার পালা আসল প্রায় শেষের দিকে। আমিও গান গাইতে পারি মোটামুটি। গিটার হাতে নিয়ে বালামের ‘একাকী মন’ গানটা গাইলাম। সকলের হাততালি পেলাম। আসলে, প্রোফেশনাল না হলেও মোটামুটি ভালোই গিটার বাজাই আমি। তাছাড়া গানের গলাও আমার মাঝারি রকমের। সবমিলিয়ে আমার গান সকলের কাছে ভালোই লেগেছে, এননকি এ পর্যন্ত যারা যারা গান গেয়েছে, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালোই হয়েছে।
আর বাকি মাত্র একজন। সেটা আর কেউ নয়, বরং রাইফা। এই মেয়ে আবার গানও গাইতে পারে? অবিশ্বাস্য! আমার চোখের সামনে একদম প্রোফেশনালদের মতো গিটারটা হাতে নিল। তারপর একটা হিন্দি শর্ট ফিল্মের গানের টিউন উঠালো গিটারে, গাইতে শুরু করল।
[Music]
Karle Aaj Koii Khataa..
Mujhko Aaj Le Apna Bana
Ishq Toh Deta Hai Roz Sazaa..
Aaj Ki Raat Tu Mera Ho Ja
♪Roo Ki Pyas Bujhaa De…
Bas Tu Aur Na Mujhko Satah
Yeh Dil, Tera Bas Tera Hi Toh Hai
Jo Hai Maanga, Khuda Se Woh Tu Hi Toh Haai♪
♬Karle Aaj Koii Khataa..
Mujhko Aaj Le Apna Bana
Hoo…
Ishq Toh Deta Hai, Roz Sazaa..
Aaj Ki Raat Tu Mera Ho Ja♬
[🎶Music🎶]
Jo Bhi Hai, Mujhme Mera
Mera Na, Sab Tera Hi Haai
Paas Aa, Na Duur Jaana
Tere Bina Bas Andhera Hi Hai
🎵Jo Bhi Hai, Mujhme Mera..
Mera Na, Sab Tera Hi Haai
Paas Aa, Na Duur Jaana
Tere Bina Bas Andhera Hi Hai🎵
Awaragi Hai Tere Naam Ki
Sadaa Mujhme Samaajh Aa..
Baato Hi Baato Mein, Yu Mulakaato Mein
Jannat Mein Le Ja Zaraa…
Ishq Toh Deta Hai Roz Sazaa
Aaj Ki Raat Tu Mera Ho Ja
গানটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই করতালির রোল পড়ে গেল। যেমন ছিল গানটা, পুরাই মাথা নষ্ট করার মতো, ঠিক তেমনই ছিল রাইফার গানের গলাও। সবমিলিয়ে নির্দ্বিধায় রাইফার গানটাই শ্রেষ্ঠ ছিল আজকের গানের আসরের। ওর পরে ছিলাম আমি। কীভাবে এত সুন্দর গাইতে পারে মেয়েটা? এত প্রতিভাবান মেয়েটা এতদিন ধরে আমাকে ভালোবেসেছে এবং পরে যেভাবেই হোক আমার বিয়ে করা বউ হয়েছে! ভাবলেই একরাশ প্রশান্তি এবং তৃপ্ততায় মন ভরে ওঠে। কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়ে যায় যে ও তো আমার ভাইয়ের খুনী, ওর প্রতি এত ভালো ধারণা কেন আসছে আমার? আর ভাবতে পারলাম না কিছু।
আরো দুই-তিনদিন থাকা লাগবে এখানে, ততদিনে বাবা-মা আর বোন এসে পড়বে গ্রাম থেকে বাসায়। ঠিক হলো যে আগামীকাল আমরা, অর্থাৎ আমি, রাইফা আর রাইফার কাজিনরা মিলে বাইরে কোথাও হতে ঘুরে আসবো। একে তো ভাইয়ের শোক কাটিয়ে উঠতে পারছি না, তার উপর এত আদিখ্যেতা! আর যেন সহ্য হচ্ছে না। কিন্তু আমি যে নিরুপায়। তাছাড়া এতসব তো আমার মন ভালো করার জন্যই করা হচ্ছে।
রাতে খাওয়ার পর রুমে চলে আসলাম। এর মাঝে রাইফার সাথে আমার কোন কথাই হয়নি। আমি রুমে ঢুকার ঠিক পরমুহূর্তেই রাইফাও রুমে প্রবেশ করল। আমি যেই বিছানায় শুতে যাবো, ঠিক তখনই রাইফা আমার টি-শার্টটা পিছন থেকে ধরে একটা হ্যাঁচকা টান দেয়। আমি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলেই আবার ও আমাকে ধরে ফেলে। আমি ঠিকভাবে দাঁড়ানোর আগেই ও আমাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। বলে,
“অনেক হয়েছে। আমাকে তোমার মেনে নিতেই হবে, হোক আগে কিংবা পরে। শুধু শুধু কেন বিলম্ব করছ?”
“আমার ভাইয়ের খুনীকে আমি নিজের বউ হিসেবে মেনে নিব? হা হা হা!”
“যদি আমি প্রমাণ করতে পারি যে আমি তোমার ভাইকে খুন করিনি, তবে?”
“তাহলে নিঃশর্তে তোমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিব, আমার করা প্রতিটা দুর্ব্যবহারের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করব। ভালোবেসে এবং নিজ থেকেই তোমাকে স্ত্রীর অধিকার দিব। কিন্তু আফসোস! সেই দিন হয়তো আসবে না কোনদিনও। কারণ তুমি আমার ভাইকে খুন করেছ, এই সত্যটা তুমি হাজার চাইলেও পরিবর্তন করতে পারবে না। সত্য ধামাচাপা দিয়ে রাখা যায়, বদলানো যায় না।”
“আমাকে জাস্ট কয়েকটা দিন সময় দাও, আমি তোমার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবোই।”
“দিলাম সময়। একমাসের ভিতর পারো কিনা দেখি।”
“আচ্ছা। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারবে না কিন্তু।”
“ঠিক আছে। আমার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, তাহলেই হবে।”
“আমি তোমার এই শর্ত মানতে পারব কিনা জানি না, তবে তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারবে না কিন্তু এই কথা দিয়ে ফেলেছ তুমি। হি হি!”
এটা বলেই ও ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো। আমিও আর ওর জন্য অপেক্ষা না করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।
চলবে