ভাঙা_চুড়ি
পর্ব দুই
,
-রাশেদ তোমাকে নিয়ে আমি সুখী না। ডিভোর্স দিতে চাই!
রাশেদের আমার কথা শুনে চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। আমাকে বললো,
– তোমার মাথা ঠিক আছে নাকি পাগল হয়ে গেছো?
সবার কথা একবার ও ভেবেছো। আশফি, আমাদের বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে হয়েছে। তোমার এই ধরনের সিদ্ধান্তে সবাই কতোটা শক পাবে বুঝতে পারছো?
– আমার কিছু করার নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।
– ঠিক আছে আমি বাধা দেবো না কিন্তু আমার দোষ টা কোথায় জানতে পারি?
– তোমার কোনো দোষ নেই। দোষ টা আমার। কারণ আমার সম্পর্ক আছে আগের থেকে। বাবার চাপে পরে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি। আমায় ক্ষমা করো রাশেদ।
,
,
রাশেদ আমার কথা শুনে খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেলো। আপনারা ভাবছেন আমি কেনো এভাবে বললাম আসলে আমার কোনো সম্পর্ক ছিল না।। আমি শুধু রাশেদকে বুঝাতে চাইছি কতোটা কষ্ট লাগে যখন জানতে পারা যায়, যার সাথে সারাটা জীবন কাটাবো সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
,
আমি ইচ্ছে করে রাশেদ কে এই গুলো বললাম। রাশেদ আমার কথায় খুশি নাকি কষ্ট পেয়েছে বুঝলাম না। হয়তো খুশি হয়েছে যেটা আমার কাছে প্রকাশ করছে না।
,
পরদিন আমি রাশেদ কে বললাম,
,
— আমি উকিল সাহেবের সাথে কথা বলেছি তিনি বলেছেন পরশু আমাদের
দেখা করতে।
— তুমি তাহলে সত্যি চলে যেতে চাও?
— কেনো আমি কি যেতে পারি না?
— তাহলে বিয়েতে রাজি হয়েছিলে কেন?
— একই কথা যদি তোমাকে আমি জিজ্ঞাসা করি?
— মানে কি বলতে চাইছো তুমি?
— কিছু না।
— আশফি তুমি কি সত্যি কাউকে ভালোবাসো?
,
রাশেদের কথা শুনে চোখে পানি ছলছল করছে। ওকে কিভাবে বুঝাই কতোটা ভালোবাসি। তুমি দিনের পর দিন আমাকে অবহেলা করেছে। অবহেলা করলে কতোটা কষ্ট, আমি তোমাকে বুঝাবার জন্য মিথ্যা কথা বলেছি। কিন্তু রাশেদ কি কষ্ট পাচ্ছে আমার জন্য?
,
আমি কিছু না বলে উঠে চলে গেলাম। কারণ রাশেদের চোখে চোখ রাখার সাহস আমার নেই।
,
আমার একাকিত্ব জীবনের সব কিছু জুড়ে ছিল আমার ডায়েরিটা। যেখানে আমি আমার সুখ দুঃখ শেয়ার করতাম। ডায়েরির পাতায় লিখে রাখতাম নিজের সব জমানো কথা।
সেদিন ও ডায়েরিটা নিয়ে বসলাম লিখতে —
# —-রাশেদ তুমি আমায় ক্ষমা করো। তোমার সাথে মিথ্যা বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে তবুও বলে যাচ্ছি কেনো জানো? শুধু তোমার মুখ থেকে একটা কথা শুনতে তোমার না বলা কথা গুলো জানতে?
তুমি একবার শুধু একবার বলো আশফি তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।কোথাও যেতে পারবে না তুমি।
রাশেদ তুমি সেদিন বলেছি আমি সেকেলে একটা মেয়ে। আমাকে নিয়ে চলা তোমার পসিবল না। তুমি একবার ও আমাকে বলেছো,আশফি আমার সামনে তোমার এতো লজ্জা কিসের? আজ সব লজ্জা ভেঙে তোমাকে আমার ভালোবাসার চাদরে মোড়াবো। কিন্তু না একবার ও বলোনি।বরং দিনের পর দিন দুরে রেখেছো।
,
তুমি বলেছো আমি তোমার পছন্দ জানি না। তোমার পছন্দের খাবার রান্না করতে পারি না।আচ্ছা রাশেদ তুমি কখনও এসেছো রান্না ঘরে আমি যখন রান্না করি। আমার খুব ইচ্ছে করে জানো আমি যখন রান্না করবো পিছন থেকে তুমি আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলবে,
– আশফি চলো আজ তোমার সাথে আমি ও রান্না করবো। জানো আমি কি কি খেতে পছন্দ করি। আসো তোমাকে আজ সব শিখিয়ে দেই। রোজ আমার পছন্দের খাবার রান্না না করলে তোমার সাথে আড়ি।
,
কিন্তু না তুমি আমাকে বলোনি। দুরে ঠেলে রেখেছো তোমার অধিকার থেকে।
ছোট বেলা থেকে বোরকা পরে বড়ো হয়েছি। কখনও বোরকা ছাড়া কোথাও যায়নি। আর আজ তোমার কাছে আমি হলাম গেঁয়ো। আচ্ছা রাশেদ নিজের বউকে বন্ধুদের কাছে প্রদর্শনী করাটাই বুঝি আধুনিকতা। যদি ওটা আধুনিকতা হয়ে থাকে তাহলে আমি সত্যি তোমার অযোগ্য আমায় ক্ষমা করো।
,
আসলে আমি তোমার যোগ্য না। কিন্তু কিভাবে বলি আমি সব জেনে গেছি। আমি জোর করে তোমার ভালোবাসা চাই না। আমি চাই তুমি আমার ভিতরের আমি কে ভালোবাসো। আমি যেমন ঠিক তেমন আশফি কে। দিনের পর দিন তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ছটফট করেছি। চেয়েছি তুমি আমাকে নিজের করে নাও। আমার অজানা কথা গুলো রোজ রাতে চুপি চুপি তুমি আমার কানে এসে বলে যাও। আমি লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখবো তুমি আমার হাত সরিয়ে সব লজ্জা ভেঙে দিবে।
,
কিন্তু না তুমি এমন টা করোনি। গভীর রাতে ফোন নিয়ে চলে গেছো অন্য ঘরে। আমি কি তোমার খুব অযোগ্য রাশেদ? কেন করলে আমার সাথে এমন? এর উওর যদি জানা থাকে তাহলে যেদিন তোমার ইচ্ছে করে আমাকে বলো।আমি তোমার পথ চেয়ে থাকবো যতো গভীর রাত হোক যতো ঝড় হোক আমার দরজা তোমার জন্য খোলা থাকবে।
,,
আশফি”
,
আমি আর রাশেদ উকিলদের কাছে বসে আছি। রাশেদ আমাকে এখনো বলছে না আশফি ফিরে চলো। আজ থেকে আমি ছাড়া তোমার জীবনে আর কেউ থাকবে না। তাহলে কি সত্যি রাশেদের মনে আমার জন্য কোনও জায়গা নেই? ও একবার ও আমাকে বাধা দিলো না। বললো না আমি তোমার স্বামী তোমার উপরে আমার সব অধিকার।
,
তাহলে রাশেদ ও এই সিদ্ধান্তে খুশি। ওর প্রতি একটা নিরব অভিমান জড়ো হলো। ভালোবাসাটা একটা বদ্ধ ঘরে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যেতে লাগলো।
আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র তিন মাস। উকিল সাহেব যখন জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের বিবাহিত জীবনে সমস্যা কি? কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন?
তখন দুজনেই চুপচাপ। কেউ কোনোও কথা বলতে পারছি না। উকিল সাহেব হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছিলেন তাই চট করে বললেন,
— আপনাদের ডিভোর্স নিতে চাইলে আরো কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিয়ের ছয় মাসের আগে ডিভোর্স দেওয়া যাবে না কেউ কাউকে। আপনাদের আরো তিন মাস একজাস্ট করে থাকার চেষ্টা করতে হবে। তখন যদি মনে করেন আপনারা মিলে থাকতে পারছেন না তখন আপনাদের সিদ্ধান্ত আমাকে বলবেন।
,
আমার আর রাশেদের এই নিয়ে আর কোনো কথা হলো না। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু দিনের জন্য বাবার কাছে গিয়ে থাকবো। আমার না থাকার শূন্যতা রাশেদকে কতো টুকু তাড়া করে আমার বোঝা দরকার। আর এই তিন মাসই বলে দিবে আমার প্রতি রাশেদের ভালোবাসা কতোটা গভীর। তারপর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাশেদের ব্যাপারে আমার। যে ভালোবাসার চুড়ি আজ আমার হাতে ওটা থাকবে নাকি ভেঙে যাবে সেটা নির্ভর করছে এই তিন মাসে।
,
পরদিন আমি তৈরি হয়ে রাশেদের কাছে গিয়ে বললাম,
……….।
,
চলবে
লেখা অধরা জেরিন