বৃত্তের_অন্তরালে পর্ব_১১
#পলি_আনান
ভারী বর্ষনে কাদা পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট।এইদিকে দীর্ঘ লম্বা একটি জ্যামে আটকে আছে নাহিয়ান।বৃষ্টির ফোটা ধরনীতে পরার পর থেকেই পরিবেশ শীতিল ঠান্ডা বাতাস বয়ে চলছে। কিন্তু নাহিয়ান ঘেমে একাকার। তার কপালে ঘাম গুলো মুক্তোর দানার মতো চিক চিক করছে।সন্ধ্যা হতে চললো এখনো ওজিহা ফোন ধরছেনা। বাড়ির ল্যান্ড লাইনে ফোন দিয়েও কাউকে পাওয়া গেলো না।তার মা তাসলিমাকে ফোন করলে তিনি বাইরে আছে বলেই কেটে দেয়।
“কি করেছে মুহিব যার জন্য ওজিহা এতো ক্ষেপেছে”
দীর্ঘ জ্যাম অতিক্রম করে সন্ধ্যা ছয়টায় বাড়ি পৌছায় নাহিয়ান। গেটের ভেতরে গাড়ি ডোকার মাত্রই দারোয়ান এগিয়ে আসে তার কাছে,
“ছোট স্যার আপা মনি কিছুক্ষন আগে বেরিয়ে গেছে। হাতে একটা বেগ ছিল।মনে হয় জামা কাপড়ের ব্যাগ হবে।আর আমাকে এই কাগজ টা দিয়ে গেছে আপনি আসলে দিতে বলেছে।
” হোয়াট বেরিয়ে গেছে মানে কোথায় গেছে এই বৃষ্টিতে, ও কি পাগল হয়ে গেছে!কোথায় গেছে ও!
“তা তো আমাকে বলে যায় নি।শুধু কাগজ টা দিতে বলেছে।”
নাহিয়ান দ্রুত গাড়ি পার্কিং করে। ঘরের ভেতর ডুকে পরে।সদর দরজার সামনে এলেই পা থমকে যায় তার। তফুরা খাতুন সোফায় বসে মুখে হাত দিয়ে কাদঁছে চশমা টা খুলে সাইডে সরিয়ে রেখেছেন।নাহিয়ান দ্রুত পা চালিয়ে তার সামনে বসে পরে,
“দাদিজান কি হয়েছে বলো কাদঁছো কেন তুমি?
” তুই আমার নাত বউকে এনে দে আমি এতো কথা শুনতে চাই না সে তোর উপর অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে”
“আমার উপর! কই আমার সাথে তো সব ঠিকি ছিল তাহলে হঠাৎ কি হলো।কোথায় গেছে সে বলো কোথায়?
” আমি যানি না শুধু বলে গেছে সে আর ফিরবে না। তোর নাকি কি সব চেলেঞ্জ জেতার ছিল তাই তুই ওকে বিয়ে করেছিস।তোর চেলেঞ্জ তুই জিতে গেছিস আর তোর ওকে প্রয়োজন নেই।
“হোয়াট!কি বলছো তুমি পাগল হয়ে গেছো।আমি ওকে ভালোবাসি দাদিজান তুমি তা জানই!
” আমি এত কথা শুনতে চাইনা আমার কলিজাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে। ”
নাহিয়ান কি করবে, কোথায় খুজবে ভেবে পাচ্ছেনা।পকেট থেকে ফোন বের করে জারাকে একটা কল করে,
“হ্যালো জারা,ওজিহা কি তোমার কাছে?
” না তো ভাইয়া কেন!ও কি বাড়ি ফিরেনি?
“ফিরেছে তবে মুহিবের সাথে ওর দেখা হয়েছে। মুহিব তার মাথায় উলটা পালটা কিছু ডুকিয়ে দিয়েছে এখন সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।দাদিজান কে বলেছে সে নাকি আর ফিরবেনা।”
“ফিরবেনা মানে কি! আচ্ছা ওর যাওয়ার মতো এই শহরে হোস্টেল আর আমার বাড়ি আছে। যেহেতু আমার কাছে আসেনাই সেহেতু হোস্টেলে যেতে পারে আমি খোজ নিচ্ছি।”
“আমাকে তাড়াতাড়ি আপডেট দিও প্লিজ”
“ভাইয়া চিন্তা করবেন না আমি খোজ নিচ্ছি।”
উপরে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে পুরো রুম জুড়ে ওজিহার জিনিস পত্র খুজতে থাকে। নাহিয়ানের দেওয়া প্রতিটি জিনিস সে রেখে গেছে শুধু মাত্র বিয়ের রাতে দেওয়া প্রথম উপহারটি ছাড়া।রিংটি হয়তো হাত থেকে খুলতে ভুলে গেছে।ওজিহার পড়ার বইগুলো সাথে নিয়ে গেছে। বিছানায় বসে দারোয়ানের দেওয়া চিঠিটা পড়তে শুরু করে সে,
“ঠকেছি জীবনের প্রথম পর্যায় গুলোতেই ঠকেছি।জন্মের সময় মা ঠকিয়েছে।যখন আদো আদো বাবা ডাকতাম তখন বাবা ঠকালো।তারপর থেকে তো পুরো পৃথিবীটাই ঠকিয়ে গেছে।শেষ পর্যায়ে যাকে আকঁড়ে ধরে বেচেঁ থাকবো সে নিজেও ঠকালো।আমাকে এইভাবে ব্যবহার না করলেও পারতেন।কয়দিন পর হয়তো ডিভোর্স পেপার সামনে এনে মুখের উপর ছুড়ে মারতেন আর বলতেন সাইন করে দাও তোমার সাথে আমার চলবেনা। আপনার কাজ তো শেষ শুধু শুধু উটকো ঝামেলা ঘাড়ে রেখে কি লাভ।তাই সত্যটা যখন যেনেই গেলাম আগে থেকেই সরে যাচ্ছি।আর ফিরে আসবো না কোন দাবী নিয়েও আসবো না”
ব্যস এইটুকুর একটা চিঠি পড়ে নাহিয়ানের মাথা ঝিম ধরে গেছে।বুকের ভেতর খা খা শুরু হয়ে গেছে।দুজনের মাঝেই ছিল অসীম ভালোবাসা কিন্তু একটা মিথ্যাচারে পুরো ভালোবাসাতে ফাটল ধরে গেল।
.
পিছঢালা একটি নিরিবিলি রাস্তায় দৌড়াচ্ছে ওজিহা।তার পিছনে তাড়া করছে এক মদ্যপান করা নেশায় মগ্ন হওয়া একটি যুবক। ওজিহা নিজেকে বাচাতে দৌড়তে শুরু করে। সে এত ক্ষিপ্র গততে দৌড়াতে শুরু করেছে যে বর্তমানে সে কোথায় আছে তা সে যানেনা ছুটছে তো ছুটছেই।নিজেকে বাচাতে একটি বাগানের এক সাইডে লুকিয়ে পড়ে সে। চারিদিকে অন্ধকার আকাশে মেঘ। দূর থেকে একটি বাশের সাথে ঠেস দেওয়া লাল বাতি জ্বলছে।নিজেকে একটি গাছের সাথে আড়াল করে নিয়েছে সে। নেশা কাতুর লোকটি ডানে বামে চারিদিকে তাকাতে শুরু করে ওজিহাকে না দেখতে পেয়ে এলো মেলো পায়ে অন্য দিকে হাটা শুরু করে। হালকা ঝিম বৃষ্টিতে ওজিহা ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছে। দুই হাত দিয়ে বৃষ্টির পানি গুলো মুখ থেকে সরিয়ে বুকে থুথু দিয়ে দাড়াতে গেলেই সে অনুভব করে কেউ তার লম্বা চুল টেনে ধরে রেখেছে। আর চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে এক উটকো বাজে গন্ধ।সারা শরীরে হঠাৎ করেই এক তীব্র ভয়ের সঞ্চালন হয়।চারিপাশটা ভালো করে লক্ষ্য করলে সে বুঝতে পারে সে এখন একটি গোরস্থানে আছে।চুলের টান আরো বেড়েই চলেছে। পেছনে ঘুরে তাকালে খেয়াল করে থেতলানো মুখের একটি অবয়।যার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এসেছে৷ এবং এক চোখ দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরছে।ওজিহা গগন কাপিঁয়ে একটি চিৎকার দেয়। কিন্তু আফসোস তার চিৎকার কেউ শুনতে পেলনা চারিদিকে লোকালয়ের কোন চিহ্ন নেই।চারিদিকে বাগান আর বিশাল বড় বড় খাদ।মাঝ দিয়ে চলে গেছে পিছঢালা সোজা রাস্তা।ওজিহা একটানে তার চুল সরাতে নিলেই অবয়টি আরো শক্ত করে চেপে ধরে,
“এখানে কেন এসেছিস”
অবয়টির এমন ফেসফেসে কন্ঠে ওজিহা ভয় পেয়ে যায়।
“আয়ায়ায়ায়ায়ামাকে ছেএএএড়ে দিইইইন।
” তোকে তো ছাড়া যাবেনা,, সে আসবে সে আসবে তোকে মারতে,”
একদিকে বিশ্রী গন্ধ অন্য দিকে লোকটার কথায় ওজিহার জান যেন বেরিয়ে যাবে।লোকটি আরো জোরে ওজিহার চুল টান দিলে চুলের গোড়া থেকে রক্ত গড়িয়ে পরতে থাকে। রক্ত কপাল থেকে চুইয়ে চুইয়ে কিছুটা চোখে মুখে এসে পরে।নিজেকে বাচাতে এক প্রকার দস্তা ধস্তি শুরু করে সে ফলে লম্বা নোখের আচড়ে ওজিহার গাল হাতের চামড়া ছিলে যায়।
.
ওজিহাকে খুজতে খুজতে ক্লান্ত হয়ে গেছে নাহিয়ান।সব জায়গায় খোজ নেওয়া শেষ কিন্তু কোথাও তার খোজ নেই। বাড়ির প্রত্যক সদস্যর অবস্থা করুন।দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে নাহিয়ান।তার ওহিজানকে যদি আজ না পায় নিশ্চয় কোন উলটা পালটা কাহিনী করে বসবে সে।হঠাৎ নাহিয়ান খেয়াল করে একা নির্জন রাস্তায় মেয়ে দোড়াচ্ছে। রাস্তার ধারের ল্যাম্পপোস্টের আলোতে মেয়েটার চেহারা বড্ড চেনা চেনা লাগছে তার।নাহিয়ান দ্রুত গাড়ি দাড় করিয়ে মেয়েটার সামনে দাঁড়ায়। মেয়েটা আর কেউ নয় ওজিহা।
“ওহিজান তোমার এই অবস্থা কেন?
“আয়ায়ায়ামাকে বাচান ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।
” কে তোমাকে মেরে ফেলবে?কি বলছো তুমি!
“ওওওই পিচাশটা (পেছনে আঙুল দেখিয়ে)
নাহিয়ান তাড়াতাড়ি ওজিহাকে টেনে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।সে খেয়াল করে ওজিহার সারা শরীরে আচড়ের দাগ।কিছু কিছু যায়গায় রক্ত শুকিয়ে গেছে।
” ওহিজান তুমি ঠিক আছতো
“না মিত্যু মনে হয় আমাকে টানছে”
চলবে………