বর্ষার_এক_রাতে,পর্ব-২০,২১

বর্ষার_এক_রাতে,পর্ব-২০,২১
সাদিয়া

২০
তুসি কি বলবে তা শুনার জন্যে আহফিন তূবা আর শিরিণ বেগম বসে আছে মাঝ ঘরে।

আহফিন আসতেই তুসি বলেছিল “ভাইয়া আপনি এসেছেন? ভালোই হয়েছে। না আসলেও আপা কে বলতাম আপনাকে নিয়ে আসতে। আমার কিছু বলার ছিল আপনাদের।”

“কি রে তুসি কি বলবি বলছিস না কেন?”

“আপা আমি চাই আমার অপারেশনের আগে তোমার আর ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে যাক।”

“কোনো ভাবেই না। আমি আগেই বলেছি এই বিষয় নিয়ে। আর কিছু বলতে চাই না। এছাড়া তোর কিছু বলার থাকলে বল।”

“আমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করবে না আপু?”

“এটা সম্ভব নয়। আর কিছু তোর বলার বা চাওয়ার থাকলে বলতে পারিস আমি পূরণ করব।”

দুই বোনের মাঝে আহফিন কোনো কথাই বলল না। আর শিরিণ বেগম নীরবে কেঁদে চলছেন। কারণ তিনি জানেন তুসি ভেতর থেকে কতটা ভয় পাচ্ছে। তার মনে হচ্ছে সে আর চোখ খুলতে পারবে না অপারেশন করার পর।

“আল্লাহ আমার কপালে কি রেখেছে আমি জানি না আপা। আর এটাও জানি না আমি বেঁচে থাকতে পারব কি না।”

“তুসি।”

তূবার ধমকে তুসি তেমন পাত্তা না দিয়ে বলল “তাই আমি চাই তোমার আর ভাইয়া কে এক সাথে সুখি দেখতে। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা।”

“তুসি কি যা তা বলা হচ্ছে? মুখে কি তোর কিছুই আটকায় না? তুই একদম সুস্থ হয়ে যাবি দেখিস। আর তোকে তো আমি বলছিই আমার বিয়েতে তোকে নাচতে হবে। নিজের পায়ে হেটে তুই আমার স্বামীর বাড়ি যাবি। এখন এসব কথা উঠছে কেন?”

“….

এতক্ষণ আহফিন নীরব থাকলেও এবার সে বলে উঠল।
“দেখো তুসি আমি কিন্তু তোমার বোনের সাথে একমত। আমিও চাই অপারেশনের পরে সবাই মিলে হৈচৈ করে বিয়ে টা হবে। দেখো তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো। আর অপারেশনের তো বেশি দিন বাকি নেই।”

“আমি আপার বিয়ে না দেখে অপারেশন করব না।”

তুসি নিজেই হুইল চেয়ার টেনে টেনে চলে গেল ওখানে থেকে। আহফিন আর তূবা বুঝতে পারছে না কি করবে। তুসির কথা রাখবে নাকি তাদের।

“দেখো তূবা তুমি হয়তো ভাববে আমি নিজের টা দেখছি কিন্তু না। এখন কিন্তু আমাদের তুসি কে সময় দেওয়া দরকার। ও কি বলে কি চাই তাতে গুরুত্ব দেওয়ার। বাকিটা তুমি ভাবো। আমাকে রাতে জানিও ফোন করে। আর আজ রাতে যেতে হবে না তুসির সাথেই থাকো।”

“….

“আসছি আমি।”

“সাবধানে যাবেন।”

“টেক কেয়ার।”

তূবা মৃদু মাথা নাড়াল।

রাতে তূবা আহফিন কে কল করে জানিয়ে দিয়েছে এই শুক্রবার যেন বিয়ে টা হয়ে যায়। আহফিন তেমন কিছু বলে নি। কারণ তার মাঝে চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।

আজ লুবনার সাথে দেখা করেছিল আহফিন। বাধ্য হয়েছে করতে। লুবনা এখন কান্নাকাটি করছে তাকে একটা সুযোগ দেওয়ার। সে আবার ফিরে আসতে চায় তার জীবনে। আহফিন যখন জানাল সে একজন কে ভালোবাসে। তাকে বিয়ে করতে চলেছে তখন লুবনা পাগলের মতো চিল্লাচিল্লি করতে থাকে রাস্তায়। তাই আহফিন আর কিছু না বলে চলে আসে এখান থেকে। আসার সময় তূবা কে রনির সাথে দেখে আহফিন রেগে গেলেও শান্ত থাকার চেষ্টা করে। তাই তূবা কে তখন কল করেছিল। যদিও তার তূবার বাসাতেই যাওয়ার কথা ছিল। যখন তূবা কল রেখে রনির সাথে আর কথা না বলে চলে যায় তাই আহফিন আর কিছু বলতে চায়নি তাকে।

—-
তূবা হলুদ আর গোল্ডেন পারের একটা কটন শাড়ী পরে আছে। মাথায় সাদা আর হলুদ কাঁচা ফুলের একটা টিকলি। কানে হলুদ ফুলের দুল। গলা আর হাতেও সাদা ও হলুদ ফুলের মালা ঝুলছে। হাল্কা চুল কপাল বেয়ে গালে এসে পড়ছে। তূবা কে দেখে আহফিনের ভেতরে তোলপাড় করা শিহরণ বইছে। ফোনের স্কিন থেকে চোখ সরতেই চাইছে না। তূবার সৌন্দর্য কে যে কোনো কিছু হার মানাবে। ভেতরে সহস্র অনুভূতি নিয়ে আহফিন তাকিয়ে আছে। তূবা টানা টানা কাজল কালো চোখ গুলি নিয়ে আহফিনের দিকে তাকাতেই আহফিন বুকে হাত দিল। তূবার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। তাদের কান্ড দেখে তুসিও হাসছে।

একটু পরই আহফিন সাদা পাঞ্জাবী পায়জামা আর হলুদ কটি পরে হাজির হয়ে গেছে। জামাই হলুদে নিজে চলে আসাতে আশেপাশের মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। তূবা যখন আহফিন কে দেখল তখন সেও হতবাকে চুপ হয়ে ছিল। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না তার। আহফিন ভ্রু নাচিয়ে কিছু ইশারা করতেই তূবা হেসে উঠল। আহফিন একা আসে নি তার সাথে তিন টা ছেলেও এসেছে সাথে দুইটা ক্যামেরা আর লাইট।

আহফিন তূবার বিয়ের এলবাম করে রাখার জন্যে তারা ছাদে গিয়ে অনেক রকম ছবি তুলল। ছাদের এক কোণায় নিচ থেকে বেয়ে উঠা কিছু গাছের পাশে ছবি গুলি দেখার মতো হয়েছে।

দুজনে নীরবে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। আহফিন তূবার কোমরের এক পাশ টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। অনেকক্ষণ এভাবেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর আহফিন তূবাকে নিজের দিকে ফিরাল। গালের দুই পাশে দুই হাত রেখে তূবার চাঁদ মুখের দিকে আরো কিছুক্ষণ চেয়ে রইল। হুট করে তূবা কে বুকের গভীরে চেঁপে ধরেছে পরম আদরে।

—-
তূবার বিয়ে অথচ সবচেয়ে খুশি তুসি। তার মুখ থেকে হাসির রেশ টা কমছেই না। সে নিজের চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছে। তার বোনের বউ সজা মুখটা দেখে খুশিতে সাগরে ভাসছে তুসি। বউ সাজানোর পর তুসিই প্রথম দেখেছে তূবা কে।
“আপা আমার আপা। আমার আপা দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর। আপা তোমার দিকে তাকালেই না আমার চোখ গুলি চিকচিক করে উঠছে। কেউ নজর না দিক মাশাল্লা। এটা তো আমার আপার চোখ ধাধালো সৌন্দর্য। তুমি আমার শক্তি আপা। তুমি পাশে থাকলে আমার তেমন চিন্তাই হয় না। জানি আমার আপা আমাকে কতটা ভালোবাসে। তোমার চেয়ে আজ আমি বেশি খুশি তা তুমি নিজেও জানো না। বউ সাজে তোমার মুখের এই হাসিটা দেখার জন্যে আমি অপেক্ষা করেছিলাম। এখন আমার আর কোনো ইচ্ছা নাই। আমার আপার মুখের এই হাসিটা আল্লাহ যেন তাজা রাখে।”

চিকচিকে চোখ নিয়ে তূবা তুসি কে জড়িয়ে ধরল। তুসি যে তার জীবনের অর্ধেক টা তা আহফিন ছাড়া কেউ ভালো করে বুঝতে পারবে না। তুসিকে যদি সুস্থ করতে তার জীবনের শেষ এক বিন্দু রক্তও দিয়ে দিতে হয় তবেও সে রাজি। আল্লাহর কাছে সে নিজের বিনিময়ে হলেও তুসির সুস্থতা কামনা করে প্রতিনিয়ত।

তূবার সাথে বসে আছে তুসি। আজ একটি বারের জন্যেও বোন কে আড়াল করতে চাইছে না। তূবার শরীর ঘেঁষে রয়েছে সে। বারবার নাক টেনে বোনের শরীরের ঘ্রাণ নিচ্ছে। হয়তো প্রতিদিন এটা আর করা হবে না।

জীবনে এই প্রথম বোধহয় তুসি এভাবে কেঁদেছে। শুধুমাত্র তুসির এই কান্না দেখে তূবার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। দুই বোন অঝোরে কেঁদেছে। তুসি তূবা কে ছেড়ে থাকবে কি করে ভেবেই কাঁদছে। তার আপার মুখটা দেখলে সারাটাদিন ভালো যায়। কিন্তু এখন তো আর প্রতিদিন দেখতে পারবে না। নিজের জীবনের ভয়ও তো আছেই। এই আপা কে ছাড়া দিন কি করে চলবে তার? আপা ছাড়া সে শূন্য। তুসি বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। চোখ মুখ অনেক ফুলে গেছে। তুসির কান্না দেখে আশেপাশের মানুষ খুব আফসোস করছেন। আবার কেউ কেউ কেঁদেই দিয়েছেন। তুসির কান্না কেন যেন কমছেই না। কাঁদতে কাঁদতে যখন খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে সে তখন আওয়াজ কমে এলো। শেষ বারের মতো নিজের আপা কে জড়িয়ে ধরে বিদায় দিল।

গাড়িতে উঠে তূবার কান্না কে দেখে? আহফিন কিছুতেই তাকে থামাতে পারছে না। তুসির জন্যে মন টা পুড়ে যাচ্ছে। তূবা কে অস্থির হয়ে কাঁদতে দেখে আহফিন ড্রাইভার কে গাড়ি থামাতে বলল। তূবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল
“পাগলি আমার দেখো তো কেঁদে কি করেছো চাঁদ মুখের। একটু শান্ত হও আমার কথা শুনো।”

“….

“তূবা প্লিজ শান্ত হয়ে আমার কথাটা শুনো। তোমার কি মনে হয় তুমি আর আসতে পারবে না এখানে? আরে কতক্ষণ বা লাগে আসতে? চাইলে প্রতিদিন আসতে পারো। কিংবা মামনি আর তুসি কে আমাদের ওখানে নিয়ে এলাম। তুমিও ভালো থাকবে আর তুসিও শান্তি পাবে। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটা করো। কিন্তু প্লিজ এই কান্না টা থামাও এখন। আমার বউ কে বউ সাজে সুন্দর করে একটু দেখার সুযোগ করে দাও।”

ছবি তুলার পর্ব শেষ করে আহফিন তূবা কে ঘরে বসিয়ে নিচে চলে গেল। তূবা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব কিছু দেখছিল। ঘরটা ফুলে মৌ মৌ করছে। সুবাস উড়াচ্ছে চারদিকে। এত ফুলের ঘ্রাণেও তার খারাপ লাগছে না। দেখতে বেশ চমৎকার লাগছে ঘর টা।

আহফিন তূবা কে নিয়ে দুই রাকাত নামাজের জন্যে দাঁড়াল। নতুন জীবন টা যেন সুখের কাটে। আল্লাহর নামে এই পবিত্র সম্পর্ক টা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় আহফিন। ভুল মানুষের জীবনেই হয়। নামাজ শেষে মোনাজাতে আহফিন অনেকক্ষণ কাঁদল। তূবা কিছুই বুঝতে পারল না আহফিন কেন কাঁদছে। সে অপলক তাকিয়ে রইল। মোনাজাত শেষে সে তূবার দিকে তাকাল। তূবা জিজ্ঞেস করল।
“আপনি মোনাজাতে কাঁদলেন কেন?”

আহফিন কোনো জবাব না দিয়ে তূবার কপালে ঠোঁট স্পর্শ করল। তারপর বলল
“তুমি এখানে বসো আমি আসছি।”

আহফিন ফিরে এলো খাবার ট্রে নিয়ে। আসতে আসতে বলল “সব বউরা জামাইয়ের জন্যে দুধ নিয়ে আসে। কিন্তু আমাকে আমার বউয়ের জন্যে আনতে হচ্ছে।”
মুখ ভেংচি কেটে তূবা বলল “কে আনতে বলেছে আপনাকে?”

“আমার মন।”

ডিনার শেষ করে আহফিন তূবা কে একটু মিষ্টি খায়িয়ে দিল। তূবাও একটু খায়িয়ে দিয়েছে। তারপর দুজনই বিছানায় চুপচাপ বসে আছে।

“তূবা বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে ভিজবে?”

“এত রাতে?”

“হুম চলো।”

“কিন্তু আমার বৃষ্টির পানিতে যে এলার্জি আছে। হাতের তালা অনেকক্ষণ চুলকায় পরে আবার ঠিক হয়ে যায়।”

“ওকে ভিজতে হবে না। ব্যালকুনিতে তো যাওয়া যাবে?”

মুচকি হেসে তূবা বলল “চলুন।”
নামার সময় আহফিন বলল “আমার বেগম আপনার একটু যত্ন তো করতে দিবেন নিজের স্বামী কে নাকি?”
এই বলে আহফিন নিচে নেমে তূবা কে কোলে তুলে ব্যালকুনিতে নিয়ে গেল। তূবাকে পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বৃষ্টির হাল্কা ঝাপটা দুজনের শরীরে আসতেই অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভব করে তারা। কি প্রাপ্তি!

আহফিন মাথা থেকে তূবার ওড়না খুলে দিল আস্তে করে। তারপর ফুলের গোপা খুলে চুল গুলি কে ছেড়ে দিল। তূবা জানত আহফিন এটাই করবে। আহফিন তার চুলে মুখ গুঁজে দিয়ে পেটে স্লাইড করতে লাগল। তূবার ঘাড়ে ছোটছোট চুমুতে পূর্ন করে দিতে লাগল। আহফিনের ঘোরে তূবাও চলে যেতে লাগল। ভেতরে কতশত ঢেউ দুল খাচ্ছে। আহফিনের ছুঁয়াতে তূবার প্রতিটা লোমকূপ সজাগ হয়ে যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে উপলব্ধি করতে লাগল আহফিনের পরশ আবেশের স্পর্শগুলি। আহফিন তূবা তে উপনীত হয়ে গিয়েছে। তূবার শরীরের ঘ্রাণ বরাবরের মতো তাকে মাদক নেশায় মাতাল করে তুলছে। আহফিন একে একে তূবার গলার কানের হাতের গয়নাপত্র খুলতে লাগল। তূবার পেটে চাঁপ দিয়ে তাকে আরো নিজের কাছে নিয়ে এলো। চোখ বুজে মাতালের মতো ঘ্রাণ নিতে লাগল তূবার। ভিজে ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে উঠছে তূবা। নিশ্বাস ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে। আহফিন তূবা কে এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট বুলিয়ে দিল। অধৈর্য হয়ে তূবার ঠোঁট নিগড়ে নিতে চাইছে সে। আহফিনের ঠোঁটের খেলায় তাল মিলাচ্ছে তূবাও। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে। এক হাত তূবার গালে অন্যহাত দিয়ে তূবার নরম তুলতুলে পেটে আঙ্গুল ঘুরাচ্ছে। যা তাকে আরো অস্থির করে তুলছে। তূবা আহফিনের ভেতরে মিশে যেতে চাইছে। আহফিন তূবা কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় গেল। শাড়ীর আঁচল টা সরিয়ে নিয়ে কোমর থেকে শাড়ী টা খুলে নিল আহফিন। তূবার গলাতে নাক ডুবাতেই তূবা ছটফট করতে শুরু করেছে। আহফিন তূবা কে অস্থির করতে তার পেটে মৃদু চাঁপ দিচ্ছে। ভিজে ঠোঁটের স্পর্শ গলায় লাগতেই তূবা বিছানার চাদর খামছে ধরছে। আহফিনের পা তার পায়ের স্লাইড করে যাচ্ছে। পেটিকোট হাটুতে ঠাই নিয়েছে। পায়ের স্লাইড গুলি আহফিনের উন্মুক্ত পিটে খামছি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। নিজের ভিজে ঠোঁট তূবার কানের লতিতে তে লাগাতেই তূবা মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করতে লাগল। ঘনঘন নিশ্বাস নেওয়া দেখে আহফিন ভালোই বুঝতে পারল পরিস্থিতি। তূবাকে আরেকটু উস্কে দিতে কানের লতিতে আলতল চুমু দেওয়া শুরু করছে শব্দ করে। একে তো স্পর্শ তার উপর গরম নিশ্বাসের বারি কিছুই নিতে পারছিল না তূবা। চোখ খুলার শক্তিটুকুও যেন ভেতরে নেই। আহফিন কে যেন সে নতুন রূপে আবিষ্কার করছে। নতুন ভাবে। আহফিন এবার পুরোপুরিভাবে তূবা তে আসক্ত হয়ে গিয়েছে। সে এখন তূবা নামক মাদকে ডুবে যেতে যায়। তূবা কে সে আরো গভীর ভাবে কাছে চায়। আহফিন তাকে আরেক ধাপ কাছে টেনে নিয়ে এলো। যতটা কাছে গেলে দুইটা মানুষ দুজনের নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পারে গুনতে পারে ততটা। যতটা কাছে গেলে একটা মানুষ কে আরেকটা মানুষ সম্পূর্ণ নিজের সম্পদে দখল করে নিতে পারে ততটা। আহফিন যেন তূবা কে নতুন ভাবে জয় করে নিচ্ছে। নিজের সম্পদ কে নতুন ভাবে দখল করছে।

চলবে♥

#বর্ষার_এক_রাতে
#সাদিয়া

২১
প্রতিদিন তূবা ওবাড়ি যায়। সারাদিন থেকে আগের মতোই বিকালে চলে আসে। এখন প্রতিদিন তূবা কে আহফিন অফিস যাওয়ার সময় দিয়ে আসে আর ফিরার সময় বাসা থেকে গাড়ি যায় তূবা কে আনতে।

তুসি কে এখন আরো শুকনো লাগছে। শরীর শুকিয়ে কি অবস্থা! তূবা প্রতিটা মিনিট তুসি কে বুঝায় সাহস দেয় কিন্তু এসব তুসির মনে নেয় কিনা বুঝা যায় না। যতক্ষণ তূবা ওবাড়ি থাকে ততক্ষণ তুসি তাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।

আজ আসার সময় তূবা কে আহফিন বলে দিয়েছে “আমি আজ দুপুরে বাড়ি চলে আসব। তুসির সাথে অনেক দিন গল্প করা হয় না।” তূবা মুচকি হেসে বলেছে যেন তাড়াতাড়ি আসে।

—-
ডালিম আর আঙ্গুল নিতে তূবা বাজারে যাবে। তখন তুসিও বলল
“আপা আমাকেও একটু নিয়ে যাও না। সারাক্ষণ ঘরে থাকতে ভালো লাগে না।”

“আচ্ছা চল।”

ফল কিনে যখন বাড়ি ফিরবে তখন তুসি বলল “আপা আমার একটা আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছে।”

“আমিও খাবো চল তাহলে।”

“চলো” খুশি হয়ে বলল তুসি।

আইসক্রিম নিয়ে ফিরার সময় তুসি আবার তূবা কে ডাকল।
“আপা?”

“কি?”

“রনি।”

তূবা সামনে তাকিয়ে দেখে আসলেই রনি। মুখটা কেমন পাণ্ডুর হয়ে গিয়েছে। শরীর কি চিকন! রনি কে দেখে তূবা বুকটা বারি দিয়ে উঠল। মায়া নামক একটা পাখি উড়ে এসে বসল ডালে। তূবা কে দেখে রনির চোখে পানি চলে এসেছে।

“তূবা রে তোর দুইডা পায়ে পড়ি আমারে তোর হাতে রাইন্ধা একটু খাওয়াইবি? যদি মইরা যাই। এই ইচ্ছাডা একটু রাখ আমার। তোর পায়ে পড়ি।”

বলতে বলতে রনি সত্যিই তূবার পায়ের উপর পড়ে গেল। তূবা কি করবে জানে না। একটা মানুষ কতটা ইচ্ছা থাকলে এভাবে চাইতে পারে তা তূবার জানা নেই। রনি কে উঠতে বলে বলল সে খাওয়াবে। এখন যেন রনি চলে যায় এখান থেকে। রনি চোখের পানি মুছে তূবার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর চলে গেল। তূবার সাথে এবার তুসিরও খারাপ লাগল। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের জন্যে এতটা পাগল কি করে হতে পারে? তুসি জানে না এর উত্তর।

আড়াল থেকে আহফিন ঠিকি দেখল ঘটনা। গাড়ি খারাপ হওয়াতে গেরেজে দিয়ে হেটেই এসেছে সে। তখনি তূবার পায়ে রনি কে পড়তে দেখা গেল। যেতে চেয়েও কি মনে করে আহফিন তখন যায় নি।

গম্ভীর মুখ করে আহফিন বাসায় ঢুকল। তূবা এগিয়ে গেল তার দিকে।
“বাব্বাহ সত্যি সত্যিই ব্যস্ততার মহারাজ তাড়াতাড়ি চলে এসেছে।”

“বাজারে কেন গিয়ে ছিলে?”

তূবা আহফিনের বলার ধরণ দেখে ভয় পেয়ে যায়। তাহলে নিশ্চয় রনির সাথে দেখা হয়েছে এটাও দেখেছে তাই জিজ্ঞেস করল এটা। তূবা আমতাআমতা করে বলল
“আ আসলে রনি..”

আহফিন হাত ইশারা করে তূবা কে থামিয়ে দিল। তারপর বলল “আমি ওসব শুনতে চাই নি তোমার কাছে। বেশ গরম আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।” এটা বলে আহফিন চলে গেল। তূবা ভয়ে গুটিশুটি করে দাঁড়িয়ে রইল। আহফিন কি আবার তাকে সন্দেহ করছে?

তূবা ফ্রিজের পানি দিয়ে আহফিনের পছন্দের লেবুর শরবত বানিয়েছে। তার স্পেশাল শরবত আহফিনের ভীষণ পছন্দের। শরবত নিয়ে সে নিজের রুমে গিয়ে দেখে আহফিন ফোন টিপছে।
“আপনার জন্যে শরবত এনেছি।”

“ইচ্ছা হচ্ছে না রেখে দাও।”

“…..

“কিছু বলবে দাঁড়িয়ে আছো যে?”

তূবা শরবত রেখে জিজ্ঞেস করল
“কি হয়েছে আপনার?”

“নাথিং।”

“আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?”

“সন্দেহের মতো তুমি কিছু করেছো নাকি যে এটা মনে হচ্ছে আমি তোমায় সন্দেহ করছি?”

“দেখুন রনি আমাকে..”

“রনি কে নিয়ে আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি এখন আসতে পারো।”

তূবা এতক্ষণ মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেও এখন আর পারছে না। রেগে গিয়ে সে বলল।
“দেখুন আপনি কিন্তু শুধুশুধু এমন করছেন। আমি রনির সাথে তেমন কোনো কথা বলি নি। লোকটা আমার পায়ে পড়ে অনুরোধ করছিল শুধু। তখন কি করে আমি চলে আসতাম ওখান থেকে? আপনি কি আমাকে বিশ্বাস করেন না? যদি করতেন তাহলে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এমন করতেন না। আর মোট কথা আপনি রনি কে পছন্দই করেন না।”

আহফিন দাঁত কিড়িমিড়ি করে তূবার বাহু ধরে বলল
“তুমি করো? তুমি রনি কে পছন্দ করো?”

“ছিঃ আপনি কি সব বলছেন?”

“তাহলে ওর সাথে কথা কেন বলেছিলে? আমি না করেছিলাম তূবা ওর সাথে কথা বলতে। আমাকে কথা দিয়েও কিভাবে ভাঙ্গতে পারলে? তারপরেও বলছো আমি তোমায় ভুল বুঝছি? কি করে?”

“আস্তে কথা বলুন প্লিজ।”

“….
রাগে আহফিন লম্বা লম্বা নিশ্বাস ফেলছে।

“আচ্ছা ভুল হয়ে গিয়েছে সরি। এবার শরবত টা খেয়ে নিন।”

আহফিন বিছানা থেকে কোট টা নিয়ে হনহন করে চলে গেল তূবার সামনে দিয়ে। তার মনে হচ্ছে আহফিন এখন বেশি করছে। মনবতা বলতেও একটা জিনিস আছে যা আহফিন বুঝতেই চাইছে না। তূবা আহফিনের উপর রেগে গিয়েছে। যাই হয়ে যাক সে রনির এই শেষ ইচ্ছাটা রাখবে তারপর নিজেই আর রনির সাথে দেখা বা কথা বলবে না। রনি যেন আর তার সামনে না আসে তা বলে দিবে সে। আহফিন কে জানালে যেহেতু রাগ করবে ঝামেলা হবে তাই না জানিয়েই করবে এটা।

একটু পরই তূবার ফোনের ম্যাসেজ টোন টা বেজে উঠল। ম্যাসেজ ওপেন করে দেখতে পেল “সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে।”
তূবাও রিপ্লে করল।
“দুই দিন পর তুসির অপারেশন আমি এখন কি করে বাড়ি ফিরব? আপনি চলে গেছেন কেন?”

“যা বলেছি তাই যেন হয়। আমাকে কঠিন হতে বাধ্য করো না।”

“আপনি এখন একটু বেশিই করছেন না? একেতো নিজে রাগ দেখিয়ে না খেয়ে চলে গেছেন তার উপর রাগ দেখিয়ে আমাকে চলে যেতে বলছেন। আমি আজ বাড়ি ফিরতে পারব না। যদি মনে হয় এখানে চলে আসতে চলে আসবেন।”

“তুমি আমার বিয়ে করা বউ। ওখনো ও বাড়ির মেয়ে নও। আমার সংসার রেখে ওবাড়িতে থাকতে পারো না। যদি আজ না ফিরো তবে আর কখনো ও বাড়িতে যেতেও পারবে না। চিন্তা করে দেখো কি করবে। যদি আমার এসে তোমাকে নিয়ে যেতে হয় তবে সেটা খুব ভালো হবে না তূবা।”

রাগে তূবা ফোন টা ছুড়ে ফেলল। আহফিনের ব্যবহার গুলি তার রাগকে রাগিয়ে দিচ্ছে। বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে এমন কাটা দেওয়া কথাতে।

শিরিণ বেগম এসে তূবা কে জিজ্ঞেস করল “কিরে জামাই কই?”

“ওর কাজ আছে তাই চলে গেছে।”

“না খেয়েই চলে গেল?”

“বাদ দাও। তুমি ভাত আনো তুসি কে খায়িয়ে দিয়ে আমিও খেয়ে নিব। আমাকে আবার বিকেলে বাসায় যেতে হবে।”

“তুই না বললি দুই দিন থাকবি।”

“কাল এসে থাকব।”

—-
সারাটা রাস্তা রাগে ফুঁসেছে তূবা। আহফিনের এসব আর নেওয়া যাচ্ছে না। এভাবে তো আর চলা যায় না। বিহিত তো কিছু একটা করতে হবে। আহফিনের সাথে সরাসরি এই বিষয় নিয়ে কতা বলা দরকার।
তূবা গাড়ি থেকে নেমে হনহন করে ভেতরে ঢুকল। গিয়ে যা দেখল তা নিজের চোখ কে যেন বিশ্বাস করাতে পারছিল না। তূবার চোখের পাতা নড়ছে না। পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। হাত থেকে ব্যাগটাও দুপ করে নিচে পড়ে গেল..

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here