ফ্রেম বন্দী ভালোবাসা,ট্রেলার_পর্ব
সুরাইয়া আয়াত
‘ঝুমকো টা একটু দেখাবেন মামা! ওই যে ডানদিকেরটা।’
মিষ্টি সুরের কাতোর উক্তিটা করে উঠলো একটা অল্পবয়সী আর একটু খাটো গোলগাল মেয়েটা। কন্ঠস্বর টা পৌছালো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কানে, আকৃষ্ট হওয়া যে বাধ্যতামূলক। কন্ঠটার মায়ায় পড়ে গেল অতঃপর নির্ভয়ে মেয়েটির পাশে দাঁড়ালো আর কাব্যিক ভাষায় বলে উঠলো
‘রন্ধ্রে রন্ধ্রে এ তোমার মায়ায় আটকা পড়েছি তখন তার আঘাত হীন মুক্তি অসম্ভব। ”
কথাটা বলা মাত্রই মেয়েটা হতম্ভব হয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো হয়তো বিষয়টাকে বুঝে নিতে কিছুটা হলেও সময় লাগছে। কতোটা কি বুঝলো তা আর বোঝার সময় হলো না, ঝুমকো মামা তার দৃঢ় পুরুষালী কন্ঠে বলে উঠলেন
“এই লন আপা। ”
অতঃপর মেয়েটা কিঞ্চিৎ ভঙ্গিতে কেঁপে উঠতেই ঝুমকো মামার কথা উপেক্ষা করে বেশ আড়ষ্টতা সাথে বলতে শুরু করলো
“রাস্তায় অচেনা একটা মেয়ের হাত ধরে দুই লাইন ছন্দ বলা এটা কোন ধরনের অসভ্যতা। ”
মেয়েটার নাম স্নিগ্ধতা অনেকেই ভালোবেসে ডাকে স্নিগ্ধ, স্নিগ্ধা আরও বেশ কয়েক রকম নাম। স্নিগ্ধতার কথায় ছেলেটা মুচকি হাসলো, বৃথা বাক্য ব্যায় না করে বেশ নির্বাক হয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল একটা ফুল বিক্রির টং এ এবং বেশ নির্বিকার কন্ঠে বলল
” মামা কাঠগোলাপ আছে নাকি থাকলে দিন তো কাঠগোলাপের সৌরভে কাওকে মাতোয়ারা করবো। ”
দোকানদার স্নিগ্ধতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন
” হ বুঝছি বুঝছি কি বোঝাতে চাইতাছেন। ”
ছেলেটা মুচকি হেসে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখতেই মেয়েটাকে বেশ প্রচেষ্টা চালাতে দেখলো হাতটা ছাড়ানোর, চাইলেই চিৎকার করতে পারে আজকাল কার মেয়েরা পথে ঘাটে হ্যারাস হলে যেমনটা করে কিন্তু স্নিগ্ধতার এমন মৌন নিরবতায় তীব্র প্রচেষ্টার কারন ছেলেটা বুঝেও বুঝলো না কারন হয়তো সে তার নিজের এবং ছেলেটার উভয়ের মান সম্মানের খাতিরেই এমনটা করছে আর মনে মনে হয়তো দৃঢ় পরিকল্পনা আটছে নিমেষে কোনরকমে হাফ ছেড়ে প্রানপনে ছুটে পালানোর। বিষয়টা ভেবেই যেন ছেলেটা বিরক্ত হলো আর ধমকের সুরে বলল
” এই মেয়ে এতো ডানাঝাপটা কিসের তোমার? কাঠগোলাপ ই তো অন্য কিছু তো না, চুপচাপ দাঁড়াও। ”
কিছুখনের জন্য স্নিগ্ধতা থ হয়ে রইলো, এমন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষটা আসলে কে তা বোঝার চেষ্টা করছে আপাতত। এলোমেলো কল্পনা গুলোও প্রাধান্য পেলো না তাই কল্পনার রেশ কাটিয়ে নাকে কাঠগোলাপের সুগন্ধ আসতেই অবাক হলো, হ্যাঁ ছেলেটা মাথায় একটা কাঠগোলাপের মালা পরিয়েছে, কাঠ গোলাপের মালা আদতেও হয় কি ? হলেও স্নিগ্ধতার জানা ছিলো না জানলে হয়তো এতোটা অবাক হতো না, তবে তার থেকেও বেশি অবাক হলো যখন ছেলেটা বলো উঠলো
“মামা টাকা টা ওনার থেকে নিয়ে নিয়েন। ”
কথাটা বলে অদ্ভুত চাহনি দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে হাটা দিলো হিমুর মতো, হিমুর পাঞ্জাবী তে পকেট থাকলেও বুঝি এভাবে হাটতো?
স্নিগ্ধতা অবাক হলো ছেলেটার এমন কাজে, কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ থেকে টাকা বার করে বলল
“মামা কত? ”
“120 টাকা আফামনি। ”
মেয়েটা পকেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো 130 টাকা আছে আর বাসায় ফিরতে লাগবে 20টাকা তাহলে মালাটা কি রেখে দিবে? নিগ্ধতার এমন ভাবনা বেশি গুরুত্ব পেলো না, কিছু একটা ভেবে কিনে নিলো। আগে কাঠগোলাপের মালা দেখেনি কখনো তাই আজ এটা নিয়ে একটা ভাবনা চিন্তার এক্সপেরিমেন্ট করবে ও। টাকাটা মিটিয়ে ফুটপাতে আসতেই কিছু একটা ভেবে আবার দোকানে গিয়ে বলল
” মামা ওনার নামটা জানেন? ওই যে লোকটা আমাকে এখানে আনলো। ”
উনি ওনার ফকলা দাঁতের একটা হাসি হেসে বললেন
“হেতির নাম তো সৌরভ। ”
স্নিগ্ধতা প্রশ্ন করে উঠলো
“ওনার নাম সৌরভ? ”
“জ্বি আপা। ”
স্নিগ্ধতা চম্পট হাটা দিলো, অচেনা মানুষের প্রতি কৌতুহল দেখানোটা খুব খারাপ এক রোগ যা মাঝে মাঝেই স্নিগ্ধতার মাঝে উদয় হয় তবে আজ অনুভুতিটা অন্য তাই বিষয়টাকে এখানেই সমাপ্ত করলেই ভালো, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৌতূহল ভালো নয় তবে এই বিষয়টা? আজকে বোধহয় সেটাই ফিরতে হবে তাই দ্রুত পা চালালো।
রাস্তার ছোট ছোট নুড়ি গুলো নিয়ে কিক করছে আর পকেট হাত রেখে গাইছে সৌরভ
“ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
আমার মনের ঘরে চান্দের আলো চুঁইয়া চুঁইয়া পড়ে
পুষে রাখবো রাখবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
ভালো বাসবো বাসবো বন্ধু তোমায় যতনে। ”
??????
কেমন লাগলো?