#প্রেমের_উড়ান #পর্বঃ৭ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধ্রুবর সাথে ডেটে এসেছে সুহানি। যদিও তার আসার বিন্দুমাত্র আশা ছিল না কিন্তু নিজের দেয়া কথা রাখতে তাকে আসতে হলো।

সুহানি যতোটা বিরক্ত তার থেকে হাজারগুণ বেশি খুশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ধ্রুবর চেহারায়। ধ্রুব আজ এতগুলো দিন বাদে সুহানির সাথে আলাদাভাবে সময় কা’টানোর সুযোগ পেয়ে অনেক খুশি হলো।

ধ্রুব সুহানিকে নিয়ে একটি কফিশপে প্রবেশ করল। সেখানে দুইজন বসল। ধ্রুব কফি অর্ডার করে সুহানির উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘আমি কি তোমার হাত ধরতে পারি?’

ধ্রুবর এহেন প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল সুহানি। তৎক্ষণাৎ নিজের অভিমত ব্যক্ত করে জানাল,
‘একেবারেই না। আমি শুধু এখানে নিজের কথা রাখার জন্য এসেছি। প্লিজ কোন এডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না আদারওয়াইজ আমি এখান থেকে উঠে চলে যাবো।’

ধ্রুব আর কথা বাড়ালো না। কিন্তু মুখে লেগে থাকা হাসি বিলীন হয়ে গেল৷ সুহানি বুঝতে পারল ধ্রুবর মনের অবস্থা। অতঃপর মনে মনে বলল,
‘আমি জানি ধ্রুব তুমি আমার ব্যবহারে অনেক কষ্ট পাচ্ছ, কিন্তু আমার মনে হয় এটাই ভালো যে এসব কষ্টকে মনে ধারণ করে তুমি আমার থেকে দূরে সরে যাও। সেটাই আমাদের দুজনের জন্য ভালো হবে।’

কিছুক্ষণের মধ্যে কফিশপের একজন ওয়েটার কফি এনে রাখল তাদের টেবিলে। মাত্র এক কাপ কফি দেখে সুহানি ওয়েটারকে শুধালো,
‘আমরা তো দুজন তাহলে এক কাপ কফি কেন দিয়েছেন?’

‘এটা আমাদের কফিশপের স্পেশাল কফি ম্যাডাম। যা মেইনলি কাপলদের জন্য স্পেশালভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই কফি তো কাপলরা শেয়ার করে খায়।’

সুহানি ধ্রুবর দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,
‘আমরা কাপল নই। আপনি কাইন্ডলি আরেক কাপ কফি আনুন।’

‘কিন্তু স্যার যে….’

ওয়েটারের সম্পূর্ণ কথা উচ্চারণের আগেই ধ্রুব বলে উঠল,
‘উনি যা বলছেন তাই করুন।’

ওয়েটার আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেল। সে যাওয়ার পর সুহানি ধ্রুবর দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘আপনি এই কফি অর্ডার করেছিলেন তাই না? আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না, আমাদের মধ্যে কিচ্ছু ঠিক হবার নয়। আমি আমার লাইফে মুভ অন করে নিয়েছি, তাই বেটার হবে যদি আপনিও মুভ অন করে নিন, আমার কথা ভাবা বাদ দিন।’

ধ্রুব অসহায় কন্ঠে বলল,
‘কি করবো বলো? আমি যে হাজার চেষ্টা করেও তোমাকে ভুলতে পারি নি৷ জানো এই ৬ টা বছর আমার কাছে কতোটা কঠিন ছিল। প্রত্যেকটা মুহুর্ত আমি শুধু তোমার কথা ভেবে গেছি। তুমি যেদিন আমার সাথে ব্রেকআপ করে দূরে চলে গেলে সেদিন থেকে আমি অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ভোলার কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। এসবের মাধ্যমে আমি এটা খুব ভালো করেই বুঝে গিয়েছিলাম তোমাকে ভোলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আর ভোলার চেষ্টাও করিনি। তোমাদের বাসায় গিয়ে খোঁজও নিয়েছিলাম কিন্তু তখন জেনেছি তোমরা ঢাকা ছেড়ে চলে গেছ, কোথায় গেছ তারও কোন খোঁজ কেউ দিতে পারেনি। তখন আমি তোমাকে আরেকবার দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ি। তোমাকে দেখার ক্ষীণ আশা নিয়ে দেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে ঘুরে বেড়াই কিন্তু কোন লাভ হয়না। এরপর আমি জীবনের সবথেকে বড় ডিশিসন নেই, নিজের ছোটবেলা থেকে দেখে আসা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করি। পাইলটের জবে আসি শুধুমাত্র আবার তোমাকে দেখতে পাব এই আশায় কারণ তুমি এয়ার হোস্টেজ হতে চাইতে। আমি এতকিছু শুধু তোমার জন্যই করেছি। প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত শুধু তোমার অপেক্ষার প্রহর গুনেছি। অবশেষে আমার সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। আমি দ্বিতীয় বার তোমার দেখা পেলাম। আর তোমাকে হারাতে চাইনা। প্লিজ আরেকবার আমার জীবনে ফিরে এসো। আই ব্যাডলি নিড ইউ।’

ধ্রুবর কথাগুলো শুনে সুহানি ভীষণভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে ভেতর থেকে। ধ্রুবর ভালোবাসার গভীরতা সে আন্দাজ করতে পারছে। কিন্তু নিজেকে ভীষণ শক্ত রূপে প্রতিস্থাপন করে সে ধ্রুবর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমার জন্য দীর্ঘ ৬ বছর অপেক্ষা করে আপনি নিজের জীবনের সবথেকে বড় ভুল করেছেন। কারণ আমার মনে আপনার জন্য বিন্দুমাত্র অনুভূতি আর বেঁচে নেই। সকল অনুভূতিকে আমি ৬ বছর আগেই দাফন করে দিয়েছি।’

কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়ায় সুহানি। অতঃপর একটু থেমে আবার বলে,
‘আমি চাই আপনিও মুভ অন করুন। আমাদের মধ্যে সত্যি আর কিছু হবার নেই। তাই আমি আশা করব এরপর আর কখনো আপনি আমার সাথে এই ব্যাপারে কোন কথা বলবেন না।’

ধ্রুবর সব আশা যেন এক মুহুর্তেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায়। দীর্ঘ ৬ টি বৎসর যেই মরিচীকার পিছনে ছুটছিল তা যেন আজ সত্যিকার অর্থেই তাকে তলিয়ে নিলো। ধ্রুব এবার একটু দম নিয়ে বলল,
‘ঠিক আছে তুমি যা চাও তাই হবে। আমি মুভ অন করে নেবো। তোমাকে আর কখনো ডিস্টার্ব করব না। চেষ্টা করব তোমাকে ভুলে যাওয়ার।’

‘এটাই আপনার জন্য ভালো হবে।’

কথাটা বলে আর এক মুহুর্ত ন*ষ্ট না করে কফিশপ থেকে বেরিয়ে আসে সুহানি। বাইরে এসে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। আজ ধ্রুবকে অনেক শক্ত কথা বলে ফেলেছে সে। কিন্তু তার যে আর কিছুই করার ছিল না৷ পরিস্থিতি তাকে এই যায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। সুহানি স্বগতোক্তি করল,
‘না আমি এত সহজে ভেঙে পড়ব না। আই হ্যাভ টু বি স্ট্রং। ধ্রুব আর আমার পথ অনেক আগেই আলাদা হয়ে গেছে।’

★★★
সুহানি রাতে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরে বিছানায় শুয়ে ছিল। নিজের কষ্টগুলো ভুলতে সে সাথী বানিয়েছে হার্ড ড্রিংকস কে। এই হার্ড ড্রিংকস খেয়েই সে নিজেকে যথাসাধ্য সামলানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল।

ইশা রাতে বাড়িতে ফিরে সুহানিকে এসব খেতে দেখে বলে,
‘হোয়াট দা হেল সুহানি? এসব কেন খাচ্ছিস তুই?’

‘ব্যাথা ভোলার জন্য।’

‘তুই নিজেকে সামলা সুহানি। এভাবে তুই নিজের ক্ষতি ছাড়া লাভ করতে পারবি না।’

‘আমার জীবনে লাভ নেই শুধু হেট আছে।’

‘প্লিজ মাতলামি করা বন্ধ কর সুহানি। আর গ্লাসটা আমাকে দে।’

‘না আমি আরো খাবো, আজ নিজের সব দুঃখকে এভাবেই ভুলব আমি। জানিস আজ ধ্রুবর সাথে চিরতরভাবে বিচ্ছেদের রেখা টেনে দিয়েছি।’

ইশা অবাক হয়ে শুধালো,
‘তুই এটা করতে পারলি?’

‘হ্যাঁ, পারলাম। এখন আমি স্বাধীন সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

বলে অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগল সুহানি।

★★★
ধ্রুব রাতে বাসায় ফিরতেই লক্ষ্য করল তার মা অহনা খন্দকার মন খারাপ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে।

ধ্রুবকে দেখেই তিনি বললেন,
‘তুমি ফিরেছ বেটা? আমি তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।’

‘কিছু বলবে আম্মু?’

‘আমার শরীরটা আজকাল ভালো যাচ্ছে না। একা বিজনেসের এত টেনশন আমি আর নিতে পারছি না।’

‘তুমি কি চাও আম্মু?’

‘তোমাকে তো আগেও বলেছি তোমার বিয়ে দিতে চাই।’

ধ্রুব দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে বলল,
‘ঠিক আছে, তুমি মেয়ে দেখা শুরু করো। আমি বিয়ে করতে প্রস্তুত।’

ধ্রুব কথাটা বলতেই খুশির ঝিলিক ফুটের ওঠে অহনা খন্দকারের চেহারায়।

হঠাৎ করে কোন কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে সামনের দিকে তাকায় ধ্রুব। ধীরাজ পানি খেতে এসেছিল। ধ্রুবর কথা শুনে তার হাত থেকে জগ পড়ে যায়। ধীরাজ এটা মানতেই পারছে না যে তার ভাইয়া সুহানিকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে এভাবে রাজি হয়ে গেল। তার চোখেমুখে ফুটে উঠল বিস্ময়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here