#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ৯
#বর্ষা
ওয়াজিহা হাতে মোবাইল পেতেই পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোন খুলে নেয়।সে তার ফোনে এরকম সিস্টেম আপগ্রেড করেছে যে যদি কেউ ওর ফোন পাসওয়ার্ড ছাড়া খোলার চেষ্টা করে তবে মোবাইলের ভেতরের সব হাইড হয়ে যাবে ঘন্টা কয়েকের জন্য। ওয়াজিহা পাসওয়ার্ড টাইপ করে বুঝে ফেলে কেউ ওর মোবাইল আনলক করেছিলো পাসওয়ার্ড বিহীন।মুচকি হাসে সে তবে তা সামনের মানুষগুলোর অগোচরে।
ইউশা মোবাইল দিয়েই চলে গেছে কেননা খান বাড়ির মানুষেরা ওয়াজিহাকে দেখতে এসেছে।কোনো একভাবে তাদের নিকট ওয়াজিহার হসপিটালে থাকার খবর পৌঁছে গেছে।রাকেশ খান ওয়াজিহার বেডের পাশে চেয়ারে বসেছেন।
”কেমন লাগছে এখন ওয়াজিহা?আর কে বা কারাই তোমার সাথে এমন করেছে তুমি কি জানো?”
রাকেশ খানের প্রশ্নে ওয়াজিহা তাকিয়ে থাকে বেশ কিছুক্ষণ।তারপর বলে,
”আলহামদুল্লিলাহ।আমি জানি না!”
রাকেশ খান যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।তায়েফের মাথা বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছিলো ফ্যানের ঠান্ডা বাতাসের মাঝেও। শীতকাল হলেও হসপিটালে শীত অনুভূত হয়নি।তবে এতো মানুষের উপস্থিতিতে রুমের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরম লাগছিলো ওয়াজিহার।তাই ফ্যান ছাড়তে হয়েছে।
মোহনা জুবায়ের এক অভাবনীয় কাজ করে বসলেন। ওয়াজিহার কাছে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। ওয়াজিহা চরম পর্যায়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে।”ডাল মে কুছ কালা হে,ইয়া ফের পুরা ডালই কালা হে!”ওয়াজিহার মন এটাই বলছে ওয়াজিহাকে।যে ব্যক্তি ওকে সহ্য করতে পারে না সে নাকি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ভাবা যায়!
রুকন খান ওয়াজিহাকে আরো আশ্চর্য করে দেয় তার কথায়।তিনি বলেন,
”আরে মোহনা তুমি ওঠো।আমি আমার মেয়েটাকে একটু আদর করে দেই।একটু পাশে বসি।”
ওয়াজিহার যেন নিজেকে এখন পাগল পাগল লাগছে। একসপ্তাহ যাবৎ সে বাড়ির বাইরে।অথচ এনারা কোনো খোঁজ রাখেনি ওর।আর আজ এসে এমন ভাব করছে যেন বাড়ির মেয়েকে বাড়ির রাজকন্যার মতো ভালোবাসে। ওয়াজিহা বুঝে গেছে পরিবারের কেউই কোনো না কোনো গোলমাল করেছে এবং সেই গোলমাল কারীকে বাঁচাতেই এই অভিনব অভিনয়!
”আপনাদের শরীর ঠিক আছে তো?নাকি ডক্টর ডাকবো আমি?”
ওয়াজিহা ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে।রুকন খান মুখ শক্ত করেন।কিঞ্চিত বাদেই আবারো হেসে দেন।বলেন,
”আমরা সবাই সুস্থ আছি মামনি!”
‘মামনি’ শব্দটা যেন বারি খায় ওয়াজিহার কানে।যে ব্যক্তি ওকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ছাড়া কথাই বলেনি কখনো সে নাকি আজ ওকে মামনি ডাকছে অতি অদ্ভুত।আজ ওয়াজিহার স্থানে অন্য কেউ থাকলে হয়তো আবেগে আপ্লুত হয়ে এদের আচরণের হঠাৎ পরিবর্তন নিয়ে এতো ভাবতো না। কিন্তু কিছু যে করার নেই এই মেয়ে যে ওয়াজিহা।সে তো ভাববেই।
ওয়াজিহার ফোনে কল আসায় সে কল রিসিভ করে সবার দিকে একবার চোখে বুলিয়ে।তারাও আগ্রহ ভরা দৃষ্টিতে ওয়াজিহার দিকে তাকিয়ে।
”হ্যালো ওয়াজিহা তুই কোথায়?কতদিন ধরে তোর কোনো খোঁজখবর কিছুই নাই। কোথায় আছিস আজকাল!”
একদমে তানিশা কথাগুলো শেষ করে। ওয়াজিহা কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার। ওয়াজিহা ভাবতে লাগে তানিশা কেন অন্য নাম্বার থেকে কল দিচ্ছে৳ এবং ওর নাম্বারে কি হয়েছে!
”তোর নাম্বারে কি হয়েছে যে আননোন নাম্বার দিয়ে কল দিচ্ছিস?”
”তুই তো ব্লক করে রেখেছিস!তাইতো এতোদিন কল দিতে পারিনি।শুধু আমাকে না সিহাব আর রাব্বিকেও তো ব্লক করেছিস।আজ হঠাৎ অর্নবের ফোন থেকে কল দিতেই বাজতে লাগলো!”
”কিহ!আমি তো তোদের ব্লক কখন করলাম।কল রাখ আমি দেখছি!”
ওয়াজিহা তানিশাকে কল রাখতে বললেও নিজেই কল কেটে দেয়। ফোন চেক করে দেখে সত্যিই ওদের ব্লক করে রাখা।সে তো করেনি তবে কে করলো!উত্তর অজানা।তবে কে করতে পারে তা সম্পর্কে একটু হলেও জ্ঞাত ওয়াজিহা কেননা এই কয়দিন যাবৎ পিছু করায় একটু একটু তথ্য তার ব্যাপারে সে পেয়েছে। ওয়াজিহা ওদের সবাইকে আনব্লক করে সোস্যাল মিডিয়া থেকে।ছোট করে একটা ম্যাসেজ দেয় তানিশাকে।
”ব্লক কে করেছে জানি না,তবে আনব্লক আমি করলাম!”
★
ইউশা ঢাকা মেডিকেলে এসেছে।মুখে মাস্ক।ব্রাউন কালার হুডিতে নিজেকে আড়াল করেছে।চোখে কালো রোদচশমা অর্থাৎ সানগ্লাস।এটা অবশ্য তাকে অন্যদের নজরে ফেলছে। কেননা একেতো বিকেল।তার ওপর হসপিটালের ভেতরে সানগ্লাস পড়ায় সবাই আকৃষ্ট হচ্ছে তার দিকে।ইউশা নিজের মুখ লুকাতে ব্যস্ত থাকায় ভুলে বসেছে যে তার অদ্ভুত গেটআপ মানুষদের আকৃষ্ট করবে।
কেসিয়ার থেকে কেবিন নাম্বার জেনে ইউশা উক্ত তলার একদম কার্ণিশ ঘেঁষা রুমে প্রবেশ করে।বাইরে ওসমান মালেক দাঁড়িয়ে ছিলো।সালাম দেয় ইউশাকে।ইউশা জবাব নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।বিছানা শোয়ন অবস্থায় পড়ে আছে প্রিতম ওয়াহেদ।হাতে ক্যানোলা লাগানো।ইউশার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।ওনার কাছে গিয়ে একহাত আঁকড়ে ইউশা বলে ওঠে,
”বাবাই,তোমার কথা রাখতে গিয়ে তোমাকেই জানাইনি। কিন্তু এই না জানানোর ফলে যে এমন কিছু ঘটবে আমি তা ভাবতে পারিনি।আমাকে ক্ষমা করে দেও বাবাই!”
ওসমান মালেক বাইরে থেকে একবার ভেতরে উঁকি দেয়।নিজ চিত্তেই ভাবে তার স্যারের উত্তরাধিকার কি এই ছেলেটাই নাকি অন্য কেউ!ওসমান মালেক উত্তর না খুঁজে চারপাশে চোখ বুলান। একজনের ওপর চোখ আঁটকে যায় তার।লোকটা বেশ অদ্ভুত।পেছন দিকে কিছু একটা আছে।একটু ভাবতেই ওসমান মালেক বুঝে ফেলেন ওইটা গান।তাইতো হকি-টকির ব্যবহারে সঙ্গীদের কথাটা জানিয়ে দিলেন।
ওসমান মালেকের সংবাদ প্রেরণের কয়েক মুহূর্ত না যেতেই সকলের আড়ালে ওই লোকটা আড়াল করে নিলো প্রিতম ওয়াহেদের বডিগার্ডেরা।ওসমান মালেক আবারো চারপাশে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।ইউশা কিছুক্ষণ মাঝেই বেরিয়ে আছে এবং অদ্ভুত ভাবে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় ওসমান মালেকের দিকে।কিছু না বলেই চলে যায়।
ওসমান মালেক মুচকি হাসেন। তাদের পেশায় সন্দেহ থাকবেই তা স্বাভাবিক। তবে তাদের পেশায় কেউ পেছন থেকে আঘাত করে না। মুখোমুখি লড়াই করে। এটাই যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের নিয়ম!হুম,আন্ডারওয়ার্ল্ডের সদস্য প্রিতম ওয়াহেদ।হয়তো বড় কোনো সদস্য!
★
জঙ্গলের পাশে নির্জন এক স্থানে দাঁড়িয়ে আছে ওসমান মালেক এবং কয়েকজন।সামনেই হসপিটালের সেই লোকটিকে বেঁধে রাখা হয়েছে।পাশে রয়েছে বহু মৃত্যু প্রদানকারী অস্ত্র।লোকটার জ্ঞান ফেরাতে পানি ঢেলে দেওয়া হয় লোকটার ওপর।মারের প্রভাবে জ্ঞান হারিয়েছে সে। কেননা মুখ না খোলা অব্দি তাকে মারতেই থাকবে এরা তাই আবারো জ্ঞান ফেরানো।
”সত্যি করে বল কার হয়ে কাজ করছিস তুই!নয়তো টর্চার করতে করতেই তোর অবস্থা খারাপ করে ফেলবো।বাসায় তো তোর যুবতী মেয়েও আছে শুনলাম! আমাদের দায়িত্ব রেখে যাবি নাকি?”
ওসমানের ভয়ানক কথায় লোকটা হাতজোড় করে বলে,
”আমার মেয়ের দিকে প্লিজ তোমরা নজর দিও না। আমাকে মেরে ফেলো তবুও আমি তোমাদের কিছু বলতে পারবো না!”
”ওই এর মেয়েকে তুলে আনতো।এর সামনেই এর মেয়ে…”
”আমি বলছি…আমি বলছি।আমি ওনাকে চিনি না।উনি আমাকে চিঠি আর টাকা দিয়েছিলেন এক্সিডেন্টে আহত হওয়া লোকটিকে মারতে।”
ওসমান মালেক মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। অবশ্য তিনি ওই লোকটার মেয়ে সম্পর্কে খারাপ কিছু উচ্চারণও করতেন না কেননা তিনি জানতেন একজন পিতার কাছে টাকার চেয়েও সন্তানের মূল্য অনেক বেশি।টাকা দিয়ে একজন সুস্থ পিতার থেকে তার সন্তানকে ক্রয় করা আদৌ সম্ভব নয়।
”কোথায় পেয়েছিলে তুমি সেই চিঠি এবং টাকা? আমাদের দেখাতে পারবে ওই চিঠি?”
”অফিসে ডেস্কের নিচে।এখনো হয়তো ওখানেই আড়ালে কোথাও আছে।আমি দেখাতে পারবো!”
চলবে?
পূর্ববর্তী পর্ব
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/931421335246306/?mibextid=2JQ9oc