#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ৫
#বর্ষা
ভার্সিটিতে আরেক ক্যাচালের সৃষ্টি।এই ক্যাচাল যেন থামতেই চায় না। জুনায়েদ স্যারকে বের করে দেওয়া হয়েছে ভার্সিটি থেকে কেননা সারা ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়ে গেছে যে জুনায়েদ স্যার কিশোরী মেয়ে তথা হাঁটুর বয়সী মেয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের নিকট সংবাদ পৌঁছাতেই তারা স্যারকে দুইটা অপশন দেন।এক.চাকরি নয়তো ওই কিশোরীর সাথে বিবাহ।স্যার দ্বিতীয় অপশনটা বেছে নিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,
”যেই দেশে বাচ্চা কালে অবৈধ প্রেম করা অপরাধ বলে গণ্য নয়,সে দেশে বিয়ে করাটা বেশ বড়ই অপরাধ!”
ওয়াজিহা ভার্সিটিতে প্রবেশের বিশাল বটগাছটার নিচে বসে আছে।তার ওপর কোনো প্রভাবই ফেলছে না জুনায়েদের চলে যাওয়ায়। অনেক মেয়ে স্যারের আগে পিছে ঘুরে এখন কান্নাকাটি করে প্রেম দিচ্ছে।বলছে স্যারের হবুকে স্যার যেন বিয়ে না করে ওদের করে।কি হাস্যকর কথা তাই না।
”ওয়াজিহা তুই এখানে কি করছিস?ওদিকে সিনেমা হচ্ছে। আর তুই এখানে..”
তানিশার কথায় ওয়াজিহার মাথায় রাগ উঠে যায়।এ কেমন কথা সিনেমা হচ্ছে মানে।ওখানে হচ্ছে শিক্ষককে অবমাননা করার হারামীপনা।সেখানে লোকসংখ্যা বাড়িয়ে সভা বানিয়ে কি লাভ!আর ও কি কখনো কোনো সভায় থেকেছে বলে ওর মনে হয় না..!
”কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
”তানিশা তোর কিভাবে মনে হলো যে আমি তোর বলা সো কল্ড সিনেমা আদৌতে দেখেছি কখনো!”
তানিশা কিছুক্ষণ ওয়াজিহার দিকে তাকিয়ে থেকে।রাগ দেখিয়ে চলে যায়। ওয়াজিহার জ্বরটা সম্পূর্ণ যায়নি।ভালোই আছে এখনো।তাইতো অসুস্থতার কারণে মুখমণ্ডলে ফুটে উঠেছে বিরক্তির ছাপ এবং কন্ঠে কর্কষতা!
ওয়াজিহা ফুটপাতে ফুচকাওয়ালা দেখতে পেয়ে সেদিকে পা বাড়ায়। অনেকগুলো বছর সে ফুচকা ছুঁয়েও দেখেনি।ইগো যে একটু নয়,অনেক বেশিই তার।
কমপক্ষে দশবছর পূর্বে যখন ওয়াজিহা নিতান্তই দশ বছর বয়সী বাচ্চা।বড় চাচ্চুর থেকেই সে প্রায়ই টাকা পেতো হাতখরচার কেননা কেউ তাকে কিছু সহজে কিনে এনে দিতো না। কমবয়সী ওয়াজিহা টাকাগুলো লুকিয়ে রাখতো।সেখান থেকেই পঞ্চাশ টাকার নোট নিয়ে সে ছুটে ছিলো ফুচকা খেতে।তবে রাহমি বাড়ির মানুষদের কাছে বলেছিলো ওয়াজিহা টাকা চুরি করেছে তার।সে নাকি দেখেছো। ওয়াজিহা অনেকবার বলেছিলো এইটা ওর টাকা,ও ফুচকা খেতে নিয়েছে।আর সে জন্যেই রাহমির মাম্মা মোহনা জুবায়ের সেদিন ওয়াজিহাকে চার ঘা লাগিয়ে বলেছিলো,
” তুই টাকা পাবি কোথা থেকে?তোকে আমরা টাকা দেই?চোর কোথাকার!”
সেই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন কিছুই বলতে পারেনি ওয়াজিহা।তবে ইগোতে খুব লেগেছিলো সে কথা তার। খাওয়া বাদ দিয়েছিলো ফুচকা। অবশ্য বাসায় ফিরে রাকেশ খান যখন জানতে পারেন ঘটনা,তখন তিনি আসল ঘটনা প্রকাশ করেন।তবে মোহনা জুবায়ের শাসন করেননি সেদিন রাহমিকে।
”রাহমি ছোট মানুষ ভাই সাহেব।ভুল করে ফেলেছে!”এই কথাটাই মোহনা জুবায়ের সেদিন বলেছিলেন।
ওয়াজিহা ফুচকাওয়ালার কাছে যেতেই ফুচকাওয়ালা কিছুটা ভয় পায়।তবে স্বাভাবিক থেকেই বলে,
”আপা আজকে আমি সব হাই..হাইনিক মেনেই ফুচকা বানাচ্ছি।দেখেন..”
”হাইনিক নয় হাইজিনি”
ফুচকাওয়ালা কিছু বলে না আর। কয়েকজন কাস্টমার এসেছে তাদের জন্য মূলত ফুচকা বানাতে ব্যস্ত সে।একপ্লেট ফুচকা পঞ্চাশ টাকা।সে কখনো টেস্ট করেনি এখানকার ফুচকাটা।আজকে করবে। পাশের চেয়ারটায় বসতে বসতে ওয়াজিহা বলে,
”ও ছটুন ভাই আমাকেও একপ্লেট দিও”
ছটুন সবাইকে ফুচকা পরিবেশন করে ছুটে ফাঁকা প্লেট হাতে ছুটে আসে ওয়াজিহার নিকট। ওয়াজিহা অবাক হয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
”কি ভাই ফুচকা কোথায়?”
”আপা আপনি ফুচকা খেতে আসছেন?”
ছটুনের মুখায়বে ফুটে ওঠে বিষ্ময়।যেই মেয়েকে সে কখনো বাইরের আনহাইনিক..না না আনহাই ..দূর যাইহোক উল্টা পাল্টা খাবার খেতে দেখিনি।সে মেয়ের আজ কি হলো যে ফুচকা খাবে অদ্ভুত!
”ছটুন ভাই তাকিয়ে না থেকে ফুচকা দেও।ঝাল বেশি দিও!”
ছটুন অবাক ভাবেই চলে যায়।যেন সে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের সম্মুখীন আজ।ছটুন ফুচকা এনে দিতেই ঝালে ভরপুর ফুচকা মুখে ঠুসে নেয় ওয়াজিহা।সোসাতে থাকলেও খেতে থাকে।চোখ তার লাল বর্ণ ধারণ করেছে ইতিমধ্যে।তবে অশ্রুকণাগুলো বাঁধ ভাঙছে না।কত বিশ্বস্ত তার কর্তার প্রতি সে!
”আপা আপনি আর খাইয়েন না। অনেক ঝাল হইছে। আপনার তো ঝাল খাওয়ার অভ্যাস নাই।আপনি রেখে দেন!”
ছটুনের কথার গুরুত্ব না দিয়েই খেতে থাকে ওয়াজিহা। হঠাৎ কেউ প্লেটটা একটানে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। ওয়াজিহা চোখ তুলে তাকায় সোসাতে সোসাতে। তাসকিন রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে।গলায় সেথেস্কোপ ঝুলছে।আর হাতে কালো রঙের এক ব্যাগ।তাসকিন ধমকে বলে ওঠে,
”ঝাল খাওয়ার অভ্যাস নেই তাও খাও কেন?”
”সরি”
ছটুন ওইখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো।অবাক হয় ওয়াজিহাকে সরি বলতে দেখে।যেই মেয়ে সবার থেকে সরি উগলায়,সেই মেয়ে কিনা সরি বলছে ভাবা যায়! তাসকিনের ধমকে ছটুন তাকায় তার দিকে। তাসকিন দ্রুত পানি আনতে বলে তাকে।
”জন্মদিনের দিন কেউ কি নিজেকে কষ্ট দেয় লাবণ্যময়ী!”
”তীব্র কষ্টের মাঝেও কষ্টকে দূর করতে নতুন কিছুটা কষ্ট গ্রহণ যে করতেই হয়।”
”লাবণ্যময়ী?”
”বলুন”
”বলতো কষ্ট কি?”
”যা আমি প্রতিনিয়ত অনুভূত করি ”
”একদমই না।কষ্ট হচ্ছে তা যখন আল্লাহ তায়ালা আমাদের ভালোবাসতে বন্ধ করে দেবেন, আমাদের ঘৃণা করবেন!নামাজ কায়েম করতে শুরু করো। নামাজের এক ওয়াক্তও ছেড়ো না। দেখবে মনে শান্তি আসবে”
ছটুন পানি এনে দিতেই পুরো পানি ঢগঢগ করে খেয়ে নেয় ওয়াজিহা। তাসকিন বিদায় নিয়ে চলে যায়।ছটুন জিজ্ঞেস করে,
”আপা কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি?”
ওয়াজিহা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
”ইনি আমার হবু স্বামী।”
”আপা আপনি বুঝলেন কিভাবে যে আমি আপনাকে এই প্রশ্নটাই করবো?”
”ভাই ভুলে যেও না আমি সাইকোলজির স্টুডেন্ট”
★
শহরের আতংকের গুঞ্জন ছড়িয়েছে।মিনিট পনেরো আগেই পুলিশের গাড়ি থেকে শুরু করে সিআইডি সংস্থা এবং ডিবির পুলিশ হাজির হয়েছে।মামলা গুরুতর।বছর পনেরো আগে নিখোঁজ হওয়া ভয়ানক আতংকবাদী জাফর খিয়াজকে আজ মৃত অবস্থায় নর্দমার নোংরা স্থানে পাওয়া গেছে। যৌনাঙ্গ থেঁতলে দেওয়া।যেন কেউ বিশাল ক্ষোভ মিটিয়েছে।
সাংবাদিকদের বিশাল সমাগম এবং জনগণের আগ্রহ দমিয়ে রাখতে বারবার ব্যর্থতার সাক্ষর রাখছে পুলিশ কর্মকর্তা।শেষে বাধ্য হয়ে পুরো সড়ক বন্ধ করতে হয়েছে তাদের। বিশেষ অনুমতি প্রাপ্ত কয়েক সাংবাদিক ছাড়া কেউই আর কভার করতে পারছে না এই নিউজ।
★
অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে নিজের মাঝে আরো অন্ধকার ধারণ করে বসে আছে কেউ।হাতে বন্দুকের মতো কিছুর অবয়ব। হঠাৎ গুলির শব্দ হলো।কেউ হেসে উঠলো।হাসিটা মেয়েদের মতো। অর্থাৎ উনি একজন মেয়ে।ফোন বেজে ওঠার সাথে সাথেই কল রিসিভ করলো।
”পাপাই প্রতিশোধের আগুনে এবার সবাই জ্বলবে,পুড়বে,মরবে।মাম্মামের প্রতিশোধ আমি নেবোই।দাদাই,দিদুনের হত্যার প্রতিশোধও আমি নেবো। খুবই নির্মম হবে প্রতিশোধ!”
”আমি জানি বেটা তুমি পারবো।তাইতো আরো বছর খানেক আগেই তোমাকে নিজের থেকে দূরে করেছিলাম তোমাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে।তুমি প্রস্তুত বেটা।তুমি প্রস্তুত!”
”ইয়েস পাপাই তোমার বেটা প্রস্তুত! পাপাই পিয়াস ভাইয়ের খোঁজ কি পাওয়া গেছে?”
চলবে?
পূর্ববর্তী পর্বঃ
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/927278972327209/?mibextid=2JQ9oc