প্রিয়_অভিমান🥀🥀পর্ব-২৯
#ফাবিহা_নওশীন
||
রুহানি পার্কের একটা বেঞ্চিতে বসে আছে। চারদিকে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করছে। রুহানি আকাশের দিকে তাকাল। তারপর তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“মানুষের সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু তোমার সাথে লড়াই কি করে করব? সৃষ্টি কি কখনো স্রষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে? পারে না। আমিও পারব না।”
রুহানি হাতে রাখা পেপারটা ব্যাগে রেখে কলম বের করে ডাইরিতে লিখতে শুরু করল। লিখা শেষে চারটা পাতা আলাদা আলাদা করে ভাজ করে ব্যাগে রাখল।
“মেয়েরা জন্ম থেকেই সেক্রিফাইজ করে যায়। নিজের জন্য কখনো কিছু করার সুযোগ পায় না। বাবার ঘরে থাকাকালীন পরিবারের জন্য ভেবে যায়, বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ির জন্য। এভাবে অন্যের জন্য ভাবতে ভাবতেই জীবন চলে যায়৷ নিজের জন্য আর ভাবা হয় না। তবে আমি আজ থেকে আমার কথা ভাবব। সবাই আমার সামনে অপশন রেখে যাচ্ছে কিংবা নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছে। আমার বাবা-মা তাদের সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। আহিল আমাকে বিয়ে করবে বলে জেদ চেপে আছে। আর ফালাক সে তো চাইছে আমি সব ছেড়ে ছুড়ে তার কাছে চলে যাই। কেউ জানতে চাইছে না আমি কি চাইছি। আমি হাপিয়ে গেছি। সবার চাওয়া পূরণ করা একটা মানুষের পক্ষে কি আদৌও সম্ভব? আমি একা মানুষ এত মানুষের চাওয়া পূরণ করব কিভাবে? পারব না আমি কারো চাওয়া পূরণ করতে। আমি না এখন আমার পরিবারকে চাই আর না ফালাককে চাই। আমি এখন শুধু শান্তি চাই। আমার বাঁচার জন্য একটু শান্তি প্রয়োজন। আমি প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে চাই৷ কাউকে আমার প্রয়োজন নেই। সবাই স্বার্থপর। সবাই নিজের স্বার্থ দেখছে। আমিও আজ শুধু আমার স্বার্থ দেখব৷ আর কাউকে খুশি করতে চাই না। কাউকে না।”
রুহানি একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখল। মায়ের সাথে পার্কে আসছে। মা তার হাত ধরে রেখেছে। রুহানি হালকা হাসল। ওর ফোনটা বেজে উঠল। ফালাক ফোন করেছে। সেদিনের পর থেকে রোজ একবার করে ফোন করে কিন্তু কথা বলে না৷ রুহানি হ্যালো হ্যালো এটা সেটা বলে কিন্তু ফালাকের সাড়া পায় না। আজও ফোন করেছে। রুহানি ফোন রিসিভ করল। কিন্তু আজ আর ও হ্যালো বলল না। ফালাক যেমন অপর পাশ থেকে চুপ করে থাকে আজ রুহানিও তাই করছে। ফালাকের আজ অস্থির লাগছে। ছটফট করছে। প্রতিদিন রুহানির কন্ঠস্বর শুনতে পেত কিন্তু আজ তাও পাচ্ছে না। ফালাকের ইচ্ছে করছে বলতে রুহানি একটু কথা বলো। কিন্তু কোথাও আঁটকে গেল। এই আঁটকে যাওয়ার নাম অভিমান। কয়েক মিনিট কেটে যাওয়ার পরেও রুহানি কোন কথা বলল না। ফালাক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন কেটে দিল। রুহানির বুকটা হু হু করে উঠল ফালাকের দীর্ঘশ্বাসে।
ব্যাগে ফোনটা রেখে চোখের কোন থেকে পানি মুছে নিজেকে বলল,
“আমি আর কাঁদব না। কাঁদবে তো তারা যারা আমাকে রোজ কাঁদিয়েছে। নিজেদের স্বার্থে রোজ ব্যবহার করেছে। যারা আমার চাওয়াকে মূল্য দেয়নি। যারা আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেনি আমি কি চাই।”
.
রুহানি আজ আর ইন্সটিটিউট যায়নি। প্রয়োজনীয় কিছু কাজ সেরে সোজা বাড়িতে চলে গেল। বাড়িতে তোরজোর চলছে। লাগেজ,জিনিসপত্র গুছানো শুরু করে দিয়েছে ওর মা। আগামীকালই ওরা ও বাড়িতে উঠবে। রুহানি নিজের রুমে গিয়ে নিজের লাগেজও গুছিয়ে নিল৷ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র শুধু লাগেজে নিল বাকি সব যেখানে যা ছিল সেখানেই আছে৷ তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিল। শরীরটা দূর্বল লাগছে। চোখ বন্ধ করতেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল। ঘুম ভাঙতেই রুহানি ওর মা’কে মাথার পাশে বসে থাকতে দেখল। ওর মা মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“অবেলায় শুয়ে আছিস কেন? ক’দিন ধরে দেখছি ঠিকমতো খাচ্ছিস না। সারাক্ষণ শুয়ে শুয়ে কাটাচ্ছিস। শরীর খারাপ নয়তো?”
রুহানি মা’য়ের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“শরীর ঠিক আছে। আমাকে খেতে দেও। ক্ষুধা পেয়েছে খুব।”
রুহানি খেয়েদেয়ে আবারও শুয়ে রইল। কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে কারণে ওর ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
রুহানি রুহানের ঘরে গেল। নিজেদের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে ও খুব এক্সসাইটেড। ছোট মানুষ এতেই খুশি।
রুহানি ওর পাশে গিয়ে বসে বলল,
“তোর খোঁজ ঠিক করে নিতে পারিনি। পরীক্ষা দিলি এতদিন। কেমন ছিল সব?”
“সবগুলো পরীক্ষাই খুব ভালো হয়েছে। সবটাই সহজ ছিল।”
রুহানি আস্তে আস্তে বলল,
“জীবনটাও যদি এমন সহজ হতো, তাহলে কতই না ভালো হতো। রুহান এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিস। অনেক বড় হয়ে গেছিস৷ সামনে অনেক কঠিন সময় আসবে। আমার মতো হার মেনে নিস না। জীবনে যা করতে ইচ্ছে করে করবি। বুজলি?”
“হুম বুঝেছি আপু। মধ্যবিত্তরা একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যায়৷ আমিও তাই হয়েছি। চিন্তা করো না আমাকে নিয়ে।”
রুহানি রুহানের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেল।
.
গভীর রাত সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ সবাই একটু তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়েছে৷ সারাদিন প্রচন্ড খাটাখাটুনি গেছে কি-না। রুহানির চোখে ঘুম নেই। শেষ বারের মতো বাবা-মায়ের মুখটা হালকা আলোয় দেখে নিয়ে লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে গেল ওর গন্তব্যে।
সকাল থেকে রুহানির দেখা নেই। ওর ঘর, বাড়ির আশেপাশে সব জায়গায় দেখে নিয়েছে। রুহানি কোথাও নেই। ওর বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়ল।
রুহান বাইরে রুহানিকে খুঁজতে বের হয়েছে। ওর মা ওর রুমে লাগেজ দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে আহিলকে ফোন করল।
.
সবাই ড্রয়িংরুমে জড়ো হয়ে বসে আছে। উনাদের ধারণা রুহানি ফালাকের কাছে চলে গেছে। রুহানির বাবা ফালাকের মা’য়ের নাম্বার খুঁজছে। কিছুদিন আগে ফোন করেছিলেন। নুশা হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকল।
রুহানির মা’য়ের কাছে গিয়ে বলল,
“কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?”
“না মা, ও কি ফালাকের কাছে গেলো? ফালাকের নাম্বার আছে তোমার কাছে? একটু খোঁজ নিতে পারবে?”
নুশার মনে হচ্ছে না ফালাকের কাছে গেছে। কারণ গতকালই রুহানি ওর কাছে এসেছিল।
“আন্টি আমার মনে হয় না রুহানি ফালাকের কাছে গিয়েছে। গতকাল ও এসেছিল আমার কাছে৷ ওর লকেটটা এগিয়ে দিয়ে বলল আমার কিছু টাকা লাগবে। আমি… ”
নুশা কথা শেষ করার আগেই রুহান রুম থেকে চিৎকার করে সবাইকে ডাকছে। সবাই এক প্রকার দৌড়ে ওর রুমে গেল।
রুহানের হাতে কয়েকটা ভাজ করা কাগজ। রুহান সেগুলো দেখিয়ে বলল,
“টেবিলের উপর ছিল। চিরকুটগুলো আপু লিখেছে। চারটা চিরকুটের উপর নাম লেখা। রুহান, ফালাক, আহিল এবং মা-বাবা।”
রুহানের বাবা হুইলচেয়ারে ঘরে ঢুকল।
সবাই বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে। রুহান নিজের চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করল,
“আমার আদরের ছোট্ট ভাইটার উপর অনেক বুঝা চাপিয়ে দিয়ে গেলাম। আমাকে মাফ করিস। এছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না। বাবা-মাকে দেখিস আর ঠিক করে পড়াশোনা করিস। আমার আলমারিতে লাল ব্যাগে আট লক্ষ টাকা আছে। ওগুলো তোর জন্য। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে নিজের জীবন গড়ার লড়াইটা তোকেই করতে হবে। সে পর্যন্ত এ টাকাগুলো খরচ করিস। আর চিরকুট গুলো নাম লেখা ব্যক্তিদের হাতে পৌঁছে দিস। ভালো থাকিস। আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে থাকবে।”
রুহানের পড়া শেষ হতেই চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। পুরো ঘর জুড়ে নিস্তব্ধতা।
নুশা বলতে শুরু করল,
“এজন্যই গতকাল আমার কাছ থেকে টাকা এনেছিল।”
সবাই ওর দিকে তাকাল। নুশা আবারও বলতে শুরু করল,
“আমাকে ওর লকেট দিয়ে বলল এটা রাখ। আমার কিছু টাকা লাগবে। আমি ওটা না নিয়েই বললাম লাগবে নিবি কিন্তু এটা কেন দিচ্ছিস? বলল বেশি টাকা লাগবে। তাই এটা তোর কাছে বিক্রি করতে চাই। তুই জানিস এর ভ্যালু কতটা আমার কাছে। তাই চাই না অন্য কারো হাতে যাক। তুই এটা কিনে রাখ। আমার চেয়ে তোর কাছে এটা নিরাপদ থাকবে প্লিজ রাখ। এখন বুঝতে পেরেছি ওই টাকা রুহানকে দিয়েছে।”
রুহান একটা চিরকুট আহিলের দিকে এগিয়ে দিল। আহিল দ্রুত সেটা খুলল। দু লাইন লেখা।
“কাউকে শুদ্ধভাবে ভালোবেসে যদি মন থেকে চান তবেই তাকে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আমি তো আপনার জেদ ছিলাম।”
আহিল চোখ বন্ধ করে ফেলল। সবাই কৌতূহল নিয়ে চেয়ে আছে। আহিল রুম থেকে বের হয়ে গেল।
রুহান বাবার হাতে একটা চিরকুট এগিয়ে দিল।
ওর বাবা চিরকুটটা পড়তে শুরু করল,
“বাবা তুমি ছোট থেকে আমার সব শখ,আহ্লাদ পূরন করেছো কারণ সেগুলো তোমার ক্ষমতায় ছিল। আমি তোমার ইচ্ছেটা পূরণ করতে পারলাম না কারণ এটা আমার আয়ত্তে নেই। একজনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করা আমার জন্য জুলুম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তুমিও দেখোনি অথচ আমি তোমার সামনেই রোজ শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। তাই চলে গেলাম। একটা কথা জেনে রেখো এই জীবনে আমি সবচেয়ে বেশি তোমাকেই ভালোবেসেছি বাবা।”
পড়া শেষে অস্ফুট কাঁপা কন্ঠে উচ্চারিত করল,
“রুহানি!”
পরের অংশটুকু ওর মায়ের জন্য লেখা হয়েছে।
“মা, এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর শব্দ। মা এমন একজন যে সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে মনের ব্যথা বুঝতে পারে। তুমি পরিস্থিতি দেখেছো কিন্তু আমার মনের ব্যথা দেখোনি। বুঝেও বুঝতে চাওনি আমায়। এই শাস্তি কি তোমার প্রাপ্য নয়?”
ওর মা বসে পড়ল। কান্নায় ভেঙে পড়ল। ততক্ষণে নুশা ফালাককে ফোন করে সব জানিয়ে দিয়েছে।
কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“রুহানির বাবা আমাদের মেয়েটা কোথায় গেল? ওকে খুঁজে এনে দেও। আমি থাকতে পারছি না। ও কোথায় গেল? আমাদের উপর ওর এত অভিমান জমেছে? আমাদের ছেড়ে চলে গেল? একা একা কোথায় গেল? কেমন আছে?”
বলেই আবারও কান্নায় ভেঙে পড়ল।
রুহান চোখের পানি মুছছে। হাতে ফালাকের জন্য লেখা রুহানির চিঠি।
.
ফালাক কাঁপা কাঁপা হাতে ভাজ খুলল। ওর চোখগুলো ভীত আর ঠোঁট কম্পিত হচ্ছে।
“আমি জানি তুমি সেদিনও আমাকে ভালোবাসতে, আজো বাসো হয়তো ভবিষ্যতেও বাসবে। কিন্তু এটুকুই কি আমার জন্য যথেষ্ট ছিল? তুমি তো সব জানতে। জেনে-বুঝে কেন আমার সাথে এমন করলে? আমি তো তোমাকে শুধু আমার প্রেমিক ভাবিনি বন্ধুও ভেবেছি। কিন্তু তুমি আমার সেই ভাবনার মর্যাদা রাখোনি। রুহানি কাউকে ছাড় দিবে না। তোমার যা ছিল তা আমি কেড়ে নিয়ে গেলাম। তুমি আমাকে যা যা দিয়েছো সব কিছু নিয়ে গেলাম কোনো স্মৃতিচিহ্ন রাখিনি তোমার জন্য।”
পড়া শেষে ফালাক চিৎকার করে বলল,
“মিথ্যা সব মিথ্যা। এসব মিথ্যা। রুহানি আমাকে ছেড়ে কোথাও যায়নি। এসব আপনাদের ষড়যন্ত্র। আমার কাছ থেকে ওকে দূরে রাখার জন্য এসব নাটক করছেন তাই না? ও আমার স্ত্রী, আমাকে ছেড়ে ও কোথাও যেতে পারে না আর না কেউ ওকে কেড়ে নিতে পারবে।”
ফালাকের কথা শুনে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। সবার চোখে মুখে বিস্ময়। রুহানির মা চোখের পানি মুছে বলল,
“স্ত্রী! কি আবল তাবল বলছো?”
ফালাক কটাক্ষ করে বলল,
“আবল তাবল নয়। সত্যি একদম সত্যি। ও আমার স্ত্রী। ও কোথায়? ওর কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়ব না। ওকে কোথায় রেখেছেন? আপনাদের জন্য অনেক সহ্য করেছি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি রুহানিকে চাই। ও কোথায়?”
নুশা এগিয়ে এসে ওকে থামানোর চেষ্টা করে বলল,
“ভাইয়া সত্যিই ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সময় নষ্ট না করে ওকে খোঁজতে হবে।”
আহিল স্তব্দ হয়ে বসে আছে। ওর মাথায় একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। রুহানি যদি সত্যিই ফালাককে বিয়ে করে তবে চলে যাবে কেন? ফালাক মিথ্যে বলছে না তো? আহিলের কাছে ফালাকের কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না।
আহিল উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“অনেক হয়েছে। এখন ওকে খোঁজা দরকার।”
ফালাক ওর কথা শুনে চেঁচিয়ে বলল,
“ওর জীবনটা ধ্বংস করে দিয়ে শান্তি হয়নি? ও আমার স্ত্রী, আমি ওকে খুঁজে বের করব।”
ফালাক বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে আহিল রুহানির বাবা-মা’কে আস্বস্ত করে চলে গেল।
.
১০-১২দিন কেটে গেছে রুহানিকে পাওয়া যায়নি। সব রকমের চেষ্টা এই কয়দিনে করা হয়েছে৷ ফালাক বিমর্ষচিত্তে বসে আছে। ওর চোখের নিচে কালি পড়েছে৷ কয়েক দিনেই রোগা পাতলা হয়ে গেছে।
“রুহানি এভাবে শাস্তি দিও না। যত রাগ, অভিমান সামনে এসে উশুল করো দূরে থেকে নয়। আমি আর সইতে পারছি না। শক্তি নেই আমার। প্লিজ কাম ব্যাক। আমি আর তোমাকে কষ্ট দেব না। তোমাকে খুব ভালোবাসি, খুব।”
ফালাক চোখের পানি মুছছে।
ফালাকের মা এসে৷ ওর কাঁধে হাত রাখল। ফালাক রাগে গজগজ করতে করতে উঠে দাঁড়াল।
“কি চাও তুমি? রুহানি চলে গেছে আমার জীবন থেকে হ্যাপি নাও? ও কোথায়, কিভাবে আছে কিছুই জানি না। সব তোমার জন্য। তুমি আমাকে এই আগুনে ফেলেছো মা যেখানে প্রতিনিয়ত আমি জ্বলে যাচ্ছি।”
“ফালাক, আমার কথা শোন। শান্ত হ।”
ফালাক রাগের বশে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে গেলেছে৷ ওয়ারড্রবের উপর থেকে সব টানে ফেলে দিল। এটা সেটা ছুড়ে মারছে। পুরো ঘর মুহুর্তেই ধ্বংসাত্মক রুপ নিল। ওর হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। অসার শরীর ঢলে পড়ল।
.
রুহানির মা দিনরাত কেঁদে যাচ্ছে আর ওর বাবা আজকাল কথা বলতে যেন ভুলেই গেছে। সব সময় মুখে কাঠিন্যতা টেনে বসে থাকেন।
আহিলের আপসোস করা ছাড়া আর কিছুই নেই। ও নিজের কাজের জন্য আপসোস করছে। চোখের সামনে একটা পরিবারকে কষ্ট পেতে দেখে নিজের পাপগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।
“সরি রুহানি। ফিরে এসো। আমি আর তোমার সুখের পথে বাঁধা হবো না। তোমার খুশিতে নিজেকে খুশি করার চেষ্টা করব।”
চলবে….!