প্রতিহিংসার_অনুরক্তি-০৩

#প্রতিহিংসার_অনুরক্তি-০৩
লেখিকা: সালসাবিল সারা

নূর স্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।জোহানের কথায় বেশ আহত হয়েছে সে।কিন্তু বরাবরের মতো নূরকে কিছু বলতে না দিয়ে জোহান তার মুখ বন্ধ করিয়ে দিয়ে চলে গেলো।গালের উপর গড়িয়ে পড়া পানির ছাপ দূর করতে নূর পুণরায় মুখ ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।তার বাবার ঘরের ভেতর থেকে কলরব শোনা যাচ্ছে।সেদিকে হালকা উঁকি দিয়ে সে জোহানের বাবা মাকে দেখলো।নূরের মন খারাপ নিমিষেই দূর হয়ে গেলো তাদের দেখে।তার বাবার রুমে ঢুকে নূর জোহানের মাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
–“এতদিন বাদে মনে পড়েছে বুঝি আমাদের কথা?”
নূরের কথায় জোহানের মায়ের মুখ চিকচিক করে উঠলো খুশিতে।এক হাতে নূরকে আলিঙ্গন করে আনোয়ারা জবাব দিলো,
–“গত সপ্তাহে তো আসলাম।এতেও তোর এতদিন বলে মনে হয়?”
–“হ্যাঁ,অনেকদিন ই তো।”
–“এইবার তো ছেড়ে দে মা,এইসব টিউশন।”
জোহানের বাবা সৈকত সাহেব বললেন।
–“নাহ আঙ্কেল।এটা দিয়ে আমার হাত খরচের টাকার ব্যবস্থা হয়ে যায়।আপনারা আমাদের জন্যে এতকিছু করছেন,তাই বলে কি আমার হাত খরচের টাকাটাও…”
কথা শেষ না করে নূর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আবারও সৈকত সাহেবকে বলে উঠলো,
–“আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।অনেক ক্ষিধা লেগেছে।”
নূর মলিন হাসলো।সে ঘর ত্যাগ করার পূর্বে জহুরা রুমে এলো,
–“জোহান বাবা ফের চলে গেলো!ছেলেটা একটু বসলো না।আমাকে না জানিয়েই চলে গিয়েছে।এই ছেলের মতিগতি কিছু বুঝিনা।নামাজটা পড়তে গিয়েছিলাম এই সুযোগে ছেলেটা চলে গেলো।”
নিজের মায়ের কথা শুনে নূর মিনমিন করে বলে উঠলো,
–“চোরের মতো শুধু পালাতেই পারে এই জোহান ভাই।”
–“কিছু বললি,নূর?”
জহুরার প্রশ্নে নূর পেছনে না ফিরে সামনে তাকানো অবস্থায় জবাব দিলো,
–“নাহ তো।চা দাও আমায়।গলাটা খুশখুশ করছে আমার।”
জহুরার উত্তরের অপেক্ষা না করে নূর বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
নামাজ আদায় করে নূর খাবার টেবিলে চলে এলো।বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ছোট ছোট চার্জ লাইট জ্বলছে তাদের ঘরে।যার কিঞ্চিৎ আলো ডাইনিং রুমে এসে পড়ছে।নূর সেখানে গিয়ে টেবিলে থাকা ফ্লাস্ক থেকে চা ঢেলে নিলো কাপে।বয়াম থেকে বিস্কিট নিয়ে চায়ে এক চুমুক দিয়ে বিস্কিটে কামড় বসালো সে। নূর সদা এইভাবেই চা বিস্কুট খাই।বিস্কিট ভিজে চায়ে পড়লে নূরের সেটা হজম হয় না। খানিকক্ষণ বাদে,নূরের চা খাওয়ার পর্যায় প্রায় শেষের দিকে।এর মধ্যেই নূর দেখলো, ডাইনিং এর দুই চেয়ারে এসে বসলো নিজের মা আর জোহানের মা।নূর চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললো,
–“ব্যাপার কি?”
–“তোর আন্টি তোকে কিছু বলবে।”
নূর তার মায়ের কথায় আনোয়ারার দিকে তাকালো।আনোয়ারা ইতিমধ্যে কান্নার পানিতে চোখ ভিজিয়ে রেখেছে।নূর বুঝতে পারছে এরা আগের মতো আজও তাকে আবারও একই কথা বলতে এসেছে।নূরের মনোভাব সঠিক প্রমাণ করে দিয়ে আনোয়ারা এইবার মুখ খুললো খুবই আহত সুরে,
–“জোহানকে রাজি করা না,মা।তাকে ঘরে ফিরে আসতে বল না,মা।আমি তো আমার এই ছেলেকে ছাড়া ঘরের ভেতরে ভালো করে নিঃশ্বাস ফেলতে পারি না।তুই বললে জোহান শুনবে আমি জানি।”
–“তাই?”
নূরের প্রশ্ন।
–“হ্যাঁ,তাই।”
আনোয়ারা বললো।
–“তোমার ছেলে আমাকে কেমন করে দেখো না?সেদিনের ঐ ঘটনার জন্যে আজও দোষী মনে করে আমাকে সে।তিন বছরে কতো বার বলার চেষ্টা করলাম তাকে সেইদিনের ব্যাপারটা।কিন্তু,সে তো আমার কথা শুনবে না বলে পণ করেছে।”
–“তুই তোর মতো করে বুঝা না ওকে।”
জহুরা বলে উঠলো।
–“একটা মানুষ আমার কথা শুনতে না চাইলে আমি তাকে কিভাবে বুঝাবো?”
নূরের কথায় শব্দ করে কেঁদে উঠলো আনোয়ারা,
–“আমার ছেলে তোর প্রতি দূর্বল এটা কি এখনো জানিস না তুই?একবার চেষ্টা কর না,নূর।জোহান তোর জোর জবরদস্তিতে বলা কথা শুনবেই শুনবে।”
নূরের হাত পা জমে গেলো।বিস্ফোরিত চোখে তার মা আর আনোয়ারার দিকে তাকালেও তাদের দৃষ্টি নূরের স্বাভাবিক মনে হলো।যেনো তারা সবটাই আগে থেকে আন্দাজ করে আসছে।নূর অসহায় হয়ে পড়লো। আনোয়ারাকে সে তার মায়ের মতো ভালোবাসে।তাই কিছু একটা ভেবে সে আনোয়ারাকে জবাব দিলো,
–“কখন সব ঠিক হবে জানিনা।তবে,আমি তোমার ছেলেকে সেদিনের সত্যিটা জানিয়ে ছাড়বো।এর জন্যে যদি তোমার ছেলের কটু কথা বা খারাপ ব্যবহারের শিকার হতে হয় আমি তাও হবো।তবে কতো সময় লাগবে আমি জানিনা।এর আগেও তো অনেকবার চেষ্টা করেছি,বিনিময়ে তার কর্কশ কথায় শুনতে হয়েছিলো।আমি আর হার মানবো না।এইবার তো কান্না বন্ধ করো।”
নূর আনোয়ারাকে জড়িয়ে ধরলো।মুহূর্তেই আনোয়ারার কান্নারত মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এইবার আনোয়ারা একটা ভালো খবরের ইঙ্গিত পাচ্ছে।কিন্তু কেনো!সেটা আনোয়ারা জানে না।

রুমে গিয়েও নূরের অস্বস্থির শেষ নেই।জোহান নামক ছেলেটা নূরের জন্যে আতঙ্ক। জোহানকে নূর ভালোবাসলেও এই তিন বছরে জোহানের কর্মকাণ্ড নূরের মনে বড্ড ভয় সৃষ্টি করেছে জোহানের প্রতি।নূর রুমের একপাশ থেকে অপরপাশে হাঁটছে আর ভাবছে,
–“এই তিতামুখী আমার কথা শুনবে না গো আন্টি।আমি তোমাকে আশ্বাস তো দিলাম।কিন্তু,সেই আশ্বসটা আমি কখনো পূরণ করতে পারবো,নাকি এর আগে তোমার ছেলে আমাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে আল্লাহ্ ভালো জানেন।আল্লাহ্,আমি যেনো আমাদের সবার মাঝের ভুল বুঝাবুঝি সব ঠিক করে দিতে পারি;
আমাকে সেটার শক্তি দাও।আমি যেনো ঐ জিদ্দি জোহান তিতামুখী ভাইয়ের সকল ভুল ধারনা ভেঙে দিতে পারি। ঐ নিশি আপুটা আমাদের জীবন তছনছ করে সৌদি আরবে পালিয়েছে।একবার যদি বাংলাদেশ আসে সে,তাকে বস্তা বেঁধে আমি জোহান ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাবো।এরপর জোহান ভাইকে বলবো,
‘ এই তিনবছর যে কারণে আমাকে এত কষ্ট দিয়েছেন, সব এই মেয়ের জন্যে হয়েছে।এই মেয়েই আমাদের ভুলভাল জিনিস দেখিয়েছিল।এইবার এই মেয়েকে আরো কঠিন শাস্তি দিন।’
নূর নিজে নিজে কথা বলার পাশাপাশি এইসবের অভিনয় করছিল। জারা দুয়ারে দাঁড়িয়ে সেইসব দেখে হেসে উঠলো,
–“বড় আপু,তোমাকে দেখে আমার অনেক হাসি আসছে।”
জারার কথায় নূর নিজের সজ্ঞানে ফিরে এলো।জারার সামনে বসে তার পেটে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা দিয়ে নূর বলে উঠলো,
–“এতো হাসি কেনো আজ, হুঁ?”
জারা নূরের গলা জড়িয়ে ধরলো,
–“তোমার অ্যাক্টিং দেখে হাসি আসলো আমার।আর আমি আরেকটা কারণে খুশি অনেক।”
নূর মুখে হাত দিয়ে কোনো কিছু ভাবার ভান করে জারাকে প্রশ্ন করলো,
–“কি কারণ?”
–“জোহান ভাইয়া আমার জন্যে অনেক কিছু এনেছে।ভাইয়া আজকে আমার সাথে রান্নাবাটিও খেলেছে।”
নূরের কান দিয়ে যেনো ধোঁয়া উড়ছে।সে মাটিতে বসে জারার হাত ঝাঁকিয়ে তাকে বলে উঠলো,
–“কি খেলেছে?”
–“রান্নাবাটি।আমার জোহান ভাইয়া অনেক ভালো।”
নূরের হাসিও আসছে কান্নাও আসছে।জোহান আর রান্নাবাটি! এই কথাটা নূরের হজম হচ্ছে না।জারার সাথে সে একেবারে ভালো ছেলের মতো আচরণ করে।আর নিজের সাথে কতোই না খারাপ ব্যবহার করে জোহান!তাই এইসব ভেবে নূরের মুখে হাসি কান্না দুইটারই প্রতিফলন হচ্ছে।পরক্ষণে নূর জোহানের সুদর্শন মুখমণ্ডলের প্রতিচ্ছবি কল্পনা করে নিজের চোখ বুঝে নিলো,
–“তুমি আমাকে যতোই অবজ্ঞা করো কেনো তিতামুখী,
আমি জানি আমি তোমার একমাত্র অনুরক্তি।তুমি কি জানো,আমিও তোমাকে ভালোবাসি!অনেক অনেক বেশিই ভালোবাসি আমি তোমাকে।তোমার মনে আমার জন্যে সৃষ্ট প্রতিহিংসার অনুরক্তিকে আমি শুধুমাত্র স্নিগ্ধময় অনুরুক্তিতে পরিণত করবোই।এটা আমার নিজের প্রতি নিজের একটা ওয়াদা।আর যতো দ্রুত সম্ভব তোমাকে আমি তোমার মায়ের ঘরে ফিরিয়ে আনবই।”

—————–
বেশ কয়েকদিন নূর দেখা পেলো না জোহানের।কিন্তু গতকাল এসেছিলো জোহান নূরের বাসায়।বাহিরে এসে বাহির থেকেই চলে গিয়েছিলো জোহান,নূরের মায়ের সাথে টুকটাক কথা বলে।নূর তার মায়ের থেকে জানলো কাজের জন্য এতদিন জোহান অন্য শহরে ছিলো।যতক্ষণ জোহান তাদের বাড়ির বাহিরে ছিলো,
ততক্ষণ নূর জোহানকে লুকিয়ে দেখছিল সামনের রুমের জানালা দিয়ে।জোহানের সকল অঙ্গভঙ্গি আর মুখশ্রী বরাবরই নূরের মনকে অস্থির করে তুলে।নূরের সবচেয়ে বেশি প্রিয়,জোহান যখন কথার মাঝে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে সেই জিনিসটা।নূরের কাছে জোহানের এই কাজটা চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগে।এরপর জোহান যখন নিজের শার্টের হাতা অর্ধেক ভাঁজ করে থাকে,
তখন তার ফর্সা হাতের উপর ভাসমান মোটা মোটা রগ দেখা মাত্রই নূরের মন সেই হাতটা একটু ছুঁয়ে দেখার জন্যে ব্যকুল হয়ে যায়।কিন্তু,নূরের পরক্ষণে মনে এলো জোহানের সেই রাগী চেহারা আর নূরকে সর্বক্ষণ ঘৃণার কথা শুনিয়ে তাকে আঘাত করার ঘটনা।নূর হালকা কেঁপে উঠলো।চোখ খুলে দেখলো তার ঘরে আলো প্রবেশ করছে রুমে থাকা বন্ধ ছোট জানালার ফাঁক দিয়ে।ঘুমের মাঝেও জোহানের খেয়াল নূরকে জ্বালাতন করে যাচ্ছে,এটা ভাবতেই নূর মুখ কুঁচকে নিলো।তার চেয়েও বেশি বিরক্ত হলো নূর অন্য কিছু টের পেয়ে। কাল রাতে এই জন্যই নূর পেটের পীড়ায় ভুগেছিলো।আর দেরী না করে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে সে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।
নূর মনে মনে ভেবেছিল সে আজ ভার্সিটি যাবে না।কিন্তু,এই সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষার জন্যে আজকের ক্লাস বেজায় জরুরি।অগত্য নূর গোসল সেরে একেবারে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্যে তৈরী হয়ে নিলো।পেটের পীড়ায় নূরের আজ কিছুই ভালো লাগছে না।রুম থেকে বাহির হয়ে সে দেখলো,তার মা সম্পূর্ণ টেবিল পিঠা দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে।নূর একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।নূরকে দেখে তার মা বলে উঠলো,
–“তোর বাবা তোর আংকেলের বাসায় গিয়েছে গরম গরম পিঠা নিয়ে।তুইও খেয়ে নে।”
নূর মাথা নাড়িয়ে তার মাকে জবাব দিলো,
–“খাবো না মা।মিষ্টি কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।রুটি আর সবজি দাও।আর,বাবা এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কেনো বের হলো বাসা থেকে?”
নূরের মা নূরের জন্যে সবজি আর রুটি নিয়ে এলো ভেতর থেকে।নূরের জন্যে এটা প্রথমে বানিয়ে রেখেছিলো জহুরা।সে তো জানে,তার মেয়ে পিঠা তেমন একটা খায় না।সেগুলো নূরের সামনে রাখতেই নূর খাওয়া শুরু করলো। জহুরা দুইটা বক্সে কিছু পিঠা তুলে নেওয়া অবস্থায় নূরকে জবাব দিলো,
–“তোর বাপে যাবে না তো কে যাবে? উনারা আমাদের জন্যে কি না করেন?তোর বাবার শরীর এখন ভালো লাগছে।তাই উনি ই বলেছিলেন তার বন্ধুর জন্যে কিছু পিঠা বানিয়ে দিতে।ঘরের সামনে থেকে সিএনজি ভাড়া করে নিয়েছে।আসার সময় দেখবি তোর আঙ্কেল ই নিয়ে আসবে তোর বাবাকে তার গাড়ি করে।কি যে ভাগ্য করে পেয়েছি আমরা উনাদের!তোর আপন মামা, খালু,চাচা উনারা আমাদের ভালো সময়ে ছিলো পাশে।খারাপ সময়ে ডানা খুলে উড়াল দিয়েছে।আত্মীয়রা হয়ই মনে হয় রঙ বদলানোর জন্যে।”
–“বাদ দাও,মা।এইসব বলে আর লাভ কি?যেই সেই উনারা বাসায় আসলে তো পারো না,নিজের কলিজা রান্না করে দিতে।আমি আসছি।জলদি ফিরে আসবো আজ।শরীরটা সকালে খারাপ হয়ে গেলো।”
নূর শান্ত কণ্ঠে বললো।
–“এই মেয়ে এই!এই বক্স তোর বান্ধুবী তনয়াকে
দিস।আর এই বক্স কষ্ট করে জোহান বাবাকে দিয়ে দিস যাওয়ার পথে।ছেলেটা এইসব খেতে পায় কি বল?নিজের মায়ের খাওয়াটাও তার পেটে পড়ে না।”
জহুরার এমন কথা শুনে নূরের মেজাজ চটে গেলো।এই শরীরে সে কোনো ভাবে ভার্সিটি যাবে।তাই বলে আবার জোহানের অ্যাপার্টমেন্টে যেতে হবে তার!নূর কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু কিছু একটা ভেবে চুপ করে তনয়ার জন্যে দেওয়া বক্স ব্যাগে ঢুকিয়ে অন্য বক্স হাতে নিয়ে তার মাকে “আসছি” বলে বেরিয়ে পড়লো।নূর হাতে বেশ কিছু সময় নিয়ে বেরিয়েছে আজ।তার ভার্সিটির ক্লাস শুরু হতে প্রায় অনেক্ষণ বাকি আছে।

আজ নূর বাসের অপেক্ষা করলো না।জোহানের অ্যাপার্টমেন্ট পর্যন্ত একটা রিক্সা ভাড়া করলো।
অ্যাপার্টমেন্টের সামনে রিক্সা আসলে নূর ভাড়া মিটিয়ে গেইটে দাঁড়িয়ে তিন তলার দিকে তাকালো।পর্দা নামানো এখন জোহানের রুমের জানালায়।ওয়াচম্যান থেকে নূর জিজ্ঞেস করলো,
–“তিন তলার শাফকাত জোহান কি উনার বাসায় আছেন?”
–“জ্বী ম্যাডাম।উনি আছেন।”
ওয়াচম্যান জবাব দিলো।নূর মলিন হেসে ঢুকে পড়লো ভেতরে।লিফট এর জন্যে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নূর লিফট এর সহিত পৌঁছে গেলো তিনতলায়।এর আগে আরো অনেকবার এসেছে নূর এইখানে,তাও নিজের মায়ের পাঠানো জিনিস নিয়ে।প্রথম প্রথম নূর ওয়াচম্যানকে দিয়ে পাঠাতো জিনিস,কিন্তু পরের বার এসে শুনতো সেইসব জিনিস জোহান নেয়নি।এরপর থেকে নূর নিজ হাতেই দিয়ে আসে সবকিছু জোহানকে।আর যতবার সে জিনিস দিতে গিয়েছে জোহানকে, ততবার সে জোহানের করা নানান অদ্ভুত কিছুর মুখোমুখি হয়েছে।নূরের পেটের অসহনীয় ব্যাথা হচ্ছে।তাও সে চুপ করে মুখের ভঙ্গি ঠিক করে জোহানের ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপলো।তিনবারের মাথায় খট করে দরজা খুলে গেলো।অর্ধেক দরজা খুলে জোহান দাঁড়িয়ে আছে।উদোম শরীরে,হাঁটুর উপর প্যান্ট পড়ে ঘুম চোখে জোহান তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।নূর বেশ অবাক হলো।এই অবস্থায় কখনো সে জোহানকে দেখেনি।তবে,আজ কেনো জোহান এই অবস্থায় তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে;এটাই নূরের মাথায় ঢুকছে না।জোহান এর উদোম শরীর দেখে নূরের মাথায় চক্কর দিচ্ছে।নূরকে ভালো করে দেখতে পেয়ে জোহান চোখ ঠিকভাবে খুলে নূরকে প্রশ্ন করলো,
–“তুমি?এই সময়ে?”
নূর কোনো মতে হাতের বক্স জোহানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“মা পাঠিয়েছে।”
জোহান সটান করে দরজা খুলে দিলো।ভেতরের দিকে ইশারা করে নূরকে বলে উঠলো,
–“টেবিলে রেখে দাও।”
–“তুমি…”
নূর কিছু বলতে চাইলো।কিন্তু জোহান শুনলো না।নূর ধীর পায়ে ফ্ল্যাটে ঢুকলো।জোহানের ফ্ল্যাটে ড্রইং আর ডাইনিং রুম একসাথে।ডাইনিং এ বক্স রাখতেই নূর অনুভব করতে লাগলো তার শারীরিক কিছু সমস্যার পরিমাণ বাড়তে লাগলো। এই মুহুর্তে তার বসার প্রয়োজন।জোহান রান্নাঘরে ডাইনিং এর পাশে থাকা বেসিনে মুখ ধুয়ে চুলেও কিছুটা পানির ঝাঁপটা দিলো।নূর শুকনো মুখে জোহানকে বলে উঠলো,
–“তুমি কিছু মনে না করলে,আমি কি পাঁচ মিনিট বসতে পারি তোমার বাসায়?”
জোহান চোখ বন্ধ করে মাথা দুলিয়ে সায় দিলো নূরের কথায়।টেবিলে রাখা বক্স খুলে হাতে দুইটা পিঠা নিয়ে খাওয়া অবস্থায় জোহান নিজের রুমে গেলো।নূর ডাইনিং এর চেয়ারে বসে ব্যাগ থেকে বোতল বের করে পানি খেলো।তার তলপেট থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত অন্যরকম এক ব্যথা হামলে পড়েছে।নূর অস্থির হয়ে উঠলো।চোখ বুজে সে ব্যথা সহ্যের চেষ্টা করছে।জোহানের পায়ের শব্দে নূর চোখ খুললো।জোহান তার রুম থেকে বেরিয়ে অন্য রুমে যাচ্ছে।সেই হাফ প্যান্টের সাথে সে একটা শার্ট গায়ে দিয়েছে,যার সব বোতাম খোলা।নূরের সাথে জোহানের চোখাচোখি হওয়ার আগে নূর চোখ সরিয়ে নিলো।সে মনে মনে ভাবছে,
–“উফ,কেনো আজ বাসা থেকে বের হলাম আমি!কিন্তু,কি বা করার ছিলো;অন্যর পড়া আমি কিছুতেই বুঝি না। স্যার, ম্যামের বোঝানো পড়ায় শুধু আমার মাথায় ঢুকে।তাছাড়া এক দিক দিয়ে ভালো হয়েছে।এই তিতামুখীকে আজ ভালো মেজাজে লাগছে। এসেছি পর্যন্ত কোনো কড়া বলেনি সে আমাকে।আজ সব সত্যি তাকে জানিয়ে দিবো আমি।”
জোহান নূরের সামনে এসে কফিমেকারে কফি বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।নূর নিজের ব্যথার পরোয়া না করে জোহানকে বলে উঠলো,
–“আমি কিছু বলতে চাই।সত্যি সেদিন…!”
–“কিছু না বললে মাথায় উঠে যাস?সেদিন সেদিন…..
সেদিন যাক জাহান্নামে।তুই কেনো আমাকে বারবার সেদিনের কথা মনে করিয়ে দিস?আমার প্রতিহিংসা তোর বেশি প্রিয়?”
কথাটা শেষ করতে করতে নূরের বাহু ধরে তাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে নিলো জোহান।পেটে বেশ চাপ অনুভব করলো নূর।ব্যথায় তার প্রাণ যেনো এখনই দেহত্যাগ করবে।পায়ের ব্যথাটাও কেমন যেনো আঁকড়ে ধরলো তার সমস্ত শরীরকে।নূর মাথা নিচু করে চোখ বুজলো। জোহান থেমে নেই।সে নূরকে ঝাঁকিয়ে বলে উঠলো,
–“মুখ বন্ধ কেনো তোর?উত্তর দে?”

–“ব্য…ব্যথা লাগছে আমার!সরি,আর কখনো বলবো না।আমি ভার্সিটি যাবো।”
নূরের কণ্ঠ শুনে জোহান থমকে গেলো।একহাতে নূরের কোমর চেপে ধরে অন্যহাতে নূরের মুখ উপরের দিকে তুললো জোহান।নূরের মুখে চোখের জলের ছড়াছড়ি।জোহান অবাক হলো।নূর পরক্ষণে জোহানকে আবারও বললো,
–“একটু বসবো,প্লিজ। দাঁড়াতে ইচ্ছা করছে না।”
জোহান নূরকে বসিয়ে দিলো সাবধানে।নূরের মাথায় হাত রেখে জোহান অবাকের সুরে নূরকে প্রশ্ন করলো,
–“নুড়ি পাথর!কি হলো তোমার?কান্না করছো কেনো?আজ তো আমি ব্যথা দিলাম না।শুধু হাত চেপে…”
–“কিছু না।”
বিচলিত জোহান নূরের সামনে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললো,
–“আজিব তো!কিছু জিজ্ঞেস করলে বলো না কেনো?”
–“মেয়েলি সমস্যা।তুমি বুঝবে?বিরক্ত করছো কেনো শুধু শুধু?আমাকে দুই মিনিট বসতে দাও, আমি চলে যাবো এরপর।আর কখনোই আসবো না তোমার এই ঘরে।আর তোমার মেজাজও খারাপ হবে না আমাকে দেখে।”
নূর কান্নারত অবস্থায় বললো।
জোহান দাঁড়িয়ে পড়লো।কোনো কিছু না ভেবেই সে নূরকে জড়িয়ে ধরলো।নূরের মাথা জোহান এর পেটের সাথে লেপ্টে আছে।নূর জোহানকে ঠেলেও কোনো লাভ হলো না।জোহান মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নূর জোহানের শার্ট টেনে তাকে বলে উঠলো,
–“সরো,আমার যেতে হবে।আমি তোমার সামনে থাকতে চাই না আর।”
–“আজীবন থাকতে হবে।”
নূরকে ছেড়ে কথাটা বলে জোহান নূরের সামনে কিছু শুকনো খাবার এগিয়ে দিলো।তাকে সেগুলো খাওয়ার নির্দেশ দিয়ে জোহান নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলো।নূর সেই খাবারগুলো পুনরায় ঠিক জায়গায় রেখে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেলো।জোহানের করা অপমান এর কথা নূরের মাথায় কিলবিল করছে।লিফটের সামনে দাঁড়িয়ে নূর দেখলো লিফট এখন তেরো নাম্বার ফ্লোরে।নূরের চোখ ভিজে আসছে বারবার তার প্রতি জোহানের ব্যবহারের কথা ভেবে। দরজার শব্দে নূর পেছনে তাকিয়ে দেখলো জোহান দরজার লকে চাবি ঘুরিয়ে দরজা লক করছে।জোহানকে দেখে নূর সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালে জোহান নূরের হাত চেপে ধরলো,
–“পা কেটে গলায় ঝুলিয়ে দিবো?”
–“আমি সিঁড়ি দিয়ে যাবো।”
নূরের আহত কণ্ঠ।
–“এইদিকে ফেলে দিই?সবচেয়ে সোজা পথ।”
থাই গ্লাস লাগানো বড় জানালার দিকে ইশারা করে জোহান বললো নূরকে।নূর মুখে কিছু বললো না,তবে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে জোহানের হাত ছুটানোর চেষ্টা করছে।পাশের অন্য ফ্ল্যাট থেকে একজন ছেলে বেরিয়ে এলে নূর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।জোহান নূরের দিকে তাকিয়ে লিফটের সামনে আনলো তাকে।
–“আরে জোহান কে এই মেয়ে?”
জোহান চুপ।কোনো উত্তর দিচ্ছে না।কিন্তু নূর বলে উঠলো,
–“কেউ না আমি এই লোকের।”
–“তোর নাম ‘ জোহান ‘?তুই কেনো উত্তর দিচ্ছিস?”
জোহান চটে গিয়ে বললো।
ছেলেটা হাসলো মৃদু।
–“ইটস ওকে।ঝগড়া করবে না প্লিজ।”
কেউ কিছু বললো না। নূর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে মিথ্যা হাসলো বৈকি। তা দেখে জোহান রেগে নূরকে বললো,
–“তোর এই হাসি যেনো পরে কান্নার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়!”
নূর চুপ করে গেলো।মনে মনে সে বলতে লাগল,
–“তিতামুখীর মুখ দিয়ে শুধু তিতা বের হয়।কি খেয়ে যে আন্টি এই ছেলেকে দুনিয়ায় এনেছে আল্লাহ্ ভালো জানেন।”

লিফট আসলে তিনজন উঠে পড়লো লিফটে।

জোহানের হাত এখনো নূরের হাত চেপে আছে।জোহান কাউকে ফোন করে বললো,
–“গাড়ি কবে নাগাদ ঠিক হবে?
(অপরজন)
এখনো ঠিক হয়নি কেনো?
(অপরজন)
কাজ শেষ হলে অফিসে পাঠিয়ে দিবে গাড়ি।”
জোহান ফোন কেটে নূরকে বলে উঠলো,
–“বাইকে উঠতে পারবি?”
নূরকে জবাব দিতে না দিয়ে আবারও সে বখে লাগলো,
–“ওহ! উঠবি কিভাবে।সমস্যা নেই চলো।”
–“সবাই দেখছে,আজিব।আজ এতো অদ্ভুত ব্যবহার করছো কেনো?আমি চলে যেতে…”
–“সিএনজি ডাকো একটা।ঠিকানা আমি বলে দিবো।”
নূরের কথায় পাত্তা না দিয়ে জোহান ওয়াচম্যান কে বললো।
–“জ্বী স্যার।”
ওয়াচম্যান হেসে জবাব দিলো।
দুই মিনিটের মধ্যেই সিএনজি এসে পড়লো।নূরকে উঠতে বলে নিজেই ঠেলে সিএনজিতে তাকে বসিয়ে দিলো জোহান।এরপর নিজেও উঠে পড়লো সেটাতে।নূর অবাক হয়ে নানান বকবক করে যাচ্ছে।কিন্তু জোহান সেইসব কিছু আমলে নিচ্ছে না।এক পর্যায়ে নূর নিজেই চুপ করে গেলো।তবে,নূর একটা জিনিস বুঝছে না।আজ জোহান কিভাবে তার এতসব বকবক সহ্য করছে!

ভার্সিটির সামনে এসে সিএনজি থামলো। জোহান নেমে ভাড়া মিটিয়ে নেওয়ার সময় নূর সুযোগ বুঝে পালাতে চাইলো।কিন্তু তার অবাধ্য ব্যথাযুক্ত পা তাকে এমনটা করতে দিলো না।নূর জোহানের পাশে থাকা অবস্থায় পমেল এগিয়ে এলো তাদের দিকে,
–“আরে জোহান ভাইয়া,আপনি আজ ভাবীপার সাথে?”
নূর পমেলকে দেখে চিনতে পেরেছে।এই ছেলেটা কয়েকদিন ধরে নূরের বেশ কাছাকাছি ছিলো আর নূরের সবটাই যেনো বেশ ভালো পর্যবেক্ষণ করতো।জোহান যখন ভার্সিটি আসে না,তখন এই ছেলে যেনো আরো বেশি নজর রাখে নূরের প্রতি।এই ছেলে জোহানকে চিনে,এটা ভেবে নূর সেখানে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে।
–“আরে,রাস্তায় দেখি গাড়ির অভাবে আশাহীন ভাবে ছটফট করছিল তোমার ভাবীপা। তাই মানবতার খাতিরে তাকে ভার্সিটি অব্দি দিয়ে এসেছি।তুমি তো জানোই আমি অসহায় মানুষদের কষ্ট দেখতে পারি না।”
কথাটা বলে জোহান নূরের দিকে তাকালো।নূর চোখ রাঙিয়ে জোহানকে বলে উঠলো,
–“এতো বড় মিথ্যা?আর,এই ছেলে তুমি এতদিন আমার পেছনে পেছনে ছিলে আমি খেয়াল করেছি।কেনো ছিলে,হ্যাঁ?এতদিন জিজ্ঞেস করার সাহস পায়নি।আজ একটু সাহস আছে মনে,তাই জিজ্ঞেস করেছি।উত্তর দাও।”
–“উফ পমেল,তোমার চয়েস এতো খারাপ!এই মেয়ের পেছনে পেছনে ঘুরে টাইম নষ্ট করেছো তুমি তোমার।কি ঝগড়াটে মেয়ে এটা!এইসব মেয়ে একদম ভালো হয় না।”
জোহান বলে উঠলো।
–“কি সব বলছেন ভাইয়া!আপনার জন্যে…”
জোহান পমেলের মুখ চেপে ধরলো,
–“সমস্যা নেই,তোমার জন্যে ভদ্র মেয়ে আমি জোগাড় করে দিবো।”
জোহান দাঁতে দাঁত চেপে পমেলের দিকে তাকিয়ে বললো।
–“আমি ভালো মেয়ে।তুমি খারাপ,তুমি ঝগড়াটে।তুমি..
তুমি একটা তিতামুখী জোহান ভাই।”
নূর কথাটা বলে চলে যেতে লাগলো।
–“ভাবীপা কি আপনাকে চিনে?”
পমেল অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
–“আরে না,এই ঝগড়াটে মেয়ে আমাকে কিভাবে চিনবে?আর আমিও চিনি না মেয়েটাকে।কি বাঁচাল একটা মেয়ে দেখেছো তুমি!এই মেয়েকে আমি জাস্ট…”
নূর আর কিছু শুনলো না জোহানের বলা কথা।জোহানের কটু কথা শোনার কোনো ইচ্ছা নেই নূরের।

–“কি আপনি?”
পমেল পুনরায় প্রশ্ন করলো।
জোহান পমেলের মাথায় গাট্টি মেরে বললো,
–“তোমার মাথা।ঠিকভাবে নজরে রাখবে।ভুলভাল কিছু হলে কিন্তু সেই মাইর জুটবে কপালে।”
পমেল মাথা নাড়ালো।

অন্য এক সিএনজি ডেকে জোহান নিজের অফিসের জন্যে বেরিয়ে পড়লো। সিটে গা এলিয়ে দিয়ে জোহান মলিন মুখে আপনমনে বললো,
–“সেই মেয়েকে আমি ভালোবাসি, পমেল।অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। সে তো আমারই অনুরক্তি।তবে,তার ভুলের জন্যে আমার প্রতিহিংসার শিকার হয় সে বারবার।জানিনা কবে অতীত ভুলে তাকে এই প্রতিহিংসা থেকে মুক্তি দিতে পারবো আমি!অতীতের কথা মনে এলে আমার মাথায় কাজ করে না।শুধু কষ্ট পায় আমার নুড়ি পাথর।”
জোহানের হাতের মুঠ শক্ত হয়ে এলো।সিএনজির লোহার গ্রিলে জোরে ঘুষি দিয়ে জোহান চিল্লিয়ে উঠলো,
–“যতক্ষণ আমার মন থেকে অতীতের দাগ না উঠে যায়,ততক্ষণ আমার প্রতিহিংসা মূলক ভালোবাসা তোকে সহ্য করতে হবে,নূর।”

অন্যদিকে বাড়ির পথে রওনা দিয়ে নূর জোহানের কথা ভেবে যাচ্ছে।অতীতের সেই ঘটনার জন্যে জোহান এখনো নূরকে দোষ দিয়ে তাকে নানান কটু কথা শোনায় এটা নূর বেশ জানে।তবে,জোহানের প্রতি নূর বেশ দুর্বল।তাই জোহানের সব কটু কথা নূর সহ্য করে বারবার জোহানের সামনে যায়,কথা বলার চেষ্টা করে তার সাথে।আজকের ঘটে যাওয়া সব ঘটনা ভেবে নূর দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো,
–“খুব জলদি তোমার মনের সকল প্রতিহিংসা আমি দূর করে দিবো,জোহান ভাই।আমি শুধুই তোমার স্নেহময় অনুরক্তি হতে চাই।এর জন্যে আমার যা করতে হয়,আমি তাই করবো।”
জোহানের করা সকল তিক্ত অভিমান ভুলে নূর তার জোহান ভাইকে নিয়ে সুখময় কল্পনার জগতে ডুবে গেলো।নূরের এই ভালোবাসাময় কল্পনা যেনো জোহানের সব অপমান ভুলিয়ে দেয় নূরকে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here