#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর
#লেখা: জবরুল ইসলাম
#পর্ব_১৭
.
কথাটি তরুর ভীষণ ভালো লেগেছে। কিন্তু ভালো লাগলেই বুঝি হাত বাড়িয়ে দেয়া যায়? তরু মুখ ফিরিয়ে সরাসরি তাকাতেও পারছে না লজ্জায়। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। নির্জনের দিকে না তাকিয়ে ‘নুসরাত একা আছে, আমি গেলাম’ বলেই টিলার আড়াল থেকে বের হয়ে চলে যায়। নির্জন মুচকি হাসে। তারপর পাহাড়ের নিচের চা-বাগান ধরিয়ে একটা সেলফি তুলে নেয়।
*
ইশহাক সাহেব অফিসে যাওয়ার সময় হুস্নাকে ইশারা করলেন বাইরে আসতে। বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি থেকে খানিকদূরে দাঁড়ালেন। হুস্নাকে তিনি একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। সাবধানে আপডেট জানতে হবে এখন। কেয়াকে তিনি বহু আগে থেকেই সন্দেহ করেন। কার সঙ্গে যেন চ্যাট করে সে, কোথাও কিছু একটা আছে৷ কিন্তু সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারেন না। ফোন চ্যাক করতে পারেন না। সেদিন তন্ময় অফিসে এলো। কথায় কথায় জিমের বিষয়টা আনায় হুট করে মনে হলো, কোনোভাবে তন্ময়ের সঙ্গে কিছু নয়তো কেয়ার? পরক্ষণেই মনে হলো নাও হতে পারে। তবুও জিমের ব্যাপারটা মেনে নিলেন তিনি। সুন্দরী, তরুণী মেয়ে বিয়ে করেছেন। যতটুকু পারা যায় শারীরিক ফিট থাকাটা জরুরি। তাই জিমের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু কেয়ার রিলেশন নিয়ে তিনি খুবই চিন্তিত। এরকম কিছু থাকলে ও সংসারে মনযোগী হবে না। পিছুটান থেকে যাবে। কিন্তু এগুলো বের করারই বা উপায় কি? নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করেন সেটাও তো সবাইকে বলতে পারবেন না। তরু আর নির্জন শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পর ভেবেছিলেন কালপ্রিট যদি তন্ময় হয়। তাহলে ওরা এই সুযোগ নিবে। তাই হুস্নাকে বলেছিলেন। তিনি অফিসে থাকতেই বেশি আগে তন্ময় আসে কি-না দেখতে। এসে তন্ময় সিটিংরুমে না বসে কেয়ার রুমে যায় কি-না সেটাও খেয়াল করতে। কাজের মেয়েকেও এটা বলতে বিব্রতবোধ করেছিলেন। তবুও বললেন। হুট করে নিজের অজান্তেই কেন যেন তন্ময়ের দিকে সন্দেহটা দিন দিন গাঢ় হচ্ছে। হুস্না এসে পেছনে তাকিয়ে নিয়ে বললো, ‘জি চাচা বলুন।’
মেয়েটি বহু বছর থেকে এ বাড়িতে কাজ করে। উনাকে চাচা ডাকে৷ কথা বলে একদম শুদ্ধ বাংলায়। তিনি ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে দেখলেন সে গাড়ি মুছতে ব্যস্ত। তারপর আস্তে-আস্তে বললেন, ‘তন্ময় তো কাল আমি অফিস ফেরার অনেক আগেই চলে এসেছিল। কিছু কি টের পেলে?’
– ‘না চাচা, সিটিংরুমে বসে মোবাইল টিপছে শুধু।’
– ‘তাই না-কি? শিওর তুমি?’
– ‘হ্যাঁ, আমি তো চোখে চোখে রেখেছি৷ বারান্দা থেকে সরিনি।’
ইশহাক সাহেব হুস্নার বোকামি দেখে হতাশ হলেন। তারপর বুঝিয়ে বললেন, ‘তুমি এরকম দাঁড়িয়ে থাকলে তো যাবে না৷ তুমি কিচেনে চলে যাবে। যেন কিছুই খেয়াল করছো না। আর এভাবে শুধু দেখবে কেয়া আসে কি-না নিচে। এলে কি কথা বলে। তন্ময় ওর রুমে যায় কি-না। গেলে কতক্ষণ থাকে। এসব দেখবে। আর আমাকে ফোন দিয়ে জানাবে।’
কেয়া মাথা নাড়লো। ইশহাক সাহেব ওকে পাঁচশো টাকার একটি নোট দিয়ে বললেন, ‘অন্য কাউকে বলো না, কেমন?’
– ‘জি চাচা।’
ইশহাক সাহেব ওকে বিদায় করে গাড়ির দিকে চলে গেলেন।
*
ওরা ঘুরাঘুরি করে কোথাও কিছু খেতে আর যায়নি। নুসরাতই নয়টার দিকে সোজা বাড়িতে নিয়ে চলে এসেছে। তিনজনই ফ্রেশ হয়ে নাশতা করে নিল এসে। তরুর আম্মুও বিকালের দিকে বাড়িতে চলে যাবেন। তাই মা’কে সে আড়ালে একবার ডেকে নিল। একেবারে বারান্দার মাথায়। নাহেরা বেগম বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘কিরে, কি বলার জন্য এত আড়াল খুঁজতেছিস?’
তরু চারদিকে তাকিয়ে বললো, ‘আম্মা তোমাকে একটা বিষয় ফোনেই বলতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু কোনো ঝামেলা যদি হয় এটা ভেবে বলিনি। এখন সামনাসামনি বললে বুঝবে তুমি।’
– ‘কি হয়েছে বলতো।’
– ‘আর বলো না। আমি ওইখানে গিয়ে মহা বিপদে পড়েছি৷ কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। এদিকে তোমাদের কিছু বলতেও নিষেধ করছে নির্জন ভাই।’
– ‘মানে কি বলতেছিস এগুলো। কি করেছে ও?’
– ‘আগে শোনো, সমস্যা হলো কেয়া ফুপু। সে ওইখানে কিযে করছে। শুনলে অবাক হয়ে যাবে। যেন সে কোন দেশের এক জমিদারের মেয়ে….।’
– ‘ওর জামাইর বাড়ি জমিদারি করুক তোর কি তাতে?’
– ‘শুনবে তো আগে আম্মু।’
– ‘বল।’
– ‘নির্জন ভাই, ফুপা এবং তাদের ফুপু ছিল না? উনি সহ সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। মানে যা-তা করছে..।’
– ‘বুঝেছি তাতে তোর কি? তোর বিপদ কি এখানে? তুই পড়তে গিয়েছিস মন দিয়ে পড়বি।’
– ‘কীভাবে পড়বো, আমিও তো প্যাঁচে পড়ে গেছি।’
– ‘তুই কেন পড়বি? আর কেয়া এতকিছু করলে ওরা তো জানায়নি আমাদের।’
– ‘কিন্তু আমাকে নির্জন ভাই জিজ্ঞেস করছিল ফুপুর বিয়ের আগে রিলেশন ছিল কি-না।’
– ‘এগুলো কেমন কথা। সে এসব জিজ্ঞেস করবে কেন।’
– ‘ফুপুর আচরণ দেখেই আরকি জিজ্ঞেস করছে। ভাবছে জোরে বিয়ে-টিয়ে দেয়া হয়েছে কি-না। কিন্তু সে তো নিজের ইচ্ছাতেই বিয়ে বসছে।’
– ‘হ্যাঁ, কিন্তু তুই কি বললি রিলেশনের কথা। ওর তো এসব ছিল না।’
– ‘ছিল।’
– ‘পাগল না-কি, থাকলেও কেউ নিজের ফুপু বা বোনের বাড়ি এসব বলে?’
– ‘বলি নাই তো।’
– ‘ভালো করেছিস।’
– ‘ভালো করেছি বুঝলাম৷ কিন্তু ফুপু তো ভালো করছে না৷ খান পুরের আমাদের একজন স্যারের ছেলে ছিল তন্ময়। ওর সঙ্গে ফুপুর রিলেশন ছিল। ওই ছেলে এখন তাদের বাসায় যায়। বুঝতে পারছো ঘটনা?’
– ‘ও কীভাবে চিনলো। বোকার মতো কেউ বিয়ের পর প্রেমিককে বাসায় নেয়। দাঁড়া আমি ওকে কল দেবো একবার।’
– ‘না আম্মা, তুমি কল দিলে ওইখানে ঝামেলা বাঁধাবে। বলবে আমি না বললে তুমি জানলে কি করে। তাছাড়া নির্জন ভাইও যে বলেছে বাড়িতে এসব না বলতে।’
– ‘তাহলে তোর কি হয়েছে গাধি, তুই তোর নিজের পড়ায় থাক৷ কে আসছে, কে কি করছে তাতে তোর কি।’
– ‘আমি যে মিথ্যে বললাম ফুপুর কোনো রিলেশন ছিল না।’
– ‘তো এখন তুই ফুপুর বাড়ি পড়তে গিয়ে ওর বিয়ের আগের কাহিনি বলে বেড়াবে না-কি? শুধু গায়েগতরেই বড়ো হচ্ছিস তাই না..।’
– ‘এই তো তুমি শুরু করেছো৷ আমি তো বলি নাই ওকে।’
– ‘তাহলে তো হলোই, শেষ। তুই নিজের যে কাজে গিয়েছিস সেটায় থাক।’
তরু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘আচ্ছা থাক, তুমি দাদা-দাদি কাউকে এসব বলবে না। আব্বাকেও বলবে না।’
– ‘বলাবলির কিছু হয়নি।’
‘আচ্ছা’ বলে তরু মায়ের কাছ থেকে চলে এলো। ভেবেছিল জিজ্ঞেস করবে এখন কি করবে সে। কিন্তু বিষয়টা মা’কে বুঝাতেই পারছে না সে।
নির্জন আর তরু বের হলো দুপুরে গোসল করে খাওয়া-দাওয়ার পর। বাস-স্টেশনে আসতেই জোহরের আজান হয়ে গেল।
প্রখর সূর্যের আলোয় রাস্তা-ঘাট চিকচিক করছে। নুসরাতও সঙ্গে এসেছে তাদের বিদায় দিতে। নির্জন ওদের বাস কাউন্টারে বসতে বলে বাইরে এলো। নুসরাতকে কিছু একটা দিতে চায় সে। এই সময়ে কি দেয়া যায় ভেবে পাচ্ছে না। গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটি চুড়ির দোকান দেখে ঢুকলো সে। কোন কালার, কোন চুড়ি নিবে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ায় কয়েক রঙের বেশকিছু চুড়ি কিনে প্যাকেট করে নিয়ে চলে এলো। বাসও চলে আসার সময় হয়ে গেছে বলে কাউন্টার থেকে জানালো। নির্জন নুসরাতের সামনে গিয়ে বললো, ‘আপনাকে আমার কি যে ভালো লেগেছে বুঝাতে পারবো না। ভালো কিছু গিফট দিতে পারলে আমার খুবই আনন্দ হতো। হুট করে কিছু পেলাম না, তবুও সামান্য এই উপহার।’
নুসরাত হেসে বললো, ‘বাস চলে আসবে আর আপনি এই ঝামেলা করতে গেলেন?’
– ‘ঝামেলা কিছুই হয়নি, নিন।’
নুসরাত হাত বাড়িয়ে নিল। নির্জন এগিয়ে গেল বাস আসতে আর কতক্ষণ লাগবে সেটা জিজ্ঞেস করতে।
নুসরাত তখন তরুকে ফিসফিস করে বললো, ‘দেখেছিস? শালিকে আগে থেকেই গিফট দিতে শুরু করেছে। আর দেবেই না কেন। এরকম ভালো শালি আর পাবে..।’
কথাটি শেষ করার আগেই উরুতে তরুর চিমটি খেয়ে ‘উফ’ করে উঠলো। তরু আস্তে-আস্তে বললো, ‘কু*ত্তি, শালি শালি করছিস নিজেকে। উনার কাছে তোর কোন বোন বিয়ে দিয়েছিস?’
তরু উরুতে হাত বুলাতে-বুলাতে বললো, ‘বা*লের অভিনয় কম করো। সবই বুঝি।’
– ‘যা ভাবতেছিস তার কিছুই না।’
নির্জন ফিরে এসে বললো, ‘বাস চলে এসেছে। নুসরাত তাহলে যান, একা একা বাসায় ফিরতে হবে আপনার।’
– ‘সমস্যা নেই ভাইয়া।’
– ‘আপনি কিন্তু একদিন ঢাকায় যাবেন। তরু থাকতেই যাবেন।’
– ‘আচ্ছা দেখা যাক, এখন তাহলে আমি যাই।’
মাথা নাড়লো নির্জন। নুসরাত তরুকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
আজ বাসে উঠার আগে তরু মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়ে নিল। এক্সিডেন্টের কথা এখনও ভুলতে পারেনি। তাদের সিট পড়েছে মাঝখানে। তরু গিয়ে জানালার পাশে বসলো। নির্জন ব্যাগ রেখে পাশে বসে বললো, ‘নুসরাতের জন্য মন কেমন মন করছে।’
তরু নির্লিপ্তভাবে বললো,
– ‘ও আচ্ছা।’
নির্জন কপালের ঘাম মুছে বললো, ‘এত গরম বাবা।’ তারপর কিছু একটা মনে পড়েছে এরকম উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আসছি আমি।’
– ‘কোথায় যাচ্ছেন।’
কোনো জবাব না দিয়ে তাড়াতাড়ি নেমে গেল সে। গিয়ে একটা দোকান থেকে ঠান্ডা পানি, আচার, আইসক্রিম আর চুইংগাম নিয়ে এলো।
– ‘কি এটায়? এত পাগল হয়ে নেমে গেলেন।’
– ‘আচার আইসক্রিম এইসব। দু’জন বাসে বসেই থাকবো। খাওয়া যাবে।’
‘ও আচ্ছা’ বলে তরু বাইরে তাকিয়ে পুনরায় বললো, ‘শান্তিমতো বসুন। ঘেমে গেছেন।’
নির্জন ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘কিন্তু আমি তো এদিকে, বাইরে তাকিয়ে বলছো কেন?’
তরু মুচকি হাসলো কেবল। লজ্জা পাচ্ছে বুঝে ফেলায় মানুষটা আরও বেশি বেশি শুরু করেছে।
বাস ছেড়ে দিল তখনই। ফ্যানগুলো চলছে। পরিবেশটা ক্রমশই স্বস্তির হতে শুরু করলো। নির্জন পানি খেল এক চুমুক। তারপর অন্য আরেকটি বোতল বের করে তরুর পাশে রাখলো। চলতি বাসে মুখ লাগিয়ে খেতে হবে বলে আলাদা বোতল এনেছে। ধীরে ধীরে গরম একটু কমে আসায় সীটে হেলান দিল সে। তরু বুকে হাত বেঁধে বাইরেই তাকিয়ে আছে৷ মেয়েটি তার দূর্বলতা বুঝতে পেরেই কেমন যেন পালটে যাচ্ছে৷ লজ্জা পাচ্ছে তা স্পষ্ট। না-কি বিরক্তও হচ্ছে? কে জানে, বিরক্ত হলে খুবই খারাপ হবে ব্যাপারটা। ভাববে একই বাসে, একই সঙ্গে গিয়েছি বলে সুযোগে আজেবাজে কথা বলছে। সকালে হাত ধরার কথা বলার পর চলে যাওয়াটাকে কি হিসাবে নিবে সে? লজ্জা না-কি উপেক্ষা। লজ্জাই হবে। তাছাড়া তাদের মধ্যে সেরকম কোনো কথাবার্তা হয়নি। হাত ধরতেই বা দেবে কেন? তার তরু তো এত সস্তা হতে পারে না৷ শুধুমাত্র বিরক্ত না হলেই হলো, তাকে ভুল না বুঝলেই হলো।
– ‘তরু।’
– ‘হুম।’
– ‘এভাবে বাইরে তাকিয়ে বসে আছো কেন? ঘাড় ব্যথা করবে।’
– ‘আমি ঠিক আছি।’
এই কথাটিও তরু না তাকিয়ে বললো। ও আগেরদিনের ড্রেসটিই পরেছে৷ ওড়না কাঁধে। খোলা চুল পিঠে ছড়িয়ে আছে। তার ঠোঁটের আগায় যেন বারবার চলে আসতে চাচ্ছে, ‘বাদ দাও তো এসব অস্বস্তি, হেনতেন। কেন যেন এত ভালো লাগছে। আদর পাচ্ছে। আমাকে তোমার চুলে স্পর্শ করার, নাক ডুবানোর, কখনও কখনও হাত ধরার অধিকার দিয়ে দাও।’
তবুও সরাসরি কিছু কেন যেন বলতে পারছে না সে। সব সময় ফুল নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসেই বা বলতে হবে কেন? এভাবে তো সে পারবে না৷ কেমন একটা অস্বস্তিত ব্যাপার মনে হয়। তার কেবল ঘুরিয়ে-প্যাঁচিয়ে বুঝিয়ে দিতে মন চায়। তরু একটু মাথা নাড়লো। তারপর এদিকে মুখ ফিরিয়েই চোখ চোখ পড়ায় ফিক করে হেসে বাইরে তাকালো। মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে গেল এটা। নির্জন মুচকি হাসলো। এ কেমন লুকোচুরি খেলা? সে তরুর দিকে নিবিড় হয়ে বাসের গ্লাসে আস্তে-আস্তে ঠুকা দিয়ে বললো, ‘কি হয়েছে ম্যাডাম, এদিকে তাকিয়েই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে হাসলে কেন?’
– ‘কিছু না।’
নির্জন খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে সিটে হেলান দিয়ে বসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘তরু।’
– ‘বলুন।’
– ‘চোখে চোখ পড়লে লজ্জা পাচ্ছ?’
তরু হাসি হাসি গলায় বললো, ‘আপনি এভাবে তাকাবেন না৷ লজ্জা লাগে অনেক।’
– ‘আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি প্লিজ স্বাভাবিকভাবেই বসো। আমি তাকাবো না।’
– ‘এহ আমি একবার ফিরছিলাম দেখি তাকিয়ে আছেন।’
– ‘এখন নেই তাকিয়ে। স্বাভাবিকভাবে বসো।’
তরু সোজা হয়ে বসলো। নির্জন পানির বোতল বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘খাবে?’
মাথা নেড়ে না করলো তরু।
– ‘আইসক্রিম খাবে?’
না করলো তরু। নির্জন চুইংগাম বের করে দিয়ে বললো, ‘খাও।’
তরু হাত বাড়িয়ে নিতে চাইলে নির্জন সরিয়ে নিয়ে বললো, ‘প্লিজ যে হাতে নখ লম্বা।’
তরু মুচকি হেসে বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘বাঁ হাত ওটা।’
– ‘তবুও।’
তরু ওর দিকে না তাকিয়ে বাঁ হাত দিয়ে নিল চুইংগাম। তারপর বললো, ‘আপনিও খান।’
নির্জনও একটা চুইংগাম মুখে দিল। তরু এবার বাইরের দিকে না তাকালেও নিজের কোলে রাখা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
– ‘তরু।’
– ‘বলুন।’
– ‘তুমি লজ্জা পাচ্ছ না-কি আমার প্রতি বিরক্ত হচ্ছো? প্লিজ সত্য করে বলবে।’
– ‘আমি এতটাও লাজুক না৷ কিন্তু আপনি তাকিয়ে থাকলে কি করবো বলুন।’
– ‘ও তাহলে বিরক্ত হচ্ছো?’
– ‘মোটেও না। শুধু তাকাবেন না, তাকালে আমি আনইজি ফিল করি।’
‘ওকে ম্যাডাম’ আমি তাহলে এই চোখবন্ধ করে নিলাম। তুমি ইজি হও। তরু মাথা তুলে ওর দিকে তাকায়। সত্যিই নির্জন সিটে হেলান দিয়ে, বুকে হাত বেঁধে চোখবুজে আছে। সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে তরুর। মানুষটা এত ভালোবাসা নিয়ে তাকায়। তরু লজ্জায় কুঁকড়ে যায়। খানিকক্ষণ মনভরে দেখলো ওকে। তারপর ধীরে ধীরে নির্জনের কাঁধে মাথা রাখলো। নির্জন আঁতকে উঠার আগেই ফিসফিস করে বললো, ‘প্লিজ তাকাবেন না।’
– ‘কেন?’
– ‘এমনিই, শুধু আপনার ডান হাত দিন। আমি হাত ধরে এভাবে বসে থাকবো?’
নির্জন চোখবন্ধ রেখেই বললো, ‘তোমার কোন হাত থাকবে?’
তরু মুচকি হেসে ওর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বললো, ‘যে হাতের নখগুলো লম্বা।’
– ‘সত্যিই?’
– ‘হ্যাঁ।’
নির্জন তার ডান হাত বুক থেকে নামিয়ে কোলে রাখে। খানিক সময় পর তার আঙুলগুলোর ফাঁক গলে আরও পাঁচটি আঙুল ঢুকে গেল। তারপর তরু কানের কাছে ফিসফিস করে বললো, ‘শুনুন।’
– ‘বলো।’
– ‘আপনার কোনোকিছুতেই আমি বিরক্ত হই না। সবকিছুতেই ভীষণ মুগ্ধ হই।’
নির্জনের পুরো শরীর যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো।
____চলবে…….