পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার #লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী Part 4

#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part 4

রেহান ভাই নিধি আপুকে ভালেভাবে দেখে নিলেন।তারপর শান্তু গলায় প্রশ্ন করলেন,,,

“এই পেন্ডেন্টটা কোথায় পেয়েছো নিধি?”

নিধি আপু একবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“এটা মাম্মি আমাকে গিফট করেছে রেহান।অনেক এক্সপেন্সিভ। ”

রেহান ভাইয়ের মুখ দেখে মনে হলে না বিশ্বাস করেছে।তাতে আমার কি আমি তো শুধু দেখছি কিভাবে একজন মানুষ এভাবে মিথ্যা বলতে পারে।রেহান ভাই হনহন করে বেরিয়ে গেলো।আমি কিভাবে যাবো এই গলা নিয়ে তাই অর্পি আপুকে বললাম,,

“আপু তোমরা যাও আমি যাবোনা।”

তাহিন ভাইয়া বলল,,

“তুই না গেলে আমরাও যাবোনা।”

নিধি আপু এতোক্ষণে দাড়িয়ে সবটা দেখলেও এবার চলে গেলো।কে জানে কই গেলো।

আমি যাবো না। না না বলছি এমন সময় তাহিন ভাইয়ার ফোনে একটা ফোন এলো।তাহিন ভাইয়া কথা বলতে সাইডে গেলো।

“দেখ মিথি তুই যদি না যাস আমি আর তাহিন ভাইয়াও যাবোনা।”

“কিন্তু আপু এই গলা নিয়ে কিভাবে যাবো?দেখো কি পচা লাগছে।”

“এবার আর পচা লাগবে না। দেখি চুলগুলো ধর।”

কথাটা বলে তাহিন ভাইয়া আমার গলায় একটা নেকলেস পড়িয়ে দিলো।

“নেকলেস টা অনেক সুন্দর মিথি ওয়াও।আর দেখ এটার জন্য তোর গলার দাগ টাও দেখা যাচ্ছে না।”

আমি অর্পি আপুর কথায় আয়নার সামনে গেলাম।আর দেখলাম সত্যি দাগটা দেখা যাচ্ছে না।

অর্পি আপু বলল,,

“এবার তো আর কোনো প্রবলেম নেই আমাদের সাথে যেতে।চল।”

বলে এক প্রকার টেনেই আমাকে নিয়ে এলো। পার্কিং এ এসে দেখি নিধি আপু ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে আছে।
আজ রেহান ভাইয়া নিজে আমাদের ড্রাইভ করে নিয়ে যাবে বলেছে।আর তাই নিধি আপু এটা করলো।।

আমার কি আমি গিয়ে পিছে বসতে নিবো এমন সময় তাহিন ভাই গিয়ে বসে পরলো আর অর্পি আপুকেও হাত ধরে বসিয়ে দিলো।এখন আর একজন বসতে পারবে। আমি আসতে নিলেই রেহান ভাই তার গিটারটা সিটে রেখে দিলো।

এটা দেখে নিধি আপু বলে,,

” যাহ মিথি কি হলো এটা?ইসস তোমার তো যায়গা নেই। থাক তুমি বরং রুমে গিয়ে পড়ো।আর আমরা এসে তোমাকে গল্প বলবো।”

বিদ্রুপ করেই কথাটা বলল আমাকে নিধি আপু।আমার কান্না পেলো।এভাবে টেনে এনে এখন এমন করা হচ্ছে।প্রায় কান্না করে দিবো এমন করে ফেলেছি মুখ। তখনই দেখি ড্রাইভার আঙ্কেল গাড়িতে ঢুকছে।

নিধি আপু কিছু বলতে নিবে তার আগেই তাহিন ভাই বলল,,,

“রেহান অন্য গাড়িতে যাবে এখানে ওর যায়গা হবে না।ড্রাইভার আঙ্কেল চলুন।”

ড্রাইভার আঙ্কেল গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আমি বুঝলাম এটা চরম অপমান করা হলো আমাকে।অর্পি আপু,তাহিন ভাইয়া, রেহান ভাই সবাই আমার সাথে এমন করলো।আমি তো যাবো না বলেছিলাম তাহলে জোর করে এনে আমাকে রেখে চলে গেলো কেন?.।

ছলছল চোখে লিফ্টের দিকে যেতেই একটা বিএমডব্লিউ গাড়ি এসে সামনে দাড়ালো। আমি পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে গাড়ির দরজা খুলে রেহান ভাই বের হলো।

” গাড়িতে বস সারা।”

“না আমি আপনার সাথে যাবো না।”

” ওকে তোকে রেখে চলে যাই।আমার সমস্যা নেই কিন্তু বাসায় একা থাকতে পারবি?পাশের ফ্ল্যাটের লামিম কিন্তু তোর দিকে বাজে নজরে তাকায় এখন একা থাকবি দেখলে কিন্তু…বুঝতেই পারছিস ”

আমি অসহায় চোখে তাকালাম রেহান ভাইয়ের দিকে।রেহান ভাই এক লুক নিয়ে ফোন দেখছে।
আমি চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে উঠলাম।
__________________________________

রেহান ভাই ড্রাইভ করছে।আর আমি বসে বসে ভাবছি,,

” যাক ভালো হয়েছে বাসায় ওই আজব ভুতটা আমার সাথে আর কথা বলার সুযোগ পাবেনা।আর না আমাটর রুমে গিয়ে আমাকে পাবে।কিছুক্ষণ শান্তিতে থাকা যাবে।”

বাহিরে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।ঠান্ডা বাতাস বইছে। এক অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।বাতাসে আমার চুল গুলো উড়ছিলো হঠাৎ গাড়ি খুব জোড়ে ব্রেক করলো রেহান ভাই।আমি ভয় পেয়ে তাকালাম।দেখি আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে রেহান ভাই।

“তুই কি চুল সামলাতে পারিসনা সারা?কি সমস্যা তোর এভাবে তো এক্সিডেন্ট হবে।”

আমি দেখলাম সত্যি আমার চুলগুলো উড়ে রেহান ভাইয়ের মুথে পড়ছে।আমি তারাতাড়ি রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল গুলো বেধে নিলাম।

রেহান ভাই গাড়ি স্টার্ট দিলো।চুপচাপ বসে আছি রোবটের মতো।আজব কই যাচ্ছি?এটা তো জিজ্ঞেস করিনি অর্পি আপুকে? শপিং এ গেলে তো এতো সময় লাগার কথা না।এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যানো ঘুমিয়ে গেছি।

চোখ খুলি রেহান ভাইয়ের ডাকে।পিট পিট করে তাকিয়ে দেখি আমি রেহান ভাইয়ের কাধে মাথা রেখে আছি।তারাতারি করে সরে এলাম।

“কি ঘুম তোর বাবারে সারা এতো কে ঘুমায়? কুম্ভকর্ণকেও হার মানাবে তোর ঘুম।”

রাগ হলো আমার রেহান ভাইয়ের কথা শুনে।কিছু বললাম না কারন এখন বকা খেতে চাইনা।

রেহান ভাই আবারো বলে।

“তুই কি গাড়ি থেকে নামবি না?নাকি তোকে রেখেই বাসার ভিতরে যাবো?”

“চলে এসেছি আমরা?”

“হুম”

আমি তারাতাড়ি করে গাড়ি থেকে নামলাম।এটা একটা রিসোর্টের মতো লাগছে। এখানে কেনো এলাম?আজব।

“এতো না ভেবে ভিতরে চল।আম্মু ওয়েট করছে যতসব।”

রেহান ভাই ভিতরে চলে গেলো।আমি থ আমাকে না নিয়েই গেলো আমি কি করলাম আবার।
ভাবতে ভাবতে ভিতরে যেতেই ফুপির সাথে দেখা।
ফুপি আমাকে দেখে বলে,,

“কি রে মিথি এতো সময় লাগে তোদের আসতে।যা ফ্রেস হয়ে নে।অনেক কাজ।কাল গায়ে হলুদ।”

“কার গায়ে হলুদ?”

“আমার ছোট বেলার বান্ধবী রিনার মেয়ের।”

“ওহহ।”

“হুম যা ফ্রেস হয়ে আয়।”

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।তখনই অর্পি আপু এসে বলল,,

“মিথি তুই আমি আরও কিছু কাজিনরা মিলে একসাথে থাকবো।তোর সমস্যা আছে? ”

আমি না বললাম।

“ওকে চল রুম দেখিয়ে দেই তোকে।”

“হুম”
_____________________________________

শাওয়ার নিয়ে নিলাম।নীল রঙের একটা থ্রি পিস পড়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গেলাম।।
মনে মনে বেশ খুশি আমি।কেননা ওই ভুতটার থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি।চুল মুছে কপালে কালো ছোট টিপ পড়লাম।

রুমের লাইট অফ হয়ে গেলো হঠাৎ করে!

ঘরে আমি ছাড়া অন্য কারোর উপস্থিতি টের পাচ্ছি। ভয় করছে।কে হতে পারে? এখানে তো আর ওই ভুত আসতে পারবে না।
হঠাৎ এক আওয়াজ পেলাম কেউ কথা বলছে।

” কি ভেবেছিলে সারা তোমার ভুত তোমাকে একা ছারবে? নাহ তা কখনো হবে না।তুমি যেখানে তোমার ভুতও সেখানে।”

“কককে আপনি?” ভয়ে ভয়ে বললাম।

“আমি তোমার মিস্টার ভুত।”

“ফান করছেন?এসব কোন ধরনের কথা?আমি আপনাকে চিনিনা কে আপনি?”

“হুসসস দেখি ”

বলে উনি আমার সামনে এলেন মাক্স পড়া।গলায় মেডিসিন লাগিয়ে দিলেন জলছে।চোখ বন্ধ করে নিলাম।

“একটু কষ্ট সহ্য করো।যার জন্য তোমার এই অবস্থা তার কি হয় দেখো।”

ওনার কথায় রাগ প্রকাশ পাচ্ছে? আমার কেমন এক অজানা ভালো লাগা কাজ করছে।কেউ আমার জন্য ভাবছে।আমার জন্য এতো রিস্ক নিয়ে এখানে এসেছে।এটা তো সিউর উনি মানুষ কিন্তু কে সেটা জানা দরকার।।

আমার ভাবনার মাঝেই বাহির থেকে এক গগন বিদায়ক চিৎকার কানে এলো।আমি দরজা খুলে বের হতে নিলে সে আমার কানের কাছে এসে বলে,,

“নাও তোমাকে কষ্ট দেওয়ার প্রথম শাস্তি সে পেয়ে গেছে।”

আমি দরজা খুলে বের হয়ে দেখলাম সবাই এক রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।এটা তো আমি সিউর যে এটা নিধি আপুর রুম। কারন মিস্টার ভুতের কথায় এটাই বুঝায়।আমি ভিথরে উকি দিয়ে দেখি,,

কা/চ ভেঙে নিধি আপুর পুরো হাত কেটে গেছে।আমি থ হয়ে সবটা দেখছি।
অর্পি আপু বলল,,

” ঠিক হয়েছে ব/জ্জা/ত মেয়ে একটা।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম অর্পি আপুকে,,

“কি হয়েছে আপু?”

“নিধির রুমে একটা বড় কাচের বাটির মধ্যে দুধ আর গোলাপের পাপরি দিয়ে সাজানো বাটি কে যানো রেখে গেছে।আবার সেই বাটির মধ্যে একটা ডায়মন্ড রিং ও নাকি ভাসছিলো।নিধি লোভ সামলাতে না পেরে ওটা নেয়ার জন্য বাটিতে হাত দিতেই বিদ্যুৎ এর শক খায় + কা/চ হাতে ঢুকে যায়।”

অর্পি আপু কথাটা বলে আমার পাশ থেকে চলে যায়।আর আমি অবাক হয়ে যাই এতোটা নৃশংস ভাবে কে করলো এই কাজ।কে এই ভুত আজব।
আচ্ছা রেহান ভাই কই?ওনার গার্লফ্রেন্ডের এতো বাজে অবস্থা ওনি কই গেছে?।

চলবে…!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here