পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার #লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী Part 3

#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part 3

আমি বুঝতে পারছি না কে রেখে গেলো এগুলো এখানে?তার মানে কি সত্যি এখানে কেউ এসেছিলো?কে আসবে, কে বা এগুলো আমাকে দিবে।এসব ভাবতে ভাবতে মুখ ধুয়ে রুমের বাহিরে গেলাম।আমি রুম থেকে বেরিয়েই দেখি নিধি রেহান ভাইকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমাকে দেখে ছেড়ে দিলো।আমি কিছু না বলে ওদের পাশ কাটিয়ে আসার সময় নিধি বলে,,

“তুমি ঠিক আমাদের পারসোনাল মোমেন্টেই আসো কেন?কি সমস্যা তোমার?”

“আপনারা বাসার মধ্যে যেখানে সেখানে এভাবে রোমান্স না নিজেদের রুমে গিয়ে করুন।তাহলেই তো আমি ডিস্টার্ব করতে যাই না।”

আমার কথা শুনে রেহান ভাই বেশ রেগে গেলেন।আমার সামনে এসে বললেন,,

“বেশি পাকা পাকা কথা বলিস না সারা।এতো বেলা করে ঘুমাচ্ছিলি আবার এখানে এসে নিধিকে কথা শুনচ্ছিস!বাহ বাসাটা তো আমার না তোরই।”

তাছ্যিলের সুরে কথাটা বলল রেহান ভাই।আমার কান্না পেলেও সেটা আটকে ওখান থেকে চলে এলাম।সোজা অর্পি আপুর রুমে।
অর্পি আপু পড়ছিলো
আমাকে দৌড়ে আসতে দেখে আমাকে জিগ্যেস করে কি হয়েছে।

“তুই কাদছিস কেনো মিথি? কি হয়েছে বলতো?বড় ভাইয়া আবার কিছু বলেছে তোকে?”

“না আপু কিছু না।আমি তোমাদের বাসায় থাকি বলে তোমাদের প্রবলেম হচ্ছে তাই না?”

“না মিথি কি বলছিস এসব?এমন কিছুই না।তাহিন ভাইয়া আসলে আমি বলবো তোকে নিয়ে ঘুরতে যেতে।তুই পড়ার মাঝে ডুবে থেকে যতো ফালতু চিন্তা মাথায় আনছিস।”

“তাহিন কে আপু?”

“রোহান ভাইয়া।ওর নাম তাহিন চৌধুরী রোহান।রেহান ভাইয়ের নামের সাথে ওর নাম গুলিয়ে ফেলি বলে ওকে আমি তাহিন বলে ডাকি।”

“ওহ”

“হুম ”

অর্পি আপুর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। ভাবলাম আপুকে বলবো নেইলপালিশের কথা।কিন্তু কি ভাবে বলবো?যদি বিশ্বাস না করে তাই চুপ করে আছি।রাতে খাওয়া দাওয়া করে আমি ফুপির রুমে গেলাম।

“আরে মিথি আয় বস।”

আমি গিয়ে ফুপির সামনা সামনি বসলাম।ফুপি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মিথি নিধিকে কেমন লাগে তোর?”

“কেন ফুপি যেমন লাগার তেমনই লাগে।”

“আহা আমি যেকথা বলিনাই। রেহান বউ হিসেবে ওকে কতোটুকু মানাবে তাই বল।”

মামির কথা শুনে আমি কি বলবো ভেবে পাইনা।কারন নিধি একটা বাজে মেয়ে।কোনো দিক দিয়েই রেহান ভাইয়ের সাথে যায়না।আর না যায় এই ফ্যামিলির সাথে।আঙ্কেল মেনে নিবে না কখনো নিধিকে এটাও আমি জানি তবুও চুপ করে রইলাম।আমাকে চুপ থাকতে দেখে ফুপি আবারো আমাকে জিজ্ঞেস করে,,

“কি হলো বল”

“হুম ফুপি ভালো মানাবে। কিন্তু আঙ্কেল কি রাজি হবে?”

“তুই আছিস রাজি করাবি। তোর আঙ্কেল তো তোর সব কথা শুনে।”

আমি ফুপির কথা শুনে কি বলবো ভাবছি।কারন আঙ্কেল কে রাজি করানো এতোটাও সহজ নয়।
ফুপির সাথে আরও কিছুক্ষণ গল্প করে ফুপিকে ঘুমাতে বলে রুম থেকে চলে এলাম।আঙ্কেল বাসায় নেই একটা কাজে ঢাকার বাহিরে গেছে।বাসার সব লাইট অফ করে দিলাম।বারান্দায় আছে রেহান ভাইয়ের রুমের সামনে। চাদের আলোতে পুরোটা আলোকিত হয়ে গেছে। পুর্নিমার চাদের আলো একেই বলে।আমার খুব রেহান ভাইয়ের কথা মনে পরছে।ছোট বেলায় আব্বু আর ফুপি মিলে ঠিক করেছিলো আমার আর রেহান ভাইয়ের বিয়ে দিবে বড় হলে।কিন্তু বড় হতে হতে কাহীনিটা পাল্টে গেলো।রেহান ভাই দেশের বাহিরে চলে গেলেন।ভুলে গেলেন আমাকে।হয়তো আমার কল্পনার রেহান ভাইকে আর কখনোই পাবো না।বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমের দিকে পা বারালাম।

আমি রুমে ঢুকতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। হয়তো বাতাসে তাই আর অতো পাত্তা দিলাম না।আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমার রুমে কেউ আছে।ভয় লাগছে। আমি ধীরে ধীরে লাইটের সুইচ অন করলাম কিন্তু লাইট অন হলো না।তখনই কানে এলো গিটারের আওয়াজ। সুন জারা গানের টিউনটা বাজছে।আমার ভয় লাগছে। আবার কেমন একটা মনে হচ্ছে এটা আমার চেনা কেউ। চাদের চলোতে রুমটা যথেষ্ট আলোকিত হয়েছে।মনে হচ্ছে কেউ আমার দিকে এগিয়ে আসছে।তার গায়ের পারফিউমের স্মেইলটা পাগল করার মতো।আজব বিষয় আমার এখন ভয় করছে না।সে এসে আমার পিছনে দাড়িয়েছে। তার নিশ্বাস আমার ঘাড়ে পরছে।
আমি কাপছি। মনে হলো আমার গায় সে কিছু একটা পড়ালো।পরিয়ে ঘারে কিস করলো আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।তারপর খেয়াল করলাম আর কারো রুমে থাকার আভাস পাচ্ছি না।আর লাইটও জ্বলে উঠেছে।আমি আয়নার সামনে গিয়ে দেখি ডায়মন্ডের পেন্ডেন্ট। কে দিলো। আমার সাথে এসব কি হচ্ছে।কিছুই বুঝতে পারছি না।ধুর খুলে ফেলি।খুলতে নিলে বেডে দেখি একটা কাগজ।তাতে লেখা “এটা যদি গলা থেকে খুলা হয় তাহলে ব/ডি থেকে মাথা আলাদা করে দিবো।”

এ কেমন ভয়ানক কথা।নাহ কালকেই বলবো অর্পি আপুকে এই বাসায় ভুত আছে। আমি গিয়ে চুপচাপ সুয়ে পরলাম।ভয়ে ভয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝিনি।

পরের দিন একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠলাম কেননা কলেজ অফ ছিলো।উঠে ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম।ফুপি আমাকে দেখে বলল,,

“মিথি আমি এক বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছি। তুই খেয়াল রাখিস বাসার।”

আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।অর্পি আপুর রুমে গেলাম দেখি আপু নেই।আপুর রুম থেকে বের হতেই দেখি নিধি আপু দাড়িয়ে আছে।

“কি ব্যাপার মিথি তুমি এভাবে ঘুরছো কেনো?”

“সেটার কৈফিয়ত কি আপনাকে দিবো আমি?”

“বেশি হয়ে যাচ্ছে না মিথি রেহানের বকা টা ভুলে গেলে?অবশ্য তোমার মতো মিডেল ক্লাস মেয়েরা তো এগুলো ই পারে লজ্জাহীন।যতসব।”

আমি কিছু বলতে নিবো তার আগে আমার গলার পেন্ডেন্টের দিকে হাত বারায় নিধি আপু।

“কার থেকে চুরি করলে এটা মিথি? এক্সপেন্সিভ অনেক।।”

“চুরি করবো কেনো আপু।”

“তো কই পেলে? ”

আমি কি জবাব দিবো আমি যদি সত্যিটা বলি তবে নিধি আপু বিশ্বাস করবে না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে এক টান দিয়ে গলা থেকে পেন্ডেন্টটা খুলে নেয় নিধি আপু।ভিষন ব্যাথা পেয়েছি আমি কান্না চলে এসেছে একেবারে।

“এতে দামি জিনিস তোমার গলায় মানায় না।এটা আমার।”

বলে চলে গেলো নিধি আপু।আমার গলায় ভিষন ব্যাথা করছে ওভাবে টান দেওয়াতে।রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দরজার কাছেই বসে হাটুতে মুখ গুজে কান্না করতে থাকলাম।

_______________________________________

বিকেল ৫টা অর্পি আপু জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।আমি গলায় ভালো করে ওরনা পেচিয়ে দরজা খুললাম।

“কি রে মিথি তোকে সকাল থেকে দেখছি না কেন?”

“না মানে আপু পড়ছিাম।”

“ওহ।তোর চোখ মুখ দেখে এমন কেনো লাগছে যে কান্না করেছিস তুই!”

“আরে না আপু”

“হুম। আচ্ছা এই নে। ”

বলে আপু আমার হাতে একটা ব্লু কালারের গাউন দিলো।বলল তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিতে।আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই চলে গেলো।
আমি রেডি হয়ে নিলাম।কিন্তু গলার দাগটা দেখা যাচ্ছে।কালো হয়ে আছে।আমি ওরনা পরে নিলাম।তারপর রুম থেকে বেরুতেই দেখি।রেহান ভাইয়া,তাহিন ভাইয়া,অর্পি আপু দাড়িয়ে আছে।আমাকে ওরনা পরে থাকতে দেখে তাহিন ভাইয়া বলে,,

“কি রে মিথি গাউনের সাথে কেউ ওরনা পরে নাকি”

তাহিন ভাইয়ার কথায় রেহান ভাই আমার দিকে তাকায়।এতোক্ষণ ফোনে নজর ছিলে ওনার।
আমাকে দেখে বলে,,

“ক্ষেতকে এসব ড্রেস না দিলেই নয় অর্পি।এতো সুন্দর গাউনটার সুন্দরর্য নষ্ট করে দিলো।”

রেহান ভাইয়ার কথায় অর্পি আপু আমার কাছে এসে বলে,,

“মিথি খোল তো ওরনা।”

বলে একটানে ওরনা সড়িয়ে দেয়।আর গলার দাগটা দৃশ্যমান হয়।অর্পি আপু বলে,,

“মিথি কি হয়েছে ওর গলায়।?দেখে মনে হচ্ছে কেউ টান দিয়ে কিছু খুলে নিয়েছে কালো হয়ে আছে।”

আমি ভয়ে কি বলবো বুঝতে পারছি না।রেহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি।রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।তখনই ওখানে নিধি আপু উপস্থিত হলো।শর্ট ড্রেস পরেছে।সাথে গলায় ওই পেন্ডেন্টটা।এসে রেহান ভাইকে জড়িয়ে ধরতে এলে হাত দিকে আটকে দেয় রেহান ভাই।
তারপর ভালে করে দেখে নিধি আপুকে।রেহান ভাইয়ের চোখ আরও ভয়ংকর লাল হয়ে যায় রাগে।সাদা শার্ট ব্লাক জিন্স চুলগুলো কপালে এসে পরছে কিউট লাগছে তবে এখন ভয়ংকর লাগছে বেশি।

চলবে…!!

(নিন আপনাদের কনফিউশান দূর করে দিলাম। দুজনের নাম আলাদা করে দিছি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here