#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part:10
চোখ খুলে মাথা ধরে উঠে বসলাম।তখনই কফির মগ সামনে ধরলো কেউ।তাকিয়ে দেখি আদ্রিয়ান।
আমি বুঝলাম না কিছু। তাই নিজে থেকেই বলে ফেললাম,,
“আপনি?এখানে?আমি কই?”
“রিলাক্স। নাও কফিটা খাও তারপর বলছি।”
আমি উনার হাত থেকে কফিটা নিলাম।উনি আমার সামনে বসে আমার মাথায় হাত রাখলো সম্ভবত জ্বর আছে কি না সেটা চেক করলো,,
“এখন অনেকটাই সুস্থ আছো।আর মেডিসিনের ইফেক্ট ও কেটে গেছে।”
“আমি কিছু বুঝতে পারছি না!আমি এখানে কিাভাবে আর আপনি?তখনের লেকটা কে ছিলো?”
“সারা তুমি মনে হয় কোনো সপ্ন দেখেছো এখানে আমি ছাড়া আর কেউ নেই।”
“মিস্টার ভুত ছিলো আমি দেখেছি।”
“সারা তুমি সপ্নই দেখেছো দেখো আমি ছাড়া কেউ নেই এখানে।”
“কিন্তু ”
“কোনো কিন্তু নাই।তুমি কতো বড় বিপদে পড়েছিলে জানো?আমি যদি তোমাকে না সেভ করতাম তবে কি হতো আজ ভাবতে পারছো।”
“হয়তো থাকতাম কোনো বাজে যায়গায়।কিন্তু আপনি আমাকে কিভাবে পেলেন।”
“আমি একটা কাজে ওই রিসোর্টের পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম।তখন কিভাবে যেনো এক পলক তোমায় দেখতে পারি পুলিশকে কল করে আমি তোমাকে সেভ করে আনি।”
“ওহহ।”
“হুম।আর তুমি এখন বাংলাদেশে না।সুইডেনে আছো।ওরা তোমাকে ড্রা/গ দিয়েছিলো যার জন্য তোমার ক্ষতিও হতে পারতো তাই তোমাকে এখানে আনা।”
“আমি বাসায় যাবো।”
“হুম নিয়ে যাবো।আমার কিছু কাজ আছে ২,৩ দিনের মধ্যে সেটা শেষ করে নিয়ে যাবো।এখন রেস্ট করো।”
বলে আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই রুম থেকে চলে যায় আদ্রিয়ান।আমি এখানে ২,৩ দিন কিভাবে থাকবো।আম্মু বাবা নিশ্চয়ই চিন্তা করছে।
________________________________________
ড্রইং রুমের সোফায় ল্যাপটপের সামনে বসে আছে আদ্রিয়ান।
“সরি সারা মিথ্যা আমি বলতে চাইনি।তবে না বললে তো তুমি থাকতে না।আমি আর যাই করিনা কেনো তোমার উপর রাগ দেখাতে পারিনা। এখন শশুর শাশুড়ীকে রাজি করাতে হবে।আর তার আগে একটা কাজ আছে সেটা করবো।ততদিন আমার কাছে থাকো।”
“স্যার আপনার কফি।”
” রাখো”
সার্ভেন্ট কফি রেখে চলে গেলো।আদ্রিয়ান কফির মগে চুমুক দিতে দিয়ে কাকে যেনো ফোন দিলো,,
“হ্যালো।”
“হুম বলো বাসায় কি তুমি আসবা না?”
“আসবো আম্মু রাগ করে না।”
“প্রায় দেড় বছর ধরে তুমি দেশের বাহিরে। আসছো না কেনো বলবে?”
“আসবো আম্মু।খুব শিগগিরই। ”
“আচ্ছা।”
“হুম।”
আদ্রিশান ওর আম্মুর সাথে কথা বলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আদ্রিয়ানের আম্মু জানেনা আদ্রিয়ান মাঝে বাংলাদেশ গিয়েছিল।
_______________________________________
বাংলাদেশ,,
তাহিন ব্রেকফাস্ট করছে। তাহিয়ের বাবা খবরের কাগজ পড়ছে।তখনই মন ম/রা হয়ে ওখানে তাহিনের মা এলো,,
“তুমি কি সত্যি একবারো যাবেনা ছেলেটার কাছে।”
“না।যে ছেলে ওমন কাজ করতে পারে তার কাছে আমি যাবোনা।না জানি মিথি মা কই আছে। কি করেছে তোমার ছেলে ওর সাথে।
“আমি বলছি আমার ছেলে এমনটা করতে পারেনা।নিশ্চয়ই ওই মিথি ওকে ফাসিয়েছে।”
“আম্মু মিথি কিন্তু এই শহরে নতুন। ও জানবে কিভাবে বডারের কাছে ওমন একটা রিসোর্ট আছে ”
অর্পির কথায় রেগে গেলেন তার মা।
“তো তুই কি বলছিস যে তোর ভাই-ই এসব করেছে।একটা বাহিরের মেয়ের জন্য তোরা আমার ছেলেটাকে দোষ দিচ্ছিস। ”
“দোষ করলে বলতে তো হবেই। আর মিথি তোমার ভাগ্নি।
“ঠিক আছে তোদের কারোর হেল্প লাগবেনা আমার।আমি নিজেই আমার ছেলেকে ছাড়াতে পারবো।”
বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো রেহানের মা।
তাহিন আর ওর বাবা খেয়ে অফিস গেলো আর অর্পি ভার্সিটি।
______________________________________
আমি পা টিপে টিপে নিচে এলাম।না আদ্রিয়ানকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। আচ্ছা আমি কি সত্যি সপ্ন দেখলাম।কিন্তু আমি তো …
“একি এভাবে দাড়িয়ে কি ভাবছো?”
“ননা কিছু না।”
“এসো বসো। ”
সোফায় বসে কথা গুলো বলল আদ্রিয়ান।
আমি গিয়ে ওনার পাশে বসলাম।
সাদা শার্ট ব্লু জিন্স। কানে ব্লুটুথ হেডফোন লাগিয়ে ল্যাপটে কাজ করছেন উনি।চুলগুলো কপালে খেলা করছে।বেশ কিউট লাগছে।
আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,,
“কি হলে?কিছু বলবে?”
“হ্যা।মানে…”
“বলো।”
“আমি আম্মুর সাথে কথা বলবো।আর দেশে যেতে চাই।”
উনি আমার দিকে উনার ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,,
“কয়েকটা দিন ওয়েট করো আমি কথা দিচ্ছি নিজে তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। আর নাও ফোন আন্টির সাথে কথা বলো,।”
“হুম।”
উনি আবারো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
আমি আম্মুকে ফোন করলাম।আম্মু খুব নরমাল ভাবেই কথা বলল।তার মানে আম্মু জানেনা কিছু।আমিও আর জানালাম না।চিন্তা করবে।
কথা বলে ফোনটা ওনাকে দিয়ে রুমে এসে পরলাম।
চুল গুলো সরিয়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছি।তখনই মনে হলো কেউ এসেছে।দেখি একজন সার্ভেন্ট।
“ম্যাম স্যার এই জুসটা আপনাকে দিতে বলেছে।”
“আচ্ছা ওখানে রাখুন।”
“ওকে।”
জুস রেখে সার্ভেন্ট চলে গেলো।কিছুক্ষন পর।
বরিং লাগছে।তাই আমি গিয়ে ওনার পাশের সোফায় বসে পড়লাম।তখনই বেল বেজে উঠলো। উনি গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।কারন লাস্ট বছর যার বিয়েতে গিয়ে আদ্রিয়ানের সাথে দেখা হয়েছিলো।ওই ভাইয়াটা আর তার বউ এসেছে।
ভাইয়াটা এসেই আদ্রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে।,,
“আমি জানতাম তোকে এখানে পাবো।তাই চলে এলাম”
“বুঝলি কিভাবে?”
“বড় ভাই আমি তোর। কখন কোথায় থাকতে পারিস আমি জানি।”
ওনাদের কথা শুনে বোঝা গেলো উনি আদ্রিয়ানের ভাই।আমি জানতাম ই না।হায়রে।যদিও আমার মনে নাই ওনার ভাইয়ের নাম এই মুহুর্তে।ভাবি আমার দিকে এসে আদ্রিয়ানকে বলল,,
“এটা কে ভাইয়া?”
“ও সারা। আমার ক্লাস মেটের বোন।এসেছে আজ সকালে। কোনো ফ্ল্যাট পায়নি তাই এখানে আছে কিছুদিন। ”
“ওহহ”
তারপর ভাবি আমার সামনে এসে বলে,,
“হায় আমি প্রিশা।”
আমি সৌজন্যতার খাতিরে একটা হাসি দিলাম।
তখনই আদ্রিয়ানের ভাই এসে বলল,
“আমি আদ্রাফ।চিনো হয়তো আমাকে। আমার বিয়তে তোমাকে দেখে ছিলাম ”
“জি।”
“হুম।আচ্ছা ফ্রেস হয়ে আসি তারপর গল্প করবো”
বলে ওনারা রুমে গেলো।আদ্রিয়ান আমার সামনে এসে বললেন,,
“ভাইয়াকে সত্যিটা বললে অন্যকিছু ভাবতো তাই এটা বললাম রাগ করো না।”
“হুম।”
“গুড গার্ল।”
বলে উনি আবারো কাজে বসে পড়লো মানে এটা কোনো কথা!আমি কি করি এখন।একা একা কি ভালে লাগে নাকি।ধ্যাত।
আমি মুখ ভার করে বসে পরলাম সোফায়।
উনি বললেন,,
“রাগ করে না বাবু চকলেট এনে দিবো।”
চলবে…!!
(প্রতিদিন দেওয়ার চেষ্টা করবো এখন থেকে।)