পরীর দেশের ডেভিল,পর্ব-১২(অন্তিম পর্ব)
সিরিজ-Mystrey of the strange world
শাহরিয়ার আবিদ
– যতই কুটিয়ে কুটিয়ে দেখছে। ততই নিত্য নতুন রহস্য বের হয়ে আসছে তার সামনে। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো। এখানে পুরো পরীর রাজ্যে কেউ নেই। সবাই হঠাৎ করে একদিনের ভেতর উধাও। এই একটা দিনের ভেতর যে কতকিছু ঘটে গেল। সাইমনের ঘুম ভাঙ্গার আগে আরো কিছু তথ্য বের করা যায় কি না ?
…
..
আবিদ সাইমনের পাশ থেকে উঠে গেল। আর একটা আশ্চর্য করা বিষয় হলো । আবিদের ক্ষিধাও লাগছে না। তাহলে কি সে তার স্ট্রেন্জ পাওয়ার ব্যবহার করলে ক্ষিধা পায় না । আবিদ মনে মনে ভাবল, ” ভালোই তো এই স্ট্রেন্জ পাওয়ার ব্যবহার করলে ক্ষিধায় লাগে না৷ আচ্ছা রাফাকে ওরা নিয়ে কি করবে। আর পৃথিবী থেকে এখানে মানুষের কি কাজ আর এখানে এদের সাথে কি সম্পর্ক?”
নিজে নিজে বলতেছে আবিদ ” ধুর কি সমস্যায় পড়লাম। কি করব বুঝতে পারতেছি না? ”
আবিদ আবার পুরো ঘর পায়চারী করছে। কি করবে। আবিদ একবার রাজপ্রাসাদের ছাদে গেল। ওখানে একটা দূরবিন লাগানো আছে৷ উপরে লেখা দূরবীন ঘর। আবিদ সেখানে গেল৷ বড় ছোট মাঝারী ধরনের হরেক রকমের দূরবীণ রয়েছে কক্ষটাতে। আবিদ ওখান থেকে একটা মাঝারি ধরনের দূরবীন নিয়ে চোখ লাগিয়ে দেখল। রাজপ্রাসাদের সামনের দিকটা দেখল কিছু বাড়ি ঘর ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। তারপর আশে পাশে দেখল। সব শেষে দেখল রাজপ্রাসাদ পেছনের দিকে। পেছনে ঘন জঙ্গল। আবিদ ভালো করে চোখ বুলিয়ে জঙ্গলটা দেখছিল। একটা জায়গায় চোখটা আঁটকে গেল। জঙ্গলের মধ্যের দিকটায় একটা বাংলো ঘরের মত। তার সামনে বেশ বড় একটা জায়গা পরিষ্কার করা। ওখানে এখান থেকে ঠিক তেমন কিছুই বোঝাই যাচ্ছে না ভালো করে।
আবিদ মাঝারি দূরবীণটা রেখে বড় ধরনের একটা দূরবীণ নিল। দূরবীণটা অত বেশি বড়ও নই৷ তাটপরে জঙ্গলের মাঝবরার ভালো করে দেখা যাবে। এবার সেটাতে চোখ লাগিয়ে দেখতে শুরু করল। এবার দেখা যাচ্ছে।
আবিদের করা ধারণাটা ঠিক এখানে পৃথিবীতে শুধু তারা নই। পৃথিবীর আরো কিছু মানুষ আছে। যারা এসে আস্তানা গেঁড়েছে ওখানে।।
আবিদ যেন সবগুলোর মাঝে কেমন জানে রহস্যের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন গুলিয়ে ফেলছে। আবার ভালো করে দূরবীণে দেখল জঙ্গলের মাঝের জায়গাটায়। ওখানে আসলে হচ্ছেটা কি???
না, এখান থেকে তেমন কিছুই বুঝা যাচ্ছে না । আবিদ আবার নিচে নেমে গেল। ওদিকে সাইমন এখনো ঘুমে। আবিদ পানি নিয়ে গেল। সাইমনের চোখে-মুখে চিটিয়ে দিতেই সাইমনের ঘুম ভাঙল। সাইমন চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। এখনো তার মাথায় কিছু ঢুকছে কি না বুঝা গেল না।
-সাইমন তুই ঠিক আছিস তো?(আবিদ অস্পষ্ট স্বরে বলল)
-হ্যাঁ, কিন্তু তুই এখানে, রাফা কোথায় ?
-রাফা কোথায় সেটা তুইও জানস না? (আবিদ)
-না। (সাইমন)
-আচ্ছা এখানে আসার পর তোদের সাথে কি কি হয়েছে বল। (আবিদ)
-আমার খুব দূর্বল লাগছে । আর মাথাটা কেমন জানি ঝিম ধরে আছে। আর চোখেও ঝাপসা দেখছি। (সাইমন)
পাশে পড়ে থাকা সাইমনের ব্যাগ থেকে দুটো এনার্জি ড্রিংকস বের করল৷ ওখান থেকে একটা সাইমনকে দিল। আরেকটা আবিদ নিজে নিল।
খাওয়া শেষ হতেই। আবিদ সাইমনকে আদেশের স্বরে বলল,-” উঠে পর” “বসে থেকে লাভ নেই। এই খেলা আর বাড়তে দেয়া যায় না। এ ঘটনা এতটুকু গড়িয়েছে এটাই যথেষ্ট। আমাদের বোকা বানিয়ে এতদূর নিয়ে এসেছে৷ এবার বুঝিয়ে খাল খেটে কুমির আনলে কি পরিণতি হয়। ”
আবিদ যে কারো উপর ভিষণ রেগে আছে এটা এতক্ষণে বেশ ভালো করে বুঝা গেছে।
সাইমন আর কিছু বলল না। সেও বাদ্য ছেলের মত উঠে পড়ল। কারণ আবিদ যা বলল ঠিক। আবিদ উপরে সে তার কাপড় চোপড় নিয়ে তৈরি হয়ে গেল এদিকে সাইমন ও তৈরি হয়ে গিয়েছে। দুজনেই রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়ল। তাদের এখনো অনেক কাজ বাকি। ..
দুজনেই রাজপ্রাসাদের পেছনের দেয়াল টপকে রাজপ্রাসাদ সীমানার বাইরে চলে এল। আবিদ সামনে হাঁটছে। আর তার পেছনে সাইমন।
. তৈরি থাক আমাদের উপর যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণ করতে পারে। সব দিকে নজর রাখ৷ (আবিদ)
.আচ্ছা। কিন্তু আমরা কোথায় যাচ্ছি। অন্তত পক্ষে সেটা বল। (সাইমন)
.তোর আপাতত সেটা না জানলেও চলবে। যা বলেছি তাই কর। (আবিদ)
সাইমন ভালো করেই জানে আবিদ না চাইলে তার মুখ থেকে একটা কথাও বের করা যাবে না।
দুজনে এগিয়ে চলছে জঙ্গল ঝোপ ঝাপটা পেরিয়ে৷ আবিদের হাতে ধারালো ছুরি। এভাবে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর। দুজনেই হাঁপিয়ে পড়েছে। তাই বিশ্রামের জন্য দুজন কিছুক্ষণ বসল। পানির তৃষ্ণা পেয়েছে অনেক। দুটো এনার্জি ড্রিংক ছাড়া তাদের কাছে খাওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই। তাই এখন আর ওগুলো খরচ করা যাবে না। পরে অবস্থা এর ছেয়ে আরো বেশি খারাপ হতে পারে। তাই পরের কথা চিন্তা করে কোল্ড ড্রিংকস দুটো রেখেদিল।
পানির তৃষ্ণা মেটাতে দুজনে ওখানে পড়ে থাকা বরফ খেল। উপরের দিক থেকে হাল্কা কিছু বরফ সরিয়ে মাঝখান থেকে কিছু বরফ খেল৷ বরফ গুলো নিয়ে মুখের মাঝে কিছুক্ষণ রেখে দিলে তা গলে পানির তৃষ্ণা মেটাতে দারুণ কাজ করে। তবে মুখে বরফ রাখাটা কঠিন।
আবার উঠে গেল, হাঁটা শুরু করল। আধ ঘন্টার মতো হাঁটল। হঠাৎ একটা জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে গেল৷
আবিদ খুব মনোযোগ সহকারে কিছু শোনার চেষ্টা করছে।
এবার শব্দটা সাইমনও শুনতে পেল। কেউ একজন এদিকে আসছে। আবিদ আর সাইমন পিছিয়ে এল খানিকটা একটা বড় গাছের পেছনে লুকিয়ে গেল। একটু পড়েই দেখা গেল। লোকটাকে। আবিদ ফিসফিস করে “সাইমন তুই ওপাশে চলে যা। সুযোগ পেলে ওখানে ঢুকার চেষ্টা করবি তবে সাবধানে যাতে কেউ না দেখে। জলদি যা। ”
সাইমন বুঝতে পারল না আবিদ কি করতে যাচ্ছে। আর এখন আবিদের কথা না মেনেও উপায় নেই।
সাইমন আবিদের কথ মত কাজ করল। আবিদকে এখানে একলা রেখে যেতে তার মন সাই দিচ্ছিল না, তারেরেও যেতে হল।
এদিকে লোকটা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে এসেছে। আবিদ তার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে একটা ছোট ছুরি বের করল। লোকটা তার কাজ শেষ করেই এদিকে আসার সময় আবিদ নিশানা ঠিক করে তার হাতের ছুরিটা ছোড়ে মারল লোকটার দিকে এক্কেবারেই গিয়ে সোজা কপালে গেতে গেল৷ চিৎকার করার সুযোগ পেল না। আবিদ দৌড়ে গিয়ে লোকটার কাছ থেকে তার রাইফেলটা নিয়ে নিল। রাইফেলটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারল। লোকটা হয়ত স্নাইপার ছিল। রাইফেলটা দেখে বুঝা গেল রাইফেলটা একটা স্নাইপার রাইফেল। রাইফেলটা নিয়ে নিল। সাথে করে আরো কিছু বুলেট নিয়ে নিল লোকটার বুলেট প্রুফ জেকেট থেকে। লোকটা বুলেট প্রুফ জেকেট টা আবিদ নিজেই পরে নিল। তারপর চোখে সানগ্লাসটা নিয়ে নিল। এবার সামনে এগিয়ে গেল। এবার জঙ্গলের মাঝের বাংলোর এক্কেবারে কাছেই পৌঁছে গেল৷ আবিদ আর আগানো ঠিক হবেনা মনে করে। একটা গাছেই চড়ে বসল সুবিধা মত গাছ দেখে। গাছের মগডালে চড়ে বসল আবিদ। সেখান থেকে এক্কেবারে পরিষ্কার করে দেখা যায় বাংলোটা। ওখানে প্রায় পনেরো জনের মত অস্ত্রধারী লোক পাহারায় আছে। তাদের মাঝেই একজন লিড়ার গোছের রয়েছে সবার মাঝখানে বসে আছে। তার সামনে একটা টেবিল৷ সেখানে রাখা লাল একটা পাথর কিছুটা আলো চড়াচ্ছে। তার সামনে দুটো ডেবিল মাথা নিচে করে হাঁটু ঘেড়ে বসে আছে। আবিদ নিশানা ঠিক করল লিড়ার গোছের মানুষটাকে। তারপর রাইফেলের সাইলেন্সারটা লাগাল ট্রিগার চাপ দিতেই রাইফেলটা মৃদু ঝঙ্কার তোলল। আর ওদিকে লিড়ার গোছের লোকটার বুকফুটো হয়ে গেল রক্ত পড়ছে। সেটি দেখে তার কাছে ছোটে এল সব লোক এবার সেদিকেই লক্ষ্য করে চলালো কিছু গুলি। এভাবে প্রায় চলল মিনিট তখন তেরোর মত। আবিদের গায়েও লেগেছে একটা গুলি ডান বাহুতে। ওদিকে সব লোক মাঠিতে পড়ে আছে। আবিদ গাছ থেকে নামার আগে লক্ষ্য করল ডেবিলগুলো এগিয়ে যাচ্ছে ঐ লাল পাথরটার দিকে এবার আবিদ সেটাকে লক্ষ্য করল ছুড়ল আরেকটা গুলি। সাথে সাথেই পাথরটাই আগুন ধরে গেল। পাথরে আগুন ধরার সাথে সাথে ডেবিলগুলো ছিটকে পড়ে গেল। পাথরটা এক্কেবারে পুরে ছাই হয়ে গেল। তখনি ডেবিলদুটোর নড়া চড়াও বন্ধ হয়ে গেল৷ আবিদ এবার নিচে নেমে গেল। দুর থেকে বেসে আসছে হৈ হল্লোড়।
আবিদের ডান হাতে গুলি লেগেছে রক্তক্ষরণ হয়েছে তার চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে ঢলে পড়বে। তার আগেই এই ঝোপঝাড় থেকে বের হয়ে সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ল রাফা আর সাইমন আর তাদের পেছনে হাজার পরী আর তাদের সাথীরা তার মাঝে রাজকুমারী রিউশাকেও দেখা যাচ্চে।
..
-আচ্ছা এই প্ল্যানটা বানালো কে? (সাইমন)
-আমি আর রিউশা। আবিদকে রাজকুমারী তার তেজস্ক্রিয় রশ্নি মেরে অজ্ঞান করে রেখেছিল আর তোকে ঘুমের ঔষুধ খাইয়ে আমি অজ্ঞান করে রেখেছিলাম। আর তার কিছুক্ষণ পর একটা চিরকুট রেখে গিয়েছিলাম তোর রুমে৷ তারপর সবাইকে নিয়ে দূরে সরে পরেছিলাম। আমাদের পৃথিবীর কিছু অসাধু মানুষের সাথে এখানে এই শয়তানগুলোর সম্পর্ক ছিল। শয়তানগুলো তাদের কথা মতই কাজ করছিল। লাল পাথরটাতে রাখা ছিল শয়তানগুলোর প্রাণ। আর সেটা ছিল পৃথিবীর কিছু মানুষের হাতে। তাই তারা শয়তানকে সেটা দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে কাজ গুলো করাচ্ছিল যাতে এই পুরো নগরীটা তাদের হয়ে যায়। কিন্তু আমরা যখন ওখান থেকে সরে গেলাম তখন তুই আর আবিদ ছিল প্রায় মৃতর মত ঘুম। তাই ওখানে কাউকে না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে দেখে শয়তানগুলোর উপর রেগে যায় মানুষগুলো। তাই তারা শয়তানগুলো ওভাবে বেঁধে রেখেছিল৷ আর আমি এসব কথা চিরকুটে লিখেছিলাম আর বলেছিলাম জায়গাটা কোথায়। তাই তোদের কাজটা এত সহজ হলো। আর মুক্ত হলো এই পরীর দেশটা। (রাফা)
এদিকে আবিদ কিছুদূর এগোতেই মাঠিতে পড়ে গেল। দৌঁড়ে প্রায় সবাই। রক্তক্ষরণ হলো বেশ তাই অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। এভাবে বেশিক্ষণ চলতে থাকলে বাঁচানো যাবে না।
…
.
.
তিনদিন পর,,,,
চোখ খুলল আবিদ। পাশে তার মা-বাবা বসা। সামনে সাইমন আর রাফা দাঁড়ানো। সবাই তাকে দাঁড়িয়ে আছে। সাইমন আর রাফা মিষ্টি একটা হাঁসি দিয়ে সরে যেতেই, চোখ অপরুপা একমেয়ে পরীর দেশের রাজকুমারী রিউশা।
আবিদ বলে উঠল,,
-মা মেয়েটা কে??(আবিদ)
– কি আমাকে চেন না?(রিউশা)
এরপর আর কি। যা হবার হলো।
সমাপ্ত……