পরিণীতা,পর্ব ১৪,১৫
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৪
২৭.
পরী তুমি আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে আসলে কেনো।
–এক্ষুনি বাসায় চলুন আমার ভালো লাগতেছে না।
–কী বলো টিয়া পাখি কী হয়েছে। স্যরি আমি বুঝি নাই তুমি এইখানে আসলে অসুস্থ হয়ে যাবে তাহলে কখনো আসতাম না বউ।
অর্ণব দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো।।।
একটুর জন্য বেচে গেলাম। নয়তো আদি ঠিক অর্ণব এর সামনে চলে আসতো। মনে মনে কথাটা বলে ই গাড়ির গ্লাস ভেদ করে বাহিরে তাকাতে ই দেখে খুব সুন্দর একটা ব্রিজ। পুরো ব্রিজটা লাইটিং করা, পাশে ছোট ছোট দোকান।
—এই থামুন। বেশ জোরে ই বলে কথাটা।
অর্ণব সাথে সাথে গাড়ি থামায়।
–কী হলো।
–চলুন হেটে আসি আর ঐ দোকান থেকে ফুচকা খাবো।
–মেয়েদের খাবার আমি খাই না।
–আপনাকে তো খেতে বলি নাই। আমি খাবো আপনি দেখবেন।
–কাকে??
বেশ অবাক হয়ে অর্ণব পরীকে প্রশ্নটা করলো।
–ফুচকাওয়ালাকে..
বলে ই পরী গাড়ি থেকে নেমে গেলো। অর্ণব হাবলার মতো কতোক্ষন বসে রইলো। পরোক্ষনে ই মনে হলো পরী একা ই গাড়ি থেকে নেমে চলে গেছে।।।
অর্ণব দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে পরীর সাথে দাড়ায়।
পরী ফুচকা খাচ্ছে অর্ণব দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে।
হঠাৎ অর্ণবকে চমকে দিয়ে পরী অর্ণব এর কানের কাছে গিয়ে বলে
–আমাকে কিন্তু দেখতে বলিনি বলেছি ফুচকাওয়ালাকে দেখতে।
অর্ণব এর কাছে যেতে ই দুজনের ই অজানা অনুভূতি মনের মধ্যে উকি দিচ্ছে।
অর্ণব পরীকে পিছন জড়িয়ে ধরতে চাইলে পরী দূরে সরে যায়।
–মানুষ আছে এইখানে চোখে পড়ে।
–নাহ্। বউ পাশে দেখলে আমি আর কাউকে দেখি না।
পরী মুখে ভেংচি কেটে অর্ণব এর থেকে অনেকটা দূরে গিয়ে দাড়ায়। ফোনের দিকে তাকাতে ই দেখে আদির নম্বর থেকে কল।
মেসেজ সিন করার সাথে সাথে কল দিলো। পরী কেটে দিচ্ছে বার বার। কল কেটে দেওয়ায় মেসেজ করতেছে।
পরী বেশ মনোযোগ দিয়ে ফোন দেখছে তাই অর্ণব পরীর দিকে এগিয়ে যায়। অর্ণবকে আসতে দেখে পরী ফোন অফ করে ফেলে।
২৮.
আদির ফোনের শব্দে পরীর ঘুম ভাঙ্গে। ভালো ই জ্বলতেছে বুঝি। মনে মনে সেই পরিমাণের খুশি হয়েছে পরী। কতোটা ই না কষ্ট দিয়েছিলো কয়েকদিন আগে পরীকে আজকক নিজে কষ্ট পেতে কেমন লাগে দেখো আদ্যিত চৌধুরী। আমি তোমার যোগ্য না নাকি তুমি আমার যোগ্য না তা ই দেখো। কথাগুলো মনে মনে বলে, হালকা হেসে অর্ণব এর মুখের দিকে তাকালো।
ছেলেটার কী কষ্ট হয়ে এভাবে সোফায় ঘুমাতে। ছেলটা আমাকে এতো সুখে রাখতেছে বিনিময়ে আমি তো শুধু কষ্ট ই দিচ্ছি। অর্ণব এর সব কিছু ই পরীর মন ছুয়ে যায়। আস্তে আস্তে অর্ণব এর পাশে গিয়ে বসলো পরী। চুলগুলোতে হাত দিয়ে মুখের দিকে আনমনে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায় পরী।
—
ইরার ফোন ই তুলছে না আদি। দুদিন যাবৎ কোনো খুজ খবর ই নাই। আদি ইরাকে একটা বাসায় রেখে গেছে দুদিন আগে। কিন্তু এখনো কোনো খবর ই নাই।
কল দিলে ও বার বার কেটে দিচ্ছে। আজ সকালে কল দেওয়ার পর তো সোজা ব্লক করে দিতো। এতে বেশ লেগেছে ইরার তাই তো সিদ্ধান্ত নিলো সোজা আদির বাসায় চলে যাবে। ইরার কাছে বিয়ের রেজিষ্ট্রি ও আছে। বিন্দু পরিমান অসুবিধা হবে না তার আদিকে ফাঁসাতে। কিন্তু ইরা তো চায় না আদির কোনো প্রবলেম এ পড়ুক কারণ আদির প্রতি ইরার ভালোবাসা অনেক। কথাগুলো আদির ফ্রেন্ড সাওন এর কাছে বললো ইরা।
সাওন প্রতিউওরে কী বলছে তা ভাবছে।
”’আপনার যা ভালো ইচ্ছে তা ই করুন।”’
এটুকুনি বলে ই কেটে পড়লো সাওন। কারণ সাওন তো ইরার সম্পর্কে ভালো করে জানে এসব জামেলায় না জড়ানো ই উওম।।।।
ইরা কলেজ এর সামনে দাড়িয়ে আছে। সব সময় আদি এইখানে ই থাকে। কোথাও না থাকলে আদির এই জায়গাতে থাকার কথা।
চারদিকে খুজে ইরার চোখ যায় কৃষ্ণচূড়া গাছের তলায়। একটা ছেলে বসে সিগারেট খাচ্ছে আর ফোনে কী জেনো দেখছে মনে হচ্ছে।
সামনে এগিয়ে যেতে ই ইরা বুঝতে পারলো ছেলেটা আদি ই। কেমন উষ্কখুষ্ক চুল চোখ মুখে ক্লান্তি চাপ। আদির পাশে যেতে ই দেখে আদি পরীর ছবি দেখছে কিন্তু সাথে কে তা বুঝতে খুব অসুবিধা হচ্ছে। অসুবিধা হবে ই না কেনো ছেলেটার মুখে তো স্টিকার দেওয়া।
–আদি তুমি এখানে, আমার কল রিসিভ করছো না কেনো। আর পরীর পিক তোমার ফোনে কেনো।
কথাটা বলার সাথে সাথে থাপ্পড় টা এসে ইরার গালে পড়ে,
–তোর জন্য ই পরীকে আমি হারিয়েছি।
–আদি কী বলছো এসব আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি।
–ভালোবেসে বিয়ে করিনি ঐটা ক্ষনিকের ভালো লাগা ছিলো। বলেনা, বেশি ভালোবাসলে বেশি অবহেলা পাওয়া যায়। আমাকে ও পরী বেশি ভালোবেসে ছিলো বিনিময়ে আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি।
–আদি আমার দিকে তাকাও। পরীর নাম আর একবার ও উচ্চারণ করবা না।
–তোর তো নাম উচ্চারণ করায় জ্বলতেছে আর আমার ভালোবাসা অন্য কোনো ছেলের সাথে আছে আমার কেমন লাগে বল।
–আদি আমি তোমার বিয়ে করা বউ এই কয়েকদিনে ই কী আমি পুরোনো হয়ে গিয়েছি।
–তুই তো আামকে জোর করে বিয়ে করেছিস,পরীর নামে মিথ্যে বলে আমার মনকে বিষাক্ত করে তুলেছিস।
কথাটা বলে ই আদি বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো,শত ডাকা শর্তে ও আদি পেছনে তাকালো না
ইরার নম্বর থেকে পরীর ফোনে কল আসতে দেখে চমকে উঠে পরী….
চলবে
পরিণীতা
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১৫
২৯.
বেশ কয়েকবার কল দিলো ইরা, পরী ফোন সাইলেন্ট করে রেখেছে। পরী তো এটা ই চেয়েছিলো পেয়ে হারানোর কষ্ট যে কতোটুকু তা বুঝাতে।
অর্ণব অফিসে চলে গিয়েছে, খুব কেয়ার করে এরকম কাউকে পেতে সত্যি ই ভাগ্য লাগে। না চাওয়া শর্তে ও একয়েকদিনে অর্ণব এর সাথে নিজেকে অনেকটা জড়িয়ে নিয়েছে। কিন্তু যখন ই জানতে পারবে আমার অতীত মেনে নিবে কী অর্ণব নাকি এক আকাশ পরিমাণ ঘৃণা নিয়ে দূরে সরিয়ে দিবে।
পরী ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আদি মেসেজ দিয়েছে। রিতীমতো থ্রেড করতেছে।
“” এমুহূর্তে তুমি কল না ধরলে তোমার সংসার ভেঙ্গে দিবো, তুমি কী চাও তোমার হাসবেন্ডর কোনো রকম ক্ষতি হক। যদি না চাও তাহলে কল রিসিভ করো।”’
পরী অনেক ভয় পেয়ে যায়।পরী চায়না পরীর জন্য অর্ণব এর কোনো ক্ষতি হক। এমন টা হলে যে পরী মেনে নিতে পরবে না। তাই পরের বার আদির নম্বর থেকে কল আসার সাথে সাথে রিসিভ করে।।।
–খুব সুখে আছো তাই না।
–আপনি ও তো এতোদিন খুব সুখে ছিলেন। আমি তো একবারের জন্য ও জিজ্ঞেস করতে যাইনি।
–চলে আসো পরী। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো কখনো ছেড়ে যাবো না।
–এই কথাগুলো কিন্তু আগে ও বলেছিলেন আপনাকে বিশ্বাস করে ফলস্বরূপ কিন্তু কষ্টটা পেয়েছি। আর আপনি আমার হাসবেন্ড সম্পর্কে ঐমুখে কোনো কথা উচ্চারণ করবে না। আমি আমার হাসবেন্ডকে বড্ড ভালোবাসি।
–এদুদিনে আমাকে কীভাবে ভুলে গেলে।
–দুদিন না মিস্টার আদিত্য চৌধুরী, অনেক টাইম প্রতিদিনকে ঘন্টায় নিন, তারপর মিনিট তারপর সেকেন্ড এ নিন দেখেন কতো বিশাল সময় এই সবটা সময় মানুষ আমার পাশে ছিলো, আমার অতীত বর্তমান কিছু না যেনে ই বিয়ে করছে।
–খুব গুনগান তো করছো। সোজা কথায় কাজ না হলে আমি কিন্তু বেঁকে বসবো। যদি ভালো চাও ঠিকানা দেও আমি গিয়ে নিয়ে আসবো।
কথাটা বলার সাথে সাথে পরী কল কেটে দিলো। খুব কান্না পাচ্ছে আমাকে যা করার করুক কিন্তু অর্ণব এর কথা বললে আমি সহ্য করতে পারি না। ফ্লোরে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে আর ভাবতেছি ভুল মানুষকে ভালোবেসে আজ তার ই মাশুল দিতে হচ্ছে।
৩০.
অর্ণব বাসায় এসে পরীকে খুজতেছে। বাসায় ডুকে ই কয়োকবার ডাক দিলো, কিন্তু পরীর কোনো পাত্তা ই নেই। এমন তো হয় না প্রতিদিন ডাকলে একটু সারা হলে ও তো দেয় কিন্তু আজকে তো কিছু ই না।
অর্ণব রুমে গিয়ে লাইট অন করেতে ই চোখ গেলো বেড সাইডে। পরীকে দেখে অর্ণব পাশে যেতে ই আচমকা অর্ণবকে ঝাপটে ধরে চিৎকার করে কেদে উঠে।
আর্ণব ও বুকে জড়িয়ে নেয়। বেশ কিছুক্ষন পর পরীকে শান্ত করার জন্য অর্ণব মাথায় হাতবুলিয়ে জিজ্ঞেসা করে।
–টিয়াপাখি ভয় পেয়েছো।
কিন্তু পরী কিছু বলে না।
–টিয়াপাখি বলো আমাকে। নিজের ভেতরে আটকে রাখলে কষ্টটা বাড়বে।
পরী শুধু অর্ণবের কথা শুনতেছে কোনো উওর দেয় না।
–পরী চলো তোমাকে আব্বুর বাসায় নিয়ে যাই, ঐখানে অনেকে আছে তুমি আর ভয় পাবে না।এইখানে হয়তো একা আছো তাই ভয় পাচ্ছো।
পরী মাথা নাড়ালো। অর্ণব পরীকে উঠিয়ে বেডে বসিয়ে দিয়ে ফোন বের করে কল দিয়ে বললো কালকে বাসায় যাবে। পরীকে বসতে বলে অর্ণব ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
——-
ইরা আর কোনো উপায় না পেয়ে আদির বাসায় যায়। গিয়ে সব কিছু খুলে বলে প্রণাম সহ দেখায়।
–আপনারা যদি আশ্রয় না দেন তাহলে আমি কোথায় যাবো বলেন।
কান্না করতে করতে ইরা এই কথাগুলো বললো,
–জাহান্নামে যা মানা করছে কে, আমার আব্বু আম্মু কাছে আসলি কেনো।
কথাগুলো শুনে পিছনে তাকাতে ই দেখে আদি বাসায় ডুকতে ডুকতে এই কথাগুলো বললো।
–আমি এই বিয়ে মানি না বাবা।
কথাটা বলার সাথে সাথে আদির মা থাপ্পড়টা আদির গালে দিয়ে দেয়।
–কয়েকদিন পর পর মেয়েরা এসে একই কথা বলে। আমাদের মানসম্মান কী তুই ধূলোয় মিশেবি নাকি।
–যাও তুৃমি তোমার রুমে যাও।
চম্পা আদির রুমটা দেখিয়ে দে।
–আম্মু তুমি জানো না এই মেয়ে ভালোনা। আমি ওর সাথে থাকতে চাই না।
–তাহলে বিয়ে করলি কেনো।
–আম্মু আমি বিয়ে করতে চাইনি।
–তাহলে কী তোকে জোর করে বিয়ে করে নিয়েছে।
–জানিনা আম্মু কিন্তু আমি বিয়ে করতে চাইনি।
এবার অর্ণব এর গালের উপর আরেকটা থাপ্পড় পড়ে।
এসব ধরনের আর একটা কথা ও বলবি না। কালকে অর্ণব আসছে, অর্ণব এর সামনে আপাতত ভালো শিক্ষা দিয়ে যে তোকে বড় করি নাই এটা দেখাস না। অর্ণব মা বাবা ছাড়া ও অনেক ভালো শিক্ষা পেয়ে বড় হয়েছে। আর আমরা থেকে তোকো ভালো মানুষ বানাতে পারিনি।
চলবে,