পরিণীতা,পর্ব ১২,১৩

পরিণীতা,পর্ব ১২,১৩
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১২

২৪.
গাড়িটি একটি বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে এর সামনে এসে থামলো। ড্রাইভার এসে বললো, নামতে বললো। আমি গাড়ি থেকে নেমে কিছু দূর যেতে ই ছোট একটা ছেলে হাতে গোলাপ ফুল দিয়ে বললো ওয়েলকাম ভাবি। ফুলটা হাতে নিয়ে ভাবতেছি কী হতে চলেছে আমার সাথে।। তারপর রেস্টুরেন্টে এর গেইটের সামনে যেতে ই একটা ছেলে ফুল দিয়ে বললো হ্যাপি মেরিড লাইফ ভাবি।।।

আমি যতটুকু হেটে গেলাম প্রত্যেক যায়গায় দেওয়ালের মধ্যে লিখা ছিলো কোন দিকে যাবো। আর সবাই একটা করে গোলাপ দিয়ে বলেছে হ্যাপি মেরিড লাইফ।হঠাৎ সিড়ির কাছে আসতে ই উপরে লিখা দেখলা সাদে এসো।
নিচের দিকে তাকাতে ই দেখলাম প্রত্যেকটা সিড়িতে গোলাপ আর রজনীগন্ধার পাপড়ি দিয়ে লিখা পরিণীতা প্লাস অর্ণব। সাদে ডুকতে ই দেখলাম, খুব সুন্দর করে ছাদটা সাজানো গোল্ডেন আর রেড কালার কম্বিনেশন এ লাইটিং করা। বড় করে লিখা হ্যাপি মেরিড লাইফ অর্ণব এন্ড পরিণীতা। নিচে টেবিলে একটা লাভ আকরিতির কেক রয়েছে। পাশে ই অনেকগুলো কালার পেপার রাখা দেখলাম।সুন্দর করে পিনআপ করা।

কালার পেপারটা হাতে নিতে ই দেখলাম লিখা, “”আমাকে পড়ো”” পৃষ্ঠা উল্টাতে ই দেখলাম লিখা,

“”ওয়েলকাম টিয়াপাখি “”

“কী অদ্ভুত নাহ”

“”বিয়ের পর তোমাকে প্রপোজ করতে আসলাম””

“” জানো তো টিয়া পাখি তুমি হাসলে অনেক সুন্দর লাগে””

“” আর রাগলে মনে হয় আমার আকাশে মেঘ জমেছে””

“” সেই মেঘের বৃষ্টিতে আমি আমাকে সারটি জীবন ভেজাতে চাই”
তোমার ভালোবাসা হতে চাই
তোমার দিকে তাকিয়ে বাকি জীবনটা পারি দিতে চাই,
তোমার প্রতিটি স্পর্শের অনুভূতি নিতে চাই।
তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতে চাই সুখের অজানায়
হবে কী আমার সেই তুমি…

পিছনে ঘুরে তাকাতে ই দেখলাম অর্ণব হাটুগেড়ে পাড়া। অর্ণবকে দেখে আরেক দফা ক্রাশ খেলাম। রেড গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশন পাঞ্জাবি হাতে গোল্ডেন কালারের ওয়াচ। হালকা খোচাখোচা দাড়ি। ঠোঁটগুলো হালকা গোলাপিবর্ণ ধারন করে আছে।

“”এই টিয়া পাখি””

ডাকটা শুনে ই ঘোর কাটলো। অর্নব পেছন থেকে বেড় করে একট চকলেট বাক্স দিলো তার পর আবার একটা আইসক্রিম এর বাক্স দিলো তারপর আবার একটা চকলেট বাক্স দিলো। অর্ণব এর এমন কান্ড দেখে আমি হাসতেছি। তারপর একরা ডালা দিলো যার মধ্যে অনেকগুলো চুড়ি সাজানো ছিলো। তারপর আরেকটা ডালা দিলো যার মধ্যে ভিন্ন ধরনের নুপুর ছিলো

। পিছন থেকে বের করে একটার পর একটা গোলাপ দিচ্ছে। আমি সবগুলো পাশের টেবিলে রাখছি। আস্তে করে অনেকগুলো গোলাপ দিতে লাগলো আমার অনেক হাসি পাচ্ছে অর্ণব এর এমন কান্ড দেখে আমাকে এমন হাসতে দেখে অর্ণব ও হাসতেছে। তারপর খুব সুন্দর একটা রিং সামনে ধরলো কিন্তু আমি হাত সরিয়ে নিলান।

–প্লিজ টিয়াপাখি আজকে অন্তত এমন করো না। কথাদিলাম তুমি যা বলবে তাই হবে।

আমি নিঃশব্দ দাড়িয়ে আছি। কী করবো আমার জীবনটা যে এতো সোজা না।

–প্লিজ জান আমার এমন করো না। তোমাকে ভালোবাসতে হবে না।

মাথা কাজ করছে কী করবো। কল্পনাতে ও ভাবি নাই কেউ আমাকে এতোটা সারপ্রাইজ দিবে। এতোটা ভালো রাখবে। তাকে কী করে কষ্ট দেই। কিন্তু আমার যে অতীত আছে তারপর কী সে আমাকে মেনে নিবে।

–টিয়াপাখি ভালোবাসি অনেক। একটা বার একটা সুযোগ দেও। আর রিংটা পড়লে কী এমন হবে বলো তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ।

আমি আর কিছু ভাবতে পরলাম না হাত বাড়িয়ে দিলাম। কারণ সব কিছু ই আমার জন্য করেছে। আমি সবগুলো জিনিস ই অর্নব এর কাছ থেকে নিয়েছি এখন এি রিংটা পড়লে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। অর্ণব যদি আমার অতীতটা যেনে রাখতে না চায় তাহলে আমি চলে যাবো। এতো টেনশনে নিতে পরবো না।

অর্ণব রিংটা পড়িয়ে দিয়ে গভীর ভাবে হাতে একটা কিস করে। হঠাৎ দেখলাম অনেকগুলো ছেলে মেয়ে মিলে হাত তালি দিচ্ছে কেউ সিটি বাজাচ্ছে। এখন আমার বেশ লজ্জা লাগছে।
অর্ণব আমাকে হালকা জড়িয়ে ধরলো লজ্জা পেয়ে আমি অর্ণব এর পাঞ্জাবির কিছু অংশ খামচে ধরলাম।

–চলেন ভাবি কেকটা কাটবে।

অর্নব আমার কাছে কাছে এসে ফিসফিস করে বললো।
–আমার লজ্জা করছে কিন্তু এতোগুলো মানুষের সামনে তুমি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে আছো।

আমি অর্ণব এর দিকে বড় বড় চোখ করে তাকাতে ই আমাকে এভাবে তাকতে দেখে অর্ণব হাসি দিয়ে অন্য দিকল তাকিয়ে যায়। সাথে সাথে অর্ণব এর পাঞ্জাবি থেকে হাত সরিয়ে নেই। আমি হাত সরাতে ই অর্ণব আমাকে পিছন থেকে পেটে বরাবর জড়িয়ে ধরে।

মানুষের সামনে কিছু বলতে পারতেছিনা। তাই পায়ে দিলাম এক লাথি।মানুষের সামনে কিছু বলতে ও পরতেছেনা। শুধু আমার দিকে করুন ভাবে তাকিয়ে আছে।।।

হঠাৎ ফোনের দিকে তাকালাম। দেখলাম আবার আদির আইডি থেকে ইরার আর আদির কয়েকটা পিক দিয়েছে।

আমি অর্ণব এর হাত ধরে সাইডে আনলাম।

–টিয়াপাখি এভাবে কেনো নিয়ে যাচ্ছো, ভয় হয় তো আমার তোমাকে এই রুপে দেখলে।

–আসেন কয়েকটা সেলফি তুলে একটু রোমান্টিক স্টাইলে।

অর্ণব এর চোখগুলো রসগোল্লার মতো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

–তুমি ঠিক আছো তো পরী।

–কেনো।

–জ্বর টর হয়নি তো।

এবার আমি রাগ করে তাকাতে ই আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে,

–এভার সেলফি তুলো।

কয়েকটা সেলফি তুলে অর্ণব এর মুখে স্টিকার দিয়ে আদিকে সেন্ড করলাম। এখন দেখি আদি কতোটুকু জ্বলে।

চলবে,

নাহিদা ইসলাম
পরিণীতা
পর্ব ১৩

২৫.
পরিণীতা গাড়িতে ই ঘুমিয়ে পড়েছে। অর্ণব এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে অন্য হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। মেয়েটা এতো ঘুম পাগল কেনো??সব মেয়েরা ই কী এমন ঘুম পাগল হয় নাকি।।

গাড়িটি গেইটের ভেতরে প্রবেশ করলো, অর্ণব গাড়ি থেকে নেমে পরীকে কোলে নিয়ে ভেতরে ডুকলো। দরজা খোলা রেখে ই বিমলা বাসায় চলে গেছে। তাই ডুকতে আর অসুবিধা হলো না।

পরীকে নিয়ে সোজা নিজের রুমে শুইয়ে দেয়। অর্ণবকে পরী জড়িয়ে ধরে আছে ছাড়ছে না। কিছুক্ষন পরিণীতা দিকে তাকিয়ে অনমনে হাসে অর্ণব।পরীকে আস্তে করে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে অর্ণব ফ্রেশ হতে চলে যায়।

অর্ণব থ্রি কোয়ার্টার একটা পেন্ট পড়া, আর সাথে একটা টি -শার্ট। প্রত্যেকদিন রাতে এটা ই পড়ে।। মুখ মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে বুঝতে পারে ভারি শাড়ী প্লাস গয়নায় পরীর ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছে।
এখন যদি পরীকে হেল্প করতে যায় পরে আবার আমাকে কী না কী ভাববে। এটা ভেবে ই অর্ণব সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। চাইলে পড়তো পরীকে একা ছেড়ে আমি অন্য রুমে ঘুমাতে। কিন্তু পরীকে তো আর চোখের সামনে দেখতে পাবে না।

চোখ বন্ধ করতে ই পরীর নাড়াচাড়ার শব্দ হচ্ছে। শাড়ি পরে ঘুমাতে মনে হয় কষ্ট হচ্ছে তাই অর্ণব আস্তে আস্তে গিয়ে জুয়েলারিগুলে আগে খুলে তারপর উপর থেকে শুধু শাড়িটা খুলে আবার শুইয়ে দিয়ে এসে পড়ে। নিজের জায়গায় এসে শুয়ে পড়ে।

পরের দিন সকালে,
পরীর ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে জোরে চিৎকার করে উঠে। জোরে চিৎকার শুনে অর্ণব এর ঘুম ভেঙ্গে যায়।

–আরে এতো জোরে কেউ চিৎকার করে নাকি। তোমাকে কী কেউ মেরেছে।

–আপ আপনি কী করছেন এটা।

–কী করলাম।

–সিনেমার মতো আমাকে একা পেয়ে আমার সর্বনাশ করে ফেলেছেন।

–কী বলছো এসব।

পরী কিছু না বলে ই কান্না করতে লাগলো।

–আপনি এতো লুচু আগে জানতাম না।এএএএএ।

–হোয়াট। স্টপ। তোমার শাড়ি পরে ঘুমাতে সমস্যা হচ্ছিল তাই আমি শুধু শাড়িটা খুলে পাশের টেবিলে রেখেছি।

–আমার যা ইচ্ছে তা হক আপনার সমস্যা কী।

–এই জন্য ই মানুষ এর উপকার করতে নেই।

এটা বলে ই অর্ণব ওয়াশরুমে ডুকে পড়লো। জানে পরী এখন অযথা ই ঝগড়া করবে।

২৬.

অর্ণব অফিসে চলে যায়। রাত হতে ই পরী নিজের ফোনটা অন করে। চার্জ শেষ ছিলো গতরাতে তাই এখন চার্জে দিয়ে ফোন খুললো,
ফোন অন করে ই পরী থ হয়ে আছে। অর্ণব এর ৫০+ মেসেজ।।।।

সবগুলো মেসেজের শেষে একই প্রশ্ন ছেলেটা কে আর পরী কি বিয়ে করে ফেলেছে নাকি। মেসেজ দেখে ই বুঝা যাচ্ছে পিকগুলো আদিকে কেমন পুড়িয়েছে।
এতোদিনে আদি বুঝবে পেয়ে হারানোর কষ্ট যে কী পরিমানের।।।

ফোন অন করার সাথে সথে আবার আদির নম্বর থেকে কল আসলো।
কয়েক বার কেটে দেওয়ার পর ও বার বার কল দিচ্ছে আদি। মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে ই কলটা রিসিভ করলাম।

–পরী তোমার সাথে এটা কে।

–আপনাকে বললে আমার লাভ??

–তোমার সাথে আমার লাভ লসের কোনো হিসেব না পরী।

–হে আপনার রূপবতী বউ কোথায়।

–কে আমার বউ??

–ইরা আপু। আপনি তো আমার জিজু হন।

–পরীহহহ।

–স্টপ মিস্টার অদ্যিত চৌধুরী, গালার আওয়াজ নিচে।

–কেনো কী করবি তুই। তুই তো নষ্ট মেয়ে নয় হয় কি দুদিন ও লাগেনি আরেকটা জুটিয়ে নিয়েছিস।

–একটা প্রভাত আছে জানেন তো খেতে না পারলে আঙ্গুর ফল টক। আপনার বেলায় ও তার থেকে ব্যাতিকরম কিছু ই নয়।

–ভালো কথা শিখে গেছো দেখছি। নিজেকে অনেক চেঞ্জ করে ফেলেছো।

–হে মরিচাকার পেছনে ছুটেছিলাম এতো দিন তাই বোকা ছিলাম।

বলে ই কারো পায়ের আওয়াজ শুনে কল কেটে দিলাম।

–টিয়াপাখি চলো,,,

–কোথায়।

–চলো ই না স্বপ্নের দেশে।

–আদিক্ষেতা??

–তাই বুঝি। ইচ্ছে করে যাবে নাকি আমি জোর করে নিয়ে যাবো ঐটা বলো।

পরী আদির কথা ভাবতে চায় না আর না গেলে ও অর্ণব জোর করবে তাই পরী রেডি হতে চলে গেলো।

বেশকিছুক্ষন পর পরী রেডি হয়ে নিচে এলো,

সাদা আর গোলাপি কম্বিনেশন এ একটা থ্রি পিছ পড়ে নিলো সাথে মেচিং জুয়েলারি।অর্ণব ও পরীর সাথে মিলিয়ে সাদা শার্ট ই পড়েছে।।।

নিজে হেটে যাবে বাকি কোলে করে নিবো।

অর্ণব এর কোনো কথার উওর না দিয়ে ই পরী গিয়ে গাড়িতে বসলো।

–অ টিয়াপাখি তুমি শুনতে কী পাও আমি ডাকি তোমায়।

অর্ণব গাড়ি চালাতে চালাতে হেসে হেসে পরীকে এভাবে রাগাচ্ছে।

পরী ও রেগে লুচির মতো ফুলছে।।।।

অর্ণব একটা মেলার মধ্যে এনে গাড়িটা রাখে। নিজের হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে পরীর হাতের আঙ্গুলগুলো ডুকিয়ে হাতটা শক্ত করে ধরে হাটতেছে আর পরীকে বিভিন্ন জিনিস দেখাচ্ছে।
হঠাৎ পরী আদিকে দেখতে পায়। পরীর দিকে ই দ্রুতগতীতে আসছে। কী হবে এখন যদি আদি অর্ণব এর সামনে এসে যায়। ভয়ে পরীর চোখমুখ লাল হয়ে আছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here