পরিণীতা,পর্ব ১০,১১

পরিণীতা,পর্ব ১০,১১
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১০

২০.
পরিণীতা যখন তোমার এতো ই প্রবলেন তাহলে আমি আমার বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছি আপু।।

–ভাই তুই এটা কী বলিস।

–এখন যা শুনলে তাই ই বললাম।

–পরী যাও দশমিনিট সময় দিলাম রেডি হয়ে নেও। আমি নিচে অপেক্ষা করছি।

এতো রেগে আছে দেখে পরী আর কোনো কথা বলেনি। পরীকে ভুল বুঝেনি এটা ই তো অনেক। তাই অর্ণব এর কথা মতো কাজ করলো।

–অর্ণব তুই ভুলে যাবি না পরীকে আমি এইখানে আনেছি। আমি ও পরীকে খুব আদর করতাম কিন্তু পরী তোর বউ হবার যোগ্য না।

–কেনো আপু কী প্রবলেম ওর।

–পরী এতিম যার কোনো পরিচয় নেই।

–তুমি কী জানো আপু তুমি চিনার অনেক আগে থেকে ই পরীকে আমি ভালোবাসি। অনেক আগে থেকে ই ভালোবাসি শুধু পরী ভালো থাকার জন্য আগে মুখফুটে বলিনি।তোমার কী মনে হয় আমি এমনি পরীকে দুূদিনে আপন করে নিয়েছি। এ প্রথম আমি তোমাকে বললাম পরীকে আমি ভালোবাসি আগে কাউকে কখনো বলিনি।। দুবছর আগে তুমি জিজ্ঞেস করতে না রোজ কার জন্য আমি বেলিফুলের মালা নিয়ে যাই। কার জন্য বসে বসে প্রেম পত্র লিখি রোজ কিন্তু দিতে পরিনি। এই সেই মেয়ে পরী। কিন্তু কিছু বলতে না পারা কারনে দূরে সরে এসেছিলাম।

তুমি যেদিন পরীকে এ বাসায় নিয়ে এসেছিলে আমি বড্ড খুশি হয়েছিলাম। তোমার থেকে বেচি কেয়ার আমি করেছি পরীর। পরী এতিম এটা যেনে ও আপু আমি পরীকে আরো বেশি ভালোবাসি। অনেক অপেক্ষার পর পরীকে নিজের করে পেয়েছি তোমার কী মনে হয় ছেড়ে দেওয়ার জন্য।।।

কথা শেষ করার সাথে সাথে রুম থেকে পরীর শব্দ আসে। অর্ণব দাড়িয়ে না থেকে রুমে যায়।।।

–কী হয়েছে।

–আপুকে একা রেখে যেতে হবে না।

–ঐটা তোমার ভাবতে হবে না। যাও গাড়িতে গিয়ে বসো।

পরী রুম থেকে বের হয়ে মেইন গেইড এর দিকে যেতে ই ইলা বলে।

–তুমি আমার কাছ থেকে আমার ভাইকে কেড়ে নিয়েছো। আর আমি তোমার কাছ থেকে তোমার স্বামীকে কেড়ে নিবো।

–হে আপু অর্ণবকে যদি কষ্টে দেখতে চাও তাহলে কেড়ে নিয়ো। পরী গড়িতে যাও।

কথাটা বলে ই অর্ণব লাগেজে টা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।।

২১.
বাড়িটা খুব সুন্দর চারপাশ গুছানো খুব। মেইন গেইটে ডুকতে ই একটা মেয়ে এসে বরন ঢালা সাজিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে আছি। ভ্রু কুঁচকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম

— এগুলো কী??

–নতুন বউ বাসায় আসলে যা হয়।

মেয়েটা আমাদের বরন করে মিষ্টি মুখ করে বাসায় ডুকালো।

–খুব কী প্রয়োজন ছিলো নিজের পরিবারের লোকের সাথে আমার জন্য ঝগড়া করা।

অর্ণব ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে উওর দিলো…

–খুব কী দরকার ছিলো আমাকে তোমার মায়ার জালে ফেলা।

–আমি কখনো আপনাকে মায়ার জালে ফেলিনি। দেখা ই তো হল কয়েকদিন হলো।

–আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি।

আমার কথার কোনো উওর না দিয়ে ই ওয়াশরুম ডুকে গেলো। আমি ও আর কথা বাড়ালাম না।

হঠাৎ কাজের মেয়েটা দরকায় নক করলো।

–আসবো আপামনি

–হে আসো।

–আপা আমার নাম বিমলা। এই বাসায় অনেক দিন যাবৎ কাজ করি। অর্ণব দাদভাই মাঝে মাঝে আসে নয়তো এই বাসা খালি ই পরে থাকে।

–কেউ থাকে না।

–না আপামনি।

–ওহ আচ্ছা।

বলে ই শুয়ে পড়লাম। বড্ড ঘুম পাচ্ছে। এসব চিন্তা আর নিতে পরতেছি না।


ঘড়ির কাটাতে বারোটা বেজে দশ মিনিট। হঠাৎ ঠান্ডা লাগছে পায়ের দিকে তাই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। উঠতে ই দেখে অর্ণবকে।

–আপনি কী করেন আমার পায়ের কাছে।

–এই তো বউ তোমার বউগুলো নেইলপালিশে রাঙ্গিয়ে দিলাম।

এভাবে আমি বেশ অবাক হলাম। এই ছেলের মধ্যে কী কোনো চিন্তা নাই। এতো কিছু হয়ে গেলো তাও রাত বারোটা বাজে আসছে আমাকে নেলপলিশে দিতে।

–হয়েছে আমাকে নিয়ে ভাবা।

–আপনি কী করে জানলেন আমি আপনাকে নিয়ে ভাবি।

–তুমি বুঝবানা। আচ্ছা চলো গল্প করি। তুমি তো অনেক্ষন ঘুমিয়েছো। এখন তো ঘুমাতে পারবে না।

–আমার ঘুম পাচ্ছে অনেক। সরুন।।

–এতো কীভাবে ঘুমাতে পারো। আচ্ছা খেয়ে নেও।

–খাবো না।

অর্ণব আমার কথা না শুনে কোলে তুলে ওয়াশরুম দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

কান্না করতে ইচ্ছে করতেছে এই রাতের বেলা কেউ এভাবে ঠান্ডার মধ্যে ওয়াশরুমের রেখে চলে যায় নাকি।

অর্ণব ওপাশ থেকে বলে উঠলো।

ফ্রেশ হয়ে নেও যত দেরি করবে তত তোমার ই কষ্ট।

আর কোনো কিছু না ভেবে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফ্রেশ হয়ে দরজায় নক করার পর অর্ণব আবার দরজা খুলে কোলে তুলে নেয়। বেডে বসিয়ে খাইয়ে দেয়।
পরীর দুচোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। এতো ভালো কেন অর্ণব। আদিকে ভালোবেসে ছেলেদের প্রতি ঘৃনা চলে এসেছিলো কিন্তু অর্ণবকে দেখে মনে হচ্ছে না এখন ও কেউ আছে যে মন উজার করে ভালোবাসতে পারে।
অর্ণব আলতো করে চোখের পানি মুছে দিয়ে কপলে ঠোঁট দুটে ছোয়ে দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নেও।

পরী ধাক্কা দিয়ে অর্নবকে সরিয়ে নেয়। বার বার মনের ভেতর একটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। আদি ও তো প্রথমে এমন কেয়ারিং ছিলো। অর্ণব ও যদি পরে এমন করে।

–একবার ভালোবেসে দেখো টিয়াপাখি কখনো কষ্ট দিবো না।

–আপনি যদি কখনো শুনেন অতীতে আমার জীবনে কেউ ছিলো যাকে আমি ভালোবাসতাম তাহলে কী ঠিক এতোটা ই কেয়ার করবেন, এতোটা ই আমাকে কাছে চাবেন????

চলবে

পরিণীতা
নাহিদা ইসলাম
পর্ব ১১

২২.
পর্দা ভেদ করে কিছুটা রোদের আলো চোখে পড়তে ই ঘুম ভেঙ্গে গেলো পরীর। রাতের কথা মনে পড়তে ই সোফায় তাকায় অর্ণব এর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পায়। সত্যি ই কী সব প্রশ্নের উত্তর হয় না। অর্ণবকে কালকে জিজ্ঞেস করছিলাম আমার অতীত জেনে ও আমাকে ভালোবাসবে কিনা উওর দিয়েছিলো সব প্রশ্নের উওর হয় না।।।
যা ই হক আমি খুব ভালো ই জানি আমার অতীত যখন অর্ণব জানবে একমুহূর্তের জন্য ও এ বাসায় রাখবে না।।।।

আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা রেডি করার জন্য গেলাম।

–আপামনি ঘুম ভাঙ্গছে আপনার।

টেবিলে খাবার সাজাতে সাজাতে বিমলা কথাটা বললো আমাকে।

–নাস্তা রেডি করে ফেলেছো দেখছি।

–হে আপামনি, আপনে শুধু খাইতে বসেন।

অর্ণবকে ডেকো, কথাটা বলে ই উপরে তাকাতে দেখলাম শার্ট এর হাতা ফোল্ট করতে করতে নিচে নামতেছে।

–অনেকটা লেইট হয়ে গেছে টিয়াপাখি, আমাকে ডাকোনি কেনো।

মুখে একটা ব্রেড পুরে দিয়ে আমাকে এ কথা বললো,

–এসব কী ধরনের কথা।

–ওহ্ বুঝেছি বিমলার সামনে বলছি বলে লজ্জা পাচ্ছো।

আমি বিমলার মুখের দিকে তাকাতে ই দেখলাম লজ্জা মাখা মুখ হাসতেছে। আমি তাকাতে ই কিচেনের দিকে চলে গেছে।

–টিয়াপাখি রাগলে তো তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে।

রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে এতো কিছু হয়ে গেলো তারপর ও এই মানুষটার কোনো চিন্তা নেই।

–এই টিয়াপাখি খাবারটা শেষ করে রাগ দেখিয়ো আমার উপর।

এবার পরী রাগ দেখিয়ে চলে ই গেলো রুমে। অর্ণব খাওয়া শেষ করে রুমে যায়। পরীকে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।

–টিয়াপাখি রাগ করো কেনো। আমার একটা মাত্র বউ তাকে আদর করে ডাকবো না তো কাকে আদর করে ডাকবো বলো।

পরী হাত ছাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে

–এই ভালোবাসাটুকু কতোদিন থাকবে জানতে পারি কী।

–যতদিন আমার দেহে প্রাণ আছে ঠিক ততদিন।

–কয়েকদিন পর এই কথাটা মিথ্যে প্রামন হবে। এই পরী বলে দিলো।

–তুমি আমাকে ভালোবাসো পরী।

–না। আর কখনো ভালোবাসবো ও না। সময় হলে ঠিক আপনাকে মুক্ত করে দিয়ে চলে যাবো।

–কয়েকদিন পর এ কথাটা ও মিথ্যা প্রমান হবে এই অর্ণব বলে দিলো।

–ইম্পসিবল মিস্টার অর্ণব চৌধুরী।

–চেষ্টা করলে সব কিছু পসিবল মিসেস পরিণীতা চৌধুরী।

কপলে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়ে পড়লো অর্ণব। পরী অর্ণব এর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

২৩.

প্রায় তিনটে বাজে। পড়নে প্লাজু আর একটা টি-শার্ট। বসে বসে ফোনে গেমস খেলছি।

–অমা আপামনি আপনার চুল দেখি অনেক জরজেট।

–হোয়াট।চুল জরজেট মানে কী বিমলা।

–এই যে দেখেন আপনের চুলগুলো কত্তো সুন্দর। এক্কেরে সোজা। একটা লগে আরেকটা লাইগা নাই।

–এটাকে জরজেট বলে।তোমার হাতে এটা কীসের বাক্স।

–অর্ণব দাদা ভাই পাঠাইছে আপামনি আপনার লাইগা। আর বলছে।

আরে এভাবে হাসতেছো কেনো কী বলেছে।

–আর বলছে…

–আচ্ছা বাক্সটা সোফার উপর রেখে যাও আর কী বলসে হাসি থামলে আমাকে এসে বলো কেমন।

–আর বলছে। আপনি যদি শাড়িটা না পড়েন তাহলে অর্ণব দাদাভাই এইসা শাড়ি পাড়াইবো।

এটা বলে ই এক দৌড় দিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।

আমি বসা থেকে উঠে গিয়ে বাক্সটা হাতে নিলাম। অানবাক্স করতে দেখলাম শাড়ী সাথো জুয়েলারি আর একটা সুন্দর ডিজাইন করা কার্ড রাখা।

কার্ডটা খুলতে ই প্রথমে চোখে পড়লো বড় করে লিখা।

–টিয়াপাখি উপরে চোখ তুলে।

উপরে তাকাতে ই দেখলাম। শাড়টা পড়ো আর সুন্দর করে সাজো। আর বাকি কথাগুলো আমি ফোনে মেসেজ করে বলছি। যদি না করো তাহলে আমি রাতে মজাটা বুঝাবো।

এমন ভাবে কথাটা বললো ভয় পেয়ে আমি শাড়ি পরতে শুরু করলাম। কিন্তু আগা মাথা কিছু ই পাড়ি না।

ইউটিউব দেখে দেখে ট্রাই করলাম কিন্তু একা পাড়তেছি না। তাই বিমলাকে ডাকলাম।

ফোন হাতে নিতে ই দেখলাম অর্ণব এর মেসেজ।

“” কী গো টিয়াপাখি খুব কষ্ট হচ্ছে শাড়ি পড়তে, কষ্ট করে পড়ে নেও। মানুষ তার স্বামীর জন্য কতো কিছু করে তুমি না হয় শাড়ী ই পড়বা। আধঘন্টার ভিতর রেডি হয়ে নিচে নেমে এসো। গাড়ি দাড়িয়ে আছে।””

রাগে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে উনি একটু পর পর আমাকে এটা ওটা আদেশ করতেছে।

রেড আর গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশন এ একটা শাড়ি। শাড়িটা খুব সুন্দর দেখতে। অর্ণব এর পছন্দ আছে বলতে হবে।

–হ আপা মনি না হয় কী আর আপনেরে পছন্দ করে।

বিমলার এমন কথা শুনে হেসে দিলাম। হাসলে কাজ হবে না ঠিক টাইমে রেডি হয়ে নিচে যেতে হবে। আমি না চাওয়া শর্তে ও কাজগুলো আমার করতে হবে।

রেডি হয়ে নিচে গেলাম যেতে ই দেখি গেইটের সামনে গাড়ি দাঁড়ানো। গাড়ি পাশে যেতে ই একটা ছেলে সালাম দিয়ে গাড়িতে বসতে বললো।

ধুর আমার মনে যে কী ঘুরে বড্ড ভয় হচ্ছে কোথায় নিয়ে যাবে অর্ণব প্রায় রাত হয়ে গেছে। আর এভাবে সাজতে বললো বা কেনো। এই কেনো কেনো উওর পাবো অর্ণব সামনে আসলে ই।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here