গল্পঃনীল_চোখ,পর্বঃদুই
লেখাঃMd_Tarajul_Islam(Shihab)
তিশা বেশ অবাক হয়ে আয়ানের গলার পাশের সেই সাপে কাটা দাগের মতো দাগটা দেখছে।তিশা সেখানে হাত দিতেই,”উহ তিশা লাগছে”।তিশা অবাক হয়ে বলল
->এটা হলো কি করে সেটা জানো না?
আয়ান তিশাকে রাতের কথাটি বললো।তিশা হাসতে হাসতে বলল
->বাহ নতুন বউ তোমায় এভাবে কামড় দিয়েছে?
->তিশা বেশি ফাজলামি হচ্ছে কিন্তু,আসলে যে ওই কামড়িয়েছে এটা শিওর না কারন আমি দেখিনি,তবে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেছি।
তিশা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
->হয়েছে আর নাটক করতে হবে না।
এই বলে তিশা আয়ানের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলো।
তিশা বাড়ির ভিতর ঢুকতে ঢুকতে ভাবছে,যদি রাতে ওদের মধ্যে কিছু হয়ে থাকে তাহলে এমন দাগ অস্বাভাবিক না।কিন্তু ওই জায়গায় সাপের কাটার মতো দাগ এই বিষয়টা একেবারে অস্বাভাবিক।তবে মেয়েটার দাঁত কি ওইরকম,ধুর এটা কি ভাবছি,আনমনে বলে উঠলো তিশা।তিশা বাড়ির ভিতর আসতেই অধরা তিশার পা হতে মাথা পর্যন্ত এমন ভাবে দেখছে যেন সে তিশার পুরো শরীর স্ক্যান করছে।তিশার কাছে অধরার এভাবে তাকিয়ে থাকা ভালো লাগছে না।তিশা ঝাড়ু রেখে নিজের রুমে যাবে তখন অধরা পিছন থেকে ডাকলো
->আপু?
তিশা ঘুরে অধরার দিকে তাকালো।অধরার থেকে আপু ডাক শুনে তিশার মন ভরে গেলো।তিশা বলল
->হ্যাঁ আপু বলো?
অধরা উঠে এসে তিশার সামনে দাড়িয়ে বলল
->আপনি আমার ওপর রাগ করে নেয় তো?
তিশা মুচকি হেসে বলল
->আরে আমি রাগ করবো কেন?
->এই যে আমি আপনার স্বামীর ওপর ভাগ বসিয়েছি সেজন্য।মেয়েরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগ তো আর কাউকে দিতে পারে না।
অধরার এই কথা শুনে অজানা এক আশংকায় বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠলো।তিশাকে চুপ থাকতে দেখে বলল
->আপনি চুপ হয়ে গেলেন যে?
->না এমনিতে।তবে আমি রাগ করিনি।যদি আমার মধ্যে মা হবার ক্ষমতা থাকতো তাহলে হয়তো কখনো এমনটা হতো না।
->হুম কিন্তু আপু আয়ানের মনে আপনার জায়গাটা একই রকম আছে।
তিশা মুচকি হেসে চলে গেলো।তিশা অধরার সাথে কথা বলার সময় ভালো ভেবে তাকিয়ে ছিলো ওর দিকে কিন্তু এমন কোনো দাঁত চোখে পড়লো না যেটার কারনে ওইরকম দাগের সৃষ্টি হতে পারে।ওই দাগ নিয়ে তিশা তখন থেকে কি সব উল্টাপাল্টা চিন্তা করছে নিজেও বুঝতে পারছে না।একবার ভাবলো তিশা অধরাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবে কিন্তু পরে ভাবলো,না থাক এটা ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার এই বিষয়ে না বলায় ভালো।
তিশা ওর রুম গুছাচ্ছিলো এমন সময় আয়ান ভিতরে আসলো।আয়ানকে দেখে তিশা বলল
->কিছু বলবে?
আয়ান মাথা ঝাঁকালো।তারপর তিশার কাছে এগিয়ে এসে ওর কপালে একটা চুমু দিলো।তিশা লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপর বলল
->শোনো তুমি যে এভাবে আমায় চুমু দাও প্রতিদিন এখন থেকে কাজে যাওয়ার সময় ওই মেয়েকেও একই ভাবে চুমু দিবে।
->এটা পারবোনা।
->দেখো ওকে যেহেতু স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করেছো তাই তোমার উচিত হবে দুইজনকে সমান ভাবে ভালোবাসা যাতে একজনের জন্য আরেকজনের মন খারাপ না হয়।মনে থাকবে।
আয়ান মাথা ঝাকিয়ে “হ্যাঁ” জবাব দিলো।আয়ান ওর কাজে চলে গেলো।আয়ান চলে যাওয়ার পর তিশা বসে থেকে ভাবছে,আগে সে আয়ানকে সবসময় বলতো যদি কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাও তো ওই চোখ আমি উপরে ফেলবো,আর কাউকে ভালোবাসা তো দুরের কথা।কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সে আজ নিজেই তার ভালোবাসার মানুষকে আরেকজনকে সমান ভাবে ভালোবাসতে বলছে।
এমন সময় অধরা তিশার রুমে এসে হাসিমুখে ওর পাশে বসলো।তারপর হঠাৎ সে তিশাকে জড়িয়ে ধরলো।ওকে জড়িয়ে ধরার কারন তিশা বুঝতে পারলো না।অধরা তিশাকে ছেড়ে দিয়ে বলল
->আপু আমি জানতাম সতীনেরা নাকি সবসময় অনেক খারাপ হয় কিন্তু আজ তোমায় দেখে আমার সেই ধারনা বদলে গেছে।আজ মনে হচ্ছে সবাই এক হয়না।তোমার কথা আমি সব শুনেছি,তুমি উনাকে কি কি বলেছো।
->ও আচ্ছা।তবে এটাই তো করা উচিত তাই না?
->হুমম।
দুপুরে রান্নার কাজের সময় অধরা তিশাকে নানারকম ভাবে কাজে সহযোগিতা করলো।দুইজনে একসাথে কাজ করছে,হাসি ঠাট্টা করছে।ওদের এই ব্যাপারটা দেখে রত্না বেগম বেশ খুশিই হলেন।অধরার তিশার থেকে বয়সে দুই-তিন বছরের ছোট হবে।তিশা একসময় অধরার চোখের দিকে খেয়াল করে দেখলো ওর চোখ কেমন যেন নীল রংয়ের।চোখের মণি পুরোটায় যেন নীল।তিশা ঘোলা চোখের মানুষ অনেক দেখেছে কিন্তু এমন নীল চোখের মানুষ এই প্রথম দেখলো।তিশা ভাবলো,মানুষের সৌন্দর্য তো অনেক রকমের হয়ে থাকে,এই নীল চোখ হয়তো অধরার সৌন্দর্য।
দুপুরে খাওয়া শেষে তিশা অধরার রুমের দিকে আসছিলো তখন দরজার পাশে আসতেই দেখলো অধরা হাতে ফোন নিয়ে কি যেন টাইপ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।তিশা মনে করলো,হয়তো কোনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে কথা বলছে,তাই সে বিরক্ত না করে নিজের রুমে চলে এলো।অধরা আড়চোখে তিশার চলে যাওয়া দেখে রহস্যময় ভাবে হাসলো।একটু বাদে অধরা কাকে যেন ফোন দিয়ে বলল
->বাবু টেনশন নিওনা আমি ঠিক ভাবে এই বাসায় আছি।আমার ওপর কেউ কোনো রকম সন্দেহ করেনি।এখন শুধু আমাদের সেই সময়ের অপেক্ষা করতে হবে।
তখন ওপর পাশের লোক কি যেন বললো,তখন অধরা হাসতে লাগলো।
রাতের বেলা কারেন্ট চলে যাওয়ার পর বাড়ির ভিতরে গরম থাকায় সবাই বাইরে উঠানের ওপর বসে আছে।অধরা এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে।রত্মা বেগম তিশার হাতে হাত রেখে বলল
->মা আজ যেমন তোমরা দুইজন একসাথে মিলেমিশে ছিলে ঠিক একই ভাবে তোমরা সারাজীবন এই একইরকম ভাবে মিলেমিশে থেকো।তুমি বাড়ির বড় বউ।বাড়ির সবাইকে ভালো রাখার দায়িত্ব তোমার হাতে।
->চিন্তা করবেন না মা,আমি যথাযথ সেই দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবো।আপনি শুধু দোয়া করবেন।
->আমি হয়তো মনের রাগে তোমায় অনেক কথা শুনেয়েছি।এজন্য যেন কিছু মনে করো না।
->কিছু মনে করিনি মা।
তিশা অধরার দিকে তাকিয়ে আছে।অধরা কেমন যেন থমকে দাড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।মৃদ বাতাসে ওর চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।অধরা যখন ঘুরে তিশার দিকে তাকালো তখন তিশা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো।এটা কি দেখলো সে,অধরার চোখ এমন নীল হয়ে জ্বলছে কেন?তিশা একটু ভয় পেয়ে ওর শাশুড়ির দিকে তাকালো এটা দেখার জন্য যে উনি কিছু দেখেছে কি না?কিন্তু উনাকে দেখে মনে হলো উনি কিছু দেখেনি।তিশা আবার অধরার দিকে তাকালো তখন দেখলো না সব ঠিক আছে।তিশা মনের ভুল ভেবে সেটা নিয়ে আর মাথা ঘামালো না।
রাতের বেলা আয়ান বাসায় আসার পর রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আয়ান তিশার সাথে কথা বলে অধরার কাছে গেলো।আয়ান বিছানায় বসে আছে ওর গলার কাছে বেশ জ্বালা করছে।আয়ান অধরাকে বলল
->এই মেয়ে শোনো?
->হ্যাঁ বলুন।
->রাতের বেলা তুমি আমার সাথে কিছু করেছো কি না জানি না তবে আমার গলায় এটা কি কামড়িয়েছে তা দেখেছো কি তুমি?
অধরা আয়ানের গলার পাশে দেখে বলল
->এমা এটা এমন হলো কি করে?
->সেটাই তো জিজ্ঞেস করছি?
->দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো বাদুড় কামড়িয়েছে আপনাকে।হয়তো রক্ত খেতে চেয়েছিলো।
অধরার কথা শুনে আয়ান রেগে গিয়ে অধরাকে ধমক দিয়ে বলল
->চুপ করো ফাজলামি করো আমার সাথে।
অধরা আর কিছু বললো না।মন খারাপ করে বসে রইলো।আয়ান শুয়ে পড়ার পর অধরা ওর পাশে শুয়ে পড়লো।আয়ান ভাবছে,তিশা বললো সাপে কাঁটার মতো দাগ আর এই মেয়ে ডাইরেক্ট বলে দিলো এটা বাদুড় কামড়ানোর মতো দাগ।আয়ানের একটু সন্দেহ হলো,আয়ান অধরাকে বলল
->এই মেয়ে তোমার কেন মনে হলো যে এটা বাদুড় কামড়ানোর দাগ?
আয়ানের কথা শুনে অধরা থতমতের মধ্যে পড়ে গেলো।সে কোনো মতো কথা কাটিয়ে বলল
->আমি অনেক কার্টুন মুভিতে দেখেছি,বাদুড়ের কামড়ে এমন দাগ হয়।
->ধুর।
আয়ান মনে মনে বলল,কেন যে বিয়ে করলাম ওর মতো পাগলকে।সত্যি বলতে তিশা ছাড়া কেউ ওকে বুঝতে পারবে না।আয়ান ঘুমিয়ে পড়ার পর অধরা দেখলো বেলকনির ওপর কারো ছায়া দেখা যাচ্ছে।অধরা উঠে সেখানে গেলো তখন কেউ বলল
->নিজের নেশাটাকে দমিয়ে রাখো।নয়তো ধরা পড়ে যাবে আর সাবধানে থাকবে।ওই তিশার কাছে থেকে সাবধানে থাকবে সে কিন্তু অনেক চালাক।
->হুম বুঝতে পেরেছি।তুমি এখন যাও।
অধরা আবার এসে শুয়ে পড়লো।সে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো সেই রহস্যময় হাসি দিলো।
তিন-চার মাস খুব ভালোভাবে চলে গেলো।আয়ান তিশা আর অধরা দুইজনকে ভালোবাসে।তিশার মনে মনে এটা ভেবে খুশি হলেও তারপরও কিসের যেন একটা শূন্যতা কাজ করে ওর মধ্যে।অবশেষে সেই কাঙ্খিত খবরটি আয়ানের পরিবারের সবাই পেলো,”অধরা মা হতে চলেছে”।বাড়ির সবাই অনেক খুশি।আয়ান নিজেও খুশি হয়েছে।খুশিতে সে অধরাকে জড়িয়ে ধরলো।তিশার দিকে চোখ পড়তে দেখলো তিশা মুচকি হাসছে কিন্তু চোখে পানি ছলছল করছে।এটা দেখে আয়ানের খুব খারাপ লাগলো।সেদিন রাতে তিশা ঘুমিয়ে ছিলো।মাঝরাতে হঠাৎ কেউ যেন ওর গলা শক্ত করে চেপে ধরলো?
চলবে,,,,,,।