নিষ্প্রভ_প্রণয় #পর্ব_০৩ লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

#নিষ্প্রভ_প্রণয়
#পর্ব_০৩
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ

” তুমি যদি এতোটাই ভালো মেয়ে হও তো আগের বিয়েটা ভেঙ্গেছিল কেন?ছিঃ ছিঃ!লজ্জ্বা করে না সন্তান পেটে রেখে বিয়ে করার জন্য ঢ্যাং ঢ্যাং করে রাজি হয়ে যেতে?আমার ভাইয়ের মাথাটা চি’বিয়ে খেয়ে কি শান্তি পেলে? ”

পরিচয়ের শুরুতেই নিষাদের বড় বোন নিলি এই কথাগুলোই বলল।সেতু একনজর নিলির দিকে তাকাল।চোখেমুখে আলাদা তেজ, ক্ষোভ নিলির।এসব যে শুধু সেতুর জন্যই বরাদ্ধ তা বুঝতে পেরেই হালকা হাসল সে।মৃদু আওয়াজ করে বলল,

” আমি ঠিক কি প্রয়োজনে আপনার ভাইয়ের মাথা চি’বুতে যাব?”

” সেটা তো তুমিই জানো।মাথা না চি’বুলে আমার ভাই তোমার জন্য পাগল হয়ে আছে কেন!তোমাকেই বিয়ে করতে হবে এর কি মানে?”

” হতে পারে আপনার ভাই অন্য কোন উদ্দেশ্যে বিয়েটা করতে চাইছে?হতে পারে না?”

নিলি সেতুর কথাগুলোতে সন্তুষ্ট হতে পারল না।একে তো মেয়েটার সাথে তার ভাইয়ের বিয়ে হবে, তার উপর মুখে মুখে তর্ক করছে মেয়েটা?এই মেয়ে ভারী বেয়াদপ! এমন একটা চিন্তা মাথার মধ্যে স্থাপন করেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল সে,

“আমার ভাইয়ের উদ্দেশ্য না জানলেও তোমার মতো মেয়েদের উদ্দেশ্য আমি খুব ভালোভাবেই জানি।যে দেখলে আমার ভাই সুন্দর,স্মার্ট, ভালো চাকরি করে ওমনিই গলায় ঝুলে পড়ার জন্য লাফিয়ে উঠলে হুহ!চরিত্রহীন মেয়ে কোথাকার! ”

নিলির শেষের কথাটাই বুকে গিয়ে আঘাত করল সেতুর।চরিত্রহীনের মতো সে কি করেছে?বিয়ের আগে সে কখনো নিষাদের সাথে সম্পর্কে জড়ায়নি।আর বিয়ের পর তোো তার ধ্যানজ্ঞান ছিল আকাশ।তাহলে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠল কেন?সেতু চোখজোড়া বন্ধ করেই ছোট্ট শ্বাস ফেলল।কিছু বলার আগেই তার বউদি ছুটে এসে উত্তর দিলেন,

” এসব কি ধরণের কথাবার্তা আপনাদের?সেতু কখন আপনাদের ছেলের গলায় ঝুলে পড়ার জন্য লাফাল?বিয়ের প্রস্তাবটা কিন্তু প্রথমে আপনাদের বাড়ি থেকেই এসেছিল।আর আমার ননদ যে বিয়েতে ঢ্যাংঢ্যাং করে রাজি হয়ে গিয়েছে তা আপনারা কি করে জানলেন?এই বিয়েতে ওর তেমন মত নেই বললেই চলে।আমি আর ওর ভাইই আপনাদের প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছিলাম।”

” তা ডিভোর্সী মেয়ে আপনাদের ঘাড়ে এসে বসেছে বলে প্রস্তাবটা পেয়েই লাফিয়ে উঠলেন ননদকে আমাদের ঘাড়ে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য?”

সেতুর বউদি এবার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল।ঝাঝালো গলায় বলে উঠল,

” আপনারাই তো বিয়েটার জন্য উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিলেন। এখন আমাদের উপর দোষ দিচ্ছেন?আপনারা বিয়ের প্রস্তাবটা না দিলে কি আমরা সেতুকে রাস্তায় ফেলে আসতাম?এতগুলো মাস কি রাখিনি ওকে?”

সেতুর বউদির ঝাঝালো গলায় কথাগুলো শুনেই দ্বিগুণ ক্ষেপে উঠল নিলি।মনে মনে আওড়াল, শুধু এই মেয়ে না, এই মেয়ের পুরো পরিবার বেয়াদব!গলা শক্ত করে কিছু বলবে সে ঠিক তখনই তার স্বামী তার হাতটা ধরে ফেলল। করুণ চাহনীতে তাকিয়েই নরম গলায় বলল,

” নিলি?আমরা কি ঝগড়া করতে এসেছি এখানে?বিয়ে পাকা কথা তো হয়েই গিয়েছে।তোমাকে এমন আক্রমনাত্মক আচরণে মানায় না নিলি।নিজেকে সংযত করো।”

নিলি স্বামীর নরম গলায় থেমে গেল।শুধু মাত্র এই মানুষটাই তাকে থামাতে পারে, বুঝাতে পারে, আগলে রাখতে পারে।এই মানুষটার কাছেই তার সমস্ত রাগ জেদের অবসান ঘটে।অবশেষে চুপ হয়ে সেতুর মুখের দিকে চাইল।ক্লান্ত চাহনী!নিলির স্বামী মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করল,

” তোমার নাম কি?”

সেতু চোখ টানটান করে চাইল।উত্তর দিল,

” সেতু ভৌমিক।”

ভদ্রলোক মৃদু হেসেই আবারও বললেন,

” বাহ!সুন্দর নাম!পড়ালেখা কতটুকু করেছো?”

” উচ্চামাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয়ে উঠেনি।তার ঠিক আগে আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।বিয়ের পর পড়ালেখা নিয়ে আর কেউ মাথাই ঘামায়নি।”

“ওহ।সমস্যা নেই।তুমি চাইলে আবার পড়ালেখা শুরু করতে পারো।”

বিনিময়ে সেতু কিছু বলল না।নিলি সরু চেখে তার বর আর সেতুর কথোপকোতন শুনছিল।অবশেষে দুইজনকে চুপ থাকতে দেখেই বলে উঠল,

” তোমার আগের বিয়েটা কতদিন টিকেছে?”

সেতু থমকাল।আগের বিয়ের মেয়াদকাল খুবই স্বল্প।মাত্র দশমাস!আকাশের সাথে তার কোনদিনই খুব একটা ভালোবাসার সম্পর্ক হয়ে উঠেনি।আকাশ বিয়ের প্রথমদিকেই জানিয়ে দিয়েছিল সে অন্য কাউকে ভালোবাসে। তবুও যা সম্পর্ক ছিল তা ছিল শারিরীক সম্পর্ক।মাঝেমাঝেই আকাশ তাকে কাছে টানত। সেতু ভেবেছিল শেষমেষ সবটা ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু ঠিক হলো কোথায়?আকাশ তো মনে মনে তাকে ডিভোর্স দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছিল।উপরে একরূপ, ভেতরে অন্যরূপ!সেতু ছোট ছোট চোখে তাকিয়েই মৃদু গলায় বলল,

” দশমাস।”

নিলি চমকাল।অবাক হয়ে বলল,

” দশমাস? কেবল দশমাস?”

” হ্যাঁ।”

” তোমার বয়স কত তাহলে?তুমি কি নীরুর বয়সী?”

কথাটা বলেই পাশে বসে থাকা ছোটবোন নীরুর দিকে চাইল সে।নীরু চোখে অস্থির দৃষ্টি।দাঁত কেলিয়ে বলে উঠল,

” না না, সেতু দি আমার থেকে দুইবছরের বড়।ওর বিশ বছর, আমার আঠারো। ”

নিলি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়েই বলল,

” তুই কি করে জানিস?”

” বললাম না আগে থেকে চিনি আমি। অনেক আগে থেকে! ”

নিলি থমথমে মুখে সেতুর দিকে তাকাল। আবারও বলল,

” তোমার সাথে নিষাদের পরিচয় কিভাবে?মানে কখন থেকে পরিচয়?বিয়ে ভাঙ্গার পর থেকে?”

সেতু চোখ তুলে চাইল।এরকম একটা প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না সে।এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে সে?সেতু অনেকক্ষন চুপ থকে ভাবল।কিন্তু মস্তিষ্ক কোন সায় দিচ্ছে না।কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে হতাশ হলো।বলল,

” না।”

নিলি ভ্রু কুঁচকে বলল আবারও,

” কি না?”

” পরিচয়টা বিয়ে ভাঙ্গার পর থেকে নয়।আমি উনাকে চিনি অষ্টম শ্রেণি থেকে।”

উত্তর পেয়েই নিলির মাথায় সন্দেহ চাপল।চোখভর্তি সন্দেহভরা দৃষ্টি নিয়েই সে বলে উঠল,

” তোমার সাথে কি নিষাদের সম্পর্ক ছিল আগে?নিষাদ কি তোমার প্রাক্তন প্রেমিক হয়? ”

সেতু চমকাল। অস্বস্তিতে হাত পায়ের তালু ঘেমে উঠল।নিষাদ কি তার প্রাক্তন প্রেমিক ছিল প্রশ্নটা মস্তিষ্কে ঘুরতেই চুপ হয়ে গেল সে।ঠিক প্রাক্তন প্রেমিক না।তবে কি প্রাক্তন অনুভূতি ছিল?নাহ!অনুভূতি কি প্রাক্তন হয়?সেতু নিঃশ্বাস পেলেই গম্ভীর স্বরে বলল,

” না।তেমন কোন সম্পর্ক ছিল না উনার সাথে।”

কথাটা বলেই চুপ থাকল সে। তারপর আরো অনেক কথা হলো।অবশেষে তিনজনই কথাশেষে চলে গেল।সেতু আর বসে রইল না সেখানে। তার কান্না আসছে ভীষণ।সঙ্গে সঙ্গে রুমে গিয়ে দরজা লাগাল।বেলকনিতে গিয়ে বসতেই ঠান্ডা শিরশিরে বাতাস ছুঁয়ে গেল শরীর।সেতু আর থেমে থাকল না।কান্না করে দিল বেলকনির গ্রিল ধরে।অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়েই অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল,

” ক্ কেন? ক্ কেন আমিই?কেন আমাকে নিয়েই প্রশ্ন উঠল?”

কথাগুলো বলেই অশ্রুসিক্ত চোখের ঝাপসা দৃষ্টি অন্ধকার আকাশ থেকে সরিয়ে নিচে নামাতেই থমকে গেল সে। একজোড়া চোখের গভীর দৃষ্টি দেখেই শরীর হীমশীতল অনুভব করল। বুকের ভেতর শীতল অনুভূতিরা আঁচড়ে পড়ল যেন।আজ কতবছর পর!কতদিন পর!ঝাপসা চোখে সুদর্শন পুরুষটির দিকে তাকিয়েই অপলক চেয়ে থাকল সে।গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।গাড়ির পেঁছনের সিটেই তার বড়বোন আর ছোটবোন উঠে বসল।বড়বোনের বর সামনে সিটে উঠে বসতেই সেও উঠে বসল।সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটা ছুটে গেল।সেতু সেদিক পানে তাকিয়ে রইল।নিষাদ আগের থেকে সুদর্শন হয়েছে।চোখেমুখে আলাদা গম্ভীর ভাব এসেছে।অথচ আগে এই পুরুষটির মাঝে এতটা গম্ভীর ভাব ছিল না। মুখে সর্বদা দাঁত কেলানো এক হাসি থাকত ছেলেটার। উচ্ছল, প্রাণবন্ত এক ছেলে ছিল।সেতুর কল্পনায় সেই হ্যাংলা, পাতলা, প্রাণবন্ত ছেলেটার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠতেই সে আনমনে হাসল।বুকের ভেতর অজস্র অনুভূতিরা সে কিশোরী বয়সের মতো ডানা ঝাপটাল। হৃদয়ের স্পন্দন বাড়ল।ঠিক তখনই ফোনে ম্যাসেজের আওয়াজ আসল। সেতু তাকাল।স্ক্রিনে তাকাতেই ভেসে উঠল গুঁটিকয়েক অক্ষরে কয়েকটা বাক্য।

” তোমার কান্নায় শতসহস্র সুখেরাও আমায় অনুভব করায় আমি সুখের মাঝে ভেসে থাকা এক দুঃখী মানব।কেন সেতু?আমার তো সুখী হওয়া উচিত।তাই না?”

সেতু চোখ বুঝল।নিষাদ কি তার কান্না দেখেছে?বেলকনির আলো জ্বালানো ছিল৷ হয়তো দেখে ফেলেছে।
.

সকাল থেকেই শরীরটা কেমন দুর্বল লাগছে সেতুর।হুট করেই জ্বর নামল শরীরে।সারা শরীর জ্বরের উত্তাপে নুঁইয়ে আছে।সেতু বিছানা ছেড়ে উঠতে পারল না।সকাল থেকেই বউদি কয়েকবার ডেকেছে তাকে কাজে সাহায্য করার জন্য।তাও উঠে যেতে পারেনি সে।জ্বরে বেহাল অবস্থা।অবশেষে না পেরেই উঠে বসল। তখনই তার বউদি ঘরে ডুকল।একরাশ রাগ নিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে উঠল,

” রাত ধরে কি ঘুমাওনি তুমি? সকাল ধরে ডেকে যাচ্ছি।কানে কথা যায় না তোমার?নাকি কাজ করার ভয়েই ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে আছো?”

সেতু ক্লান্ত চাহনীতে বউদির দিকে তাকিয়েই বলল,

” আমার শরীর কাঁপছে কেমন বউদি।সকাল থেকে কেমন দুর্বল লাগছে।প্রেশার লো বোধহয়।”

” হ্যাঁ, যত রাজ্যের অসুস্থ তো সব তোমরাই হও।আমাদের তো অসুখবিসুখ হয় না সেতু। তাই না?সংসারের বিনাপয়সার কাজের লোক কিনা আমি।সব তো আমাকেই খাটতে হবে তাই না?বাকি সবাই নিশ্চিন্তে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোবে আর বসে বসে খাবে।আহ সুখ!এমন সুখ আমার কপালেই জুটে না কেবল।”

সেতু একইভাবে তাকিয়ে থাকল।বউদি যে কথাগুলো তাকেই উদ্দেশ্য করে বলছে তা বেশ বুঝতে পারছে।অন্যদিন হলে সে কাজে ঠিকই হাত লাগাত কিন্তু আজ চেয়েও পারছে না।শরীর কাঁপছে কেমন!মনে হচ্ছে বিছানা ছেড়ে উঠলেই সে পড়ে যাবে।কাঁপা স্বরেই বলল,

” সত্যিই আমার কেমন লাগছে বউদি।তবুও আসছি আমি রান্নাঘরে।তুমি বরং যাও।”

” না নাহ বাবাহ!থাক।তোমায় ওসব কাজ করায় কি মানায়?রাজরাণী বলে কথা।শুয়ে থাকো বরং।আমি করে নিতে পারব কাজ।”

” এভাবে কেন বলছো বউদি?অন্যদিন কি আমি কাজ করি না?আজ শরীরটা দুর্বল লাগছে তাই। নয়তো আমি সকালে উঠেই রান্না বসিয়ে দিতাম।”

” হ্যাঁ, তোমাকে দিয়ে তো খাঁটিয়ে মা’রি তাই না?এমনিতেও বলে ফেলেছো না তোমাকে না খাইয়ে তোমাকে আর তোমার সন্তানকে মে’রে ফেলছি?কোনদিন না জানি বলে বসবে কাজ করিয়ে, খাঁটিয়ে মে’রে ফেলছি।তাই না?”

সেতু লম্বা শ্বাস টানল। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েই নরম স্বরে বলল,

” আমি এসব কখনোও বলব না বউদি।বরং তোমাদের প্রতি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।তোমরা না থাকলে সে কবেই আমি আমার সন্তানসহই ম’রে যেতাম।যায় হোক আমি কারো উপকারের কথা ভুলি না বউদি।এইটুকু বিশ্বাস তো রাখতেই পারো আমার উপর।”

সেতুর বউদি নরম হলে না কথাগুলোতে।মুখে থমথমে ভাব বজায় রেখেই হনহন করে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে।সেতুও ধীর পায়ে কদম ফেলে রান্নাঘরে গেল।বটি নিয়ে তরকারির ঝুড়ি নিয়ে বসতেই বউদি বলে উঠল,

” কি দরকার!তোমার দাদা আজ এমনিতেই না খেয়ে বেরিয়ে গেছে।এখন আবার তরকারি কাঁটতে আসার কি দরকার ছিল? তুমি বরং ঘুমাও!”

বউদি যে কথাগুলো রাগ নিয়েই বলল তা বুঝেই মিনমিনে চোখে চাইল সেতু।হেসে বলল,

” আমি আসার আগে দাদার নাস্তাটা তো তুমিই করতে বউদি।আজও নাহয় দাদাকে নাস্তাটা করে দিতে।আমার ভাইটাকে তাহলে নাস্তা না করে বের হতে হতো না বউদি।”

” আমি তো আর জানতাম না তোমার ননীর পুতুলের ন্যায় শরীর দুর্বল লাগছে বলে নাস্তা বানাবে না। আমিও ঘুমে ছিলাম।”

সেতু তাচ্ছিল্য নিয়ে হেসেই বলে উঠল,

” অথচ আগে কিন্তু ভোরেই ঘুম থেকে উঠতে।এই কয়মাসে অভ্যাস বদলে গেল বলো?যায় হোক, দাদাও তো অফিস যাওয়ার সময় ডাক দিল না। তাহলে নাহয় উঠে নাস্তা করে দেওয়ার চেষ্টা করতাম।”

” তোমার দাদা তো অতি ভালো,আদর্শ ভাই। তাই বোনের সুখের কথা ভেবে ডাকেনি হয়তো।”

সেতু হাসল।আর কোন কথা না বলে তরকারি কাঁ’টায় মন দিল। বেশ ভালোমতো বসে তরকারি কাঁ’টা শেষও করল।কিন্তু বিপত্তি বাঁধল তরকারি কেঁ’টে উঠে আসার সময়ই।চারদিকটা কেমন ঘোলাটে দেখাল।শরীরটা যেন নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারল না।সামনে যে পা ফেলবে সে শক্তিটুকুও নিজের মধ্যে আনতে পারল না।মাথা ঘুরিয়ে ঝুঁকে অন্যদিকে পড়ে যেতে নিতেই বউদি ঝাপটে জড়িয়ে ধরল।পরক্ষনেই শরীরের উত্তাপ বুঝে উঠেই অবাক হয়ে বলল,

” এ কি সেতু!এই অবস্থায় এত জ্বর!তুমি তো বললে না তোমার এত জ্বর!এখন ভালোমন্দ কিছু হলে দোষ তো সেই আমার উপরই পড়বে।তুমি না সেতু সত্যিই!”

সেতু ছোট ছোট চোখে বউদির দিকে তাকিয়ে থাকল।বউদি তাকে কোনরকমে ধরে ধরে সোফায় নিয়ে বসাল।তার পরপরই তার ভাইকে কল দিয়ে বিষয়টা জানাল।তারপর কি বুঝেই বউদি সেতুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে ছুটল।গর্ভাবস্থায় শুধু একবারই ডাক্তার দেখিয়েছিল সেতু,তাও বউদির নানা কথা শুনতে হয়েছিল।তারপর আর ডাক্তার দেখানো হয়ে উঠেনি।

.

ডক্টর দেখিয়ে হসপিটাল থেকে বেরুতেই সেতুর বউদি ভ্রু কুঁচকাল।সেতুর হাত চেপে ধীর গলায় বলল,

” সেতু?দেখো আকাশ আর ওর দ্বিতীয় স্ত্রী।”

সেতু ক্লান্ত ভঙ্গিতেই হাঁটছিল বউদির সাথে।হঠাৎ বউদির কথা কানে আসতেই চোখ তুলে চাইল।সামনেই আকাশ আর আকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী ইরা।হসপিটালেই ডুকবে হয়তো।সেতু এড়িয়ে যাবে ভেবেই চোখের দৃষ্টি সরাল।নিচের দিকে তাকিয়ে পা বাড়াবে ঠিক তখনই আকাশের কন্ঠ আসল কানে,

” সেতু?কেমন আছো?”

সেতু আবারও চোখ তুলে চাইল।আকাশের প্রশ্নের উত্তরে বলতে ইচ্ছে হলো,” ভালো থাকার উপায় রেখেছো?কেন বিয়ে করেছিলে আমায়?কেন সংসারের নাম করে আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছো?”। কিন্তু বলতে পারল না।মুখে অমায়িক হাসি টেনেই বলল,

” এই তো দিব্যি আছি।তুমি?”

আকাশ ছোট্ট শ্বাস ফেলল।ক্লান্ত গলায় বলল,

” এই তো আছি।”

সেতু এবার আকাশের দ্বিতীয় স্ত্রী ইরার দিকে চাইল।মৃদু স্বরে বলল,

” ভালো আছো?”

ইরা এতক্ষন ভ্রু কুঁচকে সেতুর দিকে তাকিয়ে ছিল।ঠিক সেতুর দিকে নয়, সেতুর উঁচু হওয়া পেটের দিকে তাকিয়ে ছিল।মনে হয়তো অনেক প্রশ্ন। তবুও বলল,

” হু।”

সেতু হাসল।ভালো থাকারই তো কথা।আবারও আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল সে,

” সংসার কেমন চলছে তোমাদের?”

” এই তো ভালো।তুমি এইখ্…”

বাকি কথাটা আকাশ সম্পূর্ণ করতে পারল না।পরমুহুর্তেই চোখ পড়ল সেতুর ফুলে উঠা পেটের দিকে।সেতু কি প্র্যাগন্যান্ট?কথাটা মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই মুহুর্তেই চমকে উঠল সে।অস্পষ্ট গলায় বলল,

” ত্ তুমি প্র্যাগন্যান্ট সেতু?”

সেতু হালকা হাসল।মৃদু আওয়াজ তুলে বলল,

” হ্যাঁ।”

কথাটা বলেই আর একমুহুর্তও দাঁড়াল না সে।পা ফেলে বউদির হাত চেপে এগিয়ে গেল। পেঁছনে রেখে গেল তিনজোড়া চোখের চাহনী।যার মধ্যে দুইজোড়া চোখের দৃষ্টিতে ছিল শতসহস্র প্রশ্নের সমাহার।আর একজোড়া চোখের গভীর দৃষ্টিতে ছিল একরাশ ক্ষোভ আর রাগ!

#চলবে…..

[ কেমন হয়েছে মন্তব্য করে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমাদৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here