নিষ্কলুষচিত্ত তুমি |৮|

নিষ্কলুষচিত্ত তুমি |৮|
লেখা : মান্নাত মিম
_______________

“এই মেয়ে এই! ওঠ বলছি।”

নাহ, কোনোমতেই ঘুমন্ত রমনীর ঘুম ভাঙানো গেল না। প্রত্যেক দিনের এমন চাকরি করতে আর ভালো লাগে না নিশির। অতিষ্ঠ হলেও ফের ব্যর্থ প্রয়াস চালায় সে।

“দেখ উঠতে বলছি কিন্তু, নইলে বাথরুমের বদনার পানি ঢালমু।”

ফট করে মুখে ঢাকা চাদর সরিয়ে ওঠে বসে মেয়েটা বলল,

“প্রথমত, আমার একটা নাম আছে। তা হলো নন্দিতা। দ্বিতীয়ত, নাম নিয়ে ডাকিসনি বলে উত্তর পাসনি।”

হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথাগুলো বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াল নন্দিতা। এদিকে নিশি সেসবে একদমই পাত্তা না দিয়ে বিছানা গুছিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াল।

ডুপ্লেক্সের বাড়িটা মফস্বলি এলাকায় নির্মাণ করা। মাঝে মানুষের আনাগোনা কম না, রাস্তার পাশেই বাড়িটা তৈরি। সকলের রুমেই বারান্দা রয়েছে আর সেখান থেকে মানুষের আনাগোনাও দেখা যায় অনায়াসেই। ওপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিশি ড্রয়িংরুম পেরিয়ে ডাইনিংরুমে গেল। ডাইনিংরুম থেকে ড্রয়িংরুমে দেখা যায়, আর ড্রয়িংরুমে কারো পদক্ষেপ হলে ডাইনিং থেকে সেটা স্পষ্ট দেখা যায়। সাত-আট জন বসার ডাইনিং টেবিল বরাবর রান্নাঘর সাদৃশ্য। নিশি সেদিকেই পা বাড়াল। গিয়ে দেখতে পেল মিসেস শাহানা রুটি ভাজছেন ব্যস্ত ভঙ্গিতে। সেদিকে তাকিয়ে নিশি বলল,

“আন্টি, এত যে তাড়াহুড়ো করে হাত-টাত পুড়ে রান্না করছ, অথচ দেখ গিয়ে নবাবের বেগম এখনো ওয়াশরুমে বসে ঝিমাচ্ছে।”

বলেই পাশ থেকে একটা ভাজা রুটি নিয়ে চলে গেল ডাইনিং টেবিলে। মিসেস শাহানা ছোটো করে নিশ্বাস ফেললেন। আর ভাবতে লাগলেন সেই ফেলে আসা অতীতের কথা।
_________

নিশি তখন ক্লাস টু-তে পড়ে। মিসেস শাহানার স্বামী রেজাউল করিম বাড়ি শিফট করেন যশোরে, তাঁর কাজ কনস্ট্রাকশন কনট্রেক্টটরের। প্রথম দিকে ভাড়া থাকতেন পরে আস্তে আস্তে নিজের টাকায় বাড়ি তৈরি করেন। যশোরে নতুন আসায় নন্দিতাকে নতুন করে ভর্তি করতে হয়, নিশি-ও সেই একই স্কুলের, একই ক্লাসে পড়ে বিধায় তার চঞ্চলতার মাধ্যমে গুমোট হয়ে থাকা নন্দিতার মন জয় করে বন্ধুত্ব গড়ে দু’জনে। নিশি একা আসত স্কুলে, নন্দিতা তার মা’য়ের সাথে আসত। তবে পরীক্ষার সময়ের বেতন দিয়ে গিয়ে দেখা যেত নিশির মা’কে ঝগড়া করতে। দেখেই বোঝা যেত, টাকা-পয়সার টানাপোড়েনের কারণে এই ঝগড়া সৃষ্টি হতো। যার জন্য নিশির বেতন বা পরীক্ষার ফি কিছুই টাইম মতো দেওয়া হত না। একবার মিসেস শাহানা ধরেই ফেলেন নিশির মা’কে।

“কী হয়েছে ভাবি, ঝগড়া কীসের?”

যদি-ও বিষয়টা জানতেন মিসেস শাহানা কারণটা। তবুও তাঁর মুখ থেকে শুনতে চান। অনেক সময় আত্মসম্মানবোধের কারণে অনেকে লজ্জিত হয়, অপর ব্যক্তির মুখ থেকে শুনতে। সেই উদ্দেশ্যে থেকেই জিজ্ঞেস করা। খানিকটা সময় পরে ইতস্তত ভঙ্গিতে নিশির মা বলা শুরু করেন।

“বোন, কী আর বলল? পোড়া কপাল নিয়ে জন্মেছি, কপাল এতই খারাপ যে, বিয়ের পরেও শান্তির নাম নিশানা নেই। নিশির বাবার কাজ নেই। যখন যে কাজ পায়, সে কাজ করে। ইদানীং কাজকর্ম না থাকায় বাসা ভাড়াই ঠিকমত দিতে পারছি না, আর তো মেয়ের বেতন, পরীক্ষার ফি কীভাবে দেব?”

সেই থেকে মিসেস শাহানা উদার মনোভাব পোষণ করে পরোপকারী দেখিয়ে নিজের স্বামীকে বলে কাজ ঠিক করে দেন। সময় গড়িয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়। সাথে নন্দিতার আর নিশির বন্ধুত্ব হয় আরো গাঢ়। ক্লাস এইটে সামনে আসন্ন জেএসসি পরীক্ষা দুই বান্ধবীর। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, পশ্চিমাকাশে লালচে-হলুদ আভার সূর্যের হেলে পড়া দেখছে দুই বান্ধবী মিলে। কিছুক্ষণ আগেই পরীক্ষার পড়ার পাঠ চুকিয়ে ছাদে এসে দাঁড়িয়েছে দু’জন। এরইমধ্যে এম্বুলেন্সের শব্দে নিম্নমুখী হয়ে গেট দিয়ে এম্বুলেন্সের গাড়ি ভেতরে ঢুকতে দেখে কৌতুহলী চোখে। একে-অপরের দিকে তাকিয়ে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে আসে। এম্বুলেন্স থেকে স্ট্রেচারে করে লাশ নামাচ্ছে দু’জন লোক। লাশটার মুখ ঢাকা। নিশি, নন্দিতা এগিয়ে যাচ্ছিল লাশের কাছে। তখনই এম্বুলেন্সের ভেতর থেকে কান্নারত নিশির মা বেরিয়ে আসে। নিশির বুক ধুকপুক করছে, সে বুঝতে পারছে না এখানে হচ্ছেটা কী? ঘুরে ঘুরে মা ও লাশটা’কে দেখছে। মনে কেমন কু গাইছে। যেন খারাপ কিছুর আভাস। নিশির মা এগিয়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে জানান দেন,

“নিশি রে তোর বাপে আর নাই। আমাদের ফালাইয়া একলা করে চলে গেছে।”

নিশির মনে হচ্ছে, তার মা এত চিৎকার করে মিথ্যা কথা বলছে। আচ্ছা, মা কেন তাকে মিথ্যা বলছে? সে তো লেখাপড়া ভালো করে করছে, তবুও কেন তাকে ভয় দেখাতে হবে? ভাবনাগুলোর উত্তর মেলে যখন মিসেস শাহানা এসে তার মা’কে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনার বাণী শোনান। লাশের মুখ উন্মোচিত করেন রেজাউল করিম। বিষণ্ণতা ভর করে আছে রেজাউল করিমের মুখটা। তখনো ভালো করে নিশি তার বাবা-র মুখ দেখেনি। যখন সেদিকে চোখ পড়ল, আর কপালের মোটা ব্যান্ডেজ থেকে রক্ত পড়ে মুখও রক্তাক্ত অবস্থা হতে দেখল, তখনই এক চিৎকারে জ্ঞান হারাল। জ্ঞান ফিরল পরেরদিন সকালে। জ্ঞাত হলো তার বাবা’কে কবর দেওয়া হয়ে গেছে। পরের দিনগুলো ছিল ভয়াবহতম। বাবাহীন জীবন নিরীহদের মতো। মাথার ওপর ছাদ নেই, ভাড়া জমতে জমতে পাহাড় গড়াবে এমন অবস্থা সাথে তো স্কুলের বেতন, পরীক্ষার ফি আছেই। শেষে উপায় না পেয়ে নিশির মা গেলেন রেজাউল করিমের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে। রেজাউল করিমের আন্ডারে কাজ করতে গিয়ে তাঁর’ই একজন কর্মী মারা গেল, কর্মীর পরিবারের ভরণপোষণের দায়ভার নেওয়ার কথা। অথচ সে বিষয়ে তিনি ছিলেন বেখবর। নিশির মা আগ বাড়িয়ে কথা বলতে যাওয়ায় সেটা খেয়াল বা দৃষ্টিগোচর হলো তাঁর। অফিসে ছিলেন বিধায় বাইরে কথা বলার জন্য অপেক্ষা করতে বললেন।

“তা নিশির মা আপনি?”

“জি, সাথে আপনার এখানে ক’দিন আগে যে, এক্সিডেন্টে মারা গেল তার-ও স্ত্রী। দু’টো পরিচয়।”

রেজাউল করিম বেশ ভালো করে লক্ষ করলেন নিশির মা’কে। বয়স বোঝার উপায় নেই, যার কি না তেরো বছরের একটা মেয়ে আছে।

“নাম কী আপনার?”

“লতা, লতা বেগম।”

“জি, মিসেস লতা তা আমার কাছে আসার কারণ?”

কারণ হিসেবে দর্শানো জন্য যাবতীয় জমে থাকা ভাড়া, স্কুলের বেতন, পরীক্ষার ফি এগুলো দর্শাল মিসেস লতা। অতঃপর সবকিছু শুনে রেজাউল করিম হাজার টাকার কয়েকটা নোট দিলেন তাকে সাথে এ-ও বললেন, প্রয়োজন পড়লে আবার আসতে তবে অফিস আওয়ারে নয়। ফোন নম্বর দিলেন, কল করে বাড়িতে এসে সমস্যা জানানোর জন্য।

নিশি কেমন জানি চুপচাপ হয়ে গেছে, আগের মতো হাসে না, মন খোলে কথা বলে না, আর না খেলাধুলা করে। শুধু নন্দিতার বাড়িতে আসা-যাওয়া হয় সময় করে। কারণ পড়ার জন্য টিচার নেই বা প্রাইভেট নেই। নন্দিতার টিচার যা পড়িয়ে যান, সেগুলো নিশি কালেক্ট করে বুঝে নেয় নন্দিতাদের বাড়িতে এসে। অতটুকুই কথা হয় তখনকার সময়। স্কুলেও যায় না নিশি প্রতিদিন। এমন করে যাও কাটলো বছর দু’য়েক। নতুন ভর্তি হবে দু’বান্ধবী কলেজে। নন্দিতা ভালো রেজাল্ট করে পাশ করলেও নিশির রেজাল্ট টেনেটুনে পাশ। তবে মন খারাপ নেই তার মধ্যে। বাবাহীন এতদূর পর্যন্ত পড়েছে ভাগ্যগুণে। নিশির গায়ের রং কালো বলতে গেলে পুরো নয় হালকা শ্যামবর্ণের ধরা যায়। নন্দিতা সেদিক দিয়ে তার ওপরে, তারমধ্যে কী নেই; রূপ, গুণ, অর্থবিত্ত সবকিছুই নিশিকে ছাড়িয়ে সে। বিষয়টা আগে না দেখলেও এখন নিশিকে খোঁচাচ্ছে। কটাক্ষ করে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে তার পছন্দের ভালোবাসার মানুষটা তাকে ভালোবাসলেও প্রশংসা করে নন্দিতার। ঈর্ষানলে পুড়ে ঈর্ষালু প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে মন-ই মনে। তারমধ্যে ঘটে যায় এক জঘন্যতম ঘটনা, যা নিশিকে আরো নির্দয়, নির্মম, নিষ্ঠুর করে নিষিদ্ধ কাজে ঠেলে দেয়। কলেজের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা হওয়ার কথা সেদিন, তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো এক সমস্যায় সেদিন পরীক্ষা মিস যাওয়ায় বাড়িতে ফিরে আসে। ভাবে, একদিক দিয়ে ভালোই হলো পরীক্ষার বিষয়টা পড়ার আরো ভালো করে সুযোগ পাবে সে। কিন্তু পরীক্ষাই আর দেওয়া হলো না তার পরের দৃশ্য ঝলকে। বাড়িতে এসে নিজের মা’কেই দেখে নোংরা অবস্থায় নন্দিতার বাবা ওরফে রেজাউল করিমের সাথে৷ সেদিনের ঘটনাটা ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা, বাবা-র মৃত্যুও মনে হয় অতোটা আঘাত হানেনি, যতটা না সেদিনের দৃশ্যে ছিল। দিনকে দিন নিজের রুমে গুমরে মরতে লাগল। মা’য়ের সাথে দূরত্ব বাড়তে লাগল। একদিন সকালে নিশির চিৎকারে নিচের ফ্ল্যাটগুলোর সকলে এসে দেখতে পেল, লতা বেগমের ঝুলন্ত লাশ ফ্যানের সঙ্গে টানানো। নিশির পড়িমরি অবস্থা দেখে অন্য মহিলারা তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল। ছয়তলা বাড়িটির চারতলায় নিশিদের ফ্ল্যাট। পুলিশি অভিযান বেশি একটা দূরে এগোলো না। আমাদের দেশে কথা আছে একটা, “গরিব জনগণ যত কমবে, দেশটা তত স্বাধীন হবে।” তবে এখানে দেশ স্বাধীন হওয়ার সাথে গরীব জনগণের কোনো মিল না পেলেও গরীবের সংখ্যা কমার সাথে ধনীদের সুবিধা লক্ষণীয় এবং তাঁদের স্বাধীনতাও। যাইহোক, লতা বেগমের কেসটা রেজাউল করিমের কারণেই বন্ধ হয়, কারণ বেশি খোঁচালে তাঁর নাম-ও ওঠে আসার সম্ভাবনা ছিল। তারপরের কাহিনি বেশ সহজ। মিসেস শাহানা বেগমের অনুরোধ বা রেজাউল করিমের নোংরা কাজের স্বাক্ষী স্বরূপ, যেটাই হোক নিশির পদচারণ হয় তাঁদের ডুপ্লেক্সের বাড়িতে।
________

“মাম্মা! কত ডাকছি শোনো না কেন? কী হয়েছে?”

কাঁধ ঝাঁকিয়ে অতীত স্মরণ করা থেকে অব্যাহতি দেয় নন্দিতা। মাথা নেড়ে বলেন,

“না, না কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।”

চলে যায় নন্দিতা ফের ডাইনিং টেবিলে। তখন নিশিকে দেখে অতীত মনে পড়েছিল। আসলে নিশিকে যতই দেখেন, ততোধিক বার অতীতের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যায়। স্বামীর কৃতকর্মের কথা জানা আছে তাঁর। সময়ের আগে বা পিছে যাকে নিয়ে সংসার তাঁর, সেই স্বামীর বিষয়ে খবরাখবর সময় করে জানা যায়। খবর পেয়েছিলেন অফিসের এক কর্মীর কাছে। বাড়িতে প্রায়শই রেজাউল করিমের কম আসার বিষয়ে লক্ষ রাখতে রাখতেই স্বামীর পরকীয়ার বিষয়ে অবগত হোন। তাই বলে যে থালায় খায়, সেই থালা ছিদ্র করা ব্যক্তি হবে, ঘুণাক্ষরেও টের পাননি তিনি। বাড়িতে এটা-ওটা চাওয়ার মাধ্যমে লতা বেগমের অবাধ আসাযাওয়া সন্দেহের চোখে দেখে পরবর্তীতে ধোঁয়াশা খোলসা হয় তাঁর কাছে। বাকিটুকু জানতে পারেন নিশির এ বাড়িতে আসার মাধ্যমে।

“কই, মাম্মা? নাস্তা দাও। ভার্সিটিতে যেতে দেরি হয়ে যাবে তো।”
______

ভার্সিটি সংলগ্ন রাজনীতি কর্মকাণ্ডের ছেলেদের আলাদা ক্লাব আছে। সেখান দিয়ে যাতায়াত সময় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্র যে কি না বড়ো ভাই নামে সবার কাছে পরিচিত, সে প্রায়শই নন্দিতাকে উত্ত্যক্ত করে। আজ-ও ভার্সিটির প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে উঁচু গলায় হাঁকিয়ে বলে,

“রোজ রোজ তুম জো সানাম অ্যাস্যে কারো গ্যে,
হাম জো রোঠ যায়ে তো হাত মারো গ্যে।”

যেমন বিচ্ছিরি গান তেমন বিচ্ছিরি গলায় শুনতে আরো বেশি বিদঘুটে লাগছে। প্রথম বছর যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলো, তখন তো কোনোমতে এসবের চোখে ধরা পড়ল না। সমস্যা গিয়ে বাঁধল দ্বিতীয় বর্ষের গানের অনুষ্ঠানে। বান্ধবীদের সাথে মিলে একত্রে গলা ছেড়ে অনুষ্ঠানে প্রথম গাওয়া গানের তালে হালকা নৃত্য কাল হলো জীবনে। চোখে পড়ল রাজনৈতিক দলের ছাত্রলীগের প্রধান ছাত্রের। অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম তার’ই আন্ডারে, অনুষ্ঠানে শেষ হলে নন্দিতাকে অপেক্ষা করতে বলে খবর পাঠায়। সবকিছু গুছিয়ে শেষে এসে জানান দেয়, সে নন্দিতাকে ভালোবাসে। সেদিন নন্দিতার সেকি হাসি!

“ভালোবাসা কি হঠাৎ বৃষ্টি নাকি? বললেন আর হয়ে গেল?”

নন্দিতার কাছে সেদিন অপমানিত হয়েও তার পিছু ছাড়েনি কাইয়ূম খান। পছন্দ পরিণত হয়েছে জেদে। এখন নন্দিতাকে হাসিল করার জন্য চরম এবং নোংরা পন্থা অবলম্বন করতেও পিছ পা হবে না।
______

তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি সাবজেক্টের ক্লাসগুলো শেষে বাইরে বেরিয়ে এলো নন্দিতা। নিশি অন্য ডিপার্টমেন্টের। সেখানে খোঁজ নিয়েও নিশির খবর পেল না সে। ব্যাপার কী আজ মেয়েটা তাকে রেখে কোথায় উধাও হয়ে গেল? চিন্তিত ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে ডিপার্টমেন্ট ছেড়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামবে, এমনই সময় সিঁড়ির মাঝেই হঠাৎ অচেনা এক মেয়ে তাকে বলল,

“তুমি কি নিশিকে খুঁজছ? তাকে তো কাইয়ূম ভাইয়ার চেলাপেলারা ডেকে নিয়ে গেল।”

“তুমি নিশিকে চিনো কীভাবে?”

সন্দিগ্ধ নজরে জহুরির মতো পর্যবেক্ষণ করছে নন্দিতা মেয়েটিকে। মেয়েটি হেসে বলল,

“একই বিভাগের ছাত্রী আমরা। না চেনার উপায় আছে? বেশিরভাগ নিশিকে তোমার সঙ্গে দেখেছি।”

কুঁচকে আসা ভ্রূদ্বয় এখন একটু সোজা হলো। অতঃপর কথা না বাড়িয়ে ক্লাবের দিকে পা বাড়াল। কিন্তু তার আগেই রাস্তায় নিশিকে দেখা গেল। দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা না গেলেও সামনে গিয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় পেল নিশিকে।

“কীরে তোর এ-অবস্থা কেন? কী হয়েছে? শুনলাম তোকে নাকি কাইয়ূমের লোকেরা ডেকে নিয়ে গিয়েছিল?”

এলোমেলো চুল দিয়ে মুখ ঢেকে থাকা নিশির চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে গুছিয়ে দিতে যাবে, তখনই পিছন থেকে কারো ডাকে ঘুরে তাকালে স্বয়ং কাইয়ূমকে’ই দেখতে পেল সে।

“পাখি যখন নিজ ইচ্ছায় খাঁচায় বন্দি হতে না চায়, তখন তো শিকারীকে জাল বিছাতে হয়।”

সুদর্শন যুবক দেখতে হলেও ভেতরটা তার কুৎসিত, কদাকার। ঘৃণায় মুখ বিকৃত করে ফেলল নন্দিতা। রাগত মুখে উচ্চস্বরে শাসান্বিত গলায় বলল,

“আর কখনো যদি তোকে দেখি আমার পিছু নিয়ে ডিস্টার্ব করতে বা আমার প্রিয়জন’দের ক্ষতি করতে, তাহলে এমন দশা করব না কোনদিন ভার্সিটিতে মুখ দেখাতে পারবি না।”

বলে নিশিকে নিয়ে চলে আসতে নিয়েছিল। কিন্তু পিছন থেকে কাইয়ূম বলে ওঠে,

“কথাটার উলটো পরিণতি ভোগার জন্য তৈরি হয়ে যা নন্দিতা।”

কাইয়ূমের কথায় রাগের আভাস তবুও পিছনে ফিরে তাকাল না নন্দিতা। তবে দু’টো চোখের মিলন ঘটল ঠিকই। সেখানে ছিল কারো জীবনের ধ্বংসযজ্ঞের পরিকল্পনা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here