#নিশুতি_তিথি,পর্ব ১২,১৩
লেখা : মান্নাত মিম
পর্ব ১২
২৫.
হয়তো! এই হয়তো’র মাঝে হওয়া না হওয়ার, অনিশ্চয়তার দোলাচল থাকে। অতিশয় সঠিক নিশ্চয়তার বিচার করা যায় না। অনেক সময় না হওয়ার সম্ভাবনাও এখানে নিহিত থাকে। এই যে জীবন সেটার গতিপথ কিন্তু এই হয়তো’র মাঝেই আঁটকে। ভবিষ্যতে সুন্দর হলে হতেও পারে আবার মন্দের পাল্লা খালি থাকে না সেখানে। সেসব ভাবনার শেষপ্রান্ত পর্যন্ত ভাবার মতো মন চাইল না আলীর। সম্মুখের ভবিষ্যৎ একটা ভুল কাজে তছনছ হতে দেখা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই সে একমাসের ট্রিপকে আঠারো দিন অব্দি ইতি টানল। অতঃপর দেশের মাটিতে পা রাখল। রিমা মজে ছিল ভালোবাসার চাদরে বেশ আদরে আদরে এতদিন। হালকা মন খারাপ কাজ করছে, এত সুন্দর আবেগঘন মুহূর্তগুলো ফেলে আসতে। তবে স্মৃতির ডায়রিতে সেসব আর সবসময়ের মতোই তুলে রাখল। এমন হাজারো স্মৃতিরা খেলা করে তার ডায়রির পাতাতে৷ নিজের শ্বশুরালয়ে এসে সেখানে কাটাল ভালো-মন্দ বেশ খানিক দিন। ভয়ে এখান থেকে তাড়াহুড়ো করে গ্রামে ফেরার পরিকল্পনা ফলায়নি। নাহলে রিমার বাবা-মা তাট এত ছটফটে ভাব দেখলে নির্ঘাত বুঝে যেত মেয়ে জামাইয়ের অভিব্যক্তি। অতঃপর গ্রামে গোয়েন্দা দিয়ে খবর লাগিয়ে সেখানের পরিস্থিতি বুঝতে বেশ বেগ পেতে হতো না তাঁদের। এরপর যা হতো কেস-মামলা, জেল-হাজত। ভাবতেই গা শিউরে এলো আলীর। এদের দ্বারা অসম্ভব কিছুই না, ধনাঢ্য পরিবার খুব কাছ থেকে দেখেছে কি না। দুপুরের ভাতঘুম দেওয়ার পর খবর এলো বসারঘরে ডাকছে তাকে আফজাল সাহেব। আচমকা ডাকার কী কারণ হতে পারে? ভাবতেই ভ্রু কুঁচকে এলো আলীর। একপলক পাশে তাকিয়ে ঘুমন্ত রিমাকে অবলোকন করল। মেয়েটাকে ভালো না বাসলেও একপ্রকার মায়া কাজ করে তার মধ্যে মেয়েটার জন্য। সম্মুখে আগমনী বিপদে না জানি কোন ঘরে ভাঙন ধরে আর না জানি কে ভেসে যায়? কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যে আলীর নিশ্চিত।
২৬.
সময় নিয়ে একটা কথা আছে সেটা হলো, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেহের ঘা শুকিয়ে যায়, কিন্তু মনের ক্ষত সেটা? সেটা কীভাবে শুকাবে? সেই চিহ্ন সারাজীবন বহন করে চলতে হয়। সময় করে পরিবেশ কিংবা প্রিয়জনের সংস্পর্শে এসে নিশ্চিহ্ন হয়। নাহয় একাকীত্বের ঘেরে দগ্ধ হয়ে গভীর থেকে ক্ষত আরে গভীর হয়।
আঞ্জুমান বেশখানিকটা সুস্থ আপাতত। নার্সকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি যতটুকু খেয়ালের প্রয়োজন সেটা লিমা’ই রাখে। এখন পর্যন্ত লিমা নিজের করা ভুলের কথা আঞ্জুমানকে জানায়নি। নিজের মাঝেই চেপে রেখেছে। তবে আঞ্জুমানের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়াল রাখে লিমা তার। হয়তো এটুকুর মাধ্যমে সেই প্রায়শ্চিত্ত করার তাগিদে। বড়ো বাড়ির বাগানে দোলনা আনা হয়েছে, সেটা অবশ্যই আঞ্জুমানের শখের কারণে। সেখানেই বসে দুই সখি মিলে আলাপচারিতায় মগ্ন। দোল খেতে খেতে লিমা বলল,
‘কী করবি সামনেত্তে?’
অবাকান্বিত হয়ে আঞ্জুমানের হতভম্ব মুখ। সে বলল,
‘কী করতাম মানে?’
আঞ্জুমানের মাথায় ঠোসা মেরে লিমা বলল,
‘আরে গাধি! কইলাম এই বাইত ওই থাকবি না কি..’
লিমাকে বলতে না দিয়ে আঞ্জুমান বলে ওঠে,
‘দাঁড়া, দাঁড়া। এই বাইত থাকমু কেমনে ক তো? আর যাওনেরও তো কোনো জাগা নাই। তয়লে?’
অসহায়ত্বের সুর আঞ্জুমানের গলাতে। আসলেই সে যাবেও বা কোথায়? সব দুয়ার তার জন্য বন্ধ। এখানেও বা থাকবে কী করে? আলীকে না সে ভালোবাসে আর না আলী তাকে। সে তো সমাজের চাপে পড়ে বিয়ে করেছে। উপরন্তু আলীর প্রতি ভালোবাসার বদলে আঞ্জুমানের মনে ভয়ের কাজ করে। এতকিছু ভাবনার মাঝে আঞ্জুমানের খেয়াল হলো আলীকে দেখছে না সে বেশ ক’দিন যাবৎ। সেই দেখেছিল ক্লিনিকের বেডে। সেদিনের বিচার সভার সকলের তার প্রতি অসদাচরণ, ধস্তাধস্তি করে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে আসার দৃশ্য মনে পড়ে গিয়েছিল সেদিন জ্ঞান ফেরার পর ঘুমের মধ্যে। এর ওপর আলীর ওভাবে ঝুঁকে থাকা দেখে ভয়ে তটস্থ হয়ে গিয়েছিল সে। তারপরই তো আকস্মিকভাবে চিৎকার দেওয়া। সেই যাইহোক আলীকে এমনিও সে ভয় পায় সে। ভালোই হয়েছে তাকে এভাবে নিজের মতো করে চলতে ছেড়ে দিয়েছে আলী। কিন্তু নিজের বাড়ি ছেড়ে ক’দিনই বা দূরে থাকবে সে, একদিন না একদিন আসবেই তো। তখন, তখন কী হবে? তার কাছে আবার স্বামীর অধিকার চেয়ে বসবে না তো?
২৭.
আলীর ঘুম আসছে না, ছটফট করে এপাশ-ওপাশ করছে শুধু। ওঠে বসল আলস্য ভঙ্গিতে, তবে মুখে সুখের বদলে দুশ্চিন্তার আবির্ভাব। নিজের ঘাড়ে হাত রেখে ঘাড় টিপল কতক্ষণ। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে সে কিছু নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। আর সে চিন্তার জন্য দায়ী একমাত্র শ্বশুর মশাই। চিন্তার সাথে এখন রাগও হচ্ছে। আরে বাবা! বাচ্চা হচ্ছে না দেখে দত্তক নিব না কী করব সেটা নিয়ে ক্যান তাঁর এত মাথা ব্যথা? মাথা ব্যথা তো আমার হবে কারণ তাঁর মাথা ব্যথা আমার মাথায় তুলে নিয়েছি যে। এখন সেটা আমার মাথা ব্যথা না কাঁধ ব্যথা আমি বুঝব। অথচ বলে কি না, মেয়ে আমার মনে মনেই কাঁদে একটা সন্তানের জন্য, এখন তুমি একটা বাচ্চা দত্তক নেও। শ্বশুরের কথাকে মনে করে আলী নিজে নিজেই কথা বলল কিছু সময়।
‘হাহ্! মগের মুল্লুক পেয়েছে আমাকে? বাচ্চা দত্তক চাইলে সেই কবেই নিয়ে নিতাম। তাঁর বন্ধ্যা মেয়ে যে বিয়ে করে এখনো সাথে রেখেছি, এতই ঢের।’
নানান চিন্তাভাবনায় রাতপুরো শেষ করল আলী। পরদিন সকালে আবারও ডাইনিং টেবিলে সেই গতকালের দুপুরের কথা তোলেন ভদ্রলোক আফজাল সাহেব। কিন্তু রিমা যে সেটার বিরুদ্ধে, একেবারেই নারাজ প্রস্তাবটা মানতে। সে দত্তকে বাচ্চা নিবে না। আবার আলীকেও বিয়ে দিবে না। আলী-ও তো মনে মনে এটাই চায়, তবে তার সাহসে কুলোতো না কথাটা মুখ নিসৃত করতে। ভালোই হয়েছে রিমা না করে দেওয়াতে। এখন যদি থামে শ্বশুর মশাইয়ের ঘ্যানঘ্যানানি। খাওয়াদাওয়ার পর্ব সেড়ে রুমে ফিরে এলে আলী বেশ শান্ত কণ্ঠে বলল,
‘আচ্ছা, যদি শুনো আমি আরেকটা বিয়ে করেছি? তাহলে কী করবে?’
আলীর কথা যতটা না শান্ত, ধীর, নিবৃত্ত শোনালো তারচেয়ে বজ্রাহতের মতো বর্ষণ হলো রিমার কর্ণদ্বয়ে কথাগুলো। সেই বজ্রপাতে জ্বলল কেবল হৃদয়, মন, তনু। একাধারে স্রেফ তাকিয়ে রইল আলীর পানে। বোঝার চেষ্টা করছে আলী কি তাকে সত্য না কি মিথ্যা বাণী শোনাল? রিমাকে একধ্যানে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলী স্থির, মন্থরতর মুখশ্রী হাসির উদ্রেক দেখা দিলো। আর সেটা ধীরে ধীরে বেড়ে রুম ছেড়ে বাইরে ড্রইং রুমে বসা রিমার বাবা-মা’য়ের কান পর্যন্ত পৌঁছাল। তাঁরা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন, মেয়ের খুশি দেখে। এদিকে রিমারও এতক্ষণ আটকে থাকা দম, অশান্ত হওয়া মন দুটোতেই স্বস্তি মিলল। এগিয়ে গিয়ে আলীর বুকে দু-চারটা কিল-ঘুষিও দিলো। সাথে ফোঁসফোঁস শব্দে উচ্চারণ করল,
‘আমাকে এভাবে ভয় দেখাতে ভালোই লাগে না? বেশি ভালোবাসি দেখে এভাবে কাঁদাতে মজা পাও?’
হাসির চোটে কিংবা রিমার কিল-ঘুষির বর্ষণে ক্ষণকাল যাবৎ চুপ করে রইল আলী। শেষে শুধু এযাবৎকালের মতো কলের পুতুলের মতো বলল,
‘আমি-ও তো বাসি।’
চোখে তখন কেবল সেদিনের কোলে নেওয়া আঞ্জুমানের রক্তাক্ত মুখশশী ভেসে উঠল।
চলবে…
#নিশুতি_তিথি
লেখা : মান্নাত মিম
পর্ব ১৩
___________
২৮.
আঞ্জুমানের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে, তার নিজস্ব চক্ষুদ্বয়। একি সে সত্যি দেখছে না কি তার ভ্রম? বেশ ক’বার চক্ষুদ্বয় মুদিত করে আবার উন্মুক্ত করল। কিন্তু নাহ, সবকিছু তো ঠিকই আছে তবে কেন একজনের অস্তিত্ব তার কাছে বেঠিক ঠেকছে? তার ছোট মস্তিষ্ক এতকিছু ধারণ করতে অক্ষম। আপাতত মস্তিষ্ক ও মন দুটোই জানান দিচ্ছে সম্মুখ দন্ডায়মান ব্যক্তিটির ছায়া না মাড়াতে। স্বয়ং আলী আকবরের উপস্থিতিতে সে যারপরনাই অবাকান্বিত এবং বিরক্ত। ভালো না লাগার মানুষকে দেখে তো আর ভালোলেগে মুখশ্রী আরক্ত হয়ে উষ্ণীয় অনুভব করবে না। ঘৃণ্য মন অনুভূত হচ্ছে আঞ্জুমানের। সে আলীকে দেখল গাড়ি থেকে নামতে অতঃপর গাড়ি থেকে বেশ কয়েকটা ট্রলি বের করল। গাড়ি চলে গেল গেট দিয়ে। ট্রলি এগিয়ে নিতে করিম মিয়াকে হাঁক ছেড়ে ডাক দিতেই আগমন ঘটল তার। আলীর হাত থেকে নিজ হাতে করে ট্রলিগুলো নিয় বাড়ির ভেতরে ঢুকল। আঞ্জুমান যে বাগানের দোলনা সখি লিমার সাথে গল্পগুজব করতে করতে দোল খাচ্ছিল আর আলীকে দেখে অবাকপ্রায় হয়ে বিরক্তিবোধ করছে স্পষ্টভাবে আলীর সেটা চক্ষুগোচর হলো। মুচকি হাসল। সময় যে ফুরিয়ে এসেছে পাখির ওড়ার, বন্দি হওয়ায় সময় হয়ে এসেছে মনপিঞ্জরায়। পাশে থাকা লিমা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুততম দোলনা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল। সেটা দেখে আঞ্জুমান তাকে ধরে বসিয়ে দিতে চাইলেও সে গাঁট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। না নড়ল আর না চড়ল। লিমার সাথে খালি বাড়িতে এধারওধার করে আরামসে চঞ্চলাভাবে ঘুরেফিরে বেড়িয়েছিল আঞ্জুমান। এখন আলীর উপস্থিতি সেসবে বাঁধা প্রদান হিসেবে দাঁড়াবে ভেবে মন খারাপের গুঞ্জন ছড়াচ্ছে আঞ্জুমানের মনমস্তিষ্ক জুড়ে। ক্ষানিকের মধ্যেই মনমরা হয়ে গেল শুভ্র হাসিখুশি থাকা আঞ্জুমানের মুখশশী। আলী কয়েকপল দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে মোড় ঘুরালো বাড়ির দিকে নিজ পদচালনা করল। সেটা দেখে আঞ্জুমান বেজায় খুশি। হাসি খেলে গেলে এবার তার মুখে। কিন্তু লিমাকে বেজার মুখো হয়েই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।
২৯.
রিমার মন ভালো না, আলীর চলে যাওয়া প্রতিবারই তাকে কাঁদায়। আলী গ্রামে পৌঁছেই তাকে ফোন করল।
‘পৌঁছে গেছ?’
‘এই মাত্রই আমাদের রুমে ঢুকলাম আর তোমাকে ফোন করলাম।’
‘হুম।’
‘এই মন খারাপ?’
‘তা আর বলতে। সাহেব জানে না বুঝি?’
‘জানে দেখেই তো ধরতে পারছে। তাছাড়া সাহেব আরো কিছু জানে বেগম সাহেবা।’
আলীর ইঙ্গিত বুঝতে পেরে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল রিমার মুখ। সে কপট রাগের ভান করে বলল,
‘ছি! অসভ্য।’
‘তাই বুঝি। সামনে থাকলে বুঝিয়ে দিতাম অসভ্যতামি।’
ফের মন কেমন খারাপ হয়ে এলো। ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তিটি সেটা বুঝল বোধহয়। তাই তো প্রসঙ্গের ইতি টানল।
‘আচ্ছা, শোনো না। আমি ফ্রেশ হব পড়ে ফোন দিচ্ছি। কেমন?’
‘ওহহ! আচ্ছা, আচ্ছা দ্রুত ফ্রেশ হও। আর শোনো টাইমলি খেয়ে নিও।’
‘যথা আজ্ঞা বেগম সাহেবা।’
ফোন কেটে গেলে রিমা সেটা হাত থেকে নামিয়ে ছোটো ভাবি সামিয়ার রুমে যায়। সামিয়ে তখন প্রবাসী স্বামীর সাথে কথায় মশগুল। প্রাইভেসি বলেও একটা কথা আছে যতই বন্ধু সুলভ সম্পর্ক থাকুক না রিমা ও সামিয়ার মাঝে। তাই রিমা নক করল দরজায়। নক করার তীক্ষ্ণ শব্দে কান থেকে ফোন নামিয়ে জিজ্ঞেস করল দরজায় দাঁড়ানো ব্যক্তিটিকে অভিহিত করার উদ্দেশ্য। তখন রিমা বলল,
‘আমি।’
‘আয়, ভেতরে আয়। নক করা লাগে না কি?’
রুমে ঢুকতে ঢুকতে দেখল সামিয়া ফোন কানে নিয়ে ‘পড়ে বলব’ বলে কল কেটে দিয়েছে ততক্ষণে। এগিয়ে গিয়ে সামিয়ার পাশ ধপাস করে শুয়ে পড়ল। মাথার কাছে বালিশ নিতে নিতে বলল,
‘আছে আছে নক করার বহু কারণ আছে। এখন আমি সেসবের বৃত্তান্ত খোলাসা করলে লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবা না।’
বাঁকা হাসল রিমা। সামিয়া পাশে থাকা কুশন নিয়ে রিমার ওপর চড়াও হতে উদ্যোগী হলো। কিছুক্ষণ দু’জনের মাঝে তুমুল বর্ষা নামল তুলোর। এরমধ্যে ফোনকল এলো সামিয়ার ফোনে। কথা শেষে ফোন রেখে রিমাকে জড়িয়ে ধরে খুশি প্রকাশ করল। রিমা ভারি অবাক হলো।
‘ব্যাপার কী এত খুশির কারণ?’
‘বইন রে ছোটো মামার বিয়ার খবর আইছে।’
বলেই দন্ত পাটির হাসি দিলো। সামিয়ার বয়স অল্পই। শ্বশুর মশাই নিজের ছেলের জন্য কম বয়সী মেয়ে এনেছেন কি না। আর সামিয়ার মামা আবার প্রবাসী মানুষ বিদেশে থাকা হয়েছে বিদায় বয়স চলে গেছে স্রোতের ন্যায়। বিয়ে করার চান্স মেলেনি খুব একটা। তবে অতটাও বয়সী নয়। এখন সামিয়ার শ্বশুর বাড়ির সকলকে দাওয়াত দিয়েছেন সামিয়ার মা। সাথে বলেছেন, আফজাল সাহেবকে ফোন করেও দাওয়াত করবেন। তবে সামিয়াকে আগেভাগে থাকার কথা বলেছেন। এদিকে সামিয়া চাইছে রিমাও যেন তার সাথে যায় বিয়ের কিছুদিন আগেই। রিমা ভাবছে তখন অন্য কথা। অবশ্য সেটা আলীকে ঘিরেই।
৩০.
রন্ধনের তদারকি করছেন রাহিমা খালা। যদিও আলীর মস্তিষ্কে একবার খেলে গিয়েছিল, তাঁকে ছুটিতে পাঠাতে। একেবারের অবসর ছুটি যেটাকে বলে। কিন্তু অনেকদিনের পরিচায়িকা বলে মন সায় প্রদান করেনি। তবে উল্লেখ করে দিয়েছে, আঞ্জুমান রান্না করার সময় যেন তিনি সেটা তদারকি করে। আঞ্জুমানের হাতে সংসার ন্যস্ত করেছে কি না। অবশ্য এতে আঞ্জুমান বিন্দু পরিমাণ অবাক বা ঘাবড়ে যায়নি। কেবল বিরক্তিকর ও হতাশাজনক নিশ্বাস নিসৃত করেছে। সেটা আলীর আড়ালে-আবডালে। কারণ তার এখন অবসর হয়ে বসে বসে গল্প করার মতো সুযোগটা নেই আর। সাংসারিক কাজে পারদর্শী আছে সে। নানা ও দাদা বাড়িতে কাজকর্ম করতে হয়েছে কি না তাকে। মনে পড়ে গেল সেসেব বিষাদে ভরা বিষাক্ত স্মৃতি। সাথে স্মরণে এলো বিচার দিনের কার্য দিবসের হওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতা। রান্নাঘরের চোখের জল ছেড়ে দিলো। বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে মাংসের ঝোলের সাথে মিশে গেল।
‘কিছু কষ্ট, ব্যথা আছে; যেটার ভাগ না কাউকে দেওয়া যায়, আর না কেউ নিতে পারে। সেটার ভাগ কেবল নিজেরই, একান্ত নিজের।’
চলবে…