নিরুদ্দেশ পর্ব ২৪ শেষ

নিরুদ্দেশ
পর্ব ২৪ শেষ

কয়েকদিন হলো সবুজ বাইরে বের হয়নি‌। কাজ থেকে কিছুটা অবসর নিয়েছে। প্রতিটা মিনিট কতটা অস্বস্তির মধ্যে কেটেছে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না। বন্ধুদের সাথে কথাও হয়নি। তোতা সব সময় কথা বলে। নিজের অশান্ত মন শান্ত করতে পারেনি। সবুজের প্রতি অজানা আকর্ষন তাকে বারবার ব্যাকুল করেছে। সমাজের কাছে এখনো সবুজের কুকীর্তি ধরা পড়েনি। সবকিছু গোপনে রয়েছে। সময় অনেকটা গড়িয়ে গেল। নিজেদের বোঝাপড়াটা মিটলো না। একে অপরের সঙ্গে কথা বলে। একই বিছানায় ঘুমোয়। একইসঙ্গে খেতে বসে। একসঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা করে। তবুও দুজনের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটা অদৃশ্য প্রাচীর। দুজনেই চায় অদূশ্য প্রাচীরটা যেন তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যায়। তারা যেন আবার এক হয়ে যায়। পূর্বের শান্তি ফিরে আসে। আবার হাসিখুশিতে দিন কাটাতে পারে। কিন্তু প্রাচীর গড়তে যেমন সময় লাগে তেমনি প্রাচীর ভাঙতেও সময় লাগে। ভেঙে গেলেও বহু বছর পর কিছু মানুষ বলে এখানে একসময় বিশাল প্রাচীর ছিল। দিন কেটে গেল। সবুজ আবার কর্মে ফিরলো। তোতার মুখে হাসি ফুটে উঠল। তার দৃঢ় বিশ্বাস সবুজ আর কোনো নারীর কাছে যাবে না। সবুজ বদলে গেছে। সবুজ আর কখনো খারাপ কাজ করবে না। নিজের ভুল শুধরে নেবে। ঈশ্বরের কাছেও সবসময় সেটাই চায়। সবুজ যেন ঠিক হয়ে যায়। তার স্বামী যেন তারই হয়। অন্য কারোর কাছে সহ্য করতে পারবে না। কিছুদিনের পরেও সবুজের মুখে হাসি ফুটে উঠল। একদিন সকালে তোতা সবুজকে জিজ্ঞেস করল,’সে জীবনে কি হতে চায়?’
সবুজ হাসিমুখে উত্তর দিল সে মানুষ হতে চায়। সবাই তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক হতে চায় সে না হয় মানুষ হবে। তোতা খুশি হলো। সবুজ আগের মতো হয়ে যাচ্ছে। ভালো মানুষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শরীরের ঔদ্ধত্য কি খুব সহজে বিদায় দেওয়া যায়? একটা মানুষ যতই খারাপ হোক না কেন ওর মধ্যে কিছুটা ভালো থাকে আর সেটা এক সময় জেগে উঠে। আবার মানুষ যতই ভালো হোক না কেন তার মধ্যে কিছু খারাপ থাকে। সেটাও এক সময় জেগে ওঠে। বিষয়টা হলো খারাপ-ভালোকে নিয়ন্ত্রন করতে হয়। নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে হেরে যেতে হয়। কর্মজীবনে ফিরতে আবার একটা মেয়ে তাড়া করে বেড়ালো। রূপে মোহিত হয়ে শরীরের বেহায়াপনা আবার একবার জেগে উঠলো। মেয়েটিকে সে চেনে। পূর্বে বেশ কয়েকবার দেখা করেছে। একবার খুব ঘনিষ্ঠও হয়েছিল। মেয়েটি তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু রাজি হয়নি সবুজ। সম্পর্কটি শেষ পর্যন্ত লিভিং এর দিকে গড়ায়। মেয়েটির নাম শিলা। বেশি বয়স হয়নি। দেখতে অপরূপা। বড়ো শৌখিন। তার যৌবনময়ী শরীর যে কোনো পুরুষের হৃদয় জয় করতে খুব বেশি সময় লাগবে না। খুব বারুদ আছে শরীরের মধ্যে। টানা টানা চোখের মায়া সবুজকে উতলা করে তোলে। আজ মেয়েটি সবুজকে ডেকেছে। সবুজ কিছুতেই যেতে চায় না। কিন্তু কিছু সময় পর শরীরের ঔদ্ধত্যর কাছে নিজের জেদ হেরে গেল। হেরে গেল তোতার তীব্র সত্য ভালোবাসা। কথা দিল সন্ধ্যায় যথা স্থানে পৌঁছে যাবে।
রাতে কাজ থেকে ফিরতে দেরি হবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল সবুজ। তোতা কোনোরকম সন্দেহ করল না। তার বিশ্বাস সবুজ বদলে গেছে। সে তাকে আর ঠকাতে চায় না। মেয়েটির সঙ্গে যখন দেখা করল তখন সূর্য ডুবে গেছে। পৃথিবীর বুকে অন্ধকার নেমে এসেছে। শিলাকে দেখে মুগ্ধ হলো। মানুষের চলাচল খুব কম এমন জায়গায় দুজনে গেল। খুব কাছে নির্জন জায়গায় একাকী ধরা দিতে এসেছে শিলা। কত ছোটো সে! তার যৌবন উপচে পড়ছে। হয়তো সদ্য স্কুল পাশ করেছে কিংবা এখনো স্কুল শেষ হয়নি। আর সে ধরা দিতে এসেছে এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের কাছে। সত্যি অনেক ভাগ্যবান সবুজ। শরীরের উত্তেজনা বাড়ালো‌। শিলা সবুজের দিকে বদমাইশি দৃষ্টিতে তাকালো। সবুজ সন্তুষ্ট হলো। নিজেকে হারিয়ে দিতে চাইলো যৌবনের কুহুর ডাকে। হেসে বলল,’চলুন, আমরা আবার একটা রাত একসঙ্গে কাটাই।’ সবুজ বোবা বোনে গেল। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলল। শরীর বারবার কাঁপছে। কিশোরী কেন বারবার তার কাছে ধরা দিতে আসছে? কি চায় তার কাছ থেকে? সে যে বিবাহিত শিলা জানে। তবুও ধরা দিতে এসেছে। বিয়ে করতে চাইছিল। এ কেমন মেয়ে? কে এই ললনা? এর প্রতি মমতা এত সুগন্ধি কেন? সবুজ থমথমে কন্ঠে বলল,’না, আমি আর যাবো না।’
‘কেন? বউ বকেছে? ও বাঙালি মেয়েরা এমনই হয়। ওরা কম বোঝে। জানতে পারবে না কিছু। চলুন তো।’ কিশোরীর রূপের কাছে সবুজের মন সহজে নরম হয়ে গেল। বেশিক্ষণ নিজের জেদ বজায় রাখতে পারল না। শিলার রূপে বশীভূত হয়ে গেল। প্রেমান্ধতায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ল। সবকিছু ভুলে শিলার হাত শক্ত করে ধরল। পালকের মতো হালকা হয়ে উঠল শরীর। শিলা যে দিকে নিয়ে গেল সেদিকে গেল সবুজ। চেনা রাস্তা তার কাছে অচেনা হয়ে উঠেছে। কারোর মায়ায় সম্পূর্ণ নিমজ্জিত। শরীরের অদ্ভুত বেহায়াপনা নির্লজ্জতা শুরু হয়ে গেছে। আর কারোর কথা ভাবলো না। অন্য জগতে চলল। এখন আর কাউকে চেনে না। এখন আর অন্তরে কোনো অধর্মের ভয় নেই। সবকিছু তার কাছে তুচ্ছ লাগছে। শিলাই সব কিছু। তাকে খুব কাছে থেকে কামনা করলো। অনেকটা যাওয়ার পর খেয়াল করল সে চেনা হোটেলে উঠেছে। সামনাসামনি কাকাবাবুর মুখোমুখি হলো। সংকেতের বাবা এখানে কি করছেন? সবুজ বাইরে চোখ বুলিয়ে নামটা পড়ে নিল। এটা তো তৃধার বাবার হোটেল। এখানে জ্যোতির্ময় বাবুর থাকাটা খুব স্বাভাবিক। নিজেকে আড়াল করতে পারল না। ঘরের মধ্যে এল। শিলা কিছুক্ষণ ভেতর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসলো। একা একা বসে ভাবতে রইল। জ্যোতির্ময় বাবু কি কোনো কিছুতে সন্দেহ করলেন? তিনি কি সবকিছু জানতে পেরে গেলেন? লেখক হিসেবে সে অনেক পাঠিকার সঙ্গে দেখা করে। আজ তাই করেছে। কিন্তু এটা তো সত্য নয়। এটা মিথ্যা। আর মিথ্যার মধ্যে এমন কিছু থাকে যে মানুষ বুঝতে পেরে যায়। খানিকটা মালিক আর বেড়ালের মতো। বেড়াল মালিকের থেকে নিজেকে লুকানোর জন্য খাটের তলায় লুকিয়ে থাকে। কিন্তু লেজটা ঠিক বাইরে থেকে যায়। মালিক সেখানে বিড়ালটিকে ধরা ফেলে। সত্যটা ঠিক তাই। যতই নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করুক না কেন সত্য একটু হলেও বেরিয়ে থাকে।
শিলা অল্পক্ষণের মধ্যে ফিরে এলো। দুজনে একসঙ্গে খাবার খেলো। বেশ ভালো লাগলো সবুজের। একই সঙ্গে সময় কাটাতে বেশ ভালো লাগছে। কিশোরী কথায় পটু। নির্জন একাকী জায়গায় সময় কাটাতে খুব আরাম লাগছে। শিলা কাছে এলো। খুব কাছে। আরও কাছে এলো। চোখে চোখ রাখল। সারা শরীর কাঁপছে সবুজের। এ কি অবস্থা তার? বিশ্বাস হচ্ছে না। কিশোরী এত কাছে। এর আগে আরও কাছে এসেছিল সেদিন এমন অনুভুতি হয়নি। আজ তবে কেন হচ্ছে? শিলা খুব কাছে এসেও কিচ্ছু করলো না। হেসে বলল,’আমায় বিয়ে করবেন?’
‘আমার স্ত্রী আছে।’
‘থাকুক। স্ত্রী থাকার সত্বেও আপনি তো আমার সঙ্গে থাকতে চান। আদর পেতে চান। তাহলে আমায় বিয়ে করতে পারবেন না কেন? চলুন পালিয়ে যাই। বহু দূরে চলে যাই। যেখানে আমাদের কেউ খুঁজে পাবে না। আমরা দুজনে একসঙ্গে সংসার করবো। একাকী থাকবো। সমাজের সাথে আমাদের কোনো পরিচয় থাকবে না। শুধু তুমি আর আমি থাকবো। ছোট একটা সংসার হবে।’
‘কিন্তু আমার তোতাপাখির কি হবে? সে খুব কষ্ট পাবে।’
‘তার মানে আপনার যাওয়ার ইচ্ছা আছে? আমাকে বিয়ে করতে চান?’
‘না মানে..।’ আমতা আমতা করল সবুজ।
‘মশাই এত ভাবার কি আছে? আমি জানি আপনি রাজি। আমায় স্পর্শ করুন।’ সবুজ কিছুতেই স্পর্শ করতে পারল না। কিছু একটা বাধা দিল তাকে।
‘এখনো ভয় পাবেন? ভয় পেলে হয় নাকি! এই সুন্দরী কিশোরী আপনার কাছে ধরা দিতে এসেছে। নিজে থেকে এসেছে। গ্রহণ করুন। আমায় নিন।’ কিশোরী অনেক ছোট। কিচ্ছু জানে না। ভুল কাজ করছে। সবুজের জবাবের আগে ফোন বেজে উঠল। তোতা ফোন করেছে। ফোন তুলতেই তোতা বড়ো শান্ত কন্ঠে বলল,’আপনি কোথায় রাজামশাই?’
‘কাজে, কাজে আছি।’
‘এত উত্তেজিত লাগছে কেন? কিছু হয়েছে?’
‘কই? না তো।’
‘অনেক রাত হয়ে গেলো তো। আপনি কখন ফিরবেন?’
‘আমার অনেক কাজ রয়েছে। আমি আজ ফিরতে পারব না।’
‘সকালে ফিরে আসবেন তো?’
‘হ্যাঁ, ভোরে পৌঁছে যাবো।’
‘আচ্ছা, রাখছি।’
‘আপনি কোথায় এখন?’
‘উঠোনে বসে আছি আপনি ফিরবেন বলে।’ সবুজের চোখ থেকে টপটপ করে জল ঝরে পরলো। নিস্তব্ধতা। বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় কিছুক্ষণ পর বলল,’আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। আমি খুব ভোরে পৌঁছে যাবো।’
‘আমার খুব ভয় করছে।’
‘কেন?’
‘একা এত বড়ো বাড়িতে কখনো থাকিনি তো তাই।’
‘এর আগে তো ছিলেন কয়েকবার।’
‘তখন বৌদিমণি ছিল পাশের বাড়িতে। আজ তো নেই।’
‘ভয় পাবেন না। কিচ্ছু হবে না। আপনি খেয়ে দরজা-জানলা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ুন। একটা রাত্রি তো।’
তোতা উঠোন থেকে উঠে গেল। দরজা-জানালা বন্ধ করলো। ভাতের জল দিয়ে শুয়ে পড়ল। কিছু খেলো না। ঘুমও এলো না।
এদিকে শিলা আর সবুজও শুয়ে পড়েছে। সবুজের আর কিছু ভালো লাগছে না। সে আর কিছু চায় না। শিলা অনেক আশা করে সবুজের কাছে এসেছিল। ফিরিয়ে দিয়েছে। রাগে অভিমানে বিপরীত দিকে মুখ করে পড়ে রয়েছে। কোনো কথা বলছে না। খুব জোরে পাখা ঘুরছে। বাতাসের দৌলতে শিলার ঘাড় থেকে চুল উড়ে গেল। ঘাড়ে বড়ো একটি তিল লক্ষ্য করে চমকে উঠল সবুজ। বিভিন্ন মানুষের দেহের বিভিন্ন অংশে তিল থাকে। এমন বড়ো তিল খুব কম মানুষেরই থাকে। আর সবুজ কারোর ঘাড়ে এমন তিল পূর্বে দেখেছে। কার ঘাড়ে রয়েছে এমন তিল? মনে করতে রইল। হ্যাঁ, লীলার ঘাড়ে এমন তিল আছে। তাহলে এই মেয়েটি লীলা? লীলার বয়স আর শিলার বয়সের ব্যবধান খুব বেশি নয়। প্রায় একই। কিন্তু লীলা তো নিরুদ্দেশ হয়ে গেছিল। সে এখানে কী করে এল? পুরোপুরি নিশ্চিত হতে চাইলো সবুজ। শিলাকে ডাকলো। অভিমানে চোখ ফেরাতে চাইলো না। সবুজ উঠে-পড়ে আলো জ্বালালো। এবার শিলা উঠে বসলো। ছোটবেলায় কুয়োর কাছে লীলা একবার পড়ে গেছিল। তার চোখের নিচে কাটা দাগ রয়েছে। শিলার চোখের নিচেও তেমন একটা দাগ রয়েছে। তাকে জিভ বার করতে বলল। লীলার ঘাড়ের মতো জিভেও একটা তিল ছিল। সবুজ আঁতকে উঠল। হুবহু সবকিছু মিলে যাচ্ছে। বড়ো করুন চোখে তার দিকে তাকালো। শিলা কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। সবুজের এমন ব্যবহারে ঘাবড়ে রয়েছে। কিছুটা ভয়ও পেয়েছে। বলল,’কি হয়েছে আপনার? এত উত্তেজিত লাগছে কেন?’
‘সত্যি করে বলো তোমার আসল পরিচয় কি?’
‘আমি কে তা কি আপনার অজানা? হঠাৎ পরিচয় জানতে চাইছেন কেন? তাছাড়া আমাদের তো পরিচয় জিজ্ঞেস করার কথা নয়।’
‘তুমি আমাকে চেনো?’
‘হ্যাঁ, আপনি সবুজ। আমি আপনাকে ভালোবাসি আর চিনবো না!’
‘এছাড়াও আমার একটা পরিচয় রয়েছে। আমি একজন বাংলা সাহিত্যের লেখক।’
‘ওওও, বেশ ভালো তো। আমি ওই সব গল্প কবিতা পড়ি না আপনাকে নতুন করে চিনবো কি করে? চিন্তা করবেন না। সমাজের চোখে আপনাকে আমি কখনো ছোট করবো না। আপনি ছেড়ে চলে গেলেও করবো না।’
‘সব কথা শোনার মতো আমার ধৈর্য নেই। সত্যি করে বলো তুমি কে? তোমার বাবা-মা কোথায়?’
সবুজ তাড়াহুড়ো করার শিলা কিছু লুকালো না।
‘আমি খুব ছোটবেলায় নিজের বাবা-মাকে দেখেছিলাম। তাদের মুখের আদল এখন আমার মনে নেই। তখন আমি খুব ছোট ছিলাম। কিছু একটা জিনিসের প্রতি ভীষণ কৌতুহলী হয়ে একা একা ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। আর আমাকে কেউ তুলে নিয়ে আসে। সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি। তারপরে আমার বেঁচে ওঠার কাহিনীটা না শুনলেও চলবে। একটু একটু করে বড়ো হয়ে উঠি। বাবা মার কথা মনে পড়ে…।’ তাড়াতাড়ি তাকে আটকে বলল,’তাহলে বাবা-মার কাছে ফিরে গেলে না কেন?’
‘আমি সদ্য একটা দুটো কথা বলা শিখেছিলাম। গ্রামের নাম বাবার নাম মার নাম কিছুই জানি না। কোথায় যাব আমি? এটুকু মনে আছে আমাদের বাড়িটা অনেক বড় ছিল। অনেকেই থাকতো।’
‘তোমাদের বাড়িতে আর কি কেউ ছিল না!’
‘হয়তো আমার দাদা বা বাড়ির কোনো একটা ছেলে ছিল। আমাকে সবসময় কোলে নিতো। আবছা আবছা মনে আছে।’ কথাগুলো বলে শিলা হেসে উঠলো। অট্ট হাসি দিয়ে বলল,’সেগুলো মনে করে বা কি লাভ? এখন কেউ আমার পরিবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেও আমি যেতে চাই না। আমি এই জগতে মন্দ নেই। ভালো আছি। এমন থাকতে চাই। আপনি আমার সঙ্গে থাকবেন তো? আমাকে গ্রহন করুন না।’ সবুজ জবাব দিতে পারল না। মূর্ছা হয়ে পরলো। ভালো মানুষ হতে চায়। ভালো মানুষ হতে গিয়ে কি সব করে বেড়াচ্ছে। শেষ পর্যন্ত লীলা! যে তার নরম হাত দিয়ে বসন্তের পিম্পল গুলো টিপে মজা পেত। কোলে বসতে চাইতো। আজ তার শরীরে লোভ দিয়েছে? ওদিকে তোতা তার অপেক্ষায় বসে আছে। কত নিষ্ঠুর সে? লীলার পরিচয় জানতে পেরেও চুপ করে থাকতে হলো। কিছুতেই বলতে পারল না তার বাবা-মা তার পরিচিত। সে চাইলে তার বাবা-মার কাছে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু কোন মুখে যাবে? ওই বাড়ি থেকে সে বড় হয়েছে। তাকে কত আপন ভাবে সে বাড়ির সবাই। আর সে? তাকে সবাই কোন চোখে দেখে আর সে! আত্মগ্লানিতে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। ভালো মানুষ হতে গিয়ে সে কি হয়েছে? শিলা শুয়ে পড়েছে। বাবা-মার কথা মনে পড়তেই তার চোখে জলে ভোরে গেছে। তার কাছে থাকা মানুষটা তার পরিচিত। অথচ দীর্ঘ বছরের ব্যবধানে একে অপরকে চিনতে পারছে না। অল্প সময়ের পর শিলা ঘুমিয়ে পড়লো। সবুজ ঘুমাতে পারলো না। তাকে বাড়ি ফিরতে হবে। তোতা অপেক্ষা করে আছে। সে চুপিচুপি সরে পড়ার সিদ্ধান্ত নিল। এবার আর শিলার হাসির মাদকতা সবুজকে ডোবাতে পারল না। কোনো প্রেম মোহ ধরে রাখতে পারল না। কারোর পিছুটান মানলো না। রাতে বাড়ি ফিরে এলো। বারান্দায় শব্দ শুনে তোতা চমকে উঠলো। গভীর রাতে কে এলো? সবুজের কণ্ঠস্বরে স্বস্তি ফিরল। সবুজ ফিরে এসেছে! ভাবতেই অবাক লাগলো। অস্থির সবুজকে দেখে তার স্বস্তি আবার উবে গেল।
‘কি হয়েছে আপনার? এত অস্থির লাগছে কেন?’
সবুজ তোতাকে জড়িয়ে ধরল। বলল,’খুব মনে পড়ছিল আপনাকে।’ তোতা হাসলো।
‘ভেতরে আসুন। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি!’
দুজনে ভেতরে এলো। সবুজ একটু বিশ্রাম করল। তোতা জিজ্ঞেস করল,’খাবার খাবেন না?’
‘খেয়ে এসেছি খিদে নেই।’
অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু কিছু করলো না। সবুজকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভীষণ ক্লান্ত। তাকে খানিকটা একা থাকতে দেওয়া উচিত। দুজনে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অল্প সময়ের পর তোতা বলল,’আপনি এত রাতে ফিরে এলেন কেন? থেকে যেতে পারতেন!’
‘আপনার ভয় করছিল না!’
‘করছিল তো।’
‘আপনি ভয় পাবেন আর আমি বাইরে থাকবো তা কি হয়!’
‘আমাকে এতটা ভালবাসেন?’
‘হ্যাঁ, অনেকটাই ভালবাসি।’
‘নিন ঘুমিয়ে পড়ুন। আপনি বড়ো ক্লান্ত আর অস্থির। আপনাকে অস্থির অবস্থায় দেখতে খারাপ লাগছে। সবুজ মানে প্রকৃতি। আর প্রকৃতিকে তো সবসময় শান্ত দেখতে ভালো লাগে। আপনি শান্ত হোন।’ সবুজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। স্ত্রীর কাছে আশ্রয় পেয়ে শান্ত হলো। একটু একটু করে অনেকক্ষণ পর স্থির হল। তোতার ভালোবাসার কাছে সবকিছু নগণ্য মনে হল। সবকিছু তুচ্ছ।

ডাক্তারের রিপোর্ট হাতে পেয়েছে সংকেত। তাদের ঘর আলো হতে চলেছে। তাতে আনন্দের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে সংকেতের। বাবা হওয়ার অনুভূতি কত মধুর। ভাবতেই কেমন লাগছে। আর অন্যদিকে তৃধা ভীষণ লজ্জা পেয়ে আছে। ভালো লাগছে। জ্যোতির্ময় বাবু সুখবর জানার পর বাড়ি ফিরে এসেছেন। আজ রাতে তাদের বাড়িতে মাংস হবে। মিষ্টি খাবে। খুব মজা হবে। দুই বন্ধুকে না খাইয়ে ভালো-মন্দ খাওয়ার শখ তাদের নেই। সে প্রথমে সূর্যময়কে ফোন করে আমন্ত্রণ করল। সন্ধ্যার সময় স্ত্রীকে নিয়ে পৌছে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলো। তারপর সবুজকে কল করলো। তৃধা ফোনটা ছাড়িয়ে নিলো। সংকেত বলল,’কি হলো? ফোন ছাড়িয়ে নিলে কেন? দাও!’
‘আমি নিজে সবুজদাকে বলছি। তুমি চুপটি করে থাকো।’ সংকেত রাজি হলো। সবুজ ফোন ধরতেই তৃধা বলল,’কোথায় তুমি?’ সবুজ অবাক হলো। তৃধা তার সঙ্গে গম্ভীর কন্ঠে কথা বলছে কেন? সে কী করছে? শান্ত থেকে সবুজ বলল,’আমি বাড়িতে। কিছু হয়েছে?’
‘তুমি সন্ধ্যায় তোমার স্ত্রীকে নিয়ে একবার আমাদের বাড়িতে আসবে তো।’
‘কেন? কিছু জরুরী রয়েছে?’
‘অবশ্যই। তুমি একটা মেয়ের সঙ্গে হোটেলে কি করতে গিয়েছিলে?’ সংকেত আর সবুজ একসঙ্গে চমকে উঠলো।
‘কাজ ছিল। তোমাকে কে বললো?’
‘শ্বশুরমশাই বলেছেন। কাজ ছিল -না অন্য কিছু আমি সব জানি। তুমি একবার আসো তারপরে হবে। এই তোমার আসল রূপ!’ সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা কেটে দিয়ে তৃধা হা হা করে হেসে উঠলো। সংকেত বলল,’তুমি সবুজকে কি সব বললে? ও মেয়ের সঙ্গে ঘুরছিল আর এটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে।’
‘সবুজদা খুব ভয় পায়। তাই তাকে একটু ভয় দেখালাম।’
‘কিন্তু মেয়ের কথা….।’
‘তুমি দেখছি সবুজদার চেয়ে নিজে বেশি চিন্তা করছো। আমি তাকে ভয় দেখাতে চাইলাম আর ভয় পাচ্ছো তুমি। আর তোমার বন্ধু কেমন তুমি ভালো করে জানো। ওর অনেক পাঠক পাঠিকা রয়েছে। তাদের সঙ্গে দেখা করতেই পারে। এতে অন্যায় কি? সবুজ তাই করেছে কোনো খারাপ কাজ করেনি।’
‘তাহলে এভাবে কথা বললে কেন? সে ভয় পাবে তো।’
‘উফ্! তোমাকে আমি বোঝাতে পারবো না। ভয় পাওয়ার জন্য আমি কথাগুলো বলেছি। নরম কন্ঠে বললে সে কি ভয় পাবে? না আমার কথা বিশ্বাস করবে! তাই একটু রেগে রেগে বললাম।’
‘আমার ভালো লাগছে না। ওর খুব চিন্তা হবে।’
‘এক ঘন্টার মতো চিন্তা করবে এর বেশি চিন্তা করবে না। সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে এলে সবকিছু বলে দিব। খুশি? যাও এবার বাজার থেকে মাংস নিয়ে আসো। তাড়াতাড়ি আসবে। ওরা কিন্তু চলে আসবে।’
সংকেত ঘাড় নাড়িয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। মিনিট কুড়ি পর ফিরেও এলো। বারান্দার দরজা বন্ধ। এমন সময় দরজা বন্ধ করে রেখেছে কেন? সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ঘরের মধ্যে আলো জ্বালানো কিন্তু নিস্তব্ধ। সংকেত বাইরে থেকে ডাক ছাড়লো,’তৃধা,ও তৃধা, কোথায় তুমি? আমি কি বাইরের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো? দরজা খোলো।’ ভেতর থেকে কোনো সাড়া এলো না। বার কয়েকবার ডাকলো। না কোনো শব্দ নেই। বিরক্ত হয়ে বাবাকে ডাকলো। বাবাও কোনো সাড়া দিল না। এরা কোথায় চলে গেল? সবাই তো একসঙ্গে ছিল। উধাও হয়ে গেল নাকি! বিরক্ত হয়ে পেছনের দিকে গেল। পেছনের দরজা খোলা। গুনগুন করতে করতে এগিয়ে গেল। জুতো খুলে ঘরে প্রবেশ করল। না হলে তৃধা এখন বকুনি দেবে। খেয়াল করল সে পা ধুয়ে আসেনি। পা না ধুলে ঘরে ঢুকতে দেবে না। বেরিয়ে গিয়ে পুকুরঘাটে চটপট পা ধুয়ে নিল। তবুও কাউকে সাড়া দিতে দেখলো না। অবাক হলো! সবাই কোথায় গেল? একটু ভয়ও করল। চটপট ভেতরে প্রবেশ করল। বাবার ঘরের দিকে প্রথমে গেল। ভেতরে বাবাকে ঝুলন্ত অবস্থা দেখে চোখ দুটো কপালে উঠে গেল। ‘বাবা’ বলে চিৎকার করে উঠে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। বাবা আত্মহত্যা করেছে! কিন্তু কেন? সংকেতের সংজ্ঞাহীন অবস্থায়। বোবা হয়ে গেছে। কথা বলতে পারছে না। নিজেকে শান্ত করতে পারছে না। অনেকটা সময় চিৎকার করে কেঁদে গেল। তারপর ডাক দিল তৃধাকে। না কোনো সাড়া নেই। মেয়েটা কোথায় গেল? সংকেত কিছু ভাবতে পারছে না। এখন আর তৃধাকে খুঁজতে ইচ্ছা করছে না। তার বাবা আর নেই। বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। গলার দড়ি খুলে বাবাকে নামালো। খুব জোরে চিৎকার করে তৃধাকে ডাক দিল। সে এলো না। বাবাকে সেখানে রেখে দুলতে দুলতে নিজের ঘরে এলো। রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছে তৃধা। চারিদিকে জিনিসপত্র ছড়ানো। শেষ শ্বাসবায়ু অনেক আগে বেরিয়ে গেছে। শরীর শীতল। স্ত্রীকে ধরে জোরে জোরে কেঁদে উঠলো। ব্যাকুল ভাবে কেঁদে উঠলো। তার কান্নার শব্দে আশেপাশে বাড়ির লোকেরা ছুটে এসেছে। সবাই হতভম্ব। বিশ মিনিটের মধ্যে একটা আত্মহত্যা আর দুটো খুন। কি করে সম্ভব?
সবুজের ফোন বেজে উঠতেই তোতা গিয়ে ধরল। ওদিক থেকে সংকেত কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,’সবুজ কোথায়?’
‘আমার পাশে বসে আছে। তৃধা ওকে কি বলেছে? ততক্ষণ থেকে ও মন খারাপ করে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না।’
‘তাকে ফোনটা দাও।’ সংকেত কণ্ঠস্বরে রয়েছে ভয়ার্ত ব্যাকুলতা। তাই কোনো প্রশ্ন না করেই সবুজকে ফোন দিয়ে দিল। সবুজ ‘হ্যালো’ বলতেই সংকেত বলল,’সবুজ, আমার বাবা আর নেই। আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।’
‘কি যা তা বলছো?’
‘ঠিক বলছি, কিছুক্ষণ আগে বাবা আত্মহত্যা করেছে।’
‘কি!’ সংকেত স্তব্ধ হয়ে গেল। সবুজ আর কথা বাড়ালো না। ফোন রেখে দিল। চটপট শরীরের উর্ধাংশে একটা পোষাক গলিয়ে দৌড় দিল বন্ধুর বাড়িতে। লাশ দুটো জোড় করে এক জায়গায় রাখা হয়েছে। পুলিশ এলাকাটিকে ঘিরে ফেলেছে। কাউকে ভেতরে যেতে দিল না। এমন কি সংকেতও। খুনের ব্যবহার। তাই গ্রামবাসীরা দূরে দূরে রয়েছে। কাছে আসার চেষ্টা করছে না। থামে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে সংকেত। মুখ শুকনো। চোখে জল নেই। যে ছেলেটা কথায় কথায় কেঁদে ফেলতো আজ সে কাঁদছে না। চুপচাপ বসে আছে। তার কত আক্ষেপ। কত কথা বলা হলো না তৃধাকে। ছোটবেলা থেকে তৃধাকে পছন্দ করতো। এখনো কথাটা বলা হয়নি। বাবা পরিশ্রম করে তাকে বড় করেছেন। কিন্তু নিজের রোজগারের টাকায় বাবাকে কিছু এনে দিতে পারল না। নিজের রোজগারের টাকায় বাবাকে খাওয়াতে পারল না। বড়ো অসহায় একাকী পরাধীন লাগলো। সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে। কিন্তু বাবা কেন আত্মহত্যা করল? কিসের অভাব ছিল? তৃধাকে কে খুন করলো? যে খুন করেছে সে খুব আনাড়ি। জঘন্য ভাবে খুন করেছে। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য খুন করেছে। প্রথমে গলায় তারপর বারবার পেটে ছুরি চালিয়েছে। তৃধার শত্রু আছে? এটা বিশ্বাস করতে হবে? সহজ-সরল মেয়েটাকে কে মারলো? পরিচিত কেউ? পরিচিত কেউ মারলে তো সে সামনের দরজা দিয়ে আসতো। সামনের দরজা বন্ধ ছিল। পরিচিত কেউ হলে ঘরের জিনিসপত্র এভাবে এলোমেলো থাকতো না। সৌন্দর্য বিনিময়ের নামে আসল কাজটা করে ফিরে যেতো। ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো হতো না। তৃধা নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল। ওখানকার আশেপাশের জিনিসপত্র দেখে তা বোঝা যায়। তাহলে কে খুন করলো? বাবা খুন করেছে? তারপর নিজে আত্মহত্যা করেছে? কিন্তু বাবা কেন খুন করতে যাবে? বাবা তৃধাকে তো খুব ভালোবাসতো। সে কিছুই ভাবতে পারছে না। কিছুক্ষণ আগে সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। মাংস আনতে গেছিল রাতে একসঙ্গে রান্না করে খাওয়া হবে। কিন্তু কুড়ি মিনিটের মধ্যে কি সব ঘটে গেল। যে খুন করেছে সে বড়ো খিলাড়ি। না হলে অল্প সময়ে নিখুঁতভাবে খুন করতে পারবে না। একদিকে সে পিতৃহারা সন্তান, স্ত্রী হারা স্বামী, সন্তান হারা বাবা অন্যদিকে দায়িত্ববান পুলিশ অফিসার। কি করবে এখন সে? সবুজ আর সূর্যময় মৃতদেহের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সবুজ সূর্যময়কে সেখানে রেখে সংকেতের পাশে এসে বসল। তার চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। বন্ধুকে কি বলে সান্ত্বনা দেবে খুঁজে পাচ্ছে না। অনেকক্ষণ নিস্তব্ধে কেটে গেল। কিছুক্ষণ পর সবুজ বলল,’কাকাবাবু আত্মহত্যা করতে গেল কেন?’ সংকেত সবুজের চোখের দিকে তাকালো। শুকনো কন্ঠে বলল,’জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না।’ সংকেত সবুজের কাঁধে মাথা রেখে চুপ করে গেল। তাকে আর প্রশ্ন করল না সবুজ। বন্ধুকে আগলে নিল। কাকামশাইয়ের দিকে তাকালো। ছোটবেলায় মায়ের অবহেলা কাকামশাই ভুলিয়ে দিতেন। তাকে আদর করতেন। সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। ছোটবেলায় মাথার চুলগুলো বেঁধে দিতেন। সবসময় সবুজ সবুজ করতেন। তাকে না হলে কষ্ট পেতেন। আজ তিনি সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে গেছেন। কঠোর বাস্তব মানতে পারছে না। চোখ থেকে ঝরঝর করে জল ঝোরে পড়লো। তৃধার দিকে তাকালো। কিশোরী বয়স থেকেই তাকে চেনে। তার সাথে গল্প করতো। তাকে কিছু বলবে বলে সন্ধ্যায় ডেকেছিল। না বলে দূর দেশে চলে গেল। আর কখনো তাদের কথা হবে না। তৃধার যৌবনের চটুল লাবণ্য হারিয়ে গিয়ে মুখের মধ্যে মাতৃত্বের কোমলতা ফুটে উঠেছে।

_________________________________________
বিঃদ্রঃ প্রথম খন্ড এখানেই শেষ। দ্বিতীয় খন্ড সামনে সপ্তাহ থেকে প্রকাশিত হবে। ধন্যবাদ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here