#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-২৮

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-২৮
________________

সক্কাল সক্কাল শুভ্রের চেঁচানো শুনে থমকে গেল বর্ষা। সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘর ছেঁড়ে পাঁচ দশ কিছু না ভেবেই এক প্রকার রান্নাঘর ভেঙেচুরে দৌড় দিলো সে। তাঁর এমন কাজে আশেপাশের লোকজন সবাই হতভম্ব হয়ে গেছে যদিও রান্নাঘরে তাদের বাড়ির কাজের লোক ছাড়া আর কেউ ছিল না। সিঁড়ি বেয়ে হতভম্ব হয়ে উপরে উঠে চলে গেল বর্ষা তাঁর আর শুভ্রের রুমের কাছে। তারপর দরজা খুলে হতভম্ব গলায় বললো সে,

‘ কি হয়েছে কি হয়েছে?’

বর্ষা এতটাই জোরে এসে দরজা খুললো যে শুভ্র নিজেও ঘাবড়ে গেল। কিন্তু নিজের সেই ঘাবড়ানোকে পুরোপুরি সাইডে রেখে রাগী কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ এটা কি বানিয়েছো তুমি?’

শুভ্রের কথা শুনে বেশ স্বাভাবিকভাবেই এগিয়েে এসে বললো বর্ষা,

‘ কেন কফি?’

‘ এটা কফি,

‘ কেন আপনি চা ভেবেছিলেন?’

‘ 😒

শুভ্রের চাহনী দেখে বলে উঠল বর্ষা,

‘ আরে না বললে বুঝবো কিভাবে?’

‘ খেয়ে দেখো।’

বর্ষাও তাই করলো। কফির কাপটা হাতে নিয়ে চুমুক দিলো সে। একটুখানি কফি খেতেই চোখ মুখ কুঁচকে বলে উঠল,

‘ এ মা এটা কি ছিঃ ছিঃ এটা তো করলার চেয়েও তিতা।’

‘ তিতা না। এইটা তোমার স্পেশাল কফি,

উওরে দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে বললো বর্ষা,

‘ সরি জামাই খুশির ঠেলায় কফিতে চিনি দিতেই ভুলে গেছি।’

‘ 😒😒😒

শুভ্রের চাহনী দেখে বর্ষা শুভ্রের দু’গাল টেনে বললো,

‘ আমার গুলুমুলু জামাইটা রাগ করে না আমি এক্ষুনি আপনার জন্য নতুন করে চিনি দিয়ে কফি বানিয়ে আনছি।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল বর্ষা। আর শুভ্র জাস্ট হাবলার মতো তাকিয়ে রইলো বর্ষার যাওয়ার পানে। যেন যা হলো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল। শুভ্র গালে হাত দিয়েই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর চলে গেল সে ওয়াশরুমের দিকে।’

পাক্কা আধ ঘন্টা বসে শুভ্রের জন্য আবার কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে বর্ষা। এইবার ভুল করেনি সে খুব সুন্দর মতোই কফিতে চিনি দিয়ে স্পেশাল কফি বানিয়েছে শুভ্রের জন্য। বর্ষা রুমের ভিতরে ঢুকেই বললো,

‘ জামাই আপনার ক…

আর কিছু বলা আগে শুভ্রকে রুমে না দেখে হতাশ হলো বর্ষা পরক্ষণেই ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ পেতেই বুঝলো সে শুভ্র ওয়াশরুমে আছে। আনমনেই বললো,

‘ ওহ আপনি ওয়াশরুমে গেছেন।’

ভেবেই কফির কাঁপটা টেবিলের উপর রাখলো বর্ষা। তারপর এলেমেলোভাবে থাকা বিছানাটা গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।’

এরই মাঝে ওয়াশরুমের দরজা খুলে ব্লাক ট্রাউজার আর সাদা টিশার্ট পড়ে চুল মুছতে মুছতে বাহিরে বেরিয়ে আসলো শুভ্র। শুভ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে এটা বুঝতে পেরে পিছন ঘুরে তাকালো বর্ষা। তারপর বললো,

‘ আপনি এসেছেন এই আপনার কফি?’

প্রতি উওরে কিছু বলে না শুভ্র একটু একটু করে এগিয়ে যায় বর্ষার দিকে। শুভ্রের কান্ডে শুরুতে কিছু না বুঝলেও পরক্ষণেই নিজের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শুভ্রকে নিজের দিকে আসতে দেখে বলে উঠল বর্ষা,

‘ আপনার কি কিছু লাগবে শুভ্র?’

উওরে মাথা নাড়িয়ে বললো শুভ্র,

‘ হুম।’

‘ কি লাগবে বলুন আমি এনে দিচ্ছি?’

বলেই সাইডে সরে যায় বর্ষা। বর্ষার কান্ডে হাসলো শুভ্র বললো,

‘ তোমায় ভয় পেলে তো বেশ লাগে।’

শুঁকনো ঢোক গিললো বর্ষা। তারপর বললো,

‘ ভয় কই আমি তো ভয় পাচ্ছি না।’

আবারো হাসলো শুভ্র। বসে পড়লো সে বিছানায়। কফির কাপে হাত দিলো আবার। বললো,

‘ এবার স্পেশাল বানিয়েছো তো?’

‘ চিনি দিয়েছি এতটুকু জানি।’

হেঁসে ফেললো শুভ্র। এই বোকারানির বোকা বোকা কথা বার্তা সবই বেশ লাগছে শুভ্রের। শুভ্র কফির কাপে চুমুক দিলো। শুভ্র চুমুক দিতেই বলে উঠল বর্ষা,

‘ এইবার সব ঠিক আছে তো।’

জবাব দেয় না শুভ্র। শুধু কড়া দৃষ্টিতে তাকায় বর্ষার দিকে। যা দেখে বর্ষা বলে উঠল,

‘ এবারও ভালো হয় নি, কিন্তু এবার তো আমি মনে করে চিনি দিয়েছিলাম।’

উওরে হুট করেই হেঁসে ফেলে শুভ্র। বলে,

‘ খুব ভালো হয়েছে।’

সঙ্গে সঙ্গে খুশি হয়ে যায় বর্ষা। যাক অবশেষে কফিটা ভালো লেগেছে শুভ্রের। বর্ষা খুশি মনে বললো,

‘ সত্যি,

‘ হুম।’

এরই মাঝে বর্ষার ডাক পড়লো নিচ থেকে। শুভ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ আপনি বসুন আমি এক্ষুনি আসছি।’

উওরে শুভ্রও খুশি হয়ে বলে,

‘ ঠিক আছে।’

_______

লাইব্রেরির চার নাম্বার টেবিলের জানালার পাশে বসে ছিল হিয়া। আচমকাই খাতা,কলম, ডাইরি, বই সবকিছু সাইডে ছুড়ে দিয়ে বললো সে,

‘ আর ভালো লাগছে না, বিরক্তকর সবকিছু।’

আজ দু’দিন হলো নির্মলের সাথে কথা বলা বন্ধ হিয়ার। সেই যে বাড়িতে গিয়েছিল নির্মল তারপর আর খোঁজ নেই তাঁর। হিয়া বুঝে না হুট করে কোথায় গেল নির্মল। হসপিটালেও গিয়েছিল হিয়া,কিন্তু খোঁজ পায় নি। মনটা ব্যাকুলতার শীর্ষে আছে একদম। যবে থেকে নির্মলের ওপর দূর্বল হয়ে পড়েছে হিয়া তবে থেকেই একদিন দেখা না হলেই ব্যাকুল হয়ে পড়ে হিয়া। যেমন এখন হচ্ছে, আর ব্যাকুল বলেই কোনো কিছু ভালো লাগছে না তাঁর। হিয়া ফোনটা হাতে নিলো কল করলো নির্মলের নাম্বারে কিন্তু প্রত্যেকবারের মতো এবারও এক ভদ্রমহিলা ফোন বন্ধ বলছে। হিয়া বুঝে না এইভাবে হুট করে কোথায় লাপাত্তা হয়ে গেল নির্মল?’

‘নির্মলের চিন্তায় কোনোকিছুতেই যেন মন বসছে না হিয়ার।’

_____

রাত ১১টার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। রুমে মধ্যে পায়চারি করছে শুভ্র। সাথে অপেক্ষা করছে সে বর্ষার আসার জন্য। কিন্তু বর্ষার কোনো খবর নেই। শুভ্র বুঝে না এই মেয়েটা অলওয়েজ এত দেরি করে কেন?’ সে কি বুঝে না কেউ একজন তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে ব্যাকুল হয়ে।’

শুভ্র তাঁর পকেটে হাত রাখলো বের করলো বর্ষার জন্য আনা একটা ছোট্ট গিফট। গলায় পড়ার সুন্দর একটা লকেট কিনেছে শুভ্র যেটা দুপুরেই জুয়েলারি দোকানে গিয়ে এনেছিল সে। শুভ্র মুচকি হেঁসে বক্স থেকে লকেটটা বের করে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি কখন আসবে বোকারানি আর তোমায় আমি নতুন ভাবে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবো ভালোবাসি। বলবো অনেক কথা,

মুচকি হাসলো শুভ্র। হঠাৎই কারো পায়ের ধ্বনি শুনতে পেল শুভ্র। শুভ্র বুঝতে পেরেছে বর্ষা হয়তো আসছে তার রুমে। শুভ্র খুশি হয়ে লকেটটা বক্সে রেখে বক্সটা বন্ধ করে আবারো পকেটে ভরে নিলো তাঁরপর চলে যায় সে সাইডে।’

রুমের লাইট অফ করে দেয় নিমিষেই।’

সবেমাত্র সব কাজ শেষ করে রুমের দিকে আসতে লাগলো বর্ষা। চোখে মুখে হাল্কা ক্লান্তির ছাপ। বর্ষা তেমন কিছু না ভেবেই রুমে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো কিন্তু পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার দেখে অবাক হলো খুব। সে যতদূর জানে শুভ্র এখন রুমে আছে। তাহলে অন্ধকার কেন? বর্ষা অবাক হয়েই বললো,,

‘ আপনি কি রুমে নেই শুভ্র?’

সঙ্গে সঙ্গে রুমের দরজা আঁটকে পিছন থেকে বর্ষার মুখ চেপে ধরে শীতল ভেজা কন্ঠ নিয়ে বললো শুভ্র,

‘ হুস অনেক হয়েছে তোমার আপনি বলা আজ থেকে তুমি শুনতে চাই,

শুভ্রের কাজে চোখ বড় বড় হয়ে যায় বর্ষা। তবে কিছু বললো না। আর শুভ্র পকেট থেকে তাঁর গিফটটা বের করে পড়িয়ে দিল বর্ষার গলায় তারপর বললো,

‘ আজ থেকে তোমার আমার ভালোবাসার গল্প শুরু বর্ষা। অতঃপর সব অভিমান ভুলে আমি তোমায় চাই একদম নিজের করে। কোনো বাধা থাকবে না আর। থাকবে না আর দূরত্ব। থাকবে শুধু ভালোবাসা। তুমি কি ভালোবাসবে আমায়?’

প্রতি উওরে খুশি হয়েই বললো বর্ষা,

‘ হুম বাসবো তো তবে একটা শর্তে?’

বর্ষার কথা শুনে অবাক হলো শুভ্র। বললো,

‘ শর্ত কিসের শর্ত?’

বর্ষা সরে আসে শুভ্রের কাছ থেকে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয় তক্ষৎনাত। গলায় লকেটটা দেখে মুচকি হাসলো সে। তারপর শুভ্রের মুখোমুখি হয়ে বললো,

‘ আপনি এখনো একটা প্রশ্নের উত্তর দেন নি আমায়?’

বর্ষার কথায় ভ্রুজোড়া কুঁচকে এলো শুভ্রের। বেশ ভরাট গলায় বললো,

‘ কি বলি নি তেমায়?’

‘ এটাই যে আপনি বিয়ের দিন ফিরে কেন এলেন? কেনই বা বিয়ে করলেন আমার। আর প্রায় রাতে কার সাথে কথা বলেন আপনি, আর কেই বা এই ঔপন্যাসিকা?’

বলেই বিছানার ওপর থেকে শুভ্রের মোবাইল এনে। কল লিস্টের প্রথম নামটা দেখালো বর্ষা। শুভ্র অবাক হলো খানিকটা পরক্ষণেই হেঁসে বললো,

‘ এই ব্যাপার? ঠিক আছে আজই তোমায় সব বলবো আমি। ভেঙে ফেলবো সব ধূসরতা। চলো আমার সাথে,

এই বলে বর্ষা হাত ধরে এগিয়ে গেল শুভ্র সামনে।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আর গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here