#ধূসর_শ্রাবণ💚 #লেখিকা:#তানজিল_মীম💚 #পর্ব-২৩

#ধূসর_শ্রাবণ💚
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💚
#পর্ব-২৩
________________

অন্ধকার রাত। আকাশটা নির্বিকার প্রায়। আর এই নির্বিকার আকাশের ভিড়েই বেলকনিতে চুপচাপ বসে আছে শুভ্র। হাতে তাঁর সিগারেট, সচরাচর এইসব খায় না শুভ্র কিন্তু আজ খাচ্ছে। নিজের ভুলের জন্য নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে শুভ্রের সাথে কষ্টও পেতে হচ্ছে খুব। বর্ষা তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে মাত্র কয়েক ঘন্টাই তো হলো, কিন্তু এই কয়েক ঘন্টাই শুভ্রকে বর্ষার শুন্যতা ফিল করাচ্ছে হারে হারে। বোকারানি বড্ড বেশিই কষ্ট দিয়ে গেছে তাঁকে। শুভ্র বুঝতে পারছে না এই মুহূর্তে তাঁর ঠিক কি করা উচিত? বাংলাদেশ গেলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাঁর। কিন্তু বর্ষা কি বুঝবে তাঁকে? বুঝে উঠতে পারছে না শুভ্র সবকিছু শুন্য শুন্য লাগছে কেমন? সিগারেটে আরেকবার টান দিলো শুভ্র ধোঁয়া উঠালো পরপর। এমন সময় বিকটও শব্দে শুভ্রের ফোনটা বেজে উঠল। শুভ্র ফোনটা হাতে নিলো দেখলো মোবাইল স্কিনে থাকা ‘ঔপন্যাসিকা’ নামটা জ্বল জ্বল করছে। শুভ্র দেখলো নামটা তাকিয়ে রইলো মোবাইল স্কিনের দিকেই কিন্তু ফোনটা তুললো না। ভালো লাগছে না এই মুহূর্তে। শুভ্র তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ফোন বেজে কেটে গেল একবার। শুভ্র তাকিয়ে রইলো সেদিকে এরই মাঝে আবারো বেজে উঠলো ফোনটা। শুভ্র এবারও তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তারপর ইচ্ছে না থাকা সত্বেও ফোনটা তুললো সে তারপর নীরব কন্ঠে বললো,

‘ হ্যালো,

সাথে সাথে অপরপ্রান্তের মেয়েটি বলে উঠল,

‘ কি মিস্টার হিরো হিরোইন ছেড়ে চলে গেছে বলে দেবদাস হয়ে বসে আছেন নাকি?’

মেয়েটির কথা শুনে খুব আক্ষেপ নিয়েই বলে উঠল শুভ্র,

‘ আর হিরো আমার তো মনে হয় এই গল্পের আসল ভিলেন আমিই।’

শুভ্রের কথা শুনে হাসলো মেয়েটি যা শুনে বললো শুভ্র,

‘ তুমি হাসছো?’

‘ হাসবো না তো কি করবো কি এতো ভাবছেন বলুন তো?’

‘ বিশ্বাস করো আমি সত্যি বুঝতে পারছি না এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিত?’

‘ কি করবেন মানে হিরোইনের অভিমান ভাঙাবেন।’ তা বাংলাদেশ কবে আসছেন?’

‘ আসতে তো কালই মন চায় কিন্তু অফিস থেকে ছুটি দিচ্ছে না।’

‘ আপনার অফিস আগে না বউ।’

‘ আর বউ সে তো ভুল বুঝে ডিভোর্স দেওয়ার কথা ভাবছে।’

‘ তা ভাববে না, আপনি অন্য মেয়েকে জড়িয়ে ধরবেন বউকে ইগনোর করবেন তাহলে বউ কি তা দেখে ঘরে বসে আঙুল চুসবে।’

হতভাগ শুভ্র। হতভাগ হয়েই বললো শুভ্র,

‘ তুমি সব জেনেও এসব বলছো।’

‘ হুম বলছি কারন বর্ষা তো জানে না এটা আপনায় বুঝতে হবে। আর বর্ষার জায়গায় যে কেউ থাকলে এমনটাই করতো। আমি থাকলে হয়তো আমিও এমনই করতাম।’

‘ সব বুঝতে পারছি আমি। কিন্তু পরিস্থিতিটাই এমন ছিল যে আমি চাইলেও কিছু করতে পারছিলাম না। তবে আমি তো এসেছিলাম বর্ষার কাছে সবটা বলতে কিন্তু সব শোনার আগেই তো বর্ষা চলে গেল।’

‘ আসলে কি বলুন তো জীবনটা এমনই হুট করেই সব কিছু ঘটে যায়।’

‘ সেটাই তো দেখছি।

‘ হুম, তবে এখন যা হয়ে গেছে সেটা ভেবে লাভ নেই। সামনে খারাপ কিছু হওয়ার সবটা সামলান শুভ্র।’

‘ হুম সামলাবো তো বটেই।’

‘ হুম তাড়াতাড়ি করবেন দূরত্ব আর সয় না।’

শুভ্র অবাক হলো অপরপ্রান্তের মেয়েটার কথা শুনে অবাক হয়েই বললো সে,

‘ তোমার আবার কিসের দূরত্ব?’

‘ ওটা আপনি বুঝবেন না।’

‘ যাইহোক তোমার খবর বলো বিয়ে কবে করছো?’

শুভ্রের কথা শুনে বেশ আগ্রহ নিয়েই বললো মেয়েটি,

‘ হুম করবো খুব শীঘ্রই। আপনাকে আর বর্ষাকে কিন্তু আসতেই হবে?’

‘ তা নয় আসলাম তোমার হিটলার বাবা রাজি তো বিয়েতে?’

‘ বাবার কথা জানি না কিন্তু বিয়েটা আমি করছি। ভালোবাসি কিনা?’

উওরে হাসলো শুভ্র। তারপর বললো,

‘ অল দা বেস্ট।’

‘ আপনাকেও। খুব শীঘ্রই চলে আসুন শুভ্র, অভিমান মেশানো দূরত্ব বেশিদিন ফেলে রাখা ঠিক না।’

তপ্ত নিশ্বাস ফেললো শুভ্র। তারপর বললো,

‘ আমি জানি কিন্তু কি করবো বলো আমি যে নিরুপায়।’

‘ নিরুপায় বলে কিছু হয় না শুভ্র, সবই পরিস্থিতির শিকার। পরিস্থিতি নিয়ে তো অনেকদিন চললেন এবার না হয় একটু বেরিয়ে আসুন। নিজের প্রিয় মানুষের কাছ থেকে বেশিদিন দূরে থাকা যায় না কিন্তু?’

‘ তা আর বলতে?’

প্রতি উওরে কিছুক্ষন চুপ থাকলো অপরপ্রান্তের মেয়েটি। তারপর বললো,

‘ শুনুন, বেশি কষ্ট পাবেন না। বিয়ে করা বউ আপনার অধিকার খাটান আর নিয়ে আসুন নিজের কাছে। ভুল বোঝাবুঝি কাটান, দূরত্ব কমান জীবন সুন্দর হবে। শুধু সিগারেটে ধোঁয়া উঠালেই হবে নাকি।

অবাক হলো শুভ্র, স যে সিগারেটে ধোঁয়া ওড়াচ্ছে এটা ওই মেয়েটা কি করে জানলো। তবে বেশি ভাবলো না, একটু সাহসীকতাটাও বাড়লো যেন শুভ্রের ঔপন্যাসিকার কথা শুনে। শুভ্র মনে মনে ভাবলো অনেক কিছু তারপর বললো,

‘ হুম ঠিক বলেছো। আমি আসছি ঔপন্যাসিকা।’

শুভ্রের কথা শুনে খুশি হলো অপরপ্রান্তের মেয়েটি তারপর বললো,

‘ এই না হলে হিরোর মতো কথা।’

অতঃপর, পর পর আরো কিছুক্ষন কথা হয় শুভ্রের সাথে ঔপন্যাসিকা নামে সেইভ করা মেয়েটার সাথে। সিগারেটটা হাতে বসেই পুড়ে পুড়ে কমতে থাকে একটু একটু করে। শুভ্র আর খেলো না, হয়তো ভুলেই গেছে তাঁর হাতে সিগারেটের ধোঁয়া উড়ছে।’

______

পরন্ত বিকেল। জানালার কার্নিশ বেয়ে উপচে আসছে রঙিন আলো। বাতাস বইছে না তেমন। হাল্কা গরম গরম ভাব। গাছের পাতারাও নিশ্চুপ আজ। নড়ছে না তেমন। আর এই নিশ্চুপতার ভিড়েই বেলকনিতে থাকা গ্রিল ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বর্ষা। আজ দু’দিন হলো বর্ষা লন্ডন থেকে এসেছে। অথচ এই দুদিনে একটি বারও কথা হয় নি শুভ্রের সাথে বর্ষার। অবশ্য হবে কি করে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোবাইলটা ব্যাগ থেকেই বেরই করে নি বর্ষা। মন খারাপ তাঁকে এমন ভাবে গ্রাস করেছে যে, মোবাইল, টিভি, ইন্টারনেট সবকিছুকেই বেমানান লাগছে নিজের কাছে। কষ্ট হয় বর্ষার, ভীষণ কষ্ট যখনই হসপিটালের সেই মেয়েটার সাথে শুভ্রের জড়িয়ে ধরার বিষয়টা মনে করে তখনই সবকিছু এলেমেলো লাগে বর্ষার। চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো নিচে। শুভ্র তাঁকে ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে, এই যন্ত্রনা প্রথম অনুভব করেছিল বর্ষা যেদিন শুভ্র রেস্টুরেন্টে বসে তাঁকে বিয়ে করার আগেই ডিভোর্স শব্দটা উচ্চারণ করেছিল। তবে তখনকার যন্ত্রণার থেকেও এখন বেশি কষ্ট হচ্ছে বর্ষার। লন্ডনের সেইসব দিনগুলোর কথা ভাবলে আজও ভালোবাসার শীতল স্পর্শের কথা মনে পড়ে বর্ষার। সেই একসাথে জাহাজ ভ্রমন, স্কেটিং করা, শুভ্রকে জ্বরের ঘোরে জড়িয়ে ধরা, তাঁর সেবা করা, আর জন্মদিনের পার্টি। সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো ছিল বর্ষার৷ আর আজ সেসব দিনগুলোর কথা ভাবলেও হৃদয়টা যেন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে বর্ষার। ভালোবাসা যে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার পাশাপাশি গভীর যন্ত্রণাও দেয় তা হারে হারে টের পাচ্ছে বর্ষা। আর ভাবলো না বর্ষা কষ্ট হচ্ছে তাঁর ভীষণ কষ্ট। গ্রিল ছেড়ে রুমের দিকে হাঁটা দিলো বর্ষা আর ভালো লাগছে না। এমন সময় তাঁর রুমে দৌড়ে আসলো শুভ্রতা, বর্ষাকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো সে। তারপর উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ ভাবি কেমন আছো তুমি? কতদিন পর তোমায় দেখলাম?’

আচমকা শুভ্রতাকে দেখে সাথে শুভ্রতার কাজে চমকে উঠলো বর্ষা। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো সে,

‘ হুম ভালো তুমি?’

‘ ভালো কিন্তু আমি তোমার ওপর রাগ করেছি ভাবি?’

শুভ্রতার কথা শুনে বর্ষা কিছুটা নির্বিকার গলায় বললো,

‘ কেন?’

‘ কেন আবার তুমি দুদিন হলো বাংলাদেশ এসেছো অথচ আমাদের বাড়ি যাও নি কেন?’

থমকে গেল বর্ষা। এবার কি বলবে সে। খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠল বর্ষা,

‘ আসলে হয়েছে কি শুভ্রতা শরীরটা আসার পর থেকেই ভালো না তাই আর কি? আমি এসেছি বেশি দাদুকে দেখতে অথচ দেখো তাঁকেই দেখতে যেতে পারছি না।’

শুভ্রতা শুনলো। সাথে মেনেও নিলো। বেশি না ভেবে বললো সে,

‘ হুম আন্টির কাছে শুনেছি আমি। যাই হোক আজ বাড়ি যাবে তো ভাইয়া কিন্তু আসছে?’

এবার অবাক হলো বর্ষা। শুভ্র আসছে? কিন্তু কেন ওহ হয়তো দাদুর জন্য। খানিকটা নিরাশা নিয়েই বললো বর্ষা,

‘ আমি আজ যাবো না শুভ্রতা পরে যাবো শরীরটা সত্যি ভালো নেই।’

‘ এমনটা করলে কিন্তু চলবে না, বাবা বার বার বলেছে তোমাকে যেন নিয়ে যাই আমি। আর মা তো রেগে আগুন হয়ে আছে তুমি কেন আগে আমাদের বাড়িতে যাও নি তাই। আর দাদুর কথা কি বলবো দাদু তো এখনো জানে না যে তুমি এসেছো?’

শুভ্রতার কথা শুনে মন খারাপ হলো বর্ষার। সবাই তাঁর উপর রেগে আছে। বর্ষার ভাবনার মাঝেই আবারো বলে উঠল শুভ্রতা,

‘ তুমি যাবে তো আমার সাথে ভাবি, বাড়িতে সবাই তোমার অপেক্ষা করছে?’

প্রতি উওরে কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো বর্ষা,

‘ হুম।’

খুশি হলো শুভ্রতা। তারপর বর্ষার গলা জড়িয়ে ধরে বললো সে,

‘ থ্যাংক ইউ ভাবি।’

উওরে শুঁকনো হাসে বর্ষা। হঠাৎই শুভ্রতা বলে উঠল,

‘ তোমার সাথে কিছু সিক্রেট কথা আছে ভাবি?’

শুভ্রতার কথা শুনে বেশ বিস্মিত ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো বর্ষা,

‘ সেটা কি?’

‘ বাড়ি গিয়ে বলবো।’

______

সকাল থেকে রান্না ঘরে বসে আছে হিয়া। স্পেশাল কিছু রান্না করছে সে। জীবনে ফাস্ট টাইম রান্না করছে হিয়া। তাও নির্মলের জন্য। যদিও হিয়া জানে না রান্নাটা কেমন হবে তারপরও চেষ্টা করছে সে। আর মেয়ের এমন কাজে চরম অবাক হিয়ার মা। যে মেয়ে কখনো রান্নার ‘র’ও শেখতে চায় নি সেই মেয়ে আজ রান্না করছে ভাবলেই মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে হিয়ার মার। মেয়েটা পাগলটাগল হয়ে গেল কি না সেটাই ভাবছেন উনি। রান্না ঘরে যেন কেউ না ঢোকে সেই জন্য দড়ি দিয়ে আঁটকে দিয়েছে হিয়া। অতঃপর ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে রান্না কমপ্লিট করলো হিয়া। তারপর সেগুলো টিফিনবক্সে ভরে টেবিলে সুন্দর মতো গুছিয়ে রাখলো। তারপর কাউকে কিছু না বলেই চলে যায় হিয়া ওয়াশরুমে। এরপর ফ্রেশ হয়ে সুন্দর মতো সেজেগুজে সোজা চলে যাবে হিয়া নির্মলের হসপিটালে। আজ বড়সড় একটা সারপ্রাইজ দিবে সে নির্মলকে।’

এদিকে মেয়ের কান্ডে অবাক প্রায় হিয়ার মা। মেয়ের কান্ড কারখানা সব যেন তাঁর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।’

হসপিটাল নিজের চেম্বারে বসে ছিল নির্মল। এমন সময় চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, পেস্ট কালার থ্রি-পিচ, খোলা চুল, হাতে সাদা রঙের চুড়ি আর ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক দিয়ে হাজির হলো হিয়া। হাতে তাঁর টিফিনবক্স। হিয়া দরজা সামনে দাঁড়িয়ে তাকালো নির্মলের দিকে। তারপর বললো,

‘ আসবো?’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। পর্বটা হয়তো ছোট হয়েছে খুব আসলে সন্ধ্যা থেকে মাথা যন্ত্রনা করছে। একবার ভাবছিলাম দিবো না কিন্তু অনেককেই আজকে দেওয়ার কথা দিয়েছি তারওপর কালও দেয় নি তাই ছোট করে দিলাম। ইনশাআল্লাহ নেক্সট পার্ট বড়সড়ই দিবো]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here