ধূসর পাহাড়,পর্ব_১৬
লেখিকা আমিশা নূর
নিউ ইয়ারের দিন ও সামায়রা এমনটা করেছিলো।সব ঘটনা মনে পড়তে কুয়াশা’র কান্না আরো বেড়ে গেলো।তবে সেই কান্নার কোনো শব্দ নেই।
“মানে কী বলছিস কী তুই?”
“অরণ্য তুই আমার থেকে লুকাস না প্লিজ।”
“কিন্তু তুই কীসের কথা বলছিস?”
“বন্ধু তুমি যে তলে তলে কুয়াশাকে ভালোবাসো সেটা আমি জানি।”
“হুয়াট?আ..ম..আমি কেনো ওকে..”
“অরণ্য তুই জানিস তোর থেকে ভালো জানি আমি তোকে।”
অরণ্য জানে অধ্রীর থেকে কিছু লুকানো সম্ভব না।তাই সে তার অনুভূতি গুলো কুয়াশা’র সাথে ভাগাভাগি করলো,
“অধ্রী আমি জানি ন আমার ফিলিংসের নাম কী?তবে এটুকু বলতে পারি,কুয়াশাকে আমি ভিষণ মিস করি,ওর জন্য কেমন যেনো আলাদা এক অনুভূতি হয়, ও কল রিসিভ না করলে মনে হয় এই বুঝি হারিয়ে গেলো,ওর সাথে সময় কাটাতে কতোটা ভালোলাগে বুঝাতে পারবো না।মন চায় সারাক্ষণ ওর পাশেই বসে থাকি।রাতে..
” দোস্ত ছিঃ ছিঃ রাতে চলে যাস না।”
“কীহ?তোর মাথায় এসব ঘোরে?আমি বলতে চাচ্ছি, ” রাতে ওর সাথে কথা না বলে শুতে গেলে ঘুম আসে না।”
“তাআআই?”
“হ্যাএএএ”
অরণ্য চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।দু’কদম এগোতেই অধ্রীর কন্ঠ শুনা গেলো,
“এরই নাম ভালোবাসা অরণ্য!”
অরণ্যের পা আপনা-আপনি থেমে গেলো।তার চোখের সামনে কুয়াশার হাসিমাখা চেহেরায় ভাসছে। পাশ থেকে গিটারের টুন ভেসে আসছে।অরণ্য শুধু সময়টা অনুভব করে সামনে এগোচ্ছে।
জাহাজের এক কোণে সীয়ামা গুটিশুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অনেকক্ষণ ‘গানের কলি’খেলার পর টায়ার্ড হয়েছে।তখনি সে পাশে কাউকে অনুভব করলো।খুব ভালো করে জানে সীয়ামা পাশের মানুষটি কে!
“দাঁড়িয়ে আছো যে?”
“হুদাই।”
দাঁত বের করে হেসে বললো সীয়ামা।রৌদ্রময় বুঝলো সীয়ামার মন খারাপ।তবুও কিছু জিজ্ঞেস করলো না কারণ সে অধিকার তো রৌদ্রময় নিজের ইচ্ছায় হারিয়েছে।
“উইল ইউ মেরি মি?”
চার অক্ষরের বাক্যটি শুনে সীয়ামা রৌদ্রময়ের দিকে তাকালো।কিন্তু রৌদ্রময় অন্যপাশে তাকিয়ে আছে।তারমানে হয়তো সীয়ামা ভুল শুনেছে।সারাক্ষণ রৌদ্রময়কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার এই অবস্থা।কিছু না বলে সীয়ামা চুপচাপ সে স্থান ত্যাগ করে অধ্রীর কাছে গেলো।রৌদ্রময় ভ্রু কুঁচকে সীয়ামার যাওয়ার পনে তাকিয়ে রইলো।
“নাও খাও।”
“নাহ খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“আরে নাও না।”
“বললাম তো খাবো…আআম।”
“টিং টিং টিং”
অধ্রী একটি চাবির সাথে আরেকটি চাবি বারি দিয়ে আওয়াজ করছে আর মুখে বলছে।অরণ্য কাচা আম হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো কুয়াশা এতোক্ষণ না তাকিয়ে কথা বলছিলো।তবে আমটি দেখা মাত্রই অরণ্য থেকে কেড়ে নিলো।
আরেকটি আম কানন কে দিলে সে বললো,”দোস্ত দাঁত ভিষণ টক হয়েছে। আর আম খাবো না।”
কথাটি শেষ করতেই কুয়াশা ছাড়া বাকি সবাই কাননের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো কারণ কুয়াশা আম খাওয়ায় ব্যস্ত।যে ছেলে সারাক্ষণ খায় খায় করে সে কিনা বলছে খাবে না।অধ্রী কথাটি না বুঝার ভান করে বললো,”দোস্ত কী বললি বুঝি নি প্লিজ আবার বল।”
“আরে অধ্রী কাল যে আম খেলাম না দাত টক হয়ে গেলো।তাই এখন খাবো না।”
“ওওওও”
“আচ্ছা আম কখন নিলে?”
“আরে সত্যিই তো অরণ্য আম কখন নিলি?”
ওদের প্রশ্ন শুনে অরণ্য বাকা হাসলো তারপর সিনেমার টাইপে উত্তর দিলো,”জাহাজে উঠার আগে যখন কুয়াশা ওখানকার আম গুলো খেতে চাইলো আর ওখানে লিখা ছিলো আম ছিড়া নিষেধ। তো…”
“তো?”
“তো আমি ঝাড়ুদারের কাছে গিয়ে বললাম,দাদা আমার বউ প্রেগন্যান্ট আর ও কাঁচা আম খেতে চাইছে।” তখন ঝাড়ুদার বললেন,”এই গাছের আম তো ছিড়া যাবে না আমি পেছন থেকে আনছি।”
অরণ্যের কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। কিন্তু কুয়াশা নিজের মতো আম খাচ্ছে।
১৮.
দু’ঘন্টার মতো জাহাজে চড়ে অবশেষে সেন্টমার্টিন প্রবেশ করলো বন্ধুমহল!আকাশের নীল আর সমুদ্রের নীল এখানে মিলেমিশে একাকার!ঝরঝরে বাদামি বালি,আর ক্ষুদে পাথরের সমাহার সেন্টমার্টিন।কুয়াশার বিশ্বাস হচ্ছে না সে এখন সত্যিই সেন্টমার্টিনে আছে।কতো ইচ্ছে ছিলো এই জায়গায় আসার।আর আজকে তা পূর্ণতা পেলো।এক অদ্ভুত রকমের গাড়ি দেখতে পাচ্ছে তারা।অধ্রীর থেকে গাড়িটির নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলে নাম ভূলে গেছে।তারা সবাই সোজা রিসোর্টে চলে গেলো।আগে থেকে ঠিক করা ছিলো প্রিন্স হেভেন নামের হোটেলটি।হোটেল টাতে ১৮টি রুম আছে।যার মধ্য থেকে অধ্রী দুটো রুম বুক করে রেখেছিলো।রিসিপশেনের লোক থেকে চাবি নিয়ে তারা রুমে প্রবেশ করলো।অধ্রী,কুয়াশা আর সীয়ামা এক রুমে বাকি তিনজন আরেক রুমে থাকবে।
।
।
বারো টার দিকে সবাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়লো।প্রথমে তারা যাবে নান্দনিক নারিকেল বৃক্ষের সারি দেখতে।
“স্তব্ধের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।অরণ্য-কুয়াশা নারিকেল বাগানে আসছে?যদি তাকে দেখে ফেলে?কিছুক্ষণ ভাবার পর সে নিজেই নিজেকে বকে দিলো,” গাধী ওটা একবছর আগের কথা।”
নান্দনিক নারিকেল বাগানে এসে অরণ্য ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলা শুরু করে দিয়েছে।কুয়াশা মন ভরে বাগানের সুগন্ধ নিচ্ছে।যদিও এটি ছোটখাটো বাগান তাও এর সুবাস আলাদা।গাছগুলিতে সাদা আর লাল রং করে দেওয়া হয়েছে।খুব সুন্দরভাবে ছাঁটাইকরণ ও করা হয়েছে।কুয়াশা গাছগুলোতে হাত বুলাচ্ছে চোখ বন্ধ করে।তার কল্পনাস ভাসছে,”নারিকেল বাগানে শুধু অরণ্য আর সেই আছে।দু’জন দু’প্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে কাছে আসছে!পাশের সেই গিটারের টুন বাজচ্ছে!কী মধুর সুর এটি!”
“অরণ্য আরেকটা তুল।”
“নাহ আর পারবো না।একটা পিক দশ টাকা।”
“টূরের জন্য আমার সব খরচ তোরা দিবি তাহলে আমি কেনো পিক তোলার টাকা দিবো?”
“উফ চুপ করতো।”
হঠাৎ অরণ্যের চোখ কুয়াশার দিকে গেলো।চোখ বন্ধ রেখে আকাশের দিকে চেয়ে আছে আর একটি হাত গাছে লেগে আছে।পারফেক্ট পিক হবে!অরণ্য দৃশ্যটা ক্যামেরা বন্ধি করে নিলো।
।
১৯.
খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওরা গেলো সমুদ্রের তীরে বেঁধে রাখা নৌকা দেখতে।যদিও এই যায়গাটা নিরব!তেমন কোনো সৌন্দর্য নেই মনে করে কেউ আসে না।তবে অধ্রীর কাছে এই যায়গায়টিই বেস্ট মনে হয়।সমুদ্রের তীরে বেঁধে রাখা নৌদাগুলিকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে।তীরে বেঁধে রাখা নৌকার চেয়ে সমুদ্রে চলাচল করা নৌকায় যে প্রকৃত সৌন্দর্য।
“এই জায়গায় মানুষ নেই কেনো?”(রৌদ্রময়)
“এখন সবাই বিচের দিকে।আর তাছাড়া এখানে তেমন ভীড় থাকে না।”
“জায়গাটা খুব স্তব্ধ।” (কুয়াশা)
“এই জায়গাটা প্রপোজ করার জন্য একদম পারফেক্ট।”(সীয়ামা)
“হুম,নো কোলাহল নো ঝামেলা।”
অধ্রীর কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো।তীরে বেঁধে রাখা বড় নৌকাটার কাছে গেলো সবাই।তারপর কুয়াশা রিকোয়েস্ট করলো সবাইকে একসাথে নৌকার মধ্যে দাড়াতে।কথামতো সবাই দাড়ালে কুয়াশা কিছুক্ষণ তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
“এভাবে পিক উঠাবে তুমি?”
“নাহ।মনে আবদ্ধ করে নিলাম।আর্ট করবো।”
“বুঝলাম না ঠিক।”
“প্রকৃতিকে কোনো কৃত্রিম যন্ত্রে আবদ্ধ না রেখে নিজের প্রতিভাতেই কাজে লাগায়।আমার কেনো জানি মনে হয় প্রকৃতির সব চেয়ে বড় শত্রু হলো ক্যামেরা।সামান্য একটা যন্ত্রতে প্রকৃতি বন্ধি থাকে।সময়ে অসময়ে মুচে যেতে পারে।কিন্তু যদি দৃশ্যটাকে মনে বন্ধি করে রাখি তাহলে সেটি মুচে যাওয়ার ভয় থাকে না।”
ওরা দুজন কথা বলে বলপ সামনে এগোচ্ছিলো।সীয়ামা ওদের পেছনে আসতে চাইলে রৌদ্রময় হাত ধরে টান দেয়।
“কী করছেনটা কী?”
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“মরতে যাচ্ছি তাতে কী আপনার?”
কথাটি মাঠিতে পড়তে না পড়তেই ঠাসস করে শব্দ হলো।যার অর্থ রৌদ্রময় সীয়ামাকে চড় মেরেছে।অরণ্য সেটি দেখতে পায়নি কারণ তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে।কিন্তু অধ্রী আর কানন ঠিকই দেখতে পেলো।
(চলবে)