ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৯
লেখিকা আমিশা নূর.
.
তিনজন একসাথে ‘ও’ শব্দ করাই অরণ্য বিরক্ত হলো।তখনি অরণ্যের ফোন বেজে উঠলো,,অরণ্যে ফোন হাতে নিয়ে দেখে “বোন” নামটি ভাসছে।
__হ্যা,,বল,
__দাদা সব ইনফরমেশন পেয়েছি।
__গুড সীয়ামা,,কী কী পেলি?
“অরণ্য ফোন লাউডস্পিকারে দিলো,,”
__কুয়াশাদি অনেক চুপচাপ একটি মেয়ে,,নাচ,গান ইত্যাদিতে কোনোদিন অংশ নেই নিই।তবে আর্টে ফাস্ট ক্লাস।ফ্রেন্ডস বলতে কেউ নেই তেমন।দুজন আছে তবে তাদের সাথেও ভালো করে কথা বলে না।এন্ড মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট সপ্তাহে একদিন মানে সোমবার সে কলেজে আসে না।
__কেনো?(রৌদ্রময়)
রৌদ্রময়ের কন্ঠ শুনে সীয়ামা নরম হয়ে গেলো।এক একটা শব্দ সুন্দরভাবে বললেও এখন একটি শব্দও বের হচ্ছে না!আচ্ছা? রৌদ্রময়ের কন্ঠ শুনলে সে ঠিক থাকতে পারে না কেনো?কীসের সংকেত এটি?
__কী হলো সীয়ামা?(অধ্রী)
__জানি না আপু প্রশ্ন’টার উত্তর কেউ দিতে পারে নি।
__ওহ।লাভ ইউ বোন এতো কিছু বলার জন্য।(অরণ্য)
__কিন্তু দাদা কুয়াশা’র দি’র সাথে তোদের কী সম্পর্ক?
__তুই বুঝবি না।ফোন রাখ(অরণ্য)
__হুহ,,আল্লাহ হাফেজ।
__বাই।
সীয়ামা ফোন কেটে দিলো।দীর্ঘ নিশ্বাস পেললো সে।অরণ্যে তার নিজের ভাই না হলেও কোনো অংশে কম নই।সীমায়া’র বয়স যখন নয় বছর তখন তার বাবা-মা এক্সিডেন্টে মারা যায়,,আর তার নানু-দাদু বাড়ির লোক বলতে কেউ ছিলো না।কারণ তার বাবা-মা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো।তখন অরণ্যের বাবা তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে।ভিন্ন ধর্মী হলেও সীয়ামাকে কোনোদিন কষ্ট দেয়নি।সব সময় নিজের লোকই মনে করছে।
.
.
.
বিকেল তিনটে বাজে।তারা চারবন্ধু রেস্টুরেন্টে বসে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডার বিষয় “কুয়াশা”!তারা দেখা করার জায়গাটি চেইন্জ করেছে।অরণ্যের হঠাৎ কাচের দেওয়াল ভেদ করে বাইরের দিকে চোখ গেলো এবং চোখ জোড়া সেখানেই আটকে রইলো।ধূসর রংয়ের ফোল হাতা গেঞ্জি,নেভি ব্লু কালারের লং স্কার্ট,গলায় ধূসররঙের ওড়না জুলানো,কানে বড় রিং পড়া!কাধে ধূসর রংয়ের ব্যাগ।চুল উচু করে বাধা।অরণ্যের মনে হচ্ছে এই মেয়ের চেয়ে পার্ফেক্ট আর কেউ হতে পারে না। কেউ না!
__হাই!
__হ্যালো!অরণ্য বাইরে কী দেখছিস?
অধ্রী প্রশ্ন করলো।অরণ্য ঘোর মাখা কন্ঠে উত্তর দিলো,,”ধূসরী!”
__ধূসরী?কই ধূসরী?
অরণ্যের মনে হচ্ছে মেয়েটা এখনো বাইরেই আছে।রৌদ্রময় ধাক্কা দেওয়ায় বিরক্তি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে ‘হা’!দু সেকেন্ড হা করে তাকার পর নিজেকে সামলে নিলো।
__আরে কুয়াশা তুমি কখন এলে?
__আপনি যখন বাইরে তাকিয়ে ছিলেন।
__ওও।
__তো কুয়াশা বাকিসব কেমন আছে?শুনলাম তুমি নাকি আয়নের হোম টিচার?(অধ্রী)
__সব ভালো।হ্যা আয়নের টিচার বাট আয়ন অনেক বেশি দুষ্টু।
__ও একটু এমনি।একি কুয়াশা তোমার ওড়নায় রং লাগলো কী করে?
__ওহ।আমি আর্ট ক্লাস থেকে এলাম।ছোট ছোট বাচ্চাদের আর্ট শিখায়।
এতোক্ষণ ধরে সবার মনে যে প্রশ্নটি ঘোর পাক্কাচ্ছিলো তার উত্তর এখন পেয়ে গেলো।সোমবারে কুয়াশা কী করে!
__ওহ।আয়নও অনেক দিন ধরে আর্ট আর্ট করে আমাকে পাগল করে দিচ্ছিলো।
কথাটি শেষ করতেই আবারও তিনজোড়া চোখ হা করে তাকিয়ে রইলো..তিনজনই মনে মনে বললো”তোর মতলবটা কীরে?”অরণ্য মনে হয় কথাটি বুঝলো,,ইশারায় বললো “কিছুই না”
_আয়ন!আর্ট?
_হুম।
_আমার মনে হয় না আয়ন আর্ট শিখবে।
_অনেক মানুষের পড়াশোনা ভালো লাগে না।এন্ড বলতে গেলে ক্লাসের গাধা ছাত্রেরও কিন্তু নিজস্ব প্রতিভা থাকে সেটি ফুটিয়ে তুলতে হয় আগ্রহের মাধ্যমে!
_হুম।বৌদির সাথে নাহয় আজকে কথা বলবো।
কিছুসময় কেউ কথা বললো না।নিরবতা ভঙ্গ করে রৌদ্রময় বললো,
__আমি অর্ডার দিয়ে আসি।কুয়াশা কী খাবে?
__তেমন কিছুই না,,
__ওহ।ওকে আমি নিয়ে আসছি তাহলে।
রৌদ্রময় অর্ডার দিতে গেলে কাননও তার পিছু পিছু গেলো।
_কুয়াশা তোমাকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা বলার জন্য ডেকেছি।(অধ্রী)
_কী কথা?
_আমরা সবাই মিলে কিছুদিন পর টূরে যাব।তুমি কী আমাদের সাথে আসতে পারবে?
_টূরে?আচ্ছা সেটা কী কলেজ থেকে?
_নাহ কলেজ না।আমরা চারজন মিলে যাই তবে ভাবছি এবারে পাঁচজন যাবো।
মৃদু হেসে অধ্রী কথা শেষ করলো।কুয়াশা’র মুখে আনন্দের ছায়া দেখা গেলো।”ছোট ছোট বিষয় নিয়ে যারা হ্যাপি থাকে,,তারাই নাকি কষ্ট পায়”।এমনটা বইয়ে পড়েছিলো অরণ্য।তবে আজ মনে হচ্ছে উক্তিটি শুধু কুয়াশা’র জন্যই তৈরি করা হয়েছিলো।
_হ্যা,, যাবো আমি!বাট কোথায়?
_জায়গা এখনো ঠিক করিনি।
টেবিলে কফির মগ গুলি রেখে বললো রৌদ্রময়।
_ওহ।কখন যাবে?
_কলেজ যখন ট্রিপে যাবে।(অধ্রী)
_এই মাত্র না বললেন..
কুয়াশা কথা কেড়ে নিয়ে অরণ্য উত্তর দিলো,”কলেজ ট্রিপে যাবে এক জায়গায় আর আমরা যাবো আরেক জায়গায়,,এতে করে টাকাও বাঁচলো,কলেজও মিস হলো না!”
_ওহ!আচ্ছা কয়দিনের জন্য?
_কী কুয়াশা তোমাকে অনেক বেশি এক্সাইটেড দেখাচ্ছে!ঘুরতে ভালোবাসো?(রৌদ্রময়)
_ভীষণ!
_আমরা এসব কিছুই ঠিক করিনি কুয়াশা,,তবে ফেব্রুয়ারিতে যেতে পারি।(অধ্রী)
_পারি না, সিউর।(কানন)
মুখে বিস্কুটের টুকরা ভরে দিয়ে কানন বললো।এতে কুয়াশা খুশিই হলো।বছরের শুরুতেই ভ্রমণ! ইশ কেমন যেন আনন্দ মাখা!
_মিস সুইসাইড আপু?(কানন)
_হ্যা?(কুয়াশা)
_দোস্ত তুই সেদিন বললি পেত্নী আপু,,আবার আজকে বলিস মিস সুইসাইড?(রৌদ্রময়)
_এটাই ফাইনাল।মিস সুইসাইড আপুই ডাকবো।
_দোস্ত তুই..(অধ্রী)
_থাক,, আমার কিছু যায় আসে না।বরং এটি কিউট নেইম।
_আচ্ছা।
কফিতে চুমুক দিয়ে অধ্রী উত্তর দিলো।
অরণ্যের চোখ বার বার কুয়াশা’র দিকেই আটকে যাচ্ছে।এতো মায়াময়রূপ কেনো মেয়েটার?মেয়েটাকে ধূসর রংয়ে এতো ভালো মানায়?সত্যি!
১০.
বারো দিন পর…
_আয়ন বাচা আমার প্লিজ রাজী হয়ে যা,,
_নো ওয়ে।ড্রয়িং আমার ভাআলো লাগে না চাআআচ্চু।
_শুধু ভর্তি হবি,আর্ট করতে হবে না।
_নাহ।আমার পড়ার অনেক চাপ এর মধ্যে ড্রয়িং!উফ
গতো বারোদিনে বারো হাজার বার বুঝিছে আয়নকে সে ড্রয়িং-এ ভর্তি হওয়ার জন্য। কিন্তু এই পড়াচোর আয়ন কিছুতেই ড্রয়িং শিখবে না।মনে মনে হাজার’টা গালি দিলো অরণ্য।কী হতো একটু রাজী হলে?কুয়াশা’র সাথে দেখা করার আরেকটা সুযোগ হয়ে যেতো! এসব বিষয় নিয়ে ভাবছিলো অরণ্য তার মাঝেই সীয়ামা আসলো,,
(চলবে)