ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৮

ধূসর পাহাড়,পর্ব_০৮
লেখিকা আমিশা নূর.

কৃষ্ণা অরণ্যের রুমে গিয়ে দেখে আয়ন অরণ্যের গা’য়ে পা তুলে দিয়ে আরামে ঘুমাচ্ছে।এরা দুজন পারেও বটে। সারাজীবন এভাবে ঘুমাতে পারবে কিন্তু কোনো অসস্তী হবে না।আজকে অরণ্য এখনো কেনো ঘুমে?ও কী কলেজ যাবে না?

__আয়ন,ওয়াক-আপ। স্কুলের জন্য ধেরি হয়ে যাচ্ছে।

__মামুনিইই,,

__অরণ্য,,উঠো…

__হু..

__এভাবে ওরা উঠবে না,,,ওয়ান..টু..থ্রী..অরণ্যওওওওওওওওওওও

__আআআ বৌদিইই

__জলদি রেডি হয়ে নিচে আয়,,,

কর্কশ স্বরে কথাটি বলে নিচে চলে গেলো।আয়ন-অরণ্য একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,”কোনো দিন পাল্টাবে না”
পাশে ফিরে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো ১০:০৩..

__আয়অঅন দশ’টা বাঝেএএ

__চাচ্চু জলদিইই।

চিল্লানী দিয়ে দুজন দু’মিনিটের মধ্যে নিচে গিয়ে জলহস্তির মতো নাস্তা খেতে লাগলো।

__আস্তেধীরে খাও(কৃষ্ণা)

__বৌওওদিই ১১টাই ক্লা..স আছে।

__আস্তে,,খা..এতো ধেরি হলে আগে উঠো নি কেনো?

আয়নকে খাইয়ে দিয়ে বললো।অরণ্য উত্তর দিলো”তিনটায় ঘুমালাম কালকে,ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছি”

__তুমি আর তোমার ফ্রেন্ড।হাহ…

__বাই বৌদি,,,আয়ন চল..

“ফ্রেন্ডস!এই একটি শব্দ নিয়েই কৃষ্ণার সাথে অরণ্যের ঝগড়া,তাই এইটা নিয়ে আর কথা বাড়াই না”

৮.
আজ সোমবার!সপ্তাহে একদিন কুয়াশা কলেজ যাই না।আজকেই সেই দিন।খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে আছে সে।সামনে আর্ট বোর্ড, হাতে জল রং-এর ব্রাশ।কুয়াশা’র বিপরীত পাশে দশ-পনেরো জনের মতো ছোট বাচ্চা।হ্যা,এইটাই কুয়াশা’র আর্ট ক্লাস!নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগাই সে।শুক্রবার এবং সোমবার সে ক্লাস নেয়।প্রকৃতি! প্রকৃতিকে ভীষণ ভালোবাসে সে!তাই ছোট থেকেই সে আর্ট করে।কাল রাতে সে অরণ্যের সাথে চ্যাট করেছে,অধ্রীর সাথেও কথা বলেছে।কুয়াশা’র মনে হচ্ছে আজকের সকাল’টা তার জন্য।শুধুই তার জন্য এই সুন্দর সকাল!!

__নিপু!কী করছো?

মিষ্টি স্বরে কথাটি বললো কুয়াশা।সামনে চলে আসা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে মিষ্টি হেসে নিপু উত্তর দিলো,,

__”তোমাকে আর্ট করছি সুগারদি”

__তাই?দেখাও আমায়…

__উহু।

মাথা নেড়ে “না” উত্তর দিলো নিপু,,কুয়াশা হাসলো।কারণ যেমনই হোক না কেনো নিপু পরে ওকে ঠিকই দেখাবে।

__আচ্ছা দেখো..

কুয়াশা চিত্র’টা হাতে নিয়ে দেখলো,একটা মেয়ের ছবি।তবে মেয়ে’টা কোনো দিক থেকেই কুয়াশা’র মতো নয়।তবুও কিছু বললো না কুয়াশা।কারণ ছয়-সাত বছরের একটা মেয়ে তো শুধু আঁকিবুঁকিই করতে পারে।

__অনেক কিউট কিন্তু চোখ আরো সুন্দর করবে।ওকেহ?

__ওকেহ।

__আপ্পি আমার’টা?(মাইশা)

__হুহ।

মাইশা’র আর্ট বুক হাতে নেওয়া মাত্রই “ঠুং ঠং” করে কুয়াশা’র ফোন বেজে উঠলো।মাইশা খাতা রেখে দিয়ে কল রিসিভ করা মাত্রই ওপাশ থেকে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো “তুই কাল সারারাত কই ছিলি?এতো করে মেসেজ দিলাম তুই সিন করলি না কেনো?”

__আরে সামায়রা তার জন্যই তো এখন অনলাইন খোলা রাখলাম।

__হু।কিন্তু কা..

__কাল ডাটা অন রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম।

__ওহ।তুই কী আবার সুইসাইড করতে চাইছিলি?

কথা’টা কুয়াশা’র বুকের মাঝে ‘ধুক’ করে লাগলো।চোখের সামনে ভেসে উঠলো অরণ্যের টেনে পেলে দেওয়ার দৃশ্য’টা,খুব জোরে বকা দেওয়ার দৃশ্য’টা।কুয়াশা শব্দ করে হাসলো।

__ও নো।তুই হাসছিস?

__নাহ।তোর কী খবর?

__ভালোই।আর শুন সুইসাইড একদম করবি না,আমি কিন্তু তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।

কুয়াশা’র হঠাৎ কান্না পেলো।ভীষণ কান্না পেলো।সামায়রা!তার ফেইসবুক ফ্রেন্ড।মেয়ে’টা ভীষণ ভালো,বড্ড ভালোবাসে তাকে।কিন্তু কুয়াশা’কে একেবারেই বুজে না।এই যে এখন কুয়াশা’র কান্না পাচ্ছে তাও সেও জানে না।সামায়রা বুঝে না কোনটাতে কুয়াশা’র কান্না পাই,কোনটাতে খুশি হয়,,সে জানে না। জানে না সে!

__আচ্ছা এখন রাখছি।মে বি আর্ট ক্লাসে।

__হুম।বাই!

চোখের জল পড়তে দিলো না কুয়াশা,,তার আগেই চোখের কোটর ঘুরিয়ে নিলো।সামায়রা’র উপর খুব রাগ হচ্ছে এখন।কী দরকার ছিলো এখন ফোন করে ইমোশনাল করে দেওয়ার।

__সুগারদি দেখো না গুলুমুলু(মাইশা) আমার ব্রাশ নিয়ে নিচ্ছে।

নিপু’র সুইট কন্ঠে কুয়াশা’র ঘোর কাটলো।হালকা হেসে সে সামনে এগিয়ে গেলো,,,

৯.
অরণ্য অলরেডি ১ঘন্টা ধেরি করে এসেছে।তারওপর বিজয় স্যার ক্লাসে।ভূলেও এখন ক্লাসে যাবে না।তাই সে দূর থেকে তার বন্ধুদের দেখা দিয়ে ক্যান্টিনে চলে আসলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা চলে আসলো।

__কীরে আজকে লেইট করলি কেন?(রৌদ্রময়)

__কাল রাতে ধেরি করে ঘুমালাম,, তাই সকালে উঠতে পারি নি।

__তুই কাল রাতে কী চোরি করতে গেছেলিই?(অধ্রী)

__আরে ও তো কাল রাতে রেস্টুরেন্টে…(কানন)

__চুপ করতো কাল রাতে কুয়াশার সাথে চ্যাট করছি।

বাক্যটি শেষ করে অরণ্য চা’য়ের কাপে চুমুক দিলো।মাথা তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো তিন জোড়া চোখ হা করে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে কোটর থেকে চোখের মনি এখনি বেরিয়ে আসবে।
অতিরিক্ত অবাক হয়ে তিনজন একসাথেই বললো,,

__দোওওস্ত প্রেম?

__ছিঃ তোদের চিন্তা ভাবনা এতো নিচ।ও শুধু আমার ফ্রেন্ড। আর আয়নের টিচার।

__ওহ।তাহলে রাতে কথা বলার…

অরণ্যের কঠিন চেহেরা দেখে অধ্রী আর কিছু বলার সাহস পেলো না।

__দেখ ইয়ার সি ইজ মাই ফ্রেন্ড। আর আমি হিন্দু,,

__হিন্দু-মুসলিম নো ফেক্ট!এভরিথিং ইজ লাভ ইন ফেয়ার।(কানন)

__বাহ খাবার ছাড়াও তুই প্রেমের কথা জানিস?কোন মুভি থেকে শুনছিস রে?(রৌদ্রময়)

__চুপ কর ভ্যাএএ

জিভা দেখালো কানন।অরণ্য ওদের কথায় কর্ণপাত করলো না।ওরা বকবক করতেই থাকবে।

__আচ্ছা,,অরণ্য যখন বলছে এমন কিছুই না,তাহলে বাদ দেয়।(অধ্রী)

অধ্রীর কথা শুনে রৌদ্রময়- কানন আর কথা বলার সাহস পেলো না।কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করলো।একটুপর অধ্রী নিজেই বললো,,,”আজকে তো কুয়াশা আসবে বলেছে।তিনটার দিকে আসবে মনে হয়!”

__হু।কালকে সেটাই বললো।(অরণ্য)

__আচ্ছা দোস্ত ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে কিছু জেনেছিস?সুইসাইডের কারণ?

__ফ্যামিলি’তে কুয়াশা একাই আছে আর ওর বাবা ফার্মে কাজ করে।ওর ফ্রেন্ডসার্কেল বলতে বেশি কেউ নেই।সামায়রা নামের একটি ইন্ডিয়ান মেয়ে।ফেবুতে পরিচয়!কলেজে ‘শব্দ’ আর ‘তিহান’ দুজন ফ্রেন্ড।আর তেমন ক্লোজ কোনো ফ্রেন্ড নেই।

__তোকে এতো কথা কে বললো?

পেপসিতে চুমুক দিয়ে কানন জিজ্ঞেস করলো।

__কুয়াশা বলেছে সব।ফুহ

__ওওওওও।

তিনজন একসাথে ‘ও’ শব্দ করাই অরণ্য বিরক্ত হলো।তখনি অরণ্যের ফোন বেজে উঠলো,ফোন হাতে নিয়ে দেখে “বোন” নামটি ভাসছে।

(চলবে)

ভূলক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here