তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৭,১৮

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ১৭,১৮
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ১৭ : #অনুভবে_তুমি

ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে টয়ার গালে হাত ছোঁয়াতে টয়ার পুরো শরীর শিউরে উঠলো। টয়ার আবার ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেল। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,” Bye।”
টয়ার পুরো শরীর বরফ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে এমন কিছু ঘটবে কে জানত? টয়ার এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো, ব্যাপারটা তার হজম হচ্ছে না। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। সবটা দেখে রিতু ভুত দেখার মত চমকে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার মাথায় একটা টোকা দিয়ে চলে যেতেই রিতুর হা হওয়া চেহারা দেখে দাড়িয়ে পড়ল।
” আমি কে তা বুঝতে পেরেছো?”, মূখে মিষ্টি হাসি নিয়ে প্রশ্ন করলো।
রিতু ঘন ঘন হা সূচক মাথা নাড়ল।
” Good, এরপর থেকে আমাকে জিজু বলে ডাকবে। মনে থাকবে তো।”, ভয় দেখানোর জন্য হুমকস্বরূপ বললো ইয়াদ।
রিতু আবার ঘন ঘন মাথা নাড়তে লাগলো। ইয়াদ একবার পিছনে ঘুরে টয়ার দিকে তাকিয়ে পকেটে এক হাত ভরে বের হয়ে গেল। টয়া যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। রিতু এসে টয়ার পাশে বসে বললো,” কাহিনী কি কিছুই বুঝলাম না। কি সাংঘাতিক পোলা। আর কাউরে পাইলি না তুই? মা গো মা।”
টয়া চেঁচিয়ে বললো,” আজকের দিনটাই খারাপ কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম?” বলতেই টয়ার চোখ গেলো রিতুর দিকে রিতু ভোলাভালা একটা হাসি দিলো।
” তুই… তোর চেহারা দেখছি তাই এইসব হইসে।”, চোখ পাকিয়ে বলল টয়া।
” ইহ! নিজে প্রেম কইরা আমারে দোষ দেষ কেন? অখন সব দোষ আমার তাই না।”, রিতুর কথায় টয়া গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। রিতু নাস্তা এসে করতে বলে উঠে গেলো।
আর এই যন্ত্রণা ভালো লাগছে না। কোথায় পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। ইয়াদ কাছাকাছি আসলেই যেনো টয়া ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যায়। ইয়াদের থেকে দূরে থাকতে হবে। হটাৎ এনজিওর কথা মাথায় এলো। আজ কি কোথাও ক্যাম্পিং নেই? থাকার তো কথা, সবসময় তারা তো কাজেই থাকে।টয়া সেখানে কল দিলো। আজ দুপুরের পর একটা বাস চড় এলাকার দিকে যাবে কাল রাতে ফেরত আসবে। এটাই সুযোগ ইয়াদ ক্লিনিকে আছে এখন কেটে পড়লে আটকাতেও পারবে না। সাড়ে দশটা বাজে টয়া গোসল ছেড়ে রেডি হয়ে নিলো। এক রাত এক দিনের জন্য জামা কাপড় তেমন কিছু নিতে হবে না তার শুধূ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস একটা ছোট ব্যাগ এ ভরে নিলো টয়া। রিতু টয়ার ঘরে এসে হা করে থেকে বলল,”তুই কই যাস?”
” এনজিওর একটা কাজে যাচ্ছি।”, বলে ফোনের চার্জারটা ব্যাগের সাইড পকেটে রাখলো।
” তুই কি ওই ছেলের ভয়ে পালাচ্ছিস?”, রিতুর প্রশ্নে টয়া আমতা আমতা করে বলল,” ভয়! ভয়ের কি আছে। আর ওই ছেলেকে তুই ভুলেও বলবি না আমি কোথায় গেছি নইলে তোকে অমি বৃন্দাবন পাঠিয়ে ছাড়বো।”, টয়ার হুমকি শুনে রিতু হাসতে লাগলো তারপর বললো,” আহারে !”
টয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,” আহারে বলার কি আছে?”
রিতু মাথা না সূচক নাড়িয়ে বললো,” গান গাইছিলাম। আহারে আহারে কোথায় পাবো তাহারে, যে ছিলো মনের…………” গাইতে গাইতে হাত পা ছুড়ে নেচে নেচে কিচেনে গেলো।
টয়া হালকা ব্যাগটা কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো। দুপুর তিনটায় বাস ছাড়লো বাস গিয়ে চড়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। টয়ার এবার শান্তি লাগছে, বুকের ধুকপুকানি একটু কম হয়েছে। এবারে স্টেশনের পাশে একটা টিনের ঘর থাকার জন্য ব্যাবস্থা করা গেছে। সাথে মধু অর টনম্ময় আছে দেখে ভালোই লাগছে। রাতে ঠিক করা হলো কি কি করবে কাল সকালে। এবার খাদ্য বিতরণ করবে তারা কারণ এই এলাকায় ঘূর্ণিঝড় বন্যা এসবে মানুষ বিপাকে পরে যায়।

এদিকে রিতু একা বাসায় রয়েছে রাত এগারোটায় হটাৎ কলিং বেল বাজালো কেউ। রিতু লাফিয়ে ওঠে দরজার দিকে গেলো। ভয়ে সে থর থর করে কাপছে তার মনে হচ্ছে ডাকাত এসেছে। রিতু আগে ফাঁক দিয়ে দেখে নিলো। ইয়াদকে দেখে রিতুর মরি মরি অবস্থা ওরে আল্লাহ আবার আসছে কেন এই পোলা?
ইয়াদ অনেক্ষন বেল বাজালো কিন্তু দরজা খুললো না। ইয়াদের মনে হচ্ছে টয়া সে এসেছে বুঝেই দরজা খুলছে না। শেষমেশ ইয়াদ নিজের রূমে চলে গেলো। এদিকে রিতু তো দরজা খুলবে না এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আরাম করে বসে রইল। আজ বেল বাজাতে বাজাতে যদি বেল খুলে পড়ে যায় তাও সে দরজা খুলবে না তার নাম ও রিতু রজনী।


আজ টয়ার ফিরবার দিন একটু পর সবাই বাসে উঠবে তার প্রস্তুতি চলছে। টয়া চুপ করে এক কোনে বসে আছে হিটলারটা কি করছে কে জানে ভালোই হয়েছে চলে এসেছে সে এখানে জ্বালাতে পারবে না। সবাই বাসে উঠে গেছে টয়া সেটা খেয়াল করেনি একটু পর মধু এসে ওকে ডাকলো।
” কি হলো যাবি না?”, মধুকে দেখে টয়া উঠে দাড়ালো।
” সবাই উঠে গেছে?”, ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল।
” হ্যা তোকেই খুজতে এসেছি। তাড়াতাড়ি চল বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে।”
টয়া আকাশের দিকে একবার তাকালো। মেঘলা হয়ে গেছে আকাশটা। টয়া আর মধু বাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। হটাৎ টয়া থেমে যায়। মধু টয়াকে যাবার জন্য তাড়া দিয়ে বললো,” আবার দাড়িয়ে পড়লি যে তাড়াতাড়ি চল।”
টয়া দৃষ্টি সামনে রেখে একটা ঢোক গিললো কারণ সামনে বুকের কাছে দুই হাত গুজে ইয়াদ নিজের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ইয়াদের চোখে মুখে গম্ভিরতার ছাপ দেখেই টয়া বুঝতে পেরেছে তার কপালে আজ শনি রবি সোম মঙ্গল সব ঘুরছে।
টয়া ইয়াদকে পাশ কাটিয়ে কোনোভাবে বাসে উঠে যাবার চেস্টা করলো কিন্তু ইয়াদ গম্ভীর মুখে টয়ার হাত ধরে মধুর উদ্দেশ্যে বললো,” ও আমার সাথে যাবে।”
এ কথা শুনেই টয়ার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ওনার সাথে গেলে কি করে বসে কোনো ঠিক নেই। মধু আর কথা না বাড়িয়ে বাসে চলে গেলো। টয়া বির বির করে বললো,রিতু বেয়াদপটা সব ফাঁস করেছে ওকে আমি হাতের কাছে পেলেই হয়। টয়া ক্রমাগত হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ইয়াদ টয়াকে টেনে কাছে নিয়ে আসে।
টয়া ভয়ে ইয়াদের চোখের দিকে তাকাচ্ছে না। ইয়াদের দৃষ্টি টয়ার দিকে স্থির। ইয়াদ হাত দিয়ে টয়ার চেহারা নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললো,” ফোন ধরছিলে না কেনো? ফোন আবার বন্ধ করে রেখোছো তাই না? খুব সাহস বেড়ে গেছে তোমার।”
টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” এদিকে ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলে আমি কি করবো। আমাকে শাসাচ্ছেন কেনো?”
,” এসব যে করে বেড়াচ্ছো তোমার বাবা মা জানে?”
ইয়াদের কোথায় টয়া চমকে উঠলো।টয়ার বাবা মা কিছুই জানে না তাদের জানালে তারা কখনো আসতে দিতে রাজি হতো না তাই টয়া বলেনি। এই ছেলে যদি গিয়ে সব বলে দেয়। তাহলে যে লঙক্কা কান্ড লেগে যাবে। টয়া চোখ পিট পিট করে ইয়াদের দিকে তাকালো। ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো,” এখন চুপ চাপ গিয়ে গাড়ীতে বসে। তোমাকে আমি পরে দেখে নিচ্ছি।”
টয়া অগ্নিশর্মা হয়ে তাকিয়ে রইল, আজব এবার কি সে নিজের ইচ্ছে মতন ঘুরে বেড়াতে পারবে না।
” কি হলো?”, বলে তাড়া দিয়ে হাত ছেড়ে দিল ইয়াদ। টয়া মুখ ফুলিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে টয়া আর ইয়াদ পাশাপাশি। গাড়ীতে উঠে বসতেই বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। কি সুন্দর বৃষ্টির ফোঁটাগুলো গাড়ির জানালা দিয়ে এসে টয়ার গাল বেয়ে পড়ছে। কিছুক্ষন পরেই ইয়াদ জানালার গ্লাস বন্ধ করে দেয়। টয়ার আনন্দ কি তার সহ্য হয় না?। টয়ার অনেক কিছু বলতে করছে কিন্তু সে চুপ হয়ে বসে বৃষ্টি দেখতে লাগলো। বৃষ্টি দেখতে দেখতে টয়ার চোখ গুলো ঘুমে এলিয়ে এলো। টয়া একপাশে মাথা ফেলে ঘুমিয়ে পড়ল। কাল রাতে মশার জন্য ঘুমাতে পারেনি সে।
ইয়াদ টয়া ঘুমিয়ে পড়ায় টয়ার কাছে এসে বসে টয়ার মাথাটা নিজের কাঁধে সাথে রাখলো। টয়ার গভীর ঘুমে ইয়াদের হাতের বাহু জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদ গাড়িতে থাকা একটা পাতলা চাদর টয়ার গায়ে দিয়ে দিলো। ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাঁকিয়ে থেকে নিজের মাথাটাও গাড়ীতে হেলিয়ে দিলো। এই জায়গা খুঁজে বের করতে গিয়ে অনেক ঘুরতে হয়েছে তাকে, ক্লান্ত লাগছে।

হটাৎ গাড়ির ব্রেক কষতেই ইয়াদের ঘুম ভেঙে গেলো। টয়া একটু নড়ে চড়ে ইয়াদ কাধ থেকে ঘুম ঘুম চোখে মাথা তুলে চারপাশ দেখে আবার গাড়ির সীটে মাথা হেলিয়ে রাখলো। ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে গেলো ইয়াদও নেমে এলো। বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি গাড়ী থেকে নামতেই ইয়াদ ভিজে গেলো। ড্রাইভার ছাতাটা ইয়াদের দিকে এগিয়ে নিয়ে বললো,” স্যার, সামনে এগিয়ে যাওয়া safe হবে না। আশেপাশে প্রচুর গাছ আছে বাতাসে যেকোনো সময় গাছ পড়তে পারে। আর এমনিতেও সামনে গাছ পরে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে।”
” তাহলে?”, চিন্তিত গলায় বলল ইয়াদ।
” স্যার আপনি এখানে দাড়ান আমি দেখছি আশেপাশে কোনো থাকার ব্যবস্থা করা যায় কিনা।”, বলে ছাতাটা ইয়াদকে দিয়ে সে এগিয়ে গেলো।
ইয়াদ ছাতা হাতে গাড়ির সামনে এগিয়ে গিয়ে পড়ে থাকা গাছটা দেখে। গাড়ির কাছে এসে দেখে টয়া গাড়ী থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজছে। এই মেয়ের কোথা থেকে যে এমন ইচ্ছা জাগ্রত হয় ইয়াদ ভেবে পায় না। ভালো কোনো কাজ এই মেয়ে করবে না সব আজগুবি কাজ করে বেড়ায়। ইয়াদ এগিয়ে গিয়ে টয়াকে টেনে ছাতার নিচে নিয়ে এলো। টয়া নাছর বান্দা সে হাত ছাড়িয়ে আবার বৃষ্টিতে ভিজছে।
” আচ্ছা আপনি কখনো বৃষ্টিতে ভিজেছেন?”, টয়ার প্রশ্নে ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে বললো,” আমার কি তোমার মতো মাথার তার ছিড়া নাকি ?”
ইয়াদের কথায় টয়া হাতে থাকা বৃষ্টির পানি ইয়াদের মুখে ছিটিয়ে দিতেই ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফেলে। টয়া নেচে নেচে বললো,” হুহ, আপনার মাথার তার ছিড়া বুঝলেন। আসছে আমাকে বলতে।”
ইয়াদ হাত দিয়ে মুখের পানি সরিয়ে বললো,” you have to pay for this. I’m telling you.”
টয়া ইয়াদের কথা কানে নিলো না।

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ১৮ : #আরো_কাছাকাছি
লেখিকা :#নবনী_নীলা

” বলেছিলাম না এরপর থেকে আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবো। So come here” দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল ইয়াদ। টয়া শাড়ি হাতে মূর্তির মতন দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে ভেজা উচিৎ হয় নি এ আবার কোন বিপদে পড়লো সে। ড্রাইভার এক বুড়িকে পেয়েছে সে তার ঘরে আশ্রয় দিতে রাজী হওয়ায় ওরা আজ রাতের জন্য এখানে চলে এলো। জামা কাপড় ভিজে যাওয়ায় টয়াকে বুড়ি একটা সিল্কের শাড়ি পরতে দিয়েছেন। শাড়ি হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে ইয়াদকে বের হয়ে যেতে বলবে। টয়া পরেছে আরেক বিপদে। হাতে শাড়ি দেখেই ইয়াদ দুষ্ট ভাবে বললো সে শাড়ি পরিয়ে দিবে। শুনেই যেনো টয়ার পিলে চমকে উঠে।

ইয়াদ পকেটে হাত ভরে টয়ার দিকে এগিয়ে আসছে টয়া পিছিয়ে যেতে চাইলো ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে আসলো টয়া ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। শরীর যেনো বরফ হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার গালের পাশের চুল গুলো সরিয়ে বললো,” অনেক জ্বালিয়েছো আমায় এবার তো তোমায় ভুগতে হবে। ইয়াদ আরফিন এতো সহজে তোমায় ছাড়বে না।”
ইয়াদের কথায় টয়ার গলা শুকিয়ে এলো। সত্যিই কি এমন কিছু করবে ইয়াদ ভাবতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করছে তার।
টয়া কাপা কাপা গলায় বলল,” আমি জামা চেঞ্জ করবো না। দরকার নেই আমার শাড়ির। এভাবেই থাকবো”
ইয়াদ টয়ার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো,” তোমার দরকার নেই কিন্তু আমার তো আছে।”
টয়া চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে বললো,” বললাম তো দরকার নেই।” ইয়াদ তর্জনী টয়ার মুখের সামনে ধরে বললো,” আস্তে!”
টয়ার কাছে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,” পাঁচ মিনিট দিলাম
শাড়িটা পরে ফেলো। ঠিক পাঁচ মিনিট পর আমি এই রূমে আসবো ততক্ষনে পড়তে না পারলে, আমি তো আছি।”
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। টয়া যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। যেভাবে এগিয়ে এসেছিলো টয়ার তো মনে হয়েছিলো সত্যি সত্যি বুঝি এমন কিছু করবে সে। টয়া হাপাতে লাগলো। অসহ্য লাগছে এই ঘরে আবার ছিটকিনিটা এতো উপরে যে টয়ার নাগালের বাইরে। টয়া দরজার সামনে আপাদত একটা চেয়ার রেখে বন্ধ করে রাখলো। জলদি এই শাড়ি পড়ে বের হতে হবে কখন আবার হুট করে চলে আসবে কে জানে? লজ্জা নেই ছেলেটার।

টয়া ঘরের এক চিপায় গিয়ে জামা বদলে শাড়িটা কোনোভাবে পেঁচিয়ে পড়ে নিলো। সিল্কের শাড়ি পড়া আরেক জ্বালা খালি মনে হয় খুলে যাবে। বুড়িটা নিজের ব্লাউজও দিয়েছে সেটা একটু ঢিলা আর ব্লাউজের গলা তো মাশাল্লাহ এতো বড় আর পিঠের দিকটা অনেকখানি খোলা তারউপর পিঠের উপরে একটা ফিতে। সব ঠিক হয়ে করে নিয়েছে মোটামুটি, এই ফিতা কীভাবে লাগাবে সে। ফিতা না লাগলে কখন আবার কাধ থেকে পরে যায়। অসহ্য সব অসহ্য। কোন দুঃখে যে বৃষ্টিতে ভিজতে গেছিলাম কে জানে। শয়তানে কামড়ে ছিলো আমাকে।
টয়া ফিতাটা লাগানোর চেষ্টা করছে এমন সময় ইয়াদ দরজা খুলতেই ধপাস করে চেয়ার পরে যাওয়ার আওয়াজে ভয়ে টয়া লাফিয়ে উঠলো। ইয়াদ ভ্রু কুচকে চেয়ারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” তোমার কি উল্টা পাল্টা কাজ না করলে ভাল্লাগে না?”
ইয়াদকে দেখে টয়া শাড়ির আঁচলটা গায়ে জড়িয়ে নিলো। ইয়াদকে দেখেই ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বললো,” বলেছিলাম আমি পরিয়ে দেই শুনলে না তো। এইটা কীভাবে শাড়ি পড়েছ হাটতে গেলেই উষ্ঠা খেয়ে পরে হাত পা ভাঙবে।” বলে কাছে আসতেই টয়া শাসিয়ে বললো,” থামুন, একদম এদিকে আসবেন না। আমি কিন্তু চিল্লাবো।”
” চেঁচামেচি করা তো তোমার একটা প্রতিভা। সে আমি কাছে আসলেও চেঁচামেচি করবে না আসলেও করবে।”, বলতে বলতে এগিয়ে এলো।

টয়া পিছাতে লাগলো পিছাতে পিছাতে একসময়ে আয়নার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়লো। টয়ার পিছে টিনের সাথে ঝোলানো একটা মাঝারি সাইজের আয়না। আয়নার সাথে ধাক্কা লাগতেই ইয়াদ টয়ার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসলো এমন সময় টয়ার পিঠের উপর থেকে শাড়ির আঁচলটা সরে যায়। টয়া সেটা বুঝতে পেরে ইয়াদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে পিছনে আটিসাটি মেরে দাড়িয়ে রইলো। ইয়াদের চোখ পিছনের আয়নার দিকে যেতেই ইয়াদ ঘটনাটা বুঝতে পারলো। টয়া ভয়ার্ত গলায় বললো,” আপনি এই রুম থেকে যান। প্লীজ”
ইয়াদ টয়ার কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরে আয়নার কাছ থেকে সরিয়ে আনতেই টয়া হকচকিয়ে গেল তারপর নিচু স্বরে বললো,” আপনি প্লিজ যান এখন।”
ইয়াদ টয়ার পিঠের দিকে হাত বাড়াতেই টয়া ইয়াদের হাত ধরে মাথা নিচু করে রাখে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে। টয়া কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে বললো,” চোখ বন্ধ করে রাখলাম এবার হেল্প করি?”

টয়া ঠোঁট কামড়ে ইয়াদের দিকে তাকালো সত্যি সত্যি সে চোখ বন্ধ করে আছে। টয়া কি করবে বুঝতে পারছে না। ফিতা না লাগাতে পারলে অসস্তিতে থাকতে হবে। উপায় না পেয়ে টয়া ইয়াদকে বিশ্বাস করলো। ইয়াদ বন্ধ রেখে বলল,” কি হলো হেল্প লাগবে না?”
” দেখুন আপনি একদম চোখ খুলবেন না।”, শাসিয়ে বললো টয়া।
” তোমার হেল্প লাগবে কি লাগবে না সেটা বলো?”, ইয়াদ তাড়া দিয়ে বললো।”আচ্ছা দাড়ান”,বলে টয়া ইয়াদের হাতে ফিতা দুটো দিলো।
ইয়াদ চোখ বন্ধ করে ফিতা বাধার সময় টয়ার পিঠে একটু হাতের ছোঁয়া লাগতেই টয়া কেপে উঠলো। সেটা বুঝতে পেরে ইয়াদের ঠোঁটের কোণে হাসি নিলো বললো,” কী হলো কাপাকাপি করছো কেনো?”
টয়ার ইয়াদের হাসি দেখে মনে মনে বললো আবার হাসছে। ইচ্ছে করে এসব করছে আমি বুঝিনা ভেবেছে। ইয়াদ ফিতা বেধে দিতেই টয়া ইয়াদ থেকে দশ হাত দূরে সরে গেল। ইয়াদ কিছু বলার আগেই টয়া রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিবে বুড়ি মহিলাটা ঘরে ঢুকে পড়লো। টয়া আর রুম থেকে বেরিয়ে আসতে পারলো না। মহিলাটা টয়াকে দেখে বললো,” আইহায় কইচ্ছে কি মাইয়াডায় আরে মাইয়্যা শাড়ি কি এমনে ফিন্দ্দে?” ইয়াদের দিকে তাকিয়ে বললো,” বাবাজি তুমি আখণ রুম থেইকা যাও তোমার বউরে শাড়িখান ফিন্দাই দি।”ইয়াদ হা সূচক মাথা নেড়ে চলে গেলো।

বুড়িকে দেখে টয়ার এবার মনে হচ্ছে ফিতা চাইলে এনার কাছে গিয়ে বেধে নেওয়া যেতো কি যে বোকামি করে বসলো সে মাঝখান দিয়ে লোকটার সুবিধা হয়ে গেছে।
বুড়ি টয়ার হাত ধরে ঘরের মাঝে এনে দার করিয়ে টয়ার শাড়ির কুচি করতে করতে বললেন,” এইডা তোমার দাদার আমারে দেওইন্না প্রথম শাড়ি, শাড়িখানা আইন্না আমারে নিজের হাতে ফিন্দ্দাইয়া দিসিলো। বড়ো রসিক আসিল সে।”
বুড়ির কথা শুনে টয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। বুড়ি কুচি শেষে সেগুলো টয়ার হাতে ধরে রাখতে দিয়ে আঁচলের মাপ নিয়ে বললো,” এমনে শাড়ি ফিন্দবা কোমড়ের দিক খোলা রাইখ্যা। দেখবা জামাই কেম্বে ঘুরবো।”, বুড়ির কথা কানে যাওয়ার সাথে সাথে টয়ার গলা শুকিয়ে গেলো। এই রকম ভয়ানক কথা তাকে এ জীবনে শুনতে হবে সে কল্পনাও করে নি। বুড়ি যেতে যেতে বলল,” কিছু লাগলে আমারে কইবা কেমন ?” টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল।

বুড়ি চলে যাবার কিছুক্ষন পরই ঘরে ইয়াদ ঢুকলো। ইয়াদকে দেখে টয়া অবাক হয়ে বললো “আপনি আবার এ ঘরে এসেছেন কেন?” টয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে যাবে এমন সময় ইয়াদের চোখ টয়ার দিকে পড়লো। ইয়াদ টয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে। টয়া একটু ঘাবড়ে গিয়ে নিজের কোমরের কাপড়টা ঠিক আছে কিনা দেখে নিলো। না ঠিক আছে বুড়ি চলে যাবার সাথে সাথে ঠিক করে ফেলেছিলো সে। টয়া চেঁচিয়ে বলল,” কি বললাম শুনতে পান নি? এ ঘরে এসেছে কেনো আমি এখন ঘুমাবো।”
খাওয়া দাওয়া আগেই সেরে নিয়েছিলো তারা বৃষ্টির টিপ টিপ ফোঁটা টিনের চাল বেয়ে পড়ছে সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর একটা পরিবেশ। টয়ার ঘুমে চোখ জরিয়ে এসেছে।
এখন আবার ইয়াদ কেনো তাকে জ্বালাতে চলে এলো।
ইয়াদ খাটে বসে বললো,” ঘুম তো আমারও পেয়েছে।”
” তো গিয়ে ঘুমান এখানে এসেছেন কেনো?”, রাগে কটমট করে বললো টয়া।
” তোমার মনে হচ্ছে না যে তুমি কিছু একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। আমি তোমার হাজব্যান্ড তাই আমি এখানেই ঘুমাবো।” বলে বিছানার মাঝে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল।
” এখানে ঘুমাবেন মানে!!!!! উঠুন এক্ষুনি, অসম্ভব আমি আপনার সাথে এক ঘরে থাকবো না।” বলে ইয়াদের পাশে এসে হাত ধরে টেনে উঠানোর চেষ্টা করছে।
” আমি বিয়ের আগে শর্ত দিয়েছিলাম যে আমি আপনার সাথে থাকবো না আর এক ঘরে থাকা অসম্ভব ব্যাপার।”, ইয়াদ টয়ার কোনো কথায় কান না দিয়ে শুয়ে আছে। টয়া তাকে টেনেও তুলতে পারছেনা টয়া হাল ছেড়ে দিয়ে বললো,” ঠিক আছে আপনি উঠবেন না তাই তো। তাহলে ঘুমান এ রুমে আমি গিয়ে দাদীর কাছে ঘুমাচ্ছি।”
টয়া চলে যেতে পা বাড়াবে এমন সময়ে ইয়াদ টয়ার হাত ধরে টেনে ওকে বিছানায় নিজের পাশে শুইয়ে দিবে টয়া ব্যালেন্স হারিয়ে ইয়াদের উপর পরে যায়।
টয়া রাগে ফেটে যাচ্ছে। সে রেগে বলল,” আপনার সমস্যা কি? আমি আপনার সাথে থাকবো না বলেছি না।”
ইয়াদ টয়ার হাত বিছানার সাথে শক্ত করে ধরে বললো,” তুমি থাকবেনা তোমার ঘাড় ও থাকবে। অনেক জ্বালিয়েছি আজ আমায়। এতো সহজে তোমায় ছেড়ে দিবো ভেবেছো? চুপ চাপ আমার পাশে শুয়ে থাকো নইলে ।” ইয়াদ কথা শেষ করবে তার আগেই টয়া চেঁচিয়ে বলল,” নইলে কি করবেন? আপনি….. আপনি আমাকে মারবেন? আপনি এটা করতে পারবেন? এই ছিলো আপনার মনে।”

টয়ার বক বক শুনে ইয়াদের মেজাজ বিগড়ে গেলো ইয়াদ টয়ার ঘাড়ে হাত ডুবিয়ে দিলো তারপর বললো,” আমার মনে কি আছে দেখতে চাও?” ইয়াদের স্পর্শে টয়ার শরীরে শীতল শিহরন বয়ে গেল। টয়া হা করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসতেই টয়া চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। আত্মাটা মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে তার। টয়া চোখ মুখ বন্ধ করে আছে অনেক্ষন হলো কিন্তু কিছু হলো না। টয়া আস্তে করে চোখ খুলে দেখলো ইয়াদ ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া পিট পিট করে কয়েকবার তাকালো। ইয়াদ মুখের হাসি বজায় রেখে বলল,” কিছু হয়নি? তাই না। এইটা তো শুধূ ট্রেইলার দেখালাম যদি পুরো মুভিটা দেখতে না চাও চুপচাপ আমার পাশে শুয়ে থাকো।”
ইয়াদের কাজে টয়া প্রচুর ঘাবড়ে গেছে। বুকের ভিতরটা কেমন যে করছে বলে বোঝানো যাবে না। ইয়াদ টয়ার উপর থেকে সরে মাথার নীচে হাত রেখে টয়ার কাছাকাছি শুয়ে রইলো। টয়া কয়েকবার ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইলো। ইয়াদ কাত হয়ে শুয়ে টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here