গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ২৫,২৬
লেখিকা :#নবনী_নীলা
পর্বঃ২৫ :#হিংসুটে_মশা
তুমি বড্ড হিংসুটে।”, ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে বললো ইয়াদ।
” কি আমি হিংসুটে? আমি কেনো হিংসে করতে যাবো?” ইয়াদকে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিতে লাগলো নিজের উপর থেকে” আপনি সরুন তো। আমি যাবো।”
ইয়াদ টয়ার হাত ধরে বিছানার সাথে মিশিয়ে রাখলো। টয়া চোখ ছানাবড়া করে ফেললো। কি চাইছে কি ইয়াদ? দিন দিন কেমন একটা হয়ে যাচ্ছে? ইয়াদ অপলকে তাকিয়ে আছে ইয়াদের চাহিনিতে টয়া অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। ইয়াদ এগিয়ে আসতেই আবার ফোন বেজে উঠলো। ইয়াদ তোয়াক্কা না করেই টয়ার কাছে আসছিলো। টয়া ফোনের আওয়াজে বিরক্ত হয়ে একটু সাহস জুগিয়ে ইয়াদকে ঠেলতে লাগলো।
“আপনি গিয়ে আপনার ফোন ধরুন। আর সরুন আমার উপর থেকে।”, শাসিয়ে বললো টয়া।
ফোন রিসিভ করা নিয়ে যখন এতো কথা ঠিক আছে তাহলে ফোনটা রিসিভ করেই টয়াকে মজা দেখাচ্ছি ভেবেই ইয়াদ হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে টয়াকে গম্ভীর গলায় বললো,” ঠিক আছে আমি প্রতিভার সাথে কথা বলছি কিন্তু তুমি একটা আওয়াজ করবে না। ”
” একটাও আওয়াজ করবে না”, বোলেই টয়া মুখ বাঁকিয়ে ফেললো। তারপর আরো বললো,” আপনি কথা বলবেন কি গান গেয়ে শুনবেন আপনার ইচ্ছা। আমি এখানে থাকবো না আমাকে যেতে দিন।” বলেই হাত ছাড়ানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়ল টয়া।
” আগে আমি কথা বলা শেষ করি, তারপর।”, বোলেই ইয়াদ ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে বললো,”হুম প্রভাতী বলো, I mean প্রতিভা।” এই মেয়েটা দেখছি আমার মাথাযও খারাপ করে দিচ্ছে। টয়ার সাথে থেকে থেকে প্রতিভা প্রভাতী গন্ডগোল লেগে গেছে। মনে মনে ভেবে ইয়াদ আড় চোখে তাকালো টয়ার দিকে। টয়া মুচকি মুচকি হাসছে। বেশ হয়েছে!
ফোনের ওপাশে প্রতিভা নিজেও একটু confused হয়ে যায়। ইয়াদ টয়ার এক হাত শক্ত করে ধরে ফোনে কথা বলছে। দরকারেই কল করেছে সে, তারা সে বিষয়েই আলোচনা করছে। টয়ার রাগে গজগজ করছে সারাদিন তো ক্লিনিকেই থাকে তারপর আবার এদের বাসায় এসেও কথা বলা লাগবে। ইয়াদ অন্য দিকে তাকিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে সমস্যা কি নিয়ে হয়েছে। এদিকে টয়া এক দৃষ্টিতে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে। কি আজব একবার টয়ার দিকে তাকাচ্ছেও না। টয়ার রাগ বাড়তেই ধরে থাকা হাত দিয়েই টয়া ইয়াদের হাতে খামচি বসিয়ে দিলো। হটাৎ এমন ব্যাথায় ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে হালকা উফ শব্দ করলো। ওপাশ থেকে প্রতিভা বললো,” ইয়াদ any problem?”
ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” নাহ্ একটা হিংসুটে মশা কামড়েছে। তোমাকে আমি পরে ফোন করছি।”
ইয়াদ ফোন কাটতেই টয়া চেঁচিয়ে বললো,” আমি হিংসুটে মশা?”
ইয়াদ ফোনটা সুইচ অফ করে একপাশে ফেলে দিয়ে বললো,” যা দেখছি সেটাই তো বলবো তাই না।”
” আচ্ছা আমি হিংসুটে মশা আমি আপনাকে কামরেছি? কখন কামড়ালাম আপনাকে? ইচ্ছে করছে সত্যি সত্যি একটা কামড় বসিয়ে দেই। হিটলার কোথাগার!” রাগে ফুলে বললো টয়া।
টয়ার এমন রূপ ইয়াদ এর আগে দেখেনি। ইয়াদের কাছে বেশ মজাই লাগছে। ইয়াদ মুখে হাসি রেখে এগিয়ে আসতেই টয়া হুমকি দিয়ে বললো,”একদম কাছে আসবেন আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? আমি আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি কি অবলা নারী?”
ইয়াদ টয়ার দিকে এগিয়ে আসছে এতে টয়ার বুকের ভিতরটা ধক ধক করছে। হুমকি দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। ইয়াদ মুখটা কাছাকাছি আনতেই টয়া চোখ বন্ধ করে চেঁচিয়ে উঠলো,” থামুন থামুন একটা কথা বলবো।”
ইয়াদ থেমে গিয়ে প্রশ্ন করলো,” কি কথা?”
” মানে আপনি .. কানে কানে বলবো?”, চোখ পিট পিট করে বললো টয়া।
টয়া আবার ইয়াদকে কানে কানে কি বলবে ? চিৎকার মারবে নাতো কানের সামনে। ইয়াদ সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,” একদম কানের সামনে চিৎকারের চেষ্টাও করবে না বলে রাখলাম।”
” ছি আমি মোটেও এসব করিনা। এগুলো আপনার ভুল ধারণা “, খুবই হাসি মাখা মুখে বললো টয়া।
” সেটা তো একটু পরই বুঝা পাওয়া যাবে।”, বলেই ইয়াদ টয়ার দিকে কান এগিয়ে আনতেই টয়া ইয়াদের গলায় এক জোড়ে কামড় বসিয়ে দিল। ইয়াদ ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। টয়া এমন কিছু করবে ইয়াদ ভাবতেই অবাক হচ্ছে। টয়া নিজের রাগ ঝেড়ে সরে এসে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখলো।
” আপনি বলেছিলেন না হিংসুটে মশা কামড়েছে। কামড়ালে ঠিক কেমন লাগতো সেটাও অনুভব করা দরকার। শুধূ বললেই হবে? আর হ্যা গলায় কামড়েছি বলে আজে বাজে কিছু ভাববেন না। আপনি আমার হাত আটকে রেখেছেন নইলে হাতেই কামড়ে দিতাম।”, দাতে দাঁত চিপে বললো টয়া।
” তাই বুঝি।”, ইয়াদ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল। রাগের মাথায় কাজটা করা যে ঠিক হয়নি টয়া ঠিকই এবার বুঝতে পারছে।
টয়া এবার তোকে পালাতেই হবে। এখানে থাকলে কপালে বিপদ। টয়া উঠে যাবার জন্যে হুড়োহুড়ি করতে লাগলো।
” দেখুন অনেক হয়েছে। এবার আমি বাসায় যাবো।”, টয়া ইয়াদের দিকে তাকালো সে টয়ার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দেখেই টয়া একটা ঢোক গিলে বললো,” অনেক্ষন তো হাতটা এবার ছাড়ুন। ব্যাথা করছে।”
বোলেই টয়া চোখ নামিয়ে ফেললো। ইয়াদ টয়ার হাতের দিকে তাকালো আসলেই বেশী হয়ে গেছে। ইয়াদ টয়ার হাত ধরো ওকে টেনে তুলে বসলো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে পড়তেই ইয়াদ টয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে বসালো। টয়া লজ্জায় আবার উঠে যেতেই ইয়াদ আবার জরিয়ে ধরলো। ইয়াদ টয়ার হাতটা ধরে নিজের কাছে নিয়ে এলো। হাতে লাল দাগ বসে গেছে। এবার ইয়াদের আফসোস হচ্ছে। ইয়াদ টয়ার দুই হাত দিয়ে নিজের মুষ্টির মাঝে ধরে টয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,” তুমি যে কাজটা করলে এবার যদি কেউ ask করে গলায় কি হয়েছে অমি কি বলবো?”
টয়া চোখ ছানাবড়া করে ইয়াদের গলার দিকে তাকালো। রক্ত জমাট বেঁধে লাল লাল হয়ে গেছে। এমন কিছু করার ইচ্ছা টয়ার ছিলো না।
টয়া অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,” আমি জানি না।”
” জানি না বললে তো আর হলো না। সমস্যা তুমি করেছো সমাধান তো তোমাকেই করতে হবে। হুম বলো কিভাবে সমাধান করবে?”, ইয়াদ টয়ার মুখ তুলে প্রশ্ন করলো।
টয়া ইয়াদের কথা শুনে ঘাবড়ে গেল।
টয়া পালানোর জন্য বললো,” ক্রিম নিয়ে আসবো?”
” ক্রিম আনা লাগবে না আপাদত তুমি আমার সাথে থাকবে।”, বলে টয়াকে কোলে তুলে নিলো।
টয়া চোখ মুখ খিচে ইয়াদের শার্ট খামচে ধরলো। ইয়াদ টয়াকে নিজের পাশে শুইয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ইয়াদের নিশ্বাস টয়ার কাধে এসে পড়তেই টয়া কেপে উঠলো বুকের ভিতরটা তোলপাড় শুরু করেছে। ইয়াদ টয়ার কানের কাছে এসে বললো,” এটাই তোমার শাস্তি।”
সকালে ঘুম ভেঙে টয়া বড়ো একটা শক খেলো। ইয়াদের বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে সে। কিন্তু রাতে ইয়াদ ঘুমিয়ে যাওয়ার পর সে সরে গিয়েছিলো তাহলে এদিকে এলো কি করে। ঘুমের মাঝে কি নিজেই! টয়া খুব আস্তে আস্তে সরে এলো উঠে যাবে এমন সময় ইয়াদের গলার দাগটা দেখে নিজের উপর নিজের রাগ লাগছে। মাঝে মাঝে যেনো শয়তানে মাথায় এসে বসে।
🌟
টয়া আর রিতু হসপিটালে এসেছে। নীরবের নাকী একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। হাতে নাকি মারাত্মক ব্যাথা পেয়েছে। হসপিটালে এসে টয়া আর রিতু অবাক। নিরব হাত ব্যান্ডেজ করা কনুই পর্যন্ত । টয়া নীরবের মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে বললো,” চোখ কি হাতে খুলে গাড়ী চালাস?”
রিতু নীরবের বেডের পাশে বসে বললো,” নিশ্চই আবার মুরগি চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে তারপর খেয়েছে রামধোলাই এখন হাত ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।”
টয়া ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকালো। নিরব পাশে থাকা একটা তুলোর প্যাকেট রিতুর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বললো,” এই মেয়েটিকে এনেছিস কেনো? ও বার বার আমায় কেনো মুরগি চোর বলে।”
” আচ্ছা বেশি ছোটো হয়ে গেছে? আচ্ছা তাহলে গরু চোর। এবার তাহলে প্রেস্টিজ লাগবে না তো।”, বোলেই খিল করে হাসতে লাগলো রিতু।
” তোমাকে আমি।……”, বলে শেষ করার আগেই একজন কড়া গলায় বলল,”পাসের বেডের রোগীর অসুবিধা হচ্ছে।”
ওরা পিছে তাকিয়ে ইয়াদকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো।
[ চলবে ]
গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
[পর্বঃ২৬ :#তিক্ত_অতীত
লেখিকা :#নবনী_নীলা
তোমাকে আমি।……”, বলে শেষ করার আগেই একজন কড়া গলায় বলল,”পাশের বেডের রোগীর অসুবিধা হচ্ছে।”
ওরা পিছে তাকিয়ে ইয়াদকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো। ইয়াদ নিজেও ওদের দেখে অবাক হয়ে গেলো। সাদা এপ্রনে ইয়াদকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। টয়া ইয়াদের দিকে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে গলার সেই দাগের জায়গায় ব্যান্ডেজটার দিকে নজর পড়লো। টয়া সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো। ইয়াদ নীরবকে দেখতেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,” এই স্টুপিডের আবার কি হয়েছে?”
নীরবকে স্টুপিড ডাকায় রিতু খিল করে হেসে ফেললো। নিরব রাগী চোখে রিতুর দিকে তাকিয়ে ইয়াদকে বললো,” এখানকার ডক্টরদের ব্যাবহার দেখছি খুবই খারাপ।” শুধু টয়ার কথায় নীরব এই ছেলেকে কিছু বলে না। নীরবের ইচ্ছে করছে রিতু আর ইয়াদকে আফ্রিকার জঙ্গলে নিয়ে রেখে আসে।
এমন সময় প্রতিভা রুমে এসে বলে,” ইয়াদ তোমার পেশেন্ট অপেক্ষায় আছে চল।” বলে ইয়াদের হাতের বাহু ধরলো যদিও সবার কাছে স্বাভাবিক লাগলো টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। ইয়াদ নার্সকে বললো,” এই পেশেন্টের ভালো করে খেয়াল রাখবে। বেশি উৎপাদ যেনো না করে।”
নিরব ভরকে গেল তারপর বলে উঠলো,” বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না? গায়ে পড়ে কেনো ঝগড়া করতে আসছেন? নেহাত একজনকে প্রমিস করেছি না হলে”, বলে নিরব টয়ার দিকে তাকালো। টয়া চোখ বড় বড় করে নীরবের দিকে তাকালো। টয়া সেদিন ফিরবার সময় একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়। তারপর থেকে টয়ার নাচটা বন্ধ হয়ে যায়, পায়ের গোড়ালিতে ব্যাথা পায়। কয়েক বছর বেশি হাটাহাটি করতে পারতো না টয়া। ব্যাথার কারণে তাই নাচটা ছেড়ে দিয়েছে যদিও সে এখন সম্পূর্ণ সুস্থ তবে নাচটা আর করা হয় নি। নিরব এইসব কথা ইয়াদকে না বলে দেয় সেই ভয়ে টয়া নীরবের পাশে বসে ওর হাত চেপে ধরলো।
ইয়াদের মনে হচ্ছে টয়া নীরবকে কিছু একটা বলা থেকে আটকাচ্ছে। কি এমন কথা? তার থেকেও রাগ লাগছে টয়া নীরবের পাশে বসে হাত ধরে আছে। ইয়াদ স্থির দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময়ে রিতুর ইয়াদের গলার বান্ডেজটার দিকে চোখ পড়লো রিতু হাসি মিশ্রিত গলায় বললো,” ডাক্তার সাহেবের গলায় দেখি ব্যান্ডেজ।”
নার্স, প্রতিভা, নিরব সবাই ইয়াদের গলার ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে আছে মনোযোগ দিয়ে। টয়া ইয়াদের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়লো সঙ্গে সঙ্গে সে চোখ নামিয়ে ফেললো। বুকের ভিতরটা ধক ধক করছে।
প্রতিভা ইয়াদের গলার ব্যান্ডেজে হাত দিয়ে বললো,” হিংসুটে মশা তাহলে এই জায়গায় কামড়েছে।”
টয়া লজ্জায় লাল হয়ে গেল তবে রাগ তার মাথায় উঠে গেছে। এই প্রভাতী দেখছি গলায় টাচ পর্যন্তও করে ফেলেছে। এ কেমন বেহায়া মেয়ে? ইয়াদ কিছু বললো না কেনো? এমন সময় একটা নার্স জুস নিয়ে এসে পাশের সেটা টেবিলে রেখে বললো,” এটা পেশেন্ট কে খাওয়ানোর পর আপনারা ডাক্তার দিদির সাথে কথা বলে নিবেন।”
নার্সরা বেরিয়ে যায়। টয়া জুসটা দেখে ইয়াদকে জ্বালানোর একটা প্ল্যান করে জুসটা নিজের হাতেই নিরবে খাইয়ে দিল। ইয়াদ রাগে মুষ্টি বন্ধ করে ফেললো। ইয়াদ পারে না এক্ষুনি নীরবকে কাচা গিলে ফেলে। প্রতিভা আবার ইয়াদের হাত ধরে টেনে বললো,” চলো। আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবে।”টয়া ইয়াদের চোখে একবার তাকালো তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ইয়াদ রেগে বেরিয়ে গেলো।
কিন্তু নিরবের তো একটা ব্যাবস্থা করা প্রয়োজন। এই ছেলে এইখানে থাকা মানেই বিপদ। ইয়াদকে যে কিছু বলবে না তার গ্যারান্টি নেই। এমনিতেই বিয়ের খবর, এর কানে আসেনি আসলে কি যে করবে কে জানে। কাল রাতে আবার দাদাভাইরা আসবে তখন এমনিতেই সব জানতে পারবে নিরব। আগে ভাগে বলে রাখি পরে কি ঝামেলা পাকাবে কে জানে। রিতুর সামনে এতো কিছু বলা যাবে না।
” রিতু একটু জেনে আসবি ঠিক কোন রুমটায় যেতে বলেছে নার্স।”, রিতু নীরবকে মুখ বাঁকিয়ে উঠে গেলো। নীরবের ইচ্ছে করছে এই রিতুকে কাচা গিলে খায়।
রিতু বেরিয়ে যাওয়ায় টয়া নিরবকে বললো,” শুন তুই ওনার সাথে কোনো ঝামেলায় যাবি না।”
” আমি কোথায় ঝামেলা করি? দেখলি না সেধে এসে ঝামেলা করলো।”, টয়া মাথা নাড়িয়ে বললো,” আচ্ছা বুঝেছি। কিন্তু আমার কথা শুন। ঠাণ্ডা মাথায় শুন। ”
” হুম বল।”, নিরব মাথা নাড়িয়ে বললো।
” বাবা মা ওনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।”, বলেই চুপ করে গেলো টয়া। বিয়ে হয়ে গেছে বললে এতো কাহিনি বলতে হলে কখন হয়েছে? কিভাবে হলো এসব? বাবা মা কি করে রাজি হয়েছে? এতো কিছু বলার থেকে এটা বলাযই ভালো।
” মজা করছিস?”, গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করলো নিরব।
টয়া না সূচক মাথা নাড়লো। ” কিভাবে ঠিক হলো? তুই রাজি হলি কিভাবে? তুই এই ছেলেটাকে বিয়ে করবি? যার জন্যে তুই
এতো কষ্ট পেয়েছিস?” রেগে বলল নিরব।
” নাহ্ আমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা একটা অ্যাকসিডেন্ট। তার সাথে ইয়াদের কোনো সম্পর্ক নেই। শুধূ শুধূ তাকে দোষারোপ করার কোনো মানে নেই। সেদিন তো তুই আর আমি একসাথেই আসছিলাম। পুরোটাই একটা দুর্ঘটনা।”, এর মাঝে রিতু এসে হাজির।
টয়া উঠে দাড়ালো প্রথমে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসা ভালো আগে নিরব মাথা ঠান্ডা করুক।
” আমি এসে তোর সাথে কথা বলছি।”, টয়া উঠে দাড়ালো তারপর রিতুর সাথে বেরিয়ে এলো। নীরবের মায়ের কান্সারের চিকিৎসা চলছে। তাই তার বাবা তার মাকে নিয়ে বিদেশে আছে। তাই যা করার টয়াকেই করতে হবে।
টয়ার সাথে ইয়াদের বিয়ে হবে? নিরব সেটা কিছুতেই মানতে পারছে না। টয়াকে সে নিজেও ভালোবেসে ফেলেছে আর সেটা আজ নয় অনেক আগ থেকেই। টয়া নীরবকে ভালোবাসে না সেটা নিরব ভালো করেই জানে। তবে ইয়াদ যার জন্য টয়াকে এতো কষ্ট পেতে হয়েছে সে কখনোই টয়াকে ডিজার্ভ করে না।
ইয়াদ রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলো টয়া ভিতরে আছে কিনা জানার জন্যে দ্বিতীয়বারের মতো ভিতরে এলো। ইয়াদকে এবার নীরবের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
” আসুন আসুন। ডাক্তার সাহেব আপনাকেই তো খুঁজছিলাম। ভালো করেছেন এসে পড়েছেন নইলে আমিই যেতাম।”, নীরবের কথা বলার ভঙ্গিতেই ইয়াদ সবসময় বুঝে যে নীরবের তার প্রতি কোন এক ক্ষোভ আছে।
” আমি তোমায় না টয়াকে খুঁজতে এসেছি।”, ধারালো গলায় বললো ইয়াদ।
নিরব কষ্ট করে উঠে দাঁড়িয়ে একটু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ইয়াদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,” কিন্তু আমি তো আপনাকেই খুঁজছি। শুনলাম আপনার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে তাও নাকি টয়ার সাথে।”
” হুম, তোমায় দাওয়াত রইলো।”, চোখ মুখ শক্ত করে বললো ইয়াদ। হটাৎ নিরব এমন কথা বলছে কেনো ইয়াদ বুঝতে পারছে না।
ইয়াদের কথায় নিরব সজোড়ে হেসে উঠলো তারপর সিরিয়াস হয়ে বললো,” সবে তো বিয়ে ঠিক হয়েছে। এখনও হয়নি, আর হবেও না। এতো বছর পর হুট করে এসে টয়াকে বিয়ে করে ফেলবেন সবটা কি এতো সহজ?”
ইয়াদ হাত বুকের কাছে গুঁজে মনে মনে বললো বিয়ে শেষে রোমিও এসেছে ডায়লগ বলতে। এরা একদম ডায়লগ দিতে এক্সপার্ট।” সেটা বিয়ে হলেই বুঝতে পারবে।”, ডাট দিয়ে বললো ইয়াদ।
” এতো যখন ভালোবাসা সেদিন কি হয়েছিলো? কম কথা তো বলেন নি। আপনার জন্যে যে টয়া সাফার করলো তার বেলায়। ও যে আর…”, বলতে গিয়ে নিরব চুপ করে গেলো।
ইয়াদের জন্যে সাফার করেছে মানে? অনেক হয়েছে এই সত্যিটা ইয়াদকে জানতেই হবে।
ইয়াদ রেগে গিয়ে এগিয়ে এসে বললো,” কি হলো থামলে কেন? বলো। নাকি সাহস নেই। স্পিক উপ।”
” এখন শুনে কি হবে? পারবেন ওর জীবনে নাচ ফিরিয়ে দিতে?”, দাতে দাঁত চিপে বললো নিরব।
” পুরা শেষ করো। কি হয়েছিলো টয়ার?”, রাগে গজগজ করে বললো ইয়াদ।
” টয়ার একটা অ্যাকসিডেন্ট হয় প্রাইভেট গাড়ির সাথে। তারপর থেকে ওর জীবনে নাচ হারিয়ে গেছে।”, কথাটা ইয়াদের কানে পৌঁছাবার সাথে ইয়াদ বড়ো রকমের একটা ধাক্কা খায়। নিজেকে সে কি করে ক্ষমা করবে? ইয়াদের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো। নিজের উপর এতটা রাগ হচ্ছে তার। ইয়াদ চোখ বন্ধ করে দির্ঘশাস ফেলে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে এমন সময় নীরব বলে উঠলো,” টয়াকে আপনি কোনদিন পাবেন না। আমি সেটা কোনদিন হতেই দিবো না।” কথাটা শোনার সাথে সাথে ইয়াদ রাগের মাত্রা হারিয়ে নিরিবের কলার চেপে ধরে বলে উঠলো উঠলো,” you bustard।” আর কিছু বলার আগেই টয়া চেঁচিয়ে উঠে বললো,” আপনারা কি করছেন?” টয়া ছুটে ভিতরে এলো।
ইয়াদ যেই মুহুর্তে নীরবের কলার চেপে ধরেছে তখনই টয়া ভিতরে এসেছে। তাই টয়া ভেবেছে ইয়াদ ইচ্ছে করে নীরবকে উস্কে দিচ্ছে। টয়া ইয়াদকে ভুল বুঝে রেগে গেলো।
ইয়াদ টয়াকে দেখে নীরবের কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলো। টয়া ছুটে এসে নীরবকে ধরে রেগে বললো,” আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কি করছেন এসব? ওর হাতে ব্যাথা জেনেও এমন ব্যাবহার করছেন কি করে?”
ইয়াদ টয়ার সব কথা অগ্রাহ্য করে বললো,” টয়া আমার তোমার সাথে কথা আছে।”
” কিন্তু আমার তো আপনার সাথে কোনো কথা নেই।”, চেঁচিয়ে বললো টয়া।
” টয়া আমি বলছি আমার সাথে এসো।”, গম্ভীর গলায় বলল ইয়াদ। ভিতরে অফুরন্ত রাগ চেপে রেখেছে ইয়াদ, সেটা মুখেই বোঝা যাচ্ছে।
” আমি আপনার সাথে যাবো না। আপনি প্লীজ এখান থেকে যান।”, রেগে বললো টয়া।
ইয়াদ এগিয়ে এসে টয়ার হাত ধরে জোর দেখিয়ে বললো ,” আমি তোমাকে আমার সাথে আসতে বলেছি।”
” আমি বলছি তো বললাম আপনার সাথে যাবো না। আপনি আমার হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন।”, বলার সাথে সাথে ইয়াদ টয়া হাত ছেড়ে দেয়।
ইয়াদ রাগের মাথায় পিছিয়ে গিয়ে বললো,” ok stay।”বলার সাথে সাথে পাশে থাকা খালি টেস্টিটিউব গুলোর সাথে জোড়ে মুষ্টি বন্ধ হাত দিয়ে আঘাত করতেই টেস্টিটিউবের কাঁচ গুলো চারিদিকে ছিটকে পড়েছে। বিকট আওয়াজে টয়া ইয়াদের দিকে তাকাতেই চোঁখ পড়ল ইয়াদের হাতের দিকে হাতে কাঁচ ঢুকে বিচ্ছিরি ভাবে ক্ষত হয়ে রক্ত বের হচ্ছে। টয়া ভয় পেয়ে গেলো ইয়াদের হাতের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসতেই ইয়াদ অন্য হাত দেখিয়ে থামতে দেখিয়ে বললো,” stay there ”
[ চলবে ]