তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ৩,৪

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে,পর্বঃ৩,৪
লেখিকা :নবনী_নীলা
পর্বঃ৩

পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে টয়া না বুঝে ইয়াদের কাধের শার্টের কিছু অংশ খামচে ধরলো। ইয়াদ ব্যপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। সে টয়ার হাতের কব্জি ধরে ওকে দাড়াতে সাহায্য করলো। টয়া নিজের অন্য হাতের দিকে তাকালো যে হাতে সে ইয়াদের শার্ট ধরে ছিলো। মুহূর্তেই টয়া নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক হলো। টয়ার হাত সরানোর পর ইয়াদ নিজের শাটের দিকে তাকালো ভাগ্যিস শার্টটা ঠিক আছে।

টয়া কি করবে কি বলবে বুঝতে পারছেনা এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যা হলো সেটা ঠিক তার হজম হচ্ছে না। টয়া এক দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে কি হয়েছে সেটা মনে মনে রিপ্লে করে দেখছে। ইয়াদ নিজের শার্টটা কাধ দিয়ে ঠিক করে টয়ার দিকে তাকালো মেয়েটা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। ইয়াদ টয়ার মাথায় আস্তে করে হাতের দুইটা আঙ্গুল দিয়ে একটা টোকা দিয়ে বললো,” ঘড়ি দেখানো হয়েছে না? এবার স্কুলে যাও।”

ইয়াদের কথায় টয়ার হুশ ফিরল। সে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ আর কিছু না বলে হাটা ধরলো।

টয়া এখনও ঘোরের মাঝেই আছে। ইয়াদকে যেতে দেখে রাহি আর ছোঁয়া ছুটে টয়ার কাছে আসে। রাহি জোরে বলে উঠে,” এটা কি দেখলাম টয়া?”

টয়া রহির চিৎকারে চমকে উঠে আসে পাশে তাকিয়ে রাহির মুখ চেপে ধরলো। একটা দোকানদার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। টয়া ইয়াদের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে রাহির মুখ চেপে ধরে স্কুলের দিকে নিয়ে এসে বলে,” গলা নাকি মাইক এইটা তোর? তোদের জন্য কোনদিন যে বাঁশ খাই।”

ছোঁয়া টয়াকে থামিয়ে বললো,” আচ্ছা পড়ে এইসব বলিস, আগে বল কি হইলো ঐটা?”

টয়া মলিন চোখে অন্য দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,” আমি নিজেও জানি না। হটাৎ করে সুন্দর কিছু ঘটলো আবার মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো।”

রাহি টয়ার কথার কিছু না বুঝেই বললো,” কি বললি কিছুই দেখি বুঝি না। এইসব বাদ দিয়ে বল ট্রিট দিবি কবে?”

টয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,”কিসের ট্রিট? আর দেরী হইলে আতিফ স্যার ক্লাসে ঢুকতেই দিবে না।”বলেই টয়া স্কুলের দিকে দৌড় দিলো। ছোঁয়া আর রাহিও দৌড়াচ্ছে টয়ার পিছনে।

স্কুল শেষে টয়া নাচতে নাচতে বাসায় ফিরলো। আজকের দিনটা তার অনেক ভালো গেছে। এছাড়াও বৃহস্পতিবারে টয়া বিকালে হাঁটতে যেতে পারে, সপ্তাহের একদিন সে এমন সুযোগ পায়। যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। টয়া একটা জিন্স প্যান্ট, হাঁটুর উপরে একটা কামিজ আর গলায় একটা স্কার্ফ আর কাধ পর্যন্ত চুলগুলো খোলা রেখে বের হয়েছে। ছোট চুলে তাকে বেশ ভালোই লাগে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ইয়াদও হাঁটতে বের হয়েছে। ইয়াদের মন ভালো নেই কারণ তার বাবার কিছুদিনের মাঝেই ট্রান্সফার হয়ে যেতে পারে। মা কার সাথে জানি এই ব্যাপারে কথা বলছিলো ইয়াদ সেটা শুনে ফেলে।
ইয়াদ মন ভালো করার জন্য হাঁটতে বেরিয়েছে। সে হেঁটে হেঁটে রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাবে । তার বাবা পুলিশ বাদে আর কোনো পেশা বেছে নিলেন না কেনো? মাঝে মাঝে ইয়াদের সেটা তাকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে। এদিকে টয়ার জ্যাকপট লেগেগেছে সে ইয়াদকে রাস্তায় পেয়েছে। টয়া ইয়াদের পিছু নেওয়ার আগে অজুহাতও বানিয়ে নিলো।

ইয়াদ পকেটে দুই হাত রেখে আপন মনে এগিয়ে যাচ্ছে, পিছু পিছু হেটে কোনো লাভ নেই টয়া বুঝতে পারলো। টয়া গিয়ে ইয়াদের পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। টয়াকে দেখে ইয়াদের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। মেয়েটা তাকে ফলো করতে করতে এতদূর চলে এসেছে ভেবেই ইয়াদের বিস্ময়ের মাত্রা বাড়ছে।

টয়া হাঁটতে হাঁটতে বললো,” আপনাকে thanks দেওয়া হয়নি, দেখলাম এদিক দিয়ে যাচ্ছেন তাই ভাবলাম thanks দিয়ে যাই।”

ইয়াদ আড় চোখে একবার টয়ার দিয়ে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির করলো। এই মেয়েকে কিছু বলে লাভ নেই সে পিছু নেবেই। আসুক হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে নিজে থেকেই চলে যাবে।

ইয়াদের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে তার কিছু হয়েছে। টয়া কিছুটা অনুমান করে ইয়াদকে প্রশ্ন করলো,” আপনার কি মন খারাপ?”

ইয়াদ দৃষ্টি সামনে রেখেই হেঁটে চলেছে সে টয়ার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিবে না। আর টয়া সে কি হাল ছাড়বার পাত্র নাকি? টয়া বলতে লাগলো মন খারাপ হলে কি করতে হয় জানেন? আরেকটা মন খারাপের কাজ করতে হয়। এতে মন খারাপে মন খারাপে কাটাকাটি হয়ে যায়।

ইয়াদের টয়ার কথায় একটু হাসি পেলো কিন্তু সে হাসলো না খালি একবার টয়ার দিকে তাকালো। টয়া বললো,” আরে আমি গল্পের বইয়ে পরেছি এমন নাকি হয়। সত্যি কিনা জানি না এক্সপেরিমেন্ট করা হয়নি।” বলতেই ইয়াদ টয়ার দুই বাহু ধরে তাকে অন্য পাশে নিয়ে এলো।

টয়া অবাক হয়ে ইয়াদের দিকে তাকালো। টয়ার কিছু বলার আগেই ইয়াদ বললো,” আরেকটু হলে গাড়িটা তোমাকে উড়িয়ে দিয়ে চলে যেতো, পরে তোমার ফ্যামিলি আমাকে ধরে জেলে দিয়ে বলতো, আমি তোমাকে ধাক্কা দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছি।”

ইয়াদের কথায় টয়া নিজের হাসি থামাতে পারলো না। টয়া মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগলো। এই ছেলেটা মজার কোথাও জানে সেটা সে ভাবে নি। ইয়াদ হাঁটতে হাঁটতে হটাৎ থেমে গিয়ে টয়ার দিকে মুখ করে দাড়ালো মেয়েটা হেসেই যাচ্ছে। ইয়াদ টয়ার দিকে তাকিয়ে আছে বলে টয়া হাসি থামলো। ইয়াদ গম্ভীর গলায় বললো,” আমাকে থ্যাঙ্কস দেও।”

টয়া ইয়াদের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে চেয়ে চেয়ে এই ছেলে ধন্যবাদ নিচ্ছে কেনো? টয়াকে অবাক করে দিয়ে ইয়াদ বললো,” এখুনি বলো নইলে কাল সকালে আবার বিশ মিনিট আমার পিছু পিছু হাটতে হবে তোমার, আমাকে থ্যাঙ্কস বলার জন্য।”

টয়া ইয়াদকে বেঙ্গো করে বললো,” কালকে শুক্রবার বুঝলেন।”
ইয়াদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। তারপর আবার দৃষ্টি সামনে রেখে হাঁটতে লাগলো। টয়া ইয়াদের পিছন পিছন ছুটতে ছুটতে বললো,” আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো যাবেন?” ইয়াদ কিছু বললো না। টয়া আরো বললো,”আপনার ভালো লাগবে চলুন না।”

টয়া একপ্রকার জোর করেই ইয়াদকে কাশফুল ভরা এক জায়গায় নিয়ে এলো। ইয়াদ নিজেও বুঝতে পারছে না যে টয়ার কথায় সে রাজি কেনো হলো। মেয়েটার সত্যি অনেক আলাদা সব মেয়ের থেকে এসব ভাবতে ভাবতে ইয়াদ টয়ার দিকে তাকালো মেয়েটাকে তার এতো আলাদা লাগে কেনো? ভেবে আবার নিজেই নিজেকে বুঝলো ও একটা বাচ্চা মেয়ে আর বাচ্চারা এমনই হয়, এতে অন্যকিছু নেই।

ইয়াদের এই জায়গায় এসে ভালোই লাগছে অপূর্ব এক পরিবেশ। আশে পাশে এতো সুন্দর একটা জায়গা আছে ইয়াদের জানা ছিলো না। ইয়াদ একটা পরিষ্কার জায়গা দেখে একটা হাঁটু উচুঁ কোরে তার উপর হাত রেখে বসলো। ইয়াদের দেখাদেখি টয়াও ইয়াদের পাশাপাশি বসলো। টয়া দুই হাঁটুতে হাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রইলো। ইয়াদ তাকানোর সাথে সাথে টয়া মাথা তুলে তার দৃষ্টি সামনে স্থীর করলো।

ইয়াদ কিছুক্ষণ টয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর এইটা ভেবে হাসলো যে এই মেয়েটার বড়ো হলে হয়তো ইয়াদকে তার আর ভাল্লাগবে না। এই বয়সটাই ভালোলাগার বয়স বয়স পার হয়ে আসা মানে বুঝতে শেখা।

বাতাসে টয়ার চুল উড়ছে তাই কপালে দুই হাত দিয়ে বসে আছে। ইয়াদের বিষয়টা বিরক্তিকর লাগছে টয়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে প্রচন্ড মাথা ব্যাথায় ভুগছে। ইয়াদ বিরক্তি নিয়ে বললো,” কোনো সমস্যা তোমার? এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?”

টয়া ইয়াদের দিকে মুখ করে বললো,” চুলগুলোর জন্যে এভাবে বসে আছি। অনেক রাগ লাগছে কখনো মুখের সামনে আবার কখনো চোখের সামনে চলে আসে।”

হাতে রবারবান্ড পড়ে আছে অথচ মেয়েটা চুল বাধছে না। ” তাহলে চুল বেধে ফেলো।”, ইয়াদের কথায় টয়া বললো,” আমি চুল বাঁধতে পারি না”

টয়ার কথা সত্য কারন তার চুল কাধ পর্যন্ত বাসায় সে চুল ছেড়েই রাখে আর স্কুলে যাবার সময় প্রতিদিন হয় তার মা নয়তো বাবা তার চুল বেধে দেয়। দুই ছেলের পরে এই মেয়ে ফরিদুর সাহেবের তাই খুব আদরেই তাকে বড়ো করেছেন তিনি।
টয়ার নিজে নিজে চুল বাঁধাটাও অতন্ত্য অপছন্দ করে তাই চুল বেধে দেওয়ার কেও না থাকলে সে তাদের দোতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ে তমা আপুর কাছে যায় সে অনেক সুন্দর করে চুল বেধে দেয় টয়াকে। কাউকে না পেলে থাকুক চুল খোলা।

ইয়াদ টয়া চুল বাঁধতে পারে না শুনে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,” তাহলে স্কুলে?” উত্তরে টয়া বলে,” আমি করি না তো মা করে দেয় বেনী।”

ইয়াদ আরো বিস্মিত হলো কারন তার জানামতে চুল বাঁধতে পারে না এমন কোনো মেয়ে এ পৃথিবিতে নেই। ইয়াদ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,” তাহলে হাতে রাবার ব্যান্ড নিয়ে ঘুরছো যে?”

” ও আচ্ছা, আমি ভেবেছিলাম রাস্তায় রাহিকে পাবো। রাহিকে বললে ও বেধে দিতো তাই হাতে নিয়ে ঘুরছি।”, টয়ার কথায় ইয়াদ কিছু বললো না সে সামনে তাকিয়ে রইল।

টয়া হাত থেকে ব্যান্ডটা খুলে ইয়াদের দিকে এগিয়ে বললো,” আপনি আমার চুলটা একটু বেধে দিতে পারবেন?”

[ চলবে ]

গল্পের নাম: #তোমার_খোঁজে_এই_শহরে
পর্বঃ৪ : #ভুল_বোঝা
লেখিকা :#নবনী_নীলা
” আপনি আমার চুলগুলো একটু বেধে দিতে পারবেন?”, টয়ার কথায় ইয়াদ একটু অপ্রস্তুত হলো। এতো সহজে টয়া একটা ছেলেকে নিজের চুল বেঁধে দিতে বলছে। এতোটা সরল হওয়া ভালো না।

ইয়াদ টয়াকে বললো,” শোনো তুমি এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছো নিজের চুল নিজে বাঁধাটা তোমার শিখা উচিৎ। আর এভাবে যাকে তাকে নিজের চুল বাঁধতে বলবে না।”
টয়া মুখ কালো করে রাবার ব্যান্ডটা হাতে পরে নিয়ে বললো,” আমি সবাইকে আমার চুল বেঁধে দিতে বলি না এতটুকু জ্ঞান আমার আছে।”

” তাহলে আমাকে বললে কেনো?”, প্রশ্ন করলো ইয়াদ। টয়া কি বলবে বুঝতে না পেরে বলল,” দেখতে চাইলাম আমি পারেন কিনা।”
বাহ্ টয়া কি সুন্দর করে গুছিয়ে ব্যাপারটা স্বাভাবিক করে ফেললো। যতটা বোকা ভাবা হয়েছে মেয়েটা এতো বোকা না। ইয়াদ উঠে দাড়ালো সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। আর ইয়াদ না গেলে হয়তো এই মেয়েও এখানেই থাকবে।

ইয়াদকে উঠে দাড়াতে দেখে টয়াও উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলো,” কি হলো? উঠে দাড়ালেন যে?”

“বাসায় ফিরবো।”, বলে ইয়াদ হাঁটতে শুরু করলো। টয়ার আরো কিছুক্ষন থাকতে ইচ্ছে করছে কিন্তু সে কিছু না বলে ইয়াদের পিছু পিছু হাটছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়, আসার সময় ইয়াদ চায়ের দোকানে কয়েকটা ছেলেকে সিগারেট হাতে বসে থাকতে দেখলো।

কিছুদূর এসে ইয়াদ পিছে তাকালো, টয়ার থেকে কিছু দূরেই ছেলেগুলো আসছে। তারমানে ছেলেগুলো ফলো করছে। ইয়াদ থমকে দাঁড়িয়ে গেলো। টয়াকে চোখের ইশারায় তাড়াতাড়ি আসতে বললো। টয়া তো মহা খুশী একা একা হাঁটতে তার খুবই বিরক্তি লাগে। টয়া তাড়াতাড়ি পা ফেলে ইয়াদের কাছে গেলো দুজনে একসাথে হাঁটবে বলে।

ইয়াদ টয়ার ভাবনায় জল ঢেলে বললো,” যাও হাটো। আমার আগে আগে যাও।”
টয়া মুখ গম্ভীর করে বললো,” একসাথে হাটি।”
ইয়াদ তীক্ষ্ণ স্বরে বলল,” যেটা করতে বলেছি সেটা করো।”

টয়া আর কথা না বাড়িয়ে আগে আগে হাঁটতে লাগলো। এই ছেলে সুযোগ পেলে আগে জ্ঞান দিতো এবার অর্ডার দিতে শুরু করেছে। ইয়াদ টয়ার পিছনে হাঁটছে, টয়া যেই মেয়ে পিছন থেকে মুখ চেপে ধরে নিয়ে গেলেও হুশ পাবে না। এর চেয়ে আগে আগে হাঁটুক খেয়াল রাখা যাবে।

টয়া ভেবেই পাচ্ছে না ইয়াদ কেনো টয়ার পিছে পিছে হাঁটছে। টয়া অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটছিলো হটাৎ তার চুলে এক টান অনুভব করে। কেও যেনো তার চুল ধরে এক টান মেরেছে। টয়া হাত দিয়ে চুল ধরে পাশ ফিরতেই দেখলো নিরব মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে। নিরবকে দেখে টয়া হকচকিয়ে উঠলো। নিরব টয়ার খালাতো ভাই, টয়ার চেয়ে দশ মাসের বড়ো।
টয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,” তুই এখানে কি করছিস?”

” তোকে খুঁজতে বের হচ্ছিলাম। কোথায় ঘুরে বেড়াস?” বলেই টয়ার মাথায় একটা বাড়ি দিলো।

টয়া নিরবের পিঠে আরো জোরে দুটো দিয়ে বলে,” আমাকে মারবি না বেয়াদব।”

ইয়াদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদের কাণ্ড দেখলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে এভাবে মারামারি শুরু
করেছে। ছেলেটাই বা কে? দেখে তো মনে হচ্ছে টয়া চিনে একে। ইয়াদ নিজের মতো হাঁটতে লাগলো সামনেই বাসা টয়া নিজেই চলে যেতে পারবে।

এদিকে নিরব হ্যান্ডস আপ কোরে বললো,” হয়েছে হয়েছে আর মারিস না।। ছেরে দে মা কেঁদে বাঁচি।”

টয়া বিজয় ভরা হাসি দিয়ে বললো,” আমাকে মারার আগে এরপর থেকে দশবার চিন্তা করবি।” বলতে বলতে টয়া থেমে গিয়ে পিছে তাকালো ইয়াদ কোথায়? এতোক্ষণে ইয়াদের কথা তার মাথায় ছিলো না। পিছনে না দেখে টয়া সামনে তাকালো ইয়াদ সামনেই আছে। টয়া রেগে
গিয়ে বললো,” তুই আর কোনো সময় পেলি না? দিলি তো সব ব্লান্ডার করে।”

নিরব সামনে হেঁটে যাওয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,” এই কি সেই তোর প্রেমিক পুরুষ?”

নীরবের কথা শুনে টয়ার গা জ্বলে যাচ্ছে। প্রেমিক পুরুষ আবার কেমন কথা? টয়ার রাগ মিশ্রিত চেহারা দেখে নিরব বললো,” আচ্ছা সরি, বাবা। তোর ক্রাশ হয়েছে এবার?”

টয়া হা সূচক মাথা নাড়ল। নিরব টয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে ঘামিয়ে গেছে। নিরব টয়ার চুল গুলো নিজের হাতে নিয়ে বললো,” দে আমাকে রাবার ব্যান্ডটা আমি বেধে দিচ্ছি। তুই তো আবার রাজকন্যা চুল বাঁধতে পারিস না।”

টয়া আড় চোখে তাকিয়ে ব্যান্ডটা নীরবের হতে দিলো। ইয়াদ হাঁটতে হাঁটতে কি মনে করে একবার পিছনে ফিরলো। ছেলেটা টয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছে। এভাবে রাস্তায় দাড়িয়ে ছেলেটা চুল কেনো বেধে দিচ্ছে মনে প্রশ্ন জাগলো ইয়াদের।

ছেলেটা কি হয় টয়ার? বয়ফ্রেন্ড? তাহলে টয়া তার পিছনে পিছনে প্রতিদিন যায় কেনো? আর যদি বয়ফ্রেন্ড না হয় তাহলে কি এমন চেনা মানুষ যে কিনা এতো যত্নে টয়ার চুল বেঁধে দিচ্ছে। ইয়াদের রাগ হচ্ছে। টয়া বলেনি তো ছেলেটিকে নিজের চুল বেঁধে দিতে? একটু আগেই তো ইয়াদকে বলেছিলো টয়া। ইয়াদের মাথায় অনেক কিছু চলছে সে চুপ করে নিজের বাসার গেট এ ঢুকে পড়লো।

নিরব টয়ার চুল বেঁধে দিয়ে বললো,” তোর লজ্জা হয় না আমি ছেলে হয়ে পরলাম আর তুই? আকর্মের ঢেঁকি একটা। চল বাসায় চল।”
রাস্তা বলে টয়া আর কথা বাড়ালো না।

ইয়াদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে বসলো। তখনই তার মা তাকে বললো,” ইয়াদ তোমার বাবার খুলনায় ট্রান্সফার হয়েছে। দুদিনের মধ্যেই আমাদের সেখানে যেতে হবে। তোমার জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখো।”

ইয়াদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” মা আমার ফাইনাল এক্সামের কি হবে?”

” সেই দশ বারো দিন তুমি হোস্টেলে এসে থেকো। আমাদের কাছে যে আর কোনো উপায় নেই। তোমার বাবাকে একা সেখানে পাঠাতেও তো পারি না।”, ইয়াদ বাকি কথা না শুনেই নাস্তা না করে উঠে গেলো। তার এই শহর ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।

এদিকে টয়া আর নিরব গল্প করছে। নিরব দেখতে সুন্দর একদম ফর্সা তবে রঙটা নীরবকে মানিয়েছে। কিন্তু এতো ফর্সা হওয়ার কারণে টয়া নিরবকে সাদা চামড়া বলে ডাকে। এই বয়সে নিরবের গার্ল ফ্রেন্ডের অভাব নেই। আর মেয়েরা ওকে দেখে গলে পরে। রাহি পর্যন্ত নিরব নিরব করে টয়ার মাথা খায়। নিরব আসলেই উল্টা পাল্টা কথা বলে টয়ার মাথা খারাপ করে দেয়।

টয়া কপালে হাত দিয়ে নিরবের বক বক সহ্য করছে। এই ছেলে এতো কথা কেনো বলে?
টয়া ধৈর্য্য হারিয়ে বললো,” তুই জিরায় নে। একটু থাম। আমার কান দুইটার রেস্ট প্রয়োজন।”

কে শুনে কার কথা? নিরব বলে উঠলো,” কাল না তোর কিসের নৃত্য প্রতিযোগিতা আছে? ভাবছি আজকে থেকে যাই বুঝলি তোর প্রতিযোগিতা দেখে যাবো ?”

নীরবের কথা শুনে টয়ার হুশ হলো সে স্কুলের অনুষ্ঠানে একক নাচে নাম দিয়েছিল অথচ টয়া কিছুই প্রিপারেশান নেয় নি। টয়া অস্থির হয়ে গেলো,” অ্যাহায় এবার কি হবে? আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।”

নিরব উঠে দাঁড়িয়ে বললো,” আরে চিন্তা করিস না আমি তো আছি। আমি তোকে নাচ শিখাবো।” বলে টয়ার হাত ধরে টেনে তুলে উল্টা পাল্টা নাচতে লাগলো।

ইয়াদের অসহ্য লাগছিলো তাই সে বারান্দায় এসেছিলো। এসে টয়া আর নিরবকে একসাথে দেখে মাথা আরো গরম হয়ে যায় ইয়াদের। বিষয়টা ভালোভাবে নেয়নি ইয়াদ। সে দ্রুত বারান্দা লাগিয়ে জানালায় পর্দা দিয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে রইলো।

এদিকে টয়া নিরবকে ঘর থেকে বের করে বিছানায় শুয়ে পড়লো কালকে সে কি করবে সেটা নিয়েই তার চিন্তা। টয়া ঘাড় ঘুড়িয়ে ইয়াদের রুমের দিকে তাকালো। সব দরজা জানালা বন্ধ আর পর্দা টেনে দেওয়া। ওরা কি কোথায় গেছে? কোনোদিন তো এমন হয় নি।

[ চলবে ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here