তোমাকে,পর্ব 2.1,2.2
2.1
অনিমা দাঁড়িয়ে আছে পার্কিং লটে I পার্কিং পার হয়ে রাস্তার ওই পারে ক্যাম্পাসের মূল ভবন I অনিমা দূর থেকে মুনির কে দেখলো I মূল ভবনের বড় দরজা থেকে বেরিয়ে বিদায় নিচ্ছে অন্যান্য প্রফেসর থেকে I তারপর সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো I অনিমা দূর থেকে দেখল ওকে রাস্তা পার হতে I মুনির দেখতে আগের মতোই আছে I বলতে হবে আগের চেয়ে আরো সুন্দর হয়েছে I অনেক বেশি হ্যান্ডসাম আর ম্যানলি দেখাচ্ছে I আগে কখনো ওকে ফরমাল ড্রেসে দেখেনি অনিমা I আজি প্রথম দেখল I ব্রাউন প্যান্টের সঙ্গে সাদা শার্ট তার উপর ডার্ক ব্রাউন ওভারকোট I ল্যাপটপ ব্যাগ টা বুকের এর কাছ থেকে আড়াআড়ি ভাবে একপাশে ঝোলানো I অবাধ্য চুলগুলোএখনো আগের মতই কপালের উপর ছড়িয়ে আছে I ওকে এগিয়ে আসতে দেখে অনিমা হাত নাড়লো I মনির বোধহয় প্রথমে অনিমা কে দেখে চিনতে পারিনি I একটুখানি থমকে গেল তারপর কাছে এসে হাসলো I অনিমা লক্ষ করল মনিরের সেই চিরচেনা হাসিটা আর নেইI কেমন ম্লান দেখাচ্ছে I যে হাসিটা দেখে একসময় অনিমা ওর হার্টবিট মিস করত I অনিমা সানগ্লাস খুলে রেখে হাসল I
কেমন আছো মুনির?
ভালো
চলো যাওয়া যাক এখানে অনেক রোদ I
অনিমা মুনীরকে গাড়িতে উঠতে ইশারা করলো I তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল I
মুনির সত্যিই প্রথম অনিমাকে দেখে চিনতে পারেনি I কত বছর পর I তা প্রায় এক যুগ I 12 বছর তিন মাস 21 দিন I এই হিসাবটা মনির ইচ্ছে করে রাখে না I কি করে যেন প্রতিদিন একটা করে দিন যোগ হয় I আর সংখ্যাটা বদলাতে থাকে I শুধু ওর নিজেরই বদলানো হয় না I
বিগত দিনগুলোতে চাইলেই ও অনিমার সঙ্গে দেখা করতে পারতো I ইচ্ছে করে করিনি I কি দরকার পুরনো ক্ষত কে জাগিয়ে তোলার I কিন্তু এবার মনে হল এটা শেষ হওয়া উচিতI হয়তো অনিমাকে এখনকার রূপে দেখলে আগের দৃশ্যপট ঝাপসা হবে I সেই এক যুগ আগের অনিমা হারিয়ে যাবে কোথাও যাকে আর ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা হবে নাI
মনির অনেকবার কল্পনা করেছে এখনকার অনিমাকে I মোটাসোটা গিন্নি গিন্নি চেহারা গা ভর্তি গয়না I কিংবা প্রবাসে এসে হঠাৎ বিদেশি হয়ে যাওয়া মেয়েদের মত মোটা শরীর নিয়ে পাশ্চাত্য পোশাকের প্রহসন I
কিন্তু সত্যি বলতে অনিমাকে দেখে একটা ধাক্কা খেয়েছে মনির I আগের মতন এলোমেলো অগোছালো অনিমা আর নেই I ওর মধ্যে এসেছে এক ধরনের ধারালো সৌন্দর্য এবং প্রখর ব্যক্তিত্ব I অনিমা একটা সাদার উপর নীল স্ট্রাইপ লং শার্ট পড়েছিল সাথে স্কিনি জিন্স I মাথায় আকাশী স্কার্ফ চোখে সানগ্লাসI গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল I ওর ছিপছিপে শরীরের সঙ্গে দারুন মানিয়ে ছিলো পোশাকটা I মনিরকে দেখে ও যখন সানগ্লাসটা খুলল মনির আরেকটা ধাক্কা খেলো I ওর সেই গভীর কালো চোখ দুটো যার দিকে তাকালে একসময় ও হারিয়ে যেত আজও তেমনি আছে I আজও তার রহস্য এতটুকুও কমেনি I শুধু তার বিষাদ যেন আরো একটু গভীর হয়েছে I
আমরা কোথায় যাচ্ছি? অনেকক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে মুনির জানতে চাইল I অনিমা পাশে তাকিয়ে একটু হাসলো
তুমিতো বাসায় যেতে চাইলে না তাই অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি I ভয় নেই সময়মতো হোটেলে পৌঁছে দেবো I মুনির আর কিছু বলল না I
অনিমা যেখানে গাড়ী পার্ক করলো সেটা একটা ট্রেন স্টেশনের পার্কিং লট I মুনির একটু অবাক হলো I
পার্কিং লটের ওইপারে রেললাইনI তার ও ঐ পারে জলরাশি দেখা যাচ্ছে I অনিমা নেমে বলল এস I ওরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল I তারপর মাটির নিচে দিয়ে রেললাইন পার হয়ে অন্য পাশে চলে গেল I জায়গাটা একটা ট্রেল এর মতন I একপাশে রেললাইন তারপর ট্রেল তার অন্য পাশে বিশাল লেক I যদিও এটা লেক তবে দেখলে মনে হয় সমুদ্র I যতদূর চোখ যায় নীল জলরাশি আকাশের সঙ্গে গিয়ে মিশে যায় Iট্রেল এর ধার ঘেঁষে পাথরের বিচ নেমে গেছে জল অবধি I সবচাইতে আশ্চর্য জিনিস হচ্ছে কিছুদুর পর পর লম্বা পাথরের দ্বীপের মতন নেমে গেছে জলের ভেতর I খুব বেশি হলে হাত চারেক চওড়া আর লম্বায় প্রায় 30 হাত I এই রকম একটা দ্বীপের দিকে ওরা এগিয়ে গেল I ওই পর্যন্ত পৌঁছতে গেলে অনেকটা পাথুরে পথ পার হয়ে আসতে হয় I অনিমা অভ্যস্ত পায়ে এগিয়ে গেল I ওর কাঁধে ব্যাগ পায়ে স্যান্ডেল তারপরও ওকে বেশ স্বচ্ছন্দ মনে হল I বোঝা যাচ্ছে এখানেও প্রায়ই আসে I মনিরের পরনে ফরমাল সু I তবে ও গ্রামের ছেলে এধরনের চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ওর অভ্যেস আছে I অনিমা বললো সাবধানে এসো I ওখানে পৌঁছে অনিমা জুতা খুলে বসলো I তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে বলল বস I মুনির বসল I দুপুর হলেও মেঝেটা বেশ ঠান্ডা I হয়তো জলের ধারে বলে I
জায়গাটা অসম্ভব নিরব I আশেপাশের লোকজন তেমন নেই I অনেকক্ষণ পর পর দুএকজনকে দেখা যাচ্ছে ট্রেল এর মধ্যে জগিং করতে I ট্রেনের শব্দ ভেসে আসছে সেটা ও অনেকক্ষণ পর পর I শুধু সাদা সাদা গাঙচিলেরা ট্যা ট্যা শব্দ করে যেন নীরবতাকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে I সামনে স্বচ্ছ নীল বিস্তৃত জলরাশি শেষ প্রান্তে গিয়ে মিশেছে আকাশের সাথে I আকাশে সাদা মেঘের দল ভেসে বেড়াচ্ছে I কখনো সূর্যকে ঢেকে দিচ্ছে I জলের উপর একপাশে রোদ অন্য পাশে ছায়া সে এক অপরূপ দৃশ্য I অনেকক্ষণ ওরা দুজন সামনের দিকে চেয়ে বসে রইল I মুনির লক্ষ করল অনিমা অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছে I ওর মাথার স্কার্ফ সরে গেছে I কপালের পাশ দিয়ে চুলগুলো বাতাসে উড়ছে I নাকের পাতায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে I অনিমা সামনের দিকে তাকিয়ে বলল
কি অপূর্ব তাই না
মনির যেমন চেয়ে ছিল তেমনি চেয়ে থেকেই বললো
সত্যিই অপূর্ব
অনিমা পাশ ফিরে তাকালো I একটু লজ্জা পেলে কি I হয়তোবা I কিন্তু চোখ সরিয়ে নিলোনা I মনির বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারল না । চোখ সরিয়ে নিল I যে চোখের মায়া কাটাতে ও এসেছে আবার সে চোখের মায়ায় ও জড়াতে চায় না।
চলবে….
পর্ব 2.2
ডিপার্টমেন্টের আজ রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে I ডিপার্টমেন্ট এর সামনের চত্বরে দুটো তাবু লাগানো হয়েছে I ঢাকা মেডিকেল থেকে সন্ধানী রক্তদান গ্রুপ এসেছে স্যাম্পল কালেকশন এর জন্য I পুরো ডিপার্টমেন্ট খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে I দেয়ালে দেয়ালে পোস্টারঝুলছে I সাধারণত এ ধরনের অনুষ্ঠানে মুনির ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করে I তবে আজ পরিস্থিতি অন্যরকম I আজ মুনির একজন ডোনার I আজ ভলান্টিয়ারদের মধ্যে অন্যতম একজন অনিমা I ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হবার পর থেকে যে যার মত লক্ষ্য স্থির করে তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে I যেমন নীলার লক্ষ ক্লাসের প্রথম হওয়া তারপর টিচার হিসেবে ডিপার্টমেন্টের জয়েন করা I হাসিব কোনমতে একটা ফার্স্ট ক্লাস নিয়ে বেরোতে চায় I মনির নিজেকে তৈরি করছে কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের জন্য I ওর টার্গেট অতি দ্রুত প্রতিষ্ঠিত হওয়া I যেকোনো মাল্টিন্যাশনাল এ জয়েন করার জন্য ও নিজেকে সবদিক থেকে প্রস্তুত করছে I হল এর ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের একজনের সঙ্গে নিয়মিত বসে ইংরেজি উচ্চারণ আর শব্দসম্ভার বাড়ানোর চেষ্টা করছে I যদিও পাশাপাশি ওকে টিউশনি করতে হচ্ছে খরচ চালাতে হবে বলেI পড়াশোনা ও যে একেবারে করছে না তা নয় I মনির বরাবরই ভাল ছাত্র I যেকোনো বিষয়ের গভীরে যেতে পছন্দ করে I তবে ক্লাসে প্রথম হওয়া ওর লক্ষ্য নয় I বিসিএস কিংবা টিচিং লাইনে ক্যারিয়ার তৈরি হতে অনেকটা সময় লেগে যায় I তাই ও সেই পথে হাটতে চায় না I অনিমা পড়াশোনা নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা নেই I পরীক্ষায় এলে ও পাশ করার জন্য পড়ে I সিক্সটি পার্সেন্ট এর উপরে থাকলেও খুশি I এর নিচে হলে ওর বাবা কষ্ট পাবে অনিমা সেটা চায় না I তবে গানটা খুব যত্ন করে শিখছে I ছায়ানটের কোর্সটা
সামনেই শেষ হয়ে যাবে I তারপরও নিজের মত করে প্র্যাক্টিস করতে পারবে I যদিও অনিমা ক্লাসিক্যাল শেখে তবেও রবীন্দ্র সংগীত নজরুল গীতি আধুনিক সবি গায় I ওর প্রিয় শিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল I অনেকেই বলে তোমার কন্ঠ অবিকল শ্রেয়া ঘোষালের মত I অনিমা পাত্তা দেয় না I ও কাউকে অনুকরণ করতে চায়না I নিজের মত করে গাইতে পছন্দ করে I
প্রথম বর্ষের ক্লাস প্রায় শেষের দিকে I সামনের শীতকালীন ছুটি তারপর পরীক্ষা I এর আগেই এই রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন I অনুষ্ঠান শুরু করলেন চেয়ারম্যান স্যার নিজে রক্ত দিয়ে I তার আগে অবশ্য একটা মোটিভেশনাল স্পিচ ছিল I ঢাকা মেডিকেল থেকে বেশ কিছু ইন্টার্ন এবং স্টুডেন্ট এসেছে স্যাম্পল কালেক্ট করতে I অনিমা দেখল যে ছেলেটা মনিরের স্যাম্পল নিচ্ছে সে ভেইন খুঁজে পাচ্ছে না কয়েক জায়গায় নিডল দেওয়াতে ওর হাত থেকে রক্ত বেরুচ্ছে I অনিমা খুব বিরক্ত হয়ে বলল
কি করছেন? একটু ঠিকমতো করুন না
ছেলেটা আরো নার্ভাস হয়ে আবারো ভুল করল I অনিমা চোখ মুখ কুঁচকে মনিরের দিকে তাকিয়ে বলল
খুব লাগছে মনির
না, আমি ঠিক আছি
মনির মনে মনে হাসলো I এসব সামান্য ব্যথায় ওর কিছু হয়না I মনে আছে একবার ছাদ সারাই করতে গিয়ে মরচে পড়া টিন লেগে ওর পা অনেকখানি কেটে গিয়েছিল I সদর হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়নি I প্রচন্ড জ্বর নিয়ে দুদিন ওকে ওই অবস্থায় থাকতে হয়েছে I সেই তুলনায় এসব সামান্য কাটাছেঁড়ায় ওর কিছুই হয়না I তবে আজ এই মেয়েটার যত্ন দেখে ওর খুব ভালো লাগছে I
কাজ শেষ হলে অনিমা একটা গ্লাসে কোক ঢেলে মনিরের হাতে দিয়ে বলল
চলো বাইরে চলো I YOU NEED SOME FRESH AIR
তাবু থেকে বের হয়ে একটু দূরে ডিপার্টমেন্টের করিডরে ওরা বসলো
কোক টা খাও I YOU NEED SOME FLUID
কোক খেতে ইচ্ছা করছে না I আমি বরং ভিতরে গিয়ে পানি খেয়ে আসি
দাঁড়াও , ভিতরে যেতে হবে না I আমি পানি দিচ্ছি
অনিমা ওর ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিল I মনির ঢকঢক করে সবটা পানি গলায় ঢেলে দিল I ওর এতোটা তৃষ্ণা পেয়েছিল বুঝতে পারেনি I পানি শেষ করে মনির অপরাধীর মতো বলল
সরি, সব শেষ করে ফেললাম
ইটস ওকে পানি তো I তবে অদ্ভুত তুমি কোক না খেয়ে পানি খেতে চাইলে I
পানির তৃষ্ণা কি আর অন্য কিছুতে মেটে I এই যেমন ধরো তুমি যত ভালো রেস্টুরেন্টে খাও না কেন মায়ের রান্নার মত কি আর কোনটা ভালো হয়?
তোমার মা বুঝি খুব ভালো রান্না করেন? অনিমা বিষণ্ণ গলায় জানতে চাইল
আমার মা রান্না করতে আর লোকজন খাওয়াতে খুব ভালোবাসে I নিজের মা বলে বলছি না মায়ের কিছু কিছু আইটেম আসলে ইউনিক
আচ্ছা? শুনে তো খেতে ইচ্ছা করছে
হুম , মা যদি ঢাকায় থাকতো তাহলে একদিন তোমাকে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতাম
কি ধরনের রান্না করেন উনি
সব ধরনের করেন , তবে মায়ের দেশি রান্না গুলো খুব ভালো হয়
ওয়াও
তোমার দেশি খাবার পছন্দ?
খুবই , এই যেমন ধরো বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, মাছ, শাক এগুলো আমার খুব প্রিয়
মা তোমাকে পেলে কি যে খুশি হতেন I আমাকে খাইয়ে একদম আনন্দ পায় না
কেন?
এসব ভর্তা টর্চ খেতে গেলে প্রচুর ভাত খাওয়া লাগে I আমি এত ভাত খেতে পারিনা I আমার খুব অস্থির লাগে I
তুমি খুব লাকি I এত চমৎকার রান্না করার মত একজন মা আছে
সবার কাছেই তার মায়ের রান্না বেস্ট মনে হয় IM SURE তোমার কাছে ও তাই
আমি কখনো আমার মায়ের হাতের রান্না খাইনি
কেন?
আমার মা নেই I আমার যখন 3 বছর বয়স তখন আমার মা মারা যান
মনিরের হঠাৎ করেই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল I নিজের অজান্তেই ও মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে মনির কিছু বলতে যাবে অনিমা তখনই হাত তুলে বললো
ইটস ওকেI এত আপসেট হওয়ার কিছু নেইI মায়ের কোনো স্মৃতি আমার নেই
আচ্ছা, একটা কথা বলতো তুমি রক্ত দেখে ভয় পাও তাই না?
হ্যাঁ, তুমি কি করে জানলে?
কি হয়? অজ্ঞান হয়ে যাও?
ঐরকমই
তাহলে কোন সুখে তুমি আজকে ভলান্টিয়ার হতে গেলেI তারপর হাসতে হাসতে বলল তুমি অজ্ঞান হলে ওরা তোমাকে সামলাতো না ডোনার কে
অনিমা হিহি করে হেসে দিল I ছেলেটা মজার I প্রসঙ্গ পাল্টে ওর মনটা কেমন ঘুরিয়ে দিল I
তোমার মায়ের কথা বল I উনি তোমাকে খুব ভালোবাসেন তাই না?
মনির হাসতে হাসতে বলল
হ্যাঁ একটা কথা বললেই বুঝবে মা আমাকে কতটা ভালবাসেন I মায়ের কাছে আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ছেলে I অবশ্য পৃথিবীর সব বাবা মায়ের কাছেই তাদের সন্তানেরা সবচেয়ে সুন্দর
অনিমার মনে হল মনিরের মা ভুল কিছু বলে না I ছেলেটা আসলেই সুন্দরI ও যখন হাসে ওর ডানদিকের গালে একটা টোল পড়ে I ভারী সুন্দর দেখায় I তারপর বিষন্ন কন্ঠে বলল
সব বাবা মায়ের কাছে মনে হয় না
মানে ?
মানে এই ধরো আমার বাবা আমাকে প্রতিদিন মনে করিয়ে দেয় যে আমি কতটা অসুন্দর
IM SURE উনি মজা করে বলেন
মজা? আমার বাবা মজা করতেই জানে না
মনের হতভম্ব হয়ে গেল I কালো কুৎসিত মেয়েদের বাবাদের কাছে তাদের মেয়েদের রাজকন্যা মনে হয় আর সেখানে অনিমার মত এত সুন্দর একটা মেয়েকে কেউ কি করে অসুন্দর বলতে পারে
আমার ধারনা তুমি বুঝতে পারো না উনি মজা করেই বলেন
মজা করার কি আছে? এটা তো ভুল কিছু না
তার মানে তুমি বলতে চাও তুমি অসুন্দর?
কেন তোমার মনে হয় না আমি অসুন্দর?
মোটেই নাI আমাকে কেউ মার্কিং করতে দিলে আমি তোমাকে 8.5 OUT OF 1O দিতাম
অনিমা বেশ মজা পেলI মিটিমিটি হাসতে হাসতে বলল
WHY 8.5, WHY NO T 10
মনির চিন্তিত কন্ঠে বলল
আমি বোধহয় একটু খারাপ টিচার I কিছু মার্কস হাতে রেখে দিই অকারণেইI
অনিমা খিলখিল করে হেসে উঠলো I হাসতে হাসতে বলল হাসিব তো বলছিল তুমি খুব ভালো টিচার I
অনিমা হাসতে হাসতে ভেঙে পড়ছে I মনির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল I মেয়েটা একেবারে বাচ্চাদের মত করে হাসে I তারপর আস্তে আস্তে বলল
আমি নিশ্চিত তুমি কখনো তোমার বাবার সামনে এইভাবে হাসুনি, যদি হাসতে তাহলে উনি তোমাকে দশের মধ্যে 100 দিতেন
তোমার সামনে তো হাসলাম, তুমি কত দেবে 100 না STILL 8.5
মনির জবাব দিল না I মনে মনে বলল এই হাসির মার্কস দেবার যোগ্যতা আমার নেই তবে এতটুকু জানি এটা ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখার মতন হাসিI
আরে দোস্ত রক্ত দিয়ে হালুয়া টাইট অবস্থা
হাসির আয় বোস I দিয়েছিস ব্লাড?
হ
হাসিব ওদের মুখোমুখি বসলো তারপর অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল
আরে অনিমা, আমাদেরও একটু পানি পুনি খাওয়াও নাকি সব আমার বন্ধুরে খাওয়াইবা
তোমাকে আর কি খাওয়াবো , তুমি তো অলরেডি দুই বোতল কোক খেয়ে ফেলেছ আমি এখান থেকেই দেখলাম
আয় হায় দেইখা ফালাইছো I খাইছেরে I ডোনার গো আবার শট না পইরা যায়
ওরা তিনজন হেসে উঠলো
চলবে…