তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা(উপন্যাস)
পর্ব:4,5
Suraiya_Aayat
পর্ব:4
শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসলো আয়াশ, নূর বিছানার ওপর বসে আছে, নতুন বউ তাই কেউ কখনো ওকে কোন কাজও করতে বলবেনা তাই ঘরবন্দী হয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক ৷আয়াশ বেরিয়ে আসতেই নূর এটা লম্বা শ্বাস নিলো, ফর্মালিনের গন্ধটা আর পাওয়া যাচ্ছে কি তাই বোঝার চেষ্টা করছে ৷ নাহ ! আর গন্ধটা নাকে আসছে না, তখন গন্ধটা এতো তীব্রভাবে ওর নাকে এসে পৌচ্ছাছিলো যে ও সহ্য করতে পারছিলো না, আর কিছুখন আয়াশের শরীরের সাথে লেপ্টে থাকলে হয়তো ও ওখানেই জ্ঞান হারাতো ৷ আয়াশ বেরিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ালো তারপর ড্রয়ার থেকে একটা লেন্স বার করে নিয়ে চোখে পরতে শুরু করলো ৷ নূর যেন অবাক হয়ে সেদিকেই তাকিয়ে রয়লো , এমনিতেই আয়াশের হালকা বাদামী রঙের চোখ তার ওপর লেন্স পরার প্রয়োজনীয়তা নূর বুঝতে পারলো না ৷ বিছানা থেকে ধড়ফড়িয়ে নেমে আয়াশের থেকে খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বলল
” এটা কি ? আপনি লেন্স পরেন?”
আয়াশ লেন্সটা আরেক চোখে পরে নিয়ে নূরের দিকে তাকালো ৷ আয়াশের চোখটা আগের তুলনায় অন্যরকম লাগছে ৷ আগের থেকেও একটু বেশিই বাদামী আর আকর্ষনীয় ৷ আয়াশ নূরের দিকে প্রশ্ন ছূড়ে বলল
” লেন্স বোঝোনা ,ফর্মালিনের গন্ধ সহ্য হয় না , কি কি সহ্য করতে পারো তুমি বলবে ? লাভ টর্চার ?”
কথাটা বলতেই আয়াশ ক্রমশ নূরের দিকে কয়েক পা এগিয়ে যেতে লগলো , নূর ও ভয়ে পিছাতে লাগলো , এবং একটা সময় নূরের দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেল ৷ আয়াশ নূরের থেকে খানিকটা দূরত্ব রেখেই দাড়িয়েছে ৷
” কি হলো বলো, লাভ টর্চার ভালো লাগে ? আমি তো এখনো কিছুই শুরু করলাম না, আর এখনই এতো ভয় আফু সোনা !”
নূর আমতা আমতা করে বলল
” সামান্য লেন্স পরেন কেন সেই প্রশ্নটা রেছিলাম আর আপনি তা থেকে অন্য কথায় কেন চলে আসলেন?”
আয়াশ হেসে বলল
” তোমাকে দেখলেই না বড্ড ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, মনে হয় যে তোমাকে যদি একদম গিলে খেয়ে ফেলতে পারতাম তাহলে হয়তো আমার শান্তি হতো ৷”
নূর কাঁপাকাঁপা গলায় বললো
” আপনি কি ভ্যাম্পায়ার নাকি যে সবসময় এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলেন ৷ আমার তো এখন সন্দেহ জাগে যে আপনি আদেও মানুষ কি না ৷”
আয়াশ উচ্চস্বরে হেসে বলল ” কোন ভ্যাম্পায়ার না,তবে আমি হলাম মানুষরুপী ডেভিল ৷ বুঝলে আফু সোনা ?”
কথাটা বলে নূরের কানে আলতো করে কামড়ে সেখানে ওর দাঁতের দাগ বসিয়ে দিলো ৷ নূর ” আহহ ” শব্দ করে আয়াশকে ধাক্কা মেরে আয়নার দিকে ছুটে যেতে নিলেই আয়াশ নূরের হাত ধরে ফেলল আর বলল ” এরকম চিহ্ন আরো অনেক পাবে ৷ বলেছিলাম না তোমার শরীরে চিন্থতে ভরে যাবে ৷ মেক ইট কাউন্ট ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷ নুর এখনো কানে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ কালকে আয়াশ কোমরে আচড় দিয়েছিলো সেটা নূরের মনেই নেই ,রাত্রে যখন জ্বালা করছিলো সেই কাটা জায়গাটা তখন ও গুরূত্ব দেইনি তাই হঠাৎ আচড়টার কথা মনে পড়তেই আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ৷ পেট থেকে শাড়িটা আলতো করে সরিয়ে সেই আচড়ানো স্থানটা দেখতে লাগলো ৷ চার আঙুল আচড় পড়েছে সেখানে যা এখন বাদামী বর্ন ধারন করেছে আর অচড়ের আশেপাশের জায়গাগুলো হালকা লাল আভা নিয়েছে ৷ নুর মন খারাপ করে শাড়িটা দিয়ে কোমরটা ঢেকে নিয়ে কানের দিকে তাকালো ৷ কানে দাঁতের দাগ পড়েছে, তা দেখে নূর দীর্ঘ নিশ্বাস নিলো ৷ বিছানায় বসে খানিকখন চোখ বন্ধ করে সবকিছু ভাবার চেষ্টা করলো ৷ আয়াশকে নিয়ে ইতিমধ্যে ওর মাথায় অনেক প্রশ্ন গেথে গেছে যা নূর প্রথম থেকে ভাবছে,,,
প্রথমত,,,, আয়াশের জোর করে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা কেন হলো ?
দ্বিতীয়ত,,,,আয়াশ কি ওকে আদতেও ভালোবাসে নাকি তার কোন স্বার্থে এমন করছে ?
তৃতীয়,,,,, উনি এমন অদ্ভুত কেন? চোখে লেন্স লাগান কেন? উনি কি সবসময়ই এমন লেন্স পরে থাকেন?
চতুর্থ,,,,ওনার ঘরে গোপন কক্ষের প্রয়োজনীয়তাই বা কেন?
পঞ্চম,,,,উনি কিছু করেন না পেশাগত দিক থেকে, তাহলে ওনার শরীরে ফর্মালিনের গন্ধ কেন?ফর্মালিন তো মরা বস্তু সংরক্ষনের জন্য ব্যাবহার করা হয়,,,,
কথাটা ভেবে নূর আর বেশি কিছু ভাবতে পারলো না, ও যতদূর ভেবেছে তাতেই ওর মনের মাঝে এক অজানা ভয় ঢুকে গেছে ৷ আয়াশকে নিয়ে জানার কৌতুহল বাড়ছে , দুদিনে মানুষটাকে যতদূর চিনেছে সে অনেক রহস্যময় আর এতো সহজে নূরের কাছে ধারা দেবে, না ৷ নূর অস্থিরতায় পাইচারি করতে লাগলো, বিড়বিড় করে একটা কথায় বারবার বলতে লাগলো ,,,,
” জানতে হবে, আমাকে জানতেই হবে যে উনি আসলে কে? উনি কি করেন? নিজেকে নূরের সামনে এমন অদ্ভুত প্রমান করছেই বা কেনো , আসলেই কি উনি এমন অদ্ভুত ব্যাক্তিত্বের?
অনেক ভেবেও কোন উত্তর পেলো না দেখে নূর বিরক্ত হয়ে বিছনায় বসে পড়লো ৷
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নূর , হঠাৎ কিছু একটা এসে ওর গায়ে পড়তেই ও চমকে গেলো, পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো একটা কাগজের বানানো ছোট প্লেন ৷ নূর সেটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতেই চোখ পড়লো ,যেটাতে কোন ছবি খুব স্পষ্ট ভাবে প্রিন্ট করা আছে যা কাগজটার সম্পূর্ণ ভাজ না খুললে বোঝা সম্ভব না ৷ নূর দ্রুত কাগজটা খুলতেই দেখলো দুটো চোখের ছবি রয়েছে , একটা ঘন বাদামী আর এটা হালকা বাদামী ৷ তার নীচে লেখা আছে
” চোখের বিন্যাস দেখে বোঝা মুশকিল কে আসল আর কে ছদ্মবেশী ৷ ”
লেখাটা নূরের কাছে সম্পূর্ণটা ধাঁধার মতো লাগলো, কিছুই বুঝলো না লাইনটা পড়ে তাই আরো বেশ কয়েকবার পড়লো তবুও লাভ হলো না দেখে কাগজটা দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিয়ে বলল
” আপনার ব্রেন ঠিক কতোটা ফাস্ট মিস্টার আয়াশ আমি তা জানতে চাই এতো নিঁখুত কাজ !”
❤
আয়াশের বাবা হুইলচেয়ারে বসে আছেন আর ওনার সামনে সোফাতে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ রেখে ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে আয়াশ ৷ আয়াশের বাবা তিনি তার মুখ থেকে চিন্তার রেশটা হালকা কটিয়ে বললেন
” বৌমা দেখতে কেমন রে? তোর খালামনি বললেন যে বৌমা নাকি মাশাআল্লাহ ৷”
আয়াশ চোখ বন্ধ রেখেই বললো
” একটা মানুষের যেমন দেখতে হয় তেমনই , ধরতে গেলে মানুষই ৷”
উনা আয়াশের এমন উদাসীন কথা বার্তা শুনে বললেন
” এসব কি কথা আয়াশ সে তোমার বউ , তোমার বাকিটা জীবন চলার সঙ্গী ৷ নাকি শুধুমাত্র তুমি পুরোনো কথা রাখতেই তাকে বিয়ে করেছো , তোমার তার প্রতি কোন অনুভূতি নেই কোনটা ?” খানিকটা রুক্ষ কন্ঠে বললেন কথাগুলো ৷
আয়াশ এবার ওনার দিকে তাকিয়ে বলল
” লেন্স পরলে আমাকে একটু অদ্ভুত দেখায় তাইনা ?”
উনি পুনরায় বিরক্তিমাখা ভঙ্গিতে বললেন
” আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি আয়াশ ৷”
আয়াশ এবার ওর জায়গা ছেড়ে উঠে জানালার পর্দাটা সরিয়ে বলল ” কতোদিন আর এভাবে নিজেকে আড়াল করে রাখবে ?”
আয়াশের বাবা রুগ্ন কন্ঠে জবাব দিলেন
” তুমি তো জানোই সব তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করছো কেন? যেদিন সে ফিরবে সেদিন ৷”
আয়াশ ও একটা মুচকি হেসে টেবিলের ওপর থাকা বইটা হাতড়াতে হাতড়াতে বলল
” আমারও সেম ৷ তুমি খুব ভালো করেই জানো যে আমি কি চাই, তাই যেদিন আমিও সুখের আলো দেখবো সেদিন সেও আমার সাথে সুখের আলো দেখবে ৷ তবে তাকে কষ্ট দিতে আমার বেশ ভালো লাগে, আমার নিজের যেন অদ্ভুত এক পৌশাচিক আনন্দ লাগে ৷ ”
” সবাইকে তোমার এই জীবনের জটিল ঘটনা চক্রের সাথে জড়িওনা আয়াশ সে একটা মেয়ে তার ও মন বলে একটা জিনিস আছে , বারবার কষ্ট পেতে পেতে মানুষ কঠিন হয়ে যায় ৷ আজ তোমার মাকে আমি এমন কষ্ট দিলে তুমি সহ্য করতে পারতে ?”
মুহূর্তেই আয়াশ ভয়ংকর কন্ঠে বলল
” কিন্তু সে নেই তো !”
আয়াশের চোখের কোনে জল জমে আসছে ধীরে ধীরে ৷
উনি মাথাটা নীচু করে নিলেন ৷ আর নরম কন্ঠে বললেন
” মেয়েরা হয় ফুলের মতো তাদেরকে কষ্ট দিতে নেই , এই কথাটা মাথায় রেখো ৷”
তখনই আয়াশ একটা মুচকি হেসে বলল
“2 H2+O2= 2H20 ” how easy….যদি সব রহস্য যদি জলের মতো সহজ হতো তাহলে একটা সমীকরন প্রতিষ্ঠা করতে কোন অনুঘটকের প্রয়োজন হতো না ৷”
কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে এলো ৷
চলবে,,,,,
#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা(উপন্যাস)
#পর্ব:5
#Suraiya_Aayat
” ব্যাগে এতো জামাকাপড় নিলে যে ! সারাজীবন থাকার জন্য যাচ্ছো নাকি আফু সোনা ?” খানিকটা রসিকতা করে বলল আয়াশ ৷ নূর আয়াশের কথাটা শুনেও কানে নিলো না, ও যদি এখন বেফাস করে কোন কথা বলে ফেলে আর তাতে যদি আয়াশ রেগে গিয়ে যেতে না করে দেয় তাহলে ওর আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে তাই কষ্ট করে কথাগুলো হজম করে নিলো নূর ৷ আয়াশ সোফা থেকে উঠে বিছানার ওপর থেকে নূরের ট্রলিটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে নূরের কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওর কাছে আনলো ৷ আচমকায় এমন হওয়াতে নূর চমকে গেল ৷ আয়াশের শরীরের সাথে মিশে আছে নূর ৷ আয়াশ নূরের মুখের উপর আছড়ে পড়া চুলগুলো হাত দিয়ে ওর কানের পাশে গুজে দিয়ে বলল
” এই আফুসোনা এত দূরে দূরে থাকো কেন বলতো , কাছে আসতে ইচ্ছা করে না বুঝি ?” নূরকে নিজের হাতের বাঁধনের মাঝে আবদ্ধ করে অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে তাকালো ৷ নূর ওর দুহাত দিয়ে আয়াশের থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতেই হঠাৎ আয়াশ রেগে গিয়ে নূরের গলায় একটা কামড় বসাতেই নূর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো ৷ আয়াশ দেখলো নূরের কাধে কামড়ানো জায়গায় ওর দাঁতের ছাপ বসে গেছে , তা দেখে মুচকি হেসে নূরের গলায় আরো গভীর ভাবে ঠোঁট ছোয়াতেই নূর এবার কেঁদেই ফেলল ৷ আয়াশ নূরকে জড়িয়ে ধরে আছে ছাড়ার নাম গন্ধ নেই তা দেখে নূর কাঁদতে কাঁদতে বলল ” এ কেমন অত্যাচার !”
আয়াশ ওকে জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে বলল
” তোমাকে কষ্ট দিয়ে তারপর কাছে টেনে নেওয়াটাও আমার কাছে একটা নেশার মতো ৷ কজ ইউ আর এলকোহোলিক ! বুঝলে আফুসোনা !”
কথাটা বলে নূরকে ছেড়ে দিয়ে নূরের দিকে আর দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে বেরিয়ে গেল ৷ নূর ওর দু হাতের তালু দিয়ে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে দু চোখ মুছে ফ্লোর থেকে ট্রলি আর জামা কাপড় গুলো তুলল ৷ ও বাসা থেকে আয়াশদের বাসাতে আসার সময় নূর ওর সাথে ওর মায়ের ছবির একটা ফটোফ্রেম এনেছিল , নূর ট্রলিটা তুলতেই দেখলো ফ্রেমটা ভেঙে গেছে কিন্তু ওর মায়ের ছবিটা অক্ষত অবস্থায় আছে, নূরের চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়লো ৷ মানুষটা এতো আঘাত কেন দেই ? কি এমন শত্রুতা ওর সাথে তার ?
___
আয়াশ ড্রাইভ করছে আর তার পাশে বসে অছে নূর ৷ এখনো সন্ধ্যা হয়নি, সবে মাত্র সূর্যের রক্তিম আভা দেখা দিতে শুরু করেছে , আকাশটা লাল-কমলা রঙে রঞ্জিত হয়ে আছে ৷ নূর আকাশের দিকেই তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে ৷ এই শহরে বিকাল বেলা সৌন্দর্য উপভোগ করার জো নেই, যদি কখনো কোন ঝিল বা লেকের ধারে গিয়ে পুরো বিকালটা কাটানো যায় তাহলে বোঝা যাবে যে প্রকৃতিটা আসলেই কতোটা সুন্দর, কতোটা নিঁখুতভাবে তা সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টিকর্তা ৷ মাঝে মাঝে রক্তিম আলোর ছটায় ঢাকা আকাশে পাখিদের উড়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল, তবুও মাঝে মাঝে দেখা যায়, তারা হয়তো তাদের গন্তব্যে ফেরার সুদীর্ঘ পথটা প্রয়াশই পরিবর্তন করে , তাঁদের ও ঘুরতে ইচ্ছা হয় এই শহর দিয়ে , উঠে যেতে ইচ্ছা করে এই শহরের বুকে ৷ নূর বরাবরই খুব প্রকৃতিপ্রেমী , আগে সুযোগ পেলেই ওর ভাইয়ার ক্যামেরাটা নিয়ে ছাদে গিয়ে কতো ছবি তুলে তা ক্যামেরাবন্দী করতো ৷ কিন্তু এখন সেই সুযোগ আর নেই ৷ সময় বদলায়, বদলায় মানুষজন, বদলায় তাদের অঙ্গভঙ্গি , বদলায় তাদের স্বভাব ৷ বাইরের দিকে বেশ মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে ছিলো নূর হঠাৎই আয়াশের বিষাদময় কন্ঠস্বর শুনে আয়াশের দিকে তাকাতে বাধ্য হলো ৷ সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আয়াশ আর বলছে
” এই সেই রাস্তা আফু সোনা ৷”
আয়াশের এমন আধাখাপচা কথা শুনে নূর বিরক্ত হলো , পুনরায় নিজের কাজে মনোযোগ দিতে গেলেই আবার আয়াশ বলে উঠলো
” যেখানে সবাই হুঠ করে গুম হয়ে যাই ৷”
আয়াশের কথার শেষের অংশটুকু শুনে নূরের বুকের ভিতর ধক করে উঠলো ৷ না চাইতেও অবাক হয়ে আয়াশের দিকে তাকাতেই আয়াশের চোখের দিকে গভীর ভাবে নজর দিলো ও, চোখদুটি লেন্স বিহীন অপরূপ সুন্দর , আগে কখনো নূর কোন পুরুষের চোখের মায়ায় পড়েনি, আয়াশের চোখের মায়ায় পড়েছে সে, একবার তাকালে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা হয় , আসলে চোখ দুটো অনেক রহস্যের অধিকারী তাই হয়তো বড্ড সেই রহস্য গুলোকে সমাধান করতে ইচ্ছা হয় ৷ আয়াশ নূরকে অবাক করে বলল
” তোমাকে একদিন আমিও গুম করে দেবো, কি বলো !”
নূর শুকনো ঢোক গিলে বলল ” আপনি গাড়ি থামান আমি নামবো ৷ প্লিজ গাড়ি থামান ৷”
আয়াশ উদ্ভট এক হাসি দিয়ে বলল
” এতো ভয় পেলে চলে আফু সোনা ? এত ভয় পেলে তো মজা নেই ৷”
নূর মিনতির সুরে বলল ” আপনি গাড়ি থামান প্লিজ আমি নামবো ৷ আপনি কোন মানুষ নন, আপনি ভ্যাম্পায়ার অথবা মনুষরুপী ডেভিল ৷ আপনি কখনোই কারোর ভালো করতে পারেন না, আপনি অদ্ভুত একজন ৷”
আয়াশ হুঠ করে গাড়ি থামিয়ে দিয়ে বলল
” যাও , ইউ ক্যান লিভ নাও ৷ ” নূর গাড়ির দরজা খুলতে গিয়েও পারলো না, সেটা লক করা বাইরে থেকে ৷ নূর ভয়ার্ত চোখে আয়াশের দিকে তাকালো, ভয়ে ও ঘেমে নেয়ে একাকার ৷ আয়াশ নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
“তুমি পালাতে চাইছো,নাও আই ইউল কিল ইউ ৷” বলে হাতের দিকে থাকা ছুরিটা নূরের দিকে ছুড়ে দিতেই নূর চেঁচিয়ে উঠলো ৷
বিছানা থেকে ধড়ফড়িয়ে নেমে এলো নূর ৷আয়াশ ওর পাশেই ঘুমাচ্ছে, আয়াশকে দেখে ওর শরীরটা থরথর করে কাঁপছে , ঘুমন্ত মুখে মানুষটাকে কতোটা নিষ্পাপ লাগছে কিন্তু ওর স্বপ্নে মানুষটা কতো ভয়ংকর , কি সাংঘাতিক, কতো সহজেই ওকে মারতে চাইছিলো ৷নূর মাটিতে হাটু ভাজ করে বসে আছে আর ফুঁপিয়ে উঠছে বারবার ৷ সারা শরীর ঘেমে নেয়ে একাকার ৷ লুকিয়ে লুকিয়ে চোখ পিটপিট করে মাঝে মাঝে আয়াশের দিকে তাকাচ্ছে ৷ হঠাৎ আয়াশ ঘুমের ঘোরে ওর পাশের জায়গাটা খানিকখন হাতড়ে দেখলো, ও হয়তো নূরকেই খুঁজছে ৷ হঠাৎ নূরের জায়গাটা শূন্য অনুভব হতেই আয়াশ চমকে উঠলো , বিছানায় ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো আর চিৎকার করে বলল
” আফু সোনা ৷” নূর আয়াশের কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলো , মানুষটা ঘরের অন্ধকারে ওকে এখনো খুঁজে পাইনি , তবুও ঘরের মধ্যে জ্বলতে থাকা মরিচ বাতির আলোতে নূর তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তার চোখে কোন কিছু মূল্যবান জিনিস হারিয়ে যাওয়ার বেদনা, তার চোখ জোড়া ছলছল করছে, এর থেকে আর বেশি কিছু দেখতে পারলো না নূর তার আগেই ঘরের আলো জ্বলে উঠলো ৷ হঠাৎ একসাথে অনেক আলো চোখে পড়ায় নূর চোখ বন্ধ করে নিলো ৷ আয়াশ এসে নূরের পাশে হাটু গেড়ে নূরের কাঁধে কাঁপাকাঁপা হাত রেখে বলল ” এই আফু সোনা তুমি এখানে কি করছো ?আমি না তোমাকে খুঁজছি ৷ কি করছো তুমি এখানে ?”
নূর ধীরে ধীরে চোখ তুলে আয়াশের দিকে তাকালো, মুখের ওপর আছড়ে পড়া চুলগুলো ঘামে ওর মুখের সাথে লেপ্টে গেছে ৷ আয়াশের দিকে তাকালো নূর, এখন আয়াশের চোখগুলো অতি স্বাভাবিক ৷ আয়াশ এবার নূরের দুগালে হাত রেখে হঠাৎই নূরকে আকঁড়ে ধরে বলল ” এই আফু সোনা আমি ডেভিল বলে তুমি আমার থেকে পালাতে চাও বলো ? এমন করো কেন? তুমি কি জানোনা তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলে আমি আমার বাকিটা জীবন বাঁচার মনোবল হারিয়ে ফেলবো ৷”
হঠাৎ আয়াশের মুখ থেকে এতো হৃদয়স্পর্শী কথা শুনে আর আয়াশের শরীরের সংস্পর্শে এসে নূর ভাবলো যে আয়াশ ওর ক্ষতি করার জন্য ওর এতো কাছে এসেছে তাই সহ্য করতে না পেরে আর ভয়ে আয়াশকে ধাক্কা মারলো শরীরের সব শক্তি দিয়ে ৷ধাক্কা খেয়ে আয়াশ খানিকটা দূরে ছিটকে পড়লো ৷ অদ্ভুত ভাবে আয়াশ খুবই স্বাভাবিক, তার মুখে নেই কোন রাগের আভা আর নেই কোন হিংস্রতা ৷ আয়াশ নিজেকে সামলে নিয়ে নূরের কাছে গিয়ে বলল
” এই কি হয়েছে তোমার এমন করছো কেন আফু সোনা ৷ কোন কারনে ভয় পেয়েছো ?”
নূর এবার মুখ খুললো ” দূরে সরে যান আপনি, আপনি কখনোই আমার ভালো চাননা , আমাকে আপনি মারতে চান , আপনি মানুষ নন , আপনি অন্যকিছু ৷ আপনি মানুষরুপী ডেভিল ৷ আর একটু হলেই তো আমাকে,,,,,”
কথাটা বলতে যাবে তার আগেই আয়াশ নূরের ঠোঁটদুটো আঙুল দিয়ে চেপে ধরলো ৷
” শশশ, আর একটাও কথা না, আর যাইহোক তোমাকে মেরে ফেলে আমি কখনো নিজেকে এতো বড়ো আঘাত দেবো না ৷ পাগলেও নিজের ভালোটা বোঝে আর আমি তো ডেভিল ৷ তাই এই কথাটা কখনো মুখেও আনবেনা ৷”
কথাটা বলে নূরকে ফ্লোর থেকে কোলে তুলে নিলো ৷নূর আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখের ভাষা খুব স্বাভাবিক আর খুব স্পষ্ট , যেখানে নূর কোন ভয় ছাড়া ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে ৷ তাহলে এটা কি নিছকই ওর চোখের ভুল ! কথগুলো ভাবতে ভাবতে নূর অন্ধকার রুম অনুভব করলো, আয়াশ ওকে বিছানাতে শুইয়ে দিয়ে লাইটটা নিভিয়ে দিলো ৷ আয়াশ ওর দিকেই এগিয়ে আসছে,,নূরের কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে যা কখনো বলে প্রকাশ করা যাবে না, এমন একটা অদ্ভুত চরিত্রের মানুষের এমন রুপটা যেন নূর মানতে পারছে না, আয়াশ ওর অছে, ভীষন কাছে ৷ নূর উঠে যেতে নিলেই আয়াশ নূরের হাতজোড়া মুঠিবদ্ধ করে নিলো
” এভাবে কেন পালিয়ে যাও আফু সোনা ?তুমি কি এটা জানো না যে তুমি যতোটা পিছিয়ে যাবে আমি ঠিক ততোটাই দরকার হলে তার ও বেশি তোমার দিকে এগিয়ে যাবো, তাই তোমার এই চঞ্চলতাটাকে কমাতে শেখো নয়তো আমার চঞ্চলতাতে তুমি অস্থির হয়ে পড়বে ৷ যখন তোমাকে কষ্ট দেবো তখন মুখ বুঝে কষ্টটাকেই গ্রহন করবে আর যখন ভালোবাসবো তখন সেই ভালোবাসাটাও মুখ বুজে মেনে নেবে ৷ কিন্তু কখনো আমার প্রতি তোমার অনুভূতি ব্যাক্ত করার মতো ভুল একটিবার ও করবে না ৷”
নূর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়াশ ওর ঠোঁটজোড়া দখল করে নিলো ৷ আজ কোনরকম কোন অস্বাভাবিকতা ছাড়াই আয়াশ নূরকে ভালোবাসছে , আয়াশ তার নেশাতে ডুবে যাচ্ছে, তার ভাষায়
” তুমিই আমার প্রিয় নেশা ৷”
____
কালকে রাতে নূরের বাসায় এসেছে আয়াশ আর নূর ৷ মায়াও এই বাসাতে আছে, সব রান্না বান্না ওই করছে ৷নূরের প্রতি মায়া খারাপ আচরন করলেও আয়াশের প্রতি তেমন কোন খারাপ আচরন করেনি ৷নূর আয়াশের প্রতি মায়ার ব্যাবহার গুলো লক্ষ করছে, এখনো অবধি খারাপ ব্যাবহার করেনি ৷ নূর একটা সস্তির নিশ্বাস ফেললো, আর যাই হোক আয়াশের প্রতি তো মায়ার ঘৃনাটা নেই, নাহলে নতুন জামাইয়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার জিনিসটা বড্ড দৃষ্টিকটু ৷ নূর ওর ঘরে যেতেই হঠাৎ ওর বাবার ঘরের সামনে গিয়ে থেমে গেল ৷ সেই ঘরে আয়াশ ,নুরের ভাইয়া আর নূরের বাবা তিন জন মিলে গল্প করছেন ৷ আয়াশ আর নূরের ভাই বেশি কথা বলছেন , নূরের বাবা আরাফাত সাহেবের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ৷ হঠাৎই আয়াশ প্রশ্ন করে উঠলো
” আচ্ছা ভাইয়া আপনার আম্মু কোথায় তাকে তো দেখছিনা !”
নূরের ভাইয়া কিছু বলতে যাবে তার আগে আরাফাত সাহেব ঝাঁঝিয়ে বললেন
” অদ্ভুত প্রশ্ন কেন করো ? তুমি কি জানো না যে সে মারা গেছে ৷”
আয়াশ কৌতুহলী হয়ে বলল ” তা কবে আর কি করে মারা গেছেন উনি ?”
নূরের ভাইয়া বলে উঠলো ” কি করে মার গেছেন জানি না, তবে আমার নানুর বাসার যাওয়ার পথে সম্ভবত কোন কার এক্সিডেন্ট হয় আর,,,,,”
আয়াশ বলে উঠলো ” তারপর !”
আরাফাত সাহেব বলে উঠলেন ” তারপর আর কি ? তারপর মা গেছেন ৷”
আয়াশ একটু গাঢ় কন্ঠে বলল ” এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন? স্বাভাবিক কন্ঠে বলুন ৷”
উনি একটু থতমত খেয়ে বললেন
” পুরোনো কথা মনে পড়ছে তাই ৷”
আয়াশ মুচকি হেসে বললেন
” স্কিপ দিস টপিক ৷ উনি মারা গেছেন এটাই বড় সত্য তাইনা আঙ্কেল ?”
আরাফাত সাহেব রাগী চোখে তাকিয়ে বেরিয়ে গেলেন ৷ নূর তাড়াতাড়ি করে ওর ঘরে চলে গেল ৷ নূর ঘরে গিয়ে বিছানার ওপর বসে ভাবলো
” আমার তো নানার বাসাই নাই, থাকলে সেটা কোথায় ? কই আম্মু বা বাবা তো কখনো বলেনি ! কিন্তু কেন?”
চলবে,,,