তুমিই_আমার_পূর্ণতা,পর্ব ২

#তুমিই_আমার_পূর্ণতা,পর্ব ২
#মেহরাফ_মুন(ছদ্মনাম )

কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আদ্রাফের গম্ভীর মুখোশ্রী দেখে চুপ হয়ে গেল। তাঁর এতক্ষন হুসই ছিল না রোগীকে দেখার বন্ধুর কথা ভাবতে গিয়ে।
তাঁর আগে মেয়েটাকে দেখেই তাঁর মুখ অটোমেটিকলি ‘হা’ হয়ে গেল। এই মেয়ে এখানে কীভাবে? তাঁর ওপর আদ্রাফেরই কোলে। ওইদিন আদ্রাফের সাথে গাড়িতে করে যাওয়ার সময়ই তো দেখেছিলাম। জ্যমে পড়ে গাড়িতে বিরক্ত অবস্থায় রাস্তায় চোখ দিয়েছিলাম আর তখনই মেয়েটা রাস্তার মাঝখান দিয়ে এক বৃদ্ধমহিলাকে রাস্তা পার করে দিচ্ছিল। এরপর পরই জ্যাম ছুটে গিয়েছিল কিন্তু আদ্রাফ ড্রাইভিং না করে রাস্তার দিকেই তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। আমি ধাক্কা দিতেই ও সম্বিৎ ফিরে পেয়েছিল তারপর আবার পিছন দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করেছিল।ওকে অগোছালোও লেগেছে সেই কিছুক্ষন সময়ে।এরপরই গাড়ি স্টার্ট দিয়েছিল।
শুভ্র এতকিছু না ভেবে আগে মেয়েটাকে দেখতে লাগল কারণ আরেকটু হলেই আদ্রাফ ওকে চিবিয়ে খাবে।

-‘আরে তেমন কিছুই না। অতিরিক্ত টেনশন আর স্ট্রেস নেওয়ার জন্য এমনটা হয়েছে, আর খাবারের অমনোযোগীর জন্যই, ঠিকমতো খাবার খেলেই হবে আর এখন আপাতত কিছু ওষুধ দিচ্ছি, এসব চলুক ।’ বলল শুভ্র।

আদ্রাফ যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এতক্ষন তো ও নিজেই ভেতরে ভেতরে ঠিক থাকতে পারছিল না। আদ্রাফ মুনের পাশেই বসে ওর এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল মুনের দিকেই। শুভ্রকে কিছু খাবার আনার ব্যবস্থা করতে বলল। শুভ্রও তাই করল। তাঁর হাসপাতালের কর্মচারীকে অর্ডার দিয়ে আসল। আর ততক্ষনে আদ্রাফও উঠে এল।

এই কিছুসময় শুভ্র আদ্রাফকে দেখেই বুঝে গিয়েছে। শুভ্র আদ্রাফের পাশে এসে দাঁড়াল,

-‘ভালোবাসিস ওকে?’

-‘জানি না।’

-‘বলে দিলেই তো হয়।’

-‘আমার জীবনে কোনো নারীকে-ই জড়াবো না।’

এই কথার প্রতিত্তরে কিছুই বলতে পারল না শুভ্র। কারণ ও জানে, আদ্রাফকে এখন যেভাবেই বোঝাক না কেন ও বুঝতে চাইবে না। আর কিই-বা বোঝাবে আদ্রাফকে? ও নিজেই তো জানে আদ্রাফের একটা কালো অতীত আছে, যেই ট্রমাটা থেকে এখনো আদ্রাফ বের হতে পারেনি।

—————————–

মুন চোখ খুলেই হতবাক। কারণ ওর সামনে স্বয়ং আদ্রাফ দাঁড়িয়ে আছে।চারিদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, এটা একটা হাসপাতাল। কিন্তু আমি হাসপাতালেই বা কীভাবে আসলাম! আর আমার সামনেই বা ফারহান আদ্রাফ স্যার কেন আসবে? মুন এটা ওর ভ্রম মনে করে চোখ বন্ধ করে আবার খুলল। নাহ, এটা তো ভ্রমের মত মনে হচ্ছে না। নাহ, হয়তো বা আমার চোখের ভুল হতে পারে।
যেই ভাবা সেই কাজ, আমি ব্যাড থেকে নেমেই সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম।

এদিকে আদ্রাফ হতভম্ব। এই মেয়ে কী পাগল না কি? সেন্স ফিরেই পাগলের মত করছে। এখন আবার দৌড়ে ওয়াশরুমে-ই বা কেন গেল?

আমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই আধ-বালতি পানি মেরে দিলাম ফারহান আদ্রাফ স্যারের গায়ে।

-‘হোয়াট ননসেন্স!’আদ্রাফ রেগে চোখ-মুখ লাল করে চিৎকার দিল।

ইয়া আল্লাহ! তাঁর মানে এটা ভ্রম নয়। কী করলাম এটা। নিজের মাথায় নিজের বারি মারতে ইচ্ছে করছে এখন।

আদ্রাফ মুনকে বিড়বিড় করতে দেখে আরেকটা জোরে ডাক দিল। আর এতেই মুনের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেল।

-‘স্যার, স্যার। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি।’

আদ্রাফ আর কিছু না বলে দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ সংযত করে পাশের খাবারের প্যাকেটটা মুনের হাতে দিল।

-‘খাবার ঠিকমতো খাবে, আর অতিরিক্ত টেনশন করবে না। এখন এই খাবারগুলো খেয়ে নাও চটজলদি।’

উনার এই কেয়ারনেস দেখে হঠাৎ মাথায় আসলো আমি হাসপাতালে কী করছি। এতক্ষন এসবের কারনে খেয়াল-ই ছিল না। আর এই ডাক্তার-ই বা কেন আসলো? আর সকালের ম্যানেজার আঙ্কেলের কথাগুলো কেমনে ভুলে গেলাম আমি! ইয়া আল্লাহ! সকালের কথাগুলো ভাবতেই আমি বিস্পোরণ চোখে আদ্রাফের দিকে তাকালাম আর পাশের ছোট টেবিল থেকে ফল কাটার ছুরিটা নিলাম,

-‘এই-ই আপনি আমাকে সেরোগেশন করাতেই এনেছেন,তাই না? এই জন্যই এত কেয়ারনেস আমার প্রতি? আমি তো এতক্ষন ভুলেই গেছিলাম সকালের কথাগুলো। খবরদার, একপাও আমার দিকে এগুলে আপনি আমার অফিসের বস এটা ভুলে যাব। এই ছুরিটা দিয়ে জবাই করে মেরে ফেলব একদম।’

-‘ঐটা ফল কাটার ছুরি। ঐটা দিয়ে জবাই করতে পারবে না তুমি। ছুরি দিয়ে সর্বোচ্চ হাত কাঁটা যাই, জবাই না। এতদিনে এটাও শিখলে না!স্ট্রেঞ্জ! আমি বাচ্চা ভেবেছি তোমাকে কিন্তু তুমি দেখছি আমার ভাবনার চাইতে বেশি বাচ্চা, মুন।’

ততক্ষনে শুভ্রও ক্যাবিনে ঢুকল আবার।

-‘যেটা-ই কাঁটা যাক, ঐটা-ই কেটে দিব।আর এই ডাক্তার এখানে কেন? আমি কিন্তু এখন চিৎকার করব, বলে দিলাম। আর নয়তো দুই-জনকেই একসাথে খুন করে ফেলব।’

এটা শুনেই শুভ্র পেট ধরে জোরে জোরে হাসতে শুরু করল।
ওর হাসি দেখেই মুনের বোকা বোকা চাহনি, এখানে হাসির কী বলল মুন। সিরিয়াস জিনিসেও হাসে।

-‘আদ্রাফ, দোস্ত শেষপর্যন্ত এই বাচ্চাটাকেই পেলি?’
শুভ্র হাসতে হাসতে আদ্রাফকে কথাগুলো বলতেই আদ্রাফের দিকে তাকাতেই চুপ হয়ে গেল আদ্রাফের রাগী চেহেরা দেখে।

আর এদিকে মুন তো তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল বাচ্চা বলার কারণে। কিন্তু এখন চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে হচ্ছে। কোনোমতেই এখান থেকে বের হতে পারলেই হলো।

-‘এখানেই থাকার ইচ্ছে আছে না কি? চাইলে ব্যবস্থা করতে পারি।বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে নেই?’

গম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠস্বর কানে আসতেই মুনের খেয়াল হলো ও একা একা দাঁড়িয়েই বিড়বিড় করছিল।

আদ্রাফ শুভ্রকে বলে বেরিয়ে যেতেই মুন একনজর শুভ্রর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বের হয়ে গেল।

‘ডাক্তার হয়েও কোনো পাত্তা পাচ্ছি না। কে বলবে আমি ডাক্তার!’ওরা বেরিয়ে যেতেই শুভ্র আপনমনে বিড়বিড় করে বলে উঠল।

মুন গেট দিয়ে বের হতেই দেখে আদ্রাফ স্যার গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় মুনের-ই অপেক্ষাই।

মুন আদ্রাফকে না দেখার ভান করে রিক্সা ডাকতে লাগল। আর তা দেখেই আদ্রাফ বলে উঠলো,

-‘আমাকে কী তোমার ড্রাইভার মনে হয়? যে আমি গাড়ির দরজা খুলে তোমায় ঢুকার সুযোগ করে দিব?’

-‘আমার সাথে আপনার শুধুমাত্র এমনি স্বাভাবিক কর্মচারীর সম্পর্ক, এর বাইরে কিছুই নেই। আপনি কী সব কর্মচারীদের এভাবে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছিয়ে দেন? যদি দেন তাইলে উঠব আর নাহলে আলগা-পিরিত দেখাতে আসবেন না।’

এই বলেই মুন রিকশায় উঠে গেল। যাক বাবা,এখন কিছুটা হলেও নিজেকে হালকা লাগছে ওই কচ্চরটাকে কিছু বলতে পেরে।

আর এদিকে আদ্রাফের চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। আজ একদিনে এই মেয়েটার সাহস এতটাই বেড়ে গেছে? এতদিন তো এমন মনে হয়নি। যেই মেয়ে চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলতে পারত না সেই মেয়ে এখন এই ফারহান আদ্রাফের সাথে তর্কে জড়ায়!
.
.

মুন রুমে ঢুকার সাথে সাথেই পাশের ব্যাড থেকে মিম বলে উঠল,

-‘কই ছিলি এতক্ষন? এতবার কল দিয়েছিলাম ধরিসনি।’

-‘জানিস-ই তো এই সময় কাজে থাকি। জানার পরেও হঠাৎ এতবার কল কেন দিলি?’

-‘হোস্টেলের দায়িত্বরত কূটনী মহিলাটা আসছিল তোকে খোঁজার জন্য। বলেছে এইবারে আর সুযোগ দিবে না। আমাকে দিয়ে তোর মোবাইলে কল দিয়েছিল। তুই কল না ধরার কারণে রাগী মুডে বের হয়ে গিয়েছিল। তুই আসলে দেখা করতে বলেছিল। কী করবি মুন? আমারও তো এবার বাবা এখনো গ্রাম থেকে খরচ পাঠায়নি আর টিউশনের বেতনও এখনো দেয়নি। নাহলে আমি কিছু একটা করে ফেলতাম।’

-‘তুই আর কত করবি আমার জন্য? যা করছিস তা অনেক করছিস। দেখি কী করা যায়।’

-‘আরে মুন, আজ না তোর অফিসের মাস-বেতন দেওয়ার কথা ছিল? দেখ ইয়ার, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!দিয়েছে টাকা? তাইলে তো তুই টেনশন ফ্রি হয়ে গিয়েছিস। আমি শুধু শুধুই চিন্তা করছি।’

-‘আমি আর চাকরিটা করছি না।’

-‘কিন্তু, কেন?’

আমি সকাল থেকে সব মিমকে খুলে বললাম। বলার পরে মিমকে বিস্ময়সূচক অবস্থায় রেখে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে আসলাম। এখন একটা লম্বা শাওয়ার নিতে হবে।
.
.
আস্তে আস্তে এখন সব চিন্তা এসে মাথায় ভর করছে। এতক্ষন সবার সামনে শক্ত, চঞ্চল মুনের অভিনয় করলেও এখন সব কান্নারা যেন গলায় এসে আটকে গেল। আর পারছি না আমি। হাঁটুর ওপর মাথাটা ছেড়ে দিয়ে দ-আকারে বসে পড়লো মুন।
সবার মত স্বাভাবিক লাইফ আমার কেন হলো না?আমার পড়ালেখার কী হবে? আরেকটা কাজ-ই বা কিভাবে জোগাড় করব?কী করব আমি? কোথায় যাব?

#চলবে ইন শা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here