তার শহরের মায়া 😍,পার্ট_৩+৪
Writer_Liza_moni
পার্ট_৩
অনু মোবাইল হাতে নিয়ে মাহির এর ফোনে একটা মেসেজ লিখে পাঠালো।
আপনার সাথে আমার কথা আছে মাহির।বউ ভাতের ব্যাস্ততা কাটিয়ে আমার সাথে একান্ত দেখা করবেন। আমার এই আশা আপনি নিরাশা করবেন না দয়া করে।
অনু মেসেজ টা পাঠিয়ে দিয়ে ড্রইং রুমের সোফায় মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইল। সারা রাত জেগে কান্না করার ফলে চোখ জ্বালা করছে এবং মাথা ও ব্যাথা করছে প্রচুর।
মাহিরের ফোনে টুং করে মেসেজের শব্দ পেয়ে তনু মাহিরের ফোনটা যেই হাতে নিতে যাবে মাহির ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে দ্রুত তনুকে নিজের দিকে টেনে নেয়। বিছানার উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে তনু কে জড়িয়ে ধরে।
আবার শুরু হয়ে গেছে আপনার দুষ্টুমি।
বউয়ের সাথে দুষ্টুমি করবো না তো কি অন্য কারো সাথে দুষ্টুমি করবো?
না আমি তা বলিনি।
তাহলে?
কিছুই বলিনি হয়েছে?
মাহির মুচকি হেসে তনুর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
দরজায় টোকা পড়তেই মাহির তনুকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিল।
সকাল নয় টা বাজে তোদের কী এখন ও ঘুম ভাঙ্গে নাই মাহির?
তনু মাথায় শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘোমটা টেনে মুচকি হেসে দরজা খুলে দিতে এগিয়ে গেল। মাহির মোবাইল হাতে নিয়ে অনুর মেসেজ টা পড়ে
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তনু দরজা খুলে দিলে ছেলেটা মুচকি হেসে বললো
গুড মর্নিং ভাবী।
তনু মুচকি হেসে বললো মর্নিং। আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারছি না ভাইয়া।
ও তুর্য, আমার ফুফুর একমাত্র ছেলে।যাদের বাড়িতে আছো তাকেই চিনতে পারছো না তনু?
কথা টা বলতে বলতে দরজার কাছে এগিয়ে যায় মাহির।
আসলে তোদের বিরক্ত করতে চাই নি।মামি বললো তোদের ডেকে নিয়ে যেতে নাস্তা করার জন্য।
হুম চল।
তুর্য মাহিরদের আগেই চলে গেল।
ছেলেটা আপনাকে তুই করে বললো কেনো?
আমরা সম বয়সী তাই তুই করে বলেছে। ছোট থেকেই আমরা একে অপরকে তুই করে বলে আসছি।
.
অনু কে সোফায় ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকালো সকালের সেই ছেলেটা।
অনুর পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই অনু চোখ মেলে তাকায়। পাশে একটা ছেলেকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো অনুর। ছেলেদেরকে দেখলেই এখন ভীষণ রাগ হয় অনুর।
বেয়াইন সাহেবা আপনি এখানে বসে ঘুমাচ্ছেন কেন? রাতে কী আপনাকে রুম দেখিয়ে দেওয়া হয়নি?
আপনার সমস্যা কি?আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে ঘুমাবো।
বলেছি না আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য।
আরে আপনি এই ভাবে রেগে যাচ্ছেন কেন বলুন তো ? আমি কী আপনাকে খারাপ কিছু বলেছি?বিয়ে বাড়ীতে আপনি যেখানে সেখানে ঘুমাতে পারেন না।আর এটা আপনার নিজের বাড়ি ও না।তাই সব জায়গায় সব কিছু হজম হয় না।আর আমি কি আপনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি? দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলছেন যে আপনি? কোথায় কী বলতে হয় সেই বোধ বুদ্ধি ও তো নেই আপনার।
কথা গুলো বলে ছেলেটা রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল। মাহির এতক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সব কিছুই দেখছিলো।
আমার মনের ভেতরের কষ্ট টা শুধু আমিই দেখতে পারছি।অনুভব করতে পারছি।এরা তো যে যার মতো করে ভেবে নিয়ে আমাকে কথা শুনাচ্ছে। হায়রে মানুষ।
অনু আশে পাশে তাকাতেই চোখ পড়লো মাহিরের উপর।অনু কে দেখে বুকের মাঝে ধক করে উঠে তার।এক রাতে কি অবস্থা করেছে নিজের।
তনুকে আসতে দেখে মাহির খাবার টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। তনু অনুর কাছে এসে অনুর চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায়।
ব্যাথিত কন্ঠে বলে উঠে
একি অবস্থা হয়েছে তোর অনু? চোখ মুখ ফুলে আছে কেন? চোখ গুলো লাল হয়ে আছে কেন?
অনু বোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে বললো
তুই তো জানিস আপু নতুন জায়গায় আমার ঘুম আসে না সহজে।আর গত কাল রাতে এতো মানুষের ভিড়ে আমার একটু ও ঘুম হয়নি।
ইসস আমার বোনটা কতো কষ্ট করেছে ।আয় আমার সাথে আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসবি।
তনু অনুর হাত ধরে রুমে নিয়ে গেল।
অনু রুমটাতে আসতেই মাহিরের পারফিউমের গন্ধ পেল। বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো তার। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
অনু যে তনুকে সত্যি কথা বলেনি সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে তনু।অনুর যে অনেক বড় কিছু একটা হয়েছে সেটা তনুর বুঝতে অসুবিধা হয় নি।যতোই হোক নিজের মায়ের পেটের বোন।
অনু ওয়াস রুম থেকে বের হলে তাকে সাথে করে নাস্তার টেবিলে নিয়ে যায় তনু।
অনু কে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে তনু মাহিরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মাহিরের ফুফু আর মা নাস্তা পরিবেশন করতে গেলে তনু ও তাদের কাজে হাত মিলায়।
নতুন বউ তোমাকে আজ কোনো কাজ করতে হবে না। তুমি মাহিরের পাশে বসে খাওয়া শুরু করে দাও।
সেকি ফুফু মনি আপনারা বসুন আমি বরং আপনাদের সবাইকে পরিবেশন করে দি।
শুনেছো মেয়ের কথা তুমি আর মাহির সবার আগে নাস্তা করে বউ ভাতের অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি হয়ে নাও।যাও মাহিরের পাশে বসে খাওয়া শুরু করো।
তনু মাহিরের পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।
অনু খাবার টেবিলে বসে তনু আর মাহির কে দেখে যাচ্ছে। মাহির অনুর দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে যায়।
মাহির অনুর চোখে তার জন্য স্পষ্ট ঘৃণা দেখতে পেল।
অনুর গলা দিয়ে খাবার নামছে না। তবু ও জোর করে কিছুটা খেয়ে মোবাইলে কল আসায় উঠে চলে গেল।
অনু মাহির ভাইয়া নাকি বিয়ে করে ফেলেছে? সত্যি?
তুই সব কিছু জানার পর ও কেন আমার কাছে জানতে চাচ্ছিস রিফা?
বিশ্বাস কর দোস্ত আমি সত্যিই জানতাম না যে মাহির ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছে।ও আমাকে একটা বারের জন্য ও বলেনি। এমনকি আমার পরিবার কে ও না।
কি জন্য বলেনি জানিস যদি আমি জেনে তাই। তুই যদি আমাকে বলে দিস সেই ভয়ে। কিন্তু কার সাথে বিয়ে হয়েছে জানিস? আমার আপন বড় বোনের সাথে।
তোর বোনই তাহলে মাহির ভাইয়ের প্রথম দেখায় ভালোবাসার মানুষ।
মানে?
মানে মাহির ভাইয়া তার বন্ধু,আর আমার ভাইয়ের সাথে বাজি ধরে তোর সাথে রিলেশনে গিয়েছিল। তোকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে তার কখোনো ছিল না।
রিফার কথায় অনুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।সে মনে করেছিল মাহির হয়তো কোনো একটা অজানা কারণে বিয়েটা করেছে। কিন্তু মাহির এতোটা নিচ ছি।
তুই সব জানার পর ও আমাকে কিছু বলিসনি রিফা?
আমাকে বলতে দিতো না মাহির ভাইয়া।তোদের রিলেশন যখন ১ বছর পার হয়ে যায় আমি ভেবেছিলাম মাহির ভাইয়া সত্যি তোকে ভালোবাসতে শুরু করে। কিন্তু আমি জানতাম না রে মাহির ভাইয়া এমন কিছু করবেন।
তোরা সবাই মিলে আমাকে এই ভাবে ঠকালি? হায়রে মানুষ জাতি।
অনুর চোখ বেয়ে আবার পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। কাছের মানুষ গুলোর প্রতারনা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না অনু।
.
পার্লার থেকে মেয়েরা এসে তনু কে সাজিয়ে দিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। মাহির হালকা আকাশি রঙের একটা পাঞ্জাবী পরেছে।
অনু একটা চুরিদার পড়ে তনুর কাছে গেলো।
বোনকে জড়িয়ে ধরে বললো মাশাআল্লাহ। আমার বোনটা আস্ত একটা পরী। কারো নজর না লাগুক।
মাহির কে রুমে আসতে দেখে অনু তনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
আমি এখন যাই। দুলাভাইয়ের সাথে রোমান্স কর।
অনু রুম থেকে বের হবার সময় মাহিরের দিকে এক নজর তাকিয়ে চলে গেল।
মাহিরের ফুফুদের বাড়িতে এখন মেহমানদের ভীড়।অনুর মন ভালো নেই। এতো মানুষের ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।তাই অনু ছাদে চলে গেল। ফুফুর বাড়ীর উঠানে ডেকোরেশন করা হয়েছে বিধায় ছাদ এখন খালি থাকবে।
অনু ছাদে গিয়ে রেলিংয়ের সাথে দাঁড়িয়ে নিচের সব আয়োজন দেখছে। একটু পর নিজের মা বাবা সহ কিছু আত্মীয় স্বজনদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে ও নিচে গেলো না অনু।
তখনকার সেই ব্যবহারের জন্য আমি মন থেকে দুঃখিত।
কারো বলা কথাটা শুনে অনু পাশ ফিরে তাকায়।এক নজর তাকিয়ে সেই ছেলেটা কে দেখে অনু চোখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার নিচের দিকে তাকালো।
ছেলেটা একবার অনুর দিকে তাকিয়ে আবার বললো
Sorry,I am really sorry for this behaviour….
সরি বললেই সব সমাধান হয়ে যায়? নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল অনু।
তা হয় তো হয় না। কিন্তু ক্ষমা তো চাইতেই পারি ভুল যখন করেছি।
অনু কিছু বললো না। নিচের দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
বাই দা ওয়ে আমি আপনার দুলাভাইয়ের ফুফাতো ভাই তুর্য।
অনু ছেলেটার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল আমাকে একটু একা থাকতে দিবেন প্লিজ?
আপনি তো সরির উত্তর দিলেন না 😒।
আপনার কথায় আমি কিছুই মনে করিনি।আর আপনি যা বলছেন ঠিক বলেছেন।এতে সরি বলার কিছু নেই।এর থেকেও বেশি কষ্ট নিয়ে সবার সাথে হেসে হেসে ভালো আছি বলে যাচ্ছি।আর তখন আমি ঘুমাইনি। চোখ বন্ধ করে বসে ছিলাম মাথা ব্যথা করছিল বলে।
আমি সত্যি সরি।
আমাকে একা থাকতে দিলেই আপনার সরির উত্তর পেয়ে যাবেন। একটু একা থাকতে দিন।
তুর্য আর কিছুই বললো না।ছাদ থেকে নিচে নেমে আসলো।অনু আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
নিচ থেকেই অনুকে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল মাহির। তনু এখন তার মা বাবা আত্মীয় স্বজনদের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত।
তাই মাহির ছাদে আসলো অনুর সাথে কথা বলতে। মাহির ছাদে এসে ছাদের দরজা বন্ধ করতে লাগলো।যেন তাদের কথার মাঝে কেউ আসতে না পারে।
দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পেয়ে সে দিকে তাকায় অনু।মাহির কে আসতে দেখে চোখ ফিরিয়ে নিলো।
বুকের মাঝের অসহ্য যন্ত্রণা টা যেন আরো কয়েক গুণ বেশি বেড়ে গেছে তার।
মাহির ছাদের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে অনুর উদ্দেশ্যে বলল
আমি জানি তুমি আমাকে এখন কী বলবে অনু। আমি তোমাকে না জানিয়ে কেন বিয়ে করেছি।তাও কিনা তোমার আপন বড় বোনকে।
অনু মাহিরে দিকে এগিয়ে যায়।
শান্ত কন্ঠে বলল আমাকে ঠকিয়ে আপনি কি পেয়েছেন?
আমি তোমাকে ঠকাতে চাই নি অনু।
ও আচ্ছা। আপনি আমাকে ঠকাতে চাননি কিন্তু আমাকে জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
মানুষ এতো নিখুঁত অভিনয় কী করে করতে পারে বলেন তো। আচ্ছা আপনি কি আমাকে এই তিন টা বছরে একটু ও ভালোবাসেন নি?
এই তিন বছরের সম্পর্কে আমি তোমাকে একটু ও ভালোবাসিনি বললে তা ভুল হবে। আমি ও তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম।
মাহিরের কথায় অনু তাচ্ছিল্য হাসলো।
এমন করে ভালোবেসে ছিলেন আমায় যেমন ভালো বাসলে অন্যের প্রতি থাকে ঝোঁক ?এটাই আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা ছিল?
মাহির ও অনুকে ভালোবেসে ছিল। তেমন ভালোবেসে ছিল যেমন ভালোবাসলে অন্য কারো প্রতি ঝোঁক থাকে। অন্য কাউকে পাওয়ার ইচ্ছে থাকে।
কেন এই ভাবে ঠকিয়েছেন আপনি আমাকে? আমি আপনাকে নিজের থেকে বেশি বিশ্বাস করতাম বলে এই প্রতিদান দিলেন তার? একটা বাজিতে জিতার জন্য আমার জীবন টা শেষ করে দিলেন আপনি? আমার ইমোশন নিয়ে এই ভাবে খেলতে একটু ও কী খারাপ লাগে নি আপনার? আমি তো আপনার শহরে যেতে চাই নি। আপনিই তো আমাকে আপনার শহরের মায়ায় ফেলেছেন।কী দোষ করেছি আমি?কি ক্ষতি করিছি আপনার? answer me…..
চলবে,,,, 🍁
#তার_শহরের_মায়া 😍
#পার্ট_৪
#Writer_Liza_moni
দেখো অনু তোমার সাথে আমি তিন বছরের সম্পর্কে ছিলাম ঠিকই কিন্তু তোমার প্রতি আমার ওতো টা ও ভালোবাসা জন্ম নেয় নি। তোমার রুপ আমার মনকে তোমার প্রতি আকৃষ্ট করতে পারেনি। তোমাকে ঠকাতে আমি চাই নি। তনু কে যখন প্রথম দেখেছিলাম তখনই সে আমার হৃদয়ে জায়গা দখল করে নিয়েছিল। আমি চেয়েছিলাম বিয়ের পর তোমাকে সব জানিয়ে দিতে।
তিন বছর আপনি আমার সাথে কেমনে এতো নিখুঁত ভাবে অভিনয় করে গেছেন?
১মাস ২ মাস না ৩,৩টা বছর আপনি অভিনয় করলেন কেমন করে? একটা মানুষ কতোটা নিচ হলে তিন টা বছর রিলেশন করে বলে আমার জন্য তার মনে এতো টা ও ভালোবাসা জন্ম নেয় নি। সিরিয়াসলি?
রাগে অনুর গা রিরি করছে।অনু মাহিরের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বললো
আমার ইমোশন নিয়ে খেলার অধিকার তোকে কে দিয়েছে ? প্রথম দেখায় একজন কে মনে জায়গা দিতে পারলি অথচ তিন টা বছর আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করে আমাকে ভালোবাসতে পারিস নাই তুই?তোরে কে অধিকার দিছে বাজি ধরে আমার জীবন নষ্ট করার?
অনু পাঞ্জাবির কলার ছাড়ো দাঁতে দাঁত চেপে বললো মাহির।
অনু ঠাসস করে মাহিরের গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিল। মাহির গালে হাত দিয়ে রাগী চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
চোখ নিচে নামিয়ে কথা বল। তোর মতো বেয়াদব ছেলের জন্য এই এক চড় কোনো ব্যাপার না। তুই জানিস না মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা সমান। তোর বাপ মা কী তোকে এই শিক্ষা দিছে?আর কী জানি বলেছিলি আমাকে তুই ঠকাতে চাস নাই। তার মানে কি তুই আমাকে ও বিয়ে করতি? তুই এতো টা নিচ যে এতো বড় একটা ভুল করার পর ও তোর মাঝে কোনো অনুশোচনা নেই। আমি যদি বিয়ের দিন তোকে না দেখতাম তার আগে যদি দেখতাম তাহলে কোনো দিন ও তোর মতো থার্ড ক্লাস ফালতু ছেলের সাথে আমার বোনের বিয়ে হতে দিতাম না।
তুই একটা বার ও ভেবে দেখছোস তনু আপু যদি তোর এই কীর্তি কলাপ জানতে পারে ও কতোটা কষ্ট পাবে। তার স্বামীর সাথে তার আদরের ছোট বোনের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং তার স্বামী বাজি ধরে তার বোনের সাথে রিলেশন করে তার বোনটাকে একটা জীবন্ত লাশ বানিয়ে দিয়েছে।এই সব কিছু জানার পর ও তনু আপু আপনার মতো একটা নিকৃষ্ট মানুষের সাথে থাকবে বলে আপনি বিশ্বাস করেন?
তনু জানতে পারে এই সব কথা মাহিরের মাথায় ছিল না একদম না।সব কিছু জানার পর যদি তনু সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে আমি কী করবো? একটা বাজির জন্য সব কিছু শেষ উফফ। এতো বড় ভুল আমি কেমনে করছি?
শুনেন মিস্টার মাহির রেদওয়ান
আমার সাথে আপনি যা করেছেন তার ক্ষমা আপনি কোন দিন ও পাবেন না। মহান আল্লাহ পাক ও আপনার এই পাপের ক্ষমা করবেন না।আর জানেন তো খারাপের কখনো ভালো হয় না। কোনো দিন ও না। ভালোবাসা কে কখনো ঘৃনা করা যায় না। তবে আপনার মতো কিছু মানুষের জন্য আমার মতো কিছু মানুষের কাছে ভালোবাসা মানেই ধোঁকা, কষ্ট, যন্ত্রণা,ঘৃণার বস্তু। আপনাকে আমি যতোটা ভালোবাসতাম তার থেকে ও বেশী ঘৃণা করি।তনু আপু আজ না হয় কাল সব জানতে পারবে কারণ সত্যি কখনো লুকিয়ে রাখা যায় না।সময় হলে আপনি ঠিক আপনার পাপের শাস্তি পাবেন।
মনে রাইখেন।
মাহির চুপ করে অনুর কথা শুনে যাচ্ছে। মেয়েটা কে সে সব সময় শান্তশিষ্ট দেখেছে। কথা কম বলতে দেখেছে।আজ প্রথম দেখলো অনু কতোটা রেগে যেতে পারে। শান্ত মেয়েটা কতোটা অশান্ত হয়ে যেতে পারে। কথা কম বলা মেয়েটা আজ কতো গুলো কথা বললো।
অনুর সব প্রশ্নের উত্তর কী দিবে বুঝতে পারছে না মাহির।তাই চুপ করে রইলো।
অনু আবার ও বলতে লাগলো
কী আজ আপনার মুখে কোনো কথা নেই কেন? আমার প্রশ্নের জবাব দিন আপনি।রিফা যদি আমাকে সব না জানাতো আমি তো কখনোই আপনার আসল চেহারা চিনতে পারতাম না।যখন বলতেন ভালোবাসি প্রিয়তমা আহ হা তখন মনে হতো এই কথাটায় বুঝি সত্যি কতো আবেগ জড়িয়ে আছে। নিজের প্রতিই রাগ হচ্ছে আমার আপনার মত একটা কুত্তা মার্কা ছেলেরে আমি কেমনে বিশ্বাস করলাম।কথা গুলো বলতে বলতে কান্না করে দেয় অনু।
আমার সাথেই কেন আপনি এমন করলেন? তিন টা বছর যদি এই নাটক না করতেন তাহলে আমি আজ এই ভাবে ভেঙ্গে পড়তাম না।
চোখের পানি মুছে অনু আবার বললো
একটা সময় আসবে দেখিয়েন আপনার সামনেই আমি ভালোবাসার শহরে ডুবে থাকবো তখন আপনি নিজে ভালোবাসা পাবার জন্য ছটপট করবেন কিন্তু কেউ আপনাকে ভালোবাসা তো দুরের কথা ফিরে ও তাকাবে না ।
বলে অনু ছাদের দরজা খুলে নিচে নেমে গেল। মাহির স্তব্দ হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।
.
কীরে তনু অনু কোথায়?আসার পর থেকে তো একবার ও দেখিনি।
আম্মু অনু আছে এখানে কোথাও। একটু পরেই এসে তোমার সাথে দেখা করবে।
অনু টিস্যু দিয়ে চোখ মুছে নিল ভালো করে।ঐ বেইমানের জন্য আর চোখের পানি ফেলবো না আমি।
বোনের রুমে এসে মুচকি হেসে বললো
সরি গো আম্মু এতক্ষণ ধরে আসতে পারিনি দেখে।
কী এমন মহা কাজ করে ফেলেছে আমার ছোট মেয়েটা একটু শুনি।
অনু মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
তোমার বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে আমাকে কি কেউ কাজ করতে দিবে বলো ?
নতুন ভাবি চলো তুমি , আমি আর অনু আপু সহ অন্য সব মেয়েদের কে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকছে তোমার শ্বাশুড়ি মা।
আচ্ছা ঠিক আছে জুঁই আমি আর তুমি আপুকে নিয়ে যাই চলো।
(জুঁই হলো তুর্যর বোন।)
ঠিক আছে অনু আপু।
অনু আর জুঁই মিলে তনু কে ডেকরোশনের ওখানে নিয়ে যায়। খাবার টেবিলে বসিয়ে দিয়ে জুঁই চলে যায় অন্যদের ডাকার জন্য।
কীরে অনু আমাকে বসিয়ে দিয়ে তুই দাড়িয়ে আছিস কেন?বোস আমার সাথে।
অনু মুচকি হেসে তনুর পাশে বসে পড়লো।
কিছুক্ষণ পর সবাই এসে খাবার টেবিলে বসে পড়লো।
মাহির ছাদ থেকে নেমে তনুদের খাবার টেবিলের একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে তাদের দিকে তাকিয়ে।
তুর্য মাহির কে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে এগিয়ে গেল।
কিরে ভাই মন খারাপ নাকি?এই ভাবে দাড়িয়ে আছিস যে?
এমনি।
আয় আয় তোর বউ শালি সবাই বসে গেছে খাওয়ার জন্য তুই এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি?চল
তুর্য মাহিরের হাত টেনে ধরে তনুদের খাবার টেবিলের সামনে নিয়ে গেলো।
মাহির কে দেখে তনু মুচকি হাসলো।
আর অনু মাহির কে দেখে ও না দেখার ভান করে হাত দিয়ে ভাত নাড়তে লাগলো।
মাহির নিজেকে স্বাভাবিক করে তনুর উদ্দেশ্যে বলল
লেগ পিসটা দিবো?
আমি লেগ পিস খাই না।অনু কে দেন।
মাহির অনুর প্লেটে লেগ পিস টা দিতে গেলে অনু চোখ গরম করে শান্ত কন্ঠে বলে যার তার হাতের দেওয়া জিনিস আমি খাই না।
যার তার বললি কেন অনু? উনি তোর দুলাভাই হয়।
আসলে তনু আমি আমার একটা মাত্র শালির আবদার পূরণ করতে পারেনি বলে এই কথা বলছে।
কী আবদার?
আর বইলো না ও আমার কাছে আইস্ক্রিম খেতে চাই ছিল কিন্তু আমি তো ব্যাস্ত ছিলাম তাই এনে দিতে পারিনি আর আমার শালিটা রাগ করেছে।
কতো সুন্দর গুছিয়ে মিথ্যা বলতে জানে হাহ।
মনে মনে বললো অনু।
.
ভাই একটা জি এফ খুঁজে দে না।
তুর্য এই বিয়েতে অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে কোনো একজন কে পটিয়ে নে।
আরে ভাই জিয়াদ সুন্দর মেয়ে দিয়ে কী করবো রুপ ধুয়ে পানি খাবো নাকি?
তাহলে কেমন মেয়ে চাই তোর?
আমার একটা মন ভাঙ্গা মানুষ চাই।যাকে প্রচন্ড ভালোবাসতে শিখিয়ে কেউ ছেড়ে গেছে।যে সত্যি বুঝে ভালোবাসার মানে।সে নিজে ঠকে বুঝে গিয়েছে কাউকে ঠকালে কতো টা কষ্ট হয়। আমার তাই মন ভাঙ্গা একজন মানুষ চাই।
চলবে,,,, 🍁