তার শহরের মায়া😍,part_1+2

তার শহরের মায়া😍,part_1+2
writer_Liza_moni
part_1

বড় আপুর বরের সাজে যখন নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখেছিলাম পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছিল যেন। অবাক হয়েছিলাম ভীষণ।যার সাথে ৩টা বছরের সম্পর্ক সেই মানুষটি কিনা আমার নিজের বড় আপুর স্বামী হতে যাচ্ছে? কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। গতকাল রাতে ও তো মাহিরের সাথে আমার কথা হয়েছিল। সে তো বলেনি যে আজ ওর বিয়ে।

ভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী আমি। পড়ালেখার খাতিরে ঢাকায় যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই হঠাৎ একদিন পরিচয় হয় মাহিরের সাথে।আস্তে আস্তে ভালো লাগা আর তারপর ভালোবাসা।সব সময় ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেই পছন্দ করতাম আমি। কিন্তু মাহির কে কেনো জানি খুব ভালো লাগতো।

আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রিফার জন্মদিনে তাদের বাড়িতে গেলে মাহির আমার পিছু নেয়।রিফার খালাতো ভাই হয় মাহির। প্রতিদিন আমার পিছু নেওয়া, আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করলে তাদের পানিশমেন্ট দেওয়া, প্রতিদিন আমার মেসে আমার রুমের দরজার সামনে ১গুচ্ছ কাঠ গোলাপ রেখে যাওয়া, আমার ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখাই তার প্রতি আমার ভালো লাগার সৃষ্টি করেছিল। তারপর শুরু হলো মেসেঞ্জারে চ্যাট করা।১ঘন্টা,২ঘন্টা করে করে সারা রাত চ্যাট করার অভ্যাস গড়ে উঠা।যত সময় যাচ্ছিল আমি তার শহরের মায়ায় পড়ে যাচ্ছিলাম। একটা সময় সে আমাকে প্রোপজ করে বসলো। আমি ততদিনে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।তাই তার প্রোপজাল আমি গ্রহন করে ফেলি। আমাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে আমি আর মাহির ছিলাম বেস্ট কাপল। আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো প্রচুর। তবে একজন আরেকজন কে ভীষণ ভালোবাসতাম। দুজন দুজনের প্রতি বিশ্বাসটা ছিল খুব। চোখ বুজে আমি মাহির কে বিশ্বাস করতে পারতাম।২ বছর আগে মাহির পড়াশোনা শেষ করে এখন একটা ভালো কোম্পানিতে চাকরি করে।

সে যতই ব্যাস্ত থাকতো না কেন আমাকে সময় দিতে কখনোই ভুলতো না সে। কথা ছিল আমি পরীক্ষা টা দিলেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে আমাদের বাড়িতে।

ভাগ্যের কী পরিহাস। বিয়ের প্রস্তাব আমাদের বাড়িতে ঠিকই পাঠানো হয়েছে তবে সেটা আমার বড় আপুর জন্য।
আমার সেই ভালোবাসার মানুষটি আজ আমায় ঠকালো?

আপুর বিয়ের খবর শুনেছি চার দিন আগে। হঠাৎ করেই নাকি বিয়েটা চার দিন আগে ঠিক করা হয়েছে। আপুর বর ঢাকার তাও জানতাম আমি। আমার খাগড়াছড়িতে আসার কথা ছিল তিন দিন আগেই। তবে আমার পরীক্ষা থাকায় আসতে পারিনি। গতকাল রাতেই পারি জমিয়েছি খাগড়াছড়ির পথে।বড় আপুর বিয়ে নিয়ে খুব আনন্দে ছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে আমার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে এক অসহ্য যন্ত্রণায়।

.
কীরে অনু? এখানেই দাঁড়িয়ে থেকে দুলাভাই কে দেখে যাবি নাকি তনু কে রুম থেকে নিয়ে আসবি?যা মা তনু কে নিয়ে এসে তোর দুলাভাই এর পাশে বসা।

মায়ের কথায় ভাবনায় ছেদ পড়ল অনুর। চোখ তার লাল হয়ে আছে। চোখে পানি চিকচিক করছে। চাইলেই এখন সবার সামনে কাঁদতে পারবে না অনু।

চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই মায়ের আড়ালে চোখের পানি মুছে নিল অনু। মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
এখুনি যাচ্ছি আম্মু।

বুকের বাঁ পাশে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে অনুর। চোখ শুধু ভিজে যাচ্ছে।
তনুর রুমে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে যায় অনু।তার পা সায় দিচ্ছে না এগিয়ে যেতে।তনু বউ সেজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসছে।তনু কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে এই বিয়েতে কতো খুশি।
আয়নায় অনুকে দরজার সামনে দেখে পেছনে ফিরে তাকায় তনু। মুচকি হেসে বোনের দিকে এগিয়ে যায়।অনু ও মুচকি হেসে বোন কে জড়িয়ে ধরলো।

তুই অনেক লাকি রে আপু। মাহির ভাইয়া তোকে অনেক হ্যাপি রাখবে দেখিস।
.
হুম জানি রে অনু।মাহিরের মতো ছেলে আজ কাল পাওয়াই যায় না। ভীষণ ভালো ছেলে।
.
তোরা দুই বোন কী এই ভাবেই কথা বলে যাবি নাকি তনু কে নিয়ে স্টেজে যাবি? কাজী সাহেব ঐ দিকে তারা দিচ্ছেন।আর তোরা এখনো বসে আছিস?(মামি)

অনু বোন কে ছেড়ে দিয়ে থুতনি তে হাত দিয়ে মুখ উঁচু করে তুলে বললো মাশাআল্লাহ।
আমার আপুনি কে অনেক সুন্দর লাগছে।অনু তনুর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বললো চল আমার দুলাভাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে তো।

অনু তনু কে আমরা নিয়ে যাচ্ছি।বরের জন্য যে মালাটা রাখা আছে ফ্রিজে তুই সেটা নিয়ে আয়।

মুচকি হেসে অনু মালাটা নেওয়ার জন্য চলে গেল।
মামিরা তনু কে মাহিরের কাছে নিয়ে গেলো।

অনু ফ্রিজ থেকে রজনীগন্ধা ফুলের মালা টা বের করে মালাটার দিকে তাকিয়ে রইলো।তার মন বিষাদে ভরে গেছে।মালাটা নিয়ে অনু স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল। মাহির এখন ও অনুকে দেখেনি।সে তার বন্ধুদের সাথে হাসতেছে।

মামিরা তনু কে নিয়ে গিয়ে মাহিরের পাশে বসিয়ে দিল। মাহির তনুর দিকে এক নজর তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সাথে তনু ও।

দূর থেকেই সব দেখছে অনু। বুকের মাঝে কী যে এক না পাওয়ার যন্ত্রনায় খাঁ খাঁ করছে তা শুধু অনুই জানে।

আজ তোর কি হয়েছে বল তো অনু?সব কাজ এতো ধিরে ধিরে করছিস কেন?

পেছন ফিরে তাকিয়ে মাকে দেখে জোর করে হাসলো অনু। তারপর মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো
আজ তো আপু চলে যাবে তাই কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।

অনুর মা অনুর গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেলেন।মেয়ে হয়ে জন্মালে সবাই কেই একদিন পরের বাড়ীতে যেতে হয়।
যা মা তোর দুলাভাই কে মালাটা পরিয়ে দিয়ে আয়। একমাত্র শালি বলে কথা যা।

অনু মালাটা নিয়ে স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়। মাহির তখন নিচু হয়ে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে ছিল।

অনু কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকলো
দু-লা-ভা-ই

মাহির মুচকি হেসে মাথা তুলে অনুর দিকে তাকাতেই থমকে যায়।তার মুখের হাসিটা উধাও হয়ে যায়।বিষ্মিত কন্ঠে বলে উঠলো
অনু তুমি এখানে?

অনুর চোখের জল বাঁধ মানছে না।অনু মাহির কে কিছু না বলে মালাটা কোনো রকম গলায় পড়িয়ে দিয়ে ছুটে তার রুমে চলে গেল।
মাহির স্তব্দ হয়ে বসে রইলো।
বোনের এমন রিয়েকশনে ভ্রু কুঁচকে গেল তনুর।
সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে অনুর কিছু একটা হয়েছে।

রুমে এসে অনু দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে গেল। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে।

কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর সময় তনু মাকে বলে
অনু যদি আমার এই বিশেষ মুহূর্তে রুমে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে তাহলে আমি এই বিয়ে করবো না।

তনুর কথায় বাবা অনুর রুমে গেলেন অনুকে ডাকতে। দরজায় টোকা পড়তেই অনু চোখ মুছে নিল।

অনু মা দরজা খোল।
বোনের বিয়ের দিন এই ভাবে দরজা বন্ধ করে রাখলে মানুষে কী ভাববে বলতো?

বাবার গলার আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দিল অনু। কোনো রকম হাসার চেষ্টা করে বললো আপু তো আজ চলে যাবে তাই কষ্ট হচ্ছে।

কষ্ট কি তোর একার হচ্ছে মা ? আমাদের ও তো ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।

অনু বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
কাঁদিস না মা।এটাই দুনিয়ার নিয়ম।তনু কী বলেছে জানিস?

কী বলেছে?

তুই যদি ওর এই বিশেষ মুহূর্তে ওর পাশে না থাকিস তাহলে ও কবুল বলবে না। এখন চল তো আমার সাথে।

বাবা অনুকে নিয়ে তনুর কাছে গেলো।

মাহির অনুর দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা যে খুব কান্না করেছে তা ভালোই বুঝতে পারছে মাহির।

অনু মাহিরের দিকে না তাকিয়ে তনু কে জড়িয়ে ধরে বললো
আজকের দিনেও তুই জেদ ধরে বসে আছিস আপু?

তো কি করবো? তুই আমার সাথে না থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে বসে ছিলি কেন?

আমার বোনটা আজ অন্যের বাড়িতে চলে যাবে তাই কষ্ট হচ্ছে।

তোর তো খুব খুশি হবার কথা অনু।

আমি কি স্বার্থপর নাকি?

আমার বোন অনেক ভালো।

কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিলেন।নীতুর মনে হচ্ছে এই সব কিছু স্বপ্ন। খারাপ স্বপ্ন খুব খারাপ।এখনই ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর প্রতিদিন কার মতো দরজার সামনে এক গুচ্ছ কাঠ গোলাপ ফুল পাবে।যা মাহির রেখে যেতো।

তনু কবুল বলার সময় অনুর হাত খামচে ধরে।অনু মুচকি হেসে বোনের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো কোনো ভয় নেই আপু।

মাহির যখন কবুল বলবে তখন অনু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল মাহিরের দিকে।কী করে পারলো একটা মানুষ এই ভাবে বেইমানি করতে?
মাহির অনুর দিকে এক নজর তাকিয়ে তিন বার কবুল বলে দিলো।
সবাই এক সাথে বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ।
তার পর রেজিস্ট্রেশন ও হয়ে গেলো তাদের।

অনু শুধু স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কিছু হজম করে নিলো। তনুর বিদায় এর সময় সবাই কান্না করলেও তখন কেন জানি অনুর চোখে পানি ছিল না।মাহিরের মা অনেক করে বলেছেন তনুর সাথে অনুকে যেতে।সবার জোড়া জুড়িতে অনু গিয়ে তনুর পাশে বসলো।আর তনুর পাশেই মাহির মুখ মলিন করে বসে আছে।

মাহিরের ফুফুর বাড়ি খাগড়াছড়িতে।তাই মাহির আর তনুর বিয়ের সব আয়োজন এখানেই হয়।ঢাকায় যাওয়া সম্ভব না বলে তনু কে ফুফুর বাড়িতে নিয়ে যায় তারা।

রাত ১০টার দিকে পৌঁছায় মাহিররা।তনু কে মাহিরের সব বোনেরা ঘিরে রেখেছে। মাহির মাথার পাগড়ি টা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রেখে বাহিরে চলে যায়। দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় বসে একটার পর একটা সিগারেট শেষ করতে থাকে।
অনু কে সে ও সত্যি অনেক ভালোবাসে। কিন্তু এই বিয়েটা না করে তার উপায় ছিল না।সে জানতো না যে তনু অনুর বড় বোন।

এক কোনায় দাঁড়িয়ে অনু তনুর দিকে তাকিয়ে আছে।আজ এই জায়গায় তার থাকার কথা ছিল।অথচ সেই জায়গায় আজ তার বড় বোন।

মাহিরের ফুফাতো ভাই বোন মিলে বাসর ঘর সাজাচ্ছে। একটা মেয়ে এসে অনুর হাত ঝাঁকুনি দিয়ে বললো
চলো আপু তোমার বোনের জন্য বাসর ঘর সাজাবে।কয় জনের ভাগ্যে জুটে বলো তো?

অনু কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মেয়েটা অনুর হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে গেল।
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা তো কম পরেনি তার পর ও কি এদের একটু ও মায়া হচ্ছে না?

রজনীগন্ধা ফুল,লাল গোলাপ দিয়ে সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস করে সাজানো হয়েছে রুমটা। এই রুমে দাড়িয়ে থাকতে অনুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।
ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।এর চেয়ে বুঝি মরন ভালো?

চলবে,,,, 🍁

তার_শহরের_মায়া 😍
পার্ট_২
writer_Liza_moni

আমাদের ঘর সাজানো শেষ।অনেক তো রাত হয়েছে।১২টা বাজে। এই বার তো নতুন ভাবিকে রুমে নিয়ে আসতে হবে।

হুম ঠিক বলেছিস জুঁই।
অনু আপু একটু যাও না তোমার বোনকে নিয়ে আসো।

অনু জোর পূর্বক হেসে বলল যাচ্ছি।

অনু তনুর কাছে গেল। বড়রা সবাই তনু কে ঘিরে রেখেছে। তনুর মুখে হাসির ঝিলিক বয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বড়দের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে তনু।

অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। জীবনটা এত বে রঙিন ছবির মতো লাগছে বলে বোঝানো যাবে না।কী যে কষ্ট নিজের প্রিয় মানুষটাকে অন্যের হতে দেখা।যে দেখেছে সেই বুঝবে এই কষ্ট।

অনু মুচকি হেসে বোনের পাশে গিয়ে বসলো।মাহিরের আম্মু অনুকে দেখে মুচকি হেসে বললো তনুর মতোই অনু দেখতে খুব মিষ্টি।

আন্টি সবাই বললো আপুকে এখন দুলাভাই এর রুমে নিয়ে যেতে। অনেক রাত হয়ে গেছে।

সেকি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। মাথায় ছিল না একদম।তনু অনেক ক্লান্ত হয়ে গেছে।যাও যাও ওকে রুমে নিয়ে যাও।

অনু বোনের হাত ধরে বসা থেকে উঠতে সাহায্য করলো।
এতো ভারী লেহেঙ্গা, গয়না পরে তনুর অবস্থা নাজেহাল।

অনু তনু কে রুমে নিয়ে গেল।মাহিরের সব কাজিনরা তনু কে ঘিরে ধরলো। বিয়েতে মাহিরের সব কাজিন কে দেখলে ও রিফা কে কোথাও দেখতে পেল না অনু।

শুনো ভাবী আজকের রাতটা কিন্তু অন্য সব রাতের থেকে আলাদা।সব মেয়েই এই রাতের জন্য অপেক্ষা করে।

তনু মুচকি হেসে সবার দিকে তাকালো।অনুর দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো এদের এখান থেকে নিয়ে যেতে,ড্রেস চেঞ্জ করবে অনেক গরম।

বোনের ইশারা বুঝতে পেরে অনু সবার উদ্দেশ্যে বলল আপুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে আমরা চলে যাই। অনেক রাত হয়ে গেছে।

অনু সহ তিন জন মেয়ে মিলে তনু কে বসিয়ে দিয়ে চলে গেল।সবাই এক এক করে চলে যেতে লাগল।অনু আসার সময় রুমটার দিকে এক পলক তাকালো। বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

১২টা ৪৫ এর দিকে মাহির রুমে গেলো। ড্রইং রুমের দেওয়ালের এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল অনু। মাহির কে দেখে চোখ ভিজে ওঠে তার।অনু ছুটে ছাদে চলে গেলো। আকাশে আজ থালার মত চাঁদ দেখা যাচ্ছে। আকাশ আজ তারায় ভরা।

অনু ছাদের এক কোনায় রেলিং এর সাথে ঘেঁষে দাঁড়ালো। সারাদিনে সবার জন্য মন খুলে কাঁদতে পারিনি সে। একাকিত্ব এখন তাকে গ্রাস করেছে। ভীষণ একা লাগছে তার।

ইচ্ছে করছে সব লন্ডভন্ড করে দিতে। মাহির কেমনে পারলো আমার সাথে এমন করতে? আমি তো ওরে সত্যি ভালোবেসেছি। নিজের চাইতে ও বেশি বিশ্বাস আমি ওরে করতাম।আর সেই মাহির আমাকে এতোটা ঠকালো? আমি কী করে ওরে সারা জীবন আমার বোনের সাথে দেখবো? আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মাহির তোরে তো আমি সত্যিই ভালোবাসি রে। কতো স্বপ্ন দেখিয়েছিলি এই রাত নিয়ে। একটা সুন্দর সংসার নিয়ে। বিয়ে নিয়ে।আজ তুই কেমনে পারলি আমাকে এতো কষ্ট দিতে? তোর আকাশে আজ সাত রঙের রং ধনু। আমার আকাশে কেন মেঘ জমালি? কেন মিথ্যা আশা দিলি? আমি মরে যাচ্ছি মাহির, আমি মরে যাচ্ছি। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বুকের মাঝে।কলিজা টা ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার মাহির।ইয়া আল্লাহ কী করবো আমি?
ছাদে বসে পড়লো অনু। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আমার সব কিছু উলোট পালোট হয়ে গেছে।কেন করলা আমার সাথে এমন মাহির? কেন?
😭😭😭😭😭😭😭
.
মাহির রুমে ঢুকে তনু কে দেখলো বিছানায় বসে আছে। মাহির কে দেখে তনুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করেছে। মাহির তনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো এই গরমের মধ্যে এতো ভারী জিনিস পরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে না?

হুম একটু তো হচ্ছেই।

মাহির তনুর পাশে গিয়ে বসে তনুর এক হাত তার হাতে নিয়ে ঠোঁট দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দিল।

যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।বলেই মাহির উঠে বেলকনিতে চলে গেল।

তনু লাজুক হেসে বিছানা থেকে নেমে লাগিস থেকে একটা লাল রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল।

মাহির বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।অনুর সাথে প্রতারণা করতে তার ও ভালো লাগে নি। শুধু একটা চ্যালেন্জ , একটা বাজির জন্য সে একটা মেয়ের কাছে সারা জীবনের জন্য অপরাধী।
তনু কে মাহির ৫ বছর আগে নদীর পাড়ে দেখেছিলো।
মনের মাঝে সেদিনই জায়গা করে নিয়েছে তনু।

রিফার জন্মদিনে কাজিন দের সাথে বাজি ধরে অনুর পিছু নেয় মাহির। মাহির জানতো না অনু যে তনুর বোন। ওদের চেহারায় এতো টা ও মিল নেই।অনু যখন মাহির কে পাত্তা দিতে শুরু করে তখন থেকেই মাহির তার ইমোশন নিয়ে খেলতে শুরু করে।
রিফার কাজ থেকে অনুর সব পছন্দের জিনিস সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয় মাহির।

সে দিন,,,
রিফার জন্মদিনে অন্য সব মেয়েদের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দর মেয়েটি ছিল অনু।

রিফার বেস্ট ফ্রেন্ড টাকে দেখছোস মাহির? কোনো ছেলেকে সহজে পাত্তা দেয় না।

তাই নাকি রিফাত?
আমি যদি পটাতে পারি?

তাহলে তোর সেই নদীর পাড়ে দেখা মানুষটিকে খুঁজে বের করে দিবো।

সত্যি?

হুম সত্যি।

ওকে বাজি ধরলাম আমি যদি অনুর মন জয় করতে পারি তাহলে আমার সেই মানুষটি কে খুঁজে বের করে দিবি।

ঠিক আছে।

সেদিন থেকেই মাহির পিছু নেয় অনুর।আর অনু বোকার মতো ভুল মানুষকে ভালোবেসে ফেলে।
.
অনু কান্না করতে করতে চোখ লাল হয়ে গেছে।মাথা ও ব্যথা করছে প্রচুর।

মাহির বেলকনি থেকে রুমে এসে দেখে তনু চোখে কাজল দিচ্ছে। মাহির তনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওয়াস রুমে চলে গেল।
অনু চোখে কাজল দিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। আকাশে এতো সুন্দর চাঁদ দেখে খুশিতে মন ভরে গেল তনুর। নতুন জীবনে যেন আজ চাঁদ তারা তাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

মাহির ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে বেলকনিতে গিয়ে দেখে তনু আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

মাহির তনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।এক হাত তনুর পেটে রাখতেই তনু কেঁপে উঠে।

কী করছেন ছাড়ুন।

ছাড়ার জন্য তো ধরিনি।
তনুর চুলে মুখ ডুবায় মাহির। ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে গভীর ভাবে ছুঁয়ে দেয়। তনু কেঁপে উঠে। মাহির যেন নেশায় পড়ে যায়। তনুর নেশায়। মাহির তনু কে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়।ডুব দেয় তারা তাদের ভালোবাসার সাগরে।অনুর কথা এখন আর মাহিরের মন মস্তিষ্কে নেই।

.
অনুর চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে গাল বেয়ে। বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
মাহির এখন অন্য কারো হয়ে গেছে। ভাবতেই পারছে না সে। কতো সুন্দর নিখুঁত অভিনয় ছিল তার।যারা কথা দেয় তারা সবাই কথা রাখে না। ওষুধের অতিরিক্ত ডোজ যেমন মৃত্যু ঘটায় ঠিক তেমনি কাউকে অতিরিক্ত ভালোবাসলে মৃত্যুর কাঠ গড়ায় এনে দাঁড় করায়।
আচ্ছা আত্মহত্যা কেন নিষিদ্ধ?এই যে আমার মতো জ্যান্ত লাশ গুলো কে কেনো কারো চোখে পড়ছে না? আমি তো তখনই মরে গেছি যখন আপুর বরের সাজে মাহির কে দেখেছি।

আমার মাহির আজ আমার আপুর জীবনটাকে হাজারো রঙে রঙিন করে দিচ্ছে। ছুঁয়ে দিচ্ছে সেই
হাত দিয়ে যেই হাত আমাকে জড়িয়ে ধরে রাখবে বলে ছিল সারা জীবন।

আচ্ছা ও কি কখনো আমাকে একটু ও ভালোবাসেনি? কেন তার শহরের মায়ায় আমাকে জড়ালো কেন?এই মায়া যে বিষাক্ত। আমার ভালো থাকাটা কেরে নিয়ে ও কী সত্যিই ভালো থাকবে?

ইয়া আল্লাহ আমার বোনকে তুমি কষ্ট দিও না। আমার বোনের সাথে যেন আমার মতো কিছু না হয়। আমার বোনটাকে তুমি সুখে রেখো আল্লাহ।
.
সকালে তনুর চুলের পানিতে ঘুম ভাঙ্গে মাহিরের।
তনুর শাড়ির আঁচলটা টান দিয়ে মাহির তনুকে নিজের বুকের উপরে ফেলে দেয়। তনুর মুখে ফুঁ দিলে তনু কেঁপে উঠে। আলতো হাতে মাহির তনুর মুখের সামানের চুল গুলো কানে গুজে দিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলল
Thank you so much bou…
এতো মিষ্টি একটা সকাল উপহার দেয়ার জন্য।

তনু লাজুক হেসে উঠতে গেলে মাহির তার কোমর আরো জোরে টান দিয়ে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।

প্লিজ ছাড়ুন। উঠে গোসল করে আসেন। একটু পরেই বউ ভাতের আয়োজন করা হবে।

আরেকটু থাকো না এই ভাবে প্লিজ।

না এখন আপনার কোনো কথাই শুনবো না আমি। একটু পরেই পার্লারের মেয়েরা এসে সাজার জন্য ডাক দিবে।

এই পার্লারের মেয়ে গুলার চাকরি খেয়ে নিবো আমি।

মাহিরের কথায় হাসতে হাসতে শেষ তনু।

.
আরে বেয়াইন সাহেবা আপনি এতো সকালে ছাদে কী করেন?

কথা টা শুনে অনু পেছন ফিরে তাকায়।নীল পাঞ্জাবী গায়ে চাপ দাঁড়িওয়ালা এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। দাঁত ব্রাশ করতে করতে ছেলেটি এগিয়ে আসলো অনুর দিকে।

অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে থমকে যায় ছেলেটা।
চোখ গুলো বেশ ফুলে আছে অনুর।লাল ও হয়ে আছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সারা রাতজেগে ছিল এবং প্রচুর পরিমাণে কান্না করেছে।

ছেলেটা বিষ্মিত কন্ঠে বললো
আপনি সারা রাত জেগে কান্না করেছেন কেন?

ছেলেদেরকে দেখলেই এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে অনুর।
অনু ঝাঁজালো গলায় বলে উঠলো

আপনাকে এত কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই আমি। আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা
করবেন।
অনু ছাদ থেকে গটগট করে নিচে নেমে আসে।

.
এই যা কী এমন বললাম যে এই ভাবে রেগে গেলো? ছেলেটা দাঁত ব্রাশ করতে করতে সে ও নিচে নেমে আসলো। মেয়েদের মন বোঝা এতো সহজ না যে সেটা আজ আরও একবার জানলাম।

চলবে,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here