তপ্ত ভালোবাসা #লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া #পর্বঃ_০১

🍂
উঁম, উঁম, উঁম, শব্দের জান বের হয়ে যাচ্ছে আমার। তারপরও কোনো রকম ছাড় পাচ্ছি না আমি। কারণ অতিশয় বিদঘুটে পরিস্থিতি শিকার হয়ে আছি বড় ভাইয়ের বসের সাথে? ভাবা যায়? না আমিতো ভাবতে পারছি না। কি এক অবস্থা উফফ! আমি লোকটা থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটপট করছি দু’হাতে এলোপাতাড়ি ধাক্কা দিয়ে। কিন্তু লোকটা শক্তি সামর্থ্যের সাথে পেরে উঠছি না। লোকটা বাহুর বল মনে হয় একটু বেশিই। তার জন্য লোকটার একটা হাত আমার কোমড় চেপে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার সামনে। আর আমি তার দুই বাহুর বন্ধনে আঁটকে। আসলে তার সাথে আমার কি শত্রুতামি তা জানি না কিন্তু আমার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি হতে খানিকটা নিস্তের হয়ে আসতে লোকটা একটু এগিয়ে আসল। আমাকে তার প্রশস্ত বুকে জড়িয়ে নিতেই হঠাৎ যেন তার ধ্যান ভাংলো। আমাকে ছিটকে তার থেকে ধাক্কা দিতেই আমি উপুড় হয়ে পরি সিঁড়ি কৌঠায়। আমাকে নিচে ফেলেও তার শান্তি হয়নি বরং রাগান্বিত দৃষ্টিতে আমাকে দেখে নিজের ঠোঁট বামহাতে মুছে হনহন করে চলে যায় সেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে। আর আমি
লোকটার ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ব্যথা কুঁচকে উঠতে সাথে সাথে ঘুম থেকে ধড় ফুরিয়ে উঠে বসি বিছানায়। বাপরে কি সাংঘাতিক স্বপ্ন দেখালাম! তাও ভাইয়ের বসকে নিয়ে? ছিঃ! স্বপ্ন যেমন তেমন ছিল কিন্তু সেই স্বপ্নে লোকটা আমাকে কিস করলো বিষয়টি ভাবতেই হাত পা শীতল হয়ে আসলো আমার। ছিঃ কি জঘন্য স্বপ্ন? বেটা যদি শুনতে পারে যে আমি রাত বিরাতে তাকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখে ঘুরে বেড়ায় তাহলে সে নির্ঘাত আমার জেলে পুরে দিবে বিনা বাক্য বয়ে। সাথে এটাও বলে দিবে আমাকে দানা পানি না দিয়ে মারতে। এক কথা আমাকে জেলে রেখে না খাইয়ে শুকিয়ে মারার ধান্দা করবে এই লোক! আমি কি বুঝি না নাকি? সব বুঝি আমি হুহ! আমাকে শুকিয়ে মারতে চাই বজ্জাত লোকটা। তাই যতো কিছুই হোক না কেন উনাকে জানতে দেওয়া যাবে না আমার এই বাজে স্বপ্নটা কথাটা। নয়তো আমাকে শুকিয়ে মরার থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। সবে অল্প বয়স আমার এই বয়সে আমার এখনো দুনিয়া দেখা বাকি। আমি এতো তাড়াতাড়ি মরতেও চাই না। তাছাড়া এখন নিচের খারাপ লাগছে এই ভেবে কি করে পারলাম এমন একটা স্বপ্ন দেখতে তাও এমন একটা মানুষকে নিয়ে যার মধ্যে বিন্দুমাত্র ম্যানার্স নেই। মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না। আমার তো স্বপ্নের কথা ভাবতেই হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্না করতে ইচ্ছা করছে।

.

আমার ভাবনার মাঝেই কয়টা বাজে দেখার জন্য ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে আলো অন করতেই চোখে পরে ফোনের স্ক্রিনে বড় বড় করে লেখা, ২ঃ৪৫ মিনিট। তার মানে এখন গভীর রাত, আর আম্মু বলে গভীর রাতে স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। তারমানে এই স্বপ্নটা সত্যি হওয়ার চার্স আছে। আর যদি এই স্বপ্নটা সত্যি হয় তাহলে আমিতো বাঁচতে বাঁচতে ইন্না-লিল্লাহি পড়তে হবে যেকোনো সময় কথা ছাড়ায়।

.

বাহির থেকে এখনো চিৎকার চেচামেচি শব্দ এখান পযন্ত আসছে। হয়তো সবাই এখনো স্টেজে বসে আড্ডায় মেতে আছে। অবশ্য আমিও ছিলাম সবার সাথে কিন্তু ভাইয়া আমাকে জোর করেই রুমে পাঠিয়ে দেয় তাই বাধ্য হয়ে রেগেমেগে শাড়ি পড়েই বিছানায় এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে পরেছিলাম তখন। তাই এখন ভাইয়ে বস আছে কিনা চলে গেছেন তাও বলতে পারছি না কিছু৷ আমার এত এত চিন্তা ভাবনায় পিছনে ফেলে আবারও বেড়িয়ে পড়লাম সবার উদ্দেশ্য, যেহেতু কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলাম তায় সবার সাথে আড্ডা দিব বলে ঠিক করলাম। আচ্ছা যেতে যেতে পরিচয়টা আগে দিয়ে নেয়,,,

.

আমি রিক্তা ইসলাম মায়া। এবার অর্নাস ফাস্ট ইয়ারে পড়ি! আর যাকে নিয়ে এই ভয়ানক স্বপ্নটা দেখলাম সে হলো আমার বড় ভাইয়ের বস্ আব্রহাম রিদ খান! একজন বিজনেস ম্যান মানুষ। তবে উনার রাগটা একটু নাকের ডগায়! যা বলে তাই হতে হবে। তার উপর কোনো রকম কথা চলে না কারও। বলতে গেলে ঘাড় ত্যাড়া মানুষ। সাথে একরুখা পদবিটাও যুক্ত করতে পারেন। সাথে লোকটা একটু সুন্দর টুন্দর আছে। আসলে একটু না অনেকটায় সুন্দর আছে। আমি প্রথম দেখায় মনে মনে এটাই ভেবেছিলাম ছেলে মানুষ কি এতোটা সুন্দর হয় বুঝি? আসলে লোকটার উপর ক্রাশ খেয়েছিলাম। তবে লোকটা স্বভাবে খুব গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। অকারণে সারা দিনে পাঁচটা কথাও বলে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে সবার। কথা বলতে চায় কম। আর আমি মাশাল্লাহ! কথা ছাড়া বাঁচা অসম্ভব। কাজের কথা হোক বা অকাজের জবান চলতে হবে নয়তো আমার পেটের ভাত সহজে হজম হবে না। আপাতত এখন এতটুকুই থাক! বাকিটা না-হয় পরে জেনে নিবেন।
.

আচ্ছা যায় হোক! রিদ খানকে আমি তেমন একটা চিনি না বা এর আগে উনার সাথে আমার কখনো কথা হয়েছে এমন কিছুও না। আসলে আমি রিদ খানকে মাত্র কাল সন্ধ্যায় দেখলাম তাও আমার বড় ভাই মানে আরিফ ভাইয়ার হলুদ সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে। আরিফ ভাইয়ার বিয়ে আজ, তাই সে সুবাদে ভাইয়ের বসকেও ইনভার্ট করা হয়েছিল আমাদের পরিবার থেকে। রিদ খান সম্পর্কে যতটুকু আমি শুনেছি সবটাই আমার ভাইয়া কাছ থেকে জানা। আরিফ ভাইয়া সবসময় রিদ খান সম্পর্কে বলে বেড়ায় বাড়িতে। এজন্য মূলত রিদ খানকে দেখার প্রবল আগ্রহ ছিল আমার মনে মধ্যে যেটা কাল পূরণ হলো সরাসরি রিদ খানকে দেখে। কাল আরিফ ভাইয়া হলুদ সন্ধ্যার এসেছিল রিদ খান। আর আমার সাথে দেখা হয়েছিল হলুদের স্টেজের সামনে। তিনি অন্তত গম্ভীর মুখ একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ। উনার পিছনে চার পাঁচ জনের মতো বডিগার্ডও দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তাদের দেখেই বুঝেছিলাম। তাছাড়া আরিফ ভাইয়া সবসময় বলতো রিদ খান বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করে সেইফটির জন্য। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারি না এই লোকের কেন সেইফটির প্রয়োজন হয়? এই লোক তো এমনই মানুষের সাথে কথা বলে না বোবা সেজে থাকে। তাহলে বোবা মানুষের কি শত্রুর থাকে নাকি?

.
এইতো কাল সন্ধ্যা কথা! আমি সবার সাথে হলুদের ঢালা সাজিয়ে সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠলাম। চারপাশে এক পলক চোখ বুলিয়ে পরিবেশটা বুঝে নিলাম। গায়ে আমার হলুদের শাড়ি পরা ছিল। মুখে ছিল হালকা উপর একটু ভারী মেকাপ। সবমিলিয়ে ঠিক ঠাক ছিলাম আমি। একহাতে ছাড়া শাড়ির আঁচলটা ধরে অন্য হাত ফুলের থালা নিয়ে রেখেছিলাম। দুহাতই ব্যস্ত ছিল শাড়ি আর ফুলের থালা সামলাতে। আমি সবার সাথে লাইন বেঁধে স্টেজের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে ফুলের থালাটা স্টেজ রেখে পাশ ফিরতেই চোখে পড়ল রিদ খানকে। উনি আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল পলকহীন ভাবে। আমি তাকাতেই চোখাচোখি হলো দুজনার। আমার হঠাৎ তাকানোতে উনি তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। আর আমি,,,? হা হা হা বোকা রানী উনার দিকে সরাসরি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলদম চোখ বড় বড় করে। আসলে অনেকটা থতমত খেয়ে গিয়েছিলাম উনাকে প্রথম দেখে এজন্য সেই মূহুর্তে উনাকে ছাড়া বাকি কিছুই চোখে পড়ছিল না আমার। শুধু মনে হয়েছিল সেই মূহুর্তে উনাকে দেখা ছাড়া আমার আর কোনো বিশেষ কাজ হতে পারে না। তাই নিজের মনে করে দেখছিলাম উনাকে আমি। আমার জীবনে প্রথম ক্রাশ নামক বাঁশটি তখনি উদয় হয় রিদ খানকে দেখে।
.

আমার এমন করে তাকানোতে উনি বেশ বিরক্তি হচ্ছিল তা উনার ফেস দেখেই বুঝতে পারছিলাম আমি,, তারপরও আমার কোনো ভাবান্তর হল না তখন। আসলে তখন কেমন যেন তব্দা খেয়ে গিয়েছিলাম এজন্য উনার দিকে সরাসরি তাকানোটা আমার মাথায় কাজ করছিল না। আমার সরাসরি তাকানোতে উনি বেশ বিরক্ত হয়ে উনার বডিগার্ডেকে উদ্দেশ্য করে আমাকে বলে উঠে,,,

.
—” ম্যানার্স শিখিসনি আসিফ? এভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে ননসেন্স! চোখ নামা! আর আমার সামনে থেকে বিদেয় হ! এখানে যদি আমার সামনে আর একটা মূহুর্তও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি? তাহলে আই সয়ার! আমি তোকে জোস বানিয়ে খাব, ইউথ আউট সুগার।

.
কথা গুলো বলেই আমাকে আড়চোখে একবার দেখে নিলেন। উনার বডিগার্ড আসিফ উনার কথায় কিছু বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে ছিল উনার মুখে দিকে। আর আমি! আমাকে কে পায় উনার সামনে? ভৌ দৌড়ে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিলাম তখনই। হবোই না কেন? কি সাংঘাতিক ব্যাপার একটু তাকাতেই আমাকে জোস বানিয়ে খেতে চাই, তাও চিনি ছাড়া! ভাবা যায়? লোকটা কতোটা ভয়ানক উফফ! রিদ খানের সম্মুখ থেকে পালিয়ে এসেই মনে মনে শপথ করেছিলাম উনার সামনে আর যাবো না বলে। কিন্তুু আমার এই শপথটা আমিই দীর্ঘ স্হায়ী করতে পারিনি কারণ যতবার আমি ছাদে উঠেছি ততোবার বেহায়া চোখ শুধু উনাকেই দেখেছিল তখন। তবে উনি একটিবারের জন্যও আমার দিকে তাকান নি। শুধু যে আমি একা রিদ খানকে গিলে খাচ্ছিলাম তা কিন্তুু মোটেও নয়, বিয়ে বাড়ির সব মেয়েরাই উনাকে চোখে গিলে খাওয়া টাইপ ছিল। আমার সব কাজিনরা রীতিমতো উনার নামের মালা ঝপতে শুরু করে দেয় ততক্ষণে। এতে করে অবশ্য আমার কোনো রকম নেগেটিভ রিয়াকশন ছিল না। সুন্দর মানুষ নিয়ে আলোচনা হবে এটাই স্বাভাবিক। হোক সে মেয়ে বা ছেলে। একটু প্রসংশা তো থাকবেই তাদের সুন্দরের। উনার ক্ষেত্রেও তাই ছিল।

.

হৈ হুল্লোড় গান বাজনার সাথে আরিফ ভাইয়া হলুদ ছুঁয়া শুরু হয় ১২ঃ০০ দিকে। সবাই একে একে আরিফ ভাইকে হলুদ লাগাতে শুরু করে দেয়। আমিও সবার দলে ছিলাম। তবে স্টেজের একপাশে বসে হাসি মুখে কার্জিন সাথে আরিফ ভাইয়া হলুদ পর্ব দেখছিলাম। বাড়ির বড়রা লাগাচ্ছিল। আমার অমনোযোগীর মধ্যে হঠাৎ করেই আমার পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পরল আমার চাচাতো ভাই জিসান৷ বয়সে আরিফ ভাইয়ের সমান হলেও আমার সাথে জিসান ভাই খাতির জমাতে চাই শুরু থেকে। কিন্তুু আমার কেন জানি জিসান ভাইয়ার অতি আধিক্যেতা কোনো কালেই পছন্দ হয় না একদম। তাই বরাবরই তাকে এরিয়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু এই মূহুর্তে সবার আড্ডা ছেড়ে উঠতে চায় না বলে বসে রইলাম জায়গায়। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তিনি এনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছুই বলছেন জিসান ভাইয়া আমাকে। আমিও না পেরে একটু আধটু অমনোযোগী হয়ে উনার সেসব কথা গুলো শুনছিলাম। তবে জিসান ভাই, বড় ভাই হওয়া সুবাদে হাসি মুখে কথার উত্তরও দিচ্ছলাম মাঝে মধ্যে। জিসান ভাইয়ে সাথে কথা বলতে বলতে একটা সময়
স্টেজের দিকে তাকাতেই আমার হাসি মুখটা চুপসে যায় তৎক্ষনাৎ। কারণ আরিফ ভাইয়ে বস্ মানে রিদ খান, আমার দিকেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ছিল। তার দৃষ্টিতে না রাগ, আর না ভালোবাসা প্রকাশ পাচ্ছিল। আমি উনার অদ্ভুত দৃষ্টির মানে বুঝতে পারিনি তখনো। এজন্য আমিও খানিকটা ইতস্তত বোধ করে বারবার তাকাচ্ছিলাম উনার দৃষ্টির দিকে। এজন্য বারবার চোখাচোখি হচ্ছিল উনার অনল দৃষ্টি সাথে আমার। আমাদের দুজনের দৃষ্টি বদলের মাঝেই কেউ একজন আলতু ছুয়ে দেয় আমার গাল, নরম হাতের ছুয়ায় আমি তৎক্ষনাৎ চমকে উঠে নিচে তাকাতেই চোখে পড়ল পাঁচ বছরের ছোট একটি ছেলেকে। ছেলেটি আমার খুব আদুরে। আমার বড় আপুর একমাত্র ছেলে মাহাদি সরকার। ওহ আমার গাল ছুঁয়ে আদুরে গলায় মামুনি, মামুনি, ডাকছে বারবার। আমি মাহাদীকে দেখে তৎক্ষনাৎ দু’হাতে ঝাপটে কোলে তুলে নিলা। আদুরে সহিত ওর এ গালে ঐ গালে পরপর করে জিগাসা করলাম, কি হয়েছে? ওহ তৎক্ষনাৎ এক আঙ্গুল তুলে ইশারা করে আরিফ ভাইয়াকে দেখায় আমাকে ডাকছে বলে।

.
আমি মাহাদীকে জিসান ভাইয়ার কাছে রেখে আরিফ ভাইয়ার উদ্দেশ্য স্টেজের দিকে এগিয়ে গেলাম। আরিফ ভাইয়ার পাশে দাড়াতেই ভাইয়া আমাকে দেখে ঝটপট তাড়া দিয়ে বলে উঠে,,,,

—” মায়া আমাকে তাড়াতাড়ি হলুদ ছুয়ে নিচে চলে যাত। তোর ছাদে থাকার দরকার নেই। আয় তাড়াতাড়ি আয়! হলুদ লাগাবি।

.
ভাইয়া কথায় আবাক হলাম আমি। আমার ভাইয়ে হলুদের আমাকে থাকতে মানা করছে আমারই নিজের ভাই। এটা আমার কাছে বেশ অপমান জনক মনে হলো। তাই রাগান্বিত আমি অতিরিক্ত অপমানের ঘোরে রাগে মুখে কিছুই বলতে পারলাম না আরিফ ভাইকে। এজন্য চেতে গাল ফুলিয়ে রাগে হনহন করে চলে আসি আরিফ ভাইকে হলুদ না লাগিয়েই নিজের রুমে। রাগের দুঃখের কান্না চলে আসার উপক্রম হতেই বালিশে মুখ গুজে জেদ ধরে বিছানায় পরে থাকতে থাকতে কখন যে এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর মনে নেই। আমার ঘুরের রেশ গভীর হতেই তখনই রিদ খানকে নিয়ে বাজে স্বপ্নটা দেখেছিলাম আমি। অবশ্য এতে আমারও দোষ ছিল কারণ রিদ খানকে দেখার পর থেকে সারাক্ষণ শুধু উনাকে ভেবে সময় পার করেছি বলে এজন্য রাতেও উনাকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখা আমার।

.
বর্তমান
ঘুমের রেশ কাটিয়ে বাহিরে বের হলাম। আমার আশেপাশের কাউকে দেখতে না পেয়ে এলোমেলো চুল আর শাড়ি নিয়েই ছুটলাম ছাদের দিকে। বেশ রাত হওয়ায় মনে করেছিলাম হয়তো আরিফ ভাইয়ার হলুদের অনুষ্ঠান শেষ। আমার কার্জিনরা হয়তো সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে এই ভেবে এগোচ্ছিলাম ছাদের দিকে। কিন্তু ছাদে সিড়ি কাছে আসতে মুখোমুখি হয় রিদ খানের সাথে। হয়তো উনিও বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাচ্ছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে উনার সাথে আমার মুখোমুখি হতেই আমি খানিকটা পাথর মুর্তির নেয় ঠায় জায়গায় দাঁড়িয়ে গেলাম নড়াচড়া বিহীন। উনার কুঁচকানো শক্ত দৃষ্টি ছিল আমার ঘুম জড়ানো চোখ মুখের দিকে। আমি ভীতু চোখে উনাকে দেখে, আমাদের আশেপাশে তাকায় স্বপ্নের কথা ভেবে। কিন্তু আমাকে সবচেয়ে বেশি যেটা আবাক আর ভয়ার্ত করেছিল সেটা হলো আমার স্বপ্নে দেখা জায়গায়টা আর আমাদের বাস্তবে দাঁড়িয়ে থাকা জায়গায় একই ছিল। আমি সেইম জায়গায় দাঁড়িয়ে ভয়ার্ত মুখে উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমার ঠিক সামনে সিঁড়ি কৌঠায় উনি কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই এগিয়ে আসতে লাগলো আমার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে। আমি উনার এমন আগানো দেখে ভয়ে নিজের দুহাতে তৎক্ষনাৎ ঠোঁট চেপে ধরি শক্ত করে যাতে উনি আমাকে কোনো রকম কিস করতে না পারে এজন্য। আসলে আমি স্বপ্নের কথা চিন্তা করে ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম এজন্য বুঝতে পারছিলাম না যে আমার একান্ত স্বপ্নের কথা উনার কান অবধি এখনো পৌছায়নি। আমার অস্থির ভয়ার্ত দৃষ্টি ভঙ্গি দেখে থেমে যায় রিদ খানের চরণ। খানিকটা সময় আমাকে উনি কপাল কুঁচকে দেখে আবারও এগিয়ে আসতে চাইল। তাঁর ধীর হাটা দেখে ভয়ে কলিজা শুকিয়ে উঠল আমার। তাই আর এক মূহুর্তেও দাঁড়ায়নি উনার(রিদ) সামনে ভয়ে তক্ষুনি দুহাতে ঠোঁট চেপে উল্টো ঘুরে দৌড়ে পালিয়েছিলাম নিজের রুমে। আমার এমন কাজে হয়তো উনি ব্যাভাচ্যাকা খেয়েছে, এটা আমি না দেখেই বুঝতে পারি। খেলে খাক! আমার কি? আমি বাঁচলেই হলো বাকি সব গোল্লায় যাক।
আসলে একটা কথা আছে না?

“চাচা আপন জান বাঁচ! এই মূহুর্তে আমার দশাও সেইম হয়েছে। অবাস্তবিক কাল্পনিক রিদ খানের কিস থেকে বাঁচা জন্য আমার এতো অস্থিরতা।

.

#তপ্ত ভালোবাসা
#লিখিকাঃ_রিক্তা ইসলাম মায়া
#পর্বঃ_০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here