টুয়েন্টি_মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১) পর্ব-১৮,১৯তম ও শেষ পর্ব

#টুয়েন্টি_মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১)
পর্ব-১৮,১৯তম ও শেষ পর্ব
লেখা: ShoheL Rana শামী
১৮

পঞ্চাশের মনন্তর সম্পর্কে ইতিহাসে যা লেখা আছে, তার চেয়ে বাস্তব জগতটা যে কতটা ভয়াবহ তা পদেপদে অবলোকন করে যাচ্ছে রিহান। এইতো আজ সকালেও কিছু লোককে ময়লা-আবর্জনার স্তুপে কুকুরের সাথে ভাগাভাগি করে খেতে দেখা গেছে। কুকুরগুলোও খেতে না পেয়ে হিংস্র হয়ে গেছে। তাই তাদের খাবারে কেউ ভাগ বসাতে গেলেই হিংস্র দাঁত বের করে তেড়ে যায়। অভুক্ত লোকগুলোও হার মানতে নারাজ। পেটের ক্ষুধার সাথে লড়াই করার চেয়ে কুকুরের সাথে লড়া অনেক সহজ। দুপক্ষের লড়াইয়ে বিজয়ীরাই খেতে পারবে ময়লার স্তুপের সেই খাবার।

হঠাৎ করে বাজারেও চাল, গম জাতীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে গেছে আকাশ সমান। বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা এসব দ্রব্য মজুদ করে রাখে, তারপর ধীরে ধীরে বাজারে ছেড়ে চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেয়।

গবাদি পশুগুলোর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। পথে পথে মরে পড়ে থাকে এসব অবুঝ পশুগুলো। চারণভূমিগুলো শূন্য। গবাদি পশুরা সারাক্ষণ খুঁজেও চারণভূমিতে কোনো ঘাস পায় না। অনেকে জমিতে ধান, গম চাষ করেছে। তবে সাইক্লোন আর ঝড়ে সব ভেসে গেছে। যারা পূর্বে একটু সতর্ক হয়েছিল, তারা অল্প কিছু ধান, গম পেয়েছে। সাইক্লোন-ঝড় থেকে তাদের ফসল রক্ষা পেলেও, রক্ষা পায়নি ব্রাউন স্পট নামক রোগ থেকে, যা প্রায় সব ফসল নষ্ট করে ফেলে।

এই ভূখণ্ডে যখন খাদ্যের এমন অবস্থা, সেই মুহূর্তে সরকার ব্রিটিশ ভারত থেকে ফসল সংগ্রহ করতে শুরু করে। কারণ, সরকার আশঙ্কা করছে জাপানি সেনারা ভারতে আক্রমণ করতে পারে। তাই সরকারি লোকেরা অল্প দাম দিয়ে সব ফসল নিয়ে যায় ব্রিটেনে। বাংলার তখন অবস্থা শোচনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এমনিতেই ফসল তেমন উৎপাদন হয়নি। তার উপর যা আছে তা কম দামে ব্রিটেনে নিয়ে গেছে সরকার।

চারপাশে চলতে লাগলো লাশের মিছিল। মানুষ, গবাদিপশু যেন প্রতিযোগিতা করে মরতে লাগলো। যে ঘটনাটা সবচেয়ে বেশি আজ রিহানকে ভাবাচ্ছে, তা হলো আজ দুপুরেই একই পরিবারের দশজন সদস্য একসাথে আত্মহত্যা করেছে খাবার না পেয়ে, ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে। এভাবে ক্ষুধা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়াটাই হয়তো তারা ভালো মনে করেছে।

প্রতিদিন জমিদার বাড়িতে অভুক্ত লোকগুলো এসে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু, তাদেরকে আর কত দেয়া যায়? এভাবে দিতে থাকলে নিজেদেরকেই একসময় খাদ্যের অভাবে ভুগতে হবে। একদিন সবাইকে ডেকে সুফিয়ার চাচা বখতিয়ার উদ্দিন বিশাল এক ভাষণ দিলেন। তিনি ভাষণে বললেন, ‘ভাইয়েরা, আমরা প্রতিদিন লড়াই করছি ক্ষুধার সাথে। কিন্তু আমাদের এই ক্ষুধা মেটানোর দায়িত্ব কার? সরকারের উচিত দুর্ভিক্ষে আমাদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু সরকার কী করছে? তারা আমাদের জন্য খাবার পাঠাচ্ছে না। উলটো আমাদের খাবারগুলো তারা নিয়ে গেছে। এই ভক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হোক। ভারতে যে ব্রিটিশ উৎখাতের আন্দোলন চলছে তাকে সমর্থন করুন। রাজপথে নামবেন তো আপনারা?’

অভুক্ত জনতা চিৎকার করে উঠলো, ‘রাজপথে আছি আমরা।’ ব্রিটিশদের কথা শুনে হঠাৎ গায়ে আগুন ধরে গেল জনতার। সকল শক্তি যেন ফিরে পেল তারা দুর্বল গায়ে।

বখতিয়ার উদ্দিন তখন স্লোগান ধরলেন, ‘ইংরেজদের হায়েনা, ভারত ছেড়ে পালিয়ে যা।’

জনতা তখন স্লোগানটি সমস্বরে উচ্চারিত করে নেমে পড়লো রাজপথে। তাদের নেতৃত্ব দিলেন বখতিয়ার উদ্দিন। তাদের মিছিলে যোগ দিলো রিহানও।

একটা ব্রিটিশ সেনার গাড়ি এসে রুখলো মিছিলটাকে। ইংরেজিতে একজন গর্জন করে বললো, ‘হোয়াট দ্য ফাক আ(র) ইউ ডুয়িং হেয়া(র)?’

সবার পক্ষে বখতিয়ার উদ্দিন ইংরেজিতেই জবাব দিলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকার চাই। বাংলার মানুষ অনাহারে মরছে, তা দেখে আপনাদের সরকার আরও মজা লুটছে। আমরা আর মৃত্যুর ভয় করি না। প্রতিদিনই আমরা মৃত্যু দেখি। মৃত্যুর সাথেই আমাদের বসবাস।’

ব্রিটিশ সেনাটা জবাব দিলো, ‘সরকারও এই মুহূর্তে অপারগ। দেখুন, যুদ্ধের কারণে বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা খারাপ। তাই এই মুহূর্তে সরকার খাবার পাঠাতে পারছেন না। আর জার্মান-জাপানদের সাথে আমাদের যেসব যোদ্ধারা যুদ্ধ করছে, তাদের অনেক খাবারের প্রয়োজন।’

‘আপনাদের ব্রিটেনে তো দুর্ভিক্ষ হয়নি। দুর্ভিক্ষ হয়েছে আমাদের এই বাংলায়। আমাদের বাংলার মানুষ মরছে, তাই কষ্টটাও আমাদের।’ বলেই বখতিয়ার উদ্দিন আবারও স্লোগান ধরলেন। তাঁর সাথে গলা মিলালো উত্তেজিত জনতা। ব্রিটিশ সেনারা তখন গুলি ছুড়লে, বেশ কয়েকজন জনতা বুক পেতে লুপে নেয় সেই গুলি। রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রাজপথ। বখতিয়ার উদ্দিন সামনের ব্রিটিশ সেনাকে ধাক্কা দিয়ে আহত একজনকে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘শামছু, শামছু, চোখ খোল ভাই। কিচ্ছু হবে না।’ তারপর বাকিদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এই, আহত সবাইকে ধরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো।’

যে সেনাটাকে বখতিয়ার উদ্দিন ধাক্কা দিয়েছিলেন, সে এসে এবার লাথি মারলো তাঁকে। তা দেখে রিহানের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল। ব্রিটিশ সেনার বন্দুকটা কেড়ে নিয়ে ‘ঠা রা রা’ করে গুলি চালালো কয়েক রাউন্ড। সাতজন ছিল ওরা ব্রিটিশ সেনা। ছয়জন গাড়ি থেকে নেমেছিল। চালকের সিটে একজন বসা ছিল। সঙ্গীদের মরতে দেখে সে পালিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে।

নিজেদের আহত লোকগুলোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তিনজন ইতোমধ্যে মারা গেছে। ব্রিটিশ ছয়জনও ছটফট করতে করতে মারা গেছে। বখতিয়ার উদ্দিন রিহানের কাঁধে হাত রাখলেন। আফসোস করে বললেন, ‘এ তুমি কী করলে রিহান? ওরা তো এখন আবার আসবে। এবার প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। তোমার উচিত হয়নি এভাবে মাথা গরম করার।’

রিহান জবাব দিলো, ‘আপনার মতো সম্মানিত একজনকে ওরা লাথি মেরেছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে তো চেয়ে থাকতে পারি না।’

‘কিন্তু একটা নতুন বিপদ ডেকে আনলে। তুমি কিছুদিন পালিয়ে থাকো।’

‘আপনি যা বলেন, তাই হবে। তবে সুফিয়ার সাথে একবার দেখা করতে চাই আমি।’

জমিদার সলিমুদ্দিনও পরামর্শ দিলেন রিহানকে পালিয়ে যেতে। পুরো ঘটনাটা শুনে সুফিয়া তো কেঁদে একাকার। তাকে কক্ষে ডেকে নিয়ে রিহান বলে, ‘এভাবে কেঁদো না, তোমার স্বামী ব্রিটিশ মেরেছে। ব্রিটিশ মারলে তো খুশি হওয়ার কথা।’

‘সেজন্য আমি কাঁদছি না। আপনাকে যে আমি সবসময় কাছে পাবো না, তাই আমি কাঁদছি। ধ্বংস হোক ব্রিটিশ হায়েনা।’

‘আমি গোপনে আসবো তোমার সাথে দেখা করতে।’

‘কিন্তু, একা আপনি কোথায় থাকবেন? তাছাড়া আপনি এই যুগেরও কেউ না। অনেক কষ্ট হবে আপনার। ব্রিটিশদের হাতে পড়ে গেলে আমার আর আমার সন্তানের কী হবে?’

‘ভেবো না, ব্রিটিশরা কিছুই করতে পারবে না আমার। আমার সন্তানের মুখ না দেখে আমি মরবো না।’ আলতো করে সুফিয়ার পেটে হাত বুলিয়ে দিলো রিহান। সুফিয়ার কানে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, ‘লাথি মারে তো পেটের ভেতরে?’

চোখের জল মুছে উপর-নিচ মাথা দুলায় সুফিয়া। রিহান তার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে অশ্রু মুছে দিলো। দূর থেকে ব্রিটিশদের গাড়ির সাইরেন শোনা গেল। রিহান সুফিয়ার কাছে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।

জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করলো কয়েকটা ব্রিটিশ সেনার গাড়ি। আগের সেই গাড়িটাও এসেছে, যেটা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল একজন। সে-ই নিয়ে এসেছে সবাইকে। তারা এসে রিহানের খোঁজ করলো। পুরো বাড়ি তল্লাশি করলো। কিন্তু পেল না। শেষে একজন ব্রিটিশ সেনা সুফিয়াকে দেখে ডাকলো। সুফিয়া তাকে দেখে ভয়ে চমকে উঠলো। এ কী করে সম্ভব? এই লোকটাকে তো রিহান নিজ হাতে মেরে ফেলেছিল ওইদিন ক্যাম্প থেকে পালানোর সময়? লোকটা বেঁচে গেল কী করে?

সুফিয়া ভয়ে ভয়ে কাছে এলে ব্রিটিশ সেনাটা তাকে ধরে টেনে নিয়ে গেল ঘর থেকে বের করে। জমিদার সলিমুদ্দিন তখন গর্জে উঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনারা ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ও কী করেছে?’

ব্রিটিশ সেনা তাঁর বাংলা কথা না বুঝলেও আন্দাজ করে জবাব দিলেন ইংরেজিতে, ‘এই মেয়েটা আমার জমজ ভাইকে খুন করে পালিয়ে এসেছে। সেদিন ক্যাম্পে আমি দেখেছিলাম এই মেয়েটাকে আমার ভাই কারাকক্ষ থেকে বের করে একটা নতুন ভবনের দিকে নিয়ে গেছিল। পরে ওখানে আমার ভাইয়ের লাশ পাওয়া যায়, এই মেয়েটাকে পাওয়া যায়নি।’ বলেই গাড়িতে তুলে নিলো সুফিয়াকে।

বৃদ্ধ সলিমুদ্দিন উত্তেজিত হয়ে ইংরেজিতে বললেন, ‘ও খুন করেনি। ওকে ছেড়ে দাও তোমরা। আমাকে নিয়ে যাও ওর বদলে।’

উনার কথা কানে না তুলে সুফিয়াকে নিয়ে চললো ওরা সাথে। সুফিয়া ‘দাদা, দাদা’ বলে পেছনে ফিরে চিৎকার করতে লাগলো চলন্ত গাড়িতে। আড়াল থেকেই সব লুকিয়ে দেখে রিহান। এবার সে নিজেকে আড়াল করে রাখতে পারলো না। সুফিয়াকে নিয়ে যেতে দেখে পিছুপিছু সেও দৌড়ে সুফিয়ার নাম ধরে। ব্রিটিশদের গাড়ি তখন থামে। রিহান পালিয়ে গেল না, ভয় পাচ্ছে না সে আর। তার সব ভয় সুফিয়াকে ঘিরে। সুফিয়ার কিছু হলে সে সহ্য করতে পারবে না। গাড়ি থেকে আগের ব্রিটিশ সেনাটা নামলো, যে সুফিয়াকে চিহ্নিত করেছে। চালকের সিটে বসা ব্রিটিশটার নজর রিহানের উপর পড়লে, সে চিৎকার করে উঠে, ‘দিস ইজ দ্যাট গাই।’

রিহানকে বন্দুকের বাট দিয়ে কয়েকটা আঘাত করা হলো জোরে। তার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হতে লাগলো। সুফিয়া কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘ওকে ছেড়ে দাও।’

রিহানকে মেরে দুর্বল করে ফেললে গাড়িতে তুলে বসালো সুফিয়ার পাশে। সুফিয়া কান্নার বেগ বাড়িয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে রিহানের সারা মুখ মুছে দিলো। ঠোঁটের রক্ত লেগে তার সাদা শাড়িটা রক্তলাল হয়ে ওঠলো। অভিমান করে সে প্রশ্ন করলো, ‘কেন এলে ওদের সামনে? কে আসতে বলেছে?’

রিহান জোর করে হেসে বললো, ‘তোমাকে একা ওদের সাথে পাঠাবো ভাবছো না-কি?’

‘পুনরায় যদি আমাদেরকে ওই ক্যাম্পে নিয়ে যায়, তবে কী হবে জানো?’

‘তাহলে আমরা তিনজন মারা যাবো। আমি, তুমি আর আমাদের অনাগত সন্তান।’ অসহায় শুনালো রিহানের কণ্ঠ।

[[চলবে…]]

#টুয়েন্টি_মিনিটস (চ্যাপ্টার-০১)
১৯তম ও শেষ পর্ব
লেখক: ShoheL Rana শামী

কথায় আছে, ‘বিপদ একা আসে না।’ রিহানদেরও যেন তাই হলো। ওদের যখন ব্রিটিশরা নিয়ে যাচ্ছিল, তখন কোথা থেকে যেন জাপানি সেনারা এসে আক্রমণ করে। গ্রেনেড ছুড়ে ব্রিটিশদের গাড়ির দিকে। গাড়ি থেমে গেল। মুহূর্তেই একটা দাবদাহ অবস্থা। চোখের সামনেই আগুন লেগে গেল সামনের কয়েকটা গাড়িতে। রিহান সুফিয়াকে কোলে নিয়ে ঝাঁপ দিলো। সুফিয়ার পেটের বাচ্চার যাতে ক্ষতি না হয়, তাই সবটা আঘাত নিজেই নিলো। ইটের রাস্তায় লেগে তার হাতের কনুই কেটে থেঁতলে গেছে। সেদিকে পরোয়া না করে সে সুফিয়ার হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো। একসাথে অনেকগুলো গুলির শব্দ হলো। সুফিয়া ভয়ে চিৎকার করে কান চেপে ধরলো। গুলিগুলো তাদের দিকে করা হয়নি। ব্রিটিশদের যারা পালাচ্ছে, তাদেরকেই করেছে। একটা বাসগাড়ি আসতে দেখা গেল। গাড়িটাকে দেখেই রিহান চিনতে পেরেছে। এই সেই বাসগাড়ি, যেটাতে উঠে সে ঘুমিয়ে পড়েছিল, তারপর ২০১৭ সাল থেকে ১৯৪২ সালে এসে পৌঁছেছে। বাসগাড়িটা এসে থামলো যেখানে ব্রিটিশদের গাড়িগুলো জ্বলছিল, তার কিছুটা দূরে। রিহান সুফিয়াকে নিয়ে উঠে পড়লো ওই গাড়িতে। কিন্তু, কে জানতো গাড়িটা আগেই দখল করে রেখেছে জাপানি সেনারা। বেশ কয়েকজন যাত্রীকে ওরা বন্দুক তাক করে রেখেছে। রিহান এবং সুফিয়াকেও সিটে বসতে বললো। ভয়ে ভয়ে বসলো ওরা। একটা বন্দুক তাক করা হলো তাদের দিকে। যারা একটু আগে ব্রিটিশদের গ্রেনেড ছুড়েছিল, তাদের কয়েকজন উঠে এলো বাসে। জাপানি ভাষায় কী যেন বললো। তারপর মেয়ে যারা বন্দী আছে, তাদেরকে ছেড়ে দিলো। সুফিয়া রিহানকে ছেড়ে যেতে নারাজ। তাই শক্ত করে রিহানের হাত ধরে থাকলো। কিন্তু জাপানিরা তাকে ধরে নামিয়ে দিলো গাড়ি থেকে। আচরণে বুঝিয়ে দিলো, তারা মেয়েদের চায় না বন্দী হিসেবে।

গাড়িতে যেসব বন্দী ছিল, সবাইকে সিটের সাথে রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হলো, যাতে পালাতে না পারে। রশি দিয়ে বাঁধার পর বন্দুক সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এবার কিছু জার্মান সেনা উঠলো গাড়িতে। জাপানি সেনাদের সাথে ইংরেজিতে আলোচনা করলো বন্দীদের কী করা যায়। তারপর সিদ্ধান্ত নিলো, পাশের একটা বনে তারা ঘাঁটি গাড়বে আজ। তাদের কাছে গোপন সংবাদ আছে, এই রাস্তা দিয়ে ব্রিটিশদের আরও একটা বহর যাবে মধ্যরাতে। বহরটাকেও শেষ করে তারা বন্দীদের নিয়ে যাবে থাইল্যান্ডে। ওখানে ডেথ রেলওয়ের কাজে লাগাবে এদের।

আঁধার নেমেছে। ব্রিটিশদের গাড়িগুলো তখনও জ্বলছিল। ওগুলোকে পাশ কাটিয়ে বাসগাড়িটাকে একটা বুনোপথে সরিয়ে আনলো একজন জার্মান। নিজেদের সবগাড়িগুলো সাইড করলো। তারপর আগুন জ্বালিয়ে তাবু গাড়লো ওখানে। ইতোমধ্যে ব্রিটিশদের একটা বহর শেষ করতে পেরে উৎসব উৎসব ভাব বিরাজ করছে তাদের মাঝে। কয়েকজন শিকার করতে গিয়েছিল বনের আরও গভীরে। তারা দুটো হরিণ শিকার করে এনেছে। হরিণ দুটোকে আগুনে পুড়িয়ে ভোজন করতে লাগলো এবার সবাই মিলে।

বাইরে প্রচুর ঠান্ডা। বাসে যেসব বন্দীরা আটকে ছিল, সবাই কাঁপছে শীতে। সামনেই আগুন জ্বালিয়ে জার্মান-জাপানি সেনারা এই ঠান্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করছে। আগুনের তাপ বাস পর্যন্ত আসছে না। একজন মধ্যবয়স্ক বন্দী ঠান্ডায় কাশতে লাগলো ঘনঘন। চোখ-মুখ দিয়ে তার পানি বের হচ্ছে কাশতে কাশতে। বেচারা হাত দিয়ে একটু মুছতেও পারছে না হাত দুটো বাঁধা বলে। তার কষ্ট দেখে আরেকজন বন্দী বন্দুকধারীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে ইংরেজিতে বললো, ‘একটু এদিকে আসুন। এখানে একজন শারীরিকভাবে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।’

দুজন বন্দুকধারী এগিয়ে এলো বাসে। ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে?’

লোকটা জবাব দিলো, ‘দেখুন, আমাদেরকে তো বেঁধে রেখেছেন, সমস্যা নেই। এই লোকটা খুব অসুস্থ, উনাকে দয়া করে ছেড়ে দিন।’ অসুস্থ লোকটাকে ইশারায় দেখালো। তখন একজন বন্দুকধারী জাপানি ভাষায় কী যেন বললো। সম্ভবত গালি দিয়েছে, মুখের ভঙ্গিমায় তাই মনে হলো। তারপর ওরা অসুস্থ লোকটার বাঁধন খুলে দিতে লাগলো। খুলে দেয়া শেষ হলে আগের যে লোকটা সাহায্যের জন্য ডেকেছিল, সে তাদের ধন্যবাদ দিলো। কিন্তু সেদিকে বন্দুকধারী দুজন ভ্রুক্ষেপও করলো না। ওরা অসুস্থ লোকটাকে বাস থেকে নামিয়ে আগুনের পাশে গিয়ে বসালো। প্রথম দেখায় মনে হতে পারে ওরা তার সেবা করছে, ঠান্ডা থেকে বাঁচাতে তাকে আগুনের পাশে নিয়ে গেছে। কিন্তু পরক্ষণে সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে একজন বন্দুকধারী অসুস্থ লোকটার বুকে কয়েকটা গুলি চালালো। গুলি খেয়েই লোকটা জ্বলন্ত আগুনে পড়ে গেল। তারপর শুকনো কাঠের সাথে নিজেও জ্বলতে লাগলো। জ্বলতে জ্বলতে কিছুক্ষণ আর্তনাদ বের হয়েছিল তার মুখ থেকে। পরে থেমে যায় তার আর্তনাদ, যখন সে কাঠের মতো নির্জীব হয়ে যায়।

‘আপনার কারণেই লোকটার মৃত্যু হয়েছে, তাও এত ভয়ংকরভাবে।’ মন্তব্য করলো রিহান। যে লোকটা সাহায্য চেয়েছিল তার দিকে তাকিয়ে মন্তব্যটা করেছে সে। লোকটাও অনুতপ্তবোধ করে বললো, ‘আমি কী করবো বলুন? আমি তো কেবল সাহায্য চেয়েছি সে অসুস্থ বলে।’

‘ওই সাহায্যটা না চাইলে হয়তো লোকটা এখনও আমাদের সাথে বেঁচে থাকতো।’

‘এগুলো বলে আমাকে আর অপরাধী করবেন না প্লিজ।’

বন্দুকধারী দুজন আবারও বাসে উঠে এলো। জাপানি ভাষায় কী যেন বললো। সম্ভবত আর কারও সাহায্য লাগবে কি-না জিজ্ঞেস করছে। বাসের কেউ জবাব দিলো না। হঠাৎ ওদের নজরে পড়লো বন্দীদের একজন ইতোমধ্যে তার হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছে কীভাবে যেন। সেটা নজরে পড়তেই ওরা ওকেও টেনে নিয়ে গেল আগুনের পাশে। বাসের সবার ধারণা হয়ে গেছে ওর সাথেও কী হতে পারে। কিন্তু এবার আরও ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে হলো ওদের। লোকটার হাতপায়ের সাথে রশি বেঁধে চারজন চারদিক থেকে টেনে ধরলো সেই রশি, তারপর তাকে আগুনের দুইঞ্চি উপরে চিত করে ধরে ঝলসাতে লাগলো। আগুনের উত্তাপে লোকটা গগনবিদারী চিৎকার করতে লাগলো। এতে যেন বন্দুকধারীরা আরও বেশি মজা পেতে লাগলো। তাদের বিজয়ে গান-বাজনার যে অভাবটা ছিল, সেটা যেন পূরণ হয়েছে আগুনে ঝলসানো লোকটার চিৎকারে। অনেকক্ষণ পর লোকটার আর্তনাদ থেমে গেলে তাকে আগুনে ফেলে দিয়ে ঝলসানো শরীরটাকে পুড়িয়ে ফেললো ওরা।

বাসে আরও একজন নিজের বাঁধন খোলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু একটু আগের ঘটনাটা দেখে সে একদম শান্ত হয়ে গেল। তার যেন কোনো তাড়া নেই আর। বন্দী হিসেবে সে ভালোই আছে। বন্দুকধারীরা এবার লোহার শেকল এনে সবাইকে পরিয়ে দিয়ে একটা করে বড়ো তালা ঝুলিয়ে দিলো শেকলের সাথে। পালানোর চিন্তা এখন মাথায় আনাটাই হবে বৃথা শ্রম।

পাশের হাইওয়ে থেকে কয়েকটা গাড়ি আসার শব্দ ক্রমশ বাড়তে লাগলো। ব্রিটিশদের গাড়ি হয়তো। হ্যাঁ, ব্রিটিশদেরই গাড়ি। সাইরেন ধ্বনি সেই সংকেতই দিচ্ছে। সাইরেন ধ্বনি শুনতেই সকল জাপানি-জার্মান সেনারা বন্দুক হাতে প্রস্তুত হয়ে গেল। তারপর বুনোপথ দিয়ে দৌড়াতে লাগলো হাইওয়ের দিকে। আরেকটা বিজয়ের জন্য ওরা তন্ময় হয়ে আছে। একটুপর গর্জন করে ওঠলো বেশ কয়েকটা বন্দুকের গুলি। বোমার শব্দও শোনা গেল কয়েকটা। বনের মাঝে বাসগড়িতে যেসব বন্দীরা আটকে ছিল, চোখ বন্ধ করে ফেললো ওরা। কানটা আর বন্ধ করতে পারলো না। গাড়িতে কে যেন উঠে আসার শব্দ হতেই চোখ খুললো রিহান। সুফিয়াকে দেখে চমকে উঠলো সে। চাপা স্বরে বললো, ‘সুফিয়া তুমি কী জন্য এসেছো? চলে যাও, এক্ষুনি চলে আসবে ওরা। ওদের সামনে পড়ে গেলে এবার আর রক্ষা পাবে না।’

‘আমি তোমাকে ছাড়া যাবো না।’

‘আমাকে ছাড়াই যেতে হবে তোমাকে। দেখছো না হাত-পা কীভাবে বাঁধা? চেষ্টা করলেও লোহার শেকলটা খুলে নিয়ে যেতে পারবে না।’

‘ওরা তোমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?’

‘থাইল্যান্ডে। একজনকে বলতে শুনেছি থাইল্যান্ডে নিয়ে গিয়ে আমাদের ডেথ রেলওয়েতে কাজ করতে দেবে।’

‘কিন্তু ওখান থেকে তো কেউ পালাতে পারে না। এই পর্যন্ত হয়তো একজনই পালাতে পেরেছে, আমাদের এলাকায় যে ব্রিটিশ লোকটাকে আমরা পেয়েছিলাম ওইদিন।’

‘আমি কখনও পালিয়ে আসতে না পারলে আমাদের সন্তানটাকে তোমার পরিচয়ে বড়ো কোরো। কখনও আমার পরিচয়টা তাকে জানতে দিয়ো না।’

‘ও খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীতে আসবে। ওর বাবাকে দেখতে চাইবে।’ সুফিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়াতে লাগলো।

‘বলে দিয়ো ওর বাবা মারা গেছে।’ রিহানের চোখের কোণাও ভিজে ওঠলো। বাকি বন্দীরা স্তব্ধ হয়ে দেখতে লাগলো তাদের বিদায় মুহূর্ত। ওদেরও কয়েকজনের চোখ ভিজে ওঠেছে এই আবেগি মুহূর্তে। সে সময় যে লোকটা সাহায্য চেয়েছিল, সে বলে ওঠলো, ‘আমার যদি ক্ষমতা থাকতো ভাই, আমার প্রাণের বিনিময়ে আপনাদের দুজনকে এখান থেকে মুক্ত করতাম।’

চোখে অশ্রু নিয়ে হাসলো রিহান। লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ওদের কাছে আবার সাহায্য চাইতে যাবেন না। এবার সাহায্য চাইলে আমাদের সবাইকে একসাথে আগুনে ঝলসাবে।’

‘কিন্তু আপনাদের জন্য আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’

ভারী বুটের শব্দ হলো বুনোপথে। রিহান উত্তেজিত হয়ে সুফিয়াকে বললো, ‘সুফিয়া ওরা আসছে, চলে যাও এখান থেকে।’

‘আমি যাবো না।’

‘ওরা তোমাকে পেলে কী করবে জানো? একটু আগে দুজনকে ওরা আগুনে পুড়িয়েছে।’

‘আমি আড়ালে লুকিয়ে দেখেছি সব।’

‘আমি তোমার ওরকম পরিণতি দেখতে পারবো না, প্লিজ, চলে যাও।’

‘তোমাকে আমি ওদের সাথে নিয়ে যেতে দেবো না।’

‘চলে যাও সুফিয়া, ওরা কাছে চলে এসেছে। আমাদের সন্তানের কথা ভাবো একবার।’

সুফিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লো। রিহান নরম স্বরে বললো, ‘শুধু একটাই আফসোস, সন্তানের মুখটা দেখে যেতে পারলাম না।’

সুফিয়া উঠে রিহানকে শেষ বারের মতো জড়িয়ে ধরলো কিছুক্ষণ। তারপর দৌড়ে নেমে গেল বাস থেকে। রিহানের গলা থেকে রক্ত ঝরতে লাগলো। চলে যাওয়ার আগে সুফিয়া তার গলাটা কেটে দিয়েছে। বন্দীরা হতবাক হয়ে গেল এ দৃশ্য দেখে। চিৎকার করে ওরা বললো, ‘মেয়েটাকে ধরো, মেয়েটা গলা কেটে দিয়ে পালাচ্ছে।’

রিহানের পুরো শরীরটা রক্তে ভেসে যেতে লাগলো। ছটফট করতে লাগলো সে হাত-পা বন্দী অবস্থায়। মুখ দিয়ে সে কোনো শব্দ বের করতে পারলো না। অনেক কষ্টে উচ্চারণ করলো, ‘প্লিজ, ওকে পালাতে দিন। ওর পেটে আমার সন্তানটাকে বাঁচতে দিন।’

‘কিন্তু ও আপনার গলা কেটে দিয়ে পালাচ্ছে।’

‘পি..লি..ই…জ…’ শেষ বারের মতো উচ্চারণ করলো রিহান। সুফিয়াকে বনের আড়ালে চলে যেতে দেখা গেল। চোখ বন্ধ হয়ে গেল রিহানের। তবে জ্ঞান হারায়নি তখনও। চোখ বন্ধ অবস্থায় সে শুনলো বন্দুকধারীদের বুটের শব্দ। ওরা বাসে উঠে এসেছে। চিৎকার করে ওরা জিজ্ঞেস করলো, ‘এটা কীভাবে হলো?’ তারপর উত্তরের আশা না করেই ওরা দৌড়ে নেমে গেল। হয়তো সুফিয়ার পিছু নিয়েছে। জ্ঞান হারালো রিহান। তারপর আর কিছুই মনে নেই।

‘স্যার উঠেন, স্যার… স্যার… গাড়ি আইসা গেছে। নামেন স্যার। স্যার… স্যার…’

কে যেন অনবরত ডেকে চলেছে। চোখ খুললো রিহান। চোখ কচলিয়ে এমনভাবে তাকালো যেন দীর্ঘ একটা ঘুম দিয়ে উঠেছে। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘কে তুমি? আমি এখানে কেন?’

‘স্যার, আপনের যে ঘুম, কতক্ষণ ধইরা ডাকছি, উঠার নামগন্ধ নাই।’

রিহান চমকে উঠলো। চিনতে পেরেছে সে লোকটাকে। গাড়ির হেলপার। এই গাড়িতে উঠে সে একটা বাসস্ট্যান্ডে আসতে চেয়েছিল। তারপর জ্যামে পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তবে কি সে এতক্ষণ স্বপ্নে দেখছিল? তাড়াতাড়ি ফোনটা বের করে টাইম দেখলো। চারটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট। তারিখ দেখা যাচ্ছে তিন জানুয়ারি। সাল ২০১৭। বিশ মিনিট ঘুমিয়েছে সে। বিশ মিনিটে এতকিছু স্বপ্ন দেখলো! ১৯৪২ সাল, সুফিয়ার সাথে পরিচয়, ওর সাথে বিয়ে, তারপর ওদের বাচ্চা হবে, ব্রিটিশদের অত্যাচার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সবকিছুই কি তবে স্বপ্ন ছিল? হঠাৎ কপালে হাত গেল তার। কপালে একটা কাটাদাগ। ঘুমানোর আগে এই কাটাদাগটা ছিল না। জাকারিয়া সাহেবদের বাড়িতে থাকাকালীন বিমানের একটা অংশ তার উপর পড়েছিল, এই কাটাদাগটা তখন হয়েছিল। সবকিছু যদি স্বপ্ন হয়, তবে এই দাগটা এলো কী করে? তারমানে কোনোকিছুই স্বপ্ন ছিল না। সবই বাস্তব ছিল। আর সবকিছু ঘটেছে গত বিশ মিনিটে। শেষ ঘটনাটা মনে পড়লো তার। এখন সে যে বাসগাড়িটাতে বসে আছে, এই একই বাসটাতেই তারা অনেকজন বন্দী অবস্থায় ছিল। এই সিটটাতেই তাকে জাপানি সেনারা বেঁধে রেখেছিল। তারপর জাপানিরা যখন ব্রিটিশদের আক্রমণ করতে যায়, সুফিয়া এসে তখন কান্নাকাটি করে। শেষে ওর গলাটা কেটে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল সে। এমনটা কেন করলো সে? কেন তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল? সুফিয়া ব্রিটিশদের কখনও দেখতে পারতো না, এইজন্য সে ব্রিটিশদের মারতে জাপানি সেনাদের সাথে হাত মেলায়নি তো? জাপানি সেনারা সেই সময় তাকে বন্দী না করে ছেড়ে দিয়েছিল, সন্দেহটা থেকেই যায়। আর যদি, সুফিয়া ওদের সাথে হাত না মেলায়, তখন? জাপানিরা ওর পিছু নিয়েছিল শেষবার। পালাতে পেরেছিল তো সে? না-কি ধরা পড়ে গিয়েছিল? তাদের অনাগত বাচ্চাকে বাঁচাতে পেরেছিল তো সে? আনমনে একটি নাম উচ্চারণ করলো রিহান, ‘সু..ফি..য়া…’

(সমাপ্ত)

(চ্যাপ্টার-০১ শেষ। পাঠকের মনে কোনো প্রশ্ন থেকে গেলে চ্যাপ্টার-০২তে সকল প্রশ্নের উত্তর থাকবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here