টাইম_ট্রাভেল,পর্ব-০৩ এবং শেষ

#টাইম_ট্রাভেল,পর্ব-০৩ এবং শেষ।
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।

এক অদ্ভুত দোটানায় পড়ে গেলো অভ্র।যে ভাইকে ও নিজের প্রাণের থেকেও বেশী ভালোবাসে,সে ওর স্ত্রী আর মেয়ের সাথে এতো বড়ো অন্যায় করবে।নাহ,আর যাই হোক এতো বড়ো অন্যায় সহ্য করা যায় না।নিজের ভবিষ্যতকে বাঁচাতেই হবে অভ্রকে।তাতে যদি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় সেটাই নিতে প্রস্তুত অভ্র।

—-বাবা,তুমি চাচ্চুকে চলে যেতে বলো।ওকে দেখে ভীষণ ভয় করছে আমার।

—এতো ভয় পেয়ো না মা!আমি আছি তো তোমার সাথে…..??

এরপর হঠাৎ অভ্রর ঘরের ভেতরে অনুভব ঢুকে পড়লো।ইলিয়ানাকে দেখে ফেললো কিনা এই ভয়ে চমকে উঠলো সে।কিন্তু নাহ,তখন এমন এক ঘটনা ঘটলো অভ্র আরোও বেশী অবাক হয়।অনুভব তার ভাইকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলো—-
—-কী হলো ভাইয়া, একা একা কার সাথে কথা বলছিস তুই?
—একা একা কথা বলছি মানে….?
—ওহ, তার মানে কি বলতে চাইছিস ঘরে আর কেউ আছে?কিন্তু কোথায় সে…. আমি তো দেখতে পাচ্ছি না।
অভ্র লক্ষ্য করলো ওর ভাই ওর মেয়ে ইলিয়ানার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে অথচ তাকে দেখতেই পারছে না।ব্যপারটা সত্যিই ভীষণ অদ্ভুত।তার মানে কোথাও এটা নয় তো,অনুভব ইলিয়ানাকে দেখতেই পাচ্ছে না।ইলিয়ানা যেহেতু ভবিষ্যত থেকে এসেছে, আর একমাত্র অভ্রর কাছেই এসেছে হতেই পারে সেই কারণে ওকে অভ্র ছাড়া আর কেউ দেখতে পাচ্ছে না।অভ্র ছাড়া গোটা পৃথিবীর কাছে ইলিয়ানা অদৃশ্যমান।অভ্রর মনে ইলিয়ানাকে নিয়ে যতোটুকু সন্দেহ ছিলো,সেই সন্দেহরও অবসান ঘটলো।তার মানে এটা সত্যি টাইম ট্রাভেল বলতে কিছু হয়।আর টাইম ট্রাভেলের মাধ্যমেই ওর ভবিষ্যত মেয়ে ইলিয়ানা অতীতে চলে এসেছে নিজেকে বাঁচাতে।
তানিস্কা আর অনুভব এই দুজন অভ্রর ভবিষ্যত পথের কাঁটা।তানিস্কাকে মেরে ফেললে অভ্রর ভবিষ্যত জীবনে ইলিয়ানা আসবে না।অভ্র সত্যিকার অর্থেই ইলিয়ানার বাবা হতে চায়।তানিস্কাকে মেরে ফেললে সেটা কখনোই সম্ভব নয়।তবে একটাই উপায় অবশিষ্ট থাকে আর সেটা হলো অনুভবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া।অনুভব না থাকলে তানিস্কা না ওর সাথে অবৈধ সম্পর্ক করতে পারবে,আর ইলিয়ানাকেও নিজের সম্ভ্রম হারাতে হবে না।তাহলে অনুভবকে শেষ করার অপশনটাই বেশী বেটার অভ্রর জন্য।নিজের ভাইকে খুন করতে হচ্ছে বলে অভ্রর মনে বিন্দুমাত্র অনুতাপ নেই।এমন ভাই থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।যে ভাই নিজের ভাতিজিকে ধ*র্ষ*ণ করার মানসিকতা রাখে তার মতো পশুর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।।

পরেরদিন রাতের বেলা অভ্র অনুভবকে নিয়ে বের হয়।আগে থেকেই সমস্ত প্ল্যান রেডি করে রেখেছে ও।কোথায় নিয়ে আর কিভাবে খুন করবে অনুভবকে।অনুভব বার বার প্রশ্ন করছে অভ্রকে যে ওরা কোথায় যাচ্ছে কিন্তু অভ্র ওর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না।এরপর অভ্র একটা জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে নিজের গাড়িটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো।জঙ্গলের মাঝপথে পথে গাড়িটা থামালে অভ্র।এর আগেই ও অনুভবকে কিছু ড্রিঙ্কস দিয়ে টালমাটাল করে রেখেছে,যাতে সহজেই খুন করতে পারে।অনুভবকে গাড়ি থেকে নামিয়ে টানতে টানতে রাস্তা থেকে একটু দূরে জঙ্গলের আরো ভেতরে নিয়ে যায়।তারপর পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করে অনুভবের দিকে তাক করলো।অনুভব ঘোরের ভেতরে আছে ঠিকই কিন্তু পিস্তল দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে গেলো।

—ভাইয়া এটা কি করছো তুমি?তুমি কি মেরে ফেলবে নাকি আমায়?

—আমায় মাফ করে দে ভাই,তোকে মারা ছাড়া এই মুহুর্তে কোনো উপায় নেই আমার কাছে।আমি নিরুপায়।

—কিন্তু কেনো ভাইয়া,আমি কি এমন ক্ষতি করেছি তোমার যে তুমি আমায় মারতে চাইছো?
বলো আমার সাথে কি এমন শত্রুতা তোমার?

—আমার হাতে সময় কম।তোর এতো প্রশ্নের জবাব দেবার সময় নেই আমার কাছে।যদি মৃত্যুর পরে কখনো আমাদের দুজনের দেখা হয় তখন দেখা হয় তখন জেনে নিস….

—আমায় মেরো না ভাইয়া, তোমার পায়ে পড়ি, মেরো না আমায়,

—তোকে না মারলে চলবে কিকরে আজ যে মরতেই হবে তোকে।

অভ্র গুলি করতে যাবে ঠিক তখন অনুভব এলোপাতাড়ি দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার পাশে এসে উপস্থিত হলো, ওর পেছনে অভ্র।অভ্রের দুই তিনটে গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়েছে ইতিমধ্যে।হঠাৎ ঘটনাস্থলে একটা পুলিশের গাড়ি এসে উপস্থিত হলো।অনুভব গিয়ে তাদের গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ে।ব্যস,অভ্রের খেল খতম।বোকার মতো দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় রইলো না ওর কাছে।পুলিশ অনুভবের থেকে সমস্ত ঘটনা জেনে অভ্রকে গ্রেফতার করলো।





এর একমাস পরে।নিজের ভাইকে খুন করার চেষ্টার অপরাধে আদালত অভ্রকে পাঁচ বছরের মধ্যে কারাদন্ড দিলো।এদিকে ছেলে এতো বড়ো একটা কুকীর্তি করার জন্য অভ্রর বাবা ওকে তাজ্যপূত্র করে দেন।।
তানিস্কা আর অনুভব স্যাম্পেইনের গ্লাস হাতে একটা বিছানায় শুয়ে শুয়ে টিভিতে নিউজটা দেখছিলো।ওদের দুজনের দেহই অর্ধ উ*ল*ঙ্গ।উপরে একটা পাতলা চাদর বিছিয়ে রেখেছে।অনুভব তানিস্কাকে বললো-

—তার মানে আমাদের প্ল্যান সাকসেস।আমরা যা চেয়েছিলাম তাই হয়েছে!ফাইনালি অভ্র আউট।

—একদম।আচ্ছা ঐ বাচ্চা মেয়েটা কোথায় এখন যাকে অভ্রর ভবিষ্যত মেয়ে সাজিয়ে পাঠিয়েছিলে তুমি?

—হ্যাঁ, একটা মোটা টাকা ধরিয়ে দিয়েছি ওর বাবা মায়ের হাতে।তবে যাই বলো না কেনো মেয়েটা কিন্তু অভিনয়টা জব্বর করেছে।

—সে আর বলতে। দেখে নিও ও বড়ো হয়ে অনেক বড়ো অভিনেত্রী হবে।

এরপর স্যাম্পেইনের গ্লাসদুটো মেঝেতে ফেলে দিয়ে অনুভব তানিস্কাকে আরো কাছে টেনে নেয়।দুজনের ভেতরে আর কোনো দূরত্ব রইলো না।

এভাবেই টাইম ট্রাভেলের নামে একটা মাস্টার প্ল্যান করে নিজের বড়ো ভাইকে নিজের পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে অনুভব।তানিস্কা ছিলো ওর এই মাস্টার প্লানের মূলহোতা।কারণ ও কখনো অভ্রকে ভালোই বাসেনি ভালোবেসেছিলো ওর ছোটো ভাই অনুভবকে।এখন অনুভব ওর বাবার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক।ওদের দুজনের প্ল্যান এই সম্পত্তি ওরা দুজন নির্বিঘ্নে ভোগ করবে।।
———————-
গল্প এখানেই শেষ নয়।এদিকে তানিস্কা ওর আরেক প্রেমিকের সাথে পরিকল্পনা করছে যেভাবে হোক অনুভবকে বিয়ে করে ওর সমস্ত সম্পত্তি হস্তগত করতে হবে,তারপর ওকে নিজের পথ থেকে সরিয়ে দেবে।এদিকে অনুভবের মনের চিন্তাও ভিন্ন।ও চায় তানিস্কাকে নিজের ইচ্ছেমতো ভোগ করে ছুড়ে ফেলে দিতে।বেশী বাড়াবাড়ি করলে তানিস্কাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবার জন্য প্রস্তুত অনুভব।তবে আর যাই হোক,এই দুজনের জন্য ভয়ংকর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে এটা নিশ্চিত।অন্যকে ঠকিয়ে কেউ ভালো থাকতে পারে না।লোভ মানুষকে এভাবেই ধ্বংসের দাড়প্রান্তে পৌঁছে দেয়,যা মানুষ নিজেও আঁচ করতে পারে না।।ভবিষ্যত সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করে।ভবিষ্যত পাল্টানোর ক্ষমতা কারোর নেই।অভ্র সেই চেষ্টাটাই করতে চেয়েছিলো,যার শাস্তিও ওকে ভোগ করতে হচ্ছে।একলা অন্ধকার ঘরে,কোনো চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে।যেখানে না আছে মুক্তির আনন্দ,না আছে বেঁচে থাকার অবলম্বন,কেবল হতাশা আর হতাশা।অভ্র নিজেও জানে না কবে ওর এই হতাশা থেকে মুক্তি মিলবে।।🙂💔

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here