ঝগড়া,পর্ব_৪
বিন্দু মালীনি
_বিয়েটা শুধু করে নেই,
তারপর বোঝাবো,
কত ধানে কত চাল।
আর আমি বললাম,
_সেই সুযোগ তুই পাবিনা চান্দু,
তার আগেই আমি দেখিয়ে দেবো কত গমে কত আটা।
এদিকে রণর মা কাঁদোকাঁদো হয়ে বললেন,
_তুই আমার কথা রাখবিনা বাবা?কত দিনের স্বপ্ন আমার।আমি তোকে হলুদ দিবো।
ধুমধাম করে তোকে বিয়ে করাবো।
রণ আমার দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে রাগী ভাবে বল্লো,
ঠিক আছে,তুমি যা ভালো মনে করো।
আমি তো মনে মনে এবার ঈদের মত খুশি।
আমার বাম চোখ টা টিপে রণর দিকে তাকিয়ে দিলাম একটা হাসি।
রণ রাগে ফুলতে ফুলতে ওখান থেকে চলে গেলো।
মা আমাকে ফ্রেশ হতে বললেন,
আমি ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
মা রণর বড় ভাবীকে ডেকে বললেন আমাকে তার একটা শাড়ী দিতে।
আর বললেন,আগামীকালই নতুন শাড়ী আনিয়ে দিবে রণকে দিয়ে।
ভাবী খুশি মনে তার একটা শাড়ী এনে আমাকে পরিয়ে দিলেন।
যেহেতু আমি নিজে নিজে শাড়ী পরতে পারিনা।
মা রাতের বেলা রণর সামনে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন।
তা দেখে রণ যেন আরো বেশি করে ফুলছে।
আমি ইশারায় ওকে আরো রাগাচ্ছি।
_রণ শোন,
_বলো আম্মু।
_আগামীকাল বিন্দুকে আর তোর ভাবীকে নিয়ে গিয়ে ওর পছন্দ মত কয়েকটা ড্রেস শাড়ী, আর বিয়ের জন্য সব কেনা কাটা করে আসবি।
পরশু দিনই তো তোদের হলুদ।
আমি টাকা দিয়ে দিবোনে।
যা যা পছন্দ হয় কিনে নিয়ে আসিস।
_আচ্ছা।
রাতে খাওয়াদাওয়া শেষ করে আমি ভাবীর সাথে ঘুমিয়ে পড়ি।
যেহেতু ভাইয়া বাসায় না,তাই মা আমাকে ভাবীর সাথে শুতে বলেন।
আমি রাতে ভাবীর সাথে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি।
মাঝ রাতে হঠাৎ আমি ওয়াশ রুমে যাবো,
আর দেখি পাশে ভাবী নেই।
তবে কি ভাবী ওয়াশরুমে?
নাতো ভাবীতো ওয়াশ রুমেও নেই।
হঠাৎ খেয়াল করি রুমের দরজা খোলা,
দরজার কাছে যেতেই দেখি রণ ভাবীকে বলছে,
_এবার কি রাগ টা কমানো যায়না?
আর কত ক্ষণ রাগ করে থাকবে?
ভাবী উলটো দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।
ভাবীকে দেখে বোঝা যাচ্ছে ভাবী হয়তো রেগে ওই পাশ ফিরে ঘুরে তাকিয়ে আছে।
_এত রাগ করতে হয় নাকি সোনা?
একটু ভুল ই তো করেছি।
প্লিজ মাফ করে দাও।
লক্ষীটা আমার।
আসো তোমাকে চাঁদ দেখাই,ওই দেখো কত সুন্দর চাঁদ।আরে ধুর,চাঁদ আবার অত সুন্দর হলো নাকি।
আমার কলিজা এর থেকে কত্ত সুন্দর।
লাভ ইউ এত্ত গুলা কলিজা আমার।
এই বলেই রণ ভাবীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
আর ভাবী চিৎকার দিয়ে উঠে,
সাথে রণ আর আমিও।
_ও আল্লাহ্ গো!এ কি হলো গো।
এ কি সর্বনাশ হলো আমার।
_বিন্দুউউউ,তুমি ওখানে?
তাহলে এটা কে?
(চোখ বড় বড় করে)
_আমি দেবরজি।
_ভাবী আপনি?
_আরে আমিতো শুনতে এসেছিলাম,তুমি বিন্দুকে কি কথা বলো।
আমি কি জানিতাম নাকি পরে যে জড়িয়েই ধরবে।
_বিন্দুউউউ।
_চুপ তুই আমার নাম ধরে ডাকবিনা।
আর একটা কথাও বলবিনা আমার সাথে তুই।
চাঁদ দেখা তুই ভাবীকে,আরো জড়িয়ে ধর।
ছিঃ।
এই দৃশ্য দেখার আগে আমার মরণ হলোনা কেন।
ও না,মরণ হবে কেন।
আমি কি আর তোকে ভালবাসি নাকি যে আমার কষ্ট হবে।
_বিন্দু বোন আমার,তুমি ভুল বুঝছো।
আমি কিচ্ছু বুঝতে চাইনা ভাবী।
থাকুন আপ্নারা।
_যেওনা বিন্দু শোন না কলিজা,
আমি শোবার পর কিছুতেই ঘুম আসছিলোনা আমার।
আর আকাশে দেখো কি সুন্দর চাঁদ।
তাই ভাবলাম তোমাকে নিয়ে এসে দুজন মিলে কিছু ক্ষণ গল্প করি আর চাঁদ দেখি।
তুমি না বলতে আমরা দুজন বিয়ের পর এক সাথে চাঁদ দেখবো কলিজা।
এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো।
তুমি আমাকে পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরবে ভালবাসি বলে।
তাই তো আমি তোমার কথা মত এসব করছিলাম।
যাতে তোমার রাগ টা চলে যায়।
কিন্তু জানে কে,এটা তুমি না।
এটা ভাবী।
_আরে বিন্দু বোন আমার।শোনো তো,
রাগ করোনা প্লিজ।
ও তো আমার দেবর না শুধু আমার ভাই।
তুমি ভুল বুঝোনা আমাদের।
আসলে হয়েছে কি,
একটু আগে ও তোমাকে মনে করে আমার পায়ে এসে সুড়সুড়ি দিচ্ছিলো।
পরে আমিও দুষ্টুমি করে উঠে এখানে আসি।
ও আমাকে দেখে বুঝেনি যে এটা আমি।
তুমি না।
কারণ আমিও যে তোমার মত শাড়ীই পরে আছি।
তোমার ভাইয়া একই ডিজাইনের কালার ভিন্ন দুই শাড়ী এনে দিয়েছিলো আমায়।
একটা তোমাকে দিয়েছি,একটা আমি পরেছি।
আর অন্ধকারে চেনারো উপায় নেই।
আমি তো ফান করতে চলে এসেছি।
দেখোনা অন্য দিকে ঘুরে ছিলাম।
আর ও বার বার রাগ ঝেড়ে ফেলতে বলছে।
তারমানে তুমি ওর সাথে হয়তো রাগ করে আছো আর ও তোমার রাগ ভাঙাচ্ছে।
আমাদের তো কোন রাগারাগি হয়নি রে বোন।
প্লিজ ভুল বুঝোনা।
আমি নিজেও বুঝেছিলাম এমন কিছুই হয়েছে।
কারণ আমি তো রণকে চিনি।
আর জানিও ও কেমন।
কিন্তু সব বুঝেও ওভার এক্টিং করেছি আমি।
কিন্তু ওরা তা বুঝেনি।
আর এটা ওর শাস্তি।
ও বুঝুক যে আমি ওকে ভুল বুঝেছি।
চান্সে তো ঝগড়া করে নিতে পারলাম।
উফফ কি শান্তি।
আমি চলে এলাম রুমে।
এদিকে ভাবী এসে আমাকে খুব বুঝাচ্ছে।
পরে আমি দরজা লক করে দিয়ে বললাম,
ভাবী আমি বুঝেছি সব।
কিন্তু তবুও রাগের ভান করে আছি।
রণর সাথে আমার একটু ঝগড়া তো।
তাই আরকি এই এ্যাক্টিং।
আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
_উফ বাঁচালে ভাই তুমি।
আমিতো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম বাপু।
_আরে না ভাবী।আমি রণকে চিনিতো।
আর জানিও আমার রণ কেমন।
_বেচারা তো সারা রাত চিন্তায় কাটিয়ে দিবে।
ঘুমও আসবেনা বোধয়।
_সমস্যা নেই ভাবী, দু এক রাত না ঘুমালে কিচ্ছু হয়না।
আমি কত শত রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি ওর জন্য।
_কেন?কি হয়েছিলো?
_ওসব থাক ভাবী।
চলুন ঘুমিয়ে পড়ি।
সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে রণ আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে।
আমি ওর দিকে যেন ঠিক মত তাকাচ্ছিইনা।
মা টাকা দিলেন।
আর বললেন,বিয়ের শপিং করে নিয়ে আসতে।
আমি ভাবী আর রণ শপিং করতে চলে গেলাম।
সব কিছু আমি রণর পছন্দে কিনেছি।
পারিবারিক ভাবেই অনুষ্ঠান টা হলো।
গায়ে হলুদ দিলো আমাকে সবাই।
আমার স্বপ্ন ছিলো রণ নিজে আমাকে হলুদ দিবে।
আর আমি গাদা ফুল আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজবো।
রণ আমার এই ইচ্ছে পূরণ করেছে।
এবং নিজে আমার কপাল,গালে,নাকে,থুঁতনিতে হলুদ ছুঁয়ে দিয়েছে।
আজ আমার বিয়ে।
এই দিন টার জন্য আমি দু চোখ ভরে অনেক স্বপ্ন দেখেছি।
যেই স্বপ্ন গুলো ছিলো শুধু রণকে নিয়ে।
আজ আমার সব স্বপ্ন যেন পূর্ণতা পাচ্ছে,
কিন্তু তবুও কিছু শূন্যতা যেন রয়েই যাচ্ছে।
একটু পরেই আমি লিখিত ভাবে রণর হয়ে যাবো।যাকে আমি মনে প্রাণে স্বামী মেনে এসেছি।
যাকে আমি আমার সমস্ত ভালবাসা উজাড় করে দিয়ে ভালবেসেছি।
তার হয়ে যাবো।
কিন্তু তবুও আমার মন কিছুতেই খুশি হতে পারছেনা।
কোথাও কোন ভাবে শূণ্যতা আঁকড়ে ধরছে আমায়।
আমি বসে আছি বউ সেজে এক ধ্যানে,
আর হঠাৎ দরজার দিকে চোখ যেতেই আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
চলবে?