#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৬,০৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
০৬
কেউ সংকোচ বোধ করবেন না, নিজের বাড়ি মনে করে খাবেন।আর হ্যা প্রান ভরে ছেলে মেয়ে দুটোর জন্য দো’আ করবেন। তাদের ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো হয়।আরে ভাবিসাব আপনি তো কিছুই নিচ্ছেন না? এই ওয়েটার এখানে দেখ ভদ্রমহিলার কি লাগবে।
–“জ্বি স্যার।
–“ভাইজান আপনি এতো ব্যাতিব্যাস্ত হবেন না। আমি আর কিছু নিব না।
–“কি বলেন, এখনো তো গরুর গোশত নিলেন ই না?
–“না ভাই ডায়বেটিসের জন্য অল্প স্বল্প খেয়ে কোন রকম দিন পার করে চলেছি।
এরশাদ হোসেন বেশ প্রফুল্ল একজন মানুষ। ছেলের বিয়ে নিয়ে খুবই উৎসাহিত।ঘুরে ঘুরে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যাস্ত তিনি। সাথে তার তিন ভাই তো আছেন ই।ভাই বোনদের মধ্যে এখনো খুব সুন্দর সখ্যতা বিদ্যমান। আজকাল কার যুগে এমন যৌথ পরিবার খুব কমেই চোখে পড়ে।
_________
–“আচ্ছা জায়ান মুস্তাফি তোমাদের বাসায় কি আছে আজকে? চারিদিকে এত ডেকোরেশন করা হয়েছে নিশ্চয়ই কোন পার্টি থ্রু করেছ,তাই না?
জায়ান খানিকক্ষণ পদ্মর পানে তাকিয়ে থেকে, কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বললো,
–“তেমন কিছু নয় জেসি!চলো আম্মুর সাথে দেখা করবে।
–“আচ্ছা চলো,আন্টি তো আমাকে দেখে চমকে যাবেন,,,
দুজন কথা বলতে বলতে, দুতলা থেকে নিচে নেমে গেল। এদিকে যেন,বাতাসের বেগে ছুটে এসে পদ্মর আঁখিপল্লবে পানি জমে গেল। অনিতা খেয়াল করে বললো,
–“ভাবিমনি তুমি কাঁদছো? মেয়েটা ভাইয়ার যাষ্ট ফ্রেন্ড আর কিছু নয়।
আসলে জায়ানের এরকম খামখেয়ালি জবাবে কষ্ট পায় পদ্ম। আজকের এরকম একটা বিশেষ দিন কে জায়ান কিভাবে পারলো বলতে?”তেমন কিছু নয়”।
–“আমার জুনিয়র পদ্ম কোথায়?
বলতে বলতে পদ্মর বাবা তৈমুর রহমান রুমে ঢুকলো। সাথে পদ্ম’দের বাড়ি থেকে আসা সকল মেহমান। সবকিছু ভুলে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তৈমুর রহমান মেয়ের মাথায় আলতো হাত রেখে বললো,
–“কেমন আছিস মা?
–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আব্বু তুমি কেমন আছো? আম্মু কোথায়, আব্বু আম্মু কে সাথে আনো নি?
–“মেয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে মায়েরা আসে না রে মা।
–“এইটা কোন হাদীস শরীফে আছে আব্বু!আমায় বলোতো?
–“এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষ মেনে আসছে,সব কিছু হাদীস মোতাবেক মানা হয় না।
–“হাদীসে যদি নাইবা থাকে তাহলে তো এগুলো কুসংস্কার আব্বু।
–“ঠিক কিন্তু, আমরা দুএকজনে তো আর এই কুসংস্কার গুলো তুলে নিতে পারি না।
শুধু কি বাপের সাথেই কথা বলবে পদ্ম? বাবা কে ছেড়ে মামির কাছে যায় পদ্ম। পদ্ম কে তিনি জড়িয়ে নেন। তারপর পদ্মর বড় বোন জামিয়া বোন কে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“শ্বশুর বাড়ি এসে তো বাপের বাড়ির সবাইকে ভুলে বসে আছিস!
–“এটা কি করে হয় আপু! আমি কি তোমাদের ভুলতে পারি বলো?
–“কতোবার কল করেছি, রিসিভ করার নাম ই নেই তোর।
–“ইশশ্ সরি আপু, এই দেখ কান ধরছি। ফোন হাতে নেওয়ার একদম সময় পাইনি।
দুদিন পর নিজের আপনজনের দেখে খুশিতে আত্মহারা পদ্ম, সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। জান্নাত, এরশাদ হোসেন এসে এবং জান্নাতের জায়েরা সবাই মিলে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ওঠে।
সবাই জায়ান কে খুঁজে। পদ্ম কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। তার মেয়ে বন্ধুর হাত ধরে কোথাও গেছে এটা তো আর বলা যায় না তাই চুপ করে থাকে। জামিয়া পদ্ম কে কিছুটা দূরত্বে টেনে নিয়ে যায় আর সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“জায়ানের সাথে তোর সবকিছু মিটমাট হয়েছে তো?
আমতা আমতা করতে থাকে পদ্ম। বোন’কে সবটা জানানো ঠিক হবে কিনা ভেবে পায় না।
তখনি জায়ান কোথা থেকে যেন এসে বললো,
–“এই তো আমি।
তারপর সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে।সবার সাথে কথায় একদম আসর জমিয়ে ফেলে।
তখন অর্পিতা এসে সবাইকে একসাথে ছবি তোলার জন্য তাগাদা দেয়।জায়ানের বড় বোন অর্পিতা আর তার বর সুমন খুব ভালো ফটোগ্রাফার। একমাত্র শালাবাবুর বিয়ের ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছেন। তাছাড়া বাহির থেকে লোক এনে বাড়ির মেয়ে বউদের ছবি তোলাটা জায়ানের একদম পছন্দ নয়।যাই হোক প্রথমে সবাই একসাথে ছবি তোলবে বলে ঠিক করলো তারপর দুই পরিবার আলাদা আলাদা।তো সে মোতাবেক পরিবার পর্ব শেষ করে, ছোট ছোট বাবুদের ছবি তোলে,সিংগেল জনগণের তোলা শেষে কাঁপল পিক তোলা শুরু হয়। আগে বড়দের দিয়ে শুরু নয় যেমন মাহমুদা-ইমান হোসেন, শাহনাজ-ফেরদাউস রহমান, জান্নাত-এরশাদ হোসেন, রাশেদা-বাবলুর রহমান। তারপর জায়ানের কাজিন এবং তাদের বর। সবশেষে জায়ান আর পদ্মর। স্টেজে জায়ানের পাশে পদ্ম কে ডাকা হলে, জেসি গিয়ে হাজির হয়।জায়ানের বাহু জড়িয়ে ধরে বলে,
–“ভাইয়া আমরা রেডি!
থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে পদ্ম।জেসির সাথে জায়ান কে কিছুতেই মানতে পারছে না পদ্ম। মেয়েটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে বটে।ইতোমধ্যে সবার মাঝে গুন গুন করে কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে। যেখানে বরের পাশে বউয়ের ছবি তোলা হবে সেখানে এই মেয়েটা কি লাফালাফি কান্ড করে চলেছে!
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জান্নাত জেসিকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর পদ্ম’র সাথে জায়ানের ছবি তোলা হয়, তবে পদ্মর অধরে হাসির কোন রেশ নেই।সুমন বহুবার বলেও এবং কতোসতো হাসি ঠাট্টা করেও পদ্ম’র মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি।
–“ভাইয়া কেউ কি জানে, হাসি না দিলে তাকে কতটা বাজে দেখতে লাগে!
এই বলে জায়ান পদ্মর একদম কাছাকাছি গিয়ে মুখশ্রির পানে তাকিয়ে থাকে। সবাই দেখছে ভেবে পদ্ম লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যায়। তাদের মধ্যে মাত্র কিঞ্চিৎ দূরত্ব অবশিষ্ট আছে, মনে হচ্ছে জায়ান এই দূরত্ব ও গুছিয়ে ফেলবে! এরমধ্যে সিংগেলবাসীরা চেঁচিয়ে বললো,
ভাবিমনি হাসি দাও, পদ্ম হাসি দাও, জুনিয়র পদ্ম হাসি দাও,ভাবিসাব হাসি দেওয়ার দরকার নাই আমরা সিংগেলবাসীরা একটু রোমান্টিক সিন শিখি, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে!হা হা হা..
শেষের কথা টা শুনে পদ্ম হাসি ধরে রাখতে পারলো না। মুচকি হাসি পার করে গেল, এরমধ্যে কিছু ছবি সুমন তার ক্যামেরাতে বন্দি করে নিল।
সবশেষে বর কনের খাবার খাওয়ার পালা,এখানেও পিছু ছাড়লো না নেকার ষষ্টি জেসি!জায়ানের ডান পাশে পদ্ম আর বাম পাশে বসলো জেসি। সাথে অনিতা, জামিয়া, অর্পিতা,সুমন জায়ানের আরো কাজিন সহ। খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে অনিতা বললো, –“ভাইয়া ভাবিমনি কে খাইয়ে দে।
জায়ান দ্বিরুক্তি না করে, খাবারের লোকমান নিল পদ্ম কে খাওয়াবে বলে, কিন্তু পদ্ম’র দিকে এগিয়ে নেওয়ার আগেই জেসি হাত টেনে নিয়ে নিজে খেয়ে নিল! পদ্ম এবার নিজেকে সামলাতে পারলো না, রেগে গিয়ে বললো,
–“অন্যের খাবার কেরে নিয়ে খাওয়া একটা অসভ্যতা!যা আপনি ক্রস করে ফেলছেন।
জেসি নেকামো করে বললো,
–“এই সামান্য কারণে মেয়েটা আমাকে অসভ্য বললো,জায়ান মুস্তাফি তুমি কিছু বলবে না?
–“ওনার হয়ে আমি তোমাকে সরি বলছি জেসি।প্লিজ তুমি খাবার টা শেষ করো।আর পদ্ম এই সামান্য কারণে এভাবে বলার কিছু হয়নি। আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি হাঁ করুন।
পদ্মর আঁখিপল্লব দুটো পানি গতিকে আটকাতে পারলো না,তারা অবাধ্য হয়ে গাল বেয়ে ঝরে পড়লো। খাবার ছেড়ে দৌড়ে রুমের দিকে চলে গেল পদ্ম। পদ্ম চলে যেতে, অর্পিতা সহ সবাই বকাঝকা শুরু করলো জায়ান কে। শেষে জায়ান ও না খেয়ে টেবিল ছাড়লো। এতে যেন কেউ পৈশাচিক আনন্দ পেল!
ধীরে ধীরে মেহমানরা বিদায় নিতে শুরু করলো। তৈমুর রহমান তার বেয়াই এরশাদ হোসেন’কে বললো,
–“ভাই এবার মেয়ে জামাই কে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলে খুব খুশি হবো?
–“ভাই এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না। ওরা অবশ্যই যাবে।
তারপর জান্নাত’কে ডেকে বললো,
–“বেয়াইসাব তো বিদায় নিতে চাচ্ছেন, জায়ান পদ্ম’কে বলো তৈরি হতে।
–“আমি এক্ষুনি ওদের কে পাঠাচ্ছি।
পদ্ম বোরকা পরে তৈরি হয়ে আসে, এসে সবাইকে বলে,
–“বড় আব্বু-বড় আম্মু,মেজ আব্বু-মেজ আম্মু,সেজ আম্মু-সেজ আব্বু, ছোট আব্বু-ছোট আম্মু তোমরা সবাই চলো আমাদের সাথে? ছোট ফুপ্পি,বড় ফুপ্পি আপনারা ও চলুন।
খোরশেদা টিপ্পনি কেটে বলো,
–“পোশাক আশাক পইরা অনে কইতাছো চলো সবাই! আমাগো লগে কি মশকরা করতাছো?
খোরশেদার এমন কথায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে পদ্ম। গতকাল রাতের ঘটনা নিয়ে যে খোরশেদা রেগে এভাবে কথা বলছেন জান্নাত বেশ বুঝতে পারলো।
তাই যারা পদ্ম’র সাথে যাবে তাদের তাগাদা দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলে তারপর পদ্ম কে আর জায়ান কে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে।জায়ান ক্ষীণ স্বরে বললো,
–“আম্মু জেসি আমাদের সাথে আসুক? অনিতা সহ সবাই যাচ্ছে, বেচারি একা একা মন খারাপ করবে।
–“মেয়েটা যেভাবে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করে। ওকে সাথে নেওয়া কি ঠিক হবে?
–“তুমি চিন্তা করো না আম্মু আমি ম্যানেজ করে নিব।
–“আচ্ছা, তবে দেখিস কিন্তু?
–“তুমি চিন্তা করো না আম্মু।
–“আচ্ছা সাবধানে যাস”আল্লাহ হাফেজ”।
–“আল্লাহ হাফেজ।
এতক্ষণ জায়ানের কথা গুলো শুনে শুনে ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে পদ্ম। মনে মনে ঠিক করলো নেকা ষষ্টির একটা ব্যবস্থা করবে। তারপর শ্বাশুড়ি মাকে সালাম জানিয়ে গাড়িতে ওঠে পদ্ম। এবার দেখার পালা নেকার ষষ্টি পদ্ম’র বাড়িতে গিয়ে কি করে!!
#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।
#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
পড়ন্ত বিকেলে সূর্য মামা ধীরে ধীরে যখন অস্ত যাচ্ছে পশ্চিমে। ঠিক তার পূর্ব দিকে,ধনাগদা নদীর তীরে দাঁড়ালে প্রকৃতির দৃশ্য টা দেখার মতো হয়। প্রথমে থৈ থৈ করে ভয়ে চলা নদীর পানি, তার সামনে বেরিবাঁধ! যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছগাছাড়ি,আর এর উপরে সূর্য মামা। এছাড়াও নদী পার হয়ে এর দক্ষিণে অবস্থিত চৌধুরী সাহেবের ইটের ভাটা!শহর থেকে অনেকে গ্রামে বেড়াতে আসলে ঘুরতে যায় সেখানে। চারিদিকে ইট আর ইট দৃশ্য টা অবশ্য দেখার মতো বটে।আর ওখানকার একটি ছোট্ট গ্রামের মেয়ে জুনিয়র পদ্ম। কুমিল্লা জায়ানদের বাড়ি থেকে আসতে আসতে রাত হয়ে যায়, আজকে আর এই দৃশ্য দেখার নয়। তাই পদ্ম’র কাজিন রা ঠিক করে আগামীকাল জায়ান এবং তার সাথে আসা মেহমানদের সবটা ঘুরিয়ে দেখাবে।
পদ্ম’দের বড়িতে পিঠা তৈরি থেকে শুরু করে রান্না বান্নার ধুম পড়ে গেছে। বাড়ির ছোট জামাই’কে আপ্যায়নে যেন ত্রুটি না হয় সে দিকে খুব সতর্ক অবলম্বন করে চলেছে ইলোরা। পদ্ম নিজের বাড়ি এসে ফুরফুরে মেজাজে আছে।আর জায়ান কে ঘিরে আছে তার সব শালক শালিকারা,পাশে বসে আছে জেসি। সবাই খোশ মেজাজে গল্প গুজব করতে ব্যাস্ত।এর মধ্যে ইলোরা সকলের জন্য গরম গরম দুধ ক্ষিলি পিঠা নিয়ে এসেছে।সকলে আনন্দের সহিত পিঠা খেতে শুরু করে।
জায়ান অনেকক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছে পদ্ম এই রুমে একবার ও আসেনি।তাই সবাই কে বললো,
–“আমি একটু আসছি?
নেকার ষষ্টি জেসি বললো,
–“পিঠা খেয়ে তারপর যাও?
–“চলে আসবো এক্ষুনি।
পদ্ম বারান্দায় বসে বসে খুশি মনে আইসক্রিম খাচ্ছে। আইসক্রিম তার খুব পছন্দের তালিকায় একটা। খেতে খেতে বাহিরে আকাশ দেখে চলেছে। বারান্দার সামনে হাসনেহেনা গাছের ফুলের সুবাসে সৌরভিত হয়ে আছে চারিদিক। এই মুহূর্তে পদ্ম পরিবেশ টা খুব উপভোগ করছে।
কোন আইসক্রিম খেতে খেতে শেষের একটুখানি বাকি আছে, পদ্ম হা করে যেই না শেষাংশ মুখে ঢুকাবে ঠিক তখন আচমকা কেউ এসে ছিনিয়ে নিয়ে যায়! এতে খুব বিরক্ত হয় পদ্ম। পাশে লক্ষ্য করতে দেখলো,জায়ান শেষাংশ টা খুব তৃপ্তি ভরে খাচ্ছে। পদ্ম বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো,
–“কি হলো এটা? আপনার কি ঐ নেকার ষষ্টি’র থেকে অন্যের খাবার কেরে নিয়ে খাওয়ার
ছোঁয়াচে লেগেছে!
জায়ান বুঝতে পারলো,কার কথা বলছে পদ্ম। তাই এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বললো,
–“আমার আইসক্রিম খুব পছন্দ। আপনি তো সেটা জানতেন।তাও কেন একা একা বসে আইসক্রিম খাচ্ছেন?
চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বললো জায়ান। পদ্ম কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। আচমকা জায়ান পদ্ম কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দিল! ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে চক্ষু বিস্ফোরিত হয় পদ্ম’র।যা দেখে জায়ানের অধরে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। নিমগ্ন কন্ঠস্বরে বললো,
–“আপনাকে একদম বেবিদের মতো লাগছে!
–“আমি তো বেবি-ই!
–“হুম,ম্যাচিউর বেবি।
সাদা টি-সার্ট এর সাথে বেগুনি রঙের প্লাজু পরেছে পদ্ম।বলা বাহুল্য পদ্ম মাস খানেক আগে তেইশে বছরে পদার্পণ করেছে,অথচ ওকে দেখে ষোল-সতেরো বছরের কিশোরীর মতো মনে হয়।ফেইসে দেখতে বাচ্চা বাচ্চা কিনা!যে কিনা প্রথম ভালো লাগা জায়ানের।
পদ্ম’র ছোট ছোট চুল গুলো কপাল জুড়ে আছে, এতে করে পদ্ম’র সুন্দর্যো যেন দ্বিগুন হয়েছে।জায়ান এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে,তার প্রিয়তমা স্ত্রীর রুপসুধা পান করে চলেছে। পদ্ম লজ্জায় মুখ লুকায় জায়ানের প্রশস্ত বুকে এতে করে বিস্তর হাসে জায়ান।
এভাবে নিরবে নিভৃতে বেশ কিছু সময় পার করে দুজনে। হঠাৎ কি যেন হলো, পদ্ম’র ঠান্ডা লেগে গেল। বেচারি কাশি দিতে দিতে নাজেহাল অবস্থা।জায়ান ব্যাস্ত পায়ে পদ্ম কে রুমে নিয়ে আসে। পদ্ম কে গায়ে ওরনা বা চাদর জড়িয়ে নিতে বলে, দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। তারপর আবার দু মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে বললো,
–“আপনি এখনো অবধি গায়ে কিছু জাড়ান নি কেন?
–“এতো ব্যাস্ত হবেন না, এরকম শুকনো কাশির সাথে আমি অভ্যস্ত আছি।
–“হুম,কাশি কম বেশি সবারই হয়। তা-ও আপনি আমার কথা শুনুন।
পদ্ম আর দ্বিরুক্তি না করে কাবার্ড থেকে, সাদার মধ্যে বেগুনি পারের একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিল। তখন জামিয়া আসে চা নিয়ে।জায়ান বললো,
–“নিন চা টা খেয়ে নিন, দেখবেন কাশি দৌড়ে পালাবে।
জামিয়া চা দিতে দিতে বললো,
–“ব্যাপার কি বলতো? তুই কি আবার এই সময় আইসক্রিম খেয়েছিস নাকি?
পদ্ম আমতা আমতা করতে থাকে।জায়ান ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে সন্দেহ নিয়ে পদ্ম’র পানে তাকায়! পদ্ম বলছে না দেখে জায়ান বললো,
–“হ্যা,আপু উনি তো কিছুক্ষণ আগে আইসক্রিম খেলেন! বারান্দায় বসে বসে।
পরক্ষনেই জামিয়া রেগে তাকায় পদ্ম’র দিকে।রাগ নিয়েই বললো,
–“পদ্ম তোকে না আম্মু উল্টো পাল্টা সময়ে আইসক্রিম খেতে নিষেধ করেছে আম্মু!তাও তুই লুকিয়ে লুকিয়ে আইসক্রিম খেতে গেলি? আবার কাশি ও বাধায় ফেললি?
–“আপু আর হবে না, আম্মু কে বলো না প্লিজ?
–“এই নিয়ে কতোবার বলেছিস”আর হবে না” হিসাব আছে?
পদ্ম হাতের কড়া গুনে বললো,
–“এইতো দশ থেকে পনেরো বার হবে হয়তো!
–“মারবো এক চর,ফাজিল কোথাকার।
জায়ান সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
–“আপু মেরেই দিন, আমি আছি আপনার পক্ষে।হা হা হা হা
আচ্ছা আপু উনার কি ঠান্ডার প্রকোপ আছে?
–“হ্যা, তাই ওর অসময়ে ঠান্ডা জাতীয় কিছু খাওয়া নিষেধ। একবার টনসিল ফুলে যা অবস্থা হয়েছিল। বেশি বাড়াবাড়ি কিছু হয়নি আল্লাহ পাকের রহমতে না হয় তো অপারেশন করতে হতো।
জামিয়া চলে যায় রুম থেকে। জামিয়া যেতেই জায়ান বললো,
–“আপনি সেই জন্যই তখন চুপিচুপি আইসক্রিম খাচ্ছিলেন?যাই হোক শাস্তির খাতায় আরো একটা যোগ হলো!
–“মানে?
–“আজ থেকে আপনি আর আইসক্রিম খাচ্ছেন না।
পদ্ম ও কনফিডেন্ট নিয়ে বললো,
–” চ্যালেঞ্জ এক্সসেপ্ট করলাম।
________
রাতের খাবার খাওয়া শেষে যার যার রুমে চলে যায় সবাই। পদ্ম বসে বসে ফেসবুকে অনলাইন শপিং এ শাড়ি অর্নামেন্স দেখছে।জায়ান পদ্ম’র পাশে বসে বললো,
–“কি করছেন?
–“তেমন কিছু,,
পদ্ম’র কথা শেষ না হতেই দরজায় কড়াঘাত শুরু হলো।জায়ান বললো,
–“দেখুন তো কে এসেছে?
–“পারতাম না!
–“পারবেন পারবেন।
–“পারবো না মানে পারবো না।
–“আপনি সেই আগের মতই রয়ে গেছেন ঘুমবাবু!
বলতে বলতে ওঠে যায় জায়ান। পদ্ম যে খুব অলস প্রকৃতির তা পদ্ম নিজেই বলতো জায়ান কে। তখন জায়ান বলতো, আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে আপনার সব আলসেমি ভেঙ্গে দিব আমি!
জায়ান দরজা খুলে দেখে জেসি দাঁড়িয়ে আছে।জায়ান পদ্মর দিকে তাকিয়ে মনে মনে দুষ্ট বুদ্ধি করে।বিস্তর হেসে বললো,
–“আরে জেসি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো!
পদ্ম ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে তাদের পানে তাকায়।জায়ানের জন্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না কে এসেছে। জেসি বললো,
–“জায়ান মুস্তাফি তুমি তো এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাও না রাইট?
ছোট বেলা থেকেই জায়ানের রাতে ঘুম আসে না!শেষ রাতে গিয়ে ঘুমায় নয়তো ফজর নামাজ পড়ে তারপর ঘুমায়!
জেসি আবার বললো,
–“খুব বোরিং লাগছে, চলো আমরা ছাদে যাই?
জায়ান যেন এরকম কিছুই ভাবছিল, তাই জেসির কথায় বললো,
–“আচ্ছা চলো, দু’জনে মিলে রাতের আকাশ দেখবো। আর চকলেট খাব।
–“ওয়াও চকলেট! কিন্তু এই মুহূর্তে কোথায় পাবে?
জায়ান রুমে এসে,পদ্ম’র টেবিল থেকে চকলেট বক্স টা নিয়ে জেসি কে নিয়ে এগিয়ে যায় ছাদে। পদ্ম এতোক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সবটা অবলোকন করলেও এখন রাগে ফুঁসছে। ফুঁসতে ফুঁসতে সারা রুম জুড়ে পায়চারি করতে থাকে।
তারপর রুম থেকে বেরিয়ে কাজিন দের রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দেয়। ফারিহা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে। পদ্ম কে দেখে বললো,
–“আপু তুমি! কিছু লাগবে?
পদ্ম বললো তোমরা সবাই ঘুমিয়ে আছো আর এদিকে আমি একটু শান্তিতে থাকতেও পারছি না। ফারিহা দুশ্চিন্তা নিয়ে বললো,
–“কি হয়েছে আপু?
–“বলছি আগে ভিতরে চলো।
তারপর, রেশমা, সুমাইয়া,শিমু,কলি সবাই কে ডেকে তুলে ঘুম থেকে। সব গুলো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে তাই পদ্ম বললো সবাই কে ফুচকা ট্রিট দিবে। এরকম ট্রিটের কথা শুনে সব গুলোর ঘুম দৌড়ে পালায়। তারপর সবাইকে নিয়ে প্লান করে জেসি কে উচিৎ শিক্ষা দিবে।
এদিকে জেসি বকবক করেই যাচ্ছে,জায়ানের খুব বিরক্ত লাগছে কিন্তু তা-ও সহ্য করে যাচ্ছে পদ্ম কে রাগাবে বলে এবং ঘুমাতে দেবে না বলে।জায়ান ছাদে না আসলে পদ্ম এতোক্ষণে ঠিক ঘুমিয়ে পড়তো।জায়ান নিশ্চিত এখন পদ্ম ঘুমাচ্ছে না, বসে বসে রাগে ফুঁসছে।জেসির বকবক আর ভালো লাগছে না বলে,ফোন বের করে গ্যালারির ছবি দেখতে থাকে জায়ান। দেখতে দেখতে পদ্ম’র একটা ছবি সামনে আসে।প্রায় তিন বছর আগের ছবিটা যেখানে পদ্ম বইঠা হাতে নৌকা চালাতে ব্যাস্ত। ছবিটা জুম করে পদ্ম’র মায়া জড়ানো ছোট ছোট চোখ দুটো দেখছে জায়ান।
তখন পাশ থেকে কেউ বললো,
–“এখনো মেয়েটা কে আগের মত ভালোবাসেন?
আকস্মিক পদ্ম’র কথা শুনে বরকে যায় জায়ান! ফোনটা লক করে ট্রাউজারের পকেটে রেখে দেয়। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“আপনি এখানে! জেসি কোথায়?
#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।