জান্নাত,পর্ব :-০৫ এবং শেষ

জান্নাত,পর্ব :-০৫ এবং শেষ
Writer :- Kabbo Ahammad

-: আবিদার মাথায় হাজারো চিন্তা লাটিমের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে উত্তেজনায় উৎফুল্ল হচ্ছে। আজ ওর জীবনের একটা বিশেষ রাত। কারন কাব্যর মতো একজনের কাছে ও ওর সবটা দিয়ে দিবে৷ ওর ভালোবাসা আজ পূর্ণতা পাবে। কাব্য ওকে মেনে নিয়েছে। আবিদা আজ অনেক অনেক খুশী। ও মিটমিট করে দুষ্ট হাসছে। আবার খুব লজ্জাও পাচ্ছে। ও আবার মনে মনে বলছে, “ইসসস আজ আমাকে অপ্সরাদের মতো লাগছে। উনি দেখেতো অজ্ঞানই হয়ে যাবে৷ হিহি। তাহলে আঁদর করবে কে। ধুর কি যে বলিনা আমি। এখনো আসে না কেন উনি উফফ। “আবিদার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হয়না।

এর একটুপরই কাব্য রুমে আসে। আবিদা দ্রুত উঠে কাব্যর পা ধরে সালাম করতে নেয়। তখন সাথে সাথেই কাব্য আবিদাকে আটকে দিয়ে বলে উঠলো।

–ছিঃ ছিঃ একি করছেন। এটা ঘোর পাপ। আর কখনো এ কাজ করবেন না। একমাত্র আমার আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে কখনো মাথা নিচু করবেন না ভুলেও না। মুখ দিয়ে শুধু সালাম দিলেই হবে। এসব কুসংস্কার আর পাপ। (কাব্য)

—আচ্ছা স্যরি আমি এতোদিন ভুল জানতাম। তাহলে সালাম দিচ্ছি, “আসসালামু আলাইকুম।

–অলাইকুম আসসালাম।

আবিদা সালাম দিয়ে আবার চুপচাপ বিছানায় গিয়ে ঘোমটা টেনে বসে পড়ে। ওর হৃদস্পন্দন ক্রমশ বাড়ছে৷ অজানা খুশী ওকে উত্তেজিত করছে। অনেকটা সময় গেল কিন্তু আবিদার ঘোমটা কাব্য উঠাচ্ছে না। এমনকি ওর কাছেও আসছে না। তারপর আবিদা আস্তে করে বলে উঠলো।

—এইযে আপনি কই? আমাকে দেখবেন না? আমার ঘোমটা টা তুলুন৷ আপনার জন্য খুব সুন্দর করে সেজেছি। বেশি মেকাআপ করিনি। জানি আপনার পছন্দ না। একদম হালকা করেছি। আমি মেকআপ ছাড়াই অনেক সুন্দরী। একটু ঘোমটাটা তুলে দেখুন।

–ক্ষমা করবেন। আমি আপনাকে দেখতে পারবো না। আমি আমার মিরা ছাড়া কারো দিকে তাকাতে পারবো না। কখনো না।

এ কথা শোনা মাত্রই আবিদার বুকে ছেত করে উঠে। খুব কষ্ট পায় ও৷ তাও নিজেকে সামলে নিয়ে গলাটা একটু শক্ত করে বলে উঠলো।

—আমি আপনার বিবাহিত স্ত্রী। আপনার সামনে আমি ২৪ ঘন্টা থাকবো। আপনি কতক্ষণ আমাকে না দেখে থাকবেন! ভালো ভাবে বলছি এসে দেখেন আমাকে। নাহলে কিন্তু বাপের বাড়ি চলে যাবো পাশেই আছে। পরে জান্নাত আবার কান্না করবে।

–না না কি বলছেন। কিন্তু…

—কোন কিন্তু নাই। আমি আপনার বিবাহিত স্ত্রী। আমাকে দেখবেন না এটা কোন কথা। আপনি আমাকে আরবি শিখাবেন নামাজ পড়া শিখাবেন তখন কি অন্যদিকে তাকিয়ে ভূতদেরকে শিখাবেন?

কাব্য তখন মনে মনে ভাবে। “আসলেইতো, সেতো সবসময়ই এখন আমার সামনে থাকবে। আর এখন সেতো আমার স্ত্রী। তাকে না দেখে উপায় নেই। তারপর কাব্য বললো

–আচ্ছা তুলে দিচ্ছি আপনার ঘোমটা।

—তুললেই হবে না। মন ভরে দেখতেও হবে।

এরপর কাব্য আবিদার কাছে এসে বসে। আবিদার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে। তারপর কাব্য আস্তে করে ওর ঘোমটা তুলে দেয়। আবিদা আস্তে করে ওর চোখ খুলে কাব্যর দিকে তাকায়। কাব্যও আবিদার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আবিদাও লজ্জাসিক্ত ভাবে কাব্যর দিকে ওর মায়াবী নয়নকারা চাহনিতে মাদকতা নিয়ে তাকিয়ে আছে৷ কিন্তু হঠাৎ কি হলো কাব্য আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে অন্য দিকে চলে গেল। আবিদার ঠাস করে ঘোর ভেঙে যাওয়ায় ও উঠে কাব্যর পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর ও আস্তে করে বললো।

—কি ব্যাপার চলে এলেন যে?

কিন্তু কাব্য কিছুক্ষণ পর একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো।

–মিরা আমার জীবনের প্রথম মেয়ে। আমার প্রথম ভালোবাসা। আমার স্ত্রী। আমার জান্নাতের মা। বিয়ের আগে আমি কখনো ওকে দেখিনি বা দেখতেও চাইনি। বিয়ের সেদিন রাতে ও কালো একটা বোরখা পরে ছিলো। আপনার মতোই বসে ছিলো। সেদিন আমি যে কতটা নার্ভাস ছিলাম না বলার বাইরে। আমি আস্তে করে ওর সামনে বসি। ও সেদিন প্রথম আমার সামনে একমাত্র ওর বাবা ছাড়া শুধু আমার সামনে ওর নাকাব তুলে। বিশ্বাস করবেন না আমি মনে হয় জান্নাতের কোন অপ্সরাকে আমার সামনে দেখি। ওকে কখনো কেউ দেখেনি। একটা অপরিচিত পুরুষের চোখ ওর উপর কখনো পড়েনি। সেদিন প্রথম আমি ওকে দেখে ওর মায়ায় পড়ে যাই। ভালোবেসে ফেলি। আমি সেদিন কতক্ষন ওকে দেখেছি জানিনা। ওর চোখ দিয়ে সেদিন অশ্রু ঝরছিল যেমনটা আমারও। আমরা সত্যি হারিয়ে গিয়েছিলাম একে অপরের মাঝে। ও সেই আমার মিরা। আমার মিরার শেষ চিহ্নটুকু হলো জান্নাত। ওকে দেখলে আমার মিরার কথা মনে পড়ে। আর আজ আপনাকেও দেখে আমার মিরার কথা মনে পড়লো। আমি মিরাকে ছাড়া মনে হয় কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। হয়তো স্বামীর অধিকারটুকু আমি কখনো আপনাকে দিতে পারবো না। কিন্তু আপনার প্রতি আমার যে বাকি দায়িত্ব আছে তা আমি যথাযথ পালন করবো। আপনি প্লিজ কষ্ট পাবেন না। আমি এরজন্যই বিয়ে করতে চাইনি। (কাব্য)

—খুব ভালোবাসেন মিরা আপুকে এখনো?

–জ্বী নিজের থেকেও অনেক বেশী।

—আচ্ছা কোন সমস্যা নেই। আমার শরীর আপনাকে স্পর্শ করতে হবে না আমি কখনো বলবোও না। আমার শুধু একটাই চাওয়া আমাকে আপনার মতো পরহেজগার বানিয়ে দিয়েন। আর রোজ সকালে আপনার মধুর কণ্ঠে কুরআন তিলোয়াত শুনতে দিয়েন।

–হ্যাঁ অবশ্যই দিবো। (ঘুরে তাকিয়ে) একি আপনি কাঁদছেন?

—খুশীতে। আচ্ছা আর একটা শেষ জিনিস চাইতে পারি? আর কখনো কিছু চাবো না।

–কি?

—আমাকে দয়া করে তুমি বলবেন। আমি তো আপনার স্ত্রী। আমি আপনাকে আপনি করেই বলবো।

–আচ্ছা। আবিদা আমাকে ক্ষমা করো। আমি মিরার ভালোবাসাকে ভুলতে পারবো না।

—না না কোন সমস্যা নেই। আসুন ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠতে হবে।

–হুম।

এরপর আবিদা জামা পরিবর্তন করে একটা শাড়ী পরে আস্তে করে চুপচাপ শুয়ে পড়ে। কাব্যও দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ে। আবিদা অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছে৷ চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। থামার কোন নাম নেই। এই কষ্ট কাউকে বুঝানো যাবে না কখনো। স্ত্রী সব পারে কিন্তু স্বামীর স্পর্শ ছাড়া তার বুকে মাথা না রেখে ঘুমাতে পারলে সে কখনো শান্তি পায়না। আবিদার মনেও কোন শান্তি নেই। বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। আবিদা এটাই ওর ভাগ্য মেনে নেয়৷ স্বামীর সুখ ওর কপালে নেই। জান্নাতকে আঁকড়ে ধরেই ওর জীবনটা পার করতে হবে হয়তো।

আজকের এই রাতের পর থেকে চঞ্চল আবিদা একদম চুপচাপ দায়িত্ববান হয়ে যায়। জান্নাত তার মাকে পেয়ে খুব খুশী। আবিদাও সারাদিন জান্নাতকে নিয়ে থাকে। কাব্যর কাছ থেকে নামাজ, কুরআন পড়া আরো অনেক ইসলামিক নিয়মকানুন বিষয় আবিদা শিখতে থাকে। কাব্যরও খুব ভালো লাগে আবিদাকে শিখাতে। আবিদার উপর কাব্য খুব খুশী। ওকে অনেক বোরখা আর হিজাব এনে দেয় কাব্য। এগুলো খুব পছন্দ হয়েছে আবিদার। আবিদা কাব্য-জান্নাত আর শ্বাশুড়ির অনেক খেয়াল রাখে। ইউটিউব দেখে অনেক কিছু মজার মজার খাবার রান্না করে সবাইকে খাওয়ায়। সবাই আবিদার উপর খুশী। কাব্যও অনেক খুশী। কারণ আবিদা কাব্যর স্পর্শে আসতে চায় না। রাত হলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর গভীর রাতে তাহাজ্জতের নামাজ পড়তে কাব্যকে ডাক দেয়। কাব্যর বেশ ভালোই লাগে৷ কিন্তু কেন জানি ওর মনে হতো আবিদার মনে শান্তি নেই। ও খুব কষ্টে আছে। কিন্তু তা কাউকে দেখতে দিচ্ছে না। কাব্য সমসময় এমন একটা ফিল হতো।
ও বুঝতে পারছে যে আবিদার কি হয়েছে। কাব্য সবকিছু বুঝে। কিন্তু কেন জানি আবিদাকে কাছে টানতে পারছে না।

এভাবে একটি বছর পার হয়ে যায়। আবিদা এখন সম্পূর্ণ পরহেজগার একটা মেয়েতে পরিণত হয়েছে। জান্নাতকে পাশে নিয়ে নামাজ পড়ে, কুরআন পড়ে, ইসলামিক অনেক কিছু শিখে দুই মা মেয়ে। জান্নাত খুব খুশী আবিদার মতো মাকে পেয়ে। মায়ের আঁদর, ভালোবাসা, স্নেহ আর সোহাগ পেয়ে ও খুব খুশী। আম্মু ছাড়া সে কিছুই বুঝেনা।

কিন্তু এসবের মধ্যে একজন ভালো নেই। সে তার মনকে একটু সময়ের জন্য শান্ত করতে পারছে না। সে আর কেউ নয় কাব্য। কারণ আবিদা এখন আর কোন কাজ ছাড়া কাব্যর সামনেও আসে না। সারাদিন জান্নাতকে নিয়ে থাকে। রাতে জান্নাতকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। কাব্য যেন কোন ভাবেই মানতে পারছে না। আবিদা ওর সাথে হেসে খেলে কথা বলেনা। অনেকটা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। কাব্যর স্পষ্ট মনে আছে আবিদা এই গত একবছরে অনেকবার ওর কাছে আসতে চেয়েছে। খুব পাগলামিও করেছে একটু। আবার সাথে সাথে ক্ষমা চেয়েছে আবিদা। কিন্তু কাব্য কাছে টেনে নেয়নি ওকে। সে থেকেই আবিদা আর কাব্যর কাছে তেমন যায়না। ওকে নিয়ে কিছু বলেও না। কাব্যর কেন জানি ভালো লাগছে না। আবিদার প্রতি ও দুর্বল হয়ে গিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। আবিদা যেভাবে সবার যত্ন করে তাতে ওকে ভালো না বেসে উপায় নেই। কাব্যর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। মিরার স্মৃতিটাকে বুকের মাঝে চাপা দিয়ে দিয়েছে আবিদার যত্ন, স্নেহ আর অসীম ভালোবাসা৷ আবিদা প্রতিনিয়ত কাব্যকে মুগ্ধ করেছে। কাব্য যা বলে তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলে আবিদা৷ কিন্তু তাও কাব্য আবিদাকে ওর উপর অধিকার দেয়নি। এখন আবিদা সরে পরায় কাব্য কেমন জানি শান্তি পাচ্ছে না। আবিদার সাথে একা কথা বলতে গেলে ও ব্যস্ততা দেখিয়ে সরে যায়। কাব্য একা হয়ে পরে। কিন্তু আবিদার এই পরিবর্তন এতো শক্ত কেন তাই ও বুঝতে পারছে না।

তারপর একদিন গভীর রাতে।

কাব্যর হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। কেন জানি মাথা তুলে আবিদার ঘুমন্ত মুখখানা দেখবে বলে চিন্তা করে। জান্নাতকে দেখে যেই আবিদার দিকে তাকায় দেখে জান্নাতের পাশে আবিদা নেই। কাব্য একলাফে উঠে বসে। এদিক ওদিক তাকায় রুমের কোথাও আবিদা নেই। কাব্য তাড়াতাড়ি উঠে ওয়াশরুম আর বারান্দায়ও দেখে কিন্তু আবিদা নেই। ওর ভয় হচ্ছে আবিদা গেল কই! কিন্তু হঠাৎই ও রুম থেকে বের হয়ে ওর পাশেই নামাজের রুমে উঁকি মেরে দেখে আবিদা জায়নামাজে বসে খুব কাঁদছে। মোনাজাত ধরে ও বলছে,

“হে আল্লাহ আমি কি ভুল করেছিলাম?
তোমার একজন প্রিয় বান্দাকে ভালোবেসেছি তার মেয়েকে ভালোবেসেছি। সবাইকে আপন করে নিয়েছি। কিন্তু যাকে এতোটা ভালোবাসলাম সেই আমাকে আপন করে নিলো না? হে আল্লাহ আমিতো একটা মেয়ে, আমি এখন তার স্ত্রী। আমারও যে এখন মা হতে ইচ্ছা করে। আমারও গর্ভে যে তার সন্তান নিতে ইচ্ছা করে। সেকি তা বুঝবে না? কত গিয়েছি তার কাছে। কত পাগলামি করেছি। তাও সে আমার ইচ্ছাটা বুঝেনি। নেয়নি আমাকে আপন করে। একটা মেয়ে যদি মা না হতে পারে এরচেয়ে বড় কষ্ট তার আর জীবনে কিছুই নেই। তার গর্ভে ধরা সন্তান যখন মা বলে ডাকে সে ডাক দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ডাক। জান্নাতকে অামি আমার প্রথম মেয়ে মানি। আমার কলিজার টুকরা ও। আমি কখনো ওকে অন্যজনের মেয়ে মনে করিনি। সবসময় আমার মেয়েই ভাবি ওকে। ছোটকাল থেকেই ওর মতো একটা পরীর মতো মেয়ের স্বপ্ন ছিল আমার৷ যা তুমি আমাকে দিয়েছো। তাই অনেকটা সময় আমি মা হওয়ার কোন ইচ্ছা মনে আসতে দেইনি। কিন্তু এখন যে আমারও মা হতে ইচ্ছা করছে। মা হওয়ার সেই স্বাদটা গ্রহণ করতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ আমার নিজের সন্তান আর জান্নাতকে নিয়ে বাকি জীবনটা পার করতে ইচ্ছা হচ্ছে তোমার পথে। কিন্তু আমি কি মা হতে পারবো না আল্লাহ?
তাকে ভয়েও এই ইচ্ছার কথা বলতে পারছিনা৷ সে যদি ভাবে জান্নাতের মূল্য আমার কাছে কমে যাবে। কিন্তু সেতো জানে না জান্নাতকে আমি আমার প্রথম সন্তান ভাবি। আর সারাজীবনই ভাববো। ওকে কখনো বলবো না যে আমি ওর আপন মা না। কিন্তু সে হয়তো তা বুঝবে না। তাই হয়তো সে চায়না আমিও মা হই। আমার সন্তানকে নিজের হাতে বড় করি। তাকে তোমার পথে চলার জন্য মানুষের মতো মানুষ করি। খুব ইচ্ছা হয় আল্লাহ। কিন্তু কিছুই আমার ভাগ্য নেই। না স্বামীর ভালোবাসা না নিজের একটা সন্তান। কিছুই আমার ভাগ্যে নেই। তাই জান্নাতকে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে ছারখার হওয়া আমার বুকটাকে শান্ত করি। কিন্তু এ শান্ত যেন ক্ষনিকের জন্য আল্লাহ। মা হতে ইচ্ছা করে শুধু। শুনেছি তোমার পরেই মায়ের সম্মান সবচেয়ে বেশী। হে আল্লাহ আমি মা হতে চাই আমি আমার স্বামীর একটু ভালোবাসা চাই। দেওনা আল্লাহ আমাকে। তুমিতো পরম দয়াশীল। আমাকে একটু দয়া করো। (কান্নার মাত্র আরো বাড়িয়ে)

এদিকে আবিদার কথা শুনে কাব্যর চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। ও আবিদাকে বুঝতে পারেনি। আবিদা কি চেয়েছে এতোদিন তা ও বুঝতে পারেনি।
ও বুঝার চেষ্টাও করেনি। মা হওয়া যে প্রতিটা মেয়ের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন তা ও ভুলেই গিয়েছে। কাব্য বুঝতে পেরেছে আল্লাহ ওকে ইচ্ছা করেই এখানে এনেছে যাতে ও আবিদার মনের লুকিয়ে থাকা সত্য কথাগুলো সব শুনতে পারে। কারণ একজন বান্দা আর সবার সাথে পারলেও আল্লাহ সাথে তার সামনে কখনো মিথ্যা বলতে পারে না।

কাব্য তখন আর একমুহূর্তও সময় নষ্ট না করে নামাজের রুমে ঢুকে আবিদাকে শক্ত করে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। আবিদা ভয় পেয়ে যায় আর অনেক আশ্চর্য হয়। জীবনে আজ প্রথম কাব্য আবিদাকে স্পর্শ করেছে। আবিদাও খুশীতে কাব্যকে জড়িয়ে ধরে। তারপর কাব্য কাঁদতে কাঁদতে বললো।

–আবিদা আমার ভুল হয়েছে। আমি বুঝতে পারিনি তোমাকে। আমি মিরার জন্য অন্ধ ছিলাম। তোমার প্রতি আমার অবহেলা যে তোমাকে এতো কষ্ট দিচ্ছিলো তা আমি বুঝতে পারিনি। আজ আল্লাহ আমাকে সব বুঝিয়ে দিল। তোমার সব মনের কথা আমি শুনেছি। তোমার সব ইচ্ছা আমি পূরণ করবো। আবিদা তুমি মা হবে৷ আমাদের সন্তান হবে। তোমাকে ভালোবাসবো আমি। আর কখনো অবহেলা করবো না। দয়া করে আমাকে মাফ করে দেও। তুমি মাফ না করলে আল্লাহ কখনো আমাকে মাফ করে না।

আবিদা তখন কাব্যর দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো।

—ছিঃ ছিঃ কি বলছেন। আমি একটুও রাগ নই আপনার উপর। মাফ তো সেই কবেই করে দিয়েছি। আপনাকে চোখের সামনে দেখি এই অনেক। শুধু একটু আপনার ভালোবাসা আর আমাদের সম্পর্কের একটা চিহ্ন চাই। আমাদের সন্তান। আমি কখনো জান্নাতকে তিল পরিমাণ কম ভালোবাসবো না। ও আমার কাছে জান্নাতের টুকরা। সত্যি বলছি ওদের দুজনের মাঝে কখনো ভেদাভেদ হবে না।

–হ্যাঁ আমি সব শুনেছি আমি আবিদা। তুমি যা চাবে ঠিক তাই হবে।

তারপর আবিদা কাব্যকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।

—খুব ভালোবাসি আপনাকে খুব। আপনারাই আমার সব৷ আপনাদের ছাড়া আমি শূন্য।

–আবিদা আর আপনি নয় আজ থেকে তুমি করে বলবে।

—হু বলবো।

এরপর সময়টা অনেক দ্রুত চলে যায়। আবিদার জীবনে সেদিন রাতের পর থেকে অনেক বড় একটা পরিবর্তন আসে। ওর মনে হয় আল্লাহ যেন ওকে ঝুড়ি ভরে অনেক সুখ দিয়েছে। আবিদা সারাক্ষণ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে। তাও কম মনে হয় ওর কাছে। হ্যাঁ আবিদার সব ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ও মা হয়েছে। আল্লাহ ওকে একটা ছেলে সন্তান দিয়েছে। জান্নাত ওর ভাইকে পেয়ে মহা খুশী। আর আবিদা খুশী তার স্বামী, মেয়ে আর ছেলেকে পেয়ে। আর ওদের চারজনকে দেখে সবচেয়ে বেশি খুশী কাব্যর মা। আর সেই সাথে শেষ হলো ওদের অসমাপ্ত গল্প। কারণ জীবন কখনো থেমে থাকেনা। সে চলবে।

আমাদের ভালো কর্ম আমাদেরও জান্নাত দিবে। আসুন সবাই আল্লাহর পথে চলি। জীবনটাকে সুন্দর করি। কারণ জান্নাত এতো সুন্দর যার কিঞ্চিৎ পরিমাণ দুনিয়াতে দেওয়া মাত্র।
.
সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here