গাঙচিল,পর্ব_০৫
লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
নিচ থেকে রোদ্দুর হাত পা ছড়িয়ে বিড়বিড় করে অস্পষ্ট সুরে বলল,
—“আমি চিপায় ফেঁসে গেছি।মরে যাচ্ছি বোধ হয়!”
অহি অনেক চেষ্টায়ও নিজের উপর থেকে পাগলটাকে সরাতে পারলো না।নার্স দুটো অনেক কষ্টে টেনে হিঁচড়ে পাগলটাকে সরিয়ে নিল একটু!অহি তড়িৎ গতিতে রোদ্দুরের উপর থেকে উঠলো।রোদ্দুরের পাশে ঘাসের উপর বসে নিজের ওড়না ঠিক করলো।রোদ্দুরের দিকে চোখ পড়তেই দেখে চোখ বন্ধ করে আছে।হাত পা বাঁকা তেঁড়া করে।বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলছে।হা হা করে শ্বাস নিচ্ছে।বুকের মাঝে উঠানামা করছে।
অহি অবাক হয়ে বলল,
—“আপনি ঠিক আছেন?নাকি ঘুমিয়ে পড়েছেন?এত তাড়াতাড়ি?”
রোদ্দুর ভাঙা গলায় বললো,
—“ও মাই গড!আমি বোধ হয় মরে গেছি।আমার শরীর থেঁতলে গেছে।রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।হাত পা নাড়াতে পারছি না।”
অহি দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।রোদ্দুরের হাত ধরে বলল,
—“রোদ্দুর স্যার!উঠুন!”
রোদ্দুর এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
—“খবরদার!আমায় আর ছুঁবে না অজান্তা।তুমি একটা কুফা!আমার সব ভেঙে গেছে।”
—“কি ভেঙে গেছে?সামান্য এতটুকু ভরে ভেঙে যায়?”
—“সব ভেঙে গেছে।সব মানে সব!”
এটুকু বলে অনেক কষ্টে উঠে বসলো।পাগলটার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল।পাগলটা বেশ দূরে লাল লাল চোখে তাকিয়ে আছে।ভারিক্কি শরীরের বয়স্ক লোক।
থুথু ছিটিয়ে চেঁচিয়ে রোদ্দুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
—“তুই একটা পাগল।মহাপাগল!তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল।”
এতক্ষণ অহির পিছনে পড়েছিল।এখন রোদ্দুরের পিছনে লেগেছে।রোদ্দুর মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বলল,
—“জ্বি দাদু।আমি পাগল।”
—“আবার কস তুই পাগল?শালা!”
এটুকু বলেই পাগল লোকটি এক ধাক্কায় নার্স দুটোকে ছাড়িয়ে রোদ্দুরের দিকে ফের তেড়ে আসতে আসতে বলল,
—“মর হারামজাদা মর!অভিনয় করোস?মইরা যা!”
রোদ্দুর বসে বসেই একটু পিছিয়ে গেল।অবস্থা বেগতিক দেখে ভো দৌঁড় শুরু করলো।পাগল এবার অহিকে পাশ কাটিয়ে রোদ্দুরের পেছনে ধাওয়া করলো।আর ভারী পুরুষালী কন্ঠে বলা শুরু করলো,
—“হারামজাদা, তোর পাগলামি ছুটামু আইজ!মর হারামজাদা মর!”
রোদ্দুর সারা মাঠে এক চক্কর দিয়ে অহির হাত ধরে দৌঁড়ে গেটের বাইরে চলে আসলো।গেটের বাইরে পা রেখেই দুজন হাঁফাতে লাগলো।ভেতর থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।রোদ্দুর গেটের ফুটো দিয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখলো চারজন নার্স মানুষটাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।পরিদর্শনকারী ডাক্তার বিরক্ত মুখে নার্সদের ঝাড়ি দিচ্ছে।একটা নার্স কাঁচুমাচু হয়ে বলল,
—“স্যার,ইনজেকশন পুশ করতে নিয়েছিলাম।তার আগেই লাফিয়ে বের হয়ে এসেছে।”
নার্সদের কথা কানে যেতেই মধ্য বয়স্ক পাগলটা ফের এক দলা থুথু ছিটিয়ে বলল,
—“মর হারামজাদা মর!তোক ন্যাংটা কইরা সারা দ্যাশ ঘুরামু!ইনজেকশন তোর পাছায় দিমু!”
আরো অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।রোদ্দুর চোখ সরিয়ে নিল।ভাগ্যিস সে হারামজাদা উপাধি পেয়েই মুক্তি পেয়েছে।অহির সামনে তাকে যদি ন্যাংটা করে সারা পৃথিবী ঘোরানোর কথা বলতো?ও মাই গড!কি লজ্জা!কি লজ্জা!
রোদ্দুর বাইকে উঠেই অহিকে তাড়া দিল।অহি চুপচাপ তার পেছনে বসে পড়লো।
রোদ্দুর চিন্তিত মুখে গাড়ি স্টার্ট দিল।এতদিন হসপিটালে আসা যা-ওয়া করছে এমন ঘটনার সাথে আজই প্রথম সাক্ষাৎ হলো।অবশ্য এর আগে মেয়েদের কেবিন থেকে তাকে বেশ কয়েকবার কাগজ ছুঁড়ে মেরেছিল।যে কাগজে এলোমেলো অক্ষরে আই লাভ ইউ লেখা ছিল।কিন্তু আজকের ঘটনাটা সাংঘাতিক!এর পর থেকে আর সে একা আসবে না।মাকে রিলিজের আগ পর্যন্ত কনস্টেবল বিদ্যুৎ কে সাথে নিয়ে আসবে।
৭.
অহির নিজের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই নেমে পড়লো।গলির মতো রাস্তাটুকু সে একাই যাবে।তার মা দেখলে হয়তো অনেক কথা শোনাবে।এখন একটু সাবধানে চলতে হবে।তার মায়ের মেজাজ বাবা ফেরাতে একটু ভালো হয়েছে।কোনো ভাবেই আর রাগিয়ে দেয়া যাবে না।
অহি ক্লান্ত অনেক।বাড়ি ফিরেই জম্পেশ একটা ঘুম দিবে।একেবারে সন্ধ্যার সময় উঠবে।সে এক ঝলক রোদ্দুরের দিকে চেয়ে বলল,
—“আমি তাহলে যাচ্ছি।”
রোদ্দুর নিজের মাথার হেলমেটটা খুলে বলল,
—“এদিকে এসো।আমার জিনিস আমাকে দিয়ে যাও।”
অহি বিস্ফারিত কন্ঠে বলল,
—“কি!কি দিবো?”
—“তোমার ওইটা!মানে আমার হেলমেট!”
অহি দপ করে নিভে গেল।আমতা আমতা করে বলল,
—“অহ,আচ্ছা!”
রোদ্দুর এতক্ষণে একটু হাসলো।হেসেই বলল,
—“তুমি যেটা মনে করেছিলে সেটাও দিতে পারো।আমি কোনো বাঁধা দিবো না।”
অহির পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেল।লজ্জায় চোখ মুখ লাল হয়ে আসছে বার বার।সে দুহাতে টেনে মাথার হেলমেট খোলার চেষ্টা করলো।রোদ্দুর বাঁধা দিয়ে বলল,
—“আরে!আরে! এভাবে না অজান্তা।ব্যথা পাবে তো।এদিকে এসো। আমি খুলে দিচ্ছি।”
অহি এক সাগর অনিচ্ছা নিয়ে দু পা এগিয়ে রোদ্দুরের কাছে আসলো।রোদ্দুর দু হাতে আস্তে আস্তে অহির মাথার হেলমেট খুলে দিল।হেলমেট খুলে অহির এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করতে হাত বাড়াতেই অহি ছিটকে পেছনে সরে গেল।নিচু হয়ে বলল,
—“আমি আসছি।সাবধানে যাবেন এসআই।”
অহি আর অপেক্ষা করলো না।দ্রুত পা চালিয়ে গলির ভেতর ঢুকে গেল।দুই মিনিট হাঁটার পর পেছন ঘুরে তাকালো।মানুষটা গেছে কি না!
রোদ্দুর যায়নি।বাইকের উপর ভর দিয়ে অহির গমনপথের দিকে চেয়ে আছে।জলপাই রঙের শার্টে কি সুন্দর লাগছে মানুষটাকে।অহির তীব্র ইচ্ছে হলো মানুষটাকে একটু জড়িয়ে ধরতে।সে কি পেছন ফিরে যাবে?রোদ্দুর হিম নামক মানুষটার কাছে ধরা দিবে?একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে?গিয়ে কি অনুরোধের স্বরে বলবে,প্লিজ আমায় একটু নিজের বুকে স্থান দিন?
অহি এসবের কিছুই করলো না।মায়া জিনিসটা খুবই খারাপ।সে মায়ায় জড়াতে চায় না।রোদ্দুর হাত নেড়ে তাকে বিদায় জানাতে অহির ঘোর কাটে।ফের দ্রুত পায়ে গলির আড়ালে চলে যায়।
বাড়িতে ঢুকে অহি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।তার মা ঘুমিয়ে।বাবা বাড়িতে নেই।হয়তো কাজের খোঁজে বেরিয়েছে।সে নিজের ব্যাগটা বিছানায় রেখে ওয়াশরুমে ঢুকলো।তার রুমের সাথে একটা ছোট্ট বাথরুম লাগানো।এই একটা জিনিস অহিকে স্বস্তি দেয়।মাঝরাতে প্রয়োজন হলে বাইরে বের হওয়া লাগে না।
অহি হাতে মুখে পানি দিয়ে নিজের দিকে তাকালো।নিজের শরীর শুকলো।রোদ্দুর নামক মানুষটার স্পর্শ গুলো এখনো লেগে আছে যেন।তার গোসল করতে মন চাচ্ছে না।ইচ্ছে হচ্ছে এমন স্পর্শ গুলো এভাবে সারাজীবন অঙ্গে মেখে বসে থাকে!তার মন পুলকে ভরে গেল।
অথচ ট্রাক ড্রাইভারটা বিয়ে ঠিক হওয়ার পর যখন ফাঁকা পেয়ে তার বুকে হাত ছুঁয়েছিল সেদিন নিজের প্রতি ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিল।এক দৌঁড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেছিল। সেদিন ওয়াশরুমে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেজা কাপড়ে ছিল।ইচ্ছে করেছিল শরীরের সমস্ত চামড়া তুলে নতুন চামড়া লাগায়!আজ কেমন অন্য রকম অনুভূতি।নাম না জানা অনুভূতি!
অহি বের হয়ে কিছুক্ষণ বিছানায় বসে রইলো।বহুদিন পর তার ভালো লাগছে।নিজের ভালো লাগার অনুভূতি কাছের কাউকে জানাতে ইচ্ছে করছে।সে উঠে দাঁড়িয়ে শফিকের রুমে ঢুকলো।
শফিক কাঠের চেয়ারে বসে মনোযোগ সহকারে পড়ছে।কিছুদিন পর ওর সেমিস্টার ফাইনাল এক্সাম।টিউশনি বাদ দিয়েছে কিছুদিনের জন্য।অহি শফিকের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটাতে চাইলো না।ভেতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগছে যেন।অবশেষে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল সে।
মুখ ঘুরতেই শফিক হাসিমুখে বলল,
—“বুবু ভেতরে আয়।”
অহি একটু হাসার চেষ্টা করলো।জড়তা নিয়ে ভেতরে ঢুকে বিছানায় বসলো।শফিকের বিছানার ছেঁড়া চাদর তার নজরে এলো।বহু জায়গায় ছেঁড়া।আগামী কাল গুলিস্তানের ওদিকে গেলে মনে করে একটা চাদর কিনতে হবে।
—“বুবু কি বলবি?”
—“তুই ভালো আছিস রে শফি?”
শফিক চমকালো সামান্য।অহি তার বেশি বড় নয়।প্রায় সমবয়সী।মাঝে মাঝে তো সে নাম ধরেও ডাকে।আজ হঠাৎ করে তার বুবুকে অনেক বেশি বড় মনে হলো।সে চেয়ার ঘুরিয়ে অহির মুখোমুখি বসে বলল,
—“বুবু তোর মন খারাপ?”
মুহূর্তে বিষণ্ণতায় ছেঁয়ে গেল অহির রঙিলা আকাশ।প্রখর রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে হুট করে পেঁজা তুলোর মতো ভারী ভারী মেঘ এসে স্তূপ জমাচ্ছে যেন।যে কোন মুহূর্তে ঝুম করে ঝরে পড়বে।এই সামান্য আগেও তার মন কত ভালো ছিল।হুট করে খারাপ হয়ে গেল।সে কান্না থামানোর চেষ্টা করে বলল,
—“শফি!শিউলির কথা খুব মনে পড়ে।”
শফিকের মনটাও খারাপ হয়ে গেল।কিন্তু বাইরে প্রকাশ করলো না।শিউলি তাদের ছোট বোন।তার চেয়ে শিউলি বছর চার-পাঁচের ছোট ছিল।ছোট্ট একটা দূর্ঘটনায় অকালে ঝরে গেছে সে।শিউলি ফুল অসময়ে ঝরে গেছে।
শফিক উঠে এসে অহির পাশে বসে।শিউলির মারা যাওয়ার পর ছোটবেলা থেকেই সে দেখে আসছে তার এই বোনটা লুকিয়ে কাঁদছে।অহি যখন কাঁদতো সে চুপচাপ অহির পাশে বসে থাকতো।আজও তাই করলো।অহির হাতটা নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।
৮.
রাতের খাওয়া শেষ করে মাত্র অহি বিছানা ঝেরে শুয়ে পড়েছিল।সঙ্গে সঙ্গে টুং শব্দ করে তার বাটন ফোনে মেসেজ আসলো।
সে ফোন হাতে না নিয়ে উঠে গিয়ে জানালার পাল্লা খুলে দিল। তার ছোট্ট চৌকিতে শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশের অনেকখানি দেখা যায়।দেখতে ভারী ভালো লাগে।কত রাত সে এই আকাশের দিকে চেয়ে নির্ঘুম কাটিয়েছে!কতরাত নোনাজলে গাল ভেসেছে!কত রাত সে নানা রঙের স্বপ্ন বুনে নীল আকাশে পাড়ি জমিয়েছে।তার সব বলা না বলার অনুভূতি, কথার সাক্ষী ওই অসীম আকাশের এ টুকরো আকাশ!
ফোনে টুং করে আবার মেসেজের আওয়াজ আসলো।অহি এবার লাইট বন্ধ করে ফোন হাতে নিল।মেসেজ চেক করতেই তার হাত পা ঘামতে শুরু করলো।রোদ্দুর মেসেজ পাঠিয়েছে।প্রথম মেসেজে লেখা,
“ঘুমিয়ে পড়েছো?একটু বাইরে আসো তো।”
দ্বিতীয় মেসেজে লেখা,
“আমি তোমাদের বাড়ির সামনে। বাইরে বের হবে নাকি আমি ঢুকবো?তোমাদের গেট কিন্তু ধাক্কা দিলেই খুলে যায়।”
অহি কি করবে বুঝতে পারছে না।রোদ্দুর স্যার সত্যি বলছে নাকি মজা করছে সেটাই বুঝতে পারছে না।তাছাড়া এত দূর থেকে মানুষটা এত রাতে চলে আসবে?রাত তো দশটা বাজে প্রায়!তার বাবা মার কাছে দশটা মানে ঢেড় রাত।এত রাতে রোদ্দুরের এ বাি পা রাখা মানে চরম বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করা।সে দরজা দিয়ে উঁকি দিল।বাবা-মার ঘরে লাইট জ্বলছে।শফিক লাইট জ্বালিয়ে পড়াশোনা করছে।
অহি পা টিপে বারান্দায় বের হতেই তার বাবা জলিল বলল,
—“অহি কই যাস এত রাতে?”
অহি ঝটপট বলল,
—“খাওয়ার পর চল্লিশ কদম হাঁটাহাঁটি করতে হয় বাবা।হাঁটছি আমি!”
এটুকু বলে সে বারান্দার এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত একটা চক্কর দিয়ে সুন্দর মতো রুমে গেল।আর কিছু চিন্তা না করে গলা পর্যন্ত কাঁথা টেনে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো।গোল্লায় যাক এসআই!
মিনিট দশেক নিরবতার পর অহি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।মানুষটা চলে গেছে।তাছাড়া এতক্ষণ অপেক্ষা করার মতো মানুষ তিনি নন।সে খুশিমনে পাশ ফিরে শুতেই বিষণ্ণ সুন্দর পুরুষালী কন্ঠ কানে আসলো।ক্ষীণ স্বরে বলছে,
—“চাচাজী আছেন?আমি রোদ্দুর হিম।”
অহি এক লাফে বিছানায় উঠে বসলো।অন্ধকারে তার কপাল দিয়ে ঘাম চিকচিক করছে।
জলিল বাইরে বের হয়ে যখন রোদ্দুরকে দেখলো তখন কপালে সূক্ষ্ণ চিন্তার রেখা সৃষ্টি হলো।অহির মা রেখা দরজার আড়াল থেকে রোদ্দুরকে দেখেই ভয় পেয়ে গেল।যদিও এখন ছেলেটার গায়ে পুলিশের পোশাক নেই,তবুও এই ছিপছিপে চেহারার ছেলেটাকে ভীষণ ভয় পান।পুলিশ মানেই আতংক।ততক্ষণে শফিকও পড়ার টেবিল থেকে উঠে এসেছে।সবার চোখে মুখে আতংকে ছেয়ে গেছে।শুধু দেখা যাচ্ছে না অহিকে।
জলিল জড়তা কাটিয়ে বলল,
—“আপনি?হঠাৎ আবার?কোনো অঘটন ঘটলো নাকি?”
রোদ্দুর কয়েক পা এগিয়ে এসে বলল,
—“চাচাজী।এখন আমার শরীরে সরকারি পোশাক নেই।আমাকে আপনি তুমি বা তুই করে বলবেন।আমি আপনার ছেলের মতো।”
—“সে কি!তুমি হঠাৎ এত ভালো ব্যবহার করছো কেন গো বাবা?কি উদ্দেশ্যে এসেছো গো বাবা?”
রোদ্দুর অহির ঘরের দিকে এক পলক তাকালো।তারপর জলিলের দিকে চেয়ে অত্যধিক বিনয়ের সহিত বলল,
—“বড়ই বিপদে পড়ে এসেছি বুঝেছেন চাচাজী!আমার তেল শেষ।না মানে আমার না!আমার মোটরসাইকেলের তেল শেষ।আর চলছে না।কি কান্ড দেখেছেন?এই আপনার ঘরের সামনে এসেই তেল ফুরিয়ে গেল!আমার মনে হয়, এগুলো থার্ড পার্টি মানে ভূত টূতের কারবার!চলুন!ভেতরে গিয়ে কথা বলি চাচাজী।”
(চলবে)