গাঙচিল,পর্ব-০৯,১০
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
পর্ব-০৯
বহু বছর পর নিজের মনের কথা শুনলো অহি।উঁচু হয়ে রোদ্দুরের বাম গালে চুমু খেল।রোদ্দুর যেন আকাশ থেকে পড়েছে।বিস্ফারিত চোখে বড় বড় করে অহির দিকে চেয়ে আছে।অহির চেপে রাখা হাত থেকে নিজের হাত খসে পড়েছে অনেক আগেই!
রোদ্দুরকে এই মুহুর্তে বড্ড ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে অহির কাছে।তাকে জ্বালাতে বেশ ভালো লাগছে।ভালো লাগছে তাকে লজ্জায় ফেলতে।সে রোদ্দুরের আরো একটু কাছে এগিয়ে গেল।কিছুক্ষণ রোদ্দুরের চোখের দিকে চেয়ে রইলো।তারপর পায়ের উপর ভর দিয়ে আরো একটু উঁচু হয়ে ফট করে রোদ্দুরের ডান গালে স্বশব্দে চুমু খেল।
রোদ্দুর দুই গালে হাত রেখে ঝড়ের বেগে পেছন দিকে সরে গেল।
অস্পষ্ট স্বরে বলল,
—“ও মাই গড!এ-এসব কি হচ্ছে?আ-আমি স্বপ্ন দেখছি!নিশ্চিত স্বপ্ন দেখছি।”
অহি মিষ্টি করে হাসলো।রোদ্দুরের নাকে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিল।রোদ্দুরের ঠোঁটে হাত ছুঁইয়ে সে এক ছুটে নিজের রুমে ঢুকে গেল।অহি চলে যেতেই রোদ্দুর ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো।বুকের বা পাশে হাত চেপে বড় বড় করে নিঃশ্বাস ফেলল।পানি খেতে হবে!হ্যাঁ!পানি খেতে হবে।কিন্তু উঠার শক্তি নেই।একটু দূরে রাখা জগের দিকে সে তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো।
ডারউইনের বিবর্তন মতবাদকে প্রমাণ করার জন্যই হয়তো সে বিরতিহীন ভাবে মনে মনে বলতে শুরু করলো,
—“আয় পানি এদিকে আয়!প্লিজ আমার কাছে আয়!কাছে আয় না!প্লিজ!”
শফিকের চোখ ভার হয়ে গেছিল।পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে টেবিলের উপরই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিল।হঠাৎ করেই অবচেতন মনের ধাক্কায় সে উঠে পড়লো।সামনে রাখা খোলা বইয়ের পেইজ উল্টে দেখলো কতটুকু বাকি আছে।দেড় পেইজের মতো পড়া বাকি।এটুকু ভোর রাতে শেষ করা যাবে।এখন আর পারবে না।শরীর ও মন কোনোটাই স্ট্যাবল না!কোনোটাই পড়াশোনা নিতে চাচ্ছে না।
সে বই বন্ধ করে বড় করে হাই তুলল।ছোট্ট লাইটটা বন্ধ করে বিছানাতে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
—“এসআই!সরে যান।আমি ঘুমাব।খবরদার,গায়ের উপর পা দিবেন না!কালকের মতো আজ রাতেও পা দিলে কিন্তু এক লাথি দিয়ে ফেলে দিবো।”
কোনো সাড়া আসলো না।শফিক নিজের বালিশে শুয়ে পড়লো।কি এক বিপদ হয়েছে।তার ছোটবেলা থেকে একা ঘুমিয়ে অভ্যাস।কেউ পাশে তার থেকে এক হাত দূরে ঘুমালে ঘুম হয় না।সেখানে এই এসআই গতরাতে তার ঘুমের দফারফা করে দিয়েছে।একটু পর পর পেটের উপর পা তুলে দিয়েছে।ঘুমানোর কোনো শ্রী নেই!শফিকের মুখের ভেতর হাত দেয়,নাকের ভেতর আঙুল ঢুকিয়ে দেয়!দু বার তো ঘুমের ঘোরে বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে।শফিকের তাতে দম যায় যায় অবস্থা।কি বিদঘুটে পরিস্থিতি!
সারা রাত সে জেগে ছিল।ভোর রাতে সাপের মতো কুন্ডলী পাকিয়ে দুই ইঞ্চি জায়গা নিয়ে একদম কর্ণারে শুয়ে ছিল।সকালবেলা যখন অহি বুবুর ডাকে জেগে উঠলো দেখে সে ঠান্ডা ফ্লোরে শুয়ে আছে।নো ওয়ে!আজ রাতে এসব কিছু সে টলারেট করবে না।এমন কিছু করলে লাথি দিয়ে বুবুর রুমে পাঠিয়ে দিবে।
চোখ বন্ধ করে কি মনে হয়ে সে আবার চোখ খুলে পাশে তাকালো।অন্ধকারেও সে স্পষ্ট বুঝতে পারলো রোদ্দুর স্যার এখানে নেই।সে হাতড়ে দেখলো সত্যি সত্যি ফাঁকা।শফিকের কপাল কুঁচকে গেল।এত রাতে আবার কোথায় গেল?
বিছানা ছেড়ে উঠে লাইট জ্বালাল।রান্নাঘরের আলো জ্বলছে।সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়াল।ভেতরে চোখ পড়তে সে চমকে উঠলো।নিজের অজান্তে মুখে দিয়ে বেরিয়ে গেল,
—“ক-কে?”
রোদ্দুর হাঁটু ভাজ করে তার উপর মাথা রেখে বসেছিল এতক্ষণ।শফিকের ভয়ার্ত কন্ঠ কানে যেতে মাথা তুলে তাকালো।
রোদ্দুরকে এই অবস্থায় দেখে শফিক অবাক হলো।তাকে উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে।সে এগিয়ে গিয়ে রোদ্দুরের পাশে পায়ের উপর ভর দিয়ে বসে পড়লো।নরম গলায় বললো,
—“এভাবে বসে আছেন কেন?আমায় তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন একদম!সাংঘাতিক মানুষ আপনি!মাইরি!”
রোদ্দুর লাল লাল চোখে কিছুক্ষণ শফিকের দিকে চেয়ে রইলো।তারপর হুট করে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো শফিককে।শফিক ভয় পেয়ে রোদ্দুরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।না পেরে বলল,
—“কি করছেন কি?ছাড়ুন!আপনি পাগল হয়ে গেছেন?”
রোদ্দুর ছাড়লো না।উল্টো হাসিমুখে বলল,
—“শফিক আজ নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।এত খুশি বোধ হয় কোনোদিন হইনি।নাচতে ইচ্ছে করছে!গাইতে ইচ্ছে করছে!ভুল করতে ইচ্ছে করছে।সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।যা তা করতে ইচ্ছে করছে।সর্বোপরি ইচ্ছে করছে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে ধরে ধরে একটা করে চুমু খাই!”
শফিকের মাথায় কিছুই ঢুকলো না।তাকে অবাকের শীর্ষে রেখে রোদ্দুর তাকে ছেড়ে দিল।সে সরে আসতে নিতে রোদ্দুর তার চিবুক ধরে গালে স্বশব্দে চুমু খেল।শফিক খরগোশের মতো শশব্যস্ত হয়ে ছিটকে সরে গেল।নিজের গাল বারংবার মুছে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
—“রোদ্দুর ভাইয়া!আপনি পাগল হয়ে গেছেন।নিজের সেন্সে ফেরেন।আমি শফিক!আমি শফিক!এই দেখুন!আমি শফিক!”
রোদ্দুর মিষ্টি করে হেসে বলল,
—“জানি!”
—“জানেন?তাহলে আমাকে চুমু দিলেন কেন?”
শফিক গালে হাত রেখে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে রোদ্দুরের দিকে।তাকে আরেক দফা অবাক করতেই বোধ হয় রোদ্দুর এক টানে নিজের টিশার্ট খুলে ফেলল।
শফিক এবার কেঁদে দিয়েছে প্রায়।অস্পষ্ট স্বরে কোনোরকমে বলল,
—“আ-আপনি জামাকাপড় খুলছেন কেন ভাইয়া?সব খুলে ফেলছেন কেন?”
রোদ্দুর স্বাভাবিক ভাবে বলল,
—“কই সব খুলছি?ব্রো রিলাক্স!প্রচুর গরম লাগছে।সেজন্য জাস্ট টিশার্ট খুললাম।আর কিছু খুলবো না।চলো!ঘুমিয়ে পড়ি ! ”
রোদ্দুর টিশার্টটা গলায় জড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো।তাকে বড্ড বেশি খুশি লাগছে।সে এগিয়ে এসে শফিকের হাত ধরে বলল,
—“ব্রো,চলো!শুয়ে পড়ি গিয়ে!”
শফিক এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিল।স্পষ্ট গলায় বললো,
—“আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না।আপনি আমাকে যেমন ভাবছেন,আমি তেমন নই!”
রোদ্দুর থেমে গেল।অবাক হয়ে আস্তে আস্তে বলল,
—“কি বলছো পাগলের মতো?তুমি কেমন নয়?”
—“আপনি পাগল!আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠী পাগল!আপনার পরবর্তী প্রজন্মের সবাই পাগল!বুঝতে পেরেছেন?”
—“শফিক!আর ইউ অকে?কি বলছো এসব?”
—“আমি যা বলছি ঠিক বলছি!যেমন আছি একদম ঠিক আছি।আমি আপনার সাথে এক বিছানায় ঘুমাব না মানে ঘুমাব না!”
রোদ্দুর অবাক হয়ে অহির রুমের দরজার দিকে এক পলক তাকালো।পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ।সবাই গভীর ঘুমে।শুধু তারা দুজন জেগে।রোদ্দুর এক পা বাইরে রেখে বলল,
—“শফিক,ছেলেমানুষী করবে না।তুমি আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না তাহলে কোথায় ঘুমাবে?এ বাড়িতে কি এক্সট্রা রুম আছে আরো?না!নেই!”
—“আমার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না।আপনার মতলব আমি সব বুঝতে পেরেছি।কস্মিনকালেও আমি আর আপনার সাথে ঘুমাব না।”
এটুকু বলে শফিক দরজার আড়ালে রাখা মাদুর এক টানে বের করলো।রান্নাঘরের ফাঁকা অংশতে বিছিয়ে সটান শুয়ে পড়লো তার উপর।রোদ্দুর অবাক হয়ে সব দেখছে।এর আবার হঠাৎ করে কি হলো?
রোদ্দুর কনফার্ম হতে বলল,
—“তার মানে তুমি এখানে ঘুমাবে?সারারাত এখানে থাকবে?সত্যি?”
শফিক নিজের হাত ভাঁজ করে মাথার নিচে দিল।রোদ্দুরের দিকে চেয়ে বলল,
—“অবশ্যই সত্যি।আলবাত সত্যি।তিন হাজার সত্যি।”
রোদ্দুর আর বিরক্ত করল না।গুনগুন করে দু বার গাইলো,
“মনের কিনারে চলে আয়….
এলোমেলো করে দে আমায়…”
শফিক ভয়ার্ত চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকালো। রোদ্দুরের সেদিকে খেয়াল নেই।সে মাথা নেড়ে আস্তে করে রান্নাঘরের দরজা ভিড়িয়ে অহির দরজার সামনে দাঁড়লো।কয়েক মিনিট চুপচাপ অহির রুমের দরজায় হাত বুলালো।তারপর দরজায় একটা চুমু দিয়ে হনহন করে শফিকের রুমে ঢুকলো।
১৫.
ভোরবেলা আযানের শব্দে ঘুম ভাঙলো রেখার।তবুও সে কিছুক্ষণ শুয়ে রইলো।দক্ষিণের কলপাড় থেকে কেমন যেন শব্দ আসছে কানে।শব্দটা নতুন নয়!প্রায়ই তার কানে আসে।মনে হয় কেউ একজন কলে চাপ দিয়ে পানি তুলছে।অথচ ভোরবেলা এ বাড়িতে কল চেপে পানি তোলার মানুষ নেই।
তবুও সন্দেহের জের ধরে তিনি কয়েক বার উঠে গিয়ে পরীক্ষা করেছেন।কাউকে দেখতে পাননি।এটা তার মনের ভুল হয়তো!তা না হলে কল চাপার শব্দ কেন শুধু তার কানেই আসবে?
দূরে কোথাও বেসুরো কন্ঠে কা কা করে যাচ্ছে। সকাল হতে না হতেই কাকের ডাক?এই আঁধার না কাটতেই কাক ডাকা শুরু করলো কেন?কাক কি মানুষের মতো নির্ঘুম রাত কাটায়?কাকের কি সন্তান হারানোর কষ্ট আছে?কে জানে!
রেখা ঘাড় ঘুড়িয়ে আবছা আলোয় স্বামীর পানে তাকালেন।মাথা ন্যাঁড়া করায় আলাদীনের দৈত্যের মতো লাগছে তাকে।বহু বছর পর রেখার আফসোস হলো।এমন একটা গর্দভ মানুষের জন্য সে নিজের পরিবার জলাঞ্জলি দিল?কিভাবে পারলো?মানুষের দিনে দিনে বুদ্ধি বাড়ে।সুতীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের হয়।এর তো উল্টো হচ্ছে।দিন দিন আরো বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে। একটা কুঁচো চিংড়ির মাথায় যতটা বুদ্ধি আছে এর মাথায় তাও নেই!
রেখা উঠে পড়লো।মশারির ভেতর থেকে সাবধানে বের হলো।ঝুলন্ত সুইচ টিপে দিতেই সারা ঘর আলোয় ভরে উঠলো। জলিল চোখ মুখ কুঁচকে ঘুমজড়ানো কন্ঠে বলল,
—“থাড়ু!লাইট বন্ধ করো গো!”
রেখার ইচ্ছে করছে জলিলের টাক মাথা ফাটাতে।সে মনে মনে বলল,
—“বজ্জাত।তুই থাড়ু,তোর বাপ থাড়ু,তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী থাড়ু!”
মেজাজ তিরিক্ষি হওয়া শুরু করলো তার।কিন্তু সে এই ভোরবেলা মেজাজ খারাপ করতে চাচ্ছে না।সেজন্য চুপচাপ দরজা খুলে বের হলো।
কলপাড়ে গিয়ে হাতে মুখে পানি দিল।শাড়ির আঁচলে মুছে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল।অন্ধকার এখনো ভালো মতো কাটেনি।
রান্নাঘরের দরজা খুলে পা রাখলো রেখা।রান্নাঘর পুরো অন্ধকার।দু পা এগিয়ে যেতে মানুষের মতো কিছু একটার সাথে বেঁধে ধাড়াম করে পড়ে গেল সে। সঙ্গে সঙ্গে চোখ বন্ধ করে এক চিৎকার দিল।
—“ভূত!”
তার চিৎকারে সবার আগে শফিকের ঘুম ভাঙলো।চোখ কচলে মায়ের দিকে তাকালো।মায়ের ভয়ার্ত মুখ দেখে তার মায়া হলো।কিন্তু সে কিছু না বলে উল্টো শুয়ে পড়লো।তার মায়ের মনে ভূত নামক জিনিসটা নিয়ে প্রচুর বাড়াবাড়ি!
কয়েক সেকেন্ড লাগলো সবার পৌঁছাতে।ঘুম ঘুম চোখে জলিল, রোদ্দুর আর অহি বের হয়ে এসেছে।অহি এগিয়ে গিয়ে দ্রুত লাইট অন করলো।শফিককে মেঝেতে শুইয়ে দেখে আর মাকে তার পাশে মুখ ঢেকে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল অহির।রোদ্দুর এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“চাচি মা।ভূত কোথায়?ভূতের গোষ্ঠীর আজ দফারফা করবো।বাড়িতে ঢোকার সাহস পায় কি করে এগুলো?তাও আবার সরাসরি রান্নাঘরে!”
রেখা মুখ থেকে হাত সরিয়েছে।তার শরীর কাঁপছে ভয়ে।কয়েক সেকেন্ড চারপাশে তাকিয়ে সব বোঝার চেষ্টা করলো।শফিককে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে সব বুঝে গেল।তাকে ভয় দেখানোর জন্য এক চড় মারলো তার মাথায়।শফিক বিরক্ত স্বরে বলল,
—“মা!বিরক্ত করবে না।অনেক রাতে ঘুমিয়েছি কিন্তু।”
রেখাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রোদ্দুর কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করলো,
—“চাচি মা!ভূত কোথায়?আশপাশে তো চোখে পড়ছে না?”
রেখা কপাল কুঁচকে রোদ্দুরের দিকে তাকালো। উল্টো করে টিশার্ট পড়েছে ছেলেটা।তাতেও সামনের গলা পেছনে।ছেলেটা এত বেকুব?তার মাথা ন্যাঁড়ার থেকেও বেকুব!সে শক্ত কন্ঠে বলল,
—“ভূত কি দেখা যায় যে চোখে পড়বে?”
—“সে কি!চাচি মা,আপনি না মাত্র ভূত বলে চিল্লালেন?আপনি দেখলেন কি করে?তবে কি আপনার সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে?”
অহি চোখ গরম করে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর সে চোখের আগুনে ঝলসে গেল যেন।সবার আড়ালে বুকে হাত রাখলো।
অহি শফিকের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
—“শফি উঠে বস।তুই এখানে শুয়ে কেন?”
শফিক অনিচ্ছা নিয়ে উঠে মাদুরে বসলো।রাতে বালিশ ছাড়া ঘুমানোর ফলে ঘাঁড় ব্যথা হয়ে গেছে।নাড়ানো যাচ্ছে না।তবুও সে মাথা কয়েকবার ডানে বামে ঘুরিয়ে বলল,
—“রোদ্দুর ভাইয়ার জন্য বুবু।”
সবাই অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর ভীত চোখে চেয়ে বলল,
—“কি সাংঘাতিক!এই শফিকটা নিশ্চিত আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।ভাই শফিক!আমি কি কোনো ভাবে তোমাকে হার্ট করেছি?এভাবে ফাঁসাচ্ছো কেন?”
শফিক এক পলক রোদ্দুরের দিকে তাকালো।তারপর বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,
—“আরে রোদ্দুর ভাইয়ার ঘুমানোর কোনো শ্রী নেই।ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে ধরে।গায়ের উপর পা তুলে দেয়।বিরক্ত লাগে!বুকের উপর হাত দেয়।”
অহি বিস্ফারিত চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।রোদ্দুর বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলল,
—“এইডা একটা ডাহা মিছা কথা।”
শফিক বলল,
—“আমি কোন স্বার্থে মিথ্যে বলতে যাব এসআই?আপনার ঘুম জঘন্য, জঘন্য এবং জঘন্য।”
অহি উঠে দাঁড়ালো।বাইরের দিকে পা রাখতে রোদ্দুর তোতলানো স্বরে বলল,
—“অজান্তা,তুমি একদম শফিকের কথা শুনবে না।ভয় পাওয়ার কিছু নেই!আমি ঘুমের ঘোরে নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করতে পারি।তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না তো?তাহলে তুমি একদিন আমার সাথে ঘুমিয়েই দেখো না!”
রোদ্দুর বলার পরেই জিভ কাটলো।ছি!হবু শ্বশুর শ্বাশুড়ির সামনে কি বলে দিল?তার জিভ লাগামছাড়া কবে থেকে হলো?সে সবার সামনেই ঠাস করে নিজের গালে চড় দিল।সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে অহেতুক হাসার চেষ্টা করলো।কিন্তু কারো মুখো ভঙ্গির কোনোরূপ পরিবর্তন সাধিত হলো না।সে নিতান্ত অনিচ্ছায় রান্নাঘর থেকে বের হলো।
রোদ্দুর চলে যেতেই জলিল গলা খাঁকারী দিল।এতক্ষণ অনেক কীর্তন শুনেছে।আর শুনবে না।সে ধমকের সুরে শফিককে বলল,
—“শফিক!”
—“বলো বাবা!”
—“তুমি এই ভাবে বাবা জীবনকে অপমান করতে পারো না।সে ঘুমের মধ্যে হাত উঠাক,পা উঠাক,প্রয়োজনে নাক,কান,গলা, ফুসফুস সব উঠাক তোমার উপর!তুমি এভাবে বলবে কেন?এতে তার সম্মানহানি হয়!”
শফিক বিরক্ত হয়ে বলল,
—“বাবাজীবন তোমার, আমার না বাবা!আমার এসবে টলারেন্স ক্ষমতা একদম নেই বললেই চলে।আজ থেকে তুমি বরং তোমার বাবা জীবনকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ো!”
অহির কান ঝালাপালা হয়ে গেল।এই ছেলে কবে মানুষ হবে?নাকি কোনোদিন হবে না?হাঁদারাম!গাধা কোথাকার!
(চলবে)
গাঙচিল
লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
পর্ব_১০
১৬.
রোদ্দুর ক্ষীপ্র কন্ঠে বিদ্যুৎকে ডাকলো।কনস্টেবল বিদ্যুৎ তৎক্ষনাৎ কেবিনে ঢুকে সালাম দিল।রোদ্দুরের দু চোখ কম্পিউটারের মনিটরে নিবদ্ধ।বাম হাত কীবোর্ডের উপর নড়াচড়া করছে।ডান হাত থেকে থেকে কম্পিউটারের মাউস এদিক সেদিক ঘুরিয়ে ক্রমাগত কিছু খুঁজে যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।ভেতরে ভেতরে উসখুস করছে সে।রোদ্দুর স্যার প্রায়ই তাকে ডেকে দাঁড় করিয়ে রাখে।এর কর্মকান্ড সব অদ্ভুত।মাঝে মাঝে তো ডেকে অদ্ভুত সব প্রশ্ন করে।এই কিছুদিন আগে ফ্রি টাইমে তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল,
—“আচ্ছা বিদ্যুৎ!তুমি কি বিবাহিত?”
বিদ্যুৎ অতিশয় বিনয়ের সহিত বলেছিল,
—“না স্যার!”
—“তোমার কি পছন্দের কেউ আছে?মানে কাউকে ভালোবাসো এমন কেউ আছে?”
খুবই ব্যক্তিগত প্রশ্ন।তবুও বিদ্যুৎ হাসিমাখা মুখে বলেছিল,
—“জ্বি স্যার!ছোটবেলা থেকে একজনকে ভালোবাসি।ও আমার ক্লাসমেট ছিল বারো বছর।আমরা সমবয়সী!কলেজ পাস করে আমি চাকরিতে ঢুকলাম।ও অনার্সে পড়াশোনা করছে।ওর পড়া শেষ হলে বিয়ে করবো দুজন।”
—“বাহ!ইন্টারেস্টিং!কিন্তু ধরো,মেয়েটা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে তার মতো অন্য কোনো গ্রাজুয়েটকে বিয়ে করলো।তখন কি করবে?”
বিদ্যুৎয়ের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠেছিল।ঠিকই তো!যদি তার ভালোবাসা হেরে যায়?নাহ!তা কখনো হবে না।জলি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।সে তাকে রেখে অন্য কারো হতেই পারে না।বিদ্যুৎ মন খারাপ ভাব লুকিয়ে বলেছিল,
—“এমন হবে না স্যার!জলি আমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে।”
—“কি কিউট!এদিকে দেখো!আমি যাকে ভালোবাসি সে অদ্ভুত একটা মেয়ে।জগতের সব রহস্য যেন তার মধ্যে বিদ্যমান।আমার সাথে সবসময় লুকোচুরি খেলছে।তোমাকে একটা গোপন কথা বলি।তুমি কিন্তু কিছু মনে করবে না বিদ্যুৎ।আসলে তোমাকে ‘মাই ডেয়ার’ টাইপ ভাবি!”
—“জ্বি স্যার!জ্বি স্যার!বলুন!”
রোদ্দুর স্যার টেবিলে পিরিচ দিয়ে ঢেকে রাখা গ্লাসের পানি এক নিঃশেষে শেষ করে বলেছিল,
—“আমি একটা মেয়েকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।কিভাবে এত ভালোবেসে ফেললাম নিজেই জানি না।এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে তাকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ডও ঠেলাগাড়ির মতো ঠেলে ঠেলে নিতে হয়।বাকি জীবনটা কিভাবে নিবো বলতে পারো?”
—“বিয়ে করে ফেলুন স্যার।যত দ্রুত সম্ভব তাকে বিয়ে করে ফেলুন।”
—“সেখানেই তো সমস্যা বিদ্যুৎ।সে আমাকে কোনো একটা কারণে বিয়ে করতে চাচ্ছে না। কারণটা কিছুতেই বলছে না।অনেক চেষ্টা করেছি এবং করছি।বলছে না সে!কিন্তু এতদিন তার আচার আচরণে অনেক পজিটিভ সাইন ছিল যা দেখে বুঝতে পেরেছি সেও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।একদিন রাতের বেলা তো ফট করে আমার দু গালে দুটো চুমুও দিল।”
বিদ্যুৎতের লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছিল।চুমুর কথাও বলতে হবে?এই প্রসঙ্গটা না বললে কি হতো!রোদ্দুর স্যার নিজের খেয়ালে নেই।একটুপর বেশ চিন্তিত গলায় বলেছিল,
—“কিন্তু এখন আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে না।বুঝতে পারছো বিষয়টা?আমাকে অসুস্থ করে এখন আমার দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না।তার বাবা-মা, ভাই সবাই রাজি।শুধু সে বেঁকে বসেছে।”
—“স্যার জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলুন।”
—“ভেবে দেখছি কি করা যায়।”
তারপর আর কথা হয়নি।আজ আবার কেন ডাকলো কে জানে!বিদ্যুৎ নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকালো।সকাল এগারোটা বেজে তেরো মিনিট।সবগুলো বিজোড় সংখ্যা!সে এক পলক রোদ্দুরের দিকে চেয়ে গলা খাঁকারি দিল।নিজের উপস্থিতি বুঝানোর জন্য।
কিছুক্ষণ পরেই রোদ্দুর ঝটপট উঠে দাঁড়ালো।কম্পিউটার শাট ডাউন করে বলল,
—“বিদ্যুৎ ইমিডিয়েটলি বের হতে হবে আমাদের।মগবাজারের যে দম্পতি গতকাল ছেলের মিসিং কেস ফাইল করলো তার হদিস পা-ওয়া গেছে।ছেলেটার ফোন মহাখালীর ওদিকে যে বড় রেস্টুরেন্টে আছে ওখানে ট্রেস করা হয়েছে।মিনিট বিশেক আগে অন ছিল।কারো সাথে দুই মিনিট কথা বলেছে।এখন আবার ফোন বন্ধ।লেটস গো!”
—“ইয়েস স্যার!”
রোদ্দুর কাচের টেবিল থেকে চাবিটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বের হলো দ্রুত।বিদ্যুৎ তার পেছন পেছন গেল।চারজন কনস্টেবল আর ড্রাইভার নিয়ে রোদ্দুর পুলিশের গাড়িতে উঠলো।গাড়ি মহাখালীর দিকে ছুটতেই ফোনে টুং করে শব্দ হলো।সে এক হাতে ফোন বের করে চেক করলো।অহি মেসেজ পাঠিয়েছে।এতটুকু শব্দের।বাংলা ফ্রন্টে লিখেছে,
“বিকেল চারটার সময় লঞ্চঘাটে অপেক্ষা করবো।কথা আছে,আপনি আসবেন কিন্তু!”
রোদ্দুরের মুখে ক্ষীণ হাসির রেখা দেখা দিল।
১৭.
বিকেল চারটা বাজার বারো মিনিট আগে রোদ্দুর শত মানুষের ভিড় ঢেলে আজমেরী গ্লোরী নামের বাসে উঠেছে।ইচ্ছেকৃত ভাবে বাইক নিয়ে আসেনি।আজ সে অহির সাথে পায়ে পা ফেলে হাঁটবে ঢাকার ব্যস্ততম শহরে!এই সুযোগটা দেয়ার জন্য সে অলরেডি অহিকে লক্ষ কোটি বার মনে মনে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তার বুকের ভেতর উথাল পাথাল ঢেউ খেলে যাচ্ছে।সাথে ঝড়ের আশংকা করছে।অহি তাকে কেন ডাকছে ঠাওর করতে পারছে না।অহির বাড়ি থেকে সে এসেছে আজ সতেরো দিন হলো।আর যাওয়া হয়নি।যাওয়া হয়নি বলতে যেতে পারেনি।অহির কড়া নিষেধ।ও বাড়িতে গেলে নিজের ক্ষতি করে ফেলবে সে।নিজেকে কষ্ট দিবে।রোদ্দুরের আর সাহস হয়নি!যদি সত্যি সত্যি যদি অহি নিজের ক্ষতি করে ফেলে!
সব ঠিকঠাক ছিল।অহির মাও বিয়েতে হ্যাঁ বলে দিয়েছিল।অহি তখন কোনো উত্তর দেইনি।লাজুক হেসেছিল।সবাই বুঝে গিয়েছিল অহির মত আছে।রোদ্দুর চরম খুশি।সেদিনই তার মাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে নিয়ে গেল।সার্বক্ষণিক সেবার জন্য নতুন একজন মহিলা নিযুক্ত করলো।দু একদিনের মধ্যে বিয়ে।হঠাৎ সেদিন অহি তাকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠাল।রোদ্দুরের আনন্দ ধরে কে!বাইক ছুটিয়ে অতিদ্রুত অহিদের বাড়িতে পা রাখলো।গিয়েই দেখে সবার থমথমে মুখ।কিছু জিজ্ঞেস করতে অহি রুদ্রমূর্তি রূপে তাকে জোর গলায় বলে সে যেন আর এ বাড়িতে না আসে।কারো সাথে যোগাযোগ না রাখে।তার কথা না শুনলে সে বিষ টিষ খাবে।
রোদ্দুর ভয় পেয়ে গেছিল।আর সাহস হয়নি ও বাড়ি যাওয়ার।তবে এ কয়েকদিন সে মেসেজে অহিকে বিভিন্ন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিসের জন্য বিয়ে করতে চায় না সেটা জানতে চেয়েছে।অহি শুনতে নারাজ,মানতে নারাজ!ফোন দেওয়ায় বিরক্ত হয়ে তো তার নাম্বারও ব্লকলিস্টে রেখেছিল।অহির হঠাৎ এত পরিবর্তন রোদ্দুরের মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
সদরঘাটে তিন রাস্তার মোড়ে রোদ্দুর বাস থেকে নামলো।বাস থেকে নামার পরেই বুঝতে পারলো আজ আকাশ মেঘলা।সাথে মাতাল করা বাতাস।বাতাসে মুহুর্তে তার ভেতর বাহির শীতল হয়ে গেল।আকাশের দিকে তাকালো সে।টুকরো টুকরো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে আকাশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।যখন তখন বিনা নোটিশে বর্ষিত হবে যেন।
রোদ্দুরের মন পুলকে ভরে গেল।হাতঘড়ির দিকে এক নজর তাকিয়ে সে দ্রুতপায়ে লঞ্চ ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল।
রোদ্দুরকে দেখে অহি শান্ত স্বরে বলল,
—“দাঁড়িয়ে আছেন কেন?বসে পড়ুন।”
রোদ্দুর নিজের হুশে নেই যেন।সে সাপের মতো পলকহীনভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার সামনে বসে থাকা রমণীটির দিকে।অহি শাড়ি পড়েছে আজ।সোনালি পাড়ের সবুজ তাঁতের শাড়ি।সাথে চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে।বাতাসে তার চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।ঘন পল্লব ঘেরা চোখ দুটোতে যেন মায়ার বহর।তাকে কেমন বউ বউ লাগছে।রোদ্দুরের বউ!
রোদ্দুর বুকের বা পাশে হাত দিয়ে চেপে বিড়বিড় করে বলল,
—“ও মাই গড!”
অহি রোদ্দুরের কর্মকান্ডে চরম বিরক্ত হলো।এক পলক আশপাশে তাকালো।আজ বিকেল হওয়ার পরো লঞ্চঘাট খালি।মানুষজন তেমন নেই।পাশেই ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান হচ্ছে।সবাই সেখানে ভিড় জমিয়েছে হয়তো!
সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—“আপনাকে হ্যাংলার মতো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আসতে বলেছি?বুক থেকে হাত সরিয়ে পাশে বসে পড়ুন।দরকারি কথা আছে।”
রোদ্দুর তৎক্ষনাৎ অহির পাশে বসে পড়লো।তবে তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে।এই মেয়ের শরীর থেকে কেমন যেন একটা মেয়েলি গন্ধ এসে নাকে লাগছে তীব্র ভাবে।সে গন্ধে রোদ্দুর পাগল হয়ে যাচ্ছে।
—“আপনাকে বারণ করার পরো বাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করেন কেন?”
অহির কাঠ কাঠ গলায় রোদ্দুর ভড়কে গেল না।চোখ বন্ধ করে সে বড় বড় শ্বাস নিল কিছুক্ষণ।এই মেয়ে তাকে এখন কথার প্যাঁচে পিষে ফেলবে।নিজেকে স্থির করে সে বলল,
—“তোমার বাড়ির আশপাশে ঘুরঘুর করতে যাব কোন দুঃখে?ওখানে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হারিয়ে ফেলেছি।সেটা খুঁজতে প্রতিদিন একবার হলেও যাই।”
অহি আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করলো,
—“কি হারিয়ে ফেলেছেন?”
—“আমার মন!”
অহি নিভে গেল।উসখুস করে এদিক ওদিক তাকাল। রোদ্দুর ফের বলল,
—“তুমি তো বুদ্ধিমতী মেয়ে।তোমাকে একটা প্রশ্ন করি।একটা মেয়ে আমাকে পাগল করে,আমার ভালোবাসাকে উস্কে দিয়ে,জোর করে ধরে বেঁধে চুমু টুমু খেয়ে আমাকে অসুস্থ করে এখন বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।আমি সিদান্ত নিয়েছি তাকে কঠোর শাস্তি দিবো।তুমি বলো,তাকে কঠোরতম কি শাস্তি দেয়া যায় বলোতো?”
—“কি শাস্তি দিতে চান?”
—“জোর করে বিয়ে করবো।তারপর বাসর হবে রিমান্ডে।উল্টো করে বেঁধে নাকে গরম পানি ঢালবো।হাতের আঙুলে আঙুলে সুঁচ ফুটাব।মাথা ন্যাঁড়া করে দিবো,পিটিয়ে হাত পা ভেঙে হুইল চেয়ারে বসিয়ে রাখবো যাতে আর পালাতে না পারে!আমাকে ডজন ডজন চুমু খাওয়ার শাস্তি পেতে হবে না?”
অহি অবাক হয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকালো।নীল শার্টে কি সুন্দর মুখোশ্রী!সে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—“কি মিথ্যুক আপনি এসআই!ডজন ডজন চুমু খেয়েছে কে আপনাকে?”
—“তার একটা চুমুতেই আমার দফারফা হয়ে যায়।হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।তার একটা চুমু ইক্যুয়াল টু এক ডজন চুমু!আমার জন্য আর কি!”
অহি সামনে তাকাল।সিঁড়ির উপর থেকে সামনের নদীর কুচকুচে পানি চোখে আসছে।সাথে কেমন একটা হালকা গন্ধ নাকে এসে লাগছে।ঘাটে এখনো বেশ কয়েকটা লঞ্চ বাঁধা।
কিছুক্ষণ দুজন চুপচাপ থেকে অহি নিজে থেকে বলল,
—“এভাবে জীবন চলে না এসআই।আপনার জীবন এক রকম,আমার জীবন অন্যরকম।বলতে গেলে আমরা দুজন পৃথিবীর দুই মেরুর মানুষ।আমাদের দেখা হওয়াটা কোনো সুস্থ ভাবে হয়নি।একটা দূর্ঘটনার মধ্য দিয়ে আলাপ-পরিচয় হয়ে দুজনের জীবন একসাথে জুড়ে দেয়া হবে আরেকটা দূর্ঘটনা।একের পর এক দূর্ঘটনা আমরা ঘটতে দিতে পারি না।”
—“অজান্তা,তুমি আস্তো একটা হেকঅ্যাক!তোমাকে কাছে পাওয়ার পর তোমার প্রতিটা অবহেলার শোধ তুলবো আমি।না হলে আমার নাম রোদ্দুর হিম নয়।আমার জীবন জুড়লে একমাত্র তোমার সাথে জুড়বে,অন্য কারো সাথে না!”
অহি দাঁত চেপে নিজেকে সামলালো।ইমোশনাল হলে চলবে না।নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সে বলল,
—“আপনাকে একটা গল্প বলি এসআই!আমার খুব ঘনিষ্ঠ একজন বান্ধবী ছিল।পরিবারের বড় মেয়ে সে।তার জন্মের বছর দুই পর একটা ভাই হয়।মেয়েটার খুশি ধরে কে!ওতটুকু শরীর নিয়েই ছোট ভাইকে কোলে নিবে,আদর করবে!সে কি খুশি!এরপর আমার বান্ধবীর বয়স যখন এগারো বছর তখন তাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে আরেকটা বোন আসে।জোসনার মতো দেখতে ছিল সে বাচ্চা।রাতের অন্ধকারে আলোর মতো জ্বলতো।কি ভয়ানক সুন্দর ছিল!আমার সেই বান্ধবী আর তার ছোট ভাই মিলে পিচ্চি বোনটার নাম রাখে শিউলি।কারণ পিচ্চিটার গা থেকে সবসময় শিউলি ফুলের মতো গন্ধ ছড়াতো।তারা অবশ্য শিউলি ফুলের গন্ধ চিনতো।কারণ তাদের কলপাড়ে তখন ঝাঁকড়া একটা শিউলি গাছ ছিল।প্রচুর ফুল ফুটতো তাতে।বাড়িটা তখন দুই শিউলি ফুলে সারাক্ষণ গন্ধে বুঁদ হয়ে থাকতো।তারপর হঠাৎ করেই একটা ঘটনা ঘটে!”
অহি থেমে যায়।তার বুক কাঁপে।শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে সামনে এনে শক্তহাতে তা ধরে রাখে।তার চোখ দুটো অস্থির।রোদ্দুর অধির আগ্রহে তান পরবর্তী অংশ শোনার জন্য বসে আছে।ভেতরে ভেতরে ছটফট করছে সে।অহির নিরবতা সহ্য করতে না পেরে বলেই ফেলে,
—“তারপর?তারপর কি হলো অজান্তা?”
অহি নিজেকে৷ শক্ত করে বলে,
—“পিচ্চি শিউলির বয়স তখন সাত মাস বারো দিন চলছে।সবেমাত্র বসা শিখেছে সে।সাথে অদ্ভুত মিষ্টি স্বরে সবসময় আ আ করে আর খিলখিল করে হাসে।কি সুন্দর লাগে দেখতে!একদিন বিকেল বেলা আমার বান্ধবী তাকে কোলে নিয়ে খেলার ছলে দুহাত উঁচু করে উপরের দিকে ছুঁড়ে আবার ধরে ফেলছিল শিউলিকে।পাশেই তার ভাই হাতে তালি দিচ্ছিল।আর শিউলি সে কি খুশি!প্রতিবার উঁচু করে ছুঁড়ে আবার ধরে ফেলতেই সে খিলখিল করে হাসছিল।চারিদিকে তখন হাসির শব্দ শুধু।সাথে শিউলি ফুলের গন্ধ।আমার বান্ধবী মেতে উঠেছে যেন ছোঁড়াছুড়ি খেলায়।কিন্তু সপ্তম বারে কি যেন হয়ে গেল।সে শিউলিকে উপরের দিকে ছুঁড়লো ঠিকই কিন্তু ধরতে পারলো না আর।বাচ্চা শিউলি ফুল আর্ত চিৎকার দিয়ে মাটিতে ছিটকে পড়লো।সঙ্গে সঙ্গে নাক মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হওয়া শুরু হলো।”
অহির গলা ধরে এসেছে।তার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপছে আতঙ্কে।মনে হচ্ছে সে দৃশ্যটা চোখের সামনে দেখছে।রোদ্দুরের বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা হয়।সে এগিয়ে এসে চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে শক্ত হাতে অহির বাম হাত চেপে ধরে।শিউলি কে তা রোদ্দুরের অজানা নয়।শিউলি অহির ছোটবোন।বাচ্চা বয়সে সে মারা গেছে শুধু সেটা জানতো।কিভাবে মারা গেছে সেটা জানা ছিল না।সে অহির হাত নিজের হাঁটুর উপর নিয়ে দুহাতে চেপে ধরে বলে,
—“তোমার বান্ধবীর কথা শুনবো না।অন্যকিছু বলো!কিছু বলতে না পারলে আমি বলি তুমি শোনো!আজকে কি হয়েছে জানো?বাড়ি থেকে স্বেচ্ছায় পালিয়ে যাওয়া একটা ছেলেকে আজ ধ………”
অহি রোদ্দুরকে থামিয়ে দেয়।নিজেকে সামলে বলে,
—“আমার বান্ধবীর মা তখন রান্নাঘরে ছিল।শিউলির কান্নায় বাইরে বের হয়েই চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে।শিউলিকে তুলে বুকে জড়িয়ে নেয়।মুহূর্তে চারপাশে বেশকিছু মানুষ জুটে যায়।শিউলির মাথায় পানি ঢেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।সন্ধ্যার সময় শিউলিকে তার বাবা কোলে করে নিয়ে বাড়ি ফেরে।শিউলি ততক্ষণে অন্য জগতে চলে গেছে।সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে।
সর্বদা হাসি লেগে থাকা বাড়িটা মরা বাড়িতে পরিণত হয়।আমার বান্ধবী যেন পাথর হয়ে গেছে।সে কাঁদতে ভুলে যায়।তার চোখের সামনে একটা চিত্রই বার বার ভেসে উঠে।শিউলির রক্তভেজা মুখ।রাতের আঁধারেই শিউলিকে কবর দিয়ে আসা হয়।হাসিখেলায় মেতে থাকা বাড়িটা সেইদিন থেকে শশ্মানবাড়ি হয়ে যায়।বান্ধবীর মা একসাথে দুটো সন্তানকে স্মৃতি থেকে মুছে ফেলে।তার মৃত সন্তান আর তার মৃত সন্তানের হত্যাকারী মেয়েকে।সেদিন থেকে আমার বান্ধবীর প্রতিটা দিন,প্রতিটা রাত একেকটা বিভীষিকাময় হয়ে উঠে।তার মা ভুলেও তার দিকে তাকাতো না,মায়ের দৃষ্টিতে তার জন্য সবসময় ঘৃণা জমে থাকতো।কোনোদিন দুটো ভালো কথা বলে না,মা ডাকলে শোনে না!প্রায়ই বিলাপ করে কাঁদে!সেই সন্তান হারানোর কান্না!যেখানে প্রতিটি জলের বিন্দু হাহাকার বয়ে আনে বান্ধবীর জন্য।
অযত্ন,অবহেলায় বড় হতে থাকে আমার বান্ধবী।মায়ের ছায়াতল হারিয়ে কেমন পাথর হয়ে যায়। দম বন্ধ ভাব কাটানোর জন্যই সে স্কুলে আসা যাওয়া করে।কলেজটা কোনো রকমে পাস করে আর পড়াশোনা করা হয় না।আমার বান্ধবীর বয়স এখন তেইশ।সে মায়ের ভালোবাসা হারিয়েছে এক যুগ হলো।কারণ সে হত্যাকারী যে!খুনী সে!খুনী!খুনীর সাথে কেউ জীবন জুড়াতে পারে না।”
অহি বহু বছর পর একজনের সামনে কাঁদছে।মানুষের সামনে সে কাঁদতে পারে না।কিন্তু কেন জানি তার পাশে বসে থাকা মানুষটাকে সে ভরসার স্থান ভাবে।প্রিয়জন ভাবে।তার সামনে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
অহির চোখের জল দেখে রোদ্দুরের পাগলপ্রায় অবস্থা।কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।হুট করেই প্রচুর বাতাস শুরু হয়েছে।বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যাবে যেন।রোদ্দুর শক্ত করে অহির হাত চেপে বলল,
—“অজান্তা, একদম কান্না করবে না।কান্না করলে কিন্তু সামনের কুচকুচে কালো জলে ঢিল দিয়ে ফেলে দিবো।”
অহির কান্না থামছে না।রোদ্দুর আরো একটু কাছ ঘেঁষে বসলো অহির।সান্ত্বনার সুরে বলল,
—“দেখো অজান্তা! এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট।প্রতিটা মৃত্যুর পেছনে ব্যাখ্যা করার মতো একটা কজ লাগে।আর সেটা প্রকৃতি সুনিপুণ ভাবে পূরণ করে।দেখো,প্রতিটা মানুষের মৃত্যুর পেছনে আলাদা আলাদা কারণ থাকে!কেউ জ্বরে,কেউ ক্যান্সারে,কেউ টাইফয়েডে,কেউ বা বৃদ্ধ হয়ে মারা যায়।প্রকৃতির প্রতি যেন মানুষের রহস্য না জন্মে সেজন্য একটা উছিলায় মৃত্যু দেয়।শিউলির মৃত্যু দূর্ঘটনা বৈকি কিছুই নয়।নিজেকে দোষী ভাবা বন্ধ করো।”
অহি কিছু বললো না।কান্নার কারণে তার শরীর কাঁপছে।কয়েক সেকেন্ড পরেই ঝুমঝুম করে বৃষ্টি শুরু হলো।বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা গায়ে পড়তে দুজন শিউরে উঠলো। কিন্তু উঠে ছাউনির নিচে গেল না।রোদ্দুর বলল,
—“অজান্তা!প্রকৃতিও চায় তুমি এই ব্যাপারে আর কান্না যাতে না করো।সেজন্য তোমার চোখের জল অন্য মানুষের আড়ালে রাখতে নিজেই জল বর্ষণ শুরু করলো।”
অহি ধরা গলায় বললো,
—“একজন খুনীকে আপনি কিছুতেই বিয়ে করতে পারেন না।”
—“এটা তো বিরাট অবিচার হয়ে যাবে অজান্তা।বিয়ে করতে পারবো না মানে?খুনিকেই বিয়ে করে আমার কারাগারে তুলে রোদ্দুর হিমের স্টাইলে তাকে শাস্তি দিবো।”
অহি উঠে দাঁড়ালো।বৃষ্টির বেগ বেড়ে যাচ্ছে।সামান্য বৃষ্টিতে ভিজলে তার জ্বর আসে।আজ নির্ঘাত হাঁড় কাঁপিয়ে জ্বর আসবে।রোদ্দুরের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে সে হাঁটা ধরলো।দশ-পনেরো মিনিট জোরে জোরে হাঁটলে বাড়ি পৌঁছে যাবে সে।
রোদ্দুর তার পাশাপাশি হাঁটা শুরু করলো।আজ বৃষ্টিতে ভিজতে তার অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে।ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করছে।কেমন প্রেম প্রেম পরিবেশ। সে গুনগুন করে অহির কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
“আগে কত বৃষ্টি যে দেখেছি শ্রাবণে….
জাগে নিতো এতো আশা ভালোবাসা এ মনে….”
অহি ঘুরে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলল,
—“আজই আমাদের শেষ দেখা।আপনাকে যেন আর সদরঘাট এলাকায় না দেখি।ভুলেও কিন্তু আর আমার বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করবেন না মি. রোদ্দুর হিম!”
—“আমাকে আজ কেন ডেকেছিলে?এসব বলার জন্য?”
—“আমি একটা কুফা!আজ পর্যন্ত আমার সাথে ভালো কিছু হয়নি।আমার জন্মই হয়েছে দুঃখ পাওয়ার জন্য এবং অন্য মানুষকে দুঃখ দেয়ার জন্য।আমার জন্মের সময় মায়ের মৃত্যুপ্রায় অবস্থা হয়েছিল।বাবা জেলে গেল!শিউলি চলে গেল।আরো বহু কিছু ঘটেছে।আমি মানেই খারাপ,আমি মানেই কুফা!আমার সাথে যে থাকবে সেও কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খাবে।আমার জীবনে আপনাকে জড়াব না।আপনাকে ডেকেছিলাম এটা বলার জন্য যে অন্য কাউকে বিয়ে করে আমার জীবন থেকে সরে যান।দূরে,বহুদূরে! ”
—“হুঁ যাবো তো!কিছুদিন পর সিঙ্গাপুর মিশনে যাব।”
অহির বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো।ছলছল চোখে রোদ্দুরের দিকে এক নজর চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল।যদি তার চোখের ভাষা পড়ে ফেলে মানুষটা!রোদ্দুর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
—“সিঙ্গাপুর মিশনে যাব ঠিকই কিন্তু তার আগে বিয়ে করে যাব।আর বিয়েটা করবো তোমাকে।শুধু তোমাকে।
—“বললাম তো আমি আপনার জন্য যোগ্য নই।বিয়ে করতে পারবো না আপনাকে।”
—“আমার গাট ফিলিংস বলছে তুমি অন্য কোনো জোরালো কারণে আমাকে বিয়েটা করতে চাচ্ছো না।কেউ কি তোমাকে বিয়ে না করার জন্য প্রেশারাইজ করছে অজান্তা?আমায় নির্দ্বিধায় বলো!আমি সব সলভ করে দিবো।”
—“কেউ কিচ্ছু করেনি।আপনাকে আমি পছন্দ করি না।মানুষ হিসেবে আপনি বিরক্তিকর এবং জঘন্য একজন ব্যক্তি।”
—“বেশ!এই বিরক্তিকর এবং জঘন্য মানুষটাকে নিয়েই তোমার বাকিটা জীবন কাটাতে হবে।আমি তার ব্যবস্থা করছি।”
বলেই রোদ্দুর হনহন করে বৃষ্টির মধ্যে চলে গেল।অহি টালমাটাল চোখে তার গমনপথের দিকে চেয়ে রইলো।দু ফোঁটা অশ্রু চোখ বেয়ে গড়িয়ে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে গেল।
১৭.
দুদিন হলো অহির জ্বর।সেদিন বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজে জ্বর এসেছে।গতদিন তো বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছিল না।আজ একটু কম!নিজে নিজে উঠে ওয়াশরুমে গেল সে।
ওয়াশরুম থেকে হাতে মুখে হালকা পানি দিয়ে বের হলো।জানালার বাইরে অন্ধকার।সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ হলো।হাত মুখ মুছে ফের বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পড়তেই বাইরে থেকে রোদ্দুরের কন্ঠ কানে আসলো।তার বাবাকে বলছে,
—“চাচাজি!চট করে একটা কাজি ধরে নিয়ে আসুন তো!আজকেই বিয়ে করবো।এক্ষুনি বিয়ে করবো!”
(চলবে)